শেষ_থেকে_শুরু_২,পর্ব_১৩
নন্দিনী_চৌধুরী
২৪.
সায়মা ওর মা বসে আছে একসাথে সোফায়। দুজনের মুখেই চিন্তার ছাঁপ স্পষ্ট। সালমা মাথায় হাত দিয়ে ভাবছে আর সায়মা তার পাশে চুপচাপ বসে আছে। কিছু সময় পর সায়মা ওর মাকে বলে,
সায়মা:এখন কি করবো মা?
সালমা মেয়ের কথা শুনে রেগে বলে,
সায়মা:এখন কি করবো আমাকে জিজ্ঞেশ করছিস কেনো। যখন আরিশের গলায় টোপকে ছিলি তখন আমাকে জিজ্ঞেশ করেছিলি একবারও।
সায়মা:আরে আমি তো তখন বুঝিনি যে মেহের ভাই চলে আসবে। আমিতো ভেবেছিলাম মুগ্ধকে কষ্ট দিবো আর ও কষ্টে অপমানে উলটাপালটা কিছু করবে। তানা ও যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে লাগবে আবার মেহের ভাই চলে আসবে তাতো বুঝতে পারিনি। আর মা তুমিই বলো আমার প্রতিশোধ আমি নিবোনা। আমি ওকে বলেছিলাম বাবাকে বলিস না আমি নেশা করি সেটা। কিন্তু না ও বাবাকে বলে দিলো আর বাবা আমাকে বাসা থেকে বের করে দিলো। ওর জন্য আমাকে আমার ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হয়েছে। সেই ওকে আমি সুখে থাকতে দেই কিভাবে বলো মা।
সালমা:তুইতো কয়েক বছরের প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছিস আর আমি! আমিতো সেই ২০ বছরের প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছি। আমার অর্ধেক প্রতিশোধ তো নেওয়া হয়েগেছিলো বাকিটাও নিয়ে নেওয়া হতো যদিনা মেহের এখন চলে আসতো। [মনে মনে]
সায়মা:ওমা কি ভাবছো?
সালমা:ভাবছি কি করবি এখন। শোন তুই বাচ্চা নিয়ে নে। আরিশ বাচ্চা চায়। আর এই বাচ্চাই পারবে তোকে বাঁচিয়ে দিতে। মেহের জানতে পারলেও কিছু করতে পারবেনা যদি শোনে তুই প্রেগন্যান্ট। আর তুইতো বললি আরিশ জানেনা যে তুই মুগ্ধের চাচাতো বোন। তাহলে আরিশকে নিয়ে আর চিন্তা থাকবেনা বাচ্চা এসে গেলে।
সায়মা:কি বলছো মা এখোনি বাচ্চা নিয়ে নেবো। তাহলে আমার ফিউচার তো শেষ এই বাচ্চা নিয়াই।
সালমা:চুপ! কিছু কিছু সময় আমাদের না করতে চাওয়া জিনিশ ও করলে কাজে লাগে। তুই বাচ্চা নে দেখিস সব ঠিক থাকবে।
সায়মা:আচ্ছা।
সালমা:খুব দ্রুত বাচ্চা নে তারপর ওই মেহের তোর কিছু করতে পারবেনা।
সায়মা:ঠিক আছে।
মায়ের সাথে কথা শেষ করে সায়মা চলে আসে। আর সালমা ভাবতে থাকে এরপরে কি করবে।
~এদিকে~
মুগ্ধকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসছে মেহের। সাথে দুইটা নার্স নিয়ে আসছে দেখা শুনার জন্য। নার্স থাকলেও রুহি একদম পারলে পার্মানেন্ট থাকে মুগ্ধের সাথে। ওর সব দেখা শুনা করে যাচ্ছে রুহি। মেহের এটা দেখে অনেক অবাক হয়। আবার কোথায় জানি একটু ভালোলাগাও কাজ করছিলো।
মুগ্ধকে ভাত মেখে খাইয়ে দিচ্ছে রুহি পাশে মেহের বসে আছে। খাওয়ার মাঝে হালকা পাতলা কথা বলছে ওরা। এমন সময় সার্ভেন্ট আসলো ওদের রুমে।
সার্ভেন্ট:স্যার আসবো?
মেহের:আসো।
সার্ভেন্ট:স্যার মুগ্ধকে ম্যামের সাথে দেখা করতে এসেছে দুইজন।
মেহের:কে?
