শ্যাম বরণ_কন্যা,পর্ব-১৪,১৫
নীল মাহমুদ
পর্ব-১৪
নীলের মা বাবার মাথায় হাত এটা কি হয়ে গেলো,
লোকটি হল মেয়ের খালু নিশ্চয়ই সে মিথ্যা কথা বলবে না,
সে পুরো বিয়ে বাড়ি মাইকিং করে বেরাচ্ছে যে ছেলে পাগল,
পাগল ছেলের সাথে মেয়ে বিয়ে দিচ্ছে,
এই দিকে মাইসার মা বাবা দুজনেই
খুব চিন্তায় পড়ে গেলো যে লায়লা তার
পাগল ছেলে কে বিয়ে দিচ্ছে আমার ভালো মেয়ের সাথে,
মাইসার মা বাবা দুজনেই নীলের বাবা মা কে ডাকলো
মাইসার মা বলল,লায়লা তুই এটা করতে পারলি আমার ছোট বেলার বান্ধবী হয়ে,
নীলের মা বলল,তোরা যা ভাবছিস সব
ভুল আমার ছেলে পাগল হলে কি আর জব করতে পারতো,নীলের কলিগ আর নীলের অফিসের বস আসছে তাদের জিজ্ঞেস করে দেখ,
একজন এসে বলল ছেলে পাগল আর তাই বিশ্বাস করলি,
এখন আর মাইসার মা বাবার মুখে কোন কথা নাই,
মাইসার খালু তাকে ডাকা হল,
মাইসার বাবা জিজ্ঞেস করলেন ছেলে পাগল আপনি কি করে বুঝলেন,
তিনি উত্তর দিলেন ওয়াশরুমে দাঁড়িয়ে একা একা কথা বলছিলো,
একা একা ঝগড়া করছিলো আমি
নিজ চোখে দেখেছি,
এমন সময় আরিফ ভাই বলল, আপনি কি তাকে একবার জিজ্ঞেস করছিলেন
কার সাথে কথা বলছে,
-না আমি জিজ্ঞেস করি নাই,
-আরে মিয়া উনি তো অফিসের একটা
জরুরি ফাইল আটকে গেছে সেটা
নিয়ে ফোনে কথা বলছিলো,
-কিন্ত উনার হাতে বা কানে তো কোন
ফোন ছিলো না,
-আরে খালুজান এটা ২০২০ নীল তো মিনি ব্লুটুথ হেডফোন দিয়ে কথা বলছিলো দেখেন নীলের কানের ভিতর,
আরিফ তখন নীলের কানে থেকে হেডফোন টা বের করে দেখায়,
নীলের ভাগ্য ভালো আরিফের কাছে হেডফোন ছিলো,না হলে কি যে হতো আজ,
এইবার মাইসার খালুজান তো পুরাই
বোকা বনে গেলো,
বিয়ে বাড়িতে তখন অনেকে অনেক কথাই বলতে লাগলো মাইসার খালু কে,
নীল স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে,
যাক বাঁচা গেলো না হলে সারাজীবন
পাগলের সার্টিফিকেট নিয়ে বাঁচতে হতো,
তারপর নীল আর মাইসার বিবাহের কাজ সম্পন্ন হল,
বিয়ে তো হল নীলের কিন্ত একজনের দেখা নেই কি ভাবছেন সাদিয়া না
সে হচ্ছে নীলের ফ্রেন্ড হিয়া,
ইউনিভার্সিটিতে একটাই ফ্রেন্ড ছিলো,
