শেষ_থেকে_শুরু_২,পর্ব_৯

0
3120

শেষ_থেকে_শুরু_২,পর্ব_৯
নন্দিনী_চৌধুরী

১৬.
আরিশের প্রশ্নে অনেক ঘাবরে যায় সায়মা। আরিশ যে হুট করে এমন প্রশ্ন করবে বুঝতে পারেনি সায়মা। সায়মা তাও নিজেকে সামলে আরিশকে বললো,
সায়মাঃআরে তেমন কিছুনা। এখানে আছেনা কেটে গেছে। ওইযে শাওয়ারের সাথে অনেক চোখা কি জানি একটা আছে। সেটার সাথে লেগে কেটে গেছে।
সায়মার কথায় আরিশ আর কিছু বললোনা। তবে মনে কোথাও হচ্ছে সায়মা মিথ্যা বলছে তবে মনের কথাকে পাত্তা না দিয়ে আরিশ সায়মার কথা বিশ্বাস করলো। সায়মা চুল বেঁধে উঠে আরিশের কাছে আসলো। ওর পাশে বসে আরিশের গালে স্লাইড করতে লাগলো। আরিশ সায়মাকে বললো,
আরিশঃকি করছো!
সায়মাঃকি করছি দেখছোনা। বিয়ে করছো অথচ বউকে একটুও ভালোবাসা দেওনা এটা কি ঠিক।
আরিশঃনা আসলে হুট করে বিয়েটা করাতে এমন হচ্ছে। এখন ছাড়ো অফিসে যেতে হবে।
সায়মাঃহুস! আজকে আগে আমি তারপর অফিস।
এই কথা বলেই সায়মা আরিশকে ধাক্কা মারে বিছানায়। তারপর দুজনে মেতে ওঠে তাদের আদিম ভালোবাসার খেলায়।

২ঘন্টা পর,

শাওয়ার নিয়ে অফিসের জন্য রেডি হয়ে চলে যায় আরিশ। সায়মা ঘরে বসে ফোন আলাপ শুরু করে দেয় তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে।

~অপরদিকে~

মেহের আজকে অফিসে এসেছে তাড়াতাড়ি আজকে ওর একটা মিটিং আছে। মেহের কেবিনে বসে কাজ করছে তখন ওর কেবিনে রুহি আসে।
রুহিঃস্যার আসবো?
রুহির আওয়াজ শুনে চমকে যায় মেহের। সামনে তাকিয়ে দেখে রুহি এসেছে। মেহের রুহিকে ভিতরে আসতে বলে। রুহি ভিতরে আসতেই মেহের রুহিকে বলে,
মেহেরঃআপনি আজকে!
রুহিঃস্যার আমি একদম ঠিক আছি। আর ঠিক থাকলে অহেতুক অফিস বন্ধ দেবো কেনো।
মেহেরঃআপনাকে নিয়ে সত্যি পারা যাবেনা। ওকে আসুন বসুন আর এই ফাইল গুলো রেডি করুন। ১০টায় মিটিং আছে।
রুহি চেয়ারে বসে কাজে লেগে পরলো।
১০টায় মেনেজার এসে ডাক দিলো মেহেরকে। মিটিং এর সময় হয়ে গেছে। মেহের উঠে দাঁড়িয়ে গায়ে ব্লেজার দিলো। আর রুহি সব ফাইল গুলো হাতে নিয়ে মেহেরের সাথে বেরিয়ে মিটিং রুমে আসলো। মিটিং রুমে আজকের মিটিং যাদের সাথে হবে তারা হলো সাদাদের কম্পানি আর মেহেরের কম্পানি। মিটিং রুমে ঢুকে মেহের সাদাফকে দেখে অবাক সাদাফ মেহেরকে দেখে। তবুও নিজেরা নিজেদের অবাক দূরে রেখে মিটিং শুরু করে। মিটিং সুন্দর ভাবে শেষ করে। সব কিছু ঠিকঠাক করে মেহেররা সাদাফদের ডিল গ্রহন করে। মিটিং শেষ করে মেহের বাহিরে বের হয়ে আসে। আসার আগে সাদাফকে বলে এসেছে তার কেবিনে এসে দেখা করতে।
মেহের কেবিনে আসার পর সাদাফ তার কেবিনে আসে। মেহের তাকে বসতে বলে নিজেও বসে।
সাদাফঃকেমন আছেন?
মেহেরঃজ্বি আলহামদুলিল্লাহ আপনি?
সাদাফঃ আলহামদুলিল্লাহ। আমি ভাবিনি আপনার সাথে দেখা হবে। যদিও জানতাম আপনার কোম্পানির সাথেই ডিল হচ্ছে।
মেহেরঃআমিওনা।
ওদের কথার মাঝে রুহি এসে ওদের কফি করে দিয়ে যায়। কফি খেতে খেতে সাদাফের চোখ যায় আরিশের পাশের ডেস্কে থাকা একটা ছবির দিকে। ছবিটা দেখে অনেক অবাক হয় সাদাফ। কারন এটা মুগ্ধের ছবি। সাদাফ কৌতূহল নিয়ে মেহেরকে জিজ্ঞেস করে,
সাদাফঃএই ছবিটা?
মেহের পাশে তাকিয়ে ছবিটা দেখে হেঁসে বলে,
মেহেরঃএই হচ্ছে আমার জীবনের এক মাত্র আপন,আমার এক মাত্র হ্যাপিনেস আমার ভালোবাসা আর অনেক আদরের আমার এক মাত্র ছোট বোন মেহরুবা ইসলাম মুগ্ধ।
মেহেরের কথা শুনে সাদাফ অনেক অবাক হলো সাথে চমকে গেলো। মুগ্ধ মেহেরের বোন তাহলে সে কেন এই বেবিকেয়ারের জব করছে। সাদাফ মেহেরকে বললো,
সাদাফঃএটা আপনার বোন?
মেহেরঃহ্যা মা বাবা চলে যাওয়ার পর অনেক দূরত্ব হয়েছে ওর সাথে। তাই চড়ুইপাখি আমার রাগ করেছে ভাইয়ের সাথে। আপনি চিনেন নাকি?
সাদাফঃ না আমি চিনিনা। আচ্ছা আজ তাহলে আসি।
মেহেরঃআচ্ছা ঠিক আছে।
সাদাফ উঠে চলে আসে। আর মেহের তার কাজে বসে পরে।

