শ্যামাঙ্গণা-৯,১০

0
229

শ্যামাঙ্গণা-৯,১০

০৯
———–

ভোরের স্নিগ্ধ সকাল। ফাহমান দ্রুত পায়ে সিড়ি দিয়ে উঠলো। ভোর এখন পাঁচটা। আজ ঠিক করলো একটু আগে আগেই যাবে। কিন্তু ছাদের কাছে আসতেই কারোর রিনরিনে কণ্ঠ কানে এলো। কেউ ছাদে দাড়িয়ে গান গাইছে। ফাহমান নিঃশব্দে ছাদে উঠলো। ছাদে ঢুকে দেখল ঝুমুর দাড়িয়ে ছাদের রেলিং ঘেঁষে। পাতলা চুলগুলো ছাড়া। পড়নে মেরুন রঙের থ্রী পিস। সে তার রিনরিনে কণ্ঠে গাইছে,

Jaane Woh Kaise Log The Jinke Pyaar Ko Pyaar Mila

Humne To Jab Kaliyan Mangin To Kaanton Ka Haar Mila

Khushion Ki Manzil Dhundi To Gham Ki Gard Mili

Chahat Ke Naghme Chahe To Sard Aanheen Mili

Dil Ke Bojh Ko Dhundlaa Kar Gya Jo Ghumkhawar Mila

Hum Ne To Jab Kaliyan Mangi Kaanton Ka Haar Mila

ঝুমুরের গানের গলা শুনে অবাক ফাহমান। এতদিন মেডিক্যাল কলেজের জন্য হোস্টেলে থাকলেও মাঝেসাঝে যখন ছুটিতে বাড়ি এসেছে তখনও দেখেছে ঝুমুর কেবলই বাগানে খালি পায়ে বই হাতে হাঁটছে। ঝুমুরের একটা অভ্যাস হলো ভোরে সে বাগানে খালি পায়ে হাটে। এটা তার পুরনো অভ্যাস।

ঝুমুরকে ভোরবেলা কখনও ছাদে দেখেনি ফাহমান। ঝুমুর বিকেলে ছাদে আসে এটা সে জানতো কিন্তু আজ কি মনে করে ভোরেই ছাদে এলো কে জানে। তাছাড়া ঝুমুরের রিনরিনে কণ্ঠে আগে কখনো গান শোনারও সৌভাগ্য হয়নি।

ফাহমানের ইচ্ছা করলো ঝুমুরের ওই মিষ্টি গলায় আরও গান শুনতে কিন্তু ও ঝুমুরকে এই কয়দিনে যতটা চিনেছে তাতে ঝুমুর একদম অন্তর্মুখী ধরনের মেয়ে। গান গাইতে বললে গাইবে তো নাই উল্টো অসস্তিতে পড়বে। তাই ফাহমান আর প্রেয়সীর অসস্তির কারণ হলো না। পিছিয়ে গিয়ে কয়েক সিড়ি নেমে হাতে থাকা চাবির রিং দিয়ে সিড়ির রেলিংয়ে টুং টাং করে আওয়াজ করলো যাতে ঝুমুর ভাবে সে সবেমাত্র ছাদে আসছে।

আওয়াজ করে ধীর পায়ে ছাদে উঠে দাড়িয়ে ঝুমুরের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে অবাক হওয়ার ভাব ধরে বললো ‘ মিস অঙ্গণা ঝুমুর হঠাৎ এই গরীবের জীর্ণ শিবিরে যে ? ‘
ফাহমানের কথা শুনে ঝুমুর ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে বললো ‘ কেন ছাদে বুঝি শুধু ডাক্তার সাহেবের আসার অধিকার আছে ? তার শ্যামাঙ্গণার কি অধিকার নেই ? ‘

ঝুমুরের কথা শুনে ফাহমান হাসলো। এগিয়ে গিয়ে ঝুমুরের থেকে খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে রেলিংয়ের গায়ে হেলান দিয়ে বললো ‘ আছে বৈকি। দিনশেষে বাড়িটা তো আপনারই। তবে আমি কিন্তু চমকে গেছি। হুট করে বাগানের রাজকুমারীকে তার রাজ্য ছেড়ে ছাদে দেখবো আশা করিনি ‘
‘ কখনও কখনও রাজকুমারের দেখা পেতে হলে রাজকুমারীকেও তার রাজ্য ছেড়ে আসতে হয় ডাক্তার সাহেব। ‘ ঝুমুর সামনের দিকে তাকিয়ে বললো।

ঝুমুরের কথায় ফাহমান আবারও হাসলো। অপূর্ব ডাটিয়াল সেই হাসি। ঝুমুর মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো সেই দিকে। মনে হলো এই সুন্দর হাসির কারণ একমাত্র সে ভাবলেও বুকটা প্রশান্তিতে ভরে যায়। ফাহমান ওকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল ‘ কি দেখছো ? ‘