কিন্ত তা সাদিয়ার অত্যাচারে বেশিদিন টিকতে পারে নাই,
কিন্ত বলতে বলতেই হিয়া হাজির দোস্ত
দোস্ত করতে করতে এসে গাঁয়ের উপর লেপ্টে পড়ে,
হিয়া ফোন টা বের করে সেল্ফি তোলা শুরু করলো,
হিয়া-দোস্ত দোস্ত আমার কাধের উপর দিয়ে হাত দে,
একটা সেলফি তুলি,
এই সব হঠাৎ চোখে পড়ে অদৃশ্য সাদিয়ার,
সে চোখের ভ্র কুঁচকে তাকিয়ে আছে নীলের দিকে,
আর ডাকছে ওয়াশরুমে যেতে
কিন্ত নীল হিয়ার কাছ থেকে আসতেই পারছে না,
নীল উঠলো ওয়াশরুমে যাবে হিয়া টেনে ধরে কই যাস,
আয় আর কিছু সেলফি বাকি আছে,
নীল- হুপ আমি ওয়াশরুমে যামু ছাড়
ছেরি,
হিয়া- ধমক দিচ্ছিস কেন,এখনো ফেসবুক লাইভে যাইনি, ওয়াশরুম থেকে আয় তারপর ফেসবুকে লাইভে যাবো,
নীল রেগে আয় ওয়াশরুম থেকে ফেসবুকে লাইভে যাই তাহলে লাইক কমেন্ট বেশি পাবি,
হিয়া- দোস্ত দারুন আইডিয়া দিছোস, চল তারাতাড়ি যাই,
নীল- হাত ছাড় তুই ওয়াশরুমে যাবি কেন,আজ আমার বিয়ে বলে কিছু কইতাছিনা,
হিয়া- দোস্ত তুই আমার সাথে রাগ দেখাচ্ছিস,
নীল- দেখ বোইন সেলফি তোলার জন্য
তোর ভাবি আছে তাকে নিয়ে তোল আমারে যেতে দে,
হিয়া- এমা তোর যে বউ আছে আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম,আমি এখনি যাচ্চি,
নীল ওয়াশরুমে যেতেই সাদিয়া রাগ দেখাতে লাগলো,এই নীল তোমার ঐ পুতুপুতু ফ্রেন্ড কে দাওয়াত দিছো কেন,
কেমন করে গাঁয়ের উপর ঢোলে পড়ে তোমাকে দেখলেই,
নীল- ফ্রেন্ড তো,বেচারি তোমার অত্যাচারে কলেজে টিকতে পারতো না,
সাদিয়া- কি আমি অত্যাচার করতাম,ও যে তোমার উপর ঢোলে পড়ে সেটা খুব ভালো লাগে তাই না,যখন বউয়ের খুন্তির বাড়ি খাবে তখন বুঝবে,
নীল- কিসের বউ, কার বউয়ের কথা বলছো তুমি,
সাদিয়া – বিয়ে করলে তুমি আর কার বউ হবে,তোমার বউয়ের কথা বলছি,
নীল- দূর তুমি থাকতে বউ কিসের,
সাদিয়া-দেখা যাবে এখন যাও বেশিক্ষন থাকা ঠিক হবে না,,,
নীল বাহিরে বের হল,
হিয়া মন খারাপ করে বসে আসে,
নীল- কি রে এরকম মুখ পেঁচার মতো
করে বসে আছিস কেনো,
হিয়া- সালা তোর ঐটা বউ নাকি আমাকে সেলফি তুলতে তো দেয় নাই
আমাকে ভিতরেও ঢুকতে দেয় নাই,
তোর বউটা দেখতেও পারলাম না,
নীল- sad.
