শেষ_থেকে_শুরু পর্ব_১৫,১৬

0
1391

শেষ_থেকে_শুরু
পর্ব_১৫,১৬
নন্দিনী_চৌধুরী
পর্ব-১৫

৩০.
আইসিউতে নেওয়া হয়েছে মেহেরকে।গুলিটা একদম বুকে লেগেছেগিয়ে।অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে।সাদাফ,রুহি,মুগ্ধ,সাদিয়া,রায়হান সবাই হাসপাতালে।রুহি সেন্সলেস হয়ে গেছে।তাই রুহিকে একটা কেবিনে দেওয়া হয়েছে।রুহির সাথে সাদিয়া আছে।অপারেশন চলছে মেহেরের।মুগ্ধ কান্না করতে করতে একদম অস্থির হয়ে গেছে।সাদাফ খুব কষ্টে ওকে সালাচ্ছে কিন্তু সামলাতে পারছেনা।

মুগ্ধ হাসপাতালের নামাজের এরিয়াতে এসে নামাজ পড়ে ভাইয়ের জন্য দোয়া করছে।

মুগ্ধ”হ্যা আল্লাহ তুমি আমার ভাইকে ভালো করে দেও এই দুনিয়ায় আমার ভাই ছাড়া আমার কেউ নাই।আল্লাহ তুমিতো জানো আমার ভাই কত ভালো।আমার গায়ে সে কখোনো একটা আচ আসতে দেয়নি।তুমি ভাইয়াকে ভালো করে দেও।ভাইয়ার অনাগত সন্তানটার দিকে তাকিয়ে ভাইয়া ভালো করে দেও।”

মুগ্ধ জায়নামাজে দাঁড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদছে।হাসপাতালে আসার পর থেকেই সে এভাবে কাঁদছে।তার কান্না দেখে আসে পাসের সবাই হতভাগ।এই যুগে ভাই বোনের এমন সম্পর্ক দেখাইযায়না।

এদিকে,
সারাদেশের টিভি নিউজে একটাই খবর ঘুরছে।বিখ্যাত বিজনেস মেন আরিয়ান ইসলাম মেহেরকে তার সৎ মা সালমা খান গুলি করেছেন।জানাযায় সালকা খান মরহুম মিস্টার খানের প্রথম স্ত্রী মেহেজাবীন ইসলামকে খুন করেছেন।এরপর মেহেজাবীনের মেয়েকেও মারার চেষ্টা করেছেন তিনি।এতোদিন মিসেস সালমার মেয়ে সায়মা ইসলাম যাকে সবাই মেহেরাবের মেয়ে জানতো সে মিস্টার মেহেরাবের মেয়ে নয়।সালমা ওর তার প্রেমিকের অবৈধ সন্তান সে।জানাযায় মা আর মেয়ে মিলে মুগ্ধের সংসার নষ্ট করেছেন।আগামিকাল তাদের কোর্টে তোলা হলে তাদের রায় জানানো হবে।

জেলের সেলে বসে সংবাদ শুনছে আরিশ।এতো নোংড়া মানুষ তা আরিশ ভাবতেই পারেনা।সেই নোংড়া মানুষ গুলোর ফাঁদে পা দিয়ে সে আজ সব হারালো।তবে আল্লাহ তাদের বিচার করেছে।পাপের শাস্তি পাচ্ছে তারা।সায়মাকে সে কোনোদিন ক্ষমা করবেনা।ঘৃণা করে সে সায়মাকে।

