শেষ_থেকে_শুরু_২,পর্ব_৪
নন্দিনী_চৌধুরী
৬.
এয়ারপোর্টে বসে আছে মেহের। একটু পর ওর ফ্লাইট। মেহেরের অনেক আনন্দ লাগছে। এতোবছর পর সে দেশে যাচ্ছে। তার চড়ুইপাখির সাথে তার দেখা হবে। হয়তো চড়ুইপাখি তার রাগ করে আছে ভাইয়ের উপর। কিন্তু সে ঠিক রাগ ভাংগিয়ে দেবে।
কিছু সময় পর ফ্লাইট ছাড়ার এনাউসমেন্ট করা হলো। মেহের গিয়ে প্লেনে উঠলো। কিছু সময় পর প্লেন টেক ওফ করলো। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা বাংলাদেশে পৌছানোর।
~এদিকে~
মুগ্ধ সকালে উঠে নামাজ পরে রান্না ঘরে গিয়ে নাস্তা বানিয়ে রেখে নিজে খেয়ে রুমে চলে আসে। রুমে এসে বসে ভাবছে যে কিভাবে নিজের পড়ার খরচ সে নিজে চালাবে। মুগ্ধ ভাবছে কি করবে তখন ওর এক বন্ধুর কথা মনে পরে যে ওকে এই সময় হেল্প করতে পারে। মুগ্ধ তাড়াতাড়ি শিহাবের নাম্বারে কল লাগায়। কল রিসিভ হবার পর মুগ্ধ শিহাবকে সালাম দেয়।
মুগ্ধ:আসসালামু আলাইকুম।
শিহাব:ওয়ালাইকুমুস সালাম। কিরে এত বছর পর আমার কথা মনে পরলো?
মুগ্ধ:মনে তো পরে সবসময় কিন্তু কল দেওয়া হয়নারে। কেমন আছিস?
শিহাব:এইতো ভালো। তুই দুলাভাই কেমন আছিস?
দুলাভাই কথাটা শুনে মুগ্ধ কি বলবে বুঝতে পারছেনা। তাও বলে,
মুগ্ধ:আমি ভালো আছি। আচ্ছা শোন তোকে একটা কথা বলতাম।
শিহাব:হ্যা বল।
তারপর মুগ্ধ শিহাবকে সব বলে যে কি কি হয়েছে আর এখন ওর সমস্যার কথাও। সব শুনে শিহাব বলে,
শিহাব:আমি ভাবতেও পারছিনা আরিশ এমন হবে। শেষে কিনা সায়মার সাথে ছিহ। তুই চাচাকে বলছিস না কেন ওর কথা। তোর চাচির জানা উচিত তার মেয়ের কথা।
মুগ্ধ:না রে চাচা এমনিতেও সায়মার জন্য অনেক কষ্টে আছে। সায়মা নেশায় আসক্ত তাই চাচা ওকে বের করে দিয়েছিলো বাসা থেকে। চাচি মনে করে আমি চাচার কানে এগুলা লাগিয়েছি। কিন্তু আমি জানতাম ঠিকই কিন্তু চাচাকে কিছু জানাইনি। আমিতো চেষ্টা করেছিলাম ওকে বুঝানোর। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এখন যদি এটা জানতে পারে চাচা তবে সে মরেই যাবে। তুই আমাকে একটা কাজের ব্যবস্থা করে দে। যা দিয়ে আমি আমার পড়াশুনাটা চালাতে পারি।
শিহাব:আমাদের অফিসে তো কোনো সিট খালি নেই আর এখন তো কোথাও চাকরির ওফার নেই। হ্যা তবে একটা কাজ আছে। করবি সেটা।
মুগ্ধ:কি কাজ?
শিহাব:আমাদের অফিসের বসের মেয়ের মা মারা গেছে তার জন্মের পরেই। স্যারের মা মেয়ের দেখাশুনা করে। স্যার তো অফিস ক্লাস সামলে মেয়েকে সময় দিতে পারেনা। স্যারের মা স্যারকে বিয়ে দিতে চাইছিলো কিন্তু সে বিয়ে করবেনা আর। এখন স্যার একটা বেবিসেটার চাচ্ছে বিসস্ত কাউকে। যে তার মেয়ের দেখা শুনা করবে। মাসে বেতন ৩০হাজার টাকা দেবে আর সকাল থেকে রাত পর্যন্ত খাওয়া দাওয়া সব স্যারের বাসায় দিবে। তুই কি করবি এটা?
মুগ্ধ:বাচ্চা সামলাতে হবে তাইতো?
