##শেষ_বয়সের_প্রাপ্তি
পর্বঃ ৬ ও শেষ
লেখনীতেঃ আয়েশা সিদ্দিকা (লাকী)
কি ব্যাপার নিশি হঠাৎ কল দিলো কেনো!!
মনের মধ্যে একটা অজানা ভয় কাজ করছিলো। নিশির বাড়ি আমার বাবার বাড়ির কাছে তাই কেনো জানি মনে হচ্ছিল বাবা মায়ের কোনো বিপদ হলোনাতো?! আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে কল রিসিভ করলাম,
– হ্যালো নিশি?
– হ্যাঁ আমি, কিরে সোহেলী কেমন আছিস অনেকদিন তোর কোনো খোঁজ খবর পাইনা।
– হ্যাঁ রে অনেক দিন কথা হয়নি তোর সাথে। তারপর আছিস কেমন?
– এইতো ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। তুই কেমন আছিস?
– আমিও ভালো আছি।
– তোর খবর কি? দিনকাল কেমন যাচ্ছে?
– হ্যা আমার সব কিছু ঠিকঠাক চলছে। কিছুক্ষণ আগে তোর শশুর শাশুড়ির সাথে দেখা হলো উনাদের সাথে কথা বলে বেশ ভালো লাগলো। তোর শাশুড়ী মনে হয় একটু অসুস্থ। কি হয়েছে তোর শাশুড়ির?
– কি বলছিস এসব? আমার শাশুড়ীর সাথে তোর কোথায় দেখা হলো।
– এই তো হাসপাতালে। আমার এক আত্মীয় কিছুটা অসুস্থ তাই এই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আছে তাই দেখতে এসেছিলাম। হাসপাতাল থেকে বের হতেই উনাদের সাথে দেখা। ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করলাম তখন বললো উনি অসুস্থ তাই ডাক্তার দেখাতে এসেছে।
– নিশি আমি তোকে একটু পরে কল করছি।
– আচ্ছা ঠিক আছে।
আমার মনে হলো পুরো আকাশটা আমার মাথায় ভেঙে পড়লো। নিশি কি বললো এগুলো!! মা বা হাসপাতালে!! কিন্তু বের হলো কখন? আমাকে না বলেই এভাবে চলে গেলো হাসপাতালে!! নাহ আমি আর ভাবতে পারছিনা।
দৌড় দিয়ে মায়ের রুমে গেলাম গিয়ে মা বা কেও নাই রুমে। দরজার কাছে এসে দেখি দরজা কল করা। আমাদের সবার কাছে একটা করে চাবি থাকে তাই মা বাবার বের হতে আমাকে ডাকতে হয়নি। আর ডাকেনি তার কারন আমি কখনোই তাদের যেতে দিবোনা। মোবাইল থেকে কয়েকবার কল দিলাম রিসিভ হলোনা।
আমি আমর রুমে এসে বিছানায় ধপ করে বসে পড়লাম। আমি কি করবো এখন!!
মায়ের এমন ঝুকি কোনোভাবেই নিতে দেয় যাবেনা। আমি বেঁচে থাকতে সেটা হতে দিতে পারিনা।
আমি ফ্রেস হয়ে তড়িঘড়ি করে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। রাস্তায় এসে একটা রিকশা নিয়ে রিকশায় উঠেই নিশির কাছে কল দিয়ে জেনে নিলাম কোন হাসপাতালে। রিকশায় থাকা অবস্থায় বাবা মা দুইজনকেই কয়েবার কল করেছি কিন্তু উনারা এবারও রিসিভ করেন নি।
আমার চলার রাস্তাটা কেমন জানি দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে। কোনোভাবেই রাস্তা শেষ হচ্ছেনা। অনেক অপেক্ষার পর এসে পৌঁছালাম হাসপাতালে। রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে ভিতরে গিয়ে বাবা মাকে পাগলের মত এদিক খুঁজতে শুরু করলাম। মনের ভিতরটা বার বার কেপে উঠছিলো বার বার মনে হচ্ছিল আমি আসতে দেরি করে ফেললামনা তো!!
এদিক ওদিক অনেক খুঁজাখুঁজি করার পর দেখলাম এক গাইনি ডাক্তারের চেম্বারে উনারা বসে আছেন। কথা বলছেন ডাক্তারের সাথে। ডাক্তার বাবা মা দুজনকেই বুঝানোর চেষ্টা করছেন। উনি বলছেন,
– এই বয়সে এবশন সম্ভব না। তারপরও আপনার ডায়বেটিস প্রেসার আর সব থেকে বড়ো কথা বাচ্চার বয়স প্রায় ৫ মাসের কাছাকাছি। এখন আপনি কিছু করতে গেলে আপনার লাইফ রিস্ক।
– ম্যাডাম আমার যা কিছু হয়ে যাক আপনি কিছু একটা করুন আমি আমার এই লজ্জাজনক অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি চাই।
– এসব আপনি কি বলছেন? আপনার স্বামী আছে আপনি কনসিভ করতেই পারেন এতে লজ্জা বা অভিশপ্তের কথা বলছেন কেনো? হ্যাঁ এটা ঠিক যে এই বয়সে যেটা অসম্ভব যা মেডিকেল সাইন্সের দিক থেকে ইম্পসিবল কোনোভাবেই এটা সম্ভব না কিন্তু আল্লাহ পাক চেয়েছে তাই সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এটা তো আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে মেনে নিতে হবে!!