২ঘন্টা পর ডাক্তার আইসিউ থেকে বের হলেন।সাদাফ ডাক্তারের সাথে কথা বলতে গেলো,

সাদাফ:ডাক্তার মেহের?
ডাক্তার:আল্লাহর রহমতে গুলি বুক ছুঁয়ে বেরিয়ে গেছে।পুরাপুরি বুকে লাগেনি।লাগলে বাঁচানো রিস্ক ছিলো।১২ ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরবে তারপর আপনারা দেখা করতে পারবেন।আর একটু পরে কেবিনে দেওয়া হবে।
সাদাফ:জি আচ্ছা।
সাদাফ কথা শেষ করে মুগ্ধের কাছে গেলো।মুগ্ধ রুহির কেবিনে ছিলো।সাদাফ কেবিনে এসে খবরটা দিলো।খবরটা পেয়ে সবাই খুশি হলো।মেহেরের খবর পেয়ে অলরেডি রুহির মা বাবা ভাই এসেছে।রুহির মা এসে মুগ্ধের কাছে মাফ চেয়েছে।রাজীব ও মুগ্ধের কাছে মাফ চেয়েছে।মুগ্ধ তাদের মাফ করে দিয়েছে।রাতের দিকে রুহির জ্ঞান ফিরলে।মেহেরের কাছে যাওয়ার জন্য পাগলামি করে।মুগ্ধ রুহির মা অনেক কষ্টে রুহিকে সামলায়।তারপর বুজিয়ে বাসায় নিয়ে যায় রুহির মা রুহিকে।হাসপাতালে এখন মুগ্ধ সাদাফ আছে।সাদিয়া বাসায় গেছে ফ্রেশ হয়ে ওদের জন্য খাবার নিয়ে আসবে।

মুগ্ধ আর সাদাফ বসে আছে কেবিনের বাহিরে।কান্নার কারনে মুগ্ধের চোখ মুখ অনেকটা ফুলে গেছে আর দেখতে বেশ ক্লান্ত লাগছে।সাদাফ একটু বাহিরে এসে মুগ্ধের জন্য কিছু হাল্কা খাবার আনে।খাবার এনে মুগ্ধের পাশে বসে।মুগ্ধ তখন মাথা নিচু করে বসেছিলো।

সাদাফ:মেহুরানী!
সাদাফের ডাকে মাথা উঁচু করে তাকায় মুগ্ধ।
সাদাফ মুগ্ধের দিকে একটা কেক আগিয়ে দেয়।
সাদাফ:সারাদিন কিছু খাওনি কেঁদেছো।এখন এইটা খেয়ে নেও।
মুগ্ধঃআমার ক্ষুধা নেই।
সাদাফঃক্ষুদা আছা নাকি নেই তা আমি জানতে চাইনি আমি বলেছি খেতে মানে খাবে।
মুগ্ধঃনা আমি খাবোনা।
সাদাফঃতুমি সিওর খাবানা।
মুগ্ধঃনা
সাদাফঃওকে।
সাদাফ কেকের প্যাকেটটা খুলে কেক হাতে নিয়ে মুগ্ধের গাল দুটো আরেক হাত দিয়ে চেপে কেকটা মুখে ডুকিয়ে দিলো।মুগ্ধ চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো।
সাদাফঃআমি জানি তুমি অনেক ঘাড়ত্যাড়া।কিন্তু আমিও কম ঘাড়ত্যাড়া না।এই নেও পানি কেকটা গিলো আর পানি খাও।
মুগ্ধ সাদাফের হাত থেকে পানির বোতলটা নিয়ে পানি খেয়ে নিলো।সাদাফের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে নিলো।সাদাফ মুচকি হাসলো।সাদিয়া আর রায়হান খাবার নিয়ে এসেছে মুগ্ধ সাদাফের জন্য।রাতে সাদাফ আর মুগ্ধ এখানে থাকবে।সাদিয়া থাকতে চেয়েছিলো সাদাফ না করে দিয়েছে।মুগ্ধ ক্লান্ত থাকায় সিটে বসে সাদাফের কাধেই মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছে।সাদাফ হাসপাতালের লোকেদের সাথে কথা বলে অন্য একটা কেবিনে মুগ্ধকে শুইয়ে দিয়ে আসলো।ঘমন্ত অবস্থায় মুগ্ধকে একদম পিচ্চি লাগছে।সাদাফ হালকা একটু খেয়ে নেয়।তারপর মেহেরের কেবিনের সামনে ঘুরে আসে।সাদাফ এসে মুগ্ধের কেবিনের চেয়ারে বসে পড়ে।ফোন থাতে নিয়ে গ্যালারি ওপেন করে।সেখানে মুগ্ধের অনেক ছবি।সাদিয়ার কাবিনের দিন মুগ্ধের শাড়ি পড়াছবিও আছে।

সাদাফঃএখন তোমাকে আমার মনের কথা আমি জানিয়ে দেবো।আর তোমাকে নিজের থেকে দূরে রাখতে পারবোনা।

পরেরদিন,
১২টায় মেহেরের জ্ঞান ফিরেছে।জ্ঞান ফেরা মাত্র মুগ্ধ মেহেরের সাথে দেখা করে।

