শ্যামসুন্দর_স্বপ্ন #পর্ব_১২_এবং_শেষ

0
928

শ্যামসুন্দর_স্বপ্ন
#পর্ব_১২_এবং_শেষ
নুশরাত_জাহান_মিষ্টি

রাজ হতভম্ব হয়ে গেলো। ভিতরে দেলোয়ার ফরাজি, সাহেদ ফরাজি এবং সুমন ফরাজি হাত পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে।

তাদের সামনে আগুনের উত্তাপে পানি গরম করা হচ্ছে। পানি গরমে টগবগিয়ে ফুটছে। তার অন্যপাশে দাঁড়িয়ে আছে শ্যামল। রাজ শ্যামলকে দেখে অবাক হলো না। কেননা এটা তারই বাড়ি।

আজ যখন রাজ শ্যামলের সাথে ছবি দেখেছিলো, ছবিটি এই বাড়িতে বসেই তোলা। সেই ছবির ঘরের সাথে প্রিয়র বন্দী থাকা ঘরটা মিলতেই রাজ এখানে চলে এলো।

রাজ শ্যামলকে উদ্দেশ্য করে বললো,“কেন করছিস এমন পাগলামি?”

শ্যামল স্লান হেসে বললো,“সেটা তোর না জানলেও চলবে। তুই বরং এই পানিটা ওদের গায়ে মার।”
“মানে? তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে?”
“না খারাপ হয়নি। তুই যদি এই কাজটা না করিস তবে হবে। আর আমার মাথা খারাপ হলে কি হবে জানিস?”
“কি হবে? প্রিয়র ক্ষতি করবি তুই?”
“শুধু প্রিয়র না সাথে তোর মায়ের…”
“শ্যামল। আমি তোকে বন্ধু মনে করেছি আর তুই?”
“চুপচাপ আমি যা বলছি তাই কর নয়তো তোর মায়ের দম বন্ধ হয়ে যাবে।”

কথাটি বলে শ্যামল তার ফোন থেকে একটি ভিডিও চালু করলে। যেখানে রাজের মায়ের হাত পা বাঁধা এবং একজন ছুরি গলায় ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

“বেশি ভাবাভাবি বাদ দিয়ে আমি যা বলছি তাই কর রাজ।”
রাজ করুনচোখে শ্যামলের দিকে তাকালো। শ্যামল নিজের মুখ ঘুরিয়ে নিলো। রাজ বুঝে গেলো তার হাত-পা বাঁধা। এখন তার করার মতো কিছুই নেই।

রাজ একটা মগে করে গরম পানি তুললো। দেলোয়ার ফরাজি, সাহেদ ফরাজি এবং সুমন ফরাজি কাকুতি মিনতি করছে।
“প্লীজ আমাদের সাথে এমন করো না। তুমি তো আমাদের জীবন বাঁচিয়েছিলে তবে সে জীবন কেড়ে নিতে চাইছো কেন?”

রাজ থেমে গেলে শ্যামল ধমক দিয়ে বলে,“তাড়াতাড়ি কর রাজ।”

রাজ এক মূহুর্ত দেড়ি না করে গরম পানি ওদের মুখে ছুড়ে মারলো।

তিনজনই যন্ত্রনায় চিৎকার করছিলো। শ্যামল রাজকে আরো মারতে বলে। রাজ পাগলের মতো মগে করে পানি ওদের শরীরে মারে।

ওরা খেঁচায় বন্দী পাখির মতো ছটফট করছে। রাজের মায়া হচ্ছে। কিন্তু কি করবে? তার তো কিছু করার নেই।

শ্যামল এবার বললো,“তোর বন্দুক বের কর রাজ এবং ওদের গুলি কর।”

রাজের সবে হুশ ফিরলো। সে নিজের বন্দুকটা বের করে শ্যামলের দিকে তাক করলো। শ্যামল অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।
“আমাকে মেরে তোর কোন লাভ হবে না রাজ। আমি মরে গেলে তোর মা এবং প্রিয়ও মারা যাবে।”
কথাটি বলে শ্যামল রাজকে আরো একটি ভিডিও দেখালো যেখানে তার মা বারবার তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছে।

রাজ আর কোনকিছু না ভেবে বন্দুকটা ফরাজিদের দিকে তাক করলো।
________
সুফিয়ানের ডাকে রাইমা অবাক হয়ে বললো,“তুমি কাকে ডাকছো ভাইয়া?”

