শ্যামাঙ্গণা-৭,০৮

0
235

শ্যামাঙ্গণা-৭,০৮

০৭
———–

ফাহমান ক্লান্ত ভঙ্গিতে হাঁটছে। তার মাথায় ঘুরছে হাজারও অজস্র ভাবনা। চোখ দুটো বরাবরের মতোই সামনে নিবদ্ধ। ফাহমানের একটা বাজে অভ্যাস আছে। হাঁটার সময় সে ডানে বাঁয়ে কোথাও তাকায় না। সোজা সামনে চোখ রেখে হাটতে থাকে। এমনকি রাস্তাও পার হয় জেব্রা ক্রসিং দিয়ে কিংবা যখন অনেক মানুষজন একসঙ্গে রাস্তা পার হয় তখন। এই বাজে অভ্যাস ছাড়ানোর চেষ্টায় সে তৎপর তবে ছাড়াতে পারছে না।

তবে আজ হঠাৎই মনে হলো অজস্র মানুষের এই ভিড়ে এক জোড়া চোখ তাকে দেখছে। মেয়েরা তাদের সিক্সথ সেন্সের কারণে এই জিনিসটা টের পেলেও ছেলেদের এমন কোনো সেন্স আছে কিনা ফাহমানের জানা নেই। তবে তার মনে হলো কেউ তো দেখছে তাকে। ফাহমান আশেপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো কে তাকে দেখছে। চোখ পড়ল তার থেকে মিটার কয়েক দূরে হাতে নুডুলসের প্লেট নিয়ে দাড়িয়ে আছে ঝুমুর।

ঝুমুরের সঙ্গে মার্জিয়াকে দেখা যাচ্ছে। মার্জিয়াকে দেখে চিনতে পারলো ফাহমান। এই মেয়েকে ও প্রায়ই হসপিটাল থেকে ফেরার সময় বাড়িতে ঢুকতে পথে বের হতে দেখেছে। তবে মেয়েটা কে সেটা জানার আগ্রহ কোনওদিন দেখায়নি ফাহমান। এমনকী আজও তার সেই আগ্রহ নেই। সে উৎসুক, হাস্যোজ্জ্বল চোখে ঝুমুরকে দেখছে। ঝুমুরের হাতে নুডুলসের প্লেট, ঠোঁটের কোণে নুডুলসের টুকরো লেগে আছে।

ফাহমানের মনে হলো ঝুমুর যেন তাকে দেখে হাসলো। কিন্তু সেই হাসিতে ঝুমুরের ঠোঁট প্রসারিত হলো না, চোখ হাসলো। ঝুমুরের অদেখা এই হাসি ফাহমান ভিতর থেকে অনুভব করলো। তবে সে বেশিক্ষন ঝুমুরের দিকে দৃষ্টি রাখলো না। ইতিমধ্যে ঝুমুরের দৃষ্টি অনুসরণ করে মার্জিয়া তাকে দেখে ফেলতে চলেছে তাই ফাহমান দ্রুত এগিয়ে গেলো বাড়ির পথে। ঝুমুরকে দেখে তার দিকে মন্ত্র মুগ্ধের মতো তাকিয়ে থেকে নিজেকে আর ঝুমুরকে বিপদে ফেলার মানেই হয় না।

—-

বাসায় ঢুকেই ফাহমান দেখলো মনোয়ারা বেগম তার মা মারিয়ামের সঙ্গে খাবার ঘরে বসে কথা বলছেন। মনোয়ারা বেগমকে দেখে ফাহমান সালাম দিল এবং কুশল বিনিময় করলো। কুশল বিনিময় শেষে ফাহমান নিজের ঘরে ঢুকে গেলো। এখন তার ফ্রেশ হয়ে কিছু খাওয়া প্রয়োজন। আজ অতিরিক্ত ব্যস্ততা থাকায় দুপুরে সেভাবে খাওয়ারই সুযোগ হয়নি। কাজেই পেট ভরে খেতে হবে।

ফ্রেশ হয়ে ভেজা চুলগুলো গামছায় মুছে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলো ফাহমান। রান্নাঘর থেকে প্লেটে ভাত, তরকারি নিয়ে নিজের ঘরের দিকে যাচ্ছিল কারণ তার মা আর মনোয়ারা বেগমের কথার মাঝে সে টেবিলে বসে খেলে অভদ্রতা দেখায়। তবে সে রুমে ঢোকার আগেই মারিয়াম তাকে ডাক দিলেন। মায়ের ডাকে ফাহমান নিজের ঘরের ভাতের প্লেটটা রেখে মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

ছেলেকে দেখে মারিয়াম বললেন ‘ বাবা ফাহমান তোর কি সময় হবে ? ‘
মায়ের কথার ঠিক মানে বুঝতে পারলো না ফাহমান। মা কোন সময়ের কথা বলছে ? সে ইতস্তত করে বললো ‘ সময় ? ‘
মারিয়াম এবার মনোয়ারা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললেন ‘ আসলে ভাবী বলছিলেন তুই যদি সময় করে সপ্তাহে চারদিন ঝুমুরকে সন্ধ্যা আটটার দিকে এক ঘন্টা ইংলিশটা পড়াতে পারিস তাহলে ভালো হতো। ‘

