#শ্রাবণ_আঁধারে
#পর্ব_৭
#নিশাত_জাহান_নিশি
“মেয়েটাকে গন ধর্ষণ করা হয়েছিলো চিএা। তুই যদি সত্যিই কিছু জেনে থাকিস দয়া করে আমাদের সব খুলে বল৷ মেয়েটাকে ন্যায় দেওয়ার চেষ্টা কর!”
জিহ্বা দ্বারা ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে চিএা পিছু ফিরে প্রকান্ড চোখে ভয়ঙ্কর অস্থিরতা নিয়ে কাকুকে উদ্দেশ্য করে কম্পিত কন্ঠে বলল,,
“ধধধর্ষণ? মৃমৃমৃনালীকে ধধর্ষণ করা হয়েছে?”
কাকু গলা জড়ানো কন্ঠে বললেন,,
“শুধু ধর্ষণ নয় মা, গন ধর্ষণ!”
কপালের অগ্রভাগের চুলগুলো শক্ত হাতে টেনে ধরে চিএা মাথা নিচু করে হু হু শব্দে কেঁদে বলল,,
“আমি কিছু জানি না বাবা। বিশ্বাস করো, আমি কিছু জানি না! মৃণালীকে কেউ গন ঘর্ষণ করতে পারে, এ আমার ভাবনা চিন্তার ও উর্ধ্বে বাবা। শূণ্য মাথায় আমি কিছু ভাবতে পারছি না, বিশ্বাস করো!”
কাকু হতাশ কন্ঠে কপাল চাঁপড়ে রুম থেকে প্রস্থান নিচ্ছেন আর বলছেন,,
“পুলিশ তোকে ছাড়বে না চিএা। জানি না ঈশ্বর তোকে কোন যাতাকলে ফাঁসিয়ে দিয়েছেন। তোর গরীব বাবার পক্ষে হয়তো সম্ভবপর হবে না, তোকে এই যাতাকল থেকে উদ্ধার করা! অন্যায় না করে ও সেই অন্যায়ের তকমা থেকে তোকে নিরাপদ করা, দোষমুক্ত করা!”
কাকুর অনুরক্তি ভরা নির্মম কাকুতি শুনে চিএার কান্নার ঢেউ যেনো দ্বিগুন বেড়ে গেলো। ঘর্মাক্ত অবস্থায় বিছানার উপর ধপ করে বসে চিএা মুখ চেঁপে বোবা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। তার এই বোবা কান্নার ঢলে বোধ হয় পুরো ঘরময় জলে পরিপূর্ণ রূপে ডুবে যাবে। সাথে আমাকে ও ভাসিয়ে নিয়ে যাবে!
কপালটা দীর্ঘক্ষণ ঘঁষে আমি মস্তিষ্কে প্রখর বল প্রয়োগ করে কিছু অমিমাংসিত হিসাব মেলানোর চেষ্টা করছি। চিএার ভাব, ভঙ্গি, অল্পতেই হুট করে রেগে যাওয়া, কান্নার ধরণ, আকস্মিক বিচলিত হয়ে পড়া, কথা বলতে জড়তা বোধ করা সম্পূর্ণ বিষয়টা আমার চরম সন্দেহের ঠেকছে। চিএা যদি সত্যিই মেয়েটার ধর্ষণ এবং সুসাইড সম্পর্কিত বিষয়টায় কিছু নাই জেনে থাকে তবে হুটহাট তার এতোটা বিচলিত হয়ে পড়ার কারণ কি? আসন্ন ভয় থেকেই কি চিএা এতোটা অস্থির, অবিচল? নাকি চিএা এই গোটা বিষয়টায় আষ্টেপৃষ্টে জড়িত বলে ভীত-সন্ত্রস্ত? তবে এই মুহূর্তে চিএাকে আমার সন্দেহের বিষয় গুলো অবহিত করা যাবে না। সরল, সহজ এবং স্বাভাবিক কন্ঠে চিএার মুখ থেকে লুকায়িত আসল সত্যিটা আমার বের করতে হবে। প্রবল সন্দেহের বশবর্তী হয়ে ও আমি মুখে জোরপূর্বক হাসি টেনে চিএার গাঁয়ের সঙ্গে চিপকে বসলাম। চিএা মাথা তুলে আমার দিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে চেয়ে আচমকা আমাকে ঝাঁপটে ধরে ফুঁফিয়ে কেঁদে বলল,,
“বিশ্বাস কর আরাধ্য। আমি এই ধর্ষণ এবং সুইসাইডের বিষয়ে কিছুই জানি না। আমি মৃনালীকে ভালো ভাবে চিনতাম ও না পর্যন্ত। নাচের অনুশীলন ক্লাসে মাঝে মধ্যে দু, একবার দেখা হতো, নাচ সম্পর্কিত টুকটাক কথা হতো। এর বাইরে কোনো রূপ বন্ধুত্বপূর্ণ কথা বার্তা আমাদের মধ্যে কখনো হয় নি। যেখানে আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব সুলভ কোনো সম্পর্কই ছিলো না, সেখানে কেনো আমাদের মধ্যে অতিরিক্ত কোনো কথা, বার্তা হবে বল?”
