শ্যামাঙ্গণা-১৫,১৬

0
218

শ্যামাঙ্গণা-১৫,১৬

১৫
————-

সি শেলের প্রকান্ড হলে দাড়িয়ে কনে তুশির বড় ভাই মিনহাজের সঙ্গে কথা বলছে ফাহমান। মিনহাজ ও তুশি ফাহমানের মায়ের চাচাতো বোনের ছেলে মেয়ে। অনেক দূর সম্পর্কের আত্মীয় হলেও একমাত্র মিনহাজদের পরিবারই ফাহমানদের বিপদে আপদে এগিয়ে আসেন। উনারা ছাড়া মিস মারিয়ামের ভাই বোন কেউই তার খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না। মিস মারিয়ামের ভাই বোনেরা বরাবরই সুযোগ সন্ধানী কাজেই খুব প্রয়োজন না পড়লে তারা মিস মারিয়ামের খোঁজ নেন না।

মিনহাজ বয়সে ফাহমানের দুই বছরের ছোট। এবার সবে অনার্স শেষ করে মাস্টার্স করার অপেক্ষায়। তবে দূর সম্পর্কের আত্মীয় হলেও ফাহমানের সঙ্গে তার ভালো যোগাযোগ আছে। সখ্যতা সেরকম নেই কিন্তু দেখা হলে কথাবার্তা, আড্ডা এসব হয়েই থাকে তাদের মধ্যে।

ফাহমানের মা মিস মারিয়াম এবং হৈমন্তী তুশির মায়ের সঙ্গে কথা বলছেন। অনেকদিন পর বোনের দেখা পেয়ে মিস মারিয়ামের খুশি যেন ধরেই না। তাছাড়া এই বিয়ের উসিলায় উনি নিজের ভাই বোনদের দেখাও পেয়েছেন যেটা উনার জন্য অনেক বড় একটা সুযোগ। কোনো স্পেশাল অকেশন ছাড়া উনার খোঁজ কেউই নেন না। এতে উনি কষ্ট পেলেও ভাই বোনের মায়া ছাড়াতে পারেন না।

ফাহমান কথা বলতে বলতে লক্ষ্য করলো ওর থেকে কয়েক কদম দূরে পিয়াজি রংয়ের শাড়ি পরিহিতা এক রমণী অন্যদিকে ফিরে দাড়িয়ে আছে। মুহূর্ত কয়েক ফাহমান রমণীকে চিনতে পারল না। মনে হচ্ছে কোথাও একটা দেখেছে কিন্তু কে সেই ব্যক্তি সেটা মনে পড়ছে না। তবুও মনে হচ্ছে সেই রমণীর কারোর সঙ্গে মিল আছে।

হঠাৎ মনে পড়লো সেই শাড়ি পরিহিতা রমণী তো ঝুমুর। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব ? ঝুমুর এই বিয়েতে কেন আসবে ? মিনহাজদের সঙ্গে কি ঝুমুরের কোনো সম্পর্ক আছে ? থাকলে তো ফাহমান জানত। আর যদি সেরকম কোনো সম্পর্ক না থাকে বন্ধুত্বও থাকে তাহলেও ফাহমান বিয়েতে আসার ব্যাপারটা জানতো। ঝুমুর নিশ্চই তাকে না জানিয়ে আসবে না।

প্রথমে ফাহমান ভাবলো ঝুমুর তাকে চমকে দিতে এমনটা করেছে। পরে ভাবলো ঝুমুর কি করে জানবে সে এই বিয়েতে এসেছে ? কাজেই ঝুমুরের তাকে চমকে দেওয়ার ব্যাপারটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললো ফাহমান। আবারও ভাবলো ঝুমুর তো জানেনা সে এখানে এসেছে কাজেই ঝুমুরকে সে চমকে দিতে পারে। ঝুমুরের সঙ্গে তো কাউকে দেখাই যাচ্ছে না কাজেই এখন কথা বলা যায়।

‘ অঙ্গণা ‘

তানিয়া শাহজাহান ফোনে ঝুমুরের সঙ্গে জরুরি বার্তালাপ করছিলেন। ঝুমুররা নাকি এখনো আবদুল্লাহপুরে আটকে আছে। রাস্তায় প্রবল জ্যাম। আসতে কমপক্ষে পাঁচ মিনিট সময় লাগবে যদি জ্যাম এখনই ছেড়ে দেয়। কথাবার্তা শেষে তানিয়া শাহজাহান ফোন রাখতেই শুনতে পেলেন কেউ ‘ অঙ্গণা ‘ বলে ডাকছে। প্রথমে উনি বুঝতে পারেননি অঙ্গণা কে। কিন্তু কিছুক্ষন পরই মনে পড়লো অঙ্গণা তো ঝুমুরের ভালো নাম। তানিয়া শাহজাহান সঙ্গে সঙ্গে পিছন ফিরলেন।

