শেষ_থেকে_শুরু_২?,অন্তিম_পর্ব

0
2538

শেষ_থেকে_শুরু_২?,অন্তিম_পর্ব
নন্দিনী_চৌধুরী

৩৭.
২মাস পর,,,,

ধুমধাম করে বিয়ের আয়োজন চলছে খান বাড়িতে। খান বাড়ির দুই ছেলেমেয়ের বিয়ে বলে কথা। ধুমধাম করে বিয়ের আয়োজন না করলে কি হয়। তাইতো ধুমধাম করেই বিয়ের আয়োজন হচ্ছে। মেহের ইচ্ছেতেই ওর আর মুগ্ধের একই সাথে বিয়ে হচ্ছে।

মুগ্ধের চাচা, সামিয়া, সামিয়ার স্বামী সবাই এসেছে শুধু আসেনি সায়মা। সায়মা কেন আসেনি সেটা সবাই জানায় ওকে আর জোর করেনি। সামিয়ার একটা মিষ্টি ছেলে হয়েছে। ছেলের বয়স ১মাস।

মুগ্ধ নিজের রুমে বসে আছে। আজকে ওর বিয়ে ভাবতেই অবাক লাগছে ওর। এই বিয়ে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিলো ওর। প্রথমবার তা পূরণ হয়নি তবে এবার সব আশা পূরণ হচ্ছে। মুগ্ধের কাছে সব যেনো স্বপ্ন মনে হয়। এতো আনন্দের মাঝেও একটাই কষ্ট আর সেটা নিজের ভাইকে ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট। এই একটা জায়গায় এসে আনন্দ ফিকে লাগে। মুগ্ধ এসব ভাবছিলো তখন ওর রুমে মেহের আসলো। মেহের এসে মুগ্ধের পাশে বসলো। মেহেরের বুকটাও কষ্টে ফেঁটে যাচ্ছে। এক মাত্র আদরের বোনকে আজ পাঠিয়ে দিতে হবে শশুড়বাড়ি। আজ থেকে বোনটা অন্যের ঘরে চলে যাবে। মেহের নিজেকে অনেক কষ্টে স্বাভাবিক রেখে মুগ্ধকে বললো,

মেহের:চড়ুইপাখি আজকেতো তুই চলে যাবি। তারপর আমার কথা কি মনে পরবেনা তোর। তুইকি আমার উপড় আগের কোনো কিছুর জন্য অভিমান করে নেইতো?
মুগ্ধ ভাইয়ের কথায় চমকায়। অভিমান! এটা কি আদৌ করা যায় মেহের উপড়! তার মতো ভাই পাশে আছে বলেইতো মুগ্ধ আছে। আর তার উপড় কিনা অভিমান। মুগ্ধ গাল ফুলিয়ে মেহেরকে বলে,,

মুগ্ধ:আমাকে বিদায় করতে পারলে মনে হয় তুমি অনেক খুশি। শুনো আমার বিয়ে হয়ে গেলেও আমি এখানে আসবো থাকবো আর তোমার বউয়ের কাছে তোমার নামে নালিস করবো। আর অভিমান! তোমার উপড় কি অভিমান করা যায় বলো। তুমি আছো বলেইতো আমি এতো নিরাপদ। আগে যা হয়েছে তাতে তোমার কোনোই দোষ নেই সুতারং তোমার উপড় অভিমান রাগ করা একদম বেমানান।

মেহের মুগ্ধের কথা শুনে মুগ্ধকে জরিয়ে ধরলো। আজ বোনটাকে অন্যের ঘরে দিয়ে দিবে ভাবলেই কলিজা কেঁপে ওঠে। মুগ্ধ নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনা কেঁদে দেয় ভাইয়ের বুকে মুখ লুকিয়ে।