ঝুমুরকে সপ্তাহে চারদিন এক ঘন্টা করে পড়ানোর প্রস্তাবে ফাহমান একটু ভ্যাবাছ্যাকা খেয়ে গেলো। আমতা আমতা করে বলল ‘ আমি ? না মানে আমি তো প্রফেশনাল টিচার নই। আন্টি আপনার মনে হয় ভুল হচ্ছে। আমার থেকেও অনেক ভালো ভালো টিচার আছেন। আপনি বললে আমি ব্যবস্থা করে দিতে পারি। ‘

মনোয়ারা বেগম এবার বললেন ‘ সুযোগ থাকলে ফারুককেই বলতাম ঝুমকে পড়াতে কিন্তু ফারুক বাড়ি ফিরে রাত নয়টায়। ঝুম আবার সেই সময় পড়তে পারবে না। আমি প্রফেশনাল টিচারের কাছে দিতে পারতাম কিন্তু বাড়িতেই মেডিক্যাল স্টুডেন্ট থাকতে এর থেকে ভালো আর কার কাছে দিবো ? তাছাড়া তোমার কাছে পড়লে ঝুম তোমার কাছে থেকে গাইডেন্স নিতে পারবে। ঝুমের ইচ্ছা ও মনোবিজ্ঞান বিভাগে পড়বে। ‘

যদিও ফাহমান পড়ানোর বিষয়ে অভিজ্ঞ নয় তবুও মনোয়ারা বেগমের এহেন যুক্তির কাছে তার আর কোনো যুক্তি কাজ করলো না। শেষ পর্যন্ত মনোয়ারা বেগমের কথাতেই সপ্তাহে চারদিন ঝুমুরকে পড়াতে সে রাজি হয়ে গেল। ঝুমুরকে সে রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতি এবং শুক্রবার পড়াবে। মনোয়ারা বেগম যাওয়ার আগে বলে গেলেন ঝুম কাল থেকে পড়বে যেহেতু কাল বৃহস্পতিবার।

মনোয়ারা বেগম যাওয়ার সময় হৈমন্তীর দেখা পেলেন। মনোয়ারা বেগমকে দেখে হৈমন্তী সালাম দিয়ে টুকিটাকি কুশল বিনিময় করে বাসায় ঢুকলো। বললো ‘ বাড়িওয়ালা আন্টি হঠাৎ আমাদের বাসায় ? ‘
মেয়ের কথায় মারিয়াম রসুনের কোয়া ছাড়াতে ছাড়াতে বললেন ‘ ফাহমান যেন ঝুমুরকে পড়ায় সেই ব্যাপারেই কথা বলতে এসেছিলেন। ‘

‘ ভাইয়া ঝুমকে পড়াবে ? তারমানে এখন থেকে রোজ ওর সঙ্গে দেখাবে ? বাহ ভালই তো। দুজনে মিলে কথা বলা যাবে। ‘

হৈমন্তীর কথায় ফাহমান হৈমন্তীর মাথায় টোকা মেরে বলল ‘ ও আমার কাছে স্রেফ এক ঘণ্টার জন্য পড়তে আসবে। কথা বললে পড়বে কখন ? ‘
হৈমন্তী মাথার তালুতে হাত ঘষতে ঘষতে বললো ‘ তাই বলে মারবে। মুখে বললেন হয়না ? হাত কেন চালাও ? ‘

হৈমন্তীর কথা শুনে ফাহমান ওকে ভেংচি কেটে রুমে চলে গেলো। অন্যদিকে টেবিলে বসে নোটস চেক করছে ঝুমুর। বাইরে থেকে একটু আগেই ফিরেছে সে। মার্জিয়া ওকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আজকের মতো চলে গেছে। ঝুমুর যখন কাগজে গভীর মনযোগ দিয়ে চোখ বুলাচ্ছে তখনই দরজায় কারোর নক করার শব্দ পেলো। মুখে বললো ‘ কে ? ‘

ঝুমুরের গলার আওয়াজে ঘরের দরজা খুলে ঘরে ঢুকলেন মনোয়ারা বেগম। ঝুমুরের টেবিলের পাশে থাকা চেয়ারে এগিয়ে গিয়ে বসলেন। শান্ত কণ্ঠে সুধালেন ‘ কি পড়ছিস ? ‘
ঝুমুর জবাবে বললো ‘ গ্রামাটিক্যাল রুলস দেখছি ইংলিশের। আজ খায়রুল স্যার(হোম টিউটর) শিট দিয়েছেন। ‘

ঝুমুরের কথা শুনে মনোয়ারা বেগম বললেন ‘ তোর জন্য আরেকটা টিউটরের ব্যবস্থা করেছি। এখন থেকে সপ্তাহে চারদিন এক ঘন্টা করে ইংলিশ পড়াবে তোকে। রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতি এবং শুক্রবার পড়াবে। তোর কোনো সমস্যা আছে ? ‘