ঝুমুর এক কথায় বললো ‘ আপনাকে ‘
‘ আমাকে দেখার আলাদা কোনো কারণ ? রোজই তো দেখো ‘ ফাহমান সামনের দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো।

‘ কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের দিকে তাকিয়ে থাকার জন্য কোনো কারণের প্রয়োজন পড়ে না। মন চায় তাদের শুধু দেখেই যেতে। তাদের এক মনে দেখার সময়টা কারণ খুঁজে বের করে নষ্ট করার প্রয়োজন কি ? ‘ ঝুমুর ফাহমানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো।
ঝুমুরের প্রশ্ন শুনে ফাহমান জবাব দিলো না। মৌন রইলো সে।

কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে ঝুমুরকে আড়চোখে দেখলো ফাহমান। ঝুমুর ঠোঁটের কোণে হাসি মেখে প্রকৃতি উপভোগ করছে। ঝুমুরকে হাসতে দেখে ফাহমান বললো ‘ মনে হচ্ছে আপনার মন মেজাজ ফুরফুরে। এত ভালো মেজাজের কারণ কি ডাক্তার সাহেবা ? ‘

ফাহমানের কথা শুনে ঝুমুর চট জলদি ওর দিকে ফিরল। অবাক হয়ে বললো ‘ ডাক্তার সাহেবা ? ‘
‘ আপনি তো ডাক্তার সাহেবাই। আমি ডাক্তার সাহেব হলে আপনি তো এই ডাক্তার সাহেবের মনের ডাক্তার। কাজেই আপনিও ডাক্তার সাহেবা। ‘

ফাহমানের যুক্তি শুনে হাসলো ঝুমুর। ফুরফুরে মেজাজে ভোরের ঠান্ডা বাতাসে চুল উড়িয়ে বললো ‘ আজ শাওমি আসছে। অনেকদিন পর দেখা হবে ওর সাথে। প্রায় দুই বছর পর। ‘
‘ শাওমি ? ‘ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করলো ফাহমান।

ঝুমুর ওর কথা শুনে কপালে হাত রেখে বললো ‘ ওই দেখুন আপনাকে তো বলিই নি শাওমি কে। আসলে শাওমি হলো আমার দাদাভাইয়ের ছোট ভাইয়ের ছেলের ঘরের নাতনী। ও আমারই সমবয়সী। আমরা আট বছর পর্যন্ত একসঙ্গে ছিলাম তারপর তো এখানেই চলে এলাম। ‘
ঝুমুরের কথা শুনে ফাহমান বললো ‘ ওহ… তুমি তাহলে আট বছর বয়স পর্যন্ত কোরিয়া ছিলে তাইতো ?আমি দেখেছি আঙ্কেল পুরো দস্তুর কোরিয়ান দেখতে কিন্তু তোমার মধ্যে অনেকটাই বাঙালিয়ানা ভাব আছে। অথচ তোমার ছোট বোনকে দেখলে পুরোই কোরিয়ান মনে হয়। ‘

‘ আমি মায়ের চেহারা পেয়েছি। মা আমার মতই অনেকটা দেখতেছিলো তবে সে ছিল ফর্সা। নিঝুম আবার বাবার চেহারা আর মায়ের গায়ের রং পেয়েছে। ফেয়ার এন্ড এভারগ্রীন। ‘ ঝুমুর প্রতি উত্তরে বললো।

কথা বলতে বলতে ছয়টা বেজে গেলে ঝুমুর ফাহমানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ছাদ থেকে নেমে পড়লো। আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিন তাই এই দিনে মনোয়ারা বেগম ঝুমুরকে সঙ্গে করে ভোরবেলা হাঁটতে বের হন। বাসার দরজা খুলে ঝুমুর ঢুকে দেখল মনোয়ারা বেগম খাবার ঘরে চেয়ারে বসে পানি খাচ্ছেন। তার মুখটা ফোলা। হয়তো সবে ঘুম থেকে উঠেছেন বলেই।

মনোয়ারা বেগমকে দেখে ঝুমুর তৈরি হতে গেলো। রেডি হয়ে সে বসার ঘরে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর মনোয়ারা বেগমও বোরখা পড়ে এলেন। তারপর দুই নানি নাতনী বেরিয়ে পড়লো ভোরের স্নিগ্ধ সকাল উপভোগ করতে। মনোয়ারা বেগম এবং ঝুমুর মসজিদের পিছন দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে অনেকটাই এগিয়ে গেলেন। কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পর ঝুমুর দেখলো নতুন একটা নার্সারি খোলা হয়েছে এইদিকটায়।

নতুন নার্সারি দেখে মনোয়ারা বেগম ঝুমুরকে নিয়ে নার্সারিতে ঢুকলেন। ঝুমুর ঘুরে ফিরে পুরো নার্সারি দেখছে। তার চোখের সামনে সাজানো অনেক ধরনের নয়নাভিরাম ফুলের চারাগাছ। জবা, শিউলি, কৃষ্ণচূড়া, কাঠগোলাপ, বেলিসহ আরও অনেকগুলো ফুলের গাছ। হঠাৎ একটা চারায় ঝুমুরের চোখ পড়ে গেলো। সেই চারার ফুলগুলো কতকটা হলুদ রংয়ের। হলুদ রং ঝুমুরের পছন্দ নয় তবুও ফুলটার গায়ে এই রং যেন অন্যরকম সুন্দর।