সন্ধ্যায় পার্লারের থেকে মেয়েরা এসে মুগ্ধ রুহিকে সাজিয়ে দিচ্ছে। একটা বড় রিসোর্টে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। এখানেই ওদের বিয়ে সম্পুর্ন হবে। সাদাফরা চলে আসছে। সামিয়া ওদের আপ্যায়ন করে ভিতরে এনে স্টেজে বসিয়েছে। মেহের সাদাফ স্টেজে বসা এবার ওদের বউদের আসার পালা। সিড়ি দিয়ে নেমে আসছে ওদের দুজনের মনের রানী স্বপ্নের রানী। মুগ্ধকে একটা লাল সাদা মিশানো লেহেংগা পরানো হয়েছে সাথে মেচিং গহনা পরেছে। রুহিকে লাল কালারের লেহেংগা পরানো হয়েছে সাথে মেচিং গহনা। দুজনকেই দেখতে মাশাল্লাহ লাগছে। রুহি মুগ্ধকে নিয়ে বসানো হলো অন্য সাইডে। এবার কাজি আসলো ওদের বিয়ে পড়াবে। কাজি এসে আগে মেহের আর রুহির বিয়ে পড়ানো শুরু করলো। মেহেরকে কাজী কবুল বলতে বললে মেহের গরগর করে কবুল বলে দেয়। কাজী রুহিকে কবুল বলতে বললে রুহি কিছুটা সময় নিয়ে কবুল বলে। এবার সাদাফ আর মুগ্ধের পালা। কাজী সাদাফকে কবুল বলতে বললে সাদাফ কবুল বিনা সময় নিয়ে কবুল বলে দেয়। এবার মুগ্ধের কাছে আসলে মুগ্ধ কবুল বলতেই পারছেনা। কেন জানি খুব জোরতা কাজ করছে। ভয় করছে হাত কাঁপছে ওর। মুগ্ধের অবস্থা বুঝতে পেরে সাদাফ রুহিকে ইশারা করলে রুহি উঠে ওদিকে যায় আর সাদাফ গিয়ে মুগ্ধের পাশে বসে। সাদাফ মুগ্ধের হাত ধরে। মুগ্ধ সেদিকে তাকালে সাদাফ চোখ দিয়ে ইশারা করে যার মানে,,ভরসা করো ইনশাআল্লাহ।

মুগ্ধ আসতে করে কবুল বলে দেয়। সবাই সেটা শুনে আলহামদুলিল্লাহ বলে। এরপর খাওয়া দাওয়ার পালা। খাওয়া দাওয়ার পালা শেষ করে এবার বিদায়ের পালা। এই পালাটা খুব ভারি একটা সময়। বিদায় জিনিশটা যে কি তা এই সময়টায় বুঝা যায়। রুহি ওর মাকে জরিয়ে ধরে কাঁদছে ভাইকে জরিয়ে ধরে কাঁদছে। রুহির মা রুহিকে শান্ত করছে। মেহেরের হাতে মেয়েকে তুলে দিলেন রুহির মা। এবার মুগ্ধের যাওয়ার পালা। মুগ্ধ ভাইকে জরিয়ে ধরে কাঁদছে। মেহেরও কাঁদছে। মেহের সাদাফকে বলছে,,
মেহের:সাদাফ আমি আমার কলিজার একটা অংশ তোমার হাতে তুলে দিচ্ছি। এই অংশকে কষ্ট দিওনা। যদি ও কোনো অপরাধ করে ফেলে তবে আমাকে বলো তবুও ওকে আঘাত করোনা। আমার বোনটাকে ভালোবেসে কাছে রেখো আগলে রেখো ভাই।
সাদাফ:আমি কথা দিচ্ছি আমি ওকে কোনোদিন কষ্ট পেতে দেবোনা। সব সময় আগলে রাখবো ওকে। কথা দিলাম আপনাকে।

মুগ্ধকে গাড়িতে তুলে দিলো মেহের। গাড়ি ছেড়ে দিলো। চলে যাচ্ছে মুগ্ধ।

**
সামিয়া বরণ করে ঘরে তোলে রুহিকে। তারপর রুহিকে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিলো বাসরঘরের খাটে। রুহির আজকে খুব আনন্দ লাগছে। আজ তার ভালোবাসা পূর্ণতা পেতে চলেছে।

কিছু সময় পর মেহের আসলো রুমে। রুহি উঠে মেহেরকে সালাম করলো। মেহের রুহিকে টেনে নিজের বুকে নিলো আর বললো,

“তোমার স্থান আমার পায়ে না আমার বুকে।”