চিএার মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে আমি স্বাভাবিক কন্ঠে মৃদ্যু হেসে বললাম,,
“কাম অন চিএা। তুই এতো ব্যস্ত হচ্ছিস কেনো? নিজেকে অন্তত আমার কাছে প্রমাণ করতে হবে না তোর। আমি জানি, ” আমার চিএা কেমন!”
অল্প সময় থেমে আমি পুনরায় ম্লান হেসে বললাম,,
“তুই শুধু একটাই কথা বল আমাকে? তুই কি কোনো কারণে খুব ভয় পাচ্ছিস চিএা? হয়তো ভাবছিস, এই কারণটা কেউ জানতে পারলে তোর বিশেষ কোনো ক্ষতি হবে বা কেউ উদ্দেশ্যপ্রবণ ভাবে তোর কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করবে?”
“আমি কোনো বিশেষ কারণে ভয় পাচ্ছি না আরাধ্য। কেউ আমার ক্ষতি করবে, সেই কারনে ও ভয় পাচ্ছি না। তবে মৃনালীর সুইসাইড এবং অকারণে সুইসাইড নোটে আমার নাম লিখে যাওয়া সম্পূর্ণ ঘটনাটাই আমার মনে সীমাহীন প্রশ্ন, উদ্বিগ্নতা, কৌতুহল এবং প্রখর ভয়, ভীতির সঞ্চার করছে।”
“যদি তুই উদ্বিগ্নতা, কৌতুহল বা ভয় থেকেই এতোটা আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে থাকিস তাহলে বলব এই ভুলটা করিস না। যদি তুই কোনো অন্যায় নাই করে থাকিস, তবে তোর ভয় পাওয়ার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। তবে তোর কথার প্রেক্ষিতে এই বুঝা যাচ্ছে, তোকে কেউ ষড়যন্ত্র করে উদ্দেশ্যপ্রবণভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে চিএা। নয়তো এমন কিছু আছে যা তুই জানিস না, তোর অগোচড়ে হয়তো অনেক বিশাল কিছু ঘটে গেছে। এর জন্য আমাদের কি করতে হবে জানিস?”
চিএা অনবরত হেচকি তুলে বলল,,
“কিকি?”
“ধৈর্য্য ধরে ঠান্ডা মাথায় আমাদের এই ধর্ষণ এবং সুসাইড সম্পর্কিত সমস্ত রহস্য উদঘাটন করতে হবে। মৃনালী সম্পর্কে, মৃনালীর পরিবার সম্পর্কে, মৃণালীর প্রতিটা ব্যক্তিগত সম্পর্ককে সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। যাকে বলে, চুলছেড়া বিশ্লেষন। হয়তো পেলে ও আমরা অনেক কিছু পেয়ে যেতে পারি।”
চিএা অনবরত শুকনো ঢোক গিলে বলল,,
“যা করার পুলিশ করবেন। আমরা কেনো এতো কিছু করতে যাবো? যেহেতু এই সম্পূর্ণ ঘটনাটায় আমি পুরোপুরি নির্দোষ, সেহেতু আমার বা আমাদের দায় পড়ে নি এতো জটিল রহস্য খুঁজে বের করার। সিরিয়াসলি দায় পড়ে নি আমাদের।”
চিএার খামখেয়ালী চোখে জিগ্যাসু দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমি কর্কশ কন্ঠে বললাম,,
“পুলিশকে হঠাৎ এতো ভরসা করার কারণ কি চিএা? পুলিশদের উটকো জিগ্যাসাবাদে তুই ইন্টারেস্টেড? খুব মজা পাস নিশ্চয়ই?”
