শ্রাবণ_তোমার_আকাশে,পর্ব_৪

0
1800

শ্রাবণ_তোমার_আকাশে,পর্ব_৪
লেখনীতে-ইশরাত জাহান ফারিয়া

গোধূলির লালচে আকাশ। নীল রঙের আসমানের ওপর তুলির আঁচড়ে কাটা লাল টকটকে রঙটা ছোপছোপে আকার ধারণ করেছে। হালকা হাওয়ায় দোদুল্যমান সবকিছু। বেলা ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। মুক্ত বাতাসে ওর চুলগুলো ওড়াওড়ি করছে অবিরামভাবে। হাতে মোবাইল ফোন। স্ক্রিনের ওপর ভেসে উঠছে শাইনির নাম। বেলা ফোন রিসিভ করছেনা। সে ভাবছে কী করা তার উচিৎ! শাইনির মায়ের কাছ থেকে সবটা জেনে বেলা ঠিক করলো বাসার সবাইকে সবকিছু জানিয়ে দেবে। সময় কারো জন্য অপেক্ষা করেনা। সঠিক সময় না বললে পরবর্তীতে যে-কোনো ক্ষতিসাধন হতে পারে। মেহমানরা বিদায় হওয়ার পর সময় ও সুযোগ বুঝে বাবা-মায়ের কানে কথাটা তুললো সে। নাইমুদ্দীন সাহেব বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন। তাঁদেরকে এতবড় ধোঁকা দেওয়া হয়েছে তিনি সেটা কিছুতেই মানতে পারলেন না। তিনি নাজনীন বেগমকে ফোন লাগালেন। ধরলো তিনিই। সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কিছু বলবেন ভাইজান?
-জি। আপনাদের ছেলের যে চরিত্রে সমস্যা আছে লুকালেন কেন আমাদের কাছ থেকে?
নাজনীন বেগম এমন কথা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি ভাবেননি বেলা তাঁর ফ্যামিলিকে সবটা বলে দেবে। থতমত খেয়ে বললেন, ‘আ আসলে বলিনি কারণ শাইনি চায়নি।’
-আপনার ছেলে চায়নি আর আপনারা বলেননি। বাহ, কী সুন্দর লজিক দিলেন! মানে টাকাপয়সা আছে বলে মানুষকে মানুষ বলে গণ্য হয়না আপনাদের তাইনা?
-সেরকম কিছু নয়। ছেলেটাকে ভীষণ আদরে মানুষ করেছি, তাই ওর আবদার ফেলতে পারিনি। তাছাড়া আমরা নিজেরাও জানতাম না শাইনির সাথে অন্য কোনো মেয়ের সম্পর্ক আছে!
-বাহ! আপনারা মা-বাবা ছেলের খোঁজ রাখবেন না? ও কী করছে না করছে সেটা জানার আগ্রহ হয়নি আপনাদের?
-ভাইজান শুনুন..
-কোনো কথা শুনতে চাইনা৷ আমার মেয়ে আপনার ঘরের বউ হয়ে কোনোদিন যাবেনা। চরিত্রহীন কোথাকার!
-সময় নিয়ে ভাবুন একবা..
-তার কোনো প্রয়োজন নেই৷