ঝুমুর নার্সারির লোককে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো ওই ফুলের চারা হলো অলকানন্দা ফুলের। ঝুমুর ঠিক করলো এই ফুল সে কিনবে। মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে কথা বলে সে ঠিক করলো তাফিমকে পাঠিয়ে গাছের চারা নেওয়ার ব্যবস্থা করবে।

ধানের আইলের উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে ঝুমুর আর মনোয়ারা বেগম। বাড়ি ফিরতে সময় এই পথ দিয়েই যেতে হয়। ধানের আইল পার করে উনারা বড় রাস্তায় উঠে এলেন। মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে বলতে হাটছে ঝুমুর। হঠাৎ মনোয়ারা বেগমের চোখে মুখে হাসি খেলে গেলো। উনি বললেন ‘ আরে ফাহমান যে ‘

মনোয়ারা বেগমের কথায় ঝুমুর চমকে উঠে সামনে তাকালো। এতক্ষণ কথা বলতে ব্যস্ত থাকায় খেয়াল করেনি ফাহমান কখন তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। ফাহমান ওকে দেখে বললো ‘ আসসালামু আলাইকুম আন্টি, ঝুমুর। ‘

ফাহমানকে দেখে মুখ নামিয়ে নিলো ঝুমুর। মুখ নামিয়েই সে বললো ‘ ওয়ালাইকুম আসসালাম ‘।
মনোয়ারা বেগম ফাহমানকে বললেন ‘ ওয়ালাইকুম আসসালাম। তুমিও কি ছুটি পেয়ে হাঁটতে বেরিয়েছিলে ? ‘
মনোয়ারা বেগমের কথা শুনে ফাহমান মাথা নেড়ে সায় দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল ‘ ধরে নিন তাই। আসলে মনে হলো ভোর সকালে ঘর ছেড়ে বের নাহলে পুষ্পকে দেখা হবে না। ‘ শেষের কথাগুলো ঝুমুরের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলল ফাহমান।

ফাহমানের কথা শুনে ঝুমুর তার নত মস্তক আরও নত করলো। তবে ওর মাথা নামিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটা মনোয়ারা বেগম লক্ষ্য করলেন না। উনি বললেন ‘ ফুলের কথা বলছো ?আমাদের ঝুমুর তো ফুলের পাগল। ওর বাগান দেখেছো নাকি ? ও শখ করে বাগান করেছে। বাগানে অনেক ধরনের ফুলের গাছ আর ফলের গাছ লাগিয়েছে। তুমি চাইলে দেখতে পারো। ‘

মনোয়ারা বেগমের কথায় ফাহমান মাথা নেড়ে সায় দিল। হাঁটতে হাঁটতে ওরা তখন ঝুমুরদের বাড়ির কাছে চলে এসেছে। ফাহমানের সায় পেয়ে মনোয়ারা বেগম আর বিল্ডিংয়ে ঢুকলেন না। ফাহমানকে দেখানোর জন্য সোজা ঝুমুরের বাগানের দিকে গেলেন। বাগানের চারপাশে সুন্দর করে টিন দিয়ে বেড়া দেওয়া সঙ্গে দরজা লাগানো যাতে কোনো মানুষ কিংবা কুকুর বিড়াল ঢুকতে না পারে।

বাগানে ঢুকতেই ফাহমানের শরীর দিয়ে যেন শীতল হাওয়া বয়ে গেলো। বাগানের দিকটা ফুলে ফুলে সুরভিত। বাগানে জুড়ে লেবু ফলের গন্ধ। বাগানের একদিকে শিউলি গাছ আছে যার সমস্ত সত্তা জুড়ে ঝলমলে রোদ্দুর। হয়তো বসন্তকাল বলেই গাছে এখনও কুড়ি জন্মায়নি। শিউলি তো শরতের ফুল।

বাগানের আরেক দিকে মাঝারি আকারের আম গাছ এবং তার কোনাকুনি আরেক দিকে ঝুমুরদের বাড়ির সমান উচ্চতার কাঠাল গাছ। কাঠাল গাছের পাশেই একটু দূরে লেবু গাছ। ফাহমান এবার বুঝল কেন সমস্ত বাড়ি জুড়ে লেবু ফলের গন্ধ আর কেনই বা ঝুমুরের কাছে গেলে সে লেবুর গন্ধ পায়। বাগানের রাজকুমারী তবে তার বাগানের লেবুর ঘ্রাণ রোজ গায়ে মাখে।