বুকের পাজর থেকে মাথা উঠিয়ে চিএা চোখের জল মুছে খানিক কম্পিত কন্ঠে বলল,,
“হ্যাঁ ইন্টারেস্টেড! মজা পাই আমি। ভালো এতেই হবে আরাধ্য, আমরা যদি এই বিষয়টাকে পুলিশদের হাতে ছেড়ে দেই। দয়া করে তুই ও আর এই বিষয়টা নিয়ে অহেতুক মাথা ঘামাস না। নিজের জায়গা থেকে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা কর।”
ভ্রু যুগল কিঞ্চিৎ কুঁচকে আমি কপালে বিরক্তির ভাঁজ তুলে বললাম,,
“মানে তোর উপর যে অন্যায় বা দায়টা পড়ল, এই দায়ের ভার তুই পুলিশদের উপর এক পাক্ষিকভাবে চাঁপিয়ে দিতে চাইছিস? মানে স্ব-উদ্যোগে নিজেকে দায় মুক্ত করার কোনো ইন্টারেস্ট নেই তোর?”
আমার পাশ থেকে উঠে চিএা গাম্ভীর্য পূর্ণ কন্ঠে বলল,,
“না নেই৷ আমি কোনো অন্যায় বা পাপ করলেই তো সেই পাপের দায় নিবো তাই না?”
উত্তেজিত হয়ে আমি স্থান ছেড়ে উঠে চিএার সম্মুখে স্থগিত হয়ে বললাম,,
“পুলিশদের জেরা সম্পর্কে তোর কোনো আইডিয়া আছে চিএা? যেহেতু মেয়েটা সুস্পষ্টভাবে সুসাইড নোটে তোর নামটা টুকে গেছে তাতে কি প্রমাণ হয় জানিস? তুই এই সুসাইডের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যদি মেয়েটার বাড়ির লোক তোর নামে থানায় মামলা এন্ট্রি করে দেয় না? তবে পুলিশরা তোকে কঠোর জেরার পাশাপাশি রিমান্ডে নিতে ও দ্বিধাবোধ করবেন না৷ মিথ্যাটাকে ও সত্যি প্রমাণিত করতে তাদের দু সেকেন্ড সময় লাগবে না তখন! ভেবে দেখেছিস বিষয়টা?”
চিএা স্থির দৃষ্টিতে আমার পানে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে আচমকা চোখ দুটো নিচে নামিয়ে ছোট আওয়াজে বলল,,
“এসব নিয়ে তুই ভাবিস না আরাধ্য। ঈশ্বর ঠিক একটা উপায় খুঁজে দিবেন। এই সময়টাতে আমি একটু একা থাকতে চাইছি। প্লিজ আমাকে একটু একা ছেড়ে দে।”
চোয়াল শক্ত করে আমি দু হাত দিয়ে চিএাকে জোরালো ভাবে ঝাঁকিয়ে উচ্চ শব্দে চেঁচিয়ে বললাম,,
“টেনশান করতে হবে আমার। অবশ্যই এই বিষয়টা নিয়ে টেনশান করতে হবে আমার। যদি এই বিষয়টাতে আমার বাবার চুল পরিমান কোনো হাত থেকে থাকে, ঈশ্বরের দিব্যি খেয়ে বলছি, বাবাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে আমার মোটে ও কুন্ঠাবোধ হবে না। এই জঘন্য খেলা আমি অচিরেই ধ্বংস করব। তুই শুধু মুখ খুলে শুধু বল? আমার বাবাকে তোর কোনো ভাবে সন্দেহ হচ্ছে কিনা? যদি ক্ষুদ্র আভাস ও তুই পেয়ে থাকিস না? আমাকে জাস্ট ইঙ্গিত দে। কেঁচো খুঁড়ে কিভাবে কেউটে বের করতে হয় আমার খুব ভালো করে জানা আছে।”
চিএার কপালের ভাঁজে বিরক্তি ভর করল দ্বিগুনভাবে। এক ঝটকায় আমাকে সরিয়ে চিএা দাঁতে দাঁত চেঁপে বলল,,
“পাগল হয়ে গেছিস তুই আরাধ্য? জেঠু কেনো অযথা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে যাবেন? উনি আমাকে পছন্দ করেন না, এই অব্দি ঠিক আছে। তবে অহেতুক উনি আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করবেন এই ধারনাটা তোর সম্পূর্ণ ভুল৷ অনুরোধ করছি আরাধ্য, এই উদ্ভট চিন্তা ভাবনা গুলো তুই ভুলে ও মাথায় ঠাঁয় দিস না। পাপ লাগবে তোর, পাপ।”
আমি ব্যাকুল কন্ঠে বললাম,,
“তাহলে তুই ই বল না চিএা? তোর বিরুদ্ধে কে ষড়যন্ত্র করছে? মুখ ফুটে জাস্ট একবার বল, আমি তোকে এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করার জন্য শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করব।”