সামনে দাড়িয়ে থাকা রমণীকে দেখে চমকে গেলো ফাহমান। রমণীর বেশভূষা, চাল চলন এবং মুখের অদল অনেকটাই মিলে যায় ঝুমুরের সাথে। কিন্তু এই মহিলা যে ঝুমুর নয় সে ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত ফাহমান। ঝুমুরের গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা কিন্তু এই নারীর গায়ের রং ধবধবে ফর্সা তাছাড়া উনার তো ঠোঁটের নিচে তিলও আছে যেটা ঝুমুরের থুতনির কাছে আছে।

সপ্তদশী ঝুমুর যেন এই পয়ত্রিশোর্ধ্ব তানিয়া শাহজাহানেরই প্রতিচ্ছবি। তানিয়া শাহজাহান এবং ঝুমুরকে একসঙ্গে দাড় করালে যে কেউ বলে দিবে তারা মা মেয়ে কারণ তাদের অমিলের থেকে মিলটাই বেশি। তানিয়া শাহজাহান তার কিশোরী বয়স পেরিয়ে এসেও যেন এখনও ঝুমুরের মতোই উচ্ছল কিশোরী। তার উচ্চতা,শরীরের গঠন অনেকটাই ঝুমুরের সঙ্গে মিলে যায়। এক মুহূর্তের জন্য তাকে পিছন থেকে দেখে ফাহমান ঝুমুর ভাবলেও এখন সামনে থেকে ঝুমুরের মা মনে হচ্ছে তার।

‘ আপনি কি ঝুমুরের মা ? বাট হাও কাম ? ওর মা মানে তাসনুবা আন্টি তো দশ বছর আগেই… ‘

বাকি কথা আর শেষ করতে পারলো না ফাহমান। তানিয়া শাহজাহান ওর দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন। ওর দিকে এগিয়ে এসে গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করলেন ‘ তুমি ? তুমি কে ? দেখে তো মনে হচ্ছে বয়সে আমার ছোট। তুমি ঝুমুরকে কি করে চিনলে ? ‘

অজ্ঞাত রমণীর এই কথায় ফাহমান একটু অসস্তিতে পড়ে গেলো। কি উত্তর দিবে সে ? তবে বললো ‘ আমি ফারুকের বন্ধু, ঝুমুরের হোম টিউটর এন্ড লাস্টলি ওদের ভাড়াটিয়া ফাহমান সওদাগর। ‘
ফাহমানের কথা শুনেও তানিয়া শাহজাহানের সন্দেহের বাণ মিটলো না। উনি কপালে দুইখানা ভাজ এনে কিছু একটা ভাবলেন তারপর বললেন ‘ আমি ওর মাসী। মানে ওর মা তাসনুবার ছোট বোন তানিয়া শাহজাহান। ‘

এবার বুঝল ফাহমান কেন ঝুমুর আর এই অজ্ঞাত নারীর মধ্যে এত মিল। ও সস্তির নিশ্বাস ফেলে বললো ‘ একচুয়ালী আই ওয়াজ কনফিউজড। আমি ভেবেছিলাম আপনি ঝুমুর তাই ডেকেছিলাম। সরি ফর দা… ‘

ফাহমানের পুরো কথা শুনতে পারলেন না তানিয়া শাহজাহান। বিপবিপ আওয়াজে উনার ফোন ভাইব্রেট করে উঠলো। ফোনের স্ক্রিনে চোখ বুলিয়ে দেখলেন মনোয়ারা বেগমের ফোন থেকে ম্যাসেজ এসেছে ‘ ইমো(খালামণি) আমরা এসে গেছি। সেন্টারের নর্থ সাইডে ‘

মনোয়ারা বেগমের ফোন থেকে ঝুমুরের ম্যাসেজ পাওয়া মাত্র উনি আর বিলম্ব করলেন না। ফাহমানকে এক্সকিউজ জানিয়ে ঝুমুরদের দিকে এগিয়ে গেলেন। কিন্তু উনার মনে চলছে অন্য চিন্তা। ওই ফাহমান নামের ছেলেটি কি আসলেই শুধু ঝুমুরের হোম টিউটর নাকি অন্য কিছু ? কারণ ফাহমানের অঙ্গণা ডাকটায় যে অন্যরকম অনুভূতি মিশানো ছিল সেটা উনি ধরতে পেরেছেন। তাছাড়া ঝুমুরকে তো ওই নামে শুধু তানিয়া শাহজাহানের বড় বোন তাসনুবাই ডাকতেন আর ঝুমুর সেই নামে তার অমনি ছাড়া কারোর ডাকা পছন্দ করে না তাহলে ফাহমানকে কি করে এলাউ করলো ?