বাগানের আরেক কোণায় কৃষ্ণচূড়া গাছ তার মাথা সসম্মানে আকাশের দিকে তুলে দাড়িয়ে আছে। ফুলে ফুলে ভরে গেছে তার ডাল। সেই ডাল থেকেই অনেক ফুল ঝড়ে পড়েছে মাটিতে। ঝুমুর এগিয়ে গেলো সেই দিকে। সে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচ থেকে ফুল তুলছে।
ঝুমুরের খোলা চুলে সকালের রোদ্দুর আছড়ে পড়ছে। ঝুমুরের চুলে আছড়ে পড়ে রোদ যেন তার সোনালী আভা ধারণ করেছে, কেমন ঝলমলে লাগছে। মোহময়ী ঝুমুরের দিক থেকে চোখ সরিয়ে ফাহমান অন্যদিকে চোখ রাখলো।

কৃষ্ণচূড়া গাছের পাশে সামান্য দূরত্ব বজায় রেখেই আরেকটা গাছ সসম্মানে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু এই গাছের নাম জানেনা ফাহমান। আগে দেখেছে দেখেছে মনে হচ্ছে কিন্তু কোন গাছ সেটা মনে পড়ছে না। ও গাছটার দিকে আঙুল তাক করে জিজ্ঞেস করলো ‘ এটা কোন গাছ ? ‘

ফাহমানের প্রশ্ন শুনে ঝুমুর আর মনোয়ারা বেগম দুজনেই গাছটার দিকে নজর দিলেন। ঝুমুর ফুল তুলতে তুলতেই বললো ‘ কদম গাছ। বর্ষায় ফোটে বলে এখনও কুড়ি জন্মায়নি। দুই তিন মাস পড়েই কুড়ি উঠবে। ‘

কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলো মনোয়ারা বেগমের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ঝুমুর গেলো বেলী ফুল গাছের কাছে। গাছটা ঝুমুর থেকে একটু লম্বা। তবে পা উঠিয়ে ঝুমুর হাতের নাগালে পায়। ঝুমুর উচুঁ হয়ে বেলী ফুলের সদ্য জন্মানো কুড়িগুলো তুললো। এগুলো দিয়ে সে আজ মালা গাঁথবে তারপর সেই মালা হৈমন্তীকে দিবে। প্রিয় সখির জন্য নিজের বাগান থেকে ফুল নিয়ে মালা তো গাঁথাই যায়।

‘ আচ্ছা বাগানে এত ফুল আছে অথচ গোলাপ ফুল নেই কেন ? ‘

ফাহমানের কথার জবাবে ঝুমুর উত্তর দিলো না তবে মনোয়ারা বেগম বললেন ‘ উচিত প্রশ্ন করেছো তবে উত্তর আমার জানা নেই। কথাটা আগে এভাবে ভেবে দেখিনি। ‘

ঝুমুর আপনমনে ফুল তুলছে। জগতের আর কোনদিকে তার নজর নেই। অথচ ফাহমান এক দৃষ্টে তাকেই দেখে যাচ্ছে। মনোয়ারা বেগম ঘুরে ফিরে বাগান পর্যবেক্ষণ করছেন। আজ অনেকদিন পর বাগানে এসেছেন। সময়ের স্বল্পতা এবং ব্যস্ততায় আসা হয়না। এছাড়াও বাগানের চাবি ঝুমুরের কাছে থাকে যেটা ঝুমুর কাউকে দেয় না। সে ব্যতীত এই বাগানে আসা সম্ভব না। আসতে হলে তাকে সঙ্গে করেই আসতে হবে।

ফুল তুলে বাগানের দরজা লাগিয়ে ঝুমুর,মনোয়ারা বেগম আর ফাহমান বিল্ডিংয়ে ঢুকলো। ফাহমান আগে আগে তিন তলায় উঠে গেলো। ঝুমুর এবং মনোয়ারা বেগম ঢুকলেন দোতলায়। বাসায় ঢুকেই আঞ্জুম আরার গলা পেলো তারা। ঝুমুর এগিয়ে গেলো কাহিনী কি দেখার জন্য। আঞ্জুম আরার কথা আর তাফিমের চেঁচামেচি শুনে যা বুঝলো খায়রুল স্যার এসেছিলেন নিঝুম আর তাফিমকে পড়াতে। নিঝুম কয়েকবার দরজায় নক করেছে কিন্তু কেউ শুনেনি বলে সে নিজেই তিন তলায় খায়রুল স্যারের কাছে পড়ে ফেলেছে এবং খায়রুল স্যার তাফিমকে না পড়িয়ে চলেও গেছে।

‘ ছোট আপি তো হোয়াটস অ্যাপে আম্মুকে ফোনও দিতে পারতো। ‘

তাফিম চেঁচিয়ে কথাটা বলতে বলতে পিছন ফিরে ঝুমুরকে দেখে চুপ করে গেলো। ঘটনা বুঝতে পেরে ঝুমুর শান্ত চোখে তাকিয়ে রইলো। ওর শান্ত দৃষ্টি দেখে আঞ্জুম আরাও কিছু বললেন না। বস্তুত উনি ঝুমুরকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসলেও ঝুমুরের ঠান্ডা, শীতল চাহনী দেখলে আর কিছু বলতে পারেন না।

