শেষ_থেকে_শুরু,পর্ব_৩,৪

0
965

শেষ_থেকে_শুরু,পর্ব_৩,৪
নন্দিনি_চৌধুরী
পর্ব_৩

৫.
রাতের তারা ভোরা আকাশের নিচে বসে আছে মুগ্ধ দূর আকাশের পানে তাকিয়ে আছে সে।নিজের জীবনের হিসাব মিলাতে মিলাতে ক্লান্ত সে।ছোট থেকে জীবনে লড়াই করতে করতে আসতে হয়েছে এখনো লড়াই করে যেতে হবে টিকে থাকার লড়াই।কবে শেষ হবে এই লড়াই।তাই ভাবছে সে।

“তুমি যদিজীবনচক্রের হিসাব মিলাতে গিয়ে হেরে যাও তবে থেমে থেকোনা তবে নতুন করে আবার শুরু করো দেখবে ঠিক মিলাতে পারবে”

মুগ্ধ:জানিনা কি আমার অপরাধ ছিলো যে তাএ জন্য আজ আমাকে তুমি একা করে চলে গেলে আরিশ।আমি জানিনা আমি কোনদিক থেকে ব্যার্থ ছিলাম।তবে আরিশ তুমি ভালো আছো এটাই অনেক ভালো থাকো যার সাথে ভালো থাকার আশায় আমাকে ছাড়লে তাকে নিয়ে ভালোথেকো।কিন্তু জানোতো ভাবতে পারিনি ডিভোর্সি নামক বিষাক্ত তোকমাটা আমার নামের আগে লেগে যাবে ভাবতেই পারিনি সেটা।সমাজে ডিভোর্সি হয়ে টিকে থাকতে আমাকে অনেক শক্ত হতে হবে যেটা আমি পারবোকিনা জানিনা।

“তুমি সুখো যদি নাহি পাও যাও সুখেরো সন্ধানে যাও আমি তোমারে পেয়েছি হৃদয় মাঝে আরো কিছু নাহি চাইগো আমারো পরানো যাহা চায় তুমি তাই তুমি তাই গো আমারো পরানো যাহা চায়”[রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর গানের লাইন]

মুগ্ধ ছাদে দাঁড়িয়ে একা একা কথা গুলো ভাবছে। বিকালে বাসায় আসার পর থেকে সে কেঁদেগেছে শুধু। সে ভাবতেও পারেনি লোকেদের কথা তাকে এইভাবে শুনতে হবে।

মেহের আসতে করে ছাঁদে এসে দেখে মুগ্ধ দাঁড়িয়ে আছে।আসতে করে বোনের কাছে গিয়ে কাধে হাত রাখে সে।মুগ্ধ সামনে মুখ করে রেখেই বলে,

মুগ্ধ:কিছু বলবা ভাইয়া?
মেহের:চড়ুইপাখি মন খারাপ তোর?
মুগ্ধ:না ভাইয়া আমার মন খারাপ না আমার মতো মেয়ের কি মন খারাপ হতে পারে বলো?
মেহের মুগ্ধকে ওর দিকে ঘুরিয়ে বুকে জরিয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,

মেহের:তুই লোকের কথা কান দিবিনা বুজলি।সমাজের কিছু লোক এমন আছে যারা অন্যের দিকে আজ্ঞুল তুলার আগে নিজের দিকে তাকায় না।এই সমাজের এমন কিছু মানুষের কারনেই আজ দেশের এই অবস্থা।তবে তুই ভেংগে পরবিনা।তুই সাহস নিয়ে এগিয়ে যাবি।মনে রাখবি তোর ভাইয়া তোর পাশে আছে।

মুগ্ধ:কিন্তু ভাইয়া আমার যে অনেক কষ্ট হয়। আমি কি করে লড়াই করে টিকে থাকবো।
মেহের:পারতে হবে তোকে দুনিয়াকে দেখিয়ে দিতে হবে ডিভোর্সি হয়েও মেয়েরা দুনিয়াতে এগিয়ে যেতে পারে।তারাও সব করতে পারে।
মুগ্ধ:আচ্ছা ভাইয়া আমি করবো তুমি যেভাবে বলবে সেভাবেই সব করবো।আমি টিকে থাকার এই লড়াইয়ে লড়বো।
মেহের:হুম এখন চল খেতে চল।

মেহের মুগ্ধকে নিয়ে নিচে চলে আসলো।নিজ হাতে বোনকে খাইয়ে দিয়ে ঘুম পারিয়ে দিলো।

খানভীলা,,,,,

খাবার টেবিলে বসে খাচ্ছেন সায়মা,সালমা,মেহেরাব।মেহেরাব শুধু সায়মার চালচোলন দেখছে বসে বসে মেয়ে তার কতটা অভদ্র হয়েছে তাই দেখছে।