তানিয়া শাহজাহান ওনার ভাগ্নিকে বিশ্বাস করেন যে ঝুমুর তাকে না জানিয়ে অন্তত কোনো সম্পর্কে জড়াবে না। কিন্তু এমনও হতে পারে যে হয়তো ঝুমুর এমন কোনো পরিস্থিতিতে ছিল যার কারণে সে তাকে জানাতে পারেনি ? এক্ষেত্রে উনার কি করা উচিত ? তানিয়া শাহজাহান বুঝতে পারছেন না। ভাবনা চিন্তার মাঝেই তানিয়া শাহজাহান নর্থ সাইডে পৌঁছে গেলেন।

তানিয়া শাহজাহানকে দেখে ঝুমুর চমকে গেছে। আসলেই তার ইমোকে তার মতোই লাগছে। তানিয়া শাহজাহানের দক্ষতার সম্মান দিতে হয়। উনি যেমন বলেছিলেন ঝুমুরের মতো করে সাজবেন ঠিক তেমনই সেজেছেন। সাজগোজ থেকে শুরু করে সংসার সামলানো সবকিছুতে এই দুই সন্তানের জননী তানিয়া শাহজাহানের দক্ষতা আকাশ চুম্বি।

‘ ও মাই ডিয়ার ঝুমুর, আই রিয়েলি মিসড ইউ। ‘ বলে তানিয়া শাহজাহান ঝুমুরকে জড়িয়ে ধরলেন।

অনেকদিন পর ঝুমুর তার ইমোকে দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে ঝরঝর করে কেঁদে দিল। তার গভীর চোখ দুটো দিয়ে অঝোরে অশ্রু ঝরছে। ঝুমুরকে কাদতে দেখে তানিয়া শাহজাহান তার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললেন ‘ কেঁদো না ডিয়ার। আই অ্যাম হেয়ার উইথ ইউ। ‘

‘ তোমাকে কতদিন পর দেখলাম ইমো। আমি তোমাকে মিস করেছি অনেক। অনামিকা, অনিল ওদেরও মিস করছি। ‘
চোখের অশ্রু মুছে নাক টেনে টেনে বললো ঝুমুর।

‘ দেন ইউ মাস্ট বি হ্যাপি টু নো দ্যাট অনামিকা, অনিল ওরা এসেছে। দে আর উইথ দ্যার ফাদার। ‘

ঝুমুরের সঙ্গে বাক্য বিনিময় করে তানিয়া শাহজাহান মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। উনার আর খেয়ালে রইলো না ঝুমুর আর ফাহমানের ব্যাপারটা। কথাবার্তা শেষে ঝুমুর অনামিকা আর অনিলকে দেখলো। তারা ঝুমুরকে দেখে ছুটে এসেছে।

ঝুমুর ভাই বোনদের সঙ্গে দীর্ঘ বিচ্ছেদের ফলে এতদিনের জমে থাকা আবেগী বাক্য বিনিময় করে সব ভাই বোনদের এক জায়গায় জড়ো করলো। ঝুমুর, নিঝুম, আমির, সামি, তাফিম, অনামিকা, অনিল সকলকে ফারুক এক ফ্রেমে বন্দী করলো।

কিছু সময় ভাই বোনদের সঙ্গে কাটিয়ে সকলে আবার নিজেদের মতো ছড়িয়ে পড়লো। ঝুমুর সেন্টারের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে তার মনোয়ারা বেগমের ফোন। তার নিজস্ব কোনো ফোন নেই। এই বয়সে ফোন রাখাও তার পছন্দ নয়। এছাড়া ফোন থাকলেই বা কি হতো ? তার সময় তো পড়াশোনা, প্রাইভেট, বাগানে সময় কাটানো আর ঘরের কাজ করেই কেটে যায়। এতকিছুর মাঝে ফোন দেখার সময় কোথায় তার ?

ঝুমুর যখন ফোন দেখতে ব্যস্ত তখনই পিছন থেকে কেউ ওর চোখ চেপে ধরলো। ঝুমুর না ধরেও টের পেলো শীতল সেই স্পর্শ হৈমন্তীর। ঝুমুর তার চোখ থেকে হৈমন্তীর হাত সরিয়ে অবাক হয়ে পিছন ফিরে বললো ‘ আপু তুমি এখানে ? ‘

হৈমন্তী ঝুমুরকে অবাক হতে দেখে হেসে বললো ‘ আমিও তোকে দেখে চমকে গেছিলাম কিন্তু ভালই হলো। এই বোরিং অনুষ্ঠানে কাউকে পেলাম কথা বলার জন্য। তুশি আপুর মা আমার মায়ের চাচাতো বোন। তুশি আপুর বিয়েতেই এসেছি আমরা। চল তোকে ওখানে নিয়ে যাই। মা আর ভাইয়া ওখানেই আছে। ‘

শেষের কথাটা হৈমন্তী তার হাতের ইশারায় ফাহমানের দিকে ইশারা করে বললো। হৈমন্তীর ইশারা অনুসরণ করে ঝুমুর সেই দিকে ফিরলো। সে দেখলো ফাহমান মিস মারিয়ামের সঙ্গে দাড়িয়ে কথা বলছে। ফাহমানকে এই প্রথম ডক্টরস এপ্রন এবং নরমাল লুক ছাড়া ফরমাল কোর্ট প্যান্টে দেখে ঝুমুর যেন মুগ্ধ হলো। তার ইচ্ছে করলো শুধু তাকিয়েই থাকুক।

কিন্তু ঝুমুর তার মনোবাসনা পূরন করার সুযোগ পেলনা কারণ হৈমন্তি ততক্ষণে তাকে টেনে নিয়ে গেছে মিস মারিয়ামের কাছে। হৈমন্তী মিস মারিয়াম ও তার ভাই ফাহমানকে উদ্দেশ্য করে বলল ‘ দেখো কাকে এনেছি। মাই ডিয়ার ফ্রেন্ড ‘

