শেষ বেলার তুমি পর্ব ১

0
12

চার বছর পরে দেশে ফিরে বউয়ের মুখে ভাইয়া ডাকটা শুনে মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেল। তবুও নিজেকে সংযত করে বললাম:

হৃদয়: আমি তোমার ভাই হবো কেন? কে বলেছে আমি তোমার ভাইয়া।

নীলিমা: আপনার আম্মু আব্বু তো আমাকে তাদের কে আম্মু আব্বু বলে ডাকতে বলেছে। তাহলেতো আপনি ভাইইয়াই হন।😃

হৃদয়: আরে আমি তোমার ভাইয়া হতে যাবো কোন দুঃখে। আমি তোমার স্বামী, বর বর।😠

নীলিমা: ওকে এখন থেকে বর বলে ডাকবো?😌

হৃদয়: নাম ধরে ডাকবে নাম নাম নাম! আমার নামটা জানো তো?🙄

নীলিমা: হ্যাঁ জানি তো।😀

হৃদয়: কি বলতো?🙂

নীলিমা: হারামজাদা।😇

হৃদয়: কি কে বলেছে এটা?😠

নীলিমা: আপনার আম্মু!🤐

কথাটা শুনে আমি আম্মু বলে চিৎকার করে উঠলাম। আম্মু ছুটে এসে বলল:

আম্মু:কি হয়েছে?😳

হৃদয়: আমার নাম হারামজাদা😠

আম্মু: এমা তা হবে কেন।😐

হৃদয়: তুমি নাকি নীলিমাকে বলছো🙄

নীলিমা :সেদিন তুমি বললে না ওই হারামজাদা টার জন্য নাকি তোমার শান্তি নেই।😀

আম্মু :আরে ওটা তো আমি এমনি বলছি ওর নাম হৃদয়।😅

হৃদয়: হৃদয় বলে ডাকবে আমাকে ওকে?😑

নীলিমা:আচ্ছা🙃

আমি আর কথা না বাড়িয়ে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাওয়া-দাওয়া করে বেরিয়ে পড়লাম আমার সেই চিরচেনা শহর টা ঘুরতে।

সারা বিকাল ঘোরাঘুরি করলাম। বন্ধুবান্ধবের সাথে দেখা করলাম অনেকদিন পর তাদের সাথে দেখা। একেকটা তো হাতির মত মোটা হয়ে গেছে। 😁

তাদের সাথে আড্ডা দিয়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরলাম।

রাতে ডিনার শেষ করে রুমের দরজায় এসে দেখি নীলিমা খাটের মাঝখানে বসে আছে।

আমাকে রুমে ঢুকতে দেখে।

নীলিমা: কি করছেন? একটা মেয়ের রুমে ছেলেমানুষ হয়ে এত রাতে ঢুকছেন।বেরিয়ে যান এক্ষুনি।😠

হৃদয়: কিহ!😳

নীলিমা: আপনার একটা মেয়ের রুমে ঢুকতে লজ্জা করে না।😠

হৃদয়: আজব, আমিতো তোর বর।🙁

নীলিমা: তো, তাই বলে আপনি আমার রুমে আসবেন?🙄

হৃদয়: তো কোথায় যাব।🙂

নীলিমা: সেটা আমি কি করে বলব। 😐আম্মু……

আমি দৌড়ে গিয়ে নীলিমার মুখটা চেপে ধরলাম।

হৃদয়:এই আম্মুকে ডাকতেছিস কেন?😱

নীলিমা: আমি আম্মুকে বলে দেব তুমি আমার রুমে আসছো! তুমি ভালো না বদমাইশ খারাপ ছেলে কোথাকার লুচ্চা লাল টিকটিকি তেলাপোকা বান্দর হনুমান।😞

হৃদয়: আরে বোন আমি আসলে সমস্যা কোথায়? 😭

নীলিমা: আম্মু বলেছে কোন ছেলের সাথে কথাও না বলতে ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে। সবার থেকে দূরে দূরে থাকতে। আর তুমি ডাইরেক্ট আমার রুমে চলে আসছো।😠

এতক্ষণে ব্যাপারটা আমি বুঝতে পারলাম। মনে হয় স্মৃতিশক্তি নষ্ট হওয়ার কারণে ভুলে গেছে স্বামী স্ত্রী কাকে বলে।😶

কি প্যারা এখন কি আমি বউয়ের সাথে থাকতেও পারবো না। 😭😭

হঠাৎ একটা আইডিয়া মাথায় আসলো।

হৃদয়: আচ্ছা আমার আব্বু আম্মু স্বামী-স্ত্রী তাই না?😪

নীলিমা: তো 🙄

হৃদয়: তারা তো একসাথে থাকে।😇

নীলিমা: হুমম।🤐

হৃদয়: এখন কি বুঝতে পারছিস। স্বামী স্ত্রী একসাথে থাকতে হয়।🙂

নীলিমা: ও আচ্ছা।🙄

যাক বুঝতে শেষ পর্যন্ত বুঝতে পেরেছে। আমিতো ভাবলাম আজকে আমাকে ঘরের বাইরে রাখবে। একটা মুচকি হাসি দিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকলাম।😃