‘ নিঝুম যে দরজায় নক করে তোমাকে ডাকার চেষ্টা করেছে এটাই বেশি। ও উপস্থিত বুদ্ধি সহজে কাজে লাগাতে পারে না এটা সবার জানা। পড়া যেহেতু তোমার তাই তোমার সচেতন থাকা উচিত ছিল। নেক্সট টাইম ভেবেচিন্তে কথা বলবে। ‘

কথাগুলো বলে ঝুমুর ঘরে ঢুকে ঘরের দরজা লাগিয়ে দিল। খায়রুল স্যার তাকেসহ নিঝুম এবং তাফিমকেও পড়ান। তাফিম এবার ক্লাস সেভেনে এবং নিঝুম এইটে। ঝুমুরের ব্যস্ততা অনুযায়ী ওকে পড়ালেও নিঝুম এবং তাফিমকে তিনি একদিন পরপর পড়ান।

চলবে….
মিফতা তিমু

শ্যামাঙ্গণা-১০
————

সুই সুতা এবং বেলি ফুলের কুঁড়ি নিয়ে বসেছে ঝুমুর। এখন সে মালা গাঁথবে। তারপর মালাটা পড়িয়ে দিবে প্রাণপ্রিয় সখীর চুলে। কি সুন্দরই না লাগবে তার সখীকে। ঝুমুর ভাবতে ভাবতে একটা একটা করে কুড়ি গাঁথলো সুতোয়। একসময় মালা বানানো শেষ হলে সুতা ফিক্স করে উঠে পড়ল জায়গা ছেড়ে। মালাটা নিয়ে মনোয়ারা বেগমকে জানিয়ে তিন তলায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো সে।

এখন মধ্য দুপুর। দোতলায় সকলেই ঘুমোচ্ছে। মনোয়ারা বেগম কোরআন শরীফ পড়ছেন। দোতলা ঘুমিয়ে থাকলেও তিন তলায় ফাহমানদের বাড়ি সম্পূর্ণ রূপে জাগ্রত। মিস মারিয়াম একা হাতে পেস্ট্রি থেকে শুরু করে অনেক ধরনের নাস্তার আইটেম তৈরি করেছেন। কাজের ফাঁকে হৈমন্তীও উনাকে সাহায্য করলেন। তবে মেয়েকে তিনি বেশি কাজ করতে দেননি কারণ মেয়েকে তো একটু পর ছেলে পক্ষ দেখতে আসবে।

ফাহমান ঘরেই ছিলো তাই কলিং বেল বাজার শব্দে দরজা খুলতে বেরিয়ে এলো। দরজা খুলে দেখলো এলোকেশে ঝুমুর দাড়িয়ে আছে। ভর দুপুরে ঝুমুরকে দেখলে একটু ধাক্কাই খেলো। দ্রুত নিজেকে সামলে জিজ্ঞেস করলো ‘ তুমি এখানে ?না…মানে হঠাৎ ? তুমি তো এই সময় আসো না। ‘

ঝুমুর হাসলো ফাহমানের কথায়। মানুষটা এখনও সেদিনের কথা মনে করে বসে আছে। ঝুমুর বললো ‘ আজকে হৈমন্তী আপুকে ছেলে দেখতে আসবে। তাই ভাবলাম ওকে সাজিয়ে দেই। ‘

ঝুমুরের কথা শুনে হতবাক ফাহমান। ওর বোনকে দেখতে আসবে আর ওই জানেনা। ঝুমুরকে ঘরে ঢুকিয়ে গেলো মিস মারিয়ামের ঘরে। মাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো হুট করেই আজ পাত্রপক্ষ দেখতে আসার ব্যাপারটা কাল রাতেই ঠিক হয়েছে তাই সুযোগের অভাবে আর জানাতে পারেননি।

—-

হৈমন্তীর শাড়ির কুচি ধরে দিচ্ছে ঝুমুর। কুচি ধরে দেওয়াতে তার জুড়ি মেলা ভার। হৈমন্তীর পরনে কালোর মধ্যে নীল রংয়ের হালকা কাজ করা শাড়ি। শাড়ির আঁচল ঘেঁষে টার্সেলগুলোতে লেগে থাকা মিররগুলোতে বিকেলের ডুবন্ত সূর্যের আলো আছড়ে পরে ঘরের মধ্যে আলো আঁধারির খেলা জুড়েছে।

হৈমন্তীর কাধের কাছে শাড়ির আঁচলটা তুলে ধরে কুচি করে সিফটিপিন লাগিয়ে দিল ঝুমুর। এবার সে হৈমন্তীর চুলে বেণী করবে। তার নিজের চুল ঝরতে ঝরতে কমে গেলেও এই দূষণ যুক্ত বাংলাদেশে হৈমন্তীর লম্বা কালচে চুলগুলো যে এখনও কিভাবে টিকে আছে সেটাই ভাববার বিষয়। ঝুমুর ধরতে পারছে না তার প্রিয় সখীর চুল এখনও কি করে টিকে আছে। তবে হৈমন্তীর এই চুলগুলো তার খুব পছন্দ।