– না আমি বাচ্চা চাইনা আপনি কিছু একটা করুন।
মা বার বার ডাক্তারকে রিকুয়েস্ট করছে কিন্তু বাবা কোনো কথা বলছেনা চুপ করে আছে। হয়তো উনি প্রিয়জন হারানোর ব্যাথাটা অনুভব করতে পারছেন। আমি এতক্ষণ দরজায় দাঁড়িয়ে উনাদের কথাগুলো শুনছিলাম।
– আসতে পারি ম্যাম?
– জি আসুন। কে আপনি?
– আমি উনাদের ছেলের বৌ।
বাবা মা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ বাবা বলে উঠলো,
– বৌ মা তুমি এখানে?
– হ্যাঁ বাবা আমি। আপনারা আমাকে না জানিয়ে চলে আসলেন। সবটা জানার পর আমার মনের অবস্থা কি হবে একবারও ভেবে দেখলেন না?
– তোমাকে বললে তুমি কখনোই আসতে দিতেনা মা। তাই না বলেই চলে এসেছি।
– মা, চলুন বাসায় চলুন।
ডাক্তার ম্যাডাম বললো,
– আপনি কি আপনার শাশুড়ীর বিষয়টি সম্পুর্ন জানেন?
– জি আমি সবটাই জানি। আমিও চাইনা মা এমন একটা কাজ করুক কিন্তু আমার হাসবেন্ড বিষটা মানতে পারছেনা তাই উনাদের এই সিদ্ধান্ত।
– আপনাদের তো রাজ কপাল আপনারা এমন একটা ছেলের বৌ পেয়েছেন। আপনারা বাসায় চলে যান গিয়ে আবার ভালো করে ভেবে আসুন। আর ম্যাম আপনার নামটা?
– আমার নাম সোহেলী।
– সোহেলী, আপনি আপনার হাসবেন্ড কে বুঝান। আশা করি এখন না বুঝলেও পরে বুঝতে পারবে।
– ধন্যবাদ ম্যাম। আমি আমার দিক থেকে সর্বচ্চ চেষ্টা করবো। আমি এখন আসি।
বাবা মা কিছুতেই আসতে রাজি না। এক প্রকার জোর করেই চেম্বার থেকে বাইরে নিয়ে আসলাম। মা বাবা দুজনেই কান্নাকাটি করছে। আমি বললাম,
– মা, আমি আপনাদের বলছি!! দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে আল্লাহ পাকের উপর ভরসা রাখুন উনিই সব ঠিক করে দিবেন।
– কিন্তু মা আমি তো রবিনের সামনে যেতে পারছিনা। রবিন আমাদের সাথে কথা বলেনা। আমাদের একটা মাত্র ছেলে আর ও আমাদের অনেক সাধনার ফসল। ওর এমন ব্যাবহার আমি এবং তোমার মা কেওই মানতে পারছিনা।
– বাবা, একটু ধৈর্য ধরুন সব ঠিক হয়ে যাবে। চলুন বাসায় চলুন আর একটা কথাও না।
বলেই হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে দুটো রিকশা নিয়ে চলে আসলাম। বাসায় ঢুকে মা বাবা উনাদের রুমে চলে গেলো। আমি এসে কাপড় পাল্টে রান্না করতে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ পর কলিংবেল বাজার শব্দ পেয়ে দরজা খুলে দেখি রবিন।
রবিন ভিতরে এসে কোনো কথা না বলেই সোজা রুমে চলে গেলো। আমি চলে এলাম রান্না রুমে। রান্না বান্না শেষ করে মায়ের রুমের সামনে গিয়ে ডাক দিলাম,
– মা! আপনারা গোসল করে নেন আমার রান্না শেষ। আমি গোসল সেরে এসে খেতে দিচ্ছি।
– আচ্ছা মা।
রুমে গিয়ে দেখি রবিন ফ্রেস হয়ে শুয়ে আছে। আমি চলে গেলাম গোসল করতে। গোসল করে এসে রবিন কে বললাম,
– তুমি কি এখন খাবে? নাকি পরে খাবে?
– পরে খাচ্ছি।
মায়ের রিপোর্ট গুলো দেখার পর থেকে রবিন বাবা মায়ের সাথে খেতে বসেনা তাই আমিও আর জোর করলামনা।
ডাইনিং এ এসে আবার বাবা মাকে ডাক দিলাম। উনারা এসে খেতে বসলেন। উনাদের খাওয়া দাওয়া শেষ হলে রুমে চলে গেলো। তারপর রবিনকে ডাকলাম ও আসলে দুজন খেয়ে সব কিছু গুছিয়ে রুমে গেলাম। রবিন শুয়ে আছে আমিও পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর বললাম,
– আজকে আর অফিস যাবেনা?
– না যাবোনা শরীরটা ভালো লাগছেনা।
– আচ্ছা রবিন একটা কথা বলি?