সুফিয়ান কোনকিছু না ভেবে নুরের হাত ধরে অন্য ঘরে নিয়ে এলো।

সুফিয়ান স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,“তোমার খেলা শেষ প্রিয়। আমি তোমাকে চিনেছি, দেখো পরীর সাথে যাই হয়েছে খুব খারাপ হয়েছে৷ পরীর সাথে খারাপ হওয়ার বিনিময়ে তুমি আমার, আমার পরিবারের মান সম্মান সব নষ্ট করেছো। আমি সবকিছু মেনে নিলাম। কিন্তু আমার বাবা, কাকা, ভাইকে ছেড়ে দেও প্রিয়। তাদের শাস্তি আইন দেবে। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি আমি আমার পরিবারের বিরুদ্ধে আদালতে যাবো।”

নুর চেহারাটা করুন করে বললো,“আপনি এসব কি বলছেন?”
“আমার সাথে নাটক করো না প্রিয়। তোমার সাথে এতদিন ধরে ভালো ব্যবহার করেছি তারমানে এটা নয় আমি তোমার অপরাধ ভুলে গেছি। আমি শুধু তোমার আসল উদ্দেশ্য খুঁজে বের করতে চেয়েছিলাম, এজন্য ভালো ব্যবহার করেছি। স্বামী, স্ত্রী নামক পুতুল খেলা করেছি।”

নুর ভাবলেশ ভাবে বললো,“আপনার কেন মনে হলো আমিই প্রিয়?”

সুফিয়ান শান্তকন্ঠে বললো, “সেদিন রহিম চাচার বাড়িতে গেলে তিনি একটা ঘরে আমাকে ডুকতে বারবার বাঁধা দিচ্ছেলেন। যে ঘরটি থেকে আমি একটি মেয়ের কন্ঠ পাই। তিনি বাঁধা দেওয়া আমি বুঝেছিলাম কোন গন্ডগোল আছে। সেদিন রহিম চাচা আমার আটকে দেয়। আমি পরেরদিন রহিম চাচার বাড়ি আবার যাই, তখন কোন কথা ছাড়াই সোজা সেই রুমে ডুকে পড়ি। সেখানে একটি মেয়ে বসে ছিলো। তখন আমার মাথায় অনেক প্রশ্ন ছিলো।

রহিম চাচা গ্রামের সহজ সরল সাধারণ মানুষ। তাকে চাপ দিতেই সে সব বলে দেয়, তুমি তার বাড়িতে গিয়ে তাকে কিভাবে বাধ্য করেছো তোমার কাজ করতে। নিজেকে তার মেয়ে বানিয়ে আমায় ফাঁসানোটা তোমার একটা উদ্দেশ্য ছিলো। তখন থেকেই জানতাম তুমি এই খেলার খেলোয়াড়। কিন্তু আমি তোমার উদ্দেশ্য জানতাম না।

যখন তুমি আমাকে মেসেজ করে নতুন একটা গল্প বলো তখন বুঝে গিয়েছিলাম, তুমি চাও আমি তোমার উপর রেগে না থাকি। হয়তো আমার রাগ তোমার কাজে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে সেজন্যই তুমি চাওনি আমি রেগে থাকি।

পরপার দু’বার মিথ্যে গল্প বলার পরও আমি তোমাকে কিছু বলিনি। তোমার সাথে মানিয়ে নিয়েছি কারন আমি তোমার আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতাম না।
ইচ্ছে করে তোমাকে সাথে নিয়ে সেদিন হাসপাতালে যাই। আমি জানি সেদিন কথার ফাঁকে দিনপঞ্জিটা তুমি নিজে রেখেছিলে ওখানে। তবুও কি নিঁখুত অভিনয় করলে। এমন একটা ভাব ধরলে জানো কিছু জানোই না।

তারপর দিনপঞ্জি পরার মধ্যে যখন পরীর বোনের নামের স্থানে সাদা দাগ দেখলাম। তখনি বুঝে গেছি ওখানে অন্যকোন নাম ছিলো যেটা মুছে প্রিয় লেখা হয়েছিলো। তারপর হিসাবটা আপনা-আপনিই মিলে গেছে।

