শ্যাম_বরণ_কন্যা,পর্ব-২০,২১
নীল মাহমুদ
পর্ব-২০
আমার ভায়রা ভাই সবাই কে ডেকে বলল,
এই ছেলে পাগল বেয়াদব আদব কায়দা বলে কিছু নাই,
আমাকে বলে শ্বশুর,
এবার নীল খেপে গিয়ে বলল,বিয়ের দিন কিছু বলি নাই বলে,
আজ পেয়ে বসেছেন আমার প্রাণ প্রিয়
ভায়রা ভাইয়ের সাথে কি একটু মজাও করতে পারবো না,
আর ধরেন আমি উনাকে বলেছি ভায়রা শ্বশুর কিন্ত আমার তো প্রথম কাকে কি বলতে শ্বশুর বাড়ি রিলেটিভ আমার কি হবে সেগুলো আমি কি জানি,
যদি আগে আরেকটা বিয়ে করতাম
তাহলে না জানতাম,
কিন্ত পরেরবার এই ভুল আর হবে না,
একজন বলে উঠলো আপনার কি আবার বিয়ে করার ইচ্ছে আছে,।।
নীল – আরে ভাই না,পরেরবার মানে এর পরে আর এমন ভুল হবে না,
সব শেষে শ্বশুর মশাই বললেন,
নীল কে রেডি হয়ে নাও,
নীল-কেনো বাবা?
-আমাদের বাড়ি যেতে হবে।
মা বললেন যা নীল রেডি হয়ে শ্বশুর বাড়ি যা,
না মা যারা আমাকে বার বার পাগল
বলে তাদের বাড়ি আমি যাবো না,
মাইসা বুঝতে পারলো নীলের এই সব ফন্দি,
না যাওয়ার তালবাহানা,,
কিন্ত এদিকে মাইসা রেডি হয়ে নীলের
কাপড় চোপড় গুছিয়ে নিয়ে নীল কে বলল চলেন যাওয়া যাক,
নীল- আমি কোথায় যাবো।
-আমার বাবার বাড়ি না কিন্ত।
–কি করবেন,
–আমি কি করতে পারি তা আপনি ভালো করেই জানেন,।।
কি আর করার বউয়ের চোখ রাঙানো দেখে ভালো মনে হল তাই চলে গেলাম,
রাত তখন ১০টা বাজে,
আমি তখন আমার নিজের শ্বশুর বাড়ি
সাথে আমার ছোট বোন টা ছিলো লিমা,
সব কিছু ঠিকঠাকি ছিলো কিন্ত ভেজাল লাগলো যখন শুতে দেওয়া হল মাইসার রুমে এখন যদি মাইসা এসে বলে আপনি আমার বাবার কেনা খাটে থাকতে পারবেন না তখন কি হবে,
মাইসা উনার মায়ের সাথে কথা বলছিলো,
আমি তখন মাইসার ঘর টা দেখছিলাম মেয়েটার ঘর বেশ সাজানো গুছানো,
রুম টা দেখে খুব ভালো লাগলো,
হঠাৎ চোখ গেলো বুক সেল্ফ এর দিকে
অনেক বই, বেশির ভাগ বই হচ্ছে ইসলামিক বই বিভিন্ন হাদিসের বই,
অনেক অনেক বই দুই একটা হাতে নিয়ে খোলে দেখলাম,
এমন সময় মাইসা এসে বলল,ঘুমাবেন না,
–হুম ঘুমাবো কিন্ত আমি কই ঘুমাবো,
–কেন নিচে,ফ্লোরে, আপনি তো আমাকে শুধু খালি ফ্লোরে ঘুমাতে দেন,
কিন্ত আমি আপনাকে একটা কম্বল বিছিয়ে দিবো আর একটা গায়ে দিতে দিবো,
আমি যা ভাবছিলাম তাই হল,।।
এরপর আরও বলল,এই খাট টা আমার বাবার টাকায় কেনা,
আপনি ঘুমাতে পারবেন না,
নীল- ওকে, দয়া করে কি কি জানি দিবেন দেন আমি ঘুমাবো,
মাইসা বিছানায় উঠে কম্বল বালিশ একটা একটা করে নিচে ছুড়ে মারলো তারপর মাইসা লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো,
আমাকে রেডি হয়ে শুতেও দিলো না,।
আমি মোবাইলের ফ্লাশ অন করে