মুগ্ধ কান্না করছে দেখে মেহের আসতে করে বলে,

মেহেরঃচড়ুইপাখি কান্না করছিস কেন।আমিতো ভালো আছি।
মুগ্ধঃহ্যা ভালোআছিস।জানিস আমার কত কষ্ট হচ্ছিলো।ভাবিপু কত কষ্ট পাইছে।
মেহেরঃজানিতো আমার বউ বোনের কত কষ্ট হইছে।রুহি কই?
মুগ্ধঃভাবি কাল তোর গুলি লাগার পর সেন্সলেস হয়েগেছিলো রাতে ভাবি মা বাবা আসছিলো তাদের সাথে বাসায় পাঠাইছি।কিছুক্ষনের ভিতর আসবে তারা।
মেহেরঃওনারা কেন আসছে?
মুগ্ধঃরাগীস না ভাইয়া খালাম্মা আমার কাছে তার ভুলের জন্য মাফ চেয়েছে।রাজীব ও চাইছে।তাই আর রাগ করিস না।

এর মাঝে রুহি তার মা বাবা আসলো।রুহিকে দেখে মুগ্ধ উঠে আসলো।রুহি মেহেরের কাছে এসে কান্না করে দিলো।মেহের রুহিকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।মুগ্ধ বেরিয়ে আসলো কেবিন থেকে।বাসায় যেতে হবে ফ্রেশ হয়ে ভাইয়ের জন্য কিছু খাবার আনতে হবে।সাদাফ সব মেডিসিন কিনে দিয়ে আসছে।সেও বাসায় যাবে।বিকালে আসবে আবার।সাদাফ গেটে এসে দেখে মুগ্ধ দাঁড়ানো।মুগ্ধকে দেখে সাদাফ ওর কাছে আসলো।

সাদাফঃবাসায় যাবানা?
মুগ্ধঃহ্যা সেই জন্যতো গাড়ি খুজতেছি।
সাদাফঃগাড়ি খুজতে হবেনা।আমার সাথে আসো।পৌছে দিচ্ছি।
মুগ্ধঃনা থাক আমি এ..।
সাদাফঃনো মোর ওয়ার্ড এভার কিন্তু কালকের মতো কোলে তুলে গাড়িতে বসাবো।পাব্লিক প্লেসে তুমি নিশ্চই তা চাওনা।
মুগ্ধ সাদাফের কথা শুনে ভয় পায়।মুগ্ধ জানে সাদাফ যা বলে তাই করে।তাই আর কথা না বাড়িয়ে উঠলো সাদাফের গাড়িতে।সাদাফ মুগ্ধকে বাসায় পৌছে দিয়ে আসলো।

এক সপ্তাহ পর,,,
মেহেরকে বাসায় আনা হয়েছে।ফুল বেড রেস্টে তাকে রাখা হয়েছে।কোর্টে শুনানিতে সালমা খানের জাবত জীবন কারাদন্ড হয়েছে।সায়মার ৭বছরের জেল।সায়মা একদম চুপ হয়ে গেছে।সব সত্যি জানার পর নিজের প্রতি নিজের ঘৃণা লাগছে।সে আর আরিশের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারবেনা।মুখ দেখাতে পারবেনা আর কাউকে।আজ বুঝতে পারছে সে মিথ্যা কোনোদিন টিকে থাকেনা সত্য একদিন বেরিয়ে আসেই।

আজকে সাদাফ সাদিয়া আর ওদের বাবা মা এসেছে মেহেরকে দেখতে।পাশাপাশি আরেকটা কাজের জন্যেও তারা এসেছে।