হৈমন্তীর কথায় ফাহমান এবার ঝুমুরের দিকে নজর দিল। যদিও সে ঝুমুরকে দেখে অবাক হয়নি তবে চমকে যাওয়ার মতো ফেক এক্সপ্রেশন দিয়ে বললো ‘ আমি তো অবাক। তোমাকে এখানে আশা করিনি মিস অঙ্গণা ‘

ফাহমানকে অন্য রুপে দেখে বিমোহিত ঝুমুর এতক্ষণ তার দৃষ্টি নামিয়ে রেখেছিল। পাছে ফাহমান যদি তার অনুভূতি টের পেয়ে যায় তার কাজল চোখে চেয়ে। কিন্তু ফাহমানের কথায় সে মুখ তুলে চাইল। ফাহমান অধীর আগ্রহে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ঝুমুর কম্পিত কণ্ঠে বলল ‘ কনে আপির জায়ের বোনের মেয়ে। সেই সূত্রেই এসেছি। ‘

‘ ওহ আই সি। তাহলে তো আমরাও দূর সম্পর্কের আত্মীয় হই তোমার। দেন আই মাস্ট শেক হ্যান্ডস উইথ ইউ। হায় মিস অঙ্গণা, আই অ্যাম ইউর কাজিন ব্রাদার ফাহমান সওদাগর। ‘ ফাহমান মুচকি হেসে ঝুমুরের দিকে তার ডান হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো কথাটা।

ফাহমানের হাতের দিকে একবার তাকিয়ে ঝুমুর তার সখি হৈমন্তীর দিকে তাকালো। ফাহমানের এহেন কাজে হৈমন্তী এবং মিস মারিয়াম দুজনেই হাসতে হাসতে কাহিল। ঝুমুর তার কম্পিত হাতটা এগিয়ে দিয়ে নিজেকে সামলে হেসে বললো ‘ হায় আই অ্যাম ইউর কাজিন সিস্টার অঙ্গণা ঝুমুর, ফাহমান ভাই। ‘

ঝুমুরের মুখে ভাই ডাকটা শুনে ফাহমান ভ্রু কুচকে ফেললো। দ্রুত ঝুমুরের কাছ থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল। ও বুঝতে পারছে ঝুমুর ওর খোঁচা মারা কথার জবাবই দিয়েছে ভিন্ন ভাবে। ইচ্ছে তো করছে মেয়েটার গাল দুটো টেনে দিয়ে খোচার শোধ উসুল করতে কিন্তু সেটাও করা যাবে না। ফাহমান ঠিক করলো এর শোধ সে অন্যভাবে, অন্য কোনওদিন নিবে।

ঝুমুরের খোঁজে ঘুরতে ঘুরতে ফারুক ঝুমুরসহ ফাহমানদের দেখা পেলো। হুট করে বন্ধুকে দেখে সে তো চমকে গেছে। তবে ঝুমুর জানালো ফাহমানরা ইন্ডিরেকটলি ওদের আত্মীয় হন। সব শুনে ফারুকের খুশি দেখে কে। বন্ধুর সঙ্গে আত্মীয়তা পাততে পেরে সে অনেক খুশি। এই আত্মীয়তার কথা সে মনোয়ারা বেগমসহ সকলকে জানালো। এসব নিয়ে কিছুক্ষণ হাসাহাসিও হলো।

—-

সবার থেকে খানিকটা দূরে ফোন হাতে দাড়িয়ে আছে ঝুমুর। তার একটা ফেসবুক আইডি আছে যেটা সে মনোয়ারা বেগমের ফোনে মাঝে মাঝে ব্যাবহার করে। সবসময় ফেসবুকে কানেক্ট থাকা তার পক্ষে সম্ভব হয়না কারন সেও পড়ালেখায় ব্যস্ত মানুষ। ঝুমুর যখন নীরবে নিভৃতে ফোন দেখতে ব্যস্ত তখনই ফাহমান তার পাশে এসে দাঁড়াল।

ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের এতটা কাছে, পাশাপাশি পেয়ে ঝুমুর নিশ্বাস নিতে ভুলে গেছে। সে তার হাত দুটো জড়োসড়ো করে দাড়িয়ে আছে। ঝুমুরের এই আচরণে ফাহমান আড়চোখে ওর হাতে থাকা ফোনে নজর দিলো। স্ক্রিনে ঝুমুরের ‘অঙ্গণা ঝুমুর’ লেখা ফেসবুক আইডিটা জ্বলজ্বল করছে। প্রোফাইলেও ঝুমুরের এক হাত দিয়ে চেহারার অর্ধেকাংশ ঢেকে রাখার প্রতিচ্ছবি।

‘ রোজই তো তোমার পাশ দিয়ে পথ চলি। তাহলে আজ হঠাৎ পাশে এসে দাঁড়ানোতে এমন করছো কেন ? ‘

ফাহমানের কথায় ঝুমুর অসস্তিতে পড়ে গেলো। নিজেকে স্বাভাবিক করার আপ্রাণ চেষ্টা করে বললো ‘ কোথায় ? কি করছি আমি ? আমি ঠিক আছি। ‘

