শেষ_থেকে_শুরু_২,পর্ব_১৪
নন্দিনী_চৌধুরী
২৬.
দেখতে দেখতে আরো ১ মাস কেঁটে গেলো। এই ১মাসে সাদাফ মুগ্ধের সম্পর্ক আপনি থেকে তুমিতে এসেছে যদিও সেটা শুধু সাদাফের পক্ষ্য থেকে। মুগ্ধ আগের ন্যায় তাকে আপনি বলেই সম্বোধন করে। তবে প্রাপ্তি আর মুগ্ধের সম্পর্ক বেশ গভীর হয়েছে।প্রাপ্তিতো যেনো তার এই মাকে ছাড়া একদম থাকতেই পারবেনা। প্রাপ্তির মুখে এখন কথা ফুঁটেছে। আদো আদো কন্ঠে মা বাবা বলতে পারে। প্রাপ্তির মুখ থেকে প্রথম মা ডাক শুনে মুগ্ধ একদম থমকে গেছিলো। এক এমন অনুভুতি হচ্ছিলো মনে হচ্ছিলো প্রাপ্তি যেনো ওর নিজের সন্তান। প্রথম মা ডাক শোনার অনুভুতিটা বেশ দারুন ছিলো মুগ্ধের।
ইদানিং সাদাফ মুগ্ধ প্রাপ্তিকে নিয়ে বাহিরে ঘুরে আসে। নানা রকম জিনিশ কেনাকাটা করে। মানে যে কেউ দেখে ভাববে এরা একটা পার্ফেক্ট ফ্যামিলি। অনেকেতো বলেই ফেলে সরাসরি তখন সাদাফ শুধু মুচকি হাঁসে। আর মুগ্ধ তাদের ভুলটা ভাংগাতে গেলে সাদাফ বাঁধা দেয়। এতো সবের মাঝেও কেউ কারো মনের অনুভুতিকে প্রাধান্য দিতে পারছেনা। সাদাফের সামনে প্রিয়ার দেয়াল দাঁড়ানো। প্রিয়াকে সে ঠকাবে কিভাবে তাই সে ভাবে। আর মুগ্ধ সেতো যেনো আর নতুন শুরুর কথা ভাবতেই পারেনা। হৃদয় ভাংগার যন্ত্রনা একবার সয্য করে উঠাই তার জন্য অনেক ছিলো। ২য়বার একই ভুল সে করবেনা।
~অন্যদিকে~
সায়মা অবশেষে কনসিভ করেছে। হ্যাঁ তার গর্ভে এখন আরিশের অনাগত বাচ্চা। সায়মার যেনো খুশি আর ধরেনা। এখন অপেক্ষা শুধু আরিশকে জানানো। রাতে আরিশ বাসায় আসে। ক্লান্ত শরীর একদম। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে সে বিছানায়। সায়মা আরিশকে এভাবে দেখে ওর পাশে গিয়ে বসে আর বলে,
সায়মা:কি ব্যাপার! তোমার কি মন খারাপ?
আরিশ: আমার বিজনেসে খুব খারাপ সময় চলছে সায়মা।
সায়মা: মানে?
আরিশ:আমার এই নিয়ে ৩টা বড় বড় ডিল ক্যান্সেল হয়ে গেলো। কম্পানির অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে এতে।
সায়মা:থাক চিন্তা করোনা ঠিক হয়ে যাবে সব।
আরিশ:হুম।
সায়মা:তোমাকে একটা জিনিশ বলার আছে।
আরিশ:কি?
সায়মা:তুমি বাবা হতে যাচ্ছো!
আরিশ অবাক হয়ে বলে,
আরিশ:কিহ সত্যি!
সায়মা:হ্যাঁ
আরিশের যেনো খুশি ধরেনা আরিশ সায়মাকে জরিয়ে ধরে খুশিতে। অবশেষে সে বাবা হতে যাচ্ছে।
?