সুফিয়ান নুরের চোখে চোখ রেখে বললো,“আসা করছি এবার আপনি অন্যকোন মিথ্যে গল্প বলবেন না মিস প্রিয়।”

নুর মুচকি হেসে বলে,“যদি সত্যিটাও না বলি?”
“আমি আবারো বলছি পরীর সাথে যা হয়েছে খারাপ হয়েছে। তাই বলে তুমি আমার পরিবারকে শাস্তি দিতে পারো না। তার জন্য আইন আছে।”

নুর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,“বড্ড দেরি হয়ে গেছে সুফিয়ান বাবু। সময়টা যে পূর্বেই তার গন্তব্যে খুঁজে নিয়েছে।”

“মানে? আমার বাবার সাথে কি করেছো তুমি?”
“উঁহু বললে আপনার ভালো লাগবে না। তারচেয়ে বরং নিজের চোখেই দেখবেন চলুন।”

সুফিয়ান এবং নুর গাড়িতে বসে আছে। নুর লোকেশন বলে দিচ্ছে আর সুফিয়ান দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে।

নুর মুচকি হেসে বললো,“এত দ্রুত চালিয়ে যাচ্ছেন কেন? আমার সাথে সময় কাটাতে আপনার ভালো লাগছে না?”

এত কঠিন সময়ে নুরের এরকম মজায় সুফিয়ান বড্ড বিরক্ত হলো। বিরক্তি নিয়েই বললো,“তুমি আমাকে কলঙ্কিত করেছো তারপরো এতদিন তোমার সাথে অত্যান্ত ভালো ব্যবহার করেছি, এটা তোমার জীবনে বড় পাওয়া বলে মনে করো।”

নুর হাসি মুখেই বললো,“আমি যেমন আমার উদ্দেশ্যের জন্য আপনাকে কলঙ্কিত করেছি, আপনিও নিজের উদ্দেশ্য আমার সাথে ভালো ব্যবহার করেছেন।”

“আমি তো কোন ভুল করেনি তাহলে আমাকে কলঙ্কিত কেন করেছো?”
“আপনার কলঙ্ক আপনার বাবাকে দমাতে সক্ষম হলো তাই। তাছাড়া বাবার অপরাধের কিছুটা ভাগিদার সন্তানও হয়।”

“আমার বাবা এখন কেমন আছে?”
“গেলেই দেখতে পাবেন।”
“তুমি তাদের সাথে খারাপ কিছু করোনি তো?”

“আমি আপনার সাথে থেকে তাদের সাথে খারাপ কিছু কিভাবে করতে পারি?”
“যেভাবে তাদের নিঁখোজ করেছো।”

বেশ কিছুক্ষন পর নুর সুফিয়ানকে গাড়ি থামাতে বললো। সুফিয়ান বললো,“আমরা চলে এসেছি?”
“না। আসলে এরপর আপনার সাথে দেখা হবে কিনা সন্দেহ আছে তাই ভাবলাম আপনার সাথে বসে একটু আইসক্রিম খাই। সামনে আইসক্রিম এর দোকান যান দু’টো আইসক্রিম নিয়ে আসুন।”

সুফিয়ানের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। রাগের মাথায় নুরের গালে থাপ্পড় মেরে দিলো।
“এরকম সিরিয়াস মূহুর্তে লজ্জা করছে না মজা করতে। আমি আমার বাবা, কাকার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছি আর তুমি?”

নুর তবুও হাসি মুখে বললো,“আমাকে খুশি করলেই আপনার বাবা বেঁচে থাকবে। তাই চুপচাপ আমার আইসক্রিম নিয়ে আসুন।”
“তুমি?”
“হ্যাঁ আমি। হাসপাতালের তিনজনকে মেরে ফেলেছি তাহলে ভাবুন আপনার বাবাকে মারতে পারবো কি পারবো না?”

