শেষ_থেকে_শুরু_২,পর্ব_৮

0
2550

শেষ_থেকে_শুরু_২,পর্ব_৮
নন্দিনী_চৌধুরী

১৪.
মেহেরের সামনে মাথায় ব্যান্ডেজ অবস্থায় বসে আছে রুহি। হাত পা দুইজায়গাতেই ব্যান্ডেজ করা তার। রুহি মাথা নিচু করে বসে আছে মেহেরের সামনে। রুহি কাঁপাকাঁপা গলায় বললো,
রুহি:সরি স্যার আজকে আসতে লেট হয়েগেছে। আসলে আসার সময় ছোট একটা এক্সসিডেন্ট করেছিলাম। তাই আসতে লেট হয়েছে।
মেহের রুহির কথা শুনে বলে,
মেহের:আমি মানুষ অমানুষ না। আপনার এক্সসিডেন্টে হয়েছে আপনি সোজা হাসপাতাল থেকে বাসায় যাবেন। তানা করে আপনি অফিসে আসছেন কেনো। আমি তো বলছি সমস্যা থাকলে জানাতে। বলিনাই মরতে মরতেও অফিসে আসতে।
রুহি:না মানে আমার ফোনটা ভেংগে গেছে রাস্তায় পরে। তাই জানাতে পারছিলামনা। তাই চলে আসলাম।
মেহের:যান গিয়ে গাড়িতে বসেন আমি আসতেছি। আপনাকে বাসায় পৌঁছে দিবো।
রুহি:না না স্যার লাগবেনা। আমি একাই যেতে পারবো।
মেহের:বেশি কথা বলেন আপনি। আপনাকে যেটা বলছি সেটা করেন।
রুহি আর কোনো কথা বললোনা চলে গেলো বাহিরে গাড়ির কাছে।
মেহের তার মেনেজারের সাথে কথা বলে চলে আসে বাহিরে। বাহিরে এসে গাড়িতে এসে বসে। রুহি গাড়ির পিছনের সিটে বসা। মেহের সিট ব্যালেট লাগিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়। ৩০ মিনিট পর রুহির বাসায় এসে পৌঁছায় তারা। রুহি গাড়ি থেকে নেমে মেহেরকে বলে,
রুহি:স্যার আসুন আমার বাসায় আসুন।
মেহের: আচ্ছা।
মেহের গাড়ি পার্ক করে রুহির সাথে ওদের বাসায় আসে। রুহি দরজান নক করতেই ওর ছোট ভাই রায়হান দরজা খুলে। রুহিকে এভাবে দেখে রায়হান বলে,
রায়হান:আপুনি তোমার কি হয়েছে। তোমার মাথায় হাতে ব্যান্ডেজ কেনো?
রুহি:পরে বলছি তুই যা মাকে ডেকে আন বল মেহমান আসছে।
রায়হান:আচ্ছা।
রায়হান চলে গেলো ওর মাকে ডাকতে। রুহি মেহেরকে সোফায় বসতে বললো। এর মাঝে রুহির মা আসলো। রুহির মাকে দেখে মেহের দাঁড়িয়ে সালাম দিলো। রুহির মা মেহেরকে দেখে সালামের উত্তর দিলো। তারপর রুহির দিকে তাকিয়ে বললো,
রুহির মা:কিরে তোর এই অবস্থা কেন মা? কি হইছে তোর।
রুহি:মা পরে বলবোনে। উত্তেজিত হবার কিছু হয়নি। তুমি আমার স্যারের সাথে কথা বলো। উনি আমার অফিসের বস মেহের। আমি চা নিয়ে আসি তোমরা কথা বলো।
রুহি চা আনতে যায় রায়হানকে সাথে নিয়ে।