তো এবার বিয়ে শেষ খাওয়া দেওয়া শেষ রাত ১১টার সময় বউ নিয়ে বাসায় ফিরলো নীল কিন্ত এখন পর্যন্ত বউয়ের মুখখানা দেখা হয় নি,
কারণ নীলের আগ্রহ নেই তাই,
বউ বসে আছে বাসর ঘরে সাদিয়ার সাথে কথা বলার পর,
১২টার দিকে বাসর ঘরে ঢুকলাম,
(চলবে)
#শ্যাম_বরণ_কন্যা
#পর্ব-১৫
,
রাত ১২টার দিকে বাসর ঘরে গেলাম,
বউ জায়নামাজ বিছিয়ে মেঝেতে হয়তো আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো,
বউ আমাকে আগে সালাম দিলো, আসসালামু আলাইকুম আপনি ভালো আছেন,
আমি কোন উত্তর দিলাম না ভাব নিয়ে বসে আছি,
বউ- সালাম দিলে সালামের উত্তর দিতে হয় জানেন না,আর রুমে ঢুকার আগে সালাম দিয়ে ঢুকতে হয়,,
নীল-চুপ কোন কথা হবে না,আমার ঘুম পাচ্ছে,
বউ- আমাকে দেখবেন না,
নীল- ইচ্ছে নেই কোন ভাবওয়ালী কে দেখার,
বউ- ভাব না আমি পর্দা করি,
আমি আমার মতো বালিশ টেনে শুয়ে পড়লাম,
মাইসা দাঁড়িয়ে আছে কোন কথা নাই মুখে,
আমি চোখ বন্ধ করে আছি ঘুমার চেষ্টা করছি,
হঠাৎ চোখ খুলে দেখি মাইসার জায়গায় সাদিয়া দাঁড়িয়ে আছে বিয়ের শাড়ি পড়ে, কিন্ত সাদিয়া এত ফর্সা হল কি করে,
আমি কিছু বলতে যাবো অদৃশ্য সাদিয়া এসে বলল,চুপ কোন কথা বলবা না ওয়াশরুমে আসো কথা আছে,
আমি চুপচাপ ওয়াশরুমে চলে গেলাম,
আমি- সাদিয়া এটা আমি কি ২জন সাদিয়া ও কে?
সাদিয়া- ও তোমার বউ করা বউ উম্মে মাইসা,
আমি- কী ও মাইসা,কি করে সম্ভব ওর চেহারা তো ঠিক তোমার মতো,তোমার কোন জমজ বোন ছিলো,
সাদিয়া- না নীল,মানুষের মতো দুনিয়াতে অনেক আছে,
আমি – এত মিল, শুধু একটাই পার্থক্য তুমি শ্যাম ও ফর্সা,
সাদিয়া- হুম আমি জানি,শুনো নীল তুমি আমাকে কথা দেও তুমি মাইসা কে মেনে নিবে,
আমি- কেনো কথা দিতে হবে, তুমি কই যাচ্ছো,
সাদিয়া- আমার বিলীন হওয়ার সময় হয়ে গেছে নীল,
আমি- কি বলো এই সব, তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না,
সাদিয়া- আমাকে যেতে হবে, তুমি না আমাকে ভালবাসো নীল তাহলে আমার শেষ ইচ্ছে পূরণ করতে পারবে না,
আমি- এটা তোমার কেমন ইচ্ছে বলো, আমি তোমার সাথে থাকতে চেয়ে ছিলাম,
সাদিয়া- নীল আমার হাতে সময় নেই তারাতাড়ি বলো,তুমি মাইসা কে বউ হিসেবে মেনে নিবে,মাইসা খুব ভালো
মেয়ে তোমাকে সুখে রাখবে আমার নীল কে সুখে রাখবে,আর এতেই আমার সুখ,
নীল- তুমি ছাড়া আর কেউ বউয়ের স্বীকৃতি পাবে না,
সাদিয়া তখন নীল কে ধমক দিয়ে বলল,আমি যখন ছিলাম তখন তোমার এত ভালবাসা কই ছিলো,
বিয়ের সময় শুধু তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম,
তুমি হয়তো বলবে সাদিয়া চল পালিয়ে যাই এই বুড়ো কে বিয়ে করতে হবে না,,,
শুধু এই একটা কথা শুনার জন্য তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম,
