শেষ_থেকে_শুরু_২,পর্ব_৭

0
2748

শেষ_থেকে_শুরু_২,পর্ব_৭
নন্দিনী_চৌধুরী

১২.
মেহের মুগ্ধের রুমে এসে দেখে মুগ্ধ খাটে বসে আছে মাথা নিচু করে। বুঝাই যাচ্ছে নিঃশব্দে কান্না করছে সে। মেহের এসে বোনের পাশে এসে বসলো। মুগ্ধ ভাইকে দেখে চোখের পানি মুছে ফেললো। মেহের বোনের দিকে তাকিয়ে বলে,

মেহের: লোকের কথার জবাব দিতে পারিস না। আর আমার সাথে ঠিকই রাগ দেখিয়ে বসে থাকিস।
মেহের কথা শুনে মুগ্ধ ওর দিকে তাকায় তারপর বলে,
মুগ্ধ:লোকের কথার জবাব দেওয়ার কি আছে তারাতো সত্যিটাই বলেছে।
মেহের:কি সত্যি বলেছে?[রেগে]
মুগ্ধ:যা সত্যি তাই।
মেহের মুগ্ধের গালে ঠাস করে লাগিয়ে দেয় একটা থাপ্পড় আর চিৎকার করে বলে,
মেহের:খবরদার যদি আর একটা বাজে কথা বলিস। লোকে কোন সত্যি কথাটা বলেছে হ্যা? তুই কি ডিভোর্সি ইচ্ছা করে হয়েছিস নাকি ইচ্ছা করে ছেড়েছিস আরিশকে। তোকে আরিশ ঠকিয়েছে। তোর বিশ্বাস ভেংগেছে। যে তোর ত্রুটির জন্য তোকে ছেড়ে অন্য নারীর কাছে গেছে। তার জন্য তুই কেন সমাজের কাছে নিচু হবি। শোন আমার বোন হয়ে তোকে কেউ কথা শুনিয়ে যাবে আর তুই চুপ করে থাকবি তা হবেনা। দরকার পরলে মেরে রেখে আসবি বাকিটা আমি দেখে নেবো। আর যদি কোনোদিন শুনছিনা যে লোকে কিছু বলছে আর তুই তাদের জবাব না দিয়ে এসে এখানে বসে ছিচকাঁদুনি দের মতো কাঁদছিস তাহলে তোর খবর আছে। এখন যা রেডি হয়ে আয়। তোকে নিয়ে একটা দাওয়াতে যাবো। আর কোনো রিপ্লাই না যেটা বলছি সেটা কর।

মুগ্ধ আর কথা বাড়ায় না ব্যাগটা নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে চ্যাঞ্জ করে আসে। একটা ব্লাক লং ড্রেস এনেছে মেহের। মুগ্ধ সুন্দর করে ওড়না দিয়ে হিজাব বেধে নিলো আর হালকা একটু সাজলো। তারপর বেড়িয়ে পরলো মেহেরের সাথে যাওয়ার জন্য।
মেহের অফিস থেকে রুহিকে নিয়ে চলে আসলো কেয়াদের পার্টিতে। সেখানে আসতেই কেয়ার বাবা মেহেরদের আপ্যায়ন করলো। মেহের মুগ্ধের আর রুহির সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। তারপর কেয়ার কাছে গেলো। কেয়াকে আর ওর বরকে অভিনন্দন জানালো। মুগ্ধ আর রুহিকে কেয়ার সাথে রেখে মেহের কেয়ার বাবার সাথে কথা বলতে যায়। মেহের কেয়ার বাবার সাথে কথা বলছে তখন কেয়ার বাবা বলে,
কেয়ার বাবা:তোমাকে আমার আরেক বিজনেস পার্টনারের ছেলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই দাঁড়াও।
কেয়ার বাবা ইশারা করে ডাকলো একজনকে তারপর বললো অমুককে ডেকে আনতে। লোকটা গিয়ে ডেকে আনলো তাকে। কেয়ার বাবা সামনে থাকা লোকটাকে মেহেরকে দেখিয়ে বললো,
কেয়ার বাবা:মিট মেহের হি ইজ মাই ফ্রেন্ড সায়েদ হাসান এর এক মাত্র ছেলে সাদমান হাসান সাদাফ। বর্তমানে হাসান গ্রুপ ওফ কম্পানির মালিক ও। বাবার মারা যাওয়ার পর বিজনেসের সব দায়িত্ব ও পালন করছে।
মেহের:হ্যালো।
সাদাফ:হ্যালো।
কেয়ার বাবা: সাদাফ এ হলো আরিয়ান খান মেহের। মেহেরাব খানের বড় ছেলে। সেও তোমার মতো একজন নাম করা বিজনেস ম্যান।
সাদাফ:আমি নাম শুনেছি অনেক ওনার।ভাবিনি এভাবে দেখা হয়ে যাবে।
মেহের:আমারো ভালো লাগলো আপনার সাথে দেখা করে।
এভাবে ওরা কথা বলার পর খাওয়া দাওয়া করে মেহেররা চলে গেলো। পুরোটা সময় মুগ্ধের সাথে দেখা হয়নি সাদাফের।