সার্ভেন্ট:সাদাফ নাম তার মা।
মেহের:তো তুমি তাদের বাহিরে রেখেছো যাও উপড়ে নিয়ে আসো তাদের।
সার্ভেন্ট:ওকে স্যার।
সার্ভেন্ট চলে গেলো। মুগ্ধ সাদাফের নাম শুনে অবাক হলো। সাদাফরা তাকে দেখতে আসছে। কিছুসময়ের মাঝে সার্ভেন্ট সাদাফদের নিয়ে রুমে আসলো। মেহের সাদাফকে দেখে উঠে গেলো। গিয়ে সাদাফের মাকে সালাম করলো। সাদাফের মা মেহেরকে জরিয়ে ধরে আদর করলো। তারপর মুগ্ধের কাছে গেলো। সাদাফের কোলে প্রাপ্তিকে দেখে মুগ্ধের অনেক আনন্দ লাগলো। কতদিন পর বাচ্চাটাকে দেখলো। রুহি মুগ্ধকে খাওয়ানো শেষ করে রুম থেকে বাহির হয়ে আসলো। সাদাফের মা মুগ্ধের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
সাদাফের মা: এখন কেমন আছে শরীর মা?
মুগ্ধ:জ্বি আন্টি আলহামদুলিল্লাহ। আপনার শরীর কেমন?
সাদাফের মা: হ্যাঁ আমিও ভালো।
ওদের কথার মাঝেই প্রাপ্তি কান্না শুরু করে দিলো। সাদাফ প্রাপ্তির কান্না থামানো শুরু করলো। মুগ্ধ সাদাফকে বললো,
মুগ্ধ:দিন আমার কাছে দিন।
সাদাফ:কিন্তু আপনি এই অবস্থায় ওকে কিভাবে কোলে নেবেন?
মুগ্ধ:দিনতো কথা কম বলে।
সাদাফ প্রাপ্তিকে মুগ্ধের কোলে দিলো।
মুগ্ধ প্রাপ্তিকে কোলে নিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করলো।
মুগ্ধ:এইতো মা কাঁদেনা। কাঁদে কেনো আমার আম্মুটা। আমার সোনা মেয়েটা।
সাদাফের মা: দুইদিন তোমাকে না দেখে যেই কান্না করেছে সামলানো অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো। তোমাকে অনেক ভালোভাবে চিনে ফেলেছে।
মুগ্ধ:আমিও ওকে অনেক মিস করছিলাম।
সাদাফের মা: আচ্ছা তোরা কথা বলে আমি বাহিরে যাই।
সাদাফের মা উঠে নিচে আসলো।
সাদাফ সোফায় বসে মুগ্ধ আর প্রাপ্তির ভালোবাসা দেখছে। প্রাপ্তিকে আদর করছে মুগ্ধ আর প্রাপ্তি শান্ত বাচ্চার মতো আদর খাচ্ছে।
সাদাফ:!কেনো জানিনা এখন এই জায়গায় আর প্রিয়াকে আপনাকেই কল্পনা করি আমি।”
২৫.
রাতে আরিশ বসে আছে ইদানিং কিছু তার ভালোলাগেনা। সুখ যেনো তার থেকেও না থাকার মতো হয়েগেছে। সায়মা তার থেকেও নেই এমন মনে হয় তার। আরিশ বসে বসে এসব ভাবছে তখন সায়মা এসে ওকে জরিয়ে ধরে। আচমকা এমন হওয়ায় আরিশ অনেক অবাক হয়। সায়মার দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখে সায়মা লাল কালারের একটা পাতলা শাড়ি পরছে শাড়ি এতো পাতলা যে ওর শরীর পুরাই দেখা যাচ্ছে। আরিশ সায়মাকে বললো,
আরিশ:কি হয়েছে এতো সাজগোজ করছো আজকে কি কোনো পার্টিতে যাচ্ছো নাকি?