বিছানা পেতে শুয়ে পড়লাম কিন্ত ঘুম কি আসে এপাশ ওপাশ করতে করতে কখন যে ঘুমের দেশে হারিয়ে যাই জানি না,
কিন্ত মাঝ রাতে আমার ঘুম ভাঙলো কিন্ত মনে হল বাম হাতের পেশীর উপর ভারি কিছু রাখা, আমি হাত নাড়াতে পারছি না,
আর মনে হচ্ছে কোন ছোট নল দিয়ে আমার বুকে ফিসফিস করে ফু দিয়ে বাতাস দিচ্ছে,
আস্তে করে মোবাইলের ফ্লাশ অন করলাম অন করতেই দেখি
মাইশা ঘুমাচ্ছে আমার কাছে এসে,
আর যে বললাম ফিসফিস করে বাতাস বের হচ্ছে নল দিয়ে ওটা নল না,
মাইশার নিশ্বাস আমার বুকে পড়ছিলো,
আর মাইশা আমার গোল গলা টি-শার্ট টা এমন ভাবে ধরছে যাতে ছাড়াতে না পারি,
একবার ভাবলাম হাত সরিয়ে ফেলি
মাথা টা ফ্লোরে পড়ে ব্যথা পাক কিন্ত
ফেলতে যাবো এমন সময় মাইশার মুখের দিকে চোখ যায়,
কি মায়াবী চেহারা,
দেখতে ভালোই লাগছে অনেকক্ষন তাকিয়ে ছিলাম,
অনেকক্ষণ মাইশার মায়ায় ডুবে ছিলাম,
সেই সাদিয়ার মতো করে ঘুমাচ্ছে আর মাইশা তো সাদিয়ার কার্বন কপি কিন্ত
সাদিয়া শ্যাম ছিলো আর মাইশা ফর্সা,
তারপর মাইসার কথা ভাবলাম আসলে মাইশা মনের দিক থেকে অনেক ভালো একটা মেয়ে,
শুধু মনের দিক থেকে বললে ভুল হবে
সব দিক থেকেই ভালো,
এই সব ভাবতে ভাবতে আবার কখন
ঘুমিয়ে গেলাম জানি না,
আবার যখন ঘুম ভাঙলো তখন আযান দিচ্ছে।
আর মাইসা ডাকা ডাকি করছে,
না উঠে উপায় নাই,
আমাদের বাড়ি থাকতেই বালতি ভর্তি পানি ঢেলে দিয়ে ছিলো আর এটা উনাদের বাসা আরো খারাপ কিছু করতে পারে তাই উঠে নামাজ পড়লাম।
মসজিদ চিনি না তাই বাসায় পড়লাম,।
নামাজ পড়ে বসে আছি রুমে অনেকক্ষণ,
আর অনেক বেলা হয়ে যাচ্ছে নাস্তা করার জন্য ডাকে না কেনো,
বসে বসে ভাবছি এই বাড়ির লোকজন নাস্তা করে না নাকি,
আমি নতুন জামাই নাস্তা থাকবে টেবিল ভর্তি সাজানো,
নিজে থেকে এগিয়ে যাবো কিন্ত লজ্জা লাগছে আর একটু অহংকার কাজ করছে আমি এবাড়ির জামাই আমি যাবো কেনো, আমাকে ডাকতে আসবে তারপর যাবো,
এদিকে লিমা মাইসা কারো খোঁজ নেই,
ঠিক ৯টা ৫০ আমার শাশুড়ী আসলো হাতে একটা গ্লাস ভাবলাম যাক আজ পানি খেয়েই থাকি,কিন্ত সবুজ দেখা যাচ্ছে এটা তো পানি না,আবার দুধও না তাহলে এটা কি,
ভাবলাম বাজারে মনে হয় নতুন জুস আসছে,
শাশুড়ী গ্লাস টা হাতে দিয়ে বলল,।
এত লজ্জা পাচ্ছো কেনো বাবা এটা তো তোমারি বাড়ি,
যখন যা লাগবে চাইবে,আর করলার জুস টা খেয়ে নাও, মাইসা বলল তুমি নাকি প্রতিদিন সকালে করলার জুস খাও,তাই বাজার থেকে তোমার শ্বশুর কে দিয়ে করলা আনিয়ে জুস বানিয়ে তোমাকে দিলাম,
আমি তো হা করে তাকিয়ে রইলাম, সকালের নাস্তা করলার জুস,
ফোন টা বের করলাম আর……..?