শিহাব:হ্যা।
মুগ্ধ:আচ্ছা ঠিক আছে। আমি পারবো। এতো টাকার সেলারি এই কম কাজে আমার জন্য সুবিধা হবে।
শিহাব:তাহলে তুই কালকে আমার সাথে দেখা কর। আমি মেনেজারকে জানাই।
মুগ্ধ:আচ্ছা ঠিক আছে।
মুগ্ধ ফোন রেখে দিলো। কাজটা পেলে আসলেই তার অনেক উপকার হবে।
~অন্যদিকে~
সাদাফ মেয়েকে খাইয়ে ঘুম পারিয়ে দিয়ে ভার্সিটিতে ক্লাস করাতে চলে গেছে। সাদিয়া আসছে আজকে বাসায়। তাই সাদাফ কিছুটা চিন্তা মুক্ত।
সাদাফ ক্লাস করিয়ে অফিসে আসে। অফিসে শিহাব ওকে জানায় যে ওর একজন পরিচিত আছে যে তার মেয়েকে দেখাশুনা করবে। আর সে অনেক ভালো এবং বিসস্ত। সাদাফ জানায় সাদাফের সাথে তাকে দেখা করতে।
এদিকে,,,
রুহিও চাকরির খোঁজ করেই যাচ্ছে। ওর এক বন্ধুর থেকে জেনেছে খান ইন্ডাস্ট্রি তে বসের পিএ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। রুহি সেখানে আজকে ইন্টারভিউ দিয়ে এসেছে। আল্লাহ আল্লাহ করছে যেনো চাকরিটা হয়ে যায়। চাকরিটা পেলে সব পাওনা দিতে পারবে। মাকে অপারেশন করাতে পারবে।
পরেরদিন,,,,,,
মুগ্ধ শিহাবের কথা মতো সাদাফদের বাসায় আসে। মুগ্ধের খুব নার্ভাস লাগছে। কেন জানি খুব ভয় হচ্ছে ওর। মুগ্ধ আসতে করে সামনে এগোয়। তারপর বেল বাজায় সাদাফের বাসার। বেলের আওয়াজে মিসেস খান এসে দরজা খুলেন। দরজা খুলে মুগ্ধকে দেখে তিনি বলেন,
মিসেস খান:জ্বি কাকে চাই?
মুগ্ধ:আসসালামু আলাইকুম আন্টি। আন্টি আমি বেবিসেটার জবের জন্য এসেছিলাম। স্যার আসতে বলেছিলো।
মিসেস খান: ওহ আচ্ছা হ্যা সাদাফ বলেছে কেউ আসবে। এসো মা ভিতরে এসো।
মুগ্ধ ভিতরে যায়। মিসেস খান সাদাফকে ডাক দেয়। মুগ্ধ চুপচাপ সোফায় বসে আছে। নার্ভাস্নেস কমছেইনা ওর।
সাদাফ মেয়েকে কোলে করে নিয়ে নিচে আসে। মুগ্ধ সেদিকে তাকিয়ে দেখে কি মিষ্টি একটা বাচ্চা। সাদাফ প্রাপ্তিকে মায়ের কোলে দিয়ে সোফায় বসে।
মুগ্ধ সাদাফকে দেখে সালাম দেয়।
মুগ্ধ:আসসালামু আলাইকুম।
সাদাফ:ওয়ালাইকুমুস সালাম। আপনার নাম?
মুগ্ধ:মেহরুবা ইসলাম মুগ্ধ।
সাদাফ:ওকে। আমি সাদমান হাসান সাদাফ। আর যাকে দেখা শুনা করবেন সে আমার মেয়ে সাফিয়া হাসান প্রাপ্তি। আমার মেয়ের বয়স ৩মাস মাত্র।
মুগ্ধ:জ্বি।
সাদাফ:কাজ করতে হলে অবশ্যই কিছু শর্ত আপনাকে মানতে হবে। যা এই কাগজে দেওয়া আছে।
সাদাফ মুগ্ধের দিকে কাগজ এগিয়ে দেয়। মুগ্ধ কাগজটা হাতে নিয়ে পড়তে লাগে।
১ম শর্ত
প্রাপ্তিকে কেন্দ্র করে সাদাফকে দুর্বল করার চেষ্টা না করা।
২য় শর্ত
প্রাপ্তির যত্নে কোনো ত্রুটি না রাখা।
৩য় শর্ত
একদম টাইমলি টাইমলি সব কাজ করা প্রাপ্তির।
৪ম শর্ত
একদিন ও কাজে গ্যাপ না দেওয়া। তবে সমস্যা থাকলে জানাতে হবে।
মুগ্ধ সব গুলা শর্ত পড়ে তাতে রাজি জানালো। তবে মুগ্ধ ও একটা শর্ত দিলো।
মুগ্ধ:আমার একটা শর্ত আছে।
সাদাফ:কি?