রুহি:আজ আমি অনেক খুশি জানো।
মেহের: আমিও আজ অনেক খুশি।
মেহের রুহিকে কোলে তুলে নিলো আর বললো,
মেহের:তবে আজ ডুব দেওয়া যাক তোমার মাঝে।
রুহি মেহেরের কথায় লজ্জা পেয়ে যায়।
মেহের রুহিকে বিছানায় শুইয়ে দেয় তারপর ডুব দেয় রুহির মাঝে। আজ পূর্ণতা পাচ্ছে মেহেররুহির ভালোবাসা।

এদিকে,,,
মুগ্ধকে সাদিয়া বরণ করে বসিয়ে দিয়ে গেছে সাদাফের রুমে। প্রাপ্তিকে আজ সাদিয়া নিয়ে ঘুমাবে। সব কেমন নতুন লাগছে মুগ্ধের কাছে এই ঘর এই সব আগেও সে এসেছে দেখেছে। কিন্তু আজ তার সব নতুন লাগছে মনে হচ্ছে আজ সে একজন নতুন মানুষ এই রুমে।
কিছু সময় পর সাদাফ আসে রুমে। সাদাফের কাছেও আজ সব নতুন লাগছে। একটা নতুন শুরু সে করছে তাই সব নতুন লাগছে। সাদাফ রুমে আসতেই মুগ্ধ উঠে ওকে সালাম করতে যায়। সাদাফ পা সরিয়ে নেয় আর বলে,
সাদাফ:উহুম পায়ে নয়।
মুগ্ধ:এটা নিয়ম।
সাদাফ:আচ্ছা।
মুগ্ধ সাদাফকে সালাম করলো। এবার সাদাফ সালাম করলো মুগ্ধকে। এতে মুগ্ধ অনেক অবাক হলো।
মুগ্ধ:আরে কি করছেন?
সাদাফ:কেনো এটা নিয়ম হলে এটাও নিয়ম। শুধু বউ কেন স্বামীর পা ছোঁবে স্বামীও ছোঁবে বউয়ের পা।
মুগ্ধ:কিন্তু।
সাদাফ:কোনো কিন্তু না। চলো এদিকে আসো। সাদাফ মুগ্ধ বারান্দায় আসে।
আজ আকাশে অনেক সুন্দর একটা চাঁদ উঠেছে। চাঁদের আলোয় বারান্দা একদম আলোকিত হয়েগেছে।
সাদাফ:আকাশের চাঁদটা আজ অনেক বড় করে উঠেছে।
মুগ্ধ:হুম। কি সুন্দর চাঁদ।
সাদাফ:হ্যাঁ তবে আমার চাঁদের মতো নয়।
আমার ঘরের চাঁদ ওই চাঁদের থেকে সুন্দর।
মুগ্ধ:দূর কি যে বলেননা।
সাদাফ:আচ্ছা চলো নামাজ আদায় করে নেই।
মুগ্ধ:হুম চলুন।
সাদাফ মুগ্ধ ওযু করে নামাজ পরতে বসলো। নামাজ শেষ করে উঠে সাদাফ মুগ্ধের কপালে চুমু দিলো।
মুগ্ধ গিয়ে বিছানায় বসলো। সাদাফ গিয়ে বসলো।
সাদাফ: আজ থেকে আমাদের জীবনে একটা নতুন শুরু হবে। যেখানে অতীতের কোনো চিহ্ন থাকবেনা।
মুগ্ধ এগিয়ে গিয়ে সাদাফের কাধে মাথা রাখলো। আজ ওদের ভালোবাসার পূর্ণতা পেতে চলেছে। অনেক বাধা পেরিয়ে অনেক কষ্ট সয্য করে আজ মুগ্ধের জীবনে সাদফ আলো সুখ নিয়ে এসেছে। আজ পূর্ন পাচ্ছে তার ভালোবাসা।