সালমা খান মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। একে একে তার সব টাকা আসার পথ বন্ধ করে দিয়েছে মেহের। সালমা খানের যেনো মাথায় বাজ পরেছে এতে। সালমা খান বুঝতে পারছেনা কি করবেন উনি। কিভাবে সব আগের মরো ওনার হাতের মুঠোয় আসবে।
তাহলে কি মেহের সব জেনে গেলো। তার এতোবছরের লুকানো সত্যি কি তবে সে জেনে গেলো। তবে এবার কি হবে। এবার যে তাহলে তাকে কেউ রক্ষা করতে পারবেনা মেহেরের হাত থেকে।
মেহের অফিসে বসে কাজ করছে রুহি ওর কেবিনে বসে মেহেরকে দেখছে। রুহি আর পারছেনা নিজের অনুভুতিগুলো লুকিয়ে রাখতে। রুহি পারলে ছুটে জরিয়ে ধরে মেহেরকে বলে, “ভালোবাসি আপনাকে স্যার ভালোবাসি। আমিযে আপনাতে পাগল হয়েগেছি স্যার। আপনি আমাকে ঘ্রাস করে ফেলেছেন স্যার।”
কিন্তু কোনো এক কারণে আর সেই সাহস করা হচ্ছেনা রুহির।
মেহের এর মাঝে রুহিকে কেবিনে ডাকে। রুহি কেবিনে আসলো। মেহের রুহিকে কফি বানিয়ে দিতে বলে। রুহি মেহেরকে কফি বানিয়ে দেয়। তারপর মেহের রুহিকে কিছু ফাইল দেয় চেক করার জন্য। রুহি এখানে বসেই চেক করতে লাগে ফাইলগুলো। এর মাঝে মেনেজার আসে মেহেরের রুমে। মেহের রুহিকে ফাইল নিয়ে ওর কেবিনে চলে যেতে বলে। রুহি ফাইল নিয়ে চলে আসে।
মেনেজার রুমে ঢুকে বলে,
মেনেজার:স্যার এইযে ফাইল।
মেহের:হ্যাঁ বলো কি কি জানতে পারলা?
মেনেজার:স্যার আপনার চাচি মুগ্ধ ম্যামকে তার কাছে রেখে তার খেয়াল রাখার কথা বলে প্রতি মাসে ব্যাংক থেকে প্রায় ৫০হাজার টাকার মতো উঠাতেন। মুগ্ধ ম্যামের নামে যেই একাউন্ট ব্যাংকে করা ছিলো তাতে প্রতি মাসে ১লাক্ষ টাকা আসতো। আর সেই টাকা আপনার মামা দিতো। কিন্তু টাকা নিয়েও সে ম্যামের যত্ন নিতোনা। অত্যাচার করতো অনেক। এরপর স্যার ম্যামের এই বিয়ের কথা জানিয়েও প্রায় ৫লাক্ষ টাকা সে নিয়েছেন। আর সব থেকে আজব এইটা যে তিনি টাকা নেওয়ার সময় সব জায়গায় নিজেকে মুগ্ধ ম্যামের মা দাবি করেছেন।
মেহের:হুম বুঝতে পারলাম। এখন সব একাউন্ট সিল করে দিয়েছো?
মেনেজার:জ্বি স্যার।
মেহের:গুড। এখন যাও তুমি।
মেনেজার চলে গেলো। মেহের চেয়ারে হেলান দিয়ে কপালে আঙ্গুল দিয়ে ঘুরাচ্ছে।
২৭.
মুগ্ধ সারাদিন পর বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নিলো। তার ভাই এখনো বাসায় আসেনি। মুগ্ধ রুমে বসে কফি খাচ্ছে আর বই পড়ছে। বই পড়ছে এমন সময় ওর মোবাইলে কল আসলো। মুগ্ধ ফোন হাতে নিয়ে দেখে অচেনা নাম্বার। মুগ্ধ কল রিসিব করে সালাম দিলো,
মুগ্ধ:আসসালামু আলাইকুম।
ওপাশ:…………
মুগ্ধ:হ্যালো কে বলছেন?