ঝুমুর ব্যস্ত গলায় নোটস দেখতে দেখতে বললো ‘ উহু, সমস্যা কিসের ? টিউটর খুঁজে পেয়েছেন ভালো কথা। তা স্যারের নাম কি ? থাকেন কোথায় ? আমাদের বাড়ি থেকে কত দূরে তার বাসা ? ‘

‘ ফাহমান পড়াবে তোকে। ‘

মনোয়ারা বেগমের কথায় খানিকটা থতমত খেয়ে গেলো ঝুমর। শুকনো ঢোক গিলে বললো ‘ ফাহমান মানে মামার বন্ধু ? উনি পড়াবে আমাকে ? কিন্তু কেন ? ‘
ঝুমুরের কথায় মনোয়ারা বেগম ভ্রু কুচকে ফেললেন। সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বললেন ‘ ফারুকের বন্ধু ছাড়া আর কোন ফাহমানকে চিনিস তুই ? আর ও পড়ালে কি সমস্যা ? তোর কি কোনো আপত্তি আছে ? ‘
মনোয়ারা বেগমের কথার জবাবে ঝুমুর আমতা আমতা করে বলল ‘ হ্যাঁ…. মানে না কিসের আপত্তি থাকবে ? কোনো আপত্তি নেই ‘

আপত্তি নেই বললেও ঝুমুরের ঘোরতর আপত্তি আছে। বললেই হলো নাকি ? সে কি করে পড়বে ফাহমানের কাছে ? যেখানে এক সেকেন্ডের জন্য ফাহমানের দিকে তাকালেই তার দিক থেকে দৃষ্টি সরানো মুশকিল হয়ে পড়ে সেখানে এক ঘণ্টা কি করে পড়বে তার কাছে ? এক ঘণ্টায় তো তার পড়া কিছুই হবে না উল্টো তাকিয়ে থেকে থেকেই সময় কেটে যাবে।

মনোয়ারা বেগম ঝুমুরের কথা শুনে কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ চোখে ঝুমুরের দিকে তাকিয়ে থেকে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। ঝুমুর মনোয়ারা বেগম প্রস্থান করতেই বড় নিশ্বাস ফেললো নিজেকে শান্ত করলো। নিজেকে অনেক কষ্ট বোঝালো তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে হলে তাকে পড়াশোনায় মন দিতে হবে। নাহলে যে গতি নেই। ঝুমুর মাথা থেকে সমস্ত অবান্তর চিন্তা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে পড়ায় মন দেওয়ার চেষ্টা করলো। খাতা খুলে কলেজের হোম ওয়ার্ক করতে বসলো।

—-

মোতালেব সাহেব দোকান থেকে বাসায় ফিরতে সময় দোতলায় এলেন। উদ্দেশ্য শশুরের জন্য আনা ওষুধগুলো হাতে হাতে দিয়ে যাবেন। দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই শুনতে পেলেন মনোয়ারা বেগম ফারুকের সঙ্গে ঝুমুরকে পড়ানোর ব্যাপারে কথা বলছেন। তাদের কথা বলতে দেখে উনি আজমাঈন সাহেবের ঘরের দিকে গেলেন।

ঝুমুরকে ফাহমান পড়াবে শুনে ফারুক তেমন উচ্চবাচ্য করলো না তবে স্রেফ বলল ফাহমানের পড়া ঝুমুরের কিরকম লাগে আগে সেটা দেখা প্রয়োজন। ঝুমুর এমনই যার তার পড়া বুঝে না। পড়াশুনায় ভালো হলে কি হবে, সবার পড়ানো সে সহজে বুঝে না। খুব কষ্টে মার্জিয়া আর খায়রুলকে পাওয়া গেছে নাহলে তারা না থাকলে হয়তো ঝুমুরের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

আজমাঈন সাহেবকে ওষুধগুলো দিয়ে এসে মোতালেব সাহেব খাবার ঘরে উপস্থিত হলেন। শাশুড়ি মনোয়ারা বেগমকে সালাম দিয়ে এবং কুশল বিনিময় করলেন। কথায় কথায় জানতে পারলেন ঝুমুরের টিউটর খুঁজে পাওয়া গেছে। উনি হেসে বললেন ‘ ধন্যবাদ আম্মা। আমি আরও ভাবছিলাম বিজ্ঞপ্তি দিবো। তা বলছিলাম স্যার মানে যিনি ঝুমকে পড়াবেন উনি কি করছেন ? কিছু জানেন ? ‘

ফারুক খাচ্ছিল তবে মোতালেব সাহেবের কথা শুনে রুই মাছের কাঁটা বাছতে বাছতে বললো ‘ আপনি ওকে চিনেন ভাইয়া। ফাহমান, আমার বন্ধু আর আপনাদের সামনের ফ্ল্যাটে যে থাকে ওই পড়াবে। ও তো আমার সাথেই ইন্টার্নশিপ করছে। ও মনোবিজ্ঞান বিভাগে আর আমি নিউরোলজি। ‘