সুফিয়ান কিছুটা দমে গেলো। এখন তার মাথা গরম করার সময় নয়। আগে তাকে তার বাবার কাছে পৌঁছাতে হবে।

সুফিয়ান গিয়ে আইসক্রিম নিয়ে এলো। নুরের হাতে দিয়ে পুনরায় গাড়ি চালানোতে মন দিলো। নুর গন্তব্য বলে দিয়েছে। নুর আইসক্রিম খাওয়ার ফাঁকে কিছুটা আইসক্রিম সুফিয়ানের গালে লাগিয়ে দিলো। সুফিয়ান শান্তকন্ঠে বললো,“এসব কি ধরনের পাগলামি?”

“স্মৃতির পাতায় বন্দী রাখা আমার মিষ্টি পাগলামি।”

সুফিয়ান নুরের মুখের দিকে তাকালো। নুর হেসে দিলো। হঠাৎ নুরের ঠোঁট সুফিয়ানের ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। সুফিয়ান তৎক্ষনাৎ গাড়ি থামিয়ে দিলো।

নুর সুফিয়ানকে ছেড়ে দিলো। সুফিয়ান কিছু বলতে নিবে তার পূর্বেই নুর বললো,“সেদিন তো রাগ নিয়ে ছুঁয়ে ছিলেন। তবে ছোঁয়াতে অধিকার ছিলো। আজ আমি ভালোবেসে ছুঁয়ে দিলাম, এটাতেও অধিকার আছে। পরে আপনিই ঠিক করুন আপনি কোনটা মনে রাখবেন।”

সুফিয়ান বিষ্ময় নিয়ে নুরের দিকে তাকালো। নুর মুচকি হেসে বললো,“চলুন।”

নুর এবং সুফিয়ান শ্যামলের বাড়িতে চলে এলো। নুরকে ফেলে সুফিয়ান হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ডুকলো৷ ডুকে থমকে গেলো। পুরো ঘর জুড়ে রক্ত। সামনে পড়ে আছে দেলোয়ার ফরাজি, সাহেদ ফরাজি এবং সুমন ফরাজির মৃতদেহ। তাদের মৃতদেহের সামনে বন্দুক হাতে দাঁড়ানো রাজ।

সুফিয়ানের পর নুরও ভিতরে প্রবেশ করলো। তিনজনকে মরে পড়ে থাকতে দেখে বললো,“সুফিয়ান বাবু আমার কিন্তু কোন দোষ নেই। আমি তো জানতাম না আমরা চলে আসার পূর্বেই ওনারা মরে যাবে।”

সুফিয়ান সর্বশক্তিতে নুরের গায়ে থাপ্পড় মারলো। এবার নুর তাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেলো। রাজ থাপ্পড়ের শব্দে মেঝেতে তাকালো। চিৎকার দিয়ে বললো,“প্রিয়।”

সুফিয়ান বললো,“একটা অপরাধের শাস্তি আর একটা অপরাধ হতে পারে না। যদি এরকম সমাজে চলতো তাহলে এখানে শুধু অপরাধই হতো কোন ভালো কাজ হতো না।”
একটু থেমে সুফিয়ান পুনরায় বললো,“তুমি আমার সম্মান নষ্ট করেছো তাও আমি ক্ষমা করে দিতাম, তোমার পাশে দাঁড়াতাম। পরীর অপরাধীদের শাস্তি দিতাম। কিন্তু তুমি যেটা করলে সেটা ঠিক করলে না।”

নুর অট্টহাসি দিয়ে বললো,“আমি তো কিছু করিনি। আমার ভালোবাসা রাজ, আমার জন্য ওদেরকে মেরে ফেলেছি। আমি কি করতে পারি?”

সুফিয়ান অবাক কন্ঠে বললো,“ভালোবাসা?”
“হ্যাঁ ঐ যে রাজ।”
রাজের দিকে আঙুল তুলে দেখালো নুর। তারপর মেঝে থেকে উঠে গিয়ে রাজের সামনে গিয়ে বললো,“এই আমার রাজ। যে আমাকে পাওয়ার জন্য সবকিছু করতে পারে।”

কথাটি বলে নুর রাজকে জড়িয়ে ধরলো। রাজ প্রথমে হতভম্ব হয়ে গেলেও নুর জড়িয়ে ধরায় সেও জড়িয়ে ধরলো।

নুর রাজকে বললো,“আমাকে খুব ভালোবাসো তাই না রাজ?”
“হ্যাঁ প্রিয়। আমার পৃথিবীতে মা আর তুমি ছাড়া কেউ নেই। আমি তোমাদের দু’জনকে অনেক ভালোবাসি।”

“সেই ভালোবাসার জন্য খুন তো খুব সাধারণ বিষয় তাই না রাজ?”