সায়মা:মা আমি ভাবছি আরিশ আর আমার বিয়েটা তাড়াতাড়ি করে আমার বাহিরে চলে যাবো।
সালমা:হুম এটাতো ভালো কথা।তা আরিশকে বলেছিস কিছু এ বিষয়ে?
সায়মা:না কাল জানাবো।
সালমা:আচ্ছা তুই জানিয়ে আমাসের জানাস।
মেহেরাব:বেশ ভালো শিক্ষাই দিচ্ছো মেয়েকে।এক মেয়ের সংসার ভেংগে এখন সেই জায়গায় আবার নিজের মেয়েকে বসাচ্ছো।একবার ও তো শাসন করলেনা দুইগালে দুটো থাপ্পর মারলেনা যে মেয়ে হয়ে ও কিভাবে আরেক মেয়ের ঘর ভাংলো।তাও আবার নিজের বোনের যে ওকে লালনপালন করেছে।
সালমা:মেহেরাব!কি বলছো তুমি এসব।এখানে সায়মার কি ভুল আরিশ কেন তার বউকে ছেড়ে সায়মার কাছে এসেছিলো।সায়মা তো বলেনি ওকে আসতে।ও নিজেই এসেছে।আর শোনো তোমার অই মেয়ে এতো ভালো হলেনা ডিভোর্স দিয়ে চলে যেতোনা।হাতে পায়ে ধরতো থাকার জন্য।হুহ দেমাগ দেখিয়ে ভাইয়ের সাথ্ব ডেংডেং করে চলে গেছে।ভালো হয়েছে আপদ আমার বাসায় আনিনি।সাক্ষাত একটা আপদ অই মেয়ে।
মেহেরাব:ঠিক বলেছো হাতে পায়ে ধরেনি বলেই আজ মেয়েটা মেহেরের সাথে চলে গেছে।সেখানেই ভালো আছে।আমার মেহের ওর বোনকে সব থেকে ভালো রাখবে।তোমার আমার মতো অমানুষের কাছে ও না এসেই ভালো করেছে।
কথাটুকু বলেই মেহেরাব খাবার ফেলে চলেগেলো।
সায়মা:এই মুগ্ধ তো চলে গিয়েও শান্তি দিচ্ছেনা।নাহ ওর একটা ব্যবস্থা আমাকে করতে হবে।তবে তার আগে আরিশকে বিয়ে করে করতে হবে [মনে মনে]

পরেরদিন সকালে,,,

মুগ্ধ ফজরে উঠে নামাজ পরে একটু বই মিয়ে বসে টুকটাক কিছু পড়াশুনা করলো।এখন রেডি হচ্ছে কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।একটা বেবিপিংকালার থ্রিপিজ পরেছে সাথে ব্লাক একটা হিজাব মাথায় সুন্দর করে বেধেছে।ওড়নাটা চাদরের মতো করে গায়ে দিয়েছে।রেডি হয়ে নিচে এসে খাবার টেবিলে বসলো।মেহের অনেক আগেই রেডি হয়ে মুগ্ধের জন্য অপেক্ষা করছে।রুহি মুগ্ধকে খাইয়ে দিচ্ছে।

মেহের:আজ শুনেছি কলেজে নিউ প্রফেসর আসবে।
মুগ্ধ:ও আচ্ছা
মেহের:হুম শোন কলেজে প্রায় সবাই আমার চেনাজানা।কোনো সমস্যা হলে যে কাউকে বলবি।তারা সমস্যা সমাধান করে দিবে আর এরপর তো আমি আছি ঠিক আছে।
মুগ্ধ:হুম ঠিক আছে।
মেহের:এই নে এই ব্যাগটা ধর।
মুগ্ধ:কি আছে এটাতে?
মেহের:তোর জন্য ফোন,ল্যাপ্টপ আরো কিছু তোর প্রয়জোনীয় জিনিশ আছে।
মুগ্ধ:ও আচ্ছা ভাইয়া শুনো।
মেহের:হুম বল।
মুগ্ধ:আসলে ভাইয়া আমাকে একবার অই বাসায় যেতে হবে।
মেহের:কেন?
মুগ্ধ;অনেক দরকারি ডোকুমেন্টস ফাইল রেখে আসছি অগুলা আনতে হবে।
মেহের:তোর যেতে হবেনা আমার অফিসের মেনেজারকে দিয়ে আনাবো।
মুগ্ধ:আচ্ছা।
মেহের:হুম চল।
রুহি:শুনো আশার সময় মুগ্ধকে নিয়ে আসবে?
মেহের:মনে হয় পারবোনা মিটিং আছে আমি গাড়ি পাঠিয়ে দেবো।
রুহি:আচ্ছা মুগ্ধ সাবধানে যাস।
মুগ্ধ:আচ্ছা ভাবিপু।

এরপর মুগ্ধ মেহেরকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো কলেজের জন্য।প্রায় ২০মিনিট পর চলে আসলো কলেজে।মেহের মুগ্ধকে কলেজে নিয়ে এসে প্রিন্সিপাল এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।কয়েকজন স্যার এর সাথেও পরিচয় করিয়ে দিলো।তারপর মুগ্ধকে ক্লাসে ডুকিয়ে দিয়ে মেহের চলে আসলো।মুগ্ধের একা একা কেমন একটু ভয় লাগছে।নতুন যায়গা তারপর কাউকে চেনেনা।তাই নার্ভাস লাগছে।মুগ্ধ জানালার পাশে বসে ছিলো তখন একটা মেয়ে পাশ থেকে বলে উঠলো,

মেয়েটা:উহুম কিছু মনে না করলে আমি কি এখানে বসতে পারি?