– হ্যাঁ বলো।
– তুমি তো চাইছোনা মায়ের অনাগত সন্তান পৃথিবীতে আসুক। এখন তোমার কথা চিন্তা করে মা এমন কিছু করে বসলো যেটা মায়ের মৃত্যুর কারন হয়ে দাঁড়ালো। সেদিন কি সত্যিই পারবে নিজেকে ক্ষমা করতে? তুমি খুব ভালোই জানো এবং আমিও তোমাকে কয়েকবার বুঝানোর চেষ্টা করেছি মায়ের এই বয়সে এবশন করাটা লাইফ রিস্ক। তবুও ধরো তোমার কথা ভেবে উনি এই রিস্ক নিয়েই নিলো!! ধরো মায়ের কিছু একটা হয়ে গেলো কি করবে সেদিন?
– আমাকে রেস্ট নিতে দাও চুপ থাকো।
– রবিন, মা বাবা আমাকে না জানিয়ে আজকে এবশন করাতে গেছিলো। আর ডাক্তার ওই একই কথা বলেছে। আমি সময় মত সংবাদ পেয়ে গিয়ে উনাদের বুঝিয়ে নিয়ে এসেছি। পরবর্তীতে আমি নাও জানতে পারি। আমার অগোচরে যদি সবটা হয়ে যায়?
রবিন কোনো কথা না বলে একবার আমার দিকে তাকিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে গেলো।
আজ আর রবিন অফিসে যায়নি। রাতে খাওয়া দাওয়া করে সবাই শুয়ে পড়েছি। মোবাইল হাতে নিয়ে কখন যেনো ঘুমিয়ে গেছি। কারো কান্নার আওয়াজে ঘুম ভাঙলো। পাশ ফিরে দেখি রবিন কাঁধছে। রবিনের শরীরে হাত দিয়ে বললাম,
– কি হয়েছে রবিন তুমি এখনো ঘুমাওনি? কাঁদছো কেনো? কি হয়েছে?
– ঘুমিয়েছিলাম। কিন্তু খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গেছে।
– কি স্বপ্ন দেখছো? আর কাঁধছো কেনো?
– সোহেলী আমি মস্ত বড়ো ভুল করে ফেলেছি মাকে কষ্ট দিয়ে। জানি মায়ের কাছে কখনো ক্ষমা পাবোনা।
– কোনো মা তার সন্তানকে ক্ষমা না করে পারেনা। তুমি একবার মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়াও দেখো মা সব ভুলে তোমাকে বুকে টেনে নিবে।
– চলো মায়ের কাছে যাবো। আমি মায়ের পা ধরে ক্ষমা চাইবো।
আল্লাহ পাকের দরবারে হাজার হাজার শুকরিয়া রবিন তার ভুল বুঝতে পেরেছে। রবিনকে সাথে নিয়ে মায়ের রুমে গেলাম। বেশ কয়েকবার ধাক্কা দেয়ার পর বাবা এসে দরজা খুলে দিলেন। দরজা খুলা মাত্রই রবিন মায়ের পায়ের উপর গিয়ে পড়ে কাঁদতে শুরু করলো।
– মা তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও আমার ভুল হয়ে গেছে। আমার এইটুকু বুঝা উচিৎ ছিলো আমি তোমাকে না বুঝলে কে বুঝবে তোমাকে।
মা উঠে ছেলেকে টেনে তুলে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে শুরু করলেন। বাবা ও আমি পাশে দাঁড়াতেই রবিন বাবাকে বললো,
– বাবা আমার ভুল হয়ে গেছে আমাকে ক্ষমা করে দাও।
– এই পাগল ছেলে আজ তোর জায়গায় আমি থাকলেও হয়তো এমনটাই করতাম।
রবিন বাবা মা দুজনের কাছেই ক্ষমা চেয়ে নিলো। আমি চোখের পানি দু হাত দিয়ে মুছছিলাম আর দাঁড়িয়ে সবটা দেখছিলাম। আমাকে দুরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বাবা এসে হাত ধরে নিয়ে মায়ের কাছে বসালেন আর বললেন,
– সোহেলী, আজ যা কিছু সম্ভব হলো সবটা তোমার জন্য।
– না বাবা এমন কিছুই না। যা হবার ছিলো সেটা হতোই শুধু সময়ের অপেক্ষা।
মা বাবার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম। ফজরের সময় উঠে নামাজ পড়ে নাস্তা বানাতে গেলাম। নাস্তা বানানো শেষ করে সবাইকে ডাক দিলাম। আজ সবাই এক সাথে নাস্তা খেতে বসেছে। অনেকদিন পর আজ যেনো বাড়িটাতে প্রান ফিরে পেয়েছে। সব কিছু ঠিক যেনো আগের মতো। এবার শুধু নতুন অতিথি আসার অপেক্ষা।
যত দিন যেতে থাকে মায়ের শরীরটা খারাপ হতে থাকে। এখন রবিন মায়ের অনেক যত্ন নেয় আমিও যতটুকু সম্ভব করি। নিয়মিত ডাক্তারের কাছে নিয়ে চেক-আপ করিয়ে আনা হয়। আমি আর রবিন দুজনের মিলে আমাদের নতুন অতিথির নামও ঠিক করে ফেললাম।