ফাহমানকে মোতালেব সাহেব চিনেন। ও প্রায় সময় নিজের মায়ের জন্য ওষুধ মোতালেব সাহেবের ড্রাগ হাউজ থেকেই নিয়ে থাকে। তাই উনি বললেন ‘ ফাহমান, তোমার বন্ধু ? ওকে আমি চিনি তো। আমাদের দোকান থেকে প্রায়ই নিজের মায়ের জন্য ওষুধ নেয়। ও পড়াবে তাহলে ? তাহলে তো ভালই। ছেলেটা ভদ্র। আমার সঙ্গে যতবার দেখা হয় ততবার সুন্দর করে হেসে সালাম দেয় আর ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে। ‘

কথায় কথায় মনোয়ারা বেগমও বললেন ‘ আসলেই ছেলেটা অনেক ভালো। ওর বাবার ধার দেনা পরিশোধ করতে গিয়েই তো নিজেদের দোতলা বাড়িটা বিক্রি করে দিলো নাহলে ওদের অবস্থা আমাদের থেকেও ভালো ছিল। ভীষন মেধাবী ছেলে। ওদের পরিবারটাও খুব ভালো। ফাহমানের মা এত বছর অনেক কষ্টেই তার স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পদ দিয়ে ছেলেকে মেডিক্যালে পড়িয়েছে। এখন আবার মেয়েকে নিজের রোজগারের টাকা দিয়ে পড়িয়েছে। উনার দুই ছেলে মেয়েই ভীষন মেধাবী। তবুও তার কোনো অহংকার নেই। ‘

কলেজের সব পড়া গুছিয়ে রেখে ঝুমুর বইখাতা গুছিয়ে রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। এখন সে খেয়ে ঘুমোতে যাবে। কাল আবার কলেজ বন্ধ কাজেই সকাল সকাল উঠলে আরও পড়া গুছিয়ে রাখা যাবে। ঝুমুর খাবার ঘরে ঢুকতেই মনোয়ারা বেগম প্লেটে ভাত নিলেন। তবে হঠাৎই বাতাসে গন্ধ নেওয়ার ভান ধরে ঝুমুর বড় বড় চোখে বললো ‘ ফুলকপি রান্না করেছে কে ? ‘

ঝুমুরের আতঙ্কিত মুখ দেখে ফারুক দ্রুত উঠে গিয়ে ফুলকপি দিয়ে রুই মাছের তরকারিটা খাবার টেবিল থেকে সরিয়ে নিয়ে রান্নাঘরে রাখতে গেলো। ফারুককে তরকারি সরাতে দেখে ঝুমুর সস্তির নিশ্বাস ফেলে চেয়ারে বসলো। তার ফুলকপির উপস্থিতিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়াতে ফারুক যেভাবে খাবার রেখে ছুটেছে তাতে ঝুমুরের একটু খারাপই লাগলো। কিন্তু তারও বা কি করার আছে ?

এরকমটা ছোট থেকেই হয়ে আসছে। ঝুমুর কখনও ফুলকপির গন্ধ সহ্য করতে পারে না। ফুলকপির ভাজি থেকে শুরু করে তরকারি সে কোনোটাই ছুঁয়েও দেখে না। বিশেষ করে ফুলকপি তরকারির গন্ধ তার নাকে গেলে তার সর্বাঙ্গ গুলিয়ে বমি আসে। তবে কালো গোল মরিচের গুঁড়া ব্যবহার করে ফুলকপির স্যুপ করলে সে সেটা খেতে পারে কারণ তাতে ফুলকপির উটকো গন্ধ অনেকটাই কেটে যায়।

ঝুমুরের এহেন বিবমিষা দেখে মনোয়ারা বেগম কিছুই বললেন না। এসবে উনি অভ্যস্ত। হয়তো ঝুমুর বাংলাদেশে থেকে তাদের মত খাদ্যভাস গড়ে তুলেছে কিন্তু তার মাঝে এখনও কিছু বাইরের দেশের সংস্কৃতি রয়েই গেছে। কিছু কিছু সবজি আছে যেগুলো ঝুমুর খেতে পারে না। যেমন সিম,বেগুন, ধুন্দুল। তেমনই ফুলকপি তার জানের শত্রু। বাকিদের সহ্য করা গেলেও ফুলকপির গন্ধ নাকে গেলেই তার শরীর খারাপ করে।

ঝুমুর খাবার ঘরে এসে ফুলকপির উপস্থিতি টের পেয়ে মন খারাপ করে খেতে বসলো। কেন তার জানা নেই কিন্তু ফুলকপির গন্ধ নাকে গেলেই তার শরীর খারাপ করে। সঙ্গে মনটাও খারাপ হয়ে যায়।
মোতালেব সাহেব মেয়ের সঙ্গে কিছু জরুরী কথা বলে বেরিয়ে গেলেন এবং মনোয়ারা বেগম ব্যস্ত হয়ে পড়লেন নাতনিকে খাওয়ানোর কাজে।