মেহেরের রুমে বসে আছে সাদাফের মা বাবা।

মেহেরঃকেমন আছেন মিস্টার হাসান?
মিস্টার হাসানঃআলহামদুলিল্লাহ ভালো।তোমার এখন কি অবস্থা?
মেহেরঃজ্বি আলহামদুলিল্লাহ।
মিস্টার হাসানঃহ্যা খবরেও দেখলাম সাদাফের থেকেও সব শুনলাম।সত্যি খুব খারাপ লাগছে এসব শুনে দেখে।
মেহেরঃহুম।ভাগ্যে যা ছিলো তাই হয়েছে।
মিস্টার হাসানঃমেহের আমি তোমাকে কাছে একটা প্রস্তাব রাখতে চাচ্ছি।
মেহেরঃকি প্রস্তাব মিস্টার হাসান?
মিস্টার হাসানঃআসলে আমি মুগ্ধকে আমার ঘরের বৌমা করতে চাই।আমাদের ওর অতীত নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।সাদাফ ওকে খুব ভালোবাসে।তুমি অমত করোনা দোয়া করে।
মেহেরঃআমি জানি সাদাফ মুগ্ধকে পছন্দ করে ভালোবাসে।কিন্তু আমি সাদাফকে আগেই বলেছি আমার বোনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ওর মতের বিরুদ্ধে কিছু করবোনা।আপনি সাদাফকে বলেন মুগ্ধকে আগে জানায় যেনো।আর আমি চাই আমার বোন আগে নিজের পায়ে দাড়াক।ওর নিজের জীবনের ইচ্ছা পূরন করুক।তারপর এসব নিয়ে ভাবুক।
মিস্টার হাসান মেহেরের সাথে আরো কিছু কথা বলে চলে আসেন।রাতে সাদাফকে মেহেরের কথা গুলো জানায়।সাদাদ তাতে সম্মতি দেয়।সাদাফ ও চায় যাতে মুগ্ধ আগে নিজের পায়ে দাড়াক তারপর তাকে বিয়ে করুক।কিন্তু তার মনের কথা সে মুগ্ধকে জানাবে।

৩১.
সাদাফ সোফায় বসে কল দিলো মুগ্ধের নাম্বারে।মুগ্ধ বেলকোনিতে দাঁড়িয়েছিল ফোন আসতে ফোন হাতে নিয়ে দেখে সাদাফ।ঠোঁটের কোণে এমনি হাঁসি ফুটে উঠে তার।মুগ্ধ কলটা রিসিভ করলো।
সাদাফঃআসসালামু আলাইকুম।
মুগ্ধঃওয়ালাইকুমুস সালাম।কেমন আছেন?
সাদাফঃহুম ভালো তুমি?
মুগ্ধঃজি আমিও আলহামদুলিল্লাহ।
সাদাফঃকি করছো?
মুগ্ধঃজি বেলকোনতে দাঁড়িয়ে আছি। আপনি?
সাদাফঃবসে আছি।একটা কথা বলার ছিলো।
মুগ্ধঃহ্যা বলেন।
সাদাফঃফোনে না।সামনাসামনি বলবো।আগামিকাল লেকের পারে আসবে।
মুগ্ধঃউম আচ্ছা ঠিক আছে।
সাদাফঃশুভ রাত্রী।
মুগ্ধঃশুভ রাত্রী।

সারারাত সাদাফ মুগ্ধের কথা ভাবতে থাকে।কাল সে কিভাবে তার মনের কথা বলবে।

পরেরদিন বিকালে,
মুগ্ধ একটা নীল শাড়ি পরেছে।কেন জানি আজ তার এটা পরতে ইচ্ছা করছে।শাড়ির সাথে খোপা করেছে।একদম নরমাল কোনো সাজ নেই।তারপর মুগ্ধ চলে আসে লেকের পারে।সাদাফ সেখানে আগে থেকেই এসে দাঁড়ানো।মুগ্ধ সাদাফের পাশে কিছুটা জায়গা রেখে দাঁড়ায়।সাদাফ মুগ্ধকে আড়চোখে দেখে হাসলো।
লেকের পারে হালকা বাতাস।নদীর পানির স্রোত।পাখির ডাক।বেশ ভালোই লাগছে।

সাদাফঃজায়গাটা সুন্দর না?
মুগ্ধঃহ্যা অনেক সুন্দর।
সাদাফঃআমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।
মুগ্ধঃহ্যা বলুন।

সাদাফ এভার মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে বলা শুরু করে,

মুগ্ধ তুমি এখন জানোই আমি তোমাকে আগে ভালোবাসতাম।সায়মা আমার সাথে তুমি সেজে প্রতারণা করেছে।তখন জানতাম না সেটা তুমিনা।অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম রাগ করেছিলাম তোমার উপরে।এরপর হাসপাতালে সেদিন জানতে পারি তুমি আমার মুগ্ধ।যাকে আমি দেখেছিলাম দুইবছর আগে।কিন্তু আমার সাথে কথা বলতো অন্য কেউ।এরপর সত্য খোঁজার চেষ্টা করি।সত্য উদ্ধার করি।এখন সবাই তাদের পাপের শাস্তি পেয়েগেছে।তাই আমি আজ দ্বিতীয়বার আমার আসল মুগ্ধকে বলছি,,