রাজ হ্যাঁ বলতে নিবে তার পূর্বেই নুর কথার ফাঁকে রাজের হাত থেকে বন্দুকটা নিয়ে রাজকেই গুলি করে দিলো। রাজ বিষ্ময় নিয়ে তার প্রিয়র দিকে তাকিয়ে রইলো।

রাজ অবুঝের মতো প্রিয়র দিকে তাকিয়ে রইলো। সুফিয়ানও হতবাক। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই নুর পুনরায় গুলি করলো।

সবার ভাবনার মাঝেই নুর বললো,“প্রিয়কে পেতে তুই প্রিয়র জীবনকে কেড়ে নিয়েছিলি না, আজ সেই প্রিয় তোর থেকে তোর প্রানটা কেড়ে নিলো।”

রাজ হতভম্ব হয়ে বললো,“প্রিয়?”
“হ্যাঁ আমি তোর ভালোবাসা। যে ভালোবাসার পূর্নতার জন্য তুই আমার বোনকে পথের কাটা মনে করে তুলে ফেলেছিলি, আমি তোর সেই ভালোবাসা। সেদিন যদি তুই আমার বোনের দিনপঞ্জি পড়তি তাহলে আজ তোকে খুঁজতে হতো না সুমন ফরাজি কে? আর কেন তোকে নিয়ে এই খেলাটা খেলা হয়েছে?”

রাজ বিষ্ময় নিয়ে শ্যামলের দিকে তাকালো। শ্যামলের চোখে অশ্রু। রাজ চলে গেলো কল্পনায়।

অতীত,
জীবনের পাতা লিখতে লিখতে মাঝ পথে কাকতালীয় ভাবে রাজ এবং শ্যামলের সাথে দেখা হলো পরীর। পরী রাজকে দেখেই চিনেছিলো। রাজও পরীকে চিনেছে। পরী রাজকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লো। কাগজে লিখে বললো,“আমি বড় বিপদে আছি রাজ ভাই, আমাকে প্রিয় বা মায়ের কাছে পৌঁছে দেন।”

পরী রাজকে তার দিনপঞ্জিটা দিয়েছিলো পড়তে। পরীর অবস্থা দেখে রাজ বুঝে গেছিলো, পরী ভালো নেই।

পরী ভালো নেই বুঝতেই রাজের মাথায় প্রিয়র একটা কথা ঘুরপাক খেলো। প্রিয়কে যখনি জিজ্ঞেস করতো, ভালোবাসে কিনা? তখনি তার উত্তর ছিলো, “যেদিন আমার চোখ আমার পরীর ভালো থাকা দেখবে সেদিনই ভালোবাসা নিয়ে ভাববো।”

একদিকে মায়ের বিয়ে করার জন্য চাপ অন্যদিকে পরী ভালো না থাকলে প্রিয় তাকে মেনে নিবে না। দু’টো কথা মাথায় স্মরণ হতেই রাজের মধ্যে থাকা শয়তানটা জেগে উঠলো। রাজ পরীকে প্রিয়র কাছে নিয়ে যাবে বলে একটা ব্রিজের সামনে নিয়ে এলো।

তারপর কোনকিছু না ভেবে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো। শ্যামল হতভম্ব হয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,“এটা তুই কি করলি?”
“পথের কাটা দূর করলাম।”
“রাজ? মেয়েটা তোর কাছে সাহায্য চেয়েছিলো?”

“তো কি হয়েছে? এমনিতেও কালো তার উপর বাকহীন এর জীবনে ভালো কিছু কিভাবে হবে, তারচেয়ে মারা গেছে এটাই তো ভালো।”

শ্যামল পুরা থ মেরে গেলো। রাজ হাতে থাকা দিনপঞ্জিটা ছুরে ফেলে দিলো। একটুর জন্য সেটা পানিতে পড়েনি।

সেদিন শ্যামল দিনপঞ্জিটা নিয়ে নিয়েছিলো। ফাঁকে পরীকে খোঁজার চেষ্টাও করেছিলো। কিন্তু নদীর স্রোতে কোথায় হারিয়ে গেছে, তা কে জানে?