চলবে….
মিফতা তিমু

শ্যামাঙ্গণা-৮
———–

দুরুদুরু বুকে সিড়ি দিয়ে উঠছে ঝুমুর। হাতে তার ইংলিশ টেস্ট পেপার এবং খাতাসহ আরও কিছু জরুরী জিনিস। সিঁড়ি দিয়ে উঠে ফাহমানদের দরজার সামনে দাঁড়াতেই তার চঞ্চল পা জোড়া থেমে গেলো। ভিতরে ঢোকার সাহস হচ্ছে না তার। কাল মনোয়ারা বেগমের কাছ থেকে ফাহমান তাকে পড়াবে শোনার পর থেকে সাহস করে ফাহমানের সামনে দাঁড়াতেই পারছে না। যেই মানুষটার সামনে এক মুহূর্ত থাকলেই তার দিক থেকে আর চোখ ফেরাতে পারে না তার কাছে নাকি ইংলিশ পড়বে। তাহলে আর ঝুমুরকে দেখতে হবে না। পড়া বাদ দিয়ে ফাহমানকেই দেখবে।

হাত ঘড়িতে সময় দেখে নিল ঝুমুর। আটটা বেজে অলরেডি দুই মিনিট হয়ে গেছে। ঝুমুর সময়মতো এসেছে ঠিকই কিন্তু এখন আর সাহস করে ঢুকতে পারছে না। অথচ ফাহমানের অনুপস্থিতিতে কতবার এসেছে এই ফ্ল্যাটে তার ইয়াত্তা নেই। ঝুমুর কয়েকবার সাহস করেও ব্যর্থ হলো। তাই সে বই খাতা নিয়ে যেভাবে এসেছিল সেভাবেই ফিরে যাচ্ছিল।

‘ পড়তে এসে না পড়ে কোথায় যাওয়া হচ্ছে ? ‘

ঝুমুর নেমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সিড়ির দিকে পা বাড়াতেই পিছন থেকে ফাহমানের গলা পেলো। আচমকা ফাহমানের গলা পেয়ে পিছন ফিরতে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে পা হরকে পড়ে যাচ্ছিল তবে সময়মতো ফাহমান ওর হাতটা ধরে ফেললো। ঝুমুর বুকের সাথে বই খাতা চেপে আতঙ্কিত চোখে ফাহমানের হাত আকড়ে ধরে দাড়িয়ে আছে। তার খোলা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। ফাহমান ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ঝুমুরের হাতটা সে আকড়ে না ধরলে ঝুলন্ত ঝুমুর এখনই পড়ে তার হাত পা ভাঙতো।

‘ এভাবেই তাকিয়েই থাকবে নাকি পড়াশোনা করার ইচ্ছাটা আছে ? ‘

ফাহমানের খোঁচা মারা কথায় ঝুমুরের সম্বিত ফিরল। ও ফাহমানকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। আর একটু উনিশ বিশ হলেই যে সিড়ি থেকে পড়ে হাত পা ভাঙতো টের পেতেই ঝুমুরের শরীর কাটা দিয়ে উঠলো। কিন্তু ও নিজেকে সামলে নিলো। ধীর গলায় বললো ‘ পড়তেই আসছিলাম ‘

ঝুমুরের ধীর গলা শুনে ফাহমান বললো ‘ তাই সিড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছিলে ? আই গেস আমাদের বাসা আন্ডারগ্রাউন্ডে। আমি তো এতদিন আপারগ্রাউন্ডে জানতাম। মনে হয় আমারই জানার ভুল ছিল। ‘
ফাহমানের মজা ধরতে পারলো ঝুমুর তবে কোনো কথা বাড়ালো না। বই খাতা চেপে মৌন হয়ে দাড়িয়ে রইলো। ফাহমান এবার বললো ‘ আটটা তো বেজে গেছে। তুমি বড্ড ইরেগুলার। কাল থেকে কারেক্ট আটটায় আসবে আর এখন চলো। ‘

ফাহমানের কথা শুনে ঝুমুর মাথা নাড়লো। তারপর ওরা দুজনেই ফ্ল্যাটের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো। ফ্ল্যাটে ঢুকে ঝুমুর মিস মারিয়াম এবং হৈমন্তীর গলার আওয়াজ পেল। ওদের গলার আওয়াজ ভিতরের ঘর থেকে আসছে। ঝুমুরকে ভিতরের ঘরের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফাহমান বললো ‘ আগে পড়া শেষ করো তারপর মায়ের কাছে যেও। ‘

ফাহমানের কথার দ্বিরুক্তি করলো না ঝুমুর। বই খাতা সাজিয়ে টেবিলে বসলো। ওরা বর্তমানে ফাহমানদের খাবার ঘরে আছে। খোলা মেলা জায়গায় পড়তে সুবিধা হবে বলেই এই ঘরে বসা। ফাহমান ঝুমুরের থেকে খানিকটা দূরে থাকা চেয়ার টেনে বসলো। ঝুমুরের গ্রামার বইটা বের করে চ্যাপ্টার মেলে ধরলো।

—-

ফাহমান স্ট্রাকচার বুঝিয়ে দিতে দিতে লক্ষ্য করলো ঝুমুর মাথা নিচু করে বসে আছে। ঘুণাক্ষরেও সে ফাহমানের দিকে তাকাচ্ছে না। তাতে ফাহমান বেশ অবাক হলো। ও বললো ‘ কি হয়েছে কি অঙ্গণা ? মাথা নিচু করে রাখলে পড়া কি আদৌ বুঝবে ? ‘