আমি বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে খাটে শুয়ে পরলাম। মনে মনে ভাবতেছি খাটে শোয়া নিয়ে আবার কি কাহিনী হয়।🙁

কিন্তু দেখলাম কিছু না বলে আমার পাশে এসে শুয়ে পড়ল।😃

যাক মনে হয় সবকিছু স্বাভাবিক করতে তেমন কষ্ট হবে না।😌

আমি একটু নীলিমার দিকে এগিয়ে আসতেই আমার হাত নীলিমার হাতের সাথে একটু স্পর্শ লাগতেই নীলিমা সজোরে এক ধাক্কা মেরে খাট থেকে দিল ফেলে।💔

এবার মনে হয় মাজা টা ভাঙলো গো….।😭

আমি খাট থেকে ঊঠে দেখি নীলিমা খাটের মাঝখানে বসে আছে। মনে হচ্ছে আছার মারি 😠

হৃদয়: ঐ আমায় ধাক্কা মেরে ফেলে দিলি কেন?😠

নীলিমা: তুমি আমার হাতে হাত দিলে কেন 🙄 তুমি একটা লুচু ছেলে। যাও সোফায় যাও।🤐

হৃদয়: আরে আমি কি ইচ্ছা করে হাত দিয়েছি? আর তুমি তো আমার বউ। তোমার গাঁয়ে হাত দিব না কার গাঁয়ে দিবো?☹️

নীলিমা: কি হাত দিয়েছ আবার বলছো কার গায়ে হাত দিব?😤

হৃদয়: আরে বউয়ের গায়ে হাত দিলে কি এমন হবে? আল্লাহ বাঁচাও আমায় 😭

নীলিমা: বউ বলে কি তার গায়ে হাত দেওয়া লাগবে নাকি? 🙄

হৃদয়: তো মানুষ কি বউকে বিয়ে করে নে বাক্সের ভেতর তুলে রাখে 🙄

নীলিমা: তুমি এর আগে কয়টা বিয়ে করছো? এর আগে বিয়ে না করলে তো জানার কথা নয় বর বউয়ের গায়ে হাত দিতে পারে।

হৃদয়: কয়টা মানে 🙄। তুমিই প্রথম।

নীলিমা: তারমানে আরো বিয়ে করার ইচ্ছা আছে?🤬

হৃদয়: কখন বললাম সে কথা?😐

নীলিমা: ওই যে বললে তুমি প্রথম। তারমানে দ্বিতীয় তৃতীয় চতুর্থ পঞ্চম আরো নিয়ে আসবে 🙄

হৃদয়: আমি সে কথা বলি নি।🤭

নীলিমা: আমি আর কিছুই জানতে চাই না তুমি এক্ষুনি সোফায় যাও।😤

হৃদয়: আর হাত দিবো না। থাকি না?😟

নীলিমা: যাবে না আম্মুকে ডাকবো?😒

হৃদয়: যাচ্ছি যাচ্ছি।😶

আমি আর কিছু না বলে সোফায় গিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। ধুর একসময় খাটে শোয়ার সুযোগ থাকলেও শুইতে চাইতাম। আর আজ খাটে শুইতে চেয়েও সোফায় শুতে হচ্ছে।😕

এভাবেই কেটে গেল অনেকদিন। আমি এখন নীলিমার যন্ত্রণায় পুরাই অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। মনে হচ্ছে বাড়িঘর ছেড়ে এখন পাবনা যাই।🤯

বাড়িতে ফিরতেই ইচ্ছা হয় না। মেয়েটাকে বিয়ে করার পর থেকে আমার জীবনটা তেজপাতা হয়ে গেছে। আমি ডাইনে গেলে ও বামে যায় আর আমি বামে গেলে ও ডাইনে যায় ।😞

মনে হইতাছে সব কিছু ছাইড়া হিমালয় চলে যাই।😩

রাতে বেলকুনিতে বসে থেকে এসব ভাবতেছি। অনেক রাত হয়েছে নীলিমা এখনো আসলো না রূমে। তাই বের হয়ে আসছিলাম। রান্নাঘরের কাছে আসতেই যা শুনলাম তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।😱

নীলিমা: বড় আম্মু, হৃদয় তো এখন দেশে ফিরেছে। আর এতদিনে অনেক জ্বালিয়েছি। এখন কি সবকিছু স্বাভাবিক করে নিলে হয়না? অনেক দিনই তো স্মৃতিশক্তি হারানোর একটিং করলাম।😌

আম্মু: না নীলু, আরো কিছুদিন। ও তোরে অনেক কষ্ট দিয়েছে। আরও কিছুদিন এভাবে থাকতে দে।🌝

আমি এসব শুনে পুরোটাই হতভম্ব হয়ে গেল। তার মানে সবই অভিনয়। বাহ আমার মা ওই এর মাথা। যারে বলে ঘরের শত্রু বিভীষণ।😟

আমি রাগে গজতে গজতে রুমে গেলাম। গিয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থেকে কি করা যায়।…….

চলবে,,,,,,

গল্প শেষ বেলার তুমি
পর্ব ১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here