শ্যামল প্রথম ব্যক্তি যে পরীর দিনপঞ্জি পড়ে কান্না করেছিলো। তারপর রাজের ফোন থেকে প্রিয়র নাম্বার সংগ্রহ করে তাকে সব বলে দেয়।

বর্তমান,
মানবিকতার টানে নাকি অন্যকিছু জানা নেই। শ্যামল প্রিয়কে সাহায্য করতে তার হাত ধরে।

রাজের প্রানপাখিটা যাই যাই করছে, অন্যদিকে সুফিয়ান তাকে হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলছে। কিন্তু সুফিয়ান রাজের কাছে আসতে পারছে না, কেননা তাকে শ্যামল ধরে রেখেছে।

নুর রাজের মুখের কাছে নিজের মুখটা নিয়ে খুব ধীর কন্ঠে বললো,“যেই ভালোবাসার জন্য তুমি আমার নিষ্পাপ বোনকে মেরে ফেলতে একবারো ভাবোনি, আজ তোমার সেই ভালোবাসা তোমাকে মেরে ফেলতে এক সেকেন্ডও ভাবেনি।”

একটু থেমে পুনরায় বললো,“ভালোবাসার হাতে মরতে কতটা যন্ত্রনা হয় তা উপলব্ধি করো রাজ।”
রাজ করুন চোখে প্রিয়র দিকে তাকিয়ে আছে। প্রিয় বললো,“ভালোবাসার হাতে খুন হওয়া সৌভাগ্যের রাজ, তোমার মৃত্যুটা ততটা যন্ত্রনার নয় যতটা যন্ত্রনা আমার বোন পেয়েছিলো। একটা কথা জানো তুমি…”

রাজ কৌতুহল দৃষ্টিতে তাকালো নুর বললো,“ভালোবাসার হাতে মৃত্যুটা যত সহজে মেনে নেওয়া যায়, আশ্রয়দাতার হাতে মৃত্যুটা ততটা কঠিন হয় মেনে নিতে।”

“তুমি আমার বোনের কাছে আশ্রয়দাতা ছিলে, তোমার কাছে আমার বোন আশ্রয় চেয়েছিলো। চেয়েছিলো আমার কাছে ফিরে আসতে। তুমি ওর আশ্বাস, বিশ্বাস সবগুলোকে খুন করেছো।”

নুর কান্না করে দিলো। কান্নারত অবস্থায় বললো,“ও কালো ছিলো, বাকহীন ছিলো এটা অপরাধ ছিলো। নাকি আমার বাবা নিজের সবটা দিয়ে তার মেয়েকে সুখী করতে চেয়েছিলো এটা তার ভুল ছিলো। আমার বোন বাঁচতে চেয়েছিলো, তার স্বপ্নগুলো বারবার ভেঙে গেছিলো তবুও সে স্বপ্ন দেখেছিলো৷ একটা অবৈধ সন্তানকে জন্ম দিতে চেয়েছিলো শুধু একটা স্বপ্ন পূরণের আসায়। সবশেষে তোমার কাছে গিয়েছিলো তুমিও ওকে ঠকালে। আমার বোন আমার থেকে ছোট ছিলো তাও ওর বিয়ে নিয়ে বাবা আগে ভেবেছিলো কেন জানো? কারন তোমরা, তোমাদের এই সমাজ আমার বোনের মতো মানুষদের ঘৃণা করে তাই। আমি সবসময় আমার বোনের সুখ চেয়েছিলাম কেন জানো? আমার গোছানো জীবনটা আমার বোনকে বড্ড কষ্ট দিতো, আমি জানি ও কষ্টের কথা বলতো না তবুও ওর কষ্ট হতো। নিজের অপূর্ণতাকে তখন ও মেনে নিতে পারতো না। আমি চেয়েছিলাম আমার বোন নিজের অপূর্ণতা নিয়েই সুন্দর একটা জীবন উপহার পাক। কিন্তু তুমি, তোমরা সেটা হতে দিলে না।”

রাজ কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,“তবুও বলবো ভালোবাসি।”