পরেরদিন সকালে,,,,,
মুগ্ধ ঘুম থেকে উঠে দেখে সে সাদাফের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে শুয়ে আছে। লজ্জায় লাল হয়ে গেলো মুগ্ধ। আসতে করে উঠে পাশে পরে থাকা জামা পরে ওয়াশরুমে গেলো। গোসল করে একটা হলুদ শাড়ি পরে বেরিয়ে আসলো। চুল গুলো ভালো মতো পানি ঝারিয়ে হালকা রেডি হয়ে নিচে আসলো মুগ্ধ। সাদিয়ার রুমে গিয়ে প্রাপ্তিকে নিয়ে আসলো। প্রাপ্তি মাকে পেয়ে খুশি হয়ে গেলো।
মুগ্ধ প্রাপ্তিকে খাইয়ে দিলো তারপর সাদাফের মায়ের সাথে রান্নায় হাত লাগালো। সাদাফের মা না করলেও মুগ্ধ জোর করে। রান্না শেষ করে প্রাপ্তিকে কোলে নিয়ে সাদাফের রুমে যায় কফি নিয়ে। সাদাফ মুগ্ধ প্রাপ্তিকে এক সাথে দেখে অনেক খুশি হলো। ফ্রেশ হয়ে এসে মুগ্ধের হাত থেকে কফি নিয়ে কফিটা খেলো। তারপর প্রাপ্তিকে কোলে নিয়ে আদর করতে লাগলো। আজ তারা একটা পরিপূর্ন পরিবার।

আজ ওদের বৌভাত ৪জনের। তাই বিকাল থেকে সব ঠিকঠাক করা হচ্ছে। রুহি মুগ্ধকে সাজিয়ে স্টেজে বসিয়ে রাখা হয়েছে এক এক জন আসছে আর ওদের দেখছে। সাদাফ মেহের দাঁড়িয়ে কথা বলছে তখন একটা মহিলা আসলো আর বলতে লাগলো জোরেই,,,

মহিলা:কিগো সাদাফের মা শুনলাম তোমার ছেলের বউয়ের নাকি আগেও বিয়ে হয়েছিলো। সেই বিয়ে নাকি টেকেনি। বলি বিয়ের আগে ভালো করে খোঁজ নিয়েছিলে তো যে মেয়ের কোনো দোষ আছেকিনা। বুঝোতো এমন মেয়ে তেমন সুবিধার না। পরে আবার আফসোস না করতে হয়।

সাদাফ আর মেহের মহিলার কথা শুনে রেগে গেলো। মেহের কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাদাফ গিয়ে দাঁড়ালো মহিলার সামনে। মহিলার কথায় মুগ্ধ ইতিমধ্য কাঁদছে তবে সবার সামনে না। সাদাফ মহিলাটাকে বলছে,

সাদাফ:আচ্ছা আপনার সমস্যা কি আন্টি? মানে আপনাকে আমি এখানে দাওয়াত দিয়েছে আমার বউকে দেখতে আমার বউ কেমন তার কম্পলিমেন্ট দিতে বলিনাই। আমার বউ যেমন হোক তেমনি সে আমার কাছে ভালো। আমার বউ আমার কাছে অনেক দামী। তাকে নিয়ে একটা ফালতু কথা শুনতে বা বলার চান্স দিবোনা।
হা ওর আগে বিয়ে হয়েছিলো কিন্তু সেটা ওর জন্য ভাংগেনি ওর স্বামীর জন্য ভেংগেছে। তাই কিছু না জেনে কোনো কথা বলবেননা। আর একটা কথা একটা মেয়েকে এভাবে বলার আগে ভেবে দেখবেন আপনার ঘরেও মা বোন মেয়ে আছে। একটা ডিভোর্সের কারণ একটা মেয়েই হয়না শুধু একটা পুরুষ ও হতে পারে। অনেক সমস্যাই থাকতে পারে। শুধু না জেনে একটা মেয়েকে বাজিয়ে দেবেন এটা কোথাকার নিয়ম। শুনুন আন্টি জীবনে অনেক কিছু হয় তাই সেগুলা নিয়ে খোটা না দিয়ে পারলে ভালো দোয়া করেন আর না পারলে অযথা কাইকে খোটা মারবেননা।

সাদাফের কথা শুনে উপস্থিত সবাই ওর কথায় সায় দিলো আর ওই মহিলা অনেক লজ্জা পেলো। তাই সেখান থেকে চলে গেলো।মেহেরের আক গর্ব হচ্ছে সে পেরেছে নিজের বোনকে একজন ভালোমানুষের হাতে তুলে দিতে। আজ মেহের চিন্তা মুক্ত। আজ সত্যি সে পেরেছে তার বোনকে একটা ভালো কারো হাতে তুলেদিতে।