রুহির মা সামনের সোফায় বসে মেহেরকে বলে,
রুহির মা:কেমন আছো বাবা তুমি?
মেহের:আলহামদুলিল্লাহ আন্টি আপনি?
রুহির মা:হ্যা ভালোই আছি আল্লহর রহমতে।বাবা তুমি কি জানো রুহির কি হইছে?
মেহের:আন্টি আজকে ও অফিসে আসার সময় ছোট একটা এক্সসিডেন্টে করেছে তাই হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ। আপনার বোকা মেয়ে ভেবেছে আজকে অফিসে না গেলে ওকে আমি বকবো তাই এই অবস্থাতেই অফিসে চলে গেছে। তাই আমি এখন দিতে আসলাম বাসায়।
রুহির মা সব কথা শুনে বলে,
রুহির মা: ভয় পায় বাবা চাকরিটা চলে যাওয়ার ভয় পায়। এই চাকরিটাই যে আমাদের এক মাত্র সম্ভল।
মেহের:মানে?
রুহির মা: রুহির বাবা মারা গেছেন। উনি মারা যাওয়ার পর থেকে রুহি সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে। আমার অসুখ ভাইয়ের পড়াশুনা সংসার খরচ সব ওকে জোগারজন্ত করতে হয় বাবা। তাইতো এই চাকরিটা ওর জন্য খুব দরকার বাবা। ও কোনো ভুল করলে বকে দিও তবু চাকরিটা কেড়ে নিওনা বাবা। এটা আমার অনুরোধ তোমার কাছে।
মেহের রুহির মায়ের কথা শুনে বুঝতে পারলো রুহিদের অবস্থা কতটা খারাপ। মেহের রুহির মাকে আস্থা দিলো সে চাকরি থেকে রুহিকে বের করবেনা।
ওদের কথার মাঝে রুহি চা নিয়ে আসলো মেহেরের জন্য। মেহের চা খেয়ে রুহিদের থেকে বিদায় নিয়ে আসলো।

~এদিকে~
মুগ্ধ ক্লাস শেষ করে সাদাফের বাসায় আসে। বাসায় এসে জানতে পারে প্রাপ্তির জ্বর আসছে। সাদাফ প্রাপ্তিকে কোলে নিয়ে বসে আছে প্রাপ্তি কান্না করছে থামছেনা। মুগ্ধ এসে হাত ভালো করে ধুঁয়ে সাদাফের থেকে প্রাপ্তিকে কোলে নেয়। তারপর নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে প্রাপ্তিকে ঠান্ডা করতে লাগলো। প্রাপ্তি মনে হয় বুঝতে পেরেছে মায়ের বুকে আছে এখন সে। তাই প্রাপ্তিও আসতে আসতে ঠান্ডা হয়ে গেলো। ইদানিং প্রাপ্তিকে চোখের আড়াল করতে ইচ্ছা করেনা মুগ্ধের। খুব মায়ায় পরেগেছে সে। প্রাপ্তির মায়া কাটানোর ক্ষমতা নেই তার। তাইতো বড্ডো ভালোবাসে মেয়েটাকে সে।

সাদাফ মুগ্ধের কোলে প্রাপ্তিকে ঠান্ডা দেখে খেয়ে অফিসের জন্য বেরিয়ে পরে।

বিকালের দিকে প্রাপ্তির জ্বর আরো বেড়ে যায়। মুগ্ধ সাদাফকে ফোন করে জানালে সাদাফ বলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে। সাদাফ বিকালে বাসায় এসে ওদের নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসে। ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছে সাদাফ মুগ্ধ। ডাক্তার মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে বলে,
ডাক্তার:বেবি কি সময়ের আগেই জন্ম নিয়েছে?
মুগ্ধের বলার আগেই সাদাফ বলে,
সাদাফ:হ্যা বেবি সময় অনুযায়ী ১মাস আগে জন্ম নিয়েছে।
ডাক্তার:আপনার ওয়াইফের কম্পলিকেশন ছিলো প্রেগ্নেন্সির সময়?
সাদাফ:জ্বি।
ডাক্তার:ওহ আই সি। এই জন্য বাবুর সমস্যা আছে কিছু। যেগুলা জন্মের পর বুঝা না গেলে পরে আসতে আসতে বাচ্চা বড় হলে দেখা দেয়। আপনাদের বাচ্চাকে ঠান্ডা থেকে দূরে রাখবেন। আর তাকে সব সময় গরম কাপড় পরিয়ে রাখবেন। ঠান্ডা মারাত্মক সমস্যা হবে তার।
মুগ্ধ:আচ্ছা এমনি ভয়ের কিছু নেইতো ডাক্তার?
ডাক্তার:না আপাদত ভয়ের তেমন কিছু দেখছিনা। তাও খেয়াল রাখবেন।
মুগ্ধ:জ্বি।

সাদাফ ওদের নিয়ে বাসায় চলে আসে।
রাতে মুগ্ধ আর বাসায় যেতে পারেনা। কারন প্রাপ্তি কান্না করছিলো। সারারাত সাদাফ মুগ্ধ জেগে ছিলো প্রাপ্তিকে নিয়ে। ভোরের দিকে প্রাপ্তি ঘুমিয়ে যায়। তখন তারা দুজনে ঘুমায়। সাদাফ সোফায়। মুগ্ধ প্রাপ্তিকে নিয়ে খাটে ঘুমায়।