*সাদাফের বাসায়~
ইদানিং সাদাফের মায়ের মনে একটা ইচ্ছা জাগ্রত হয়েছে। যেই ইচ্ছা তার পূরণ হবার নয় তাও এই ইচ্ছা জাগ্রত হয়েছে। ইচ্ছাটা হলো সাদাফের বউ করে আনা মুগ্ধকে। সাদাফের মায়ের ভিষন পছন্দ হয়েছে মুগ্ধকে। এতো ভালো, ভদ্র মেয়ে সহজে পাওয়া যায়না। প্রাপ্তিকেও কত সুন্দর করে মায়ের মত আগলে রাখে। কিন্তু সে জানে সাদাফ এতে রাজী হবেনা আর মুগ্ধও হয়তো হবেনা। কেবা চায় এক বাচ্চার বাবাকে বিয়ে করতে। সাদাফের মা এই ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।
১৭.
রাতে সাদাফ বাসায় আসে। সারাদিন সে শুধু এটাই ভেবে গেছে মুগ্ধ কেন তার ভাইয়ের সাথে থাকেনা। সাদাফ বাসায় এসে দেখে মুগ্ধ প্রাপ্তিকে ঘুম পারাচ্ছে। ইদানিং তার এই দৃশ্যটা দেখতে খারাপ লাগেনা। বরং ভালোই লাগে এটা দেখতে। সাদাফ রুমে এসে কাপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে মুগ্ধকে সাদাফ বলে,

সাদাফঃপ্রাপ্তিকে ঘুম পারানো হলে বারান্দায় আসবেন। আপনার সাথে আমার কথা আছে।
সাদাফের কথায় মাথা নাড়ায় মুগ্ধ।
প্রাপ্তিকে ঘুম পারানো হয়ে গেলে মুগ্ধ উঠে বারান্দায় যায়। বারান্দায় এসে দেখে সাদাফ আবার সিগারেট খাচ্ছে। মুগ্ধ রেগে বলে,
মুগ্ধঃআপনি আবার এইসব ছাইপাঁশ ঘরে খাচ্ছেন। আপনাকেনা বলছি এসব বাহির থেকে খেয়ে আসবেন।
মুগ্ধের কথার মাঝে সাদাফ প্রশ্ন করে উঠে,
সাদাফঃমেহের আপনার কি হয় মুগ্ধ?
সাদাফের প্রশ্নে অনেক চমকে যায় মুগ্ধ। সাদাফ কিভাবে জানলো তার ভাইয়ের কথা। সাদাফ ফের আবার প্রশ্ন করলো,
সাদাফঃকি হলো বলুন?
মুগ্ধ আসতে করে উত্তর দিলো.,
মুগ্ধঃ মেহের আমার ভাই হয়।
সাদাফঃতাহলে আপনি আপনার ভাইয়ের সাথে না থেকে এই জব করছেন কেনো?
মুগ্ধঃতার আগে আপনি বলুন আপনি আমার ভাইয়াকে জানলেন কিভাবে?
সাদাফঃআগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।
মুগ্ধ তার সাথে ঘটে যাওয়া সব কথা সাদাফকে বললো। সব কিছু শুনে সাদাফ হতভম্ব হয়ে গেছে। একটা মেয়ে কত কষ্ট সয্য করেছে আর করছে। মুগ্ধ সব বলতে বলতে কান্না করে দিয়েছে। সাদাফ মুগ্ধের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
“এই চোখে কান্না না এই চোখে এই মুখে হাঁসি মানায়। এই চোখ যার জন্য কাঁদছে সে প্রতারক। আপনার সাথে প্রতারণা করেছে। আপনার বিশ্বাস ভেংগেছে। তাই এই চোখ তার জন্য একটুও পানি ফেলবেনা। আর একটা কথা জানেনতো,
রবি ঠাকুর বলেছিলো,
ঘরের মধ্যে তুমি যত ইচ্ছা কাঁদো, কিন্তু দরজা সবসময় হাঁসিমুখে খুলবে। কারন যদি কেউ দেখেনেয় যে তুমি ভেংগে পরেছো,তবে সে তোমায় আরো ভেংগে দিয়ে যাবে।”