মুগ্ধ মেয়েটার দিকে তাকালো।বেশ মিষ্টি মেয়েটা।মুগ্ধ হেসে বললো,

মুগ্ধ:সিওর বসো।

মেয়েটা সিটে বসে মুগ্ধের দিকে হাত বারিয়ে দিয়ে বল্লো,

মেয়েটা:হাই আমি সাদিয়া হাসান।
মুগ্ধ:হাই আমি মুগ্ধ।
সাদিয়া:নিউ রাইট?
মুগ্ধ:হ্যা তুমিও?
সাদিয়া:হুম।আচ্ছা আমরা কি বন্ধু হতে পারি?
মুগ্ধ:উম হ্যা পারি।
সাদিয়া:ওকে তো আজ থেকে আমরা ফ্রেন্ড।
মুগ্ধ:ওকে।
সাদিয়া:আজ আমাদের ক্লাসের নিউ প্রফেশর আসবেন ফিনিক্স সাব্জেক্টের।
মুগ্ধ:শুনেছি নতুন একজন আসবেন কিন্তু আমাদের ক্লাসে তা জানতাম না।
সাদিয়া:ওহ আচ্ছা।

এভাবে আরো কিছুক্ষন দুজোনে গল্প করতে থাকে।এর মাঝে প্রিন্সিপাল সাহেব আর সাথে একটা সুদর্শন যুবোক ক্লাসে আসলেন।সবাই তাদের দেখে দাঁড়িয়ে সালাম দিলো।

প্রিন্সিপাল:গুড মর্নিং স্টুডেন্টস।কেমন আছো তোমরা?
স্টুডেন্টস:গুড মর্নিং স্যার।আমরা ভালো আছি।আপনি?
প্রিন্সিপাল:আমিও ভালো আছি।আচ্ছা স্টুডেন্টস তোমরা জানো তোমাদের আগের ফিজিক্স টিচার রিসেন্ট বদলি হয়েছেন।তাই তোমাদের জন্য নিউ ফিজিক্স টিচার এসেছে।ইনি হলো তোমাদের নিউ টিচার মিস্টার সাদমান হাসান সাদাফ।উনি আজ থেকে তোমাদের নতুম ফিজিক্স এর প্রফেসর।সবাই ওনার সাথে সুন্দর করে ক্লাস করো।মিস্টার সাদাফ আমি এখন আসি আপনি ক্লাস কোন্টিনিউ করুন।

সাদাফ:জি।

প্রিন্সিপাল চলে যাওয়ার পর সাদাফ সবার সাথে পরিচয় হতে লাগলো।

সাদাফ:ডিয়ার স্টুডেন্টস।তোমরা তো শুনলেই আমি তোমাদের নিউ ফিজিক্স টিচার সাদমান হাসাম সাদাফ।আশা করি আমার সাথে তোমাদের ক্লাস করে ভালো লাগবে।আজকে প্রথম দিন তাই আমরা আগে পরিচিত হবো সবার সাথে।সবাই একে একে নিজের নাম বলবে ওকে।

সবাই একে একে নিজের নাম বলতে লাগ্লো।এখন মুগ্ধের পালা সাদাফ মুগ্ধকে নিজের নাম বলতে বল্লো,

সাদাফ:ওকে নেক্সট ইউ তোমার নাম কি?
মুগ্ধ:মেহরুবা ইসলাম মুগ্ধ।
সাদাফ:মুগ্ধ!!তোমার নামের অর্থ কি তুমি জানো?
মুগ্ধ:জি।
সাদাফ:বলতো কি?
মুগ্ধ:মেহরুবা নামের অর্থ হলো,প্রিয়তমা,স্ত্রী,জীবনসজ্ঞী,ভালোবাসা প্রেমিকা।আর মুগ্ধ নামের অর্থ,বশীভূত,অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও আনন্দদায়ক করার মতো,মোহিত,বিহ্বল।আ
সাদাফ:আসলেই নামের অর্থের মতো দেখেও তেমনি।(মনে মনে)ওকে ধন্যবাদ বসে পরুন।
সাদাফ সবার পরিচয় নিয়ে ক্লাস করানো শুরু করলো।ক্লাসের ঘটনা পরলে ক্লাস শেষ করে চলে যায় সে।

মুগ্ধ:আচ্ছা একটা কথা বলি তোমাকে?
সাদিয়া:হুম বলো।
মুগ্ধ:না মানে উনি সাদমান হাসান তুমি সাদিয়া হাসান তোমরা কি,..।
সাদিয়া:হুম উনি আমার ভাইয়া।
মুগ্ধ:কি!তোমার ভাই উনি?
সাদিয়া:হুম।
মুগ্ধ:অহ আচ্ছা।
সাদিয়া:সাদমান হাসান সাদাফ।ভাইয়া একজন টিচার + একজন বিজনেসম্যান ও ভাইয়া শখের বসে এই টিচার হয়েছে।আর এই কলেজের প্রিন্সিপাল আমার বাবার ফ্রেন্ড উনি ভাইয়াকে রিকোয়েস্ট করেছিলেন ফিজিক্স এর ক্লাস নিতে তাই ভাইয়া রাজি হয়েছে।এমনি ভাইয়া আগে কোথাও পড়ায়নি।তবে অনেকে ভাইয়ার কাছে এসে পড়তো।আমাদের বাসায় আমি আমার আম্মু আর ভাইয়া থাকি।
মুগ্ধ:অহ আচ্ছা।

এরপর মুগ্ধ বাকি ক্লাস করে বেরিয়ে আসে কলেজ থেকে।সাদিয়া সাদাফের সাথে চলে গেছে।যাওয়ায় সময় মুগ্ধ সাদাফের চোখাচোখি হয়েছিলো।সাদাফ নিজের মতো করে গাড়িতে গিয়ে বসে চলে যায়।আর মুগ্ধ সেদিকে পাত্তা না দিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে।গাড়ি চলছে নিজ গতিতে।মুগ্ধ জানালার সাথে মাথা হেলান দিয়ে বসে বাহিরের রাস্তা দেখছে।তখন হঠ্যাৎ ওর চোখ যায় একটা দিকে।মুখ থেকে বেরিয়ে আসে,,,

“আরিশ”