“ভালোবাসি মেহুরানী।অনেক ভালোবাসি।আমার জীবনের #শেষ_থেকে_শুরু আমি তোমাকে চাই দেবে কি আমাকে সেই সুযোগ।”

সাদাফের কথা শুনে মুগ্ধ চমকে যায়।সে আশা করেনি এমন কিছু।মুগ্ধ নিজেকে সামলে বলে উঠে,

মুগ্ধঃযখন কৈশরে পা দেই প্রেম ভালোবাসা কি তা বোঝার আগে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হলো।স্বামী নামক মানুষটাকে যখন নিজের মনে একটু ঠাই দিলাম সে আমাকে ছেড়েদিলো।জানি সে ষড়যন্ত্রের স্বিকার।কিন্তু তবুও সে আমায় ঠকিয়েছে।এখন এই ভালোবাসা বিয়ে সম্পর্কের প্রতি বিশ্বাস করতে পারিনা।আর তাছাড়া আমি নিজেকে প্রতিষ্ঠিট করতে চাই স্যার।তারপর এসব নিয়ে ভাবতে চাই।আর সায়মার হয়ে সত্যি আমি ক্ষমা চাচ্ছি।ও যা করেছে অন্যায় করেছে।আমার তো আপনার কথা মনেই ছিলোনা।ওই একবার আপনার সাথে দেখা হয়েছিলো।তারপর আর দেখা হয়নি।মনে তাহলে থাকবে কিভাবে।

সাদাফঃআমি তোমার কথা বুজতে পেরেছি।আমি তোমাকে বলিনি এখোনি আমার কাছে আসতে।তোমার জীবনে তুমি প্রতিষ্ঠিত হউ সেটা আমিও চাই।তুমি আমাকে সব সময় নিজের পাশে পাবা।তুমি যখন চাবে সেদিন আমি তোমাকে আমার ঘরের রানী করে আনবো।আমি চাই তুমি সময় নেও যতটা সময় নেও ততোটা।নিজেকে নিজের মতো করে তৈরি করো তুমি।ততোদিন আমি ভালোবাসার দাবি নিয়ে আসবোনা।একজন বন্ধ হয়ে তোমার পাশে আছি।

মুগ্ধঃধন্যবাদ আমাকে বোঝার জন্য।

সাদাদ মুগ্ধ আরো কিছুটা সময় ঘুরে যার যার বাসায় চলে যায়।
মুগ্ধ এখন আগের মতো কলেজে যায়।এক্সামে অনেক ভালো রেজাল্ট করছে।সাদাফ সত্যি তাকে অনেক হেল্প করেছে পড়াশুনায় বিষয়।একজন বন্ধুর মতো ওর পাশেছিলো।

মেহের আরিশের অফিসের ম্যানেজারকে খুজে ধরিয়ে দেয় পুলিশের কাছে।সেই অফিসের সব গন্ডগোল করেছে।আরিশের এক বছরের জেল হয়েছে আর মেনেজারের ১২ বছরের জেল।

দেখতে দেখতে ছয় মাস চলে গেলো,,,,,

মেহেরের ঘর আলো করে একটা ছেলে এসেছে।দেখতে একদম মেহেরের মতো হয়েছে।মুগ্ধ নাম রেখেছে ছেলের মাহির।
মুগ্ধ এখন সাদাফের সাথে অনেক ফ্রি হয়ে গেছে।প্রায় প্রায় তারা ঘুরতে যায়।কথা বলে।মুগ্ধের মনে হয়তো এখন সাদাফের জন্য ভালোলাগা বা ভালোবাসা হয়তো শুরু হয়েছে।

চলবে

#শেষ_থেকে_শুরু
#পর্ব_১৬
#নন্দিনী_চৌধুরী

৩২.
এক বছর পার হয়ে গেছে,
আজকে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে আরিশ।আশার আগে একবার দেখা করতে চায় সায়মার সাথে।জেলোরের থেকে অনেক কষ্টে অনুমতি নিয়ে সায়মার সাথে দেখা করতে জেলের অন্য সেলে আসছে সে।সায়মা দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে।চোখের নিচে কালো দাগ পরে গেছে। যেই মেয়েটা আগে সপ্তাহে সপ্তাহে ফেসিয়াল করতো পার্লার যেতো আজ এক বছর ঠিক মতো নিজের যত্ম নিচ্ছেনা।