হৈমন্তীর ঘন চুলে বেণী পাকিয়ে পিন দিয়ে বেলি ফুলের মালা লাগিয়ে দিল ঝুমুর। বাম হাতে এক গুচ্ছ কালো কাচের চুড়ি পড়িয়ে দিলো। কানে ছোট পাথরের ঝুমকা পড়িয়ে দিলো ঝুমুর। ঝুমুর লিপস্টিক দিয়ে দিতে চাইছিল কিন্তু বাধ সাধলো হৈমন্তী। বললো ‘ উহু লিপস্টিক দিস না। এই শ্যামলা চেহারায় পুরো শেওড়া গাছের পেত্নী লাগবে। তার থেকে যেমন আছি তেমনই ভালো। ‘

হৈমন্তীর কথার অবাধ্য হলো না ঝুমুর। হৈমন্তীর লম্বা বেণীটা ওর পিঠের উপর ছেড়ে দিল। হাতের আঙুলে কাজল লাগিয়ে হৈমন্তীর কানের নিচে লাগিয়ে দিয়ে বলল ‘ নজর লাগুক আমার সখীকে। ‘ ঝুমুরের কথায় হাসলো হৈমন্তী। বললো ‘ তুই তৈরি হলি না যে ? ‘

হৈমন্তীর কথার উত্তরে ঝুমুর বললো ‘ পাত্রপক্ষ আমাকে না তোমাকে দেখতে আসছে কাজেই তুমিই সেজেগুজে বসে থাকো। ‘
হৈমন্তী আর কিছু বললো না। তবে সঙ্গে সঙ্গে মিস মারিয়াম হাজির হলেন ঘরে। উনি জানালেন পাত্রপক্ষ এসে গেছে। পাত্রপক্ষ এসে গেছে খবর পেয়ে ঝুমুর হৈমন্তীকে সঙ্গে করে বসার ঘরে নিয়ে গেল। পাত্রপক্ষ তখন সোফায় বসে।

—-

হৈমন্তীকে পাত্রের মা বাবার মুখোমুখি বসিয়ে দিল ঝুমুর। হৈমন্তী তখনও মুখ নত করে রেখেছে। সত্যি বলতে তার মোটেও ইচ্ছা করছে না মুখ তুলে লোকটাকে দেখতে। কে জানে দেখতে হয়তো বুড়ো টাকলাদের মত হবে। এরকমটাই তো হয় নাটক সিনেমায়। বাবা মা মেয়ের সুখের জন্য বুড়ো টাকলা ধনী লোকের কাছে বিয়ে দিয়ে দেয়। অবশ্য বাবা মাকেও দোষ দিয়ে লাভ নেই। দেশে জোয়ান,তাগড়া ধনী যুবক আর কোথায় ?বর্তমান তরুণদের ধনী হতে হতেই বয়স পার হয়ে যায়।

পাত্রের মা আমেনা বেগম হৈমন্তীর পাশে বসলেন। ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক কিছুই জিজ্ঞেস করলেন হৈমন্তীকে তিনি। সেই সঙ্গে হৈমন্তী এও জানলো পাত্র নাকি এখনও এসে পৌঁছয়নি। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে চলে আসবে। পাত্রের মায়ের মুখ থেকে কথাটা শুনে হৈমন্তী সস্তির নিশ্বাস ফেললো। যাক তার অন্তত মাথা নামিয়ে রাখতে হবে না।

হৈমন্তী মাথা তুলতেই পাত্রের বাবা সিরাজ সিকদার বললেন ‘ চিন্তা করো না মা। আসিফ একটু পরেই চলে আসবে। ততক্ষণ তোমার হবু শাশুড়ি মায়ের সঙ্গে কথা বলতে পারো। এই যে তোমার শাশুড়ি মাকে দেখছো। উনার কিন্তু একটা মেয়ের খুব শখ ছিল। কিন্তু আল্লাহর দরবারে তার এই ইচ্ছা গ্রহণযোগ্য হয়নি বলে তার মেয়ে নেই। সেই আফসোস এখন তোমাকে দিয়ে মিটিয়ে নিবে সে। ঠিক করে রেখেছে বিয়ের পরে ছেলের বউকে নিয়ে শপিং করবে,রান্না করবে আরও অনেক কিছু। ‘

হৈমন্তী একবার আমেনা বেগমকে দেখলো আরেকবার সিরাজ সিকদারকে দেখলো। এই দুই কপোত কপোতীকে দেখে সে হতবাক। বুড়ো টাকলা লোকের বাবা মা আবার এত অল্প বয়সী কেন দেখতে ? তার কি চোখটা নষ্ট হয়ে গেছে নাকি ?