চিএা কান্না ভুলে দীর্ঘ একটা হামি তুলে বলল,,
“তুই বাড়ি ফিরে যা আরাধ্য। কাল সকালে এই বিষয়ে তোর সাথে আমার খোলাখোলি ভাবে কথা হবে। আপাতত ভীষণ ক্লান্ত আমি। নিশ্চিন্তে একটু চোখ বুজতে চাই।”
আমাকে পাশ কাটিয়ে চিএা দ্রুত পায়ে হেঁটে উল্টো পাশ ফিরে বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল। চিএা নিশ্চয়ই কিছু গোপন করছে, যা তার ভয়ার্ত চোখ, মুখ, ভাব, ভঙ্গি দেখে আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি। মনে হচ্ছে এভাবে ঢিলেঢালা ভাবে কিছুই হবে না। যা করতে হবে আমার চিএার অগোচড়ে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে করতে হবে। একাই আমাকে এই ধর্ষণ এবং সুসাইডের রহস্য ভেদ করতে হবে। প্রথমে মৃনালীর পরিবারের সাথে আমার যোগাযোগ করতে হবে। মৃনালী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।
গলা ঝাঁকিয়ে আমি চিএার পাশে বসে আলতো হাতে চিএার মাথায় হাত বুলাতেই চিএা হঠাৎ কেঁপে উঠল। দু চোখ বেয়ে তার টপটপ করে অশ্রু ঝড়ছে। মন খারাপের রেশ নিয়ে আমি খানিকটা ঝুঁকে চিএার কানে ফিসফিসিয়ে জিগ্যাসু কন্ঠে বললাম,,
“মৃণালীর হলের ঠিকানাটা দিবি?”
চিএা আচমকা আমাকে হেচকা টান দিয়ে বুকের মাঝখানটায় চেঁপে ধরে মিহি কন্ঠে বলল,,
“ভাত, কাপড় আনিস নি সঙ্গে করে? বর হয়েছিস, নতুন বউয়ের ভাত কাপড়ের দায়িত্ব নিবি না?”
চরম আশ্চর্যে আমার পাথর মূর্তি ধারণ করার জোগাড়। আদৌ শ্বাস পড়ছে কিনা সন্দেহ হচ্ছে ভীষণ। চিএাকে আমি ধরে আছি ঠিকই তবে আমার মধ্যে কোনো বোধ শক্তি বিদ্যমান আছে কিনা সঠিক ঠাওড় করতে পারছি না। অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে এই চিরন্তন সত্যির মুখোমুখি হতে হবে আগে থেকে ভেবে রাখি নি আসলে। না ছিলো পূর্ব থেকে কোনো প্রস্তুতি! আমার চুলের ভাঁজে মুখ ডুবিয়ে চিএা কয়েকটা তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলল,,
“ভালোবাসিস, মুখে স্বীকার করতে পারিস না? এতো ভীতু কেনো তুই?”
আমি কম্পিত কন্ঠে বললাম,,
“তোর কাছে তো জাত, বাতের পার্থক্য বরাবরই অধিক প্রিয় তাই না? যদি কখনো বলতাম ও ভালোবাসি, তবে নিশ্চয়ই তুই এক কথাতেই রাজি হয়ে যেতি না?”
“জাত, বাতের পার্থক্য এখনো আমার কাছে অধিক প্রিয়। যখন বুঝতে পারলাম, আমি রোজ নিয়ম করে সিঁথিতে তোর নামের সিঁদুর পড়ছি, তখন মনে হলো বিয়ে তো আমাদের হয়েই গেছে। তবে কেনো আমি খামোখা জাত নিয়ে পড়ে আছি?”
অধিক আশ্চর্যিত হয়ে আমি জিগ্যাসু কন্ঠে বললাম,,
“বুঝলি কিভাবে? ওটা সিঁদুর ছিলো?”
“ছোট বেলা থেকে তোর প্রখর ভালোবাসাটা যেভাবে একটু একটু করে বুঝে আসছিলাম, তোর হাতের সিঁদুরের ছোঁয়া ও ঠিক একই ভাবে বুঝতে পারছিলাম। তোর মনের ভাব বা মস্তিষ্কের বুঝাপড়া বুঝতে আমার বেশি সময় লাগে নি কখনো। বুঝে ও কিছু চেঁপে রাখাটা খুবই নির্মম অত্যাচার নিজের মন এবং মস্তিষ্কের জন্য। এই না বলা যন্ত্রনায় দীর্ঘ কয়েক বছর যাবতই আমি ছটফট করছিলাম। শুধু প্রকাশ করার কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ছোট জাতের তো, তাই এতো কুন্ঠা করত মনে!”