“নিজের জীবনে এমন সুখ কখনো এনোনা যে সুখ তোমার নয়।যা তুমি অন্যের থেকে কেড়ে এনেছো।মনে রেখো প্রকৃতি কিন্তু তা আবার সেটা কেড়ে নেবে।কারন অই সুখের আসল মালীক তুমি নও”।

হ্যা,আরিশ নামক সুখটা সায়মার ছিলোনা। আরিশ নামক সুখটা ছিলো মুগ্ধের।সে ছিনিয়ে এনেছে সেই সুখ।আজ সেই সুখ কি আছে তার কাছে।না নেই সেই সুখ সে হারিয়ে ফেলেছে।অইযে প্রকৃতি তার থেকে নিয়ে নিলো।মুগ্ধকে দেওয়ার কষ্টের শতগুন কষ্ট সে পাচ্ছে।

আরিশ জেলের সেলের সামনে এসে সায়মার নাম ধরে ডাক দিলো।
আরিশঃসায়মা!
সায়মার কারো ডাক শুনে সামনে তাকিয়ে দেখে আরিশ।আরিশকে দেখে বুকটা ধক করে উঠে তার।আসতে করে উঠে এগিয়ে যায় আরিশের দিকে।আরিশ সায়মাকে দেখে চোখ মুখ শক্ত করে বলে,

আরিশঃতোমার মতো রাস্তার মেয়ের কথা শুনে আমি আমার স্ত্রীকে অবিশ্বাস করেছি।জেনার মতো অপরাধে লিপ্ত হয়েছি যার কোনো ক্ষমা নেই আল্লাহর কাছে।তোমার কথা বিশ্বাস করে নিজের সব হারিয়েছি।একটা মেয়ে কতটা নির্লজ্জ হলে নিজের মাতৃত্ব নিয়ে মিথ্যা কথা বলে তা তোমাকে না দেখলে জানতাম না।তুমি আর একটা পতিতার মাঝে কোনো পার্থক্য নেই।পতিতা যেমন টাকার জন্য শরীর বিলিয়ে দেয়।তুমিও টাকার জন্য নিজেকে আমার কাছে বিলিয়ে দিয়েছিলে।আর আমি বোকার মতো তাতে সায় দিয়েছি।তোমার নিজের তো জন্মের ঠিক নেই জারজ তুমি।আর যার মা এমন হবে এটাই আশা করা যায়।তোমার সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ।তোমার আমার মধ্য কিছু আর নেই।একটা মিথ্যাবাদীকে আমি আমার স্ত্রী বলে মানিনা।আশা করি এই জেল থেকে তোমাকে যেনো না ছাড়ে।আর হ্যা কোনোদিন নিজের এই মুখটা আমাকে দেখাবেনা।
কথা গুলো বলে আরিশ চলে আসলো।সায়মা আরিশেরন কথায় পালটা কোনো জবাব দেয়নি।কি জবাব দেবে সে আরিশ তো মিথ্যা কিছু বলেনি।আসলেইতো একটা প্রস্টিটিউডের মতো কাজ করেছে সে।নিজের মায়ের কথায় সব শেষ করে দিলো সে।যেই বোন তাকে ছোট থেকে আগলে রেখেছিলো তাকে কষ্ট দিলো।আরিশকে ধোকা দিলো।অথচ সে নিজেই কতো জঘন্য।তার মায়ের পাপের ফসল সে।সেই ফসলকে নিজের মেয়ের মতো আগলে রেখেছিলো মেহেরাব।আর তার মেয়েকেই কষ্ট দিলো সে।তার তো মৃত্যু হওয়া উচিত।বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই তার।

দোয়া করো আরিশ এই জারজটার যেনো এই কারাগারেই মরণ হয়।লাশ হয়ে যেনো এখান থেকে বেরহয় সে।নাহলে যেদিন এখান থেকে বের হবো সেদিন কারো কাছে মুখ দেখাতে পারবোনা।

মেহেরদের বাসায়,
মাহিরকে খাওয়াচ্ছে রুহি।ছেলেটা কিছু খেতে চায়না।সারাদিন শুধু দুষ্টুমি।আদো আদো গলায় মা,বাবা আর মামনি ডাক দেয়।মামনি ডাকে মুগ্ধকে।মুগ্ধ মাহিরকে অনেক আদর করে।সারাদিন ফুপু ভাতিজা মিলে শয়তানি করে।আর রুহি মেহের তা দেখে হাসে।