‘ সত্যি বলছো ? তাহলে কাপছ কেন ? ‘

‘ সত্যিই বলছি তাছাড়া আমি কাপছি না। আপনি চোখে ভুল দেখছেন। আমি কোনো কাপছি না। উল্টো আমাকে শাড়িতে দেখে আপনি অদ্ভুত আচরণ করছেন। ‘

ঝুমুরের কথায় হাসলো ফাহমান। হাসলে তার গালেও টোল পড়ে। ঝুমুর সেই হাসি দেখে আবারও মর্ম বিদ্ধ হলো। ফাহমান ঝুমুরের চোখে চোখ রেখে দাড়ালো। মুখে বললো ‘ কথা ঠিক। আপনাকে শাড়িতে দেখে আমি আসলেই অদ্ভুত আচরণ করছি। আমার শ্যামাঙ্গণা বিধ্বংসী রুপে সামনে এসে দাঁড়ালে আমি আসলেই অদ্ভুত হয়ে যাই। বারবার ইচ্ছে করে ঘুরে ফিরে শ্যামাঙ্গণাকেই দেখতে। তাইতো এমন অদ্ভুত আচরণ করি। ‘

চলবে….
মিফতা তিমু

শ্যামাঙ্গণা-১৬
————-

কিছু কিছু সময় থাকে যখন আমরা স্বপ্ন জগতে বাস করি। তখন বাস্তবিক কিছুই আমাদের মাথায় কাজ করে না। সেই টুকু সময়ের জন্য আমরা অবুঝ হয়ে উঠি। সময় পেরিয়ে যায় থমকে যাওয়া অনুভূতির প্রহরে। আমরা তখন শুধু ভাবি আর ভাবি কিন্তু আসল ভাবনাটা আর বোঝা হয়ে উঠে না।

ঝুমুরের সঙ্গেও তেমনই কিছু একটা ঘটে গেছে এখন। ফাহমানের কথা শুনে সে হতবুদ্ধি অবস্থায় দাড়িয়ে আছে। নিজের আবেগীয় প্রকাশকে অন্তরালে রাখা ফাহমানের এই অচেনা রূপ সে ধরতে পারছে না। এ কি তার সেই চেনা ফাহমান নাকি অন্য কেউ ? ঝুমুরকে এভাবে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হাসলো ফাহমান।

‘ এভাবে দাড়িয়ে থাকবেন না মিস অঙ্গণা। আপনাকে এভাবে আরও সুন্দর লাগছে। শাড়িতে আপনাকে ভালো মানিয়েছে। কৃতিত্ব শাড়ির নয়। শাড়ি কি জানে সে কার সর্বাঙ্গ জুড়ে আছে ? জানলে হয়তো সে নিজেকে ভাগ্যবতী ভাবতো। ‘

ফাহমানের কথা শুনে ভাবনার জগৎ ছেড়ে মর্তলোকে নেমে এলো ঝুমুর। কথাগুলো যে বাস্তবিকই ফাহমান তাকে বলেছে সেটা ধরতে পেরে তার অধর জুড়ে প্রশস্ত হাসি ছড়িয়ে পড়লো। ফাহমান সেই হাসি দেখে আবারও যেন কুপোকাত হলো। বললো ‘ আমার হৃদয়ে আপনার সাধারণ হাসিও কাপন ধরায় অঙ্গণা। সে আপনি শ্যামাঙ্গণাই হন বা আলতা বরণ নারী। আমার চোখে আমার একান্ত শ্যামাঙ্গণাই সেরা সুন্দরী। ‘

সবার সঙ্গে কথা বলার মাঝেও তানিয়া শাহজাহানের সতর্ক দৃষ্টি ঝুমুর আর ফাহমানের দিকে। ঝুমুর আর ফাহমানের এত ঘনিষ্ঠতাই উনার সন্দেহকে সঠিক প্রমাণ করেছে। যদিও প্রেম ভিত্তিক সম্পর্ক তার পছন্দ নয় কিন্তু ভাগ্নির উপর তার বিশ্বাস আছে। যেখানে উনার বোন তাসনুবাই প্রেম করে জগতের শ্রেষ্ঠতম পুরুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন সেখানে তার মেয়ে হয়ে ঝুমুর কোনো ভুল করবে না এটাই তার বিশ্বাস। তাছাড়া কারোর প্রেমে পড়া তো অপরাধ নয়।

তানিয়া শাহজাহান ঠিক করলেন তার প্রিয় বোন জির এই প্রেমের সম্পর্ককে উনি স্থায়ী সম্পর্কে রূপ দিবেন। তবে সেটা ঝুমুরের এইচএসসি বোর্ড ফাইনাল শেষ হওয়ার পর। ততদিন অব্দি সম্পর্ক যেভাবে আছে সেভাবেই থাকুক। এই ব্যাপারে সময় করে উনি ঝুমুরের সঙ্গেও কথা বলবেন।