৬.
আরিশ আর সায়মা রাস্তার ধারে দারিয়ে কিজানি কথা বলছে। সায়মা কথা বলতে বলতে আরিশের গায়ে পরছে।আরিশ একটু পর পর হাসছে।মুগ্ধের এসব দেখে চোখে পানি চলে এসেছে সে চোখ ফিরিয়ে নিলো।আর বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,

বেশ সুখেই আছো তুমি আরিশ।সুখে থাকো এটাই চাই।

“তুমি অন্য কারো সজ্ঞে বেধো ঘর”

?
বিকালে সাদাফ বসে ল্যাপ্টপে কাজ করছিলাও তখন ওর খেয়াল হয় মুগ্ধের কথা।

সাদাফ:অই চোখ দুটো আমার এতো পরিচিত কেন মনে হচ্চে?নানা অই চোখের মালিক এর এই চোখের মালিক কিভাবে এক হবে।এটাতো হতেই পারেনা।অই চোখের মালিক বেইমান একটা বেইমান।

সাদাফ ল্যাপ্টপ রেখে বেলকোনিতে গিয়ে দাঁড়ালো।খুব রাগ লাগছে তার যখনি তার কথা মনে পরে রাগ হয় সাদাফের।সাফার নিজে নিজে বলতে থাকে,

“খুব সুখে আছো তাইনা।স্বামী সংসার নিয়ে।এতোদিনে তো বোধয় বাচ্চার মাও হয়েগেছো।কিন্তু আমার সাথে কেন ছলনা করলে।ছলনা করে আমাকে ঠকিয়ে চলে গেলে।এতো লোভ তোমার।ঘৃণা করি তোমাকে ঘৃনা করি। আমার সাথে সব শেষ করে নতুন শুরু করেছো তুমি।কিন্তু আমি আজো ও #শেষ_থেকে_শুরু করতে পারিনি।”

এদিকে

মুগ্ধ বসে আছে তার রুমের সোফায়।দুপুরের ভাইয়ার অফিসের মেনেজার অই বাসা থেকে সব কিছু এনে রেখেগেছে।মুগ্ধ সেগুলো সব বের করছে।সব বের করতে করতে একটা ফোটো ফ্রেম হাতে আসে তার।তাদের ফ্যামিলি ফোটো।কত হ্যাপি ফ্যামিলি ছিলো তারা।সে ভাইয়া তাদের মা বাবা সব এক নিমিষে শেষ হয়ে গেলো।মুগ্ধ ফোট ফ্রেমে একটা চুমু দিয়ে পাসে রাখে।বাকি সব কিছু বের করে গুছিয়ে নেয়।সব গুছগাছ করে মুগ্ধ একটু বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরে।সারাদিনের ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে যায় একটু পর

সায়মা আরিশ একটা ক্যাফেতে বসে আছে।

সায়মা:আরিশ আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই?
আরিশ:হুম বলো।
সায়মা:আরিশ আমাদের এখন বিয়ে করে নেওয়া উচিত।এতোদিন অপেক্ষা করেছি তোমার ডিভোর্স এর জন্য।এখন তোমার ডিভোর্স হয়ে গেছে সো চলো বিয়ে করে ফেলি।
আরিশ:এটা পসিবল না সায়মা।আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবোনা।
সায়মা:কেন সমস্যা কি?নাকি আমাকেও ঠকাতে চাও দেখো আমি তোমার এক্স ওয়াইফ মুগ্ধ না ওকে।আমার সাথে চালাকি করতে এসোনা।
আরিশ:তুমি কি পাগল হয়ে গেছে।মাত্র তিনদিন হলো আমার ডিভোর্স হয়েছে।এখন আমি বিয়ে করে ফেললে সবাই যাতা ভাব্বে।কিছুদিন যাক তারপর এটা নিয়ে ভাবা যাবে।

আরিশ আর কিছু না বলে ক্যাফ থেকে চলে আসলো আর এদিকে সায়মা রাগে ফুসছে।

সায়মা:বিয়েতো করতেই হবে তোমাকে আরিশ।
Just Wait And Watch.

চলবে

#শেষ_থেকে_শুরু
#পর্ব_৪
#নন্দিনি_চৌধুরী

?
৭.
সায়মা নিজের রুমে বসে রাগে ফুসছে। খুব মেজাজ খারাপ লাগছে তার। এতো কিছু করলো সে যার জন্য সেই কাজ তো হচ্ছেনা। সে যদি আরিশকে বিয়ে না করতে পারে তাহলে মুগ্ধকে সে কিভাবে কষ্ট দেবে।

সায়মা:উফফফ সব কিছু যখন ঠিক হচ্ছিলো মাঝখান থেকে আরিশের এই নাটকের কোনো মানে হয়না না। আমার পরিকল্পনা নষ্ট হতে দেবোনা। কিন্তু আমি কি করবো যা করলে আরিশ আমাকে বিয়ে করতে বাধ্য হবে।

সায়মা নিজের মাথায় হাত দিয়ে চিন্তা করছে। তখন সালমা বেগম খাবার হাতে মেয়ের রুমে আসলো। মেয়েকে এভাবে বসে থাকতে দেখে তিনি সায়মার কাছে এসে বললো,

সালমা:কিরে কি হয়েছে তোর? এভাবে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছিস কেন?