চলবে
#শ্যাম_বরণ_কন্যা
#পর্ব-২১
,
সকালের নাস্তায় করলার জুস দেখে মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেলো বলতে ইচ্ছে করছে শাশুড়ীর মাথায় ঢালি,
কিন্ত মা বলেছেন শ্বশুর বাড়িতে যা দিবে তাই খেতে আর স্বাদ বা অস্বাদ হোক বলা যাবে না,
আমি ডগডগ করে করলার জুস খেয়ে
গ্লাস টা দিয়ে দিলাম,
শাশুড়ী যেতেই ওয়াশরুমে গিয়ে ওয়াক
ওয়াক করে বমি করে ফেললাম,।
যে খানে আমি করলা ভাজি খেতাম না,
আর সেইখানে আমি করলার জুস,
কি তেতু রে ভাই,
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখি ছোট
বোন লিমা বসে আছে,
লিমা- কি রে ভাইয়া মনে হল কেউ বমি করছে,
আমি- না,কে বমি করবে,
লিমা- তুই খেতে এলি না কেনো,
এখন কি বলবো যদি বলি করলার জুস
তাহলে তো সবাই কে বলে দিবে আর
খেপাবে সারাজীবন,
তাই বললাম,নতুন জামাই তো তাই আদর যত্ন করে রুমে খাওয়ালো,
(কেমন আদর যত্ন করলো তা তো দেখলেন)
লিমা- কিন্ত ভাইয়া তোর মুখ শুকনো শুকনো লাগছে,
আমি- ধুর কি বলিস এত খেলাম তুই বলছিস শুকনো শুকনো লাগছে,
তুই খেয়েছিস,
লিমা- হুম খেয়েছি,
লিমা চলে গেলো কিন্ত বমি করে এদিকে আমার পেটের ভিতর বিড়াল মনে হয় ইঁদুর তারা করছে,
তাই বাহিরে গেলাম খাইতে,
শ্বশুর বাড়ি থেকে একটু দূরে একটা ছোট খাওয়ার হোটেল পেলাম,
গিয়েই বললাম ভাই ১০টা রুটি দেন আর ৫টা ডিম পোজ,
।
হোটেলের পিচ্ছি ছেলেটা বলল ভাইয়া আপনি একাই খাবেন,
আমি- ভাই কথা না বলে একটু তারাতাড়ি দে না হলে ক্ষুধায় এখানেই মরে যাবো,
-না ভাই দিচ্ছি দিচ্ছি,
পিচ্ছি ছেলেটা রুটি ডিম দিলো,
একটা রুটি হাতে নিলাম,
ছিড়ে মুখে দিবো এমন সময় পাস থেকে একজন বলল,জামাই বাবাজী না,
ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি আমার শ্বশুর দাঁড়িয়ে,
আমি- বাবা আপনি।
–হুম আমি, তুমি কিছু বলো না, তোমার শাশুড়ী কে, খুব মিস্টি খেতে ইচ্ছে করছিলো তাই বাসা থেকে লুকিয়ে আসছি খেতে,আমি জানি তোমার
শাশুড়ি তোমাকে পাঠিয়েছে আমি কি করি,
আমি – মনে মনে (বেটার ডায়বেটিস আছে তাহলে যাক বেচে গেছি)
কিন্ত নীলের আর খাওয়া হল না,
আমি না খেয়ে বিল টা দিয়ে চলে আসলাম জামাই শ্বশুর,
বাসায় এসে শুয়ে আছি ক্ষুধায় প্রাণ যায় যায় অবস্থা,
এমন সময় দেখি মাইসা লুকিয়ে খাবার নিয়ে আসছে,
খাবার দেখে দেহে প্রা ফিরে পেলাম,
মাইসা দরজা বন্ধ করে দিলো,
আমি মাইসার হাত থেকে খাবার নিয়ে
গাপুসগুপুস খেয়ে নিলাম,