ঝুমুর বইয়ের পাতায় চোখ বুলাতে বুলাতে ধীর গলায় বললো ‘ পড়া বোঝার জন্য চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকার প্রয়োজন নেই। টিচারের দিকে না তাকিয়েও পড়া বোঝা যায়। ‘ শেষের কথাটা ফাহমানের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণে হাসি টেনে বললো ঝুমুর।

ঝুমুরের কথার উত্তরে আর কিছুই বললো না ফাহমান। তবে কথাটা যে তার বেশ ভালো লাগেনি সেটা ভালভাবেই বোঝা যাচ্ছে তার চেহারা দেখে। সে নিজের বিরক্তি প্রকাশ না করে আবারও কাজে মন দিল। ঝুমুরকে গ্রামাটিক্যাল রুলস বোঝানোর কাজে মন দিলো। নির্দিষ্ট সময় শেষে ঝুমুর পড়া গোছাতে গোছাতে ফাহমান ভ্রু কুঁচকে বললো ‘ আজ বাগানে এলে না কেন ? ‘

ঝুমুর বই গোছাতে গোছাতে বললো ‘ কেন রোজ বাগানে যেতে হবে এমন কোনো নিয়ম আছে কি ? ‘
ফাহমান বাঁকা হেসে বললো ‘ মিস অঙ্গণা ঝুমুর তো তাই করেন রোজ তাইনা ? বিগত পাঁচ বছর ধরে তো এমনটাই হচ্ছে। ‘

‘ রোজকার নিয়মেরও বদল ঘটে ডাক্তার সাহেব। ‘ আলতো হেসে কথাটা বলে বইখাতাগুলো টেবিলের একপাশে সরিয়ে রেখে ঝুমুর ভিতরের ঘরের দিকে ছুটলো।
ঝুমুরকে ছুটে আসতে দেখে হৈমন্তী হাস্যোজ্জ্বল মুখে বললো ‘ পড়া শেষ তোর ? ‘
‘ হু ‘ ঝুমুর মিস মারিয়ামের কাছে বসে বললো ।

মিস মারিয়াম মেশিনের সুইয়ে সুতা গাঁথার চেষ্টা করছেন কিন্তু চোখে ভালোভাবে দেখতে না পারার কারণে ঢুকাতে পারছেন না। মিস মারিয়ামের ব্যর্থ চেষ্টা দেখে ঝুমুর বললো ‘ আমি করে দেবো মণি ? ‘
‘ দিবি নাকি করে ? তাহলে বড়ই ভালো হয়। সুইয়ের ছিদ্রটাই দেখছি না। ‘ মিস মারিয়াম মোড়ার উপর থেকে সরে ঝুমুরকে বসার জায়গা করে দিলেন যাতে ঝুমুরের সুই গাঁথতে সুবিধা হয়।

ঝুমুর সুই গাঁথতে ব্যস্ত। যদিও সুই সে কখনো গাঁথে নি তবে মনোয়ারা বেগমকে দেখেছে করতে। ঝুমুর আবার ফাস্ট লার্নার। কোনোকিছু মন দিয়ে দেখলে সে সেটা সহজেই শিখে যায়। কাজেই সুইয়ে সুতোটা ঢোকাতে তার বেশি বেগ পেতে হলো না।
ঝুমূরকে এত দ্রুত সুতা ঢুকিয়ে ফেলতে দেখে হৈমন্তী বললো ‘ কত তাড়াতাড়ি করে ফেললি দেখ। আর আমি আধা ঘণ্টা চেষ্টা করেও পারলাম না। ‘

‘ কোনো কাজ ঠিক মতো করতে হলে ধৈর্য্য ধরে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যেতে হয়। তুই চঞ্চল, ধৈর্য্য ধরতে পারিস না তাই সুতা ঢুকাতে পারিস নী। ঝুমুর শান্ত, যা করে ধৈর্য্য ধরে করে। তাই ওর কোনো কাজ করতে এত কষ্ট করতে হয় না। ‘ মেশিনে হাত ঘুরাতে ঘুরাতে বললেন মিস মারিয়াম।

মায়ের কথায় হাসলো হৈমন্তী। বললো ‘ তোর বিয়ে হলে তো তোর জামাইয়ের কপাল খুলে যাবে। এমন সবজান্তা বউ পেলে তো কপাল সোনায় সোহাগা। আমার ভাবতেই কেমন লাগছে ‘

হৈমন্তীর কথায় প্রতিক্রিয়া জানানোর সুযোগ পেলো না ঝুমুর। তার আগেই মিস মারিয়াম বললেন ‘ ওর বিয়ে হলে কি হবে তার কথা পরে দেখা যাবে। আগে তোর বিয়ের ব্যাপারটা দেখি। কাল পাত্রপক্ষ আসবে। ‘