জোরালো ভাবে চিএাকে আঁকড়ে ধরে আমি উত্তেজিত কন্ঠে বললাম,,
“বুঝে ও তুই এতো গুলো বছর ধরে আমাকে এতোটা নির্মমভাবে ভুগিয়েছিস চিএা? কখনো মনে হয় নি? তোকে হৃদয় চেঁড়া ভালোবাসার অপ্রকাশিতব্য যন্ত্রণাটায় আমি কতোটা ঢুকড়ে মরছি? আমাকে চিরতরে হারানোর ভয় ও তোর মধ্যে কাজ করে নি? কিঞ্চিৎ পরিমান দয়া মায়া ও নেই তোর মনে? এতোটা শক্ত মনের তুই?”
“তুই ও তো কখনো মুখ ফুটে বলিস নি, ভালোবাসিস আমাকে। তবে আমি কেনো নিজ থেকে তোর মনের কথা প্রকাশ করতে যাবো? মেয়েরা চাইলেই মন খুলে সব প্রকাশ করতে পারে না আরাধ্য। হয়তো জড়তা কাজ করবে নয়তো লজ্জাবোধ কাজ করবে বা মনে পুষে রাখা জাগ্রত আবেগকে কয়েকটা শব্দো প্রকাশ করতে নিজেকে কিঞ্চিৎ হীন মনে করবে। তবে ভেতরে ভেতরে কিন্তু সে ও অতি সত্য মনের গোপনটা প্রকাশ করতে না পারার যন্ত্রনায় ধুঁকে ধুঁকে মরবে। এই যন্ত্রণা খুব নির্মম হয়। যে এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যায়, কেবল সেই ই অনুভব করতে পারে সেই না বলা যন্ত্রণার ক্ষতটা।”
মনের অজান্তেই ঘোর আবেগে ডুবে আমি এই প্রথমবারের মতোন চিএার গলায় মুখ ডুবিয়ে গরম শ্বাস ছেড়ে বললাম,,
“তোর সম্মতি থাকলে, আমি আজই তোর ভাত-কাপড়ের দায়িত্ব নিতে পারি। কি? সম্মতি আছে তো?”
“জেঠু আমাদের কাউকেই আস্ত রাখবেন না আরাধ্য! ভুলে যা এইসব চিন্তা! তোর সাথে হয়তো এই জন্মে ঘর বাঁধা হবে না আমার!”
ইতোমধ্যেই পাশের রুম থেকে কয়েকজন পুরুষ নালি কন্ঠের আওয়াজ ভেসে এলো। কাকুর উত্তেজিত কন্ঠের শোরগোল ও শোনা গেলো। উদ্বিগ্ন হয়ে চিএাকে ছেড়ে আমি হুড়মুড়িয়ে বিছানা ছেড়ে দাঁড়াতেই রুমের দরজা ঠেলে দুজন পুলিশ দ্রুত পায়ে হেঁটে রুমের ভেতর প্রবেশ করলেন। তড়িঘড়ি করে চিএা বিছানা ছেড়ে দাঁড়াতেই গম্ভীর স্বভাবের একজন পুলিশ অফিসার হাতে থাকা দন্ডয়ানমান শক্ত এবং মোটা ধরনের লাঠিটা এক হাত থেকে অপর হাতে হস্তান্তর করে চিএাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,
“আপনাকে আর থানায় যেতে হবে না মিস চিএা। সুইসাইড নোটে লিখা আপনার নামের সাথে, ভিক্টিমের অন্য এক দুঃসম্পর্কের আত্নীয়ের নাম মিলে যায়। সাসপেক্ট ভেবে ভুলবশত আপনাকে জেরা করা হয়েছিলো সাথে অযথা বিরক্ত করা হয়েছিলো। আমাদের অদক্ষতার জন্য আমরা ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।”
স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে চিএা ম্লান হেসে আমার দিকে চেয়ে বলল,,
“দেখলি তো? মিথ্যে কোনো অন্যায়ের দায় আমার উপর বর্তায় নি। আমি যা করি নি, তার জন্য আমাকে লড়তে হবে না!”
#চলবে….?