সায়মা:মা সব কিছু যখন পরিকল্পনা মতো হচ্ছিলো। তখন এই আরিশ বিয়ে করতে রাজি হচ্ছেনা।

সালমা:সেকি! কেন কি হয়েছে?
সায়মা:ওই এখন মাত্র ডিভোর্স হয়েছে। এখোনি কিভাবে বিয়ে করবে লোকে কি বলবে এইসব।
সালমা:হুম বুজলাম কথাটা এতোটা ফেলে দেওয়ার মতোনা। ডিভোর্স হবার পর পরেই বিয়ে করলে লোকে যাতা ভাব্বে। তবে আমাদের বসে থাকলে তো হবেনা। শোন আমার কাছে একটা উপায় আছে।
সায়মা:উপায় তোমার কাছে। কি উপায়?
সালমা:শোন…………………
সায়মা:তুমি সিওর যে এটাতে কাজ হবে।
সালমা:একদম হবে। বুজলি আমি যেটা বললাম সেটা কর ১০০% কাজ হবে। ভুলে যাস না মুগ্ধের নামে এখনো ৫০% প্রোপার্টি আছে সেটা এখনো আমাদের নামে করতে হবে। আর আরিশের প্রোপার্টির একটা বড় অংশ আছে সেটাও আমাদের পেতে হবে। আর এটা পেতে হলে এই উপায় কাজে দেবে।
সায়মা:ঠিক আছে তাহলে আমি এটাই করবো।
সালমা:তাহলে কালকেই কাজে লেগে পর।
সায়মা:ওকে।

মুগ্ধের দাদা মৃত্যুর আগে একটা উইল করে যান। যেখানে লেখা ছিলো তার মৃত্যুর পর তার ছেলের বউ সব সম্পত্তির মালিক হবেন। আর তার ছেলের বউয়ের মৃত্যুর পর তার সন্তাদের মাঝে সেই সম্পত্তি ভাগ হবে। যেহিতু সম্পত্তি মেহেজাবিনের নামে ছিলো তাই তিনি মারা যাওয়ার পর ৫০% করে মেহের মুগ্ধের মাঝে সম্পত্তি ভাগ হয়ে যায়। কিন্তু মেহেরাব যেহুতু আবার বিয়ে করে তাই এখন প্রোপার্টি তিনভাগ হবে। কিন্তু সালমা সেটা চায়নি তিনি একাই সব তার মেয়ের জন্য চেয়েছিলো। কিন্তু মেহের তার বাবার কোনো সম্পত্তি নেয়নি সে বলে দিয়েছিলো তার এসব চাইনা। তাই সেই প্রোপার্টি সালমা নিজের নামে করে নেয়। কিন্তু মুগ্ধের থেকে সেটা করতে পারেনি। আর আরিশের বাবাও তার মৃত্যুর আগে একটা উইল করে যান সেখানে তিনি লেখে দিয়ে যান যে তার ছেলের বউকে তিনি প্রোপার্টি ৪০%দিয়েদিয়েছেন আর বাকিটা তার ছেলের। মুগ্ধ কোনোদিন এই প্রোপার্টির দিকে হাত দেয়নি। তার মতে এগুলা তার স্বামীর কাছেই থাকুক। যা তার তা তো তার স্বামীরই। কিন্তু এখন মুগ্ধের সাথে আরিশের ডিভোর্স হয়ে যাওয়ায় সেটা এখন আর মুগ্ধ পাবেনা। পাবে আরিশের নতুন বউ। আরিশের সাথে মুগ্ধের বিয়ের আসল কারন ছিলো এই প্রোপার্টি। সালমা চেয়েছিলো সায়মার সাথে বিয়ে হোক। কিন্তু সায়মা তখন মাত্র ক্লাস নাইনে তখন বিয়ে দেওয়া পসিবল ছিলোনা। তাই বাধ্য হয়ে মুগ্ধকে বিয়ে দেন। কিন্তু তারাই এমন এক ছলনার জাল পাতে সেই জালেই আজ মুগ্ধ আরিশের সম্পর্কের ইতি ঘটেছে।

মুগ্ধ ভাইয়ের সাথে বসে লুডু খেলছে। মেহের বার বার ওর গুটি কেটে দিচ্ছে। আর মুগ্ধ গাল ফুলাচ্ছে।

মেহের:হেহেহে চড়ুইপাখি তুই সব সময় হেরেগেছিস। এখোনো হেরে যাবি।
মুগ্ধ:এটা ঠিক না তুমি নিশ্চিত চিটিং করছো ভাইয়া।
মেহের:হে এখন হেরে গেলে কত কিছুই বলবি।
মুগ্ধ:এহ যাও।

রুহি দুজনের জন্য হালিম নিয়ে রুমে আসলো।

রুহি:এই খেলা রাখো আর এই নেও হালিম।
মুগ্ধ:ওয়াও হালিম ভাবিপু আমার আজকে অনেক ইচ্ছা করছিলো হালিম খেতে।
রুহি:হুম মাহির বলছিলো তোর জন্য রান্না করতে।
মেহের:নে খেয়ে নে। ঝাল কম দিছো?
রুহি:হুম দিছি লেবু বেশি করে দিছি। তুমি যেভাবে বলেছো সেভাবেই।

মুগ্ধ:উম ভাবিপু হালিমটা সেই হইছে।
মেহের:আচ্ছা এখন বল আজকে কলেজে কেমন গেলো প্রথম দিন?
মুগ্ধ:হ্যা ভালো গেছে একটা বান্ধুবিও হয়েছে।
মেহের:গুড কোনো প্রব্লেম হলেই কিন্তু জানাবি।
মুগ্ধ:আচ্ছা।