তাই কাঁদার হলে একা একা নিস্তব্ধে কাঁদবেন। কারো সামনে নিজের দূর্বলতা প্রকাশ করবেননা। আজ আপনার জীবনে সুখ না আসলেও একদিন দেখবেন সব সুখ আপনার কাছে আছে। সৃষ্টিকর্তা কখোনো কাউকে নিরাশ করেনা। আজ জীবন যেখানে শেষ কাল সেখান থেকেই একটা নতুন শুরু হয়। “শেষ থেকে শুরু” হয়।

সাদাফের বলা প্রত্যেকটা কথা মুগ্ধকে মুগ্ধ করেছে। এভাবে তাকে তার ভাই ছাড়া আর কেউ ভরসা দেয়নি। সাদাফ আরো বলে,

সাদাফঃআপনার ভাই আপনাকে অনেক ভালোবাসে। সে আপনার জন্য সব করতে পারে। তার মতো ভাই খুব কম পাওয়া যায়। তাই ভাইয়ের প্রতি অভিমান করে নিজে আর ভাইকে কষ্ট দিয়েননা। আপনার ভাই পরিস্থিতির স্বিকার ছিলো। নাহলে সে আপনার সাথে এমন হতে দিতোনা। তাই ভাইয়ের সাথে অভিমান মিটিয়ে নিন।

সাদাফের কথার মর্ম বুঝতে পারে মুগ্ধ। আসলেই তার ভাই না থাকলে তো সে থাকতোনা। তার ভাই তার জন্য লড়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত আর সে কিনা তার সাথে অভিমান করে বসে আছে। সত্যি এটা কি করছে সে। নাহ এই অভিমান আর না। সব অভিমানের অবসান ঘটাবে সে।
সাদাফদের বাসা থেকে বিদায় নিয়ে আসলো মুগ্ধ। এখন যাবে তার ভাইয়ার বাসায়।

.
.
.
.
.
.
.
.

রুহি রাতে বসে আছে বারান্দায়। ইদানিং তার চিন্তাচেতনায় কেন জানি মেহের একটু বেশিই উঁকি দিচ্ছে। না চাইতেও মেহেরকে নিয়ে ভাবছে সে৷ আচ্ছা এই ভাবনা এই চিন্তা এই মেহেরের আসে পাশে থাকলে ভালোলাগাটা কি ভালোবাসা! যদি ভালোবাসা হয় তবে তা ভুলে যাওয়াই ভালো। কারন কোথায় রুহি আর কোথায় মেহের। তবে রুহি জানেনা এটা কি আসলে ভালোবাসা কিনা। তবে রুহি জানে সে দুর্বল হচ্ছে একটু একটু করে। নাহ এই দূর্বল হতে দেওয়া যাবেনা। তাকে নিজেকে সংযত রাখতে হবে।

~এদিকে~
মুগ্ধ এসে দাঁড়িয়ে আছে মেহেরের বাসার সামনে। মেহেরের বাসা বললে ভুল হবে এটা তাদের দুজনেরই বাসা। মেহের তার সব সম্পত্তির অর্ধেক মুগ্ধের নামে করে রেখেছে। তাই এই বাসা মুগ্ধের ও বলা যায়। তবে তবুও কেন জানি অসস্তি হচ্ছে। মুগ্ধ আসতে করে বাসার ভিতরে আসে। বাসায় ওনেক গার্ড আছে। তারা সবাই মুগ্ধকে চেনে তাই কেউ মুগ্ধকে কোনো বাঁধা দিচ্ছেনা।

মুগ্ধ বাসায় এসে কলিং বেল দিতেই বাসার সার্ভেন্ট এসে দরজা খুলে দেয়। মুগ্ধকে দেখে সালাম দেয়। মুগ্ধ সালামের জবাব দিয়ে বাসায় ঢুকে। মেহের এখন নিজের রুমে আছে। মুগ্ধ সিড়ি দিয়ে উঠে মেহেরের রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়। আজ সব অভিমানের অবসান ঘটাতে এসেছে মুগ্ধ!

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here