সিরাজ সিকদারের কথায় আমেনা বেগম বললেন ‘ এসব বলছেন কেন ? শুধু শুধু মেয়েটাকে ভয় পাইয়ে দিচ্ছেন। দেখেন আপনার কথায় হৈমন্তী আবার কিছু না ভেবে বসে। ‘
আমেনা বেগমের কথায় হৈমন্তী ঠোঁটের কোণে হাসি টেনে বললো ‘ আমি কিছু মনে করিনি আন্টি। ‘

হৈমন্তীর কথা শুনে সিরাজ সিকদার বললেন ‘ দেখলে বউমা কিছু মনে করেনি ?বেয়াইন,আর যে যাই বলুক আমার কিন্তু আমার ছেলের বউকে সেই পছন্দ হয়েছে। আমি কিন্তু অনার্স প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শেষ হলেই তুলে নিবো আমাদের মেয়েকে। ‘

সিরাজ সিকদারের কথায় মারিয়াম হাসলেন। বললেন ‘ তাই করবেন ভাইজান। মেয়েটাকে আপনাদের হাতে তুলে দিয়ে আমি নিশ্চিন্ত হবো। কিন্তু ওর অনার্স প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত আমার কাছেই থাকুক। উনাকে পাঁচ বছর আগে হারিয়েছি। এরপর তো ছেলে মেয়েই আমার সব। এখন মেয়েটাকেও বিয়ে দিয়ে দিবো। ‘

মারিয়ামের কথায় আমেনা বেগম বললেন ‘ আপনি চিন্তা করবেন না আপা। হৈমন্তীর অনার্স প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত ও আপনাদের কাছেই থাকবে। শুধু মাঝে মাঝে ইচ্ছে করলে আমি আর আসিফের বাবা এসে দেখে যাবো। ‘
হৈমন্তীর এই ‘ আসিফ ‘ নামটা কেন জানি খটকা লাগছে। মনে হচ্ছে কোথাও একটা শুনেছে কিন্তু হঠাৎ করেই মনে পড়ছে না। অথচ মনে হচ্ছে নামটা তার বহু চেনা। তবে হৈমন্তী বেশি চিন্তা করার সুযোগ পেলো না। তার আগেই বাসার দরজায় কড়া পড়ল।

মিস মারিয়াম এগিয়ে গিয়ে দরজা খুললেন। দরজা খুলে সামনে আসিফকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে হাসলেন। বললেন ‘ তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম বাবা। ‘
আসিফকে মারিয়াম ছবিতে দেখেছেন। ঘটকই ছবিটা এনেছিলেন। আসিফের পুরো নাম আসিফ জোহান। তিতুমীর কলেজে সে চাকরিরত। দেখতে খুবই অসম্ভব সুদর্শন এই ছেলেটি উচ্চ মধ্যবিত্ত ঘরের। সামনের কিছু চুল এলো হাওয়ায় কপালে আছড়ে পড়েছে। আসিফ সেই চুলে হাত দিয়ে পিছনে নিয়ে ঠিক করে বললো ‘ ক্ষমা করবেন আন্টি। জরুরী কাজ পড়ে যাওয়াতে পরে আসতে হলো। তবে কাজী সাহেবকে নিয়ে এসেছি সঙ্গে করে। ‘

বেখেয়ালে থাকা হৈমন্তী যেন আসিফের গলা পেয়ে চমকে উঠলো। মুখ তুলে হতবাক চোখে তাকিয়ে রইলো আসিফের দিকে। ওর বিশ্বাস হচ্ছে না এ ও কাকে দেখছে। এই লোকটা তো ওরই কলেজের প্রফেসর আসিফ জোহান। এখন তো তার হবু বর আসিফের আসার কথা। তাহলে তার জায়গায় প্রফেসর আসিফ কোথা থেকে চলে এলো ?

হঠাৎ বিজলী চমকানোর মতো করে হৈমন্তীর মাথায়ও বাজ পড়লো। ও এবার ধরতে পারলো এই প্রফেসর আসিফ জোহানই তাহলে তার হবু বর আসিফ। অথচ এই ব্যাপারটা সে আগে ধরতে পারেনি। ধরতে পারেনি বললে ভুল হবে। মোট কথা সে ধরতে পারলেও তার অবচেতন মন সেটা সায় দেয়নি। কিন্তু সবশেষে কিনা প্রফেসরকে বিয়ে ? বাংলাদেশে কি ছেলেদের এতই অভাব পড়েছে যে সব ছেড়ে ওর প্রফেসরকেই বিয়ে করতে হবে ?