ঝুমুর ও ফাহমানকে শুধু তানিয়া শাহজাহানই নন আরও এক জোড়া চোখ লক্ষ্য করেছে। তাদের এই ঘনিষ্ঠতা তার হৃদয়ের ঘরে দহন জ্বালিয়েছে। প্রতি নিয়ত পছন্দের মানুষটিকে নিজের প্রিয় সখীর সঙ্গে দেখে ব্যর্থতার আগুনে পুড়ছে তার হৃদয়ে। দোষটা কার ছিল ? তার নাকি ঝুমুরের ? দোষ তার ছিল না। সে তো জানতোই না তার প্রিয় সখী তারই পছন্দের মানুষকে ভালোবাসে।

দোষ ঝুমূরেরও নয়। সে তো চায়নি সবচেয়ে কাছের মানুষটিকে কষ্ট দিতে। তাইতো নিজের ভালোবাসা,নিজের মনের অনুভূতির কথা লুকিয়ে গেছে। দোষ তার, ঝুমুর কিংবা ফাহমান কারোরই নয়। দোষ তার কপালের। সে জানে কপালে যা লেখা থাকে তা কখনোই খন্ডানোর নয়। তার হৃদয় যে ভাঙারই ছিল। তার কষ্ট পাওয়া যে নিয়তির লিখন। এই লিখনকে খন্ডায় কে ?

দুই চোখের অশ্রুগুলো হাতের উলটো পিঠ দিয়ে মুছে নিলো শাওমি। সে জানে তার অনুভূতি ক্ষণস্থায়ী মাত্র। সবে একদিনের ভালো লাগায় তার হৃদয় এই বিরহ যন্ত্রণা অবশ্যই সামলে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। অথচ তার সখি যার সঙ্গে সে ছোট থেকে বড় হয়েছে সে সবার সামনে কঠিন হলেও ভিতর দিয়ে যে সে একেবারেই নরম।

ঝুমুর অনেকটা নারিকেলের মতো। বাহিরে শক্ত ভিতরে নরম। ঝুমুর তার মাকে হারিয়েছে সেই কবে। এখন ফাহমানকে কেড়ে নিয়ে ঝুমুরকে শেষ করে দিতে চায় না শাওমি। ঝুমুরের মায়ের পর তো এক ফাহমান আর সেই তো আছে। তার একটা ভুলের মাশুল তিন তিনটা জীবন নষ্ট করে দিবে। তাই শাওমি নীরবে সব মেনে নিল।

—-

বাড়ি ফিরে ঝুমুর তার রুমের দিকে গেল। শাওমি তার আগেই গাড়ি থেকে নেমে ঘরে চলে এসেছে। ঘরে ঢুকে ঝুমুর দেখলো শাওমি ফ্রেশ হয়ে মুখে সিরাম দিচ্ছে। তাকে দেখে ঝুমুরও চলে গেলো ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে ঝুমুর আগামী কালের কলেজের পড়াগুলো দেখে নিল। শাওমি ততক্ষনে বিছানায় শুয়ে পড়েছে। এসে থেকে শাওমি তার সঙ্গে একটা কথাও বলেনি। ঝুমুর ধরে নিলো হয়তো জার্নি করে টায়ার্ড। এমনিতেই শাওমির জেটল্যাগ কাটেনি এখনো।

পড়াগুলো গুছিয়ে রেখে বিছানায় শুতে এলো ঝুমুর। ঘরের বাতি সব নিভিয়ে দিয়েছে সে। সে বিছানায় শুয়ে কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করলো কিন্তু নিদ্রা দেবী আজ যেন ঝুমুরের চোখে ধরা দিতে চাইছে না। অনেকক্ষণ চেষ্টার পরও যখন ঝুমুরের ঘুম পেলো না তখন সে এক প্রকার বাধ্য হয়েই চোখ জোড়া খুললো। মনোযোগী দৃষ্টিতে শাওমিকে লক্ষ্য করলো।

শাওমি সোজা হয়ে কপালে হাত রেখে শুয়ে আছে। কপালে হাত রাখার কারণে সে ঘুমাচ্ছে নাকি জেগে আছে বুঝা যাচ্ছে না। ঝুমুর ভাবলো ডাক দিবে। কিন্তু তার আগেই শাওমি তাকে অবাক করে দিয়ে বললো ‘ আজকে বিয়েতে একটা ছেলেকে দেখলাম। বিশ্বাস কর আমি না ওর প্রেমে পড়ে গেছি। ওই ছেলেকে দেখে মনে হলো ওর কাছে তোর ওই টিচারও ফেইল। কিন্তু আফসোসের কথা হলো ওই ছেলেকে চিনি না আমি। ‘

শেষের কথাগুলো মেকি কান্নার ভান ধরে বললো শাওমি। ঝুমুরের সামনে অন্য কারোর প্রেমে পড়ে কাদার ভান ধরলেও সে তো জানে তার হৃদয় কার জন্য প্রতি নিয়ত কাদঁছে। কিন্তু প্রিয় সখী এবং পছন্দের মানুষটাকে সুখী করার জন্য এতটুকু সুখ বিসর্জন সেও দিতে পারে। ঝুমুর যদি তার সুখের কথা ভেবে নিজের আনন্দের কথা লুকিয়ে যায় তাহলে সে কেন পারবে না ? এভরিথিং ইজ পসিবল ফর শাওমি।