খাওয়া শেষ করে মুগ্ধ রুমে এসে পড়া পড়লো। সাদাফের দেওয়া পড়াটাও পড়ে নিলো।

সকালে মুগ্ধ কলেজে চলে আসলো।একটু পর সাদিয়াও চলে আসলো।

সাদিয়া:এই কাল তোর থেকে তোর নাম্বারটা নেওয়া হয়নি। তোর নাম্নারটা দে।
মুগ্ধ:হুম এই নেও ০১৯১……
সাদিয়া:আচ্ছা চল ক্লাস শুরু হতে এখনো দেড়ি আছে। একটু কলেজটা ঘুরে দেখি।
মুগ্ধ:আচ্ছা চলো।

সাদিয়া আর মুগ্ধ দুজোনে কলেজ ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো।ঘুরা শেষে দুজোনে এসে ক্লাসে বসলো। প্রথম ক্লাস শেষে এখন সাদাফের ক্লাস। সাদাফ একদম সময় মতো ক্লাসে আসলো।

সাদাফ:গতকালকের পড়াটা সবাই পড়েছো?
সবাই:জি স্যার।
সাদাফ:ওকে তাহলে আমি পড়া একটু ধরি।
সাদাফ সবাইকে পড়া ধরলো। এখন মুগ্ধের পালা।
সাদাফ:মিস মুগ্ধো আপনি আমাকে বলেন যে হুকের একটা সুত্র আছে ওই সুত্রটা আপনি আমাকে বলেন।
মুগ্ধ:”আমরা যদি পীড়ন এবং বিকৃতি বুঝে থাকি তাহলে হুকের সুত্রটি বুঝা খুব সহজ।এই সুত্র অনুসারে স্থিতিস্থাপক সীমার ভেতরে পীড়ন এবং বিকৃতি সমানুপাতিক।”

সাদাফ:গুড মিস মুগ্ধ সিট ডাউন।

বাকি পড়া সবাইকে বুজিয়ে সাদাফ ক্লাস শেষ করে চলেগেলো।
মুগ্ধরাও বাকি ক্লাস করে চলে গেলো।

বাসায় এসে মুগ্ধ দেখলো রুহির মা বাবা আর ভাই এসেছে।মুগ্ধ গিয়ে তাদের সাথে কুসলবিনিময় করে রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নিলো।রুহির মায়ের ঠিক মুগ্ধেক তেমন একটা ভালো লাগেনি।তবুও মেয়ের ননদ হিসাবে হালকা কথা বলেছেন।

বিকালে রুহি রান্না ঘরে কাজ করছিলো তখন রুহির মা সেখানে এসে বলেন,

রুহির মা:শোন রুহি তোর এই ননদ কতদিন থাকবে এখানে?

রুহি মায়ের কথায় বেশ অবাক হলো অবাক হয়েই উত্তর দিলো,

রুহি:মানে?
রুহির মা:না মানে বলছিলাম বাড়ি কবে যাবে। শোন এসব মেয়েদের না কোনো বিশ্বাস নেই। একবার ঘর ভেংগে এসেছে দেখবি আবার আরেক নাগর জুটাবে। চোখে চোখে রাখতে হয় এদের।

রুহি:মা!!কি যাত্তা বলছো।
রুহির মা:যাত্তা না ঠিক বলছি। তুই বল কি এমন কারনে এর স্বামী একে ছাড়লো। নিশ্চই এর চরিত্রে কোনো ভেজাল আছে। দেখ নিশ্চই স্বামী থাকতেও অন্য ছেলেদের সাথে মিশামিশি করতো। তাই স্বামী ছেড়ে দিয়েছে। আমি তোকে বলছি এই মেয়েকে তাড়াতাড়ি এই বাড়ি থেকে বের কর। পরে নাহলে তোদের মানইজ্জতও নষ্ট করবে এই মেয়ে।
রুহি:মা!তুমি যা বলেছো তা যেনো আর কোনোদিন বলতে না শুনি। মুগ্ধ মেহেরের জান।আর মা তুমি আমার সংসারে এসে আমার ননদের সম্পর্কে এসব কথা বলছো। ছিহ্ মা আমি মুগ্ধকে নিজের বোন মনে করি। মা মেয়েটা মানষিক ভাবে কতটা ভেংগে পড়েছে। একটা মেয়ের এমন অবস্থায় ওকে যদি আমরা না সামলাই তো কে সামলাবে। আর তুমি এসে আমাকে এসব বলছো আমার ভাবতেও অবাক লাগছে।
রুহির মা:রুহি তু….
রুহি:মা আর কিছু আমি শুনতে চাইনা। তুমি এখন যাও এখান থেকে।

রুহির মা আর কিছু না বলে চলে আসলেন রান্না ঘর থেকে।এত্তক্ষন আড়াল থেকে সব কিছু শুনছিলো মুগ্ধ। চোখ দুটো তার পানিতে ভোরে গেছে। পলক ফেল্লেই পানি গড়িয়ে পরবে। মুগ্ধ এক দৌড়ে ছাদে চলে আসলো।

মুগ্ধ:হ্যা আল্লাহ তুমি তো জানো আমি এমন কিছু করিনি যার কারনে আরিশ আমাকে ছেড়ে দিলো। আমিতো জানিইনা কেন ও আমায় ছাড়লো। অথচ এই দুনিয়ার লোকগুলো শুধু আমার চরিত্রে দাগ লাগাচ্ছে।আমি কি করে এদের এই ধারনা বদলাবো। আল্লাহ আমাকে তুমি ধৈর্য্য দেও।তুমি তো পবিত্র কোরয়ান শরিফে ধৈর্য্যকে এনোছো ৯২বার আর নামাজকে এনেছো ৮২বার।হ্যা আল্লাহ আমাকে তুমি ধৈর্য্য দেও।

৮.
রাতে মেহের রুহি বাকিরা খেতে বসেছে। কিন্তু মুগ্ধ নিচে আসেনি। শরীর খারাপের বাহানা দিয়ে উপরেই খেয়ে নিয়েছে।খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই যে যার রুমে চলে গেলো।রাতে রুহি নিজের রুমে বসে পড়ছিলো তখন ওর রুমে রাজিব আসলো।

রাজিব:আরে বেয়ান এতো রাতে কি করছেন?