ওপাশ:……….
মুগ্ধ:আরে আজব কথা বলছেন না কেনো?
ওপাশ:…………
মুগ্ধ:পাগল নাকি দূর।
মুগ্ধ মোবাইল কেঁটে দিয়ে আবার বই পড়ায় মন দিলো।
সাদাফ নিজের রুমে দাঁড়িয়ে আছে। আকাশে অনেক সুন্দর একটা চাঁদ উঠেছে আজকে। সাদাফ আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমার কল্পনার রাজ্যে শুধুই তার বসবাস।”
“তার মাঝেই নাহয় নিহীত থাকুক আমার সর্বনাস।”
~আরো ৭ দিন পর~
আরিশের শরীর ইদানিং খুব খারাপ যাচ্ছে। শরীরে গোপন জায়গায় কেমন জানি লাল লাল রেশের মতো উঠেছে। তারপর ইদানিং কাশির সাথে রক্ত আসছে তার। আরিশ তাই ঠিক করে ডাক্তার দেখাবে। আরিশ ডাক্তার দেখিয়ে আসে ডাক্তার অনেক গুলো টেস্ট দেয় ওকে। যার রিপোর্ট আসতে দেড়ি হবে জানিয়েছে ডাক্তার।
এদিকে সায়মা ফেজবুকে একদম বড় বড় করে লেখে ছেড়েছে তারা বাচ্চা বাবা মা হতে যাচ্ছে। অনেকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে ওদের।
এই পোস্ট মুগ্ধ দেখে কেন জানি কষ্ট পায়নি। হয়তো এখন আর এই মানুষটার কথা সে ভাবেনা তাই।
রুহি এসে দাঁড়িয়ে আছে সেই কখন থেকে মেহেরের সামনে। মেহের কাজ করেই যাচ্ছে রুহিকে খেয়াল করছেনা। রুহির এবার অনেক বিরক্ত লাগছে।
মেহের:কিছু বলবেন?[ল্যাপ্টপের দিকে তাকিয়ে]
রুহি:জ্বি স্যার।
মেহের:বলেন।
রুহি:স্যার আসলে,,,,
মেহের:কি?
রুহি:স্যার আসলে আমি না একটু ছুটি চাচ্ছিলাম।
মেহের:হ্যাঁ নিয়ে নেন সমস্যা নাই।
রুহি:সত্যি!!
মেহের:হুম।
রুহি খুশি মনে চলে আসে ছুটি নিয়ে। আসলে ছুটি নেওয়ার প্রধান কারণ আগামীকাল রুহির জন্মদিন। তাই সে আজকের দিন আর কালকের দিনের ছুটি নিয়েছে।
পরেরদিন,,,,,
রুহি সকালে উঠে আল্লাহর দরবারে নামাজ পরে শুকরিয়া আদায় করে নেয়। তারপর এতিমখানায় গিয়ে বাচ্চাদের জামা কাপড় খাবার দিয়ে আসে ওর সামার্থ্য মতো। রুহি বাসায় এসে দেখে ওর নামে কেউ পার্সেল রেখে গেছে। রুহি পার্সেলটা ওপেন করে দেখে একটা গোলাপের বুকে তাতে বার্থ ডে উইশ করে কার্ডে লেখা। সাথে বার্ডে কেক। আরো কিছু গিফটস। রুহি বুঝতে পারলোনা এই পার্সেল কে দিয়ে গেছে।
#চলবে
সায়েমার প্রেগ্নেন্সির কথা শুনে অনেকে রাগ করবেন। কিন্থ এখানে অনেক কাহীনি আছে আরো সেটা সামনে জানবেন। তাই রাগ না করে সামনে দেখতে থাকুন কি হয়।