শাওমির কথায় ঝুমুর অন্ধকারের মাঝেই বিস্ফারিত চোখে তাকালো শাওমির দিকে। যেই মেয়ে সকালে এক ছেলের প্রেমে পড়ল সেই মেয়েই নাকি রাত হতে হতে আরেক ছেলের প্রেমে পড়ে গেলো। এটা আদৌ সম্ভব ? শাওমির ক্ষেত্রে তো সম্ভবই না। শাওমি এসব ব্যাপারে একেবারে খুঁতখুঁতে।

‘ আর ইউ শিওর শাওমি ? না মানে তুই তো এত সহজে কাউকে দেখে প্রেমে পড়িস না। ইউ আর ভেরি সেনসিটিভ ইন দিস ম্যাটার। ‘

ঝুমুর ইনিয়ে বিনিয়ে কথাটা বললো। শাওমি নিজ মুখে স্বীকার করলেও কেন যেন তার শাওমির মুখের কথা বিশ্বাস হচ্ছে না। যেই মেয়ে এসব ব্যাপারে এত পসেসিভ সে এভাবেই দুম করে যার তার প্রেমে পড়ে যাবে সেটা আদৌ বিশ্বাস যোগ্য তো ? তবে ঝুমুর জানে শাওমি মিথ্যা কথা বলে না এবং এই ধরনের বিষয়ে মজা করার অবকাশ তো আরও নেই। তাইতো সে এখন দ্বিধায় পড়ে গেছে।

ঝুমুরের কথায় শাওমি ওর চোখে মুখে অসহায় ভাব ফুটিয়ে তুলে বললো ‘ তুই ঠিক বলেছিস। আমি সেনসিটিভ কিন্তু তুই তো জানিস আমি এত বছর এই দিনটার জন্যই অপেক্ষা করেছি। এত বছর সুযোগ থাকার পরেও কাউকে জীবনের সাথে জড়াইনি শুধু সঠিক মানুষটার জন্য। নাহলে কোরিয়ানদের জন্য বয়ফ্রেন্ড বানানো কঠিন নয়।

প্রথমে আমি ভেবেছিলাম আমি তোর টিচারের প্রেমে পড়েছি। কিন্তু আজ বিয়েতে ওই স্বপ্ন পুরুষকে দেখা মাত্রই আমার মনে হলো ফাহমান নয় উনিই আমার সেই মানুষটা যার জন্য আমি এতদিন ধরে অপেক্ষা করেছি। এতদিন অপেক্ষা করার পর আমি নিশ্চই ভুল মানুষকে পছন্দ করবো না। ফাহমান মোহ ছিল কিন্তু সে আমার প্রেম। ‘

ঝুমুর শাওমির কথায় এবং তার ধরনে ভাবলো শাওমি বুঝি সত্যিই ফাহমানের মোহে পড়েছিল এবং সেই মোহ সে কাটিয়ে উঠেছে। কথাটা শুনে যেন তার ধরে পানি এলো। কলিজাটা শুকিয়ে গিয়েছিল তার। এখন অন্তত ভালোবাসার মানুষ এবং প্রিয় সখীর মাঝে পরে যাঁতাকলে পিষতে হবে না। কাউকে অজান্তে কষ্ট দিয়ে ফেলার ভয় পেতে হবে না।

তবে অজান্তে ঝুমুর আসলেই শাওমিকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। এই কষ্টের কোনো পরিমাপ হয় না। পরিমাপের খাতায় তার ভার অসামান্য। শাওমি তার যন্ত্রণায় ভার হয়ে যাওয়া হৃদয় নিয়ে নীরবে চোখ বুজলো। মুখে অস্বীকার করলেও সে জানে সে ফাহমান নামক সেই প্রেমিক পুরুষে আসক্ত। তার এই আসক্তি যে আর এই জন্মে মিটবার নয়।

ঝুমুর শান্তিতে নিশ্বাস ফেললো। প্রিয় সখিকে জড়িয়ে ধরে নরম গলায় বললো ‘ চিন্তা করিস না। আমি দেখছি ওই ছেলেটার খোঁজ বের করতে পারি কিনা। তুই শুধু আমাকে তার চেহারার বর্ণনা দিস। আমি দেখি কি করা যায়। ‘
ঝুমুরের কথার জবাব দিলো না শাওমি। সত্য তো এই অচেনা সেই ছেলে নামের কাল্পনিক চরিত্রকে সে মিথ্যে অজুহাতে তৈরি করেছে। তার নীরবতায় ঝুমুর ভাবলো সে হয়তো ঘুমিয়ে গেছে। তবে তার চোখের কোল বেয়ে যে অশ্রুর ঢল নেমেছে সেটা আর দেখা হলো না ঝুমুরের।