হঠাৎ করেই আজ সকাল থেকে মায়ের শরীরটা খুব খারাপ হয়ে গেলো সম্ভবত পেইন হচ্ছে। মাকে নিয়ে একটা ক্লিনিকে ভর্তি করানো হলো। ডাক্তার বললো রুগীর অবস্থা ভালোনা অতি দ্রুত অপারেশন করাতে হবে। নরমাল ডেলিভারি সম্ভব না। বাবা আর রবিন দুজনেই অনুমতি দিয়ে দিলেন।
মাকে নিয়ে যাওয়া হলো ওটিতে। রবিন বাইরে বসে খুব কান্না কাটি করছে। আমি রবিনকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছি আর আল্লাহকে ডাকছি।
প্রায় ৩০ মিনিট পর ওটি থেকে ডাক্তার বের হলে রবিন বাবা দুজনেই দৌড়ে গেলেন আমিও গেলাম ওদের সাথে। ডাক্তার এক গাল হাসি নিয়ে বললো,
– মেয়ে হয়েছে, মিষ্টি আনেন। আর কিছুক্ষণ পর মা এবং বাচ্চাকে বেডে দেয়া হবে।
কথা গুলো বলেই ডাক্তার চলে গেলো। রবিন বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– বাবা আমার বোন এসেছে। যখন ছোটো ছিলাম কত করে চাইতাম আমার একটা বোন আসুক। তোমাকে কতবার বলেছি বলো, হাসপাতাল থেকে একটা বোন কিনে এনে দাও আর তুমি আমাকে শান্তনা দিতে ভালো বোন পাইনি যেদিন ভালো বোন পাবো সেদিন এনে দেবো। আজ আমার সেই আশা পুরন হয়েছে বাবা।
বাবা শুধু একটু হাসি দিয়ে বললো,
– সবটাই মনে আছে বাবা।
কিছুক্ষণ পর মা আর বাবুকে বেডে দেয়া হলো। আমি গিয়ে পুচকেটাকে কোলে তুলে নিলাম। রবিন আমার কাছ থেকে নেয়ার জন্য হাত বাড়াতেই বললাম,
– একদম ছোঁবেনা তুমি!! কম কষ্ট দাওনি তুমি তাকে। সে যাবেনা তোমার কোলে। তুমি ওর পঁচা ভাইয়া।
একপ্রকার জোর করেই রবওন নিয়ে নিলো পুচকেটাকে। আমি মায়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললাম,
– মা আমি আর রবিন পুচকেটার একটা নাম ঠিক করেছি।
মা হাসতে হাসতে বললো,
– কি নাম? আর তোমাদের যে নাম ভালো লাগে রাখো।
– মা ওর নাম হচ্ছে প্রাপ্তি। আপনার এই মেয়েই আপনার #শেষ_বয়সের_প্রাপ্তি।
– না মা, আমার মেয়ে না। তুমিই আমার #শেষ_বয়সের_প্রাপ্তি। তোমাকে পেয়ে আমি আমার জীবনের সব সুখ পেয়েছি। মা এগুলো বইলেননা পুচকেটা শুনলে আবার ক্ষেপে যাবে।
বাবা মা দুজনেই হেসে উঠল। বাবা এসে জড়িয়ে ধরে বললো তোমার মা একদম ঠিক বলেছে তুমিই আমাদের শেষ বয়সের বড়ো প্রাপ্তি।
সমাপ্ত
[অনেকেই কমেন্ট করেছেন মায়ের বয়স কত ছিলো? আর এই বয়সে কখনোই এটা সম্ভব না। আমিও গল্পে কয়েবার লিখেছি এই বয়সে এটা সম্ভব না কিন্তু আল্লাহ পাক চাইলে সব পারে। মায়ের বয়স ছিলো প্রায় ৫০ বছর। ]
[আমি একদিন এক হাসপাতালে গিয়েছিলাম কোনো এক কাজে। তখন খেয়াল করলাম এক মুরুব্বি আন্টি এক কোনায় একটা চেয়ারে বসে কাঁদছেন। উনার দুচোখ বেয়ে অনবরত পানি পড়ছে। আমি কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম আন্টি আপনার কি হয়েছে কাঁদছেন কেনো। উনি বললো মা আমি এই বয়সে কনসিভ করেছি আমার বিয়ে খুব অল্প বয়সে হয়েছিলো। মাত্র ১২ বছর বয়সে বিয়ে হয় আর আমার বিয়ের ১২/১৩ বছর পর আমার এক ছেলে হয় তারপর আরেকটা ছেলে হয় আমার দুই ছেলের একটা ছেলে মাত্র বিয়ে করেছে। ছোটো ছেলে অনার্স ফাইনাল ইয়ারে। কিন্তু এই বয়সে এসে এটা কি হয়ে গেলো আমার সাথে। ছেলের বৌ আর ছেলেদের সামনে মুখ দেখাবো কি করে। ডাক্তার বলছে এখন আর কোনো কিছু করা সম্ভব না। আমি উনাকে কিছুক্ষণ বুঝানোর পর চলে এলাম। তারপর কি হয়ছিলো জানিনা উনার ছেলের বৌ এবং ছেলে সবটা মেনে নিয়েছিলো কিনা সেটাও জানিনা। সেই ঘটনার উপর ভিত্তি করেই আমার এই গল্প লেখা। জানিনা আপনাদের সামনে কেমন ভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছি। তবে আমি আমার মত করে চেষ্টা করেছি। যদি গল্পটা ভালো লেগে থাকে তাহলে নিশ্চয় কমেন্ট বক্সে জানাবেন। ধন্যবাদ সকল পাঠক পাঠিকাকে।]
কি ব্যাপার নিশি হঠাৎ কল দিলো কেনো!!