মিস মারিয়ামের কথায় হৈমন্তীর মুখটা ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেল। আবারও পাত্রপক্ষ নামক বিড়ম্বনার মাঝে পড়ে হাজারভাবে অপমানিত হতে হবে ? এত অপমানিত হওয়ার থাকলে কি প্রয়োজন এখনই বিয়ে দেওয়ার ? জীবন তো পেরিয়ে যাচ্ছে না। পড়াশোনা শেষ হোক, চাকরি করা হোক তারপর নাহয় বিয়ে দিবে। কিন্তু না সেই কথা শুনলে তো। এমনিতেই হৈমন্তীর গায়ের রংটা শ্যামলা গোছের।

গায়ের রং শ্যামলা হওয়ার কারণে আজ পর্যন্ত সব পাত্রের কাছেই সে রিজেক্ট হয়েছে বিনা বাক্যব্যয়ে। তার রিজেক্ট হওয়ার আত্ম কথন সংখ্যায় হয়তো কুড়ি কবেই ছাড়িয়েছে। তার জন্য বিয়ের প্রস্তাব তো ক্লাস নাইনে থাকাকালীন সময়ে থেকেই আসছে কিন্তু পাত্রপক্ষ তার গায়ের রং দেখার পর আর এগিয়ে আসেনা। এমনিতে ভালো ব্যবহার আর উপকারী মনোভাবের জন্য এলাকায় সে বেশ প্রশংসিত। কিন্তু গায়ের রংয়ের কারণেই বিয়েটা আর ঠিক হয়না।

‘ আবারও পাত্রপক্ষ আসবে তারপর আমার গায়ের রং ময়লা বলে চলে যাবে। আর কত সহ্য করবো মা ? আর এসব ভালো লাগে না। ‘ বিরক্ত ভরা কণ্ঠে বললো হৈমন্তী।

‘ এবার ভদ্রঘর থেকে আসবে ছেলে। সরকারি কলেজে চাকরি করে, বাড়ি গাড়িও আছে। ভদ্র ঘরের ছেলে। ছেলের মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। তোর গায়ের রংয়ের কথাও জানে ওরা। উনারা সব শুনেই বলেছেন যে কোনো আপত্তি নেই। ‘ সেলাই করতে করতে বললেন মিস মারিয়াম।

মায়ের কথায় হৈমন্তী দমে গেল। ভাবলো ওর গায়ের রঙের কথা শুনেও পাত্র রাজি!! কিন্তু পাত্র রাজি হলে কি হবে ? সে তো আর রাজি নয়। যেভাবেই হোক বিয়েটা হওয়া থেকে আটকাতে হবে। প্রয়োজনে পাত্রকে সুন্দর করে বুঝাবে আর যদি কাজে না দেয় তো আঙ্গুল বাঁকা করবে। তবুও এখনই বিয়ে সে কিছুতেই করবে না।

হৈমন্তী মনে মনে এক কঠিন অপ্রতিরোধ্য পরিকল্পনা সেটে নিলো। এখন এই পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোবে যাতে পাত্র তাকে কিছুতেই বিয়ে করতে রাজি নাহয়। এই বিয়ে আটকাতে তাকে যা করতে হবে সে তাই করবে। হৈমন্তী মনে মনে সব ঘটনা সাজিয়ে মুখে মেকি হাসি ফুটিয়ে তুলে মাথা নেড়ে সায় দিল।

—-

রান্নাঘরে দাড়িয়ে চিকেন পিস মিক্সারে ব্ল্যান্ড করছে ঝুমুর। প্রায় এক কেজির মতো মাংস ব্ল্যাণ্ড করতে হবে। এগুলো দিয়ে সে সসেজ বানাবে। মাংস ব্ল্যান্ড করে তার সাথে প্রয়োজনীয় উপাদান মিশিয়ে ঝুমুর যখন খাবার টেবিলে বসে সসেজ তৈরি করছে তখন ফারুক নিজের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসে ঝুমুরের সামনের চেয়ারে বসলো। জিজ্ঞেস করলো ‘ ফাহমানের পড়া কেমন লাগলো ? কিছু বুঝেছিস ? ‘

ঝুমুর কাজ করতে করতেই বললো ‘ বুঝেছি। তোমার তো পাত্তাই পাওয়া যায় না। সকাল দশটায় বের হয়ে রাতের নয়টা দশটায় আসো। ততক্ষণে আমি আবার ঘুমিয়ে পড়ি। ‘

‘ হেক্টিক ডে যাচ্ছে আমার। তোর কি অবস্থা ? সামনে তো মডেল টেস্ট। প্রিপারেশন কেমন ? ‘

‘ মোটামুটি ভালোই প্রিপারেশন। এখন শুধু পরীক্ষার হলে প্রশ্ন দেখে ঘাবড়ে না গেলেই হলো। ‘

‘ অত ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বোর্ড পরীক্ষা দিতে যা মজা। তুই তো জানিস। এবার তুই ফোর্থ টাইম দিচ্ছিস বোর্ড পরীক্ষা তাইনা ? পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি আর এবার এইচএসসি। ‘