কিন্ত মাইসার দিকে তাকিয়ে দেখি
মাইসার চোখে জল তখন একটু ভদ্র হয়ে খাওয়া শুরু করলাম,
খাওয়া শেষে মাইসা আমার হাত ধরে বলল,আমাকে মাফ করে দেন আমি আপনাকে অনেক কস্ট দিছি আজ,একটু মজা করতে গিয়ে আপনার অনেক ক্ষুধা লাগছিলো বুঝতে পারি নাই,
মাইসা চলে গেলো আর আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম,
শুয়ে আছি ভালো লাগছে না দুই একটা শালি থাকলে ভালো লাগতো,
আর শ্বশুর বাড়ি মানুষ থাকে,
বুঝি না মানুষ ঘর জামাই কেমনে থাকে।
আর একটা জিনিস বুঝলাম না,
কেমন যেনো মাইসা কে ভালো লাগতাছে বার বার মাইসার মুখ টা
ভেসে উঠছে,
কিন্ত হঠাৎ মনে হল আমি তো মাইসা কে ডিভোর্স দিতে চাই,
তাই ফোন টা হাতে নিলাম আর আমার নিলজ্জ বেহায়া আমার ফ্রেন্ড রিয়া কে ফোন দিলাম,
ফোন দিয়ে সব বললাম আর ও রাজি হল কিন্ত রিয়া কে যা বললাম সব মিথ্যা,
আর বললাম টাইট একটা জিন্স প্যান্ট পড়ে আর একটা টি-শার্ট পরে চলে আয় আমার শ্বশুর বাড়ি,
আর শ্বশুর বাড়ির ঠিকানা টা মেসেজ করে দিলাম,
মেসেজ টা দিয়েই ঘুম দিলাম,
ওমা ঘুম থেকে উঠে দেখি রিয়া আমার হাজির, রিয়াকে দেখে আমার নিজের মাথাই ঘুরে গেলো,
তখন আমি গোসল করার জন্য গোসল করার জন্য বের হচ্ছিলাম, খালি গায়ে
বের হয়ে গেলাম দেখার জন্য কে আসছে লিমা এসে খবর দিলো তোর ফ্রেন্ড আসছে,
রিয়া এসেই আমাকে হাগ দিলো,
মাইসা তাই দেখে আড় চোখে তাকিয়ে আছে,
আর আমার শ্বশুর শাশুড়ী লজ্জায় রুমে চলে গেলো,
রিয়া- দোস্ত কেমন আছিস, তুই এত
শুকিয়ে গেছিস কেনো,
রিয়া মাইসার দিকে তাকিয়ে,
রিয়া- ভাবি ভালো আছেন,
হাগ দেওয়ার কথা মাইসা কে দিলো আমাকে মাইসার দিকে তাকানো যাচ্ছে না,
মনে মনে রিয়া একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে
অভিনয় টা আর একটু কম করে কর,।
এইবার রিয়া হেলেদুলে এসে আমার
হাত টা ধরে মাইসা কে বলল,
ভাবি আপনার ঘর কোন টা,
মাইসা বলছে না চুপ করে আছে,
পারলে মাইসা আমাকে চোখ দিয়েই কেটে ফেলবে,
লিমা টিভি দেখছিলো, মাইসা কিছু
বলছিলো না বলে লিমা কে জিজ্ঞেস করলো বলল,লিমা তোমার ভাবির রুম কোন টা,
লিমা- আপু যার হাত ধরে আছো তাকে
জিজ্ঞাসা করো,
রিয়া- এই নীল তোর ঘরে নিয়ে চল কথা আছে আর একটু জোরেই বলল,রিয়া আমাদের কেউ যেনো বিরক্ত না করে।
আর ঢোকার সময় দরজায় নক করে যেনো ঢুকে,,,
বলে আমার হাত ধরে রিয়া চলল রুম্র।
রিয়ার বাচন ভঙ্গি দেখে মনে হল খাল কেটে কুমির আনলাম,
চলবে