মনের মধ্যে একটা অজানা ভয় কাজ করছিলো। নিশির বাড়ি আমার বাবার বাড়ির কাছে তাই কেনো জানি মনে হচ্ছিল বাবা মায়ের কোনো বিপদ হলোনাতো?! আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে কল রিসিভ করলাম,
– হ্যালো নিশি?
– হ্যাঁ আমি, কিরে সোহেলী কেমন আছিস অনেকদিন তোর কোনো খোঁজ খবর পাইনা।
– হ্যাঁ রে অনেক দিন কথা হয়নি তোর সাথে। তারপর আছিস কেমন?
– এইতো ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। তুই কেমন আছিস?
– আমিও ভালো আছি।
– তোর খবর কি? দিনকাল কেমন যাচ্ছে?
– হ্যা আমার সব কিছু ঠিকঠাক চলছে। কিছুক্ষণ আগে তোর শশুর শাশুড়ির সাথে দেখা হলো উনাদের সাথে কথা বলে বেশ ভালো লাগলো। তোর শাশুড়ী মনে হয় একটু অসুস্থ। কি হয়েছে তোর শাশুড়ির?
– কি বলছিস এসব? আমার শাশুড়ীর সাথে তোর কোথায় দেখা হলো।
– এই তো হাসপাতালে। আমার এক আত্মীয় কিছুটা অসুস্থ তাই এই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আছে তাই দেখতে এসেছিলাম। হাসপাতাল থেকে বের হতেই উনাদের সাথে দেখা। ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করলাম তখন বললো উনি অসুস্থ তাই ডাক্তার দেখাতে এসেছে।
– নিশি আমি তোকে একটু পরে কল করছি।
– আচ্ছা ঠিক আছে।
আমার মনে হলো পুরো আকাশটা আমার মাথায় ভেঙে পড়লো। নিশি কি বললো এগুলো!! মা বা হাসপাতালে!! কিন্তু বের হলো কখন? আমাকে না বলেই এভাবে চলে গেলো হাসপাতালে!! নাহ আমি আর ভাবতে পারছিনা।
দৌড় দিয়ে মায়ের রুমে গেলাম গিয়ে মা বা কেও নাই রুমে। দরজার কাছে এসে দেখি দরজা কল করা। আমাদের সবার কাছে একটা করে চাবি থাকে তাই মা বাবার বের হতে আমাকে ডাকতে হয়নি। আর ডাকেনি তার কারন আমি কখনোই তাদের যেতে দিবোনা। মোবাইল থেকে কয়েকবার কল দিলাম রিসিভ হলোনা।
আমি আমর রুমে এসে বিছানায় ধপ করে বসে পড়লাম। আমি কি করবো এখন!!
মায়ের এমন ঝুকি কোনোভাবেই নিতে দেয় যাবেনা। আমি বেঁচে থাকতে সেটা হতে দিতে পারিনা।
আমি ফ্রেস হয়ে তড়িঘড়ি করে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। রাস্তায় এসে একটা রিকশা নিয়ে রিকশায় উঠেই নিশির কাছে কল দিয়ে জেনে নিলাম কোন হাসপাতালে। রিকশায় থাকা অবস্থায় বাবা মা দুইজনকেই কয়েবার কল করেছি কিন্তু উনারা এবারও রিসিভ করেন নি।
আমার চলার রাস্তাটা কেমন জানি দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে। কোনোভাবেই রাস্তা শেষ হচ্ছেনা। অনেক অপেক্ষার পর এসে পৌঁছালাম হাসপাতালে। রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে ভিতরে গিয়ে বাবা মাকে পাগলের মত এদিক খুঁজতে শুরু করলাম। মনের ভিতরটা বার বার কেপে উঠছিলো বার বার মনে হচ্ছিল আমি আসতে দেরি করে ফেললামনা তো!!
এদিক ওদিক অনেক খুঁজাখুঁজি করার পর দেখলাম এক গাইনি ডাক্তারের চেম্বারে উনারা বসে আছেন। কথা বলছেন ডাক্তারের সাথে। ডাক্তার বাবা মা দুজনকেই বুঝানোর চেষ্টা করছেন। উনি বলছেন,
– এই বয়সে এবশন সম্ভব না। তারপরও আপনার ডায়বেটিস প্রেসার আর সব থেকে বড়ো কথা বাচ্চার বয়স প্রায় ৫ মাসের কাছাকাছি। এখন আপনি কিছু করতে গেলে আপনার লাইফ রিস্ক।
– ম্যাডাম আমার যা কিছু হয়ে যাক আপনি কিছু একটা করুন আমি আমার এই লজ্জাজনক অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি চাই।
– এসব আপনি কি বলছেন? আপনার স্বামী আছে আপনি কনসিভ করতেই পারেন এতে লজ্জা বা অভিশপ্তের কথা বলছেন কেনো? হ্যাঁ এটা ঠিক যে এই বয়সে যেটা অসম্ভব যা মেডিকেল সাইন্সের দিক থেকে ইম্পসিবল কোনোভাবেই এটা সম্ভব না কিন্তু আল্লাহ পাক চেয়েছে তাই সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এটা তো আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে মেনে নিতে হবে!!
