শ্যাম বরণ কন্যা,পর্ব ২

2
4191

শ্যাম বরণ কন্যা,পর্ব ২
,
ট্রেন আসছে নিজ গতিতে আর সাদিয়া দাঁড়িয়ে আছে মৃত্যু কে আলিঙ্গন করার জন্য,,,
প্রায় এসে পড়েছে কিন্ত কেউ একজন ধাক্কা দিয়ে লাইন থেকে সরিয়ে দিলো,,,

সাদিয়া তাকিয়ে দেখলো একটি ছেলে,,

ছেলে- আরে আপু এইভাবে কেউ ট্রেন ধরে,,আপনার ট্রেন দরকার স্টেশনে যান,,,

সাদিয়া- আমি ট্রেন ধরছিলাম কে বলল,,

ছেলে- তা নয়তো কি টাইটানিক নায়িকার মতো হাত উড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন কেনো,,,ট্রেন ধরার জন্যই তো,,

সাদিয়া- আমি যাই করি আপনি কে?

ছেলে- আমি নীল,,,,

সাদিয়া -……. দেখতে কাইল্লা তার নাম আবার নীল(মনে মনে)

নীল- তা পাবনা থেকে কবে ছাড়া পেলেন,,

সাদিয়া- ঐ আমাকে দেখে কি পাবনার পাগলি মনে হয়,,,,,

নীল- আমার তো মনে হচ্ছে না দেখতে তো মাশাল্লাহ, সুন্দরী রমণী যে পাগলি হয় এই প্রথম দেখলাম,,,

সাদিয়া- ঐ বুইড়া বেডা, আমারে কোন দিক থেকে সুন্দরী মনে হয় পাম দিবার আর জায়গা পাস না,,,,

নীল- আপনি আমাকে বার বার বেডা বেডা করছেন কেনো,আমি মাত্র অনার্স ২য় বর্ষে পড়ি,

সাদিয়া- কোন কলেজ?

নীল- সরকারি সা’দত কলেজ, কেনো?

সাদিয়া -আমি তোমার সিনিয়র এক ইয়ার,,,

নীল- আসসালামু আলাইকুম আপু, ভালো আছেন,

সাদিয়া- ভাব নেও আমার সাথে,,,,

নীল–ছি ছি ছি আপু কি বলেন,ভাব নিবো কেনো,,

সাদিয়া- চুপ,,

নীল- ওকে, কিন্তু একটা কথা বলতে পারি,,,

সাদিয়া – হুম বলো,,

নীল- কয় মাস চলছে,,

সাদিয়া – কয় মাস মানে?

নীল- ওয়া ওয়া, যে জন্য মরতে যাচ্ছিলেন ,, কয় মাস,,

সাদিয়া রেগে ঠাস ঠাস করে থাপ্পড় মেরে কালো গাল আরও কালো বানিয়ে
দিলো,,,

নীল গাল ধরে এটা কি করলেন আমাকে মারলেন মারবেন আগে বললেন কত কস্ট করে ক্রিম মেখে গাল টা একটু ফর্সা বানাই ছিলাম আর আপনি আরও কালো বানিয়ে দিলেন,,,

সাদিয়া- দেখো ঐ সব কিছু না, (সব ঘটনা নীল কে বলল)

নীল সব শুনে বলল,,

নীল- এইটুকু কারনের জন্য মরবেন,এই যে দেখেন আমি কত কালো কিন্ত কই আমি তো কোন দিন মরার কথা ভাবি না,প্রতিদিন রেললাইনে এসে বসে থাকি কিন্ত কোন দিন তো মরতে গেলাম না,,,মানুষ কত কথা বলে,তাই বলে কি মরে যাবো,

সাদিয়া- কি করব বলো আমার কাছে যা ভালো মনে হয়েছে তাই করেছি,,,

নীল- এই সব বাজে কথা রাখেন তো,, চলেন যাই রাত হয়ে আসছে,,,,

সাদিয়া- তুমি কই থাকো,

নীল- আমি মেসে থাকি,এখন বাসায় চলেন,,,

সাদিয়া – না আমি বাসায় যাবো না,,,

নীল- তাহলে কই যাবেন,,,

সাদিয়া- তোমার সাথে যাবো,

নীল- আমার সাথে মানে?

সাদিয়া- সোজা কথা বুঝো না,আমি বাসায় যেতে পারবো না,তুমি যেখানে নিয়ে যাবে আমি সেখানেই যাবো,,,

নীল – ও মা গো,আমি তো মেসে থাকি সেখানে কি ভাবে যাবেন,আর আপনি আমার সাথে কেনো যাবেন,,,, আপনাকে বাসায় ছেড়ে আসি চলেন,,

সাদিয়া- এই বেয়াদব ছেলে মা বলবে না,,আর আমাকে বাঁচালে কেনো,,,এখন আমার থাকার বন্দবস্ত তোমাকেই করতে হবে,,