ফারুকের কথা শুনে ঝুমুর মাথা নেড়ে বললো ‘ হুম ‘। ঝুমুরকে সসেজ বানাতে দেখে বললো ‘ বাহ্ সসেজ বানাচ্ছিস ? ভালোই তো। কতক্ষন লাগবে হতে ? আজকে খাওয়া যাবে না ? ‘
ঝুমুর বললো ‘ আধা ঘণ্টায় হয়ে যাবে। তারপর বয়েল করে ঠান্ডা করতে যতক্ষণ লাগে আর কি। ‘

ফারুক আর ঝুমুরের কথার মাঝেই মনোয়ারা বেগম ফোন কানে নিয়ে খাবার ঘরে এসে দাড়ালেন। ফোনে মালিনী বেগমকে কিছু একটার ব্যাপারে আশ্বস্ত করে ফোন রাখলেন। ঝুমুরকে উদ্দেশ্য করে বললেন ‘ ঝুমুর শাওমি আসছে। ‘

শাওমির আসার খবরে ঝুমুরের চোখে মুখে আনন্দ উপচে পড়লো। ও বড় বড় চোখ করে হেসে বললো ‘ শাওমি ? মানে ছোট দাদাভাইয়ের মেয়ে শাওমি ? ‘
নাতনির কথার পৃষ্ঠে মনোয়ারা বেগম জবাব দিলেন ‘ হ্যাঁ হ্যাঁ, ওই শাওমি। ও ছাড়া আর কোন শাওমিকে চিনিস তুই ? ‘

মনোয়ারা বেগমের কথা শুনে ঝুমুর আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো ‘ কবে আসছে ও ? ‘
মনোয়ারা বেগম বললেন ‘ পরশুই আসছে ও। আপা (মালিনী বেগম) বললেন ওকে এয়ারপোর্ট থেকে আনতে যেতে হবে। ফারুক তুই কি ফ্রি আছিস পরশু দুপুরের দিকে ? ‘

‘ পরশু দুপুরের দিকে তাইনা ? উম… পরশু আমার অফ ডে। কিন্তু পরশু অফ থাকায় কাল শুক্রবারে অফ নেই। পরশু আমি আর ঝুমুর তাহলে যাই। ‘ ফারুক ওর সিডিউল চেক করে বললো।

ছেলের কথায় আশ্বস্ত হয়ে মনোয়ারা বেগম ঝুমুরকে বললেন ‘ তাহলে তোর রুমটা গুছিয়ে নে ঝুমুর। শাওমিকে চিনিস তো। এখানে এলে তোর ঘরেই থাকে কাজেই ও তিন তলায় থাকবে এই আশা করা যায় না। ‘
মনোয়ারা বেগমের কথায় ঝুমুর মাথা নেড়ে বললো সে করে নিবে। ঝুমুরের উত্তর পেয়ে মনোয়ারা বেগম ফোন হাতে ধীর পেয়ে নিজের ঘরের দিকে গেলেন। ঝুমুর আজ অনেক খুশি। আজ অনেকদিন পর আবার শাওমিকে দেখবে। শেষ দেখেছিল দুই বছর আগে। বান্ধবী হিসেবে কাছের মানুষজনের মধ্যে শাওমি তার দারুন বান্ধবী। একটু পাগলাটে,উচ্ছল মেয়ে সে।

শাওমি হলো ঝুমুরের দাদা মান্নান সাহেবের ভাই মজিব সাহেবের ছেলের ঘরের নাতনী। শাওমির বাবা হাফ কোরিয়ান হলেও মা ইয়াং মী ফুল কোরিয়ান তাই শাওমির চেহারায় কোরিয়ান ভাব প্রকট। তাকে দেখতে পুরো দস্তর কোরিয়ান মনে হয়। তবে শ্যামলা দেহী ঝুমুরের সঙ্গে তার দারুন সখ্যতা কারণ ঝুমুর যখন কোরিয়ায় স্কুলে পড়তো তখন শাওমির সঙ্গেই পড়তো সে। তাদের মধ্যে এতটাই সুন্দর বন্ডিং ছিল যে আট বছর বয়সে বাংলাদেশে আসার পরও তাদের সেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি।

শাওমি বন্ধুত্বের খাতিরেই ঝুমুরকে দেখতে প্রতি দুই বছর পর পর বাংলাদেশে আসে। যদিও বাংলাদেশে এসে গরমে থাকতে তার কষ্ট হয় কিন্তু ঝুমুরের ঘরে সারাদিন থাকার দরুন এসির নিচেই থাকে সে। শাওমির সঙ্গে সঙ্গে তার বাড়ির লোকদের সঙ্গেও ঝুমুর এবং তার পরিবারের সুন্দর যোগাযোগ আছে।

শাওমির সঙ্গে ঝুমুরের বন্ধুত্বের শুরু থেকেই দুজনে একে অপর বলতে অন্ত প্রাণ। তাই এখানে এসে থেকে শাওমি বাংলাদেশে আসা ছাড়াও প্রতি সপ্তাহে উইকেন্ড ডেগুলোতে তাদের নিয়ম করে ভিডিও কলে কথা হয়। আগে অবশ্য এসব ছিল না কিন্তু বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে তারাও এক সপ্তাহ পরপর একে অপরকে দেখতে পায়।

চলবে….
মিফতা তিমু

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here