– না আমি বাচ্চা চাইনা আপনি কিছু একটা করুন।
মা বার বার ডাক্তারকে রিকুয়েস্ট করছে কিন্তু বাবা কোনো কথা বলছেনা চুপ করে আছে। হয়তো উনি প্রিয়জন হারানোর ব্যাথাটা অনুভব করতে পারছেন। আমি এতক্ষণ দরজায় দাঁড়িয়ে উনাদের কথাগুলো শুনছিলাম।
– আসতে পারি ম্যাম?
– জি আসুন। কে আপনি?
– আমি উনাদের ছেলের বৌ।
বাবা মা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ বাবা বলে উঠলো,
– বৌ মা তুমি এখানে?
– হ্যাঁ বাবা আমি। আপনারা আমাকে না জানিয়ে চলে আসলেন। সবটা জানার পর আমার মনের অবস্থা কি হবে একবারও ভেবে দেখলেন না?
– তোমাকে বললে তুমি কখনোই আসতে দিতেনা মা। তাই না বলেই চলে এসেছি।
– মা, চলুন বাসায় চলুন।
ডাক্তার ম্যাডাম বললো,
– আপনি কি আপনার শাশুড়ীর বিষয়টি সম্পুর্ন জানেন?
– জি আমি সবটাই জানি। আমিও চাইনা মা এমন একটা কাজ করুক কিন্তু আমার হাসবেন্ড বিষটা মানতে পারছেনা তাই উনাদের এই সিদ্ধান্ত।
– আপনাদের তো রাজ কপাল আপনারা এমন একটা ছেলের বৌ পেয়েছেন। আপনারা বাসায় চলে যান গিয়ে আবার ভালো করে ভেবে আসুন। আর ম্যাম আপনার নামটা?
– আমার নাম সোহেলী।
– সোহেলী, আপনি আপনার হাসবেন্ড কে বুঝান। আশা করি এখন না বুঝলেও পরে বুঝতে পারবে।
– ধন্যবাদ ম্যাম। আমি আমার দিক থেকে সর্বচ্চ চেষ্টা করবো। আমি এখন আসি।
বাবা মা কিছুতেই আসতে রাজি না। এক প্রকার জোর করেই চেম্বার থেকে বাইরে নিয়ে আসলাম। মা বাবা দুজনেই কান্নাকাটি করছে। আমি বললাম,
– মা, আমি আপনাদের বলছি!! দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে আল্লাহ পাকের উপর ভরসা রাখুন উনিই সব ঠিক করে দিবেন।
– কিন্তু মা আমি তো রবিনের সামনে যেতে পারছিনা। রবিন আমাদের সাথে কথা বলেনা। আমাদের একটা মাত্র ছেলে আর ও আমাদের অনেক সাধনার ফসল। ওর এমন ব্যাবহার আমি এবং তোমার মা কেওই মানতে পারছিনা।
– বাবা, একটু ধৈর্য ধরুন সব ঠিক হয়ে যাবে। চলুন বাসায় চলুন আর একটা কথাও না।
বলেই হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে দুটো রিকশা নিয়ে চলে আসলাম। বাসায় ঢুকে মা বাবা উনাদের রুমে চলে গেলো। আমি এসে কাপড় পাল্টে রান্না করতে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ পর কলিংবেল বাজার শব্দ পেয়ে দরজা খুলে দেখি রবিন।
রবিন ভিতরে এসে কোনো কথা না বলেই সোজা রুমে চলে গেলো। আমি চলে এলাম রান্না রুমে। রান্না বান্না শেষ করে মায়ের রুমের সামনে গিয়ে ডাক দিলাম,
– মা! আপনারা গোসল করে নেন আমার রান্না শেষ। আমি গোসল সেরে এসে খেতে দিচ্ছি।
– আচ্ছা মা।
রুমে গিয়ে দেখি রবিন ফ্রেস হয়ে শুয়ে আছে। আমি চলে গেলাম গোসল করতে। গোসল করে এসে রবিন কে বললাম,
– তুমি কি এখন খাবে? নাকি পরে খাবে?
– পরে খাচ্ছি।
মায়ের রিপোর্ট গুলো দেখার পর থেকে রবিন বাবা মায়ের সাথে খেতে বসেনা তাই আমিও আর জোর করলামনা।
ডাইনিং এ এসে আবার বাবা মাকে ডাক দিলাম। উনারা এসে খেতে বসলেন। উনাদের খাওয়া দাওয়া শেষ হলে রুমে চলে গেলো। তারপর রবিনকে ডাকলাম ও আসলে দুজন খেয়ে সব কিছু গুছিয়ে রুমে গেলাম। রবিন শুয়ে আছে আমিও পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর বললাম,
– আজকে আর অফিস যাবেনা?
– না যাবোনা শরীরটা ভালো লাগছেনা।
– আচ্ছা রবিন একটা কথা বলি?