মুগ্ধ নিজের রুমে বসে রেডি হচ্ছে।আজকে তার নিজের এনজিওর উদ্ভাবনের দিন।হ্যা মুগ্ধ নিজের একটা এনজিও করেছে সেখানে সে অসহায় মেয়েদের নিয়ে কাজ করে।তাদের নতুন করে বাঁচার অনুপ্রেরণা দেয়।মুগ্ধকে সাদাফ এই এনজিও অপেনে অনেক হেল্প করেছে।মুগ্ধ এখন সাদাফকে চোখে হারায়।মুখে যদিও বলেনা। কিন্তু তার মনে সাদাফ তার জায়গা করে নিয়েছে।সাদাফের ভালোবাসার হার মেনেছে মুগ্ধ।অবশেষে সে ভালোবেসে ফেলেছে সাদাফকে।মুগ্ধ ঠিক করেছে আজ সে সাদাফকে জানাবে তার মনের কথা।মুগ্ধ একটা সবুজ কালার জামদানী পরলো।চুল গুলো খুলা রাখলো।হালকা একটু সাজলো।তারপর বেরিয়ে পরলো।এনজিওর উদ্দেশ্য।মেহের আর রুহিও যাচ্ছে ওর সাথে।

সাদাফ,সাদিয়া রায়হাম অলরেডি এসে পরেছে অপেক্ষা করছে মুগ্ধদের জন্য।কিছুক্ষনের মাঝে মুগ্ধরা চলে আসলো।সাদাফ প্রতিবারের মতো মুগ্ধকে শাড়িতে দেখে নতুম দফায় তার প্রেমে পড়েযায়।সাদাফ মুগ্ধকে দেখে বিড়বিড় করে বলে,

এই মেয়েটা এমন কেন।জানে আমি ওকে শাড়িতে দেখলে ঠিক থাকতে পারিনা তাও শাড়িই পরে আসে।ওকে যে শাড়িতে ভয়ংকর সুন্দুরী লাগে ও কি সেটা জানেনা।ফাজিল মাইয়া আমার মাথা খারাপ না করলে হয়না।

মুগ্ধ সাদাফকে দেখে একটা মুচকি হাসি দিলো।তারপর চলে আসলো এনজিওর ভিততে।কেচি দিয়ে রিবন কেটে প্রবেশ করলো তারা এনজিওতে।এখানে অসহায় নারি,ডিভোর্সি নারি,অনাথ শিশু সবাইকে সেবা প্রধান করা হবে।সাদাফ মুগ্ধকে সব বুজিয়ে দিলো।মুগ্ধ বাকিটা ওর এনজিওর মেনেজার জান্নাতকে সব বুজিয়ে দিলো।আজকে প্রথম দিন ওরা সব অসহায় গরিবদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছে।সবাইক্ব খাবার দিয়ে টাকা দিলো।এতো সময় মুগ্ধ সাদাফকে দেখেনি।মুগ্ধ বেরিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখে সাদাফের ম্যাসেজ।

“আমি পাশের পার্কে আছি চলে আসো এখানে।”
মুগ্ধ মুচকি হেসে এক তোরা গোলাপ নিলো।সাদাফের বলা মতো চলে আসলো পার্কে।গোলাপের তোরাটা হাতে নিয়ে এগিয়ে গেলো সাদাফের কাছে।সাদাফ তখন দুর আকাশের পানে তাকানো।মুগ্ধ সাদাফের কাছে গিয়ে বলে,

মুগ্ধঃএইযে মিস্টার বোবা ভূত।
সাদাফ পিছনে ঘুরতেই মুগ্ধ গোলাপের তোরাটা সাদাফের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,

“আমি জানিনা কখন কিভাবে আপনি আমার এতো কাছে চলে আসলেন।আমার দুঃসময় আমার পাশে ছিলেন।আমাকে সকল ভাবে সাহায্য করেছেন।আমার বিপদে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন।আমার জীবন নতুন ভাবে শুরু করতে সাহায্য করেছেন।আজকের মুগ্ধ হবার পিছনে ভাইয়ার মতো আপনার অবদান অনেক।আপনি বলেছিলেন আমাকে কোনোদিন ভালোবাসার জন্য জোর করবেন না আপনি করেন নি।বরং আমার পাশে ছিলেন।আমি আমার জীবনে নতুন শুরু করতে চাই #শেষ_থেকে_শুরু করতে চাই আপনার হাত ধরে।আমাকে কি আপনি গ্রহন করবেন।”