হঠ্যাৎ রাজিবকে আসতে দেখে মুগ্ধ ভয় পেয়েযায়। তাড়াতাড়ি মাথা গায়ে ভালো মতো কাপড় দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।

মুগ্ধ:আরে রাজিব ভাই আপনি এতো রাতে এখানে?
রাজিব:অই ঘুম আসছিলোনা তাই দেখতে আসলাম আপনি কি করছেন।
মুগ্ধ:অহ আচ্ছা আমি পড়ছিলাম আপনি এখন যান কেউ দেখলে খারাপ ভাব্বে।
রাজিব:তারিয়ে দিচ্ছেন বেয়ান।
মুগ্ধ:না মানে এতো রাতে আপনি এইখানে কাল সকালে কথা বলবো নে আমরা।
রাজিব:কিন্তু আমিতো আপনার সাথে এখোনি কথা বলতে চাই…বলেই মুগ্ধের দিকে এগোতে লাগলো রাজিব। মুগ্ধ ভয়ে পিছাতে লাগলো আর বলতে লাগলো,
মুগ্ধ:রাজিব ভাই আপনি এভানে এগোচ্ছেন কেন প্লিজ এগোবেন না।
রাজিব:মুগ্ধ আমি তোমাকে পছন্দ করি খুব। আমার কোনো সমস্যা নেই তুমি ডিভোর্সি তাতে। আমি তোমাকে তোমার আগের স্বামীর থেকে অনেক সুখ দিবো। প্লিজ আমার হয়ে যাও প্লিজ।। কথা গুলো বলে মুগ্ধে দিকে কুকুরের মতো নজর দিয়ে তাকাচ্ছে আর এগোচ্ছে। মুগ্ধ ভয়ে পিছাচ্ছে,,

মুগ্ধ:রাজিব ভাই কি বলছেন আপনি এসব। আমি আপনার বোনের মতো। প্লিজ আল্লাহর দোহাই লাগে আপনি আমার রুম থেকে যান।
রাজিব:আমাদের মাঝে যা হবে কাউকে বলবোনা মুগ্ধ। তুমি ভয় পেয়োনা আসো আমার কাছে আসো।
মুগ্ধ:আমি কিন্তু এভার চিৎকার করবো।
রাজিব:করো করো কেউ আসবেনা।
মুগ্ধ:ভা…..
রাজিব মুগ্ধের চিৎকার করার আগেই মুখ চেপে ধরে। মুগ্ধ ছোটাছোটি করছে ছুটার জন্য। কিন্তু পারছেনা। রাজিব কুকুরের মতো মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে আছে। মুগ্ধের জামার ওড়নায় যেইনা হাত দিতে যাবে তখন রাজিবের পিঠ বরাবর লাথি অনুভব করে সে। ছিটকে পরে যায় খাটের পাশে। মুগ্ধ সামনে তাকিয়ে দেখে মেহের দাঁড়ানো রাগে তার চোখ ফুলে উঠেছে। মুগ্ধ গিয়ে ওর ভাইকে জরিয়ে ধরে।
মেহের বোনকে পাশে রেখে রাজিবকে টেনে উঠিয়ে এলোপাথারি মারতে লাগলো,,

মেহের:জানোয়ারের বাচ্চা তোর সাহস কিভাবে হয় আমার বোনের গায়ে হাত দেওয়ার। আমার ফুলের মতো বোনটার গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করছিস তুই। আজকে তোকে আমি মেরেই ফেলবো….বলে এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি দিতে লাগলো।

এতো চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে রুহি আর রুহির মা এসে দেখে মেহের রাজিবকে মারছে। রুহির মা চিৎকার দিয়ে বলছেন,

রুহির মা:আল্লাহ গো আমার পোলাডারে মাইরা ফেলাইলো গো। রুহি বাঁচা ওরে পাগল হয়ে গেছে জামাই।

রুহি রুহির মা খুব কষ্টে মেহেরকে রাজিবের থেকে সরায়।

রুহি:মেহের কি হয়েছে তুমি রাজিবকে এভাবে মারছো কেন?
মেহের:ছাড়ো আমাকে ওকে আমি মেরে ফেলবো। ও আজকে মুগ্ধের দিকে হাত বারিয়েছিলো। আজ আরেকটু দেড়ি করে আমি আসলে কতবড় ক্ষতি মুগ্ধের হতো তুমি ভাবছো।

রুহি:কিহ?
রুহির মা:কি সব যাতা বলছো জামাই।আমার ছেলে এরকম করতেই পারেনা।রাজিব তুই বল জামাই কি সত্যি বলছে?
রাজিব:না মা এই মেয়েটাই আমাকে ডাকছিলো এই ঘরে। তারপর নিজেই আমার কাছে আসছে। এই মেয়েটার দোষ সব।
রাজিবের কথা শুনে মুগ্ধ অবাক হয়ে যাচ্ছে মুগ্ধ চিৎকার করে বলে,
মুগ্ধ:মিথ্যা কথা উনি মিথ্যা বলছেন।। বিশ্বাস করো ভাইয়া আমি এমন কিছু করিনি। উনি এসেছিলেন এখানে।
রুহির মা:চুপ মিথ্যাবাদী আমি তোকে আগেই বলছিলাম না রুহি এই মেয়ের চরিত্র ভালোনা। এইসব মেয়েরা এমনি হয় নাহলে কি ডিভোর্সি হতো বেসরম মেয়ে মানুষ।