আসিফ আর কাজীকে নিয়ে বসার ঘরে আসিফের বাবা মায়ের সামনেই বসালেন মিস মারিয়াম। ছেলেকে দেখে আমেনা বেগম বললেন ‘ এত দেরি কেন হলো তোর ? ‘
‘ রাস্তায় জ্যাম ছিল তাই ফিরতে সময় জ্যামে পড়ে গেছিলাম। আধা ঘন্টা বসেছিলাম জ্যামে। ‘ আসিফ উত্তর দিলো।

‘ তাহলে আপা বিয়েটা আজই পড়িয়ে ফেলি। কি বলেন ? আপনার কোনো আপত্তি আছে ? ‘

আমেনা বেগমের কথায় হাসলেন মিস মারিয়াম।বললেন ‘ না না আপা আপত্তি কিসের ?ওদের বিয়েটা হয়ে গেলো আমি নিশ্চিন্ত হতে পারবো। আমার আপত্তি নেই। ‘
মিস মারিয়াম আপত্তি না করলেও হৈমন্তীর ঘোরতর আপত্তি আছে। ও চেয়েছিল পাত্রকে দেখা মাত্রই যাতে বিয়েতে রাজি নাহয় তার জন্য উদ্ভট কান্ড করবে। কিন্তু তার সুযোগ কোথায় ? একটা বাক্য বিনিময়ওতো করতে পারল না। তাই হৈমন্তী ধীর গলায় মারিয়ামকে বললো ‘ মা!! একটু দরকার ছিলো। ‘

মেয়ের ডাক উপেক্ষা করলেন না মিস মারিয়াম। হবু বেয়াই বেয়াইনকে বলে হৈমন্তীকে নিয়ে ভিতরের ঘরের দিকে গেলেন। একান্তে যাওয়া মাত্রই হৈমন্তী বললো ‘ মা তোমার মাথা কি ঠিক আছে ? এ কার সাথে বিয়ে দিচ্ছ আমার ? আরে লোকটা তো আমারই কলেজের প্রফেসর। কলেজে যদি এই বিয়ের ব্যাপারটা জানাজানি হয় তাহলে সবাই হাসাহাসি করবে। ‘

মিস মারিয়াম লক্ষ্য করলেন তার মেয়ের হাত কাপছে। ঠোঁটগুলোও তিরতির করে কাপছে। উনি বুঝলেন মেয়ের দোটানার ব্যাপারটা। তবে তিনি হৈমন্তীর হাতে হাত রেখে বললেন ‘ এই জীবনটা তোমার হৈমন্তী। তোমার পড়াশোনা, সাবজেক্ট চুজিং, কোন কলেজে পড়বে এই ব্যাপারে কোনোদিনই তোমার উপর কোনো ইচ্ছা চাপিয়ে দিইনি আমি। একই কথা তোমার ভাইয়ের ক্ষেত্রেও।

কিন্তু তুমিই বলো তুমি যাদের হাসার কথা বলছো তাদের উপর কি আদৌ তোমার জীবন নির্ভর করে ? তারা হাসলে কি তোমার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে নাকি না হাসলে জীবন ঠিক হয়ে যাবে ? তোমাকে দশ মিনিট দিচ্ছি। আমি বসার ঘরে বসছি। যদি তোমার মনে হয় এই বিয়ে তুমি করবে তাহলে এসো নাহলে আমি সবাইকে জানিয়ে দিবো তুমি বিয়ে করছ না। ‘

—-

বসার ঘরে বসে বসে ফাহমান তার হবু বোন জামাইয়ের সঙ্গে কথা বলছে। কথা বলছে বললে ভুল হবে। তাদের আলোচনা মূলত তাদের কর্মজীবন নিয়েই। মিস মারিয়াম ঝুমুরকে হৈমন্তীর কাছে রেখে এসেছেন। ঝুমুর এতক্ষণ হৈমন্তীর রুমেই ছিল যাতে পাত্রপক্ষদের সামনে দেখা দিতে না হয়। মিস মারিয়াম এখন বেয়াই বেয়াইনের সঙ্গে কথা বলছে। আলোচনা চলছে হৈমন্তী আর আসিফের বিয়ে নিয়ে।

আসিফ এবং হৈমন্তীর বিয়ে নিয়ে আলোচনা চললেও মিস মারিয়ামের মন পড়ে আছে মেয়ের কাছে। উনার বারবার একই কথা মনে হচ্ছে মেয়ে কি আদৌ তার কথার মান রাখবে ? নাকি বিয়েতে আপত্তি করে বিয়ে নাখচ করবে ? করলেও অবশ্য মিস মারিয়াম জোর করবেন না। উনি কখনোই ছেলে মেয়ের উপর নিজের ইচ্ছা চাপিয়ে দেননি।

ঘর থেকে ত্রস্ত পায়ে বেরিয়ে এলো হৈমন্তী। ওর পিছন পিছন ঝুমুর এগিয়ে আসছে। হৈমন্তী বেরিয়ে আসতেই মিস মারিয়ামসহ সকলের দৃষ্টিই একসঙ্গে তার উপর গিয়ে পড়লো। হৈমন্তীর চোখে মুখে স্মিত হাসি। মেয়ের মুখে হাসি দেখে সস্তির নিশ্বাস ফেললেন মিস মারিয়াম। আলতো হেসে বললেন ‘ কাজী সাহেব বিয়ে শুরু করেন। ‘

চলবে…..
মিফতা তিমু

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here