মুগ্ধের কথা গুলো শুনে সাদাফের চোখ থেকে পানি পরছে।হয়তো এই প্রথম কোনো মেয়ে তার মনের কথা বলছে আর কোনো ছেলে তা শুনে কাঁদছে।সাদাফ মুগ্ধের হাত থেকে গোলাপের তোরা টা নিলো তারপর হাটুগেড়ে পকেট থেকে একটা রিং বের করে মুগ্ধের সামনে ধরলো আর বললো,

মেহুরানী আমি তোমাকে আমার মনের রানী আমার ঘরের রানী করতে চাই।আমার সবটুকু ভালোবাসা তোমাকে দিতে চাই।তোমার মাঝে নিজেকে হারাতে চাই।দেবেকি সেই সুযোগ আমাকে”।

মুগ্ধ মুচকি হেসে হাত বারিয়ে দিলো।সাদাফ রিংটা মুগ্ধের হাতে পরিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে জরিয়ে ধরলো মুগ্ধকে।দুইজনের চোখেই পানি।আজকে দুইজনে দুজনের ভালোবাসা পেলো।আজকের সূর্য,আকাশ,বাতাশ গাছ পাখি তাদের ভালোবাসার সাক্ষ্যি থাকলো।

আরিশ রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।সব কিছু হারিয়ে ফেলেছে সে।তার বাড়ি ঘর তারপর ভালোবাসা সব হারিয়ে আজ সে পথের ফকির।আরিশ রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।পেটে ক্ষুদা আর পিপাসা নিয়ে হেটে যাচ্ছে সে।রাস্তার পাশ্ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় রাস্তার ওপারে তাকিয়ে দেখে বুকটা মোচর দিয়ে উঠলো।কারন সাদাফ আর মুগ্ধ এক সাথে হেঁটে যাচ্ছে।মুগ্ধ সাদাফের কাধে মাথা দিয়ে হেটে যাচ্ছে।আরিশের বুকে খুব কষ্ট হচ্ছে।আরিশ মনে মনে বললো,

ভালো আছো তাহলে মুগ্ধ তুমি।সব নতুন করে শুরু করেছো তাইনা।হ্যা করবেইতো আমার মতো একটা অমানুষকে ভালোবেসে শুধু কষ্ট পেয়েছো।আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি।নতুন মানুষটাকে নিয়ে ভালো থাকো।আল্লাহ তোমাকে ভালো রাখুক।কোনোদিন তোমার সামনে যাবোনা।

দেখতে দেখতে আরো এক মাস চলে গেলো,,,
দুই পরিবারের মতে করে বিয়ে ঠিক হলো সাদাফ মুগ্ধের।এক সপ্তাহ পর বিয়ে তাদের।সাদাফ মুগ্ধ এই এক মাস চুটিয়ে প্রেম করেছে।এইতো সেদিন রাতে মুগ্ধ সাদাফ ফোনে কথা বলছিলো।

সাদাফঃআচ্ছা মেহুরানী আমাদের বিয়ে হলে আমাদের তো কিউট কিউট বেবি হবে তাইনা।
মুগ্ধঃহুম কেন?
সাদাফঃউম তাহলে আমার চারটা মেহুরানী লাগবে।
মুগ্ধঃকিহ চারটা।মাথা গেছে নাকি আপনার হু।বিয়ের খবর নাই আসছে চারটা বাবু নিতে।শুনেন দুইটার বেশি একটাও না।
সাদাফঃবিয়েতো হয়েই যাবে কিছুদিন পর।তাই এখোনি ফ্যামিলি প্ল্যানিং করে নিচ্ছি আর আমার চারটা মেহুরানীই চাই মানে চাই।
মুগ্ধঃআচ্ছা তাহলে দুটো আমি পেটে ধরবো আর দুটো আপনি পেটে ধইরেন হু।
সাদাফঃকিহ ইস ছিহ এগুলা কি বলো।আমি কেম্নে ছিহ।
মুগ্ধঃওমা এইনা বললেন চারটা লাগবে তাহলে দুটো আমি জন্ম দেবো আর দুটো আপনি।
সাদাফঃনা না আচ্ছা ঠিক আছে দুইটাই নিবো☹️।
মুগ্ধঃগুড বয়।
সাদাফঃভালোবাসি মেহুরানী।
মুগ্ধঃভালোবাসি আমার বোবাভূতটাকে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here