– হ্যাঁ বলো।
– তুমি তো চাইছোনা মায়ের অনাগত সন্তান পৃথিবীতে আসুক। এখন তোমার কথা চিন্তা করে মা এমন কিছু করে বসলো যেটা মায়ের মৃত্যুর কারন হয়ে দাঁড়ালো। সেদিন কি সত্যিই পারবে নিজেকে ক্ষমা করতে? তুমি খুব ভালোই জানো এবং আমিও তোমাকে কয়েকবার বুঝানোর চেষ্টা করেছি মায়ের এই বয়সে এবশন করাটা লাইফ রিস্ক। তবুও ধরো তোমার কথা ভেবে উনি এই রিস্ক নিয়েই নিলো!! ধরো মায়ের কিছু একটা হয়ে গেলো কি করবে সেদিন?
– আমাকে রেস্ট নিতে দাও চুপ থাকো।
– রবিন, মা বাবা আমাকে না জানিয়ে আজকে এবশন করাতে গেছিলো। আর ডাক্তার ওই একই কথা বলেছে। আমি সময় মত সংবাদ পেয়ে গিয়ে উনাদের বুঝিয়ে নিয়ে এসেছি। পরবর্তীতে আমি নাও জানতে পারি। আমার অগোচরে যদি সবটা হয়ে যায়?
রবিন কোনো কথা না বলে একবার আমার দিকে তাকিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে গেলো।
আজ আর রবিন অফিসে যায়নি। রাতে খাওয়া দাওয়া করে সবাই শুয়ে পড়েছি। মোবাইল হাতে নিয়ে কখন যেনো ঘুমিয়ে গেছি। কারো কান্নার আওয়াজে ঘুম ভাঙলো। পাশ ফিরে দেখি রবিন কাঁধছে। রবিনের শরীরে হাত দিয়ে বললাম,
– কি হয়েছে রবিন তুমি এখনো ঘুমাওনি? কাঁদছো কেনো? কি হয়েছে?
– ঘুমিয়েছিলাম। কিন্তু খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গেছে।
– কি স্বপ্ন দেখছো? আর কাঁধছো কেনো?
– সোহেলী আমি মস্ত বড়ো ভুল করে ফেলেছি মাকে কষ্ট দিয়ে। জানি মায়ের কাছে কখনো ক্ষমা পাবোনা।
– কোনো মা তার সন্তানকে ক্ষমা না করে পারেনা। তুমি একবার মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়াও দেখো মা সব ভুলে তোমাকে বুকে টেনে নিবে।
– চলো মায়ের কাছে যাবো। আমি মায়ের পা ধরে ক্ষমা চাইবো।
আল্লাহ পাকের দরবারে হাজার হাজার শুকরিয়া রবিন তার ভুল বুঝতে পেরেছে। রবিনকে সাথে নিয়ে মায়ের রুমে গেলাম। বেশ কয়েকবার ধাক্কা দেয়ার পর বাবা এসে দরজা খুলে দিলেন। দরজা খুলা মাত্রই রবিন মায়ের পায়ের উপর গিয়ে পড়ে কাঁদতে শুরু করলো।
– মা তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও আমার ভুল হয়ে গেছে। আমার এইটুকু বুঝা উচিৎ ছিলো আমি তোমাকে না বুঝলে কে বুঝবে তোমাকে।
মা উঠে ছেলেকে টেনে তুলে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে শুরু করলেন। বাবা ও আমি পাশে দাঁড়াতেই রবিন বাবাকে বললো,
– বাবা আমার ভুল হয়ে গেছে আমাকে ক্ষমা করে দাও।
– এই পাগল ছেলে আজ তোর জায়গায় আমি থাকলেও হয়তো এমনটাই করতাম।
রবিন বাবা মা দুজনের কাছেই ক্ষমা চেয়ে নিলো। আমি চোখের পানি দু হাত দিয়ে মুছছিলাম আর দাঁড়িয়ে সবটা দেখছিলাম। আমাকে দুরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বাবা এসে হাত ধরে নিয়ে মায়ের কাছে বসালেন আর বললেন,
– সোহেলী, আজ যা কিছু সম্ভব হলো সবটা তোমার জন্য।
– না বাবা এমন কিছুই না। যা হবার ছিলো সেটা হতোই শুধু সময়ের অপেক্ষা।
মা বাবার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম। ফজরের সময় উঠে নামাজ পড়ে নাস্তা বানাতে গেলাম। নাস্তা বানানো শেষ করে সবাইকে ডাক দিলাম। আজ সবাই এক সাথে নাস্তা খেতে বসেছে। অনেকদিন পর আজ যেনো বাড়িটাতে প্রান ফিরে পেয়েছে। সব কিছু ঠিক যেনো আগের মতো। এবার শুধু নতুন অতিথি আসার অপেক্ষা।
যত দিন যেতে থাকে মায়ের শরীরটা খারাপ হতে থাকে। এখন রবিন মায়ের অনেক যত্ন নেয় আমিও যতটুকু সম্ভব করি। নিয়মিত ডাক্তারের কাছে নিয়ে চেক-আপ করিয়ে আনা হয়। আমি আর রবিন দুজনের মিলে আমাদের নতুন অতিথির নামও ঠিক করে ফেললাম।