১৫.
পরেরদিন সকালে মুগ্ধ সাদাফের উঠার আগে সাদাফের মাকে বলে বাসায় আসে। বাসায় আসতেই সালমা ওকে ধরে,
সালমা:কাল রাতে কই ছিলি নষ্টা মেয়ে?
মুগ্ধ চাচির থেকে এমন কথা শুনে বলে,
মুগ্ধ:আমাকে গালি দেও ভালো কথা চাচি কিন্তু আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলবেনা। কাল আমি কই ছিলাম তা আমি চাচাকে জানিয়েছি। তাই চাচার থেকে জেনেনিও আমি কোথায় ছিলাম।

মুগ্ধ আর কথা না বারিয়ে রুমে চলে আসে।
সালমা রাগে থরথর করে কাঁপছে।
সালমা:এই মেয়ে বেশি পার পাচ্ছে। এর একটা ব্যবস্থা করতে হবে শীঘ্রই।

মুগ্ধ রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে ফেজবুকে ঢুকেই একটা বড় ধরনের ধাক্কা খায়। কারন আরিশ আর সায়েমার মেড়িড স্টেটাস দেওয়া সায়মার আইডিতে। সেখানে অনেকেই শুভকামনা জানিয়েছে। বিয়ের ছবি ছেড়েছে সায়মা। বেশ খুশিই লাগছে আরিশকে। মুগ্ধের চোখের কোণে পানি আসে। মুগ্ধ ফোনটা রেখে পানিটা মুছে বলে,

“কি সুন্দর নতুন জীবন শুরু করলে আবার। আর আমাকে দেখো। আমিতো নতুন শুরুর কথা দূরে থাক আগের তোমাকে এখনো ভুলতে পারিনি। আর তুমি! এতোটা বদলে গেলে আরিশ। তবুও ভালো থাকো এই দোয়া করি।”

“হারিয়ে ফেলা ফিলিংসটা খুব বাজে
হাহাকারটা কাউকে বোঝানো যায়না…
তাকেও গিয়ে বলা যায়না যে…
তোমাকে আমার দরকার,, আমি তোমাকেই চাই।”

মুগ্ধ কান্না থামিয়ে চলে যায় রান্না ঘরে। সেখানে গিয়ে কিছু হালকা খেয়ে আবার রুমে আসে। রুমে এসে ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে যায় ক্লাসের জন্য।

সাদাফ রুমে বসে প্রিয়ার ছবিটা হাতে নিয়ে বসে আছে,,আর ভাবছে,

“মানুষ মানুষকে না দেখেও জীবনের চাইতে বেশি ভালোবাসতে পারে,
কেনো জানো?
“কারণ ভালোবাসা সৃষ্টি হয় মন থেকে
মুখ দেখে নয়
তাইতো আজও
“দেখা না করে,স্পর্শ না করে
শুধু অনুভতির ছোঁয়াতে
হাজার হাজার ভালোবাসা টিকে আছে।”
[রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর]

সাদাফ প্রিয়ার ছবিটা বুকে নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এর মাঝে প্রাপ্তি উঠে পরে। সাদাফ প্রাপ্তিকে কোলে নেয় উঠে।

~অন্যদিকে~
সায়মা আরিশের বিয়ে হয়েছে আজকে ২দিন। আরিশ নিজেকে একদম খুশি রাখার চেষ্টা করছে যেনো আসলেই সায়মাকে পেয়ে সে হ্যাপি। কিন্তু সত্যিতো এটাই এখনো মুগ্ধের কথা সে ভাবে। মুগ্ধকে না চাইতেও তার চিন্তায় নিয়ে আসে সে। আরিশ খাটে বসে এগুলা ভাবছে আর সায়মা আয়নার সামনে বসে চুল বাঁধছে। আরিশ হঠাৎ খেয়াল করে সায়মার ঘাড়ে একটা কামরের দাগ যেটাকে লাভ বাইট বলে। আরিশ এটা দেখে চমকে যায়। কারন তার আর সায়মার মাঝে এখনো ফিজিকাল কোনো মিলন হয়নি। তাহলে এটা কিভাবে আসলো। আরিশ সায়মাকে প্রশ্ন করলো,
আরিশ:সায়মা তোমার ঘাড়ে ওটা কিসের দাগ?

আরিশের এমন প্রশ্নে চমকে যায় সায়মা। ভয় লাগছে হঠাৎ করে তার। সায়মা আমতা আমতা করে বলে,,,,,

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here