~পরেরদিন~
মুগ্ধ ক্লাস করে চলে আসে সাদাফের বাসায়। এসে প্রাপ্তিকে ঘুম থেকে উঠিয়ে ফ্রেশ করিয়ে খাইয়ে দেয়। তারপর কিছুটা সময় প্রাপ্তিকে নিয়ে খেলে ওকে গোসল করিয়ে দেয়।
তারপর সাদাফের মা আর মুগ্ধ মিলে খাবার খেয়ে নেয়। সন্ধ্যায় সাদাফ বাসায় আসে। অফিসের মিটিং শেষ করে বাসায় এসে পরে। মুগ্ধ সাদাফকে বাসায় আসতে দেখে বলে,
মুগ্ধ:আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো।
সাদাফ:কি?
মুগ্ধ:বলছিলাম যে প্রাপ্তির ঠান্ডার জামা কাপড় তেমন নেই। ঠান্ডাও পরেছে অনেক। তাই কিছু জামা কাপড় কিনতে হবে।
সাদাফ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৮টা বাজে। এখনো মার্কেট খোলা থাকে। তাই সাদাফ মুগ্ধকে বলে,
সাদাফ:আপনি প্রাপ্তিকে রেডি করে নিচে আসুন। মার্কেটে যাবো।
মুগ্ধ:আচ্ছা।
সাদাফ ফ্রেশ হয়ে শীতের একটা জামা পরে নিচে চলে যায়। মুগ্ধ প্রাপ্তিকে একটা গরম কাপড় আর একটা রেবিটের হুডি ওয়ালা জ্যাকেট পরিয়ে রেডি করে নিচে আসে। সাদাফ ওদের দেখে গাড়িতে গিয়ে বসে। তারপর মুগ্ধ গিয়ে গাড়ির পিছনের সিটে বসে। সাদাফ গাড়ি স্টার্ট দেয়। কিছু সময়ের মাঝে মার্কেটে এসে পৌছায় ওরা। মুগ্ধের অনেক শীত লাগছে সাথে কোনো শীতের কাপড় নেই ওর। আর আজকে ঠান্ডা লাগছে অনেক। মার্কেটে ঢুকে সাদাফ মুগ্ধ সোজা চলে যায় কিডস এরিয়ায়। সেখানে গিয়ে প্রাপ্তির জন্য জামা কাপড় দেখতে লাগে দুজনে। সাফাদের যা পছন্দ হয় সেটা মুগ্ধের পছন্দ হয়না। তাই মুগ্ধ সাদাফকে বলে,
মুগ্ধ:আপনি রাখুন জামা চুজ করা। আপনার চুজ করা জামা পরলে ওকে মেয়ে কম জোকার লাগবে বেশি।
সাদাফ:তাহলে আপনি খুঁজেন দেখি।
মুগ্ধ:হ্যাঁ আমিই খুঁজবো। নিন ওকে ধরুন।
মুগ্ধ প্রাপ্তিকে সাদাফের কোলে দিয়ে। জামা চুজ করতে লাগলো। ৪৫মিনিট ধরে প্রায় ৫০টার মতো জামা চুজ করে বের করেছে মুগ্ধ। সাদাফ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে বলে,
সাদাফ:এই জন্যই কেউ বলেছিলো। জীবনে আর যাই করোনা কেনো মেয়ে মানুষ নিয়ে শপিং করতে এসোনা। এরা সব জিনিশ নিয়ে এতো কনফিউজ থাকে পুরো ৩দিন লাগিয়ে দেবে শপিং করতে করতে।
অবশেষে জামা চুজ করা শেষ করে মুগ্ধ।
কাউন্টারে বিল দিতে আসলে,কাউন্টারে থাকা মেয়েটা ওদের দেখে বলে,
মেয়েটা:আপনারা খুব মজার কাপল।বেবির জন্য কাপড় চুজ করতে গিয়ে কি মজা করলেন আপনি আর স্যার। অনেক সুন্দর কাপল আপনারা। আপনাদের আর আপনাদের বাচ্চার জন্য অনেক দোয়া রইলো।
সাদাফ মেয়েটাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর ফোনে কল আসে। মুগ্ধ আর রিপিট কিছু বলতে যায়না। জিনিশ নিয়ে বেড়িয়ে আসে ওরা। তারপর সাদাফ মুগ্ধকে নিয়ে মেয়েদের দোকানে ঢুকে। মুগ্ধ বুঝতে পারেনা এখানে কেন এসেছে সাদাফ। সাদাফ দোকানে ঢুকে বলে,
সাদাফ:শীতের গায়ে দেওয়ার চাদর আছে লেডিস?
দোকানদার:জ্বি স্যার আছে।
সাদাফ:দেখানতো।
দোকানদার কত গুলা লেডিস চাদর দেখালো। সব গুলার মাঝে একটা নীল রং এর একটা চাদর পছন্দ হলো সেটা নিলো।
চাদরটা নিয়ে মুগ্ধের দিকে এগিয়ে দিলো সাদাফ আর বললো,
সাদাফ:বাহিরে এখন অনেক ঠান্ডা। নিজের সাথে ঠান্ডার কাপড় রাখবেন। নাহলে অসুস্থ হয়ে যাবেন।
মুগ্ধ কেমন দ্বিধা লাগছিলো সাদাফের থেকে এটা নিতে। সাদাফ সেটা বুঝতে পেরে বলে,
সাদাফ:দ্বিধা লাগার কিছু নেই। নিন এটা।
মুগ্ধ ওটা নিয়ে গায়ে দিলো। সাদাফ প্রাপ্তিকে নিয়ে খেলনার দোকানে গেলো। অনেক গুলা খেলনা কিনে নিলো মেয়ের জন্য। একটা বাবু নেওয়ার ট্রলি নিলো।
কেনাকাটা শেষ করে করে চলে আসলো বাসায়। মুগ্ধ আর যায়নি সেখান থেকেই বাসায় চলে আসলো।