মেহের:এনাফ ইজ এনাফ!আপনাদের সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি।আপনার ছেলে এখানে এসে আমার বোনের সাথে জোরাজোরি করছিলো আমি নিযে এসেই সেটা দেখেছি। আর নিজের ছেলের গুনগান করছেন। বিগত দুইমাসের খোজ নেন তার। কতগুলা মেয়ের সাথে তার এফেয়ার আছে কত মেয়ের সাথে সে বাজে কাজ করছে। আপনার কাছে সাধু সেজে থাকে বলে মনে করেন সে সাধু। আর কি বললেন আমার বোনের চরিত্রে সমস্যা আছে। আমার বোনের চরিত্রে না আপনার মনমানসিকতায় সমস্যা আছে। নিহাত আপনি রুহির মা তাই আপনাকে আমি এখনো কিছু তেমন বলিনি। কিন্তু আপনার এই ছেলেকে আমি যেনো কাল সকালে আমাদের বাড়িতে না দেখি। যদি দেখি তাহলে সত্যি ও আমার হাতে মরবে।

রুহি:মা তুমি ওকে নিয়ে কাল সকাল হতেই চলেযাবে মনে করবে তোমাদের মেয়ে নেই।

রুহির মা অপমানে মাথা নিচু করে ছেলেকে নিয়ে রুম ছেড়ে বের হয়ে গেলেন।

মুগ্ধ তখোনো ঠায় হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলোই মেহের এসে মুগ্ধকে ধরতেই মুগ্ধ সেনস্লেস হয়ে মেহেরের বুকে ঢোলে পরে। মেহের বোনকে এভাবে পরে যেতে দেখে ভয় পেয়ে যায়। বোনেএ দুগালে হাত দিয়ে বলতে থাকে,

মেহের:চড়ুইপাখি পাখি কি হয়েছে তোর। এই চড়ুইপাখি কথা বল কি হলো তোর।

মেহের খুব অস্থির হয়ে পরেছে তাড়াতাড়ি মুগ্ধকে বিছানায় শুইয়ে ডাক্তারকে কল দেয়।

কিছুক্ষনের মাঝে ডাক্তার এসে মুগ্ধকে চেকাপ করতে লাগলো।রুহি মুগ্ধের মাথার কাছে বসে আছে।বেচারির খুব খারাপ লাগছে তার মা ভাইয়ের জন্য আজ মেয়েটার এই অবস্থা। ডাক্তার চেকাপ করে মেহেরর দিকে তাকিয়ে বললো,

ডাক্তার:মিস্টার মেহের আপনার বোন মনে হয় অতিরিক্ত টেনশন করে। আর অনেক স্ট্রেস নেয়। তাই তার শরীর অনেক দুর্বল। আর হয়ত কোনো কারণে সে আজ ভয় পেয়েছে। তাই সেন্সলেস হয়ে গেছে। আমি কতগুলা মেডিসিন দিচ্ছি সেগুলা খাওয়াবেন। আর যতটা পারবেন চিন্তা মুক্ত রাখবেন।

মেহের ডাক্তারের সাথে কথা শেষ করে তাকে বিদায় দিয়ে বোনের পাশে এসে বসলো।আসলেই মেয়েটার চেহারা এই কয়েকদিনে কেমন হয়েগেছে।

পরেরদিন সকালে……

সাদাফ,সাদিয়া,তাদের বাবা মা খাবার টেবিলে বসে নাস্তা করছেন খাওয়া এক প্রান্তে এসে সাদাফের মা সাদাফকে বললেন,

সাফাফের মা:সাদাফ আমি তোমার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে চাচ্ছি।

সাদাফ মায়ের কথায় বেস অবাক হয়ে যায়।
সাদাফ:বিয়ে!
সাদাফের মা:হ্যা বিয়ে।আর কতদিন একা থাকবে আমাদের তো শখ আছে নাকি নিজের ছেলেমেয়ের বিয়ে দেখার।এতোদিন তুমি অনেক বাহানা দিয়েছো।কিন্তু এখন আমি তোমার আর কোনো বাহানা শুনছিনা।
সাদাফ:কিন্তু মা,,
সাদাফের মা:কোনো কিন্তু না সাদাফ।তোমার কাউকে পছন্দ থাকলে বলো তার সাথে বিয়ে দেবো।আমি তোমার বিয়ে এবার দেবো যখন বলেছি তখন দেবোই।
সাদাফ আর কোনো কথা না বলে উঠে বের হয়ে যায়। সাদিয়াও ওর পিছন পিছন বের হয়ে গেলো।

অফিসে বসে নিজের কাজ করছে আরিশ।এই কয়েকদিনে কেমন একটা অস্থিরতা কাজ করছে তার ভেতর।মনে অজান্তেই মিস করছে সে মুগ্ধকে।কিছুই তার ভালো লাগছেনা।আরিশের কাজের মাঝেই তার ফোনে কল আসলো।আরিশ ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে যা শুনে তা শুনে সে চমকে যায়।উত্তেজিত হয়ে বলে,

আরিশ:What!এসব কি করে হলো।আমি এখোনি আসছি।

কল কেটেই আরিশ তারাহুরা করে বেরিয়ে যায় অফিস থেকে।

চলবে
ভুল ত্রুটু ক্ষমা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here