কিন্ত আসলে কালো মেয়েদের ভাগ্য সব সময় কালোই হয়,
আমার ভাগ্যে যেটা ছিলো সেটা হয়েছে আমি মেনে নিয়েছি তুমি কেন পারবে না,
নীল শুধু কান্না করছে, আর বলল তখন আমার এই কথা টা বলাটা উচিত ছিলো,
সাদিয়া- আচ্ছা বাদ দেও,তুমি আমাকে কথা দেও,তাহলেই আমি ভালো থাকবো না ভালো থাকবো না,তুমি কি আমার
ভালো চাইবে না,
সাদিয়ার কথা গুলো নীলের বুকে আঘাত করে, আর নীল কথা দেয়,
আমি মাইসা কে বউ হিসেবে মেনে নিবো
সাদিয়া- ধন্যবাদ নীল,ভালো থেকো নীল নিজের খেয়াল রেখো আমি চললাম,
।কথা বলতে বলতে হাওয়ায় মিলিয়ে যায় সাদিয়া,
বাতাসে বিলীন হয়ে যায় সাদিয়া,
সাদিয়া কে আবার সারাজীবনের হারিয়ে ফেলে মাইসার জন্য,
নীল অনেকক্ষন পর ওয়াশরুম থেকে বের হয়,
বের হতেই মাইশা জিজ্ঞেস করে
আপনি এতক্ষন ওয়াশরুমে কি করলেন,
নীল মাইসার দিকে রাগি চোখে তাকায় মাইশা আর ভয়ে কিছু বলে না,
নীল একটা বালিশ আর একটা কম্বল
নিয়ে মেঝেতে বিছানা পেতে শুয়ে পড়ে,
এই সব দেখে মাইশার মন টা খারাপ
হয়ে যায়,
কিন্ত আল্লাহর উপর ভরসা করে আছে
আল্লাহ নিশ্চয়ই যা করেন বান্দর ভালোর জন্যই করে এটা ভেবে মাইসা
ধৈর্য ধারণ করে আছে,
মাইসা নীল কে বলল,এই শুনছেন আপনি উপরে ঘুমান,আমি নিচে ঘুমাচ্ছি,
নীল- কেনো, আপনাকে খাটে ঘুমাতে বলছি ঘুমান,
মাইসা- কোন স্ত্রী তার স্বামী কে নিচে রেখে উপরে ঘুমাতে পারে না,
নীল- আপনি আমার বাড়ির মেহমান আপনি উপরে ঘুমান,
মাইসা- মেয়েদের বিয়ে হওয়ার পর স্বামীর বাড়িই হয় মেয়েদের নিজের বাড়ি,
নীল- ধুর আপনার যা ইচ্ছে করেন,
বলে নীল খাটের উপর গিয়ে শুয়ে পড়ে,
মাইশা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে
কানের গহনা,গলার মালা হাবিজাবি খোলছে (এত নাম আমি বলতে পারি না)
নীল তা দেখছে যখন মাইশা নীলের দিকে তাকায় তখন নীল চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান ধরে,
এবার মাইসা শাড়ি চেন্স করবে এই সব পড়ে কি আর ঘুমানো যায়,
কিন্ত কই করবে,
মাইশা নীলের দিক তাকালো দেখলো নীল ঘুমাচ্ছে,
ভাবলো যদি জেগে যায় তাই মাইসা ওয়াশরুম থেকে চেন্স করে আসে,।।
এসে ঘুমিয়ে পড়ে,
মুয়াজ্জিনের আযানের মিষ্টি ধ্বনিতে মাইসার ঘুম ভাঙে,
উঠে নীল কে ডাকাডাকি করে,,,
মাইশা- এই যে শুনছেন এই যে শুনছেন,
কিছুতেই শুনছে না,
এবার গায়ে হাত দিয়ে এই যে শুনছেন আযান দিচ্ছে নামাজে যাবেন না,
খালি হু হু হু করছে আর কোন শব্দ নেই,
এবার মাইশার একটু রাগ তাই ধাক্কা দিয়ে উল্টিয়ে দিলো তারপরেও কোন সারা শব্দ নেই,।
মাইসা- এত ঘুম মানুষের থাকে ১০মিনিট হল ডাকছি কোন সারা নেই,
মাইশা চলে গেলো,
আমার ঘুম ভাঙলো সকাল ৭টায়,
মাইশার চুলের পানির ছিটানিতে,
আমি ঘুম থেকে রেগে উঠলাম,
এমন রাগ নিয়ে উঠলাম গায়ে হাত তুলার চিন্তা মাথায় নিয়ে,
(চলবে)