মুগ্ধ:আমি এই কাজটা করছি মুলত আমার পড়াশুনার খরচ চালাতে। আমার সকালে ক্লাস থাকবে ভার্সিটির ওই সময় টুকু আমাকে ছাড় দিতে হবে।
সাদাফ:ওকে। ক্লাস করে এখানে আসবেন। ভার্সিটির ক্লাস শুরু হয় ৯টা থেকে। ৯টা থেকে ১১টা ক্লাস করে এখানে আসবেন। ওই সময় টুকু আমার মা প্রাপ্তির খেয়াল রাখবে।
মুগ্ধ:জ্বি ধন্যবাদ। আমি আগামীকাল থেকেই আসবো।
সাদাফ:জ্বি।
মুগ্ধ প্রাপ্তিকে দেখে চলে আসে।
সাদাফ চলে যায় অফিসে।
.
.
.
.
.
.
.
.
৭.
সোফায় চুপ করে বসে আছে মেহের। রাগে তার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। এতো কিছু হয়ে গেছে তার বোনের সাথে কিন্তু সে কিছুই জানতে পারলোনা। মামা তাকে সবসময় তাহলে মিথ্যা বলেছে। মেহেরের সামনে মাহফুজ সালমা বসে আছে। তারাও ভয়ে আছে।
মুগ্ধ বাসায় এসে সোফায় মেহেরকে দেখে থমকে যায়। মেহের ও বোনকে দেখে থমকে যায়। তার সেই ছোট চড়ুইপাখি কত বড় হয়ে গেছে। মেহের দৌড়ে গিয়ে বোনকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দেয়। মুগ্ধ যেনো একেবারে অনুভুতিশুন্য হয়েগেছে। কি বলবে বা কি করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা। মেহের বোনের দিকে তাকিয়ে বলে,
মেহের:কেমন আছিস চড়ুইপাখি?
মুগ্ধ:কেন এসেছেন আপনি?
বোনের মুখে এমন কথা শুনে অবাক হয় মেহের। মুগ্ধ আবার বলে,
মুগ্ধ:কেন এসেছো তুমি।
মেহের:চড়ুইপাখি তুই রাগ করে আছিস আমার উপরে। আমি জানি তুই রাগ করে আছিস আর রাগ করাটাই স্বাভাবিক।
মুগ্ধ:না আমি কেন রাগ করবো তোমার প্রতি। রাগ করার কি আছে। যার মা বাবা নেই তার আপন কেউ নেউ। মা বাবা মরে গেছে তাই সবাই পর হয়ে গেছে। নিজের আপন ভাইও পর হয়েগেছে। যে ভাই একবার ও নিজের বোনের খবর নেয়না। কেমন ভাই সে। বোন মরে গেছে না বেঁচে আছে সেই খবরটুকুও নেওয়ার সময় হয়না যার। আজ সে কি করতে এসেছে?
মেহের:চড়ুইপাখি বিশ্বাস কর আমি কানাডা থাকতে মামাকে সবসময় তোর খোঁজ নিয়ে আমাকে দিতে বলতাম। মামা সব সময় বলতো তুই ভালো আছিস। আমি কত কথা বলতে চাইতাম তোর সাথে কিন্তু মামা দিতোনা কথা বলতে। বলতো তুই আমার উপর রেগে আছিস কথা বলতে চাসনা। আমি জানতাম না তোর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। আমাকে এটা জানানোই হয়নি।
মেহেরের কথা শুনে মাহফুজ বলে,
মাহফুজ:কিন্তু আমরাতো তোমার মামাকে ফোন করে বলেছিলাম যে আমরা মুগ্ধের বিয়ে দিচ্ছি তোমাকে যেনো সেটা জানায়।
মেহের:কি! কিন্তু মামাতো আমাকে এসব কিছুই বলেনি। আমাকে মামা বলতো আপনারা নাকি মুগ্ধকে আমার সাথে যোগাযোগ করতে দেননা। মুগ্ধ নাকি আমার সাথে রাগ করেছে।
মাহফুজ:নাহ এমন তো হয়নি। আমিতো মুগ্ধকে তোমার সাথে যোগাযোগ করতে দিতাম। কিন্তু তুমিতো যোগাযোগ করতেনা।
মেহের:কোথাও একটা মিস্টেক আছে। একটা বড় ভুলবুঝাবুঝি হচ্ছে। আমি মুগ্ধকে নিয়ে যাবো আজকে। আর ওই ছেলেকে আমি দেখেনেবো। আমার বোনের সাথে এমন করার সাহস ওর কিভাবে হয় আমি দেখবো সেটা। চল মুগ্ধ।
মুগ্ধ মেহেরের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
মুগ্ধ:আমি কোথাও যাবোনা তোমার সাথে ভাইয়া। আমি এখানেই ভালো আছি।
বলেই মুগ্ধ দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়।
মেহের বুঝতে পারছে না চেয়েও সে আজ বোনের চোখে অপরাধী। কেন তার মামা তার সাথে এমন করলো।
সালমা খানের কপাল ঘামছে। মেহেরের সন্দেহ যেনো তার ভয় আরো বারিয়ে দিচ্ছে। এতো বছরের করা পরিকল্পনা তার বেরিয়ে আসবে নাতো আবার।
চলবে