রাজ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলো। নুর সুফিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,“আপনি আপনার বাসায় ফিরে যান, যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। আপনার যে সম্মান আমি কেড়ে নিয়েছিলাম তা আমি ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি।”

সুফিয়ান নির্বাকের মতো চেয়ে আছে নুরের মুখশ্রীতে।

পরিশেষে,
নুর পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। সমস্ত দোষ নিজের উপর ন্যায়, শ্যামলকে এসব ব্যপারে জড়ায় না।

অন্যদিকে রহিম নিজের মেয়েকে সবার সামনে নিয়ে সব স্বীকার করে। নুর নামের মেয়েটি তাকে অনেক টাকা এবং মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে সুফিয়ানকে ফাঁসানোর নাটক করে। তখনি সবাই জানতে পারে নুরের মা অনেকদিন আগেই গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা যান। সেটা নিছকই দূর্ঘটনা নাকি অন্যকিছু তা জানা যায়নি।

নুর কারাগারের মধ্যে বসে মনেমনে বললো,“আমিও স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। নতুন এক স্বপ্ন, যেটা পূরণ হতেও পারে নাও হতে পারে। আমার পরী এই ধরনের স্বপ্নের নাম দিয়েছিলো #শ্যামসুন্দর_স্বপ্ন। আজ আমি সেই #শ্যামসুন্দর_স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি আপনাকে নিয়ে সুফিয়ান বাবু।”

অন্যদিকে সুফিয়ানের পরিবারটা কেমন নিরব হয়ে গেছে। কেউ কারো সাথে কথা বলার প্রয়োজন মনে করছে না। যে যার মতো চলছে।

তখন গভীর রাত সুফিয়ান ছাদে বসে আকাশ দেখছিলো। একদিন এই আকাশের পানে তাকিয়ে জীবনে কি হয়েছে, কি হয়নি তার গল্প করছিলো? দমকা হাওয়ার মতো নুর তাকে কলঙ্কিত করে জীবনটা বদলে দিয়েছিলো। সেদিন নুরকে নিয়ে ততটা স্বপ্ন দেখেনি সুফিয়ান।

তবে আজ কেন জানি না তার নুরকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে করছে। সুফিয়ান জানে নুরকে নিয়ে দেখা স্বপ্ন সত্যি হওয়ার নয়। তবুও মনের কোনায় কোথাও গিয়ে বলছে, “সত্যি হতেও তো পারে।”

হঠাৎ আকাশটা মেঘলা হয়ে গেলো। বলতে না বলতে বৃষ্টিও শুরু হলো। সুফিয়ান নিজের দু’হাত ছড়িয়ে দিয়ে বললো,
“আকাশটা যেমন হঠাৎ করে মেঘলা হলো
জীবনটা তেমন দমকা হাওয়া আবার বদলে যাক।
সেদিন অজান্তে বদলে ছিলো জীবন।
আজ নিজে চাইছি বদলাক।”

“কোন এক দমকা হাওয়ার রেশে
পূরণ হোক না আমার #শ্যামসুন্দর_স্বপ্ন।”

(সমাপ্ত)
(এখানে শ্যামসুন্দর স্বপ্ন কেন ব্যবহার করা হয়েছে আসা করি সবাই বুঝেছেন। কোন মানুষ পার্ফেক্ট নয়, ঠিক তেমনি তার সৃষ্টিও পার্ফেক্ট হয় না। যদিও হয়েও থাকে তবে আমারটা পার্ফেক্ট না। আমি হয়তো বেশি ভালো করে উপস্থাপনা করতে পারিনি। সবাই বলে নায়ক চরিত্রটা নাকি আত্মমর্যাদাহীন। হবে হয়তো। আমি ভালোভাবে তাকে তুলে ধরতে পারিনি। গল্পটায় হয়তো কিছু খুঁত থেকে গেছে, তবে আমি চেষ্টা করেছি খুঁত না রাখার। তবুও ফাঁক থেকে গেলে তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। সবকিছু ক্লিয়ার করার চেষ্টা করেছি।
সবশেষে খারাপ ভালো যাই হোক দুই লাইনে মন্তব্য দিয়ে যাবেন। আজ শেষ পর্বে অন্তত কিপ্টামি করবেন না। সবাইকে ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here