হঠাৎ করেই আজ সকাল থেকে মায়ের শরীরটা খুব খারাপ হয়ে গেলো সম্ভবত পেইন হচ্ছে। মাকে নিয়ে একটা ক্লিনিকে ভর্তি করানো হলো। ডাক্তার বললো রুগীর অবস্থা ভালোনা অতি দ্রুত অপারেশন করাতে হবে। নরমাল ডেলিভারি সম্ভব না। বাবা আর রবিন দুজনেই অনুমতি দিয়ে দিলেন।
মাকে নিয়ে যাওয়া হলো ওটিতে। রবিন বাইরে বসে খুব কান্না কাটি করছে। আমি রবিনকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছি আর আল্লাহকে ডাকছি।
প্রায় ৩০ মিনিট পর ওটি থেকে ডাক্তার বের হলে রবিন বাবা দুজনেই দৌড়ে গেলেন আমিও গেলাম ওদের সাথে। ডাক্তার এক গাল হাসি নিয়ে বললো,
– মেয়ে হয়েছে, মিষ্টি আনেন। আর কিছুক্ষণ পর মা এবং বাচ্চাকে বেডে দেয়া হবে।
কথা গুলো বলেই ডাক্তার চলে গেলো। রবিন বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– বাবা আমার বোন এসেছে। যখন ছোটো ছিলাম কত করে চাইতাম আমার একটা বোন আসুক। তোমাকে কতবার বলেছি বলো, হাসপাতাল থেকে একটা বোন কিনে এনে দাও আর তুমি আমাকে শান্তনা দিতে ভালো বোন পাইনি যেদিন ভালো বোন পাবো সেদিন এনে দেবো। আজ আমার সেই আশা পুরন হয়েছে বাবা।
বাবা শুধু একটু হাসি দিয়ে বললো,
– সবটাই মনে আছে বাবা।
কিছুক্ষণ পর মা আর বাবুকে বেডে দেয়া হলো। আমি গিয়ে পুচকেটাকে কোলে তুলে নিলাম। রবিন আমার কাছ থেকে নেয়ার জন্য হাত বাড়াতেই বললাম,
– একদম ছোঁবেনা তুমি!! কম কষ্ট দাওনি তুমি তাকে। সে যাবেনা তোমার কোলে। তুমি ওর পঁচা ভাইয়া।
একপ্রকার জোর করেই রবওন নিয়ে নিলো পুচকেটাকে। আমি মায়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললাম,
– মা আমি আর রবিন পুচকেটার একটা নাম ঠিক করেছি।
মা হাসতে হাসতে বললো,
– কি নাম? আর তোমাদের যে নাম ভালো লাগে রাখো।
– মা ওর নাম হচ্ছে প্রাপ্তি। আপনার এই মেয়েই আপনার #শেষ_বয়সের_প্রাপ্তি।
– না মা, আমার মেয়ে না। তুমিই আমার #শেষ_বয়সের_প্রাপ্তি। তোমাকে পেয়ে আমি আমার জীবনের সব সুখ পেয়েছি। মা এগুলো বইলেননা পুচকেটা শুনলে আবার ক্ষেপে যাবে।
বাবা মা দুজনেই হেসে উঠল। বাবা এসে জড়িয়ে ধরে বললো তোমার মা একদম ঠিক বলেছে তুমিই আমাদের শেষ বয়সের বড়ো প্রাপ্তি।
সমাপ্ত
[অনেকেই কমেন্ট করেছেন মায়ের বয়স কত ছিলো? আর এই বয়সে কখনোই এটা সম্ভব না। আমিও গল্পে কয়েবার লিখেছি এই বয়সে এটা সম্ভব না কিন্তু আল্লাহ পাক চাইলে সব পারে। মায়ের বয়স ছিলো প্রায় ৫০ বছর। ]
[আমি একদিন এক হাসপাতালে গিয়েছিলাম কোনো এক কাজে। তখন খেয়াল করলাম এক মুরুব্বি আন্টি এক কোনায় একটা চেয়ারে বসে কাঁদছেন। উনার দুচোখ বেয়ে অনবরত পানি পড়ছে। আমি কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম আন্টি আপনার কি হয়েছে কাঁদছেন কেনো। উনি বললো মা আমি এই বয়সে কনসিভ করেছি আমার বিয়ে খুব অল্প বয়সে হয়েছিলো। মাত্র ১২ বছর বয়সে বিয়ে হয় আর আমার বিয়ের ১২/১৩ বছর পর আমার এক ছেলে হয় তারপর আরেকটা ছেলে হয় আমার দুই ছেলের একটা ছেলে মাত্র বিয়ে করেছে। ছোটো ছেলে অনার্স ফাইনাল ইয়ারে। কিন্তু এই বয়সে এসে এটা কি হয়ে গেলো আমার সাথে। ছেলের বৌ আর ছেলেদের সামনে মুখ দেখাবো কি করে। ডাক্তার বলছে এখন আর কোনো কিছু করা সম্ভব না। আমি উনাকে কিছুক্ষণ বুঝানোর পর চলে এলাম। তারপর কি হয়ছিলো জানিনা উনার ছেলের বৌ এবং ছেলে সবটা মেনে নিয়েছিলো কিনা সেটাও জানিনা। সেই ঘটনার উপর ভিত্তি করেই আমার এই গল্প লেখা। জানিনা আপনাদের সামনে কেমন ভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছি। তবে আমি আমার মত করে চেষ্টা করেছি। যদি গল্পটা ভালো লেগে থাকে তাহলে নিশ্চয় কমেন্ট বক্সে জানাবেন। ধন্যবাদ সকল পাঠক পাঠিকাকে।]