—-

ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বড় রাস্তায় উঠে আসতেই একটা সাদা রংয়ের গাড়ি এসে দাড়ালো হৈমন্তীর সামনে। ক্ষনিকের জন্য হৈমন্তী থতমত খেয়ে গেছিলো। তবে তার থতমত ভাব কাটিয়ে উঠতে উঠতে আসিফ গাড়ির উইন্ডো খুলে নিজের মুখ দর্শন করলো। চমৎকার হেসে বলল ‘ আসিফ জোহান থাকতে তার বিবি পায়ে হেঁটে বাসে করে কলেজ যাবে এটা সম্ভব না কখনোই। উঠে আসুন বিবিজান। আপনার শাশুড়ি মায়ের আদেশ আপনাকে যেন নিরাপদে ভার্সিটি পৌঁছে দি। ‘

হৈমন্তী কিয়ৎক্ষণ আপত্তি করলো তবে আসিফের যুক্তির কাছে তার এই আপত্তির জোর বেশিক্ষণ টিকলো না। অবশেষে সে বাধ্য হয়েই গাড়িতে আসিফের পাশের সিটে উঠে বসলো। সে উঠে বসতেই আসিফ এগিয়ে এলো তার দিকে। হুট করে আসিফকে এগিয়ে আসতে দেখে হৈমন্তী হকচকিয়ে গেল। আসিফের দিকে বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছে সে।

হৈমন্তীর এত বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকা দেখে আসিফ হৈমন্তীর সিট বেল্টটা লাগিয়ে দিয়ে সরে গেলো। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে ভ্রু কুচকে বললো ‘ এত বড় বড় চোখ করে দেখার কিছু নেই ম্যাডাম। আপনার সিট বেল্ট লাগিয়ে দেওয়ার জন্যই এগিয়েছিলাম আমি। আপনি কি ভাবলেন ? আমি আপনাকে কিছু করে বসবো ? ‘

আসিফের কথায় অসস্তিতে পড়ে গেলো হৈমন্তী। নিজের মাথায় নিজেরই গাট্টা মারতে ইচ্ছা করলো তার। কোন কুক্ষণে যে বড় বড় চোখে আসিফের দিকে তাকিয়েছিল কে জানে। না জানি আসিফ এখন তাকে কি ভাবছে। নিশ্চই তাকে খারাপ একটা মেয়ে ভাবছে যে শুধু শুধু উল্টাপাল্টা চিন্তা করে। কথা তো ভুল নয়। আসলেই সে উল্টাপাল্টা চিন্তা করে। তাদের বিয়ের দিনও তো মুহূর্তের জন্য তার মাথায় আসতে চেয়েছিল আসিফ তাকে বিয়ে করে তার অঙ্গ পাচার করে দিবে।

কতটা পাগল হলে এরকম একটা চিন্তা একজন মানুষের মাথায় আসে। হৈমন্তী জানে সে পাগল এবং অবুঝ। কিন্তু তবুও এই অবুঝ মনটাই বারবার মনে করিয়ে দেয় আদৌ সে এত সুখের ভাগীদার তো ? তার জীবনে তো সুখময় প্রাপ্তি খুব কমই। প্রথমে বাবাকে হারিয়েছে তারপর সামর্থ্য থাকার পরও দারিদ্রতায় দিনাতিপাত করে আজ এতদূর এসেছে।

হৈমন্তীকে নীরব দেখে আসিফ হাসতে হাসতে বললো ‘ তুমি দেখি আবারও ভাবনার জগতে হারিয়ে গেলে। কথায় কথায় কল্পনায় হারিয়ে যাওয়া কি তোমার অভ্যাস ? আমি কিন্তু এরকম উইয়ার্ড হ্যাবিটের মানুষ আগে দেখিনি। তবে সেই দিক থেকে একটা কিছু ভালো হলো। আমি প্রফেশনে টিচার। আমার বউয়ের মাথা তার ছেড়া না হলে আমি টিচার হিসেবে ব্যর্থ। টিচারদের বউয়ের মাথার তার অবশ্যই ছিড়া থাকা উচিত। ‘

আসিফের কথায় হৈমন্তী না হেসে পারল না। সে ফিক করে হেসে দিল। তাকে হাসতে দেখে আসিফের ঠোঁটের কোণেও মৃদু হাসি চলে এলো। সে ঠোঁট জোড়া প্রসারিত করে বললো ‘ এভাবেই হাসতে থাকুন বিবিজান। মন খারাপ আপনাকে মানায় না। আসিফ জোহানের ওয়াইফ সবসময় হাসি খুশি থাকুক এটাই চায় আসিফ জোহান। ‘

আসিফের কথায় হৈমন্তীর ঠোঁটের হাসি আরও প্রসারিত হলো। আসলেই তার মুখ থেকে যেন হাসি সরছেই না। এর কারণ জানেনা সে তবে হয়তো হাসি খুশি মানুষের সঙ্গ পেয়েই তার এই অবস্থা। কথায় আছে সৎ সঙ্গে স্বর্গ বাস আর অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। তেমনই ঘটেছে হৈমন্তীর ক্ষেত্রেও। হৈমন্তীর সদ্য বিবাহিত বর স্ত্রীকে খুশি করতে তাকে হাসাচ্ছে। এটা যেন তার হৈমন্তীর কাছে অনেক বড় একটা প্রাপ্তি।

চলবে…
মিফতা তিমু

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here