মুগ্ধ আজ অশ্রু চোখে তাকিয়ে আছে সাদাফের দিকে। না এই অশ্রু কষ্টের নয় এই অশ্রু সুখের। একজন ভালোমানুষকে জীবনে পাওয়ার আনন্দ।

অনুষ্ঠান শেষ করে মুগ্ধরা আসছে ওদের বাসায় আর মেহেররা গেছে রুহিদের বাসায়।

মুগ্ধ প্রাপ্তিকে ঘুম পারিয়ে বসে আছে মুগ্ধ সাদাফ রুমে এসে দেখে মুগ্ধ বসে আছে। সাদাফ গিয়ে ওর পাশে বসলো।
সাদাফ: কি হয়েছে আমার বউটার?
মুগ্ধ কিছুনা বলে সাদাফকে জরিয়ে ধরে আর বলে,
মুগ্ধ:আমাকে এভাবেই আগলে রাখবেন তো। আমাকে ছেড়ে যাবেননাতো।
সাদাফ:নিজের অক্সিজেন কে ছেড়ে কেউ কি বাঁচতে পারে? পারেনা। আমিও পারবোনা তোমাকে ছাড়া বাঁচতে ভালোবাসি তোমাকে আমি অনেক ভালোবাসি।
মুগ্ধ:আমিও ভালোবাসি আপনাকে সাদাফ। নিজের থেকে অনেক বেশি ভালোবাসি।

৭বছর পর,,,,,,
সিড়ি দিয়ে নেমে চিল্লাতে চিল্লাতে নামছে প্রাপ্তি।
“মামনি ও মামনি দেখো ছোটু আমার চুলে এগুলা কি করেছে।”
মুগ্ধ প্রাপ্তির কাছে এসে বলে,
মুগ্ধ:কি করেছে বাদরটা দেখি।
প্রাপ্তি:দেখো মামনি আমার চুলে কি লাগিয়ে দিয়েছে।
মুগ্ধ:সিফাত এই সিফাত।
মায়ের ডাকে গুটিগুটি পায়ে নিচে আসলো সিফাত। মুগ্ধ সিফাতের সামনে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত রেখে বললো,
মুগ্ধ:এগুলা কি করেছো দি এর মাথার চুলে?
সিফাত:মাম্মি আসলে আমি একটু মজা করছিলাম।
মুগ্ধ:তাই বলে এমন মজা করতে হয়না সোনা। যাও দি কে সরি বলো।
সিফাত প্রাপ্তির সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
সিফাত:সরি দি আমি আর এমন করবোনা।
প্রাপ্তি: প্রমিস।
সিফাত:পাক্কা প্রমিস।
মুগ্ধ:আচ্ছা যাও খেলো।
মুগ্ধ রান্না ঘরে চলে গেলো।

দেখতে দেখতে অনেক কিছু পালটে গেছে। কিছু মানুষ জীবন থেকে হারিয়ে গেছে আবার কিছু মানুষ জীবনে এসেছে।

মুগ্ধ সাদাফের ঘরে আলো করে এসেছে ওদের ছেলে সিফাত। হ্যাঁ মুগ্ধে কোলে আল্লাহ সন্তান দিয়েছে। ওদের বিয়ের ২বছরের মাথায় এসেছে সিফাত মুগ্ধের গর্ভে। সেদিন মুগ্ধ খুশিতে কান্না করেছিলো অনেক। অবশেষে আল্লাহ ওর ডাক শুনেছে।
এখন ওদের ৩জন ছেলে মেয়ে। ৩জন কেন বলছি একটু পরেই জানবেন।

সাদাফের সাথে বাসায় হাত ধরে ঢুকছে আরশি। হাতে তার অনেক গুলা খেলনা। মুগ্ধ আরশিকে দেখে ওকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করে বললো,
মুগ্ধ:আমার মামনিটা আসছে ঘুরে।
আরশি:হুম আম্মু। দেখো কত কিছু কিনেছি আপু,আর ছোটুর জন্য।
মুগ্ধ:আচ্ছা যাও আপু আর ছোটুর কাছে যাও।