নীল- ঐ টা আপনাকে বলি নাই,,,আমি বাচাইছি বলে আমার ঘাড়ে চড়ে বসবেন,,,রাত ১০টায় একটা ট্রেন আছে,,নেক্সট ট্রেনে মইরা যাইয়েন বাই, গুড নাইট হ্যাপি মরণ ডে,,,

সাদিয়া- এই কি বললা, এখন যদি চিৎকার করি হবে বুঝতে পারছো,,,

নীল- আমার ভুল হয়েছে মানুষ চিনতে,আপনাকে বাচিয়ে,,

সাদিয়া-…… (আজ যদি বাসায় যাই আবার সুইসাইড করার চিন্তা মাথায় আসবে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো না তার চেয়ে ওর সাথেই চলে যাই দেখে তো ভালই মনে হচ্ছে. (মনে মনে ভাবছে সাদিয়া)

নীল- এই যে বাঁশ ওয়ালী,আমি কি তাহলে ফেঁসে গেলাম,,,

সাদিয়া- জ্বি ফেঁসে গেছো,,,, এখন আমাকে নিয়ে কই যাবা,,,

নীল- জানি না, কই যাবো,,

সাদিয়া- আমার ভয় লাগছে এখান থেকে চল,,,

নীল – মরতে এসে আবার ভয়,,,

সাদিয়া- এত কথা বাদ দিয়ে চলতো,আমাকে নিরিবিলি কোথাও নিয়ে চল,,,

নীল রেললাইন থেকে বাজারে এসে টাংগাইল সদরের উদ্দেশ্য সিএনজি তে উঠলো,,, সিএনজিতে বসে সাদিয়া জিজ্ঞেস করলো নীল কে আচ্ছা আমরা কার বাসায় যাচ্ছি৷,,

নীল- আমার সাথে আসেন দেখেন কোথায় যাই,,,

সিএনজি গিয়ে থামলো একটি হোটেলের সামনে,,,

তখন নীল বলল আপনাকে হোটেলে দিয়ে আমি মেসে চলে যাবো,,,

সাদিয়া – না তুমি আমার সাথে থাকবে রাতে,,,

নীল- কি কি আপআপনার সাথে থাকবো মানে,,আসলে আপনি কে,আপনি কি ক…….?(তোতলানো শুরু করে)

সাদিয়া- এই বেয়াদব ছেলে থাপ্পড়ের কথা মনে নাই,নেগেটিভ চিন্তা করো কেনো,,,

নীল- আসলে আপনার সাথে থাকতে বললেন তো,,,,

সাদিয়া -আমি একা একা রুমে ভয় পাই তাই,,,

একটা রুম নেওয়া হল কিন্ত একটা রুমে একটাই বেড,
আর আজ খুব শীত একটা কম্বল দেওয়া,
আলাদা কোন কম্বল দেওয়া নেই কারন স্বামী স্ত্রী পরিচয়ে উঠেছে,,

দুজনেই খুব চিন্তায় পড়ে গেলো কি করা যায়,,, এক কম্বলের নিচে দুজন কার
মনে কি আছে কে জানে,,,,,
এখন রাত যতই হচ্ছে শীত ততই পড়ছে,,,
আবার দু’জনেরই খুব ঘুম পাচ্ছে রাত ১২টা বাজে,,,,

দুজন একথা সেকথা বলতে বলতে কখন ঘুমের দেশে হারিয়ে গেছে কেউ জানে না,,,,

হঠাৎ মাঝ রাতে সাদিয়ার ঘুম ভেঙে গেলো,
সাদিয়া বুঝতে পারলো তার মুখের উপর গরম নিশ্বাস পড়ছে,চোখ খুলতেই দেখলো দুজনের মুখ একদম মুখোমুখি শুধু তাই না,,,
একজন আরেকজন জরিয়ে ধরে শুয়ে আছে,,,
সাদিয়া এই প্রথম কোন পুরুষের ছোঁয়া পাচ্ছে নীল এমন ভাবে ধরেছে ছাড়ার কোন উপায় নাই,
কিন্ত তারপরও খুব কস্টে সাদিয়া একটু সোজা হল,,,
বেশিক্ষন আর পারলো কই নীল তার এক হাত সাদিয়ার বুকের উপর দিয়ে দিলো আর এক হাত দিয়ে সাদিয়ার মাথা টেনে ঘারের কাছে মুখ টা নিলো নাকের সাথে ছোঁয়া লাগছে লাগছে এমন আর নীলের নিশ্বাস সাদিয়া কে পাগল করে দিচ্ছে যা এর আগে কখনো হয়নি অজানা এক সুখের অনুভূতি উঁকি দিচ্ছে,,,,
সাদিয়া কিছু বলতে পারছে না কারন নীল বলছিলো তার নাকি কোলবালিশ ছাড়া রাতে নাকি ঘুম হয় না,,,
হয়তো কোলবালিশ ভেবে এমন করছে,
যদি নীল কে ডাকে এই অবস্থা দেখলে দুজনেই লজ্জায় পড়ে যাবে,,,
এদিকে সাদিয়ার ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলছে, নীল এবার সাদিয়ার,,,,,,,,,,,,,,,?

(চলবে)

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here