১৩.
দেখতে দেখতে রুহি এখন অনেকটা ফ্রি মেহেরের সাথে। ভয় পাওয়াটা কমে গেছে অনেক মেহেরকে। মেহেরেরও অনেক ফ্রেন্ডলি লাগে রুহিকে।

এদিকে মুগ্ধ আর প্রাপ্তির রিলেশন ও অনেক ভালো হয়েছে। প্রাপ্তি অনেক ভালো মিশেগেছে মুগ্ধের সাথে। সাদাফ এখন টেনশন মুক্ত মেয়ের দেখাশুনা নিয়ে। সাদাফের মা আর মুগ্ধের ও অনেক শখ্যতা হয়েছে।

এদিকে সায়মা আরিশকে বিয়ের জন্য পাগল করে দিয়েছে। তাই আরিশ বিয়ে করার ডিসিশন নিয়েছে। আগামী পরশু তারা বিয়ে করবে।

সামিয়ার শশুড়বাড়ি থেকে সামিয়াকে দেখতে এসেছে ওর শাশুড়ি শশুড়। সামিয়ার স্বামী বর্তমানে ঢাকার বাহিরে আছে তাই সে আসেনি। সামিয়ার শাশুড়ি মুগ্ধকে দেখে সামিয়ার কাছে জিজ্ঞেশ করে,

সামিয়ার শাশুড়ি:এটা তোমার চাচাতো বোননা! যার বিয়ে হয়েছিলো কিন্তু সন্তান জন্ম দিতে না পারায় স্বামী ছেড়ে দিয়েছে।
সামিয়ার ওর শাশুড়ির বলার ধরন একদম পছন্দ হয়নাই। তাও সে বলে,
সামিয়া:জ্বি ও আমার চাচাতো বোন।
সামিয়ার শাশুড়ি:শুনো তুমি কিন্তু সাবধানে থেকো। এসব মেয়েদের সংস্পর্শে যাবানা। এরা কিছু দিলে খাবানা। বুজলে নাহলে বাবুর ক্ষতি হবে।
সামিয়ার শাশুড়ি এগুলা বলছিলো তা মুগ্ধ দরজার আড়াল থেকে শুনলো। শুনে চুপ করে চলে আসলো রুমে। এসে নিরবে কেঁদে নিলো। তারপর রেডি হয়ে বেরিয়ে পরলো ক্লাসে যাওয়ার জন্য।

সামিয়া ওর শাশুড়ির কথা শুনে বললো,
সামিয়া:মাফ করবেন মা। একটা কথা না বলে পারছিনা। আপনি আমার বোনকে এভাবে বলছেন আপনি কি ভুলে গেছেন আপনার নিজ মেয়ের বিয়ে হয়েছে আজ ৫ বছর এখনো তার বাচ্চা হয়নি। সে হিসাবে সেওতো বন্ধা হলো তাইনা। তাহলে সে যদি আমাকে দেখতে আসতে পারে আমাকে খাওয়াতে পারে। তবে আমার বোন কি অপরাধ করেছে।চিন্তা ধারা পাল্টান মা নাহলে জীবনে উন্নতি হবেনা।

সামিয়ার শাশুড়ি সামিয়ার কথায় অনেক লজ্জা পেলো।

মেহের মুগ্ধের জন্য একটা ইন্সুরেন্স করে রেখেছিলো আগামীকাল তারিখ সেটা মেয়াদ পুরন হবে। মুগ্ধ জানেনা এই কথা। মেহের এটা মুগ্ধের পড়াশুনার জন্য করে দিয়েছিলো। মেহের জানে তার বোন এখন তার থেকে টাকা নেবেনা। তাই এটা উঠিয়ে বাবার নাম করে দেবে।

মেহের অফিসে এসে দেখে আজকে এখনো রুহি আসেনি। তাই রুহির নাম্বারে কল দেয় কিন্তু ফোন অফ। মেহের ভাবলো হয়তো আসতে কোনো কারনে লেট হচ্ছে। তাই আসছেনা এখনো।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here