আরশি ইবনাত বয়স ৭ বছর। সাদাফ মুগ্ধের ২য় সন্তান তবে আরশি সায়মার মেয়ে। হ্যাঁ সায়মা আর এই দুনিয়ায় নেই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে চলেগেছে সে শুধু রেখে গেছে ওর ওই মেয়েটাকে। সায়মার যেদিন পেইন উঠে সেদিন ওর কন্ডিশন খুব খারাপ হয়ে যায় ডাক্তাররা শুধু আরশিকেই বাঁচাতে পারে। যেহুতু সায়মার এডস ছিলো ভয় ছিলো আরশিকে নিয়ে। কিন্তু আল্লহর রহমতে আরশি একদম বিপদ মুক্ত ছিলো। সায়মা মারা যাওয়ায় মুগ্ধ আরশিকে নিয়ে নেয় আপন করে পরিচয় দেয় ওর আর সাদাফের সন্তান হিসেবে। লিগালি আইনত ভাবে ওদের মেয়ে করে নেয় আরশিকে। আরশির আসার ১ বছরের মাথায় সিফাত আসলো মুগ্ধ সাদাফের ঘরে। সিফাতের ৫ বছর আরশির ৬ আর প্রাপ্তির ৮ বছর। ৩সন্তান নিয়ে বেশ সুখেই আছে ওরা। সামিয়ার আরেকটা মেয়ে হয়েছে। মাহফুজ মারা গেছেন মাসখানেক আগে। আর সালমা! সালমা তো জেলেই মারা গেছে। সালমার মৃত্যুতে অনেক আঘাত পেয়েছিলো মাহফুজ,সামিয়া, সায়মা।

আরশি খেলনা নিয়ে প্রাপ্তি আর সিফাতের কাছে গেলো। তিনজনে খেলনা ভাগাভাগি করে খেলনা নিয়ে খেলতে লাগলো। এদের ৩জনের মাঝে ঝগড়া হলেও কোনোদিন একে অপরকে ছেড়ে থাকতে পারেনা।

ছেলেকে সাথে নিয়ে মুগ্ধের বাসায় এসেছে মেহের। মেহেরের একটা ছেলে হয়েছে আর রুহি এখন আবার ৫মাসের প্রেগন্যান্ট। আজকে সবাই একসাথে ছুটির সময় কাটাবে তাই এসেছে।

মেহেরের ছেলে মাহির খেলতে চলে যায় প্রাপ্তিদের কাছে। আর ওরা সবাই একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে। এরপর দুপুরের খাবার খেয়ে সবাই আবার আড্ডা দিতে বসলো। সারাদিন সবাই একসাথে থেকে এরপর রাতে চলে গেলো মেহেররা।

রাতে মুগ্ধ তিন ছেলেমেয়েকে ঘুম পারিয়ে রুমে আসলো। সাদাফ বারান্দায় বসে আছে। মুগ্ধ গিয়ে সাদাফের পাশে বসলো আর বললো,
মুগ্ধ:আছা শুনুন।
সাদাফ:হুম বলো।
মুগ্ধ:আচ্ছা আপনার কি প্রিয়া আপুর কথা মনে পরে?
সাদাফ:কেনো?
মুগ্ধ:বলুননা।
সাদাফ:প্রিয়া আমার জীবনের প্রথম প্রেম ভালোবাসা ছিলো। আমি জীবনে প্রথম তাকে ভালোবেসেছিলাম। তাই তাকে ভুলে যাওয়াটা সম্ভব না তাইনা বলো।
মুগ্ধ:একদম। আমিও চাইনা আপনি তাকে ভুলে যান। আমি চাই আপনার মনে সে থাকুক। আর আমার জায়গায় আমি থাকি। কারো জায়গায় কেউ আসবেনা।
সাদাফ:অবশ্যই আমার জীবনের শেষ থেকে শুরু তুমি।
মুগ্ধ সাদাফকে জরিয়ে ধরে বলে,
“আপনিও যে আমার জীবনের শেষ থেকে শুরু। আমার জীবনে এতো খুশি এতো আনন্দ সব আপনার দেওয়া। আমার ৩টা সন্তান আপনি আমার বেঁচে থাকার কারণ।

“মনের আকাশে আপনি রবেন আজিবন। কোথাও গেলেও ভুলবেনা এই মন। আপনি যে প্রিয় আমার শেষ থেকে শুরু প্রিয়।”

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here