সায়মা:উহুম। কোনো পার্টিনা আজকে আমি আমার স্বামীর আদর নিবো তাই এতো সেজেছি।
আরিশ:স্বামীর আদর নিয়ে কি করবা।
সায়মা:সরি আরিশ। আমার সেদিন তোমার সাথে ওভাবে কথা বলা উচিত হয়নি। তুমি যেহুতু বাচ্চা চাও আমি রাজী বাচ্চা নিতে।
সায়মার কথা শুনে আরিশ অবাক হলো। অবাক হয়ে বললো,
আরিশ:সত্যি! কিন্তু কাল পর্যন্ত তো তোমার মত ছিলোনা বাচ্চা নেওয়ার জন্য। বাচ্চা নিলে তো তোমার ফিগার ফিউচার সব নষ্ট হয়ে যাবে।
সায়মা:না এটা আমার ভুল ধারনা ছিলো। একটা মেয়ের কাছে মা হওয়ার থেকে বড় সুখ আর কি থাকে বলো। তাই আমি তোমার বাচ্চার মা হতে চাই।
সায়মার কথায় আরিশ অনেক খুশি হয়। কাছে টেনে নেয় সায়মাকে। আজ আবার একটা মিলন হতে চলেছে তাদের মাঝে। এই মিলন আরিশের জন্য সুখের হলেও সায়মার কাছে এটা নিজেকে বাঁচানোর একটা মাধ্যম শুধু।
~অন্যদিকে~
রুহি বাসায় চলে গেছে মুগ্ধকে খাইয়ে ফিটফাট করে রেখে। মুগ্ধ নিজের রুমে বসে জানালার দিকে তাকিয়ে আছে। বাহিরের ঠান্ডা বাতাস পর্দা ঠেলে ভিতরে আসছে আর ঠান্ডা অনুভুতি দিচ্ছে। মুগ্ধ বসে বসে ভাবছে কি থেকে কি হয়ে গেলো তার জীবনে। আবার এখন প্রাণসংকট ও দেখা দিচ্ছে। এসব কেনো হচ্ছে মুগ্ধ জানেনা। তবে বেশ ভালোই বুঝতে পারছে না চাইতেও তার কোনো শত্রু হয়ে গেছে। যে চায়না মুগ্ধ এই দুনিয়ায় বেঁচে থাকুক।
মুগ্ধ:”আজ যদি আমি মা হতে পারতাম তাহলে হয়তো তুমি আমাকে ছেড়ে দিতেনা। আবার মনে হয় ভালোই হয়েছে আল্লাহ এই অক্ষমতা দিয়েছে এই অক্ষমতা না দিলে তো আমার আশেপাশের সবাইকে চিনতে পারতাম না। তবে তোমার প্রতি অভিযোগ নেই,নেই কোনো অভিমান ভালো থাকো সেটাই চাই।”
মুগ্ধ আসতে করে শুয়ে পরে। একটু পর ঘুমের রাজ্যে চলে যায় সে।
মেহের নিজের রুমে বসে কিউব মিলাচ্ছে। মেহেরের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে রাগে। যেনো এখোনি কাউকে সামনে পেলে তাকে মেরে ফেলবে। মেহের রাগে গজগজ করতে করতে বলে,
মেহের:আপনি আমার সয্যের সিমা ভেংগে ফেলেছেন। এবার আপনাকে আমি দেখাবো ঘুমন্ত বাঘকে জাগালে সে কতটা ভয়ংকর হতে পারে। আমার বোনের দিকে হাত বাড়িয়েছেন আপনি। কতটা সাহস আপনার।
মেহের নিজ মনে মনে এগুলা বলতে লাগলো।
.
.
.
.
.
.
.
.
১সপ্তাহ পর,,,,
মুগ্ধ এখন আগের থেকে অনেক সুস্থ। ১সপ্তাহ পর আজকে মুগ্ধ ক্লাস করতে যাবে। আগামী পরশু থেকে ওদের পরিক্ষা শুরু। মুগ্ধ রেডি হয়ে নিচে আসলো। খাবার খেয়ে বেরিয়ে গেলো ক্লাস করতে।
মেহের অফিসে এসে দেখে রুহি চুপচাপ বসে আছে। মেহের রুহিকে চুপচাপ থাকতে দেখে বলে,
মেহের:মিস রুহি আপনি এতো চুপচাপ কেনো। কিছু হয়েছে?
রুহি:না স্যার তেমন কিছুনা।
মেহের:বেশি পার্সোনাল না হলে বলতে পারেন।
রুহি: না তেমন কিছুনা। আসলে মায়ের বুকে ব্যাথাটা ইদানিং বেড়েছে। ভাবছি মাকে তাড়াতাড়ি অপারেশন করিয়ে দিবো।
মেহের:এটাতো ভালো কথা। তাহলে করিয়ে নিন।
রুহি:করাবো কিন্তু..।
মেহের বুঝতে পারলো রুহি কি বলতে চাচ্ছে।
মেহের নিজের ডেস্কে বসে পাশের টেবিল থেকে একটা খাম বের করে রুহির হাতে দিলো।
রুহি মেহেরের দিকে প্রশ্নসুচোক দৃষ্টিতে তাকালো।
মেহের:এখানে ২লাখ টাকা আছে। এতে না হলে আমাকে জানাবেন আরো দেবো। আন্টির অপারেশন তাড়াতাড়ি করিয়ে নেন। আর হ্যাঁ ভাবেননা করুনা করছি। আন্টি আমার মায়ের মতো। আমার নিজের মা নেই ওনার জন্য কিছু করতে পারলে ভালোলাগবে আমার।
রুহি ছলছল চোখে মেহেরের দিকে তাকালো। আজ মেহেরের প্রতি সম্মান আর ভালোবাসাটা আরোও বেড়ে গেলো। ভুল মানুষকে রুহি মনে জায়গা দেয়নি সে বুঝতে পারলো। একজন মানুষ হিসাবে মেহের সত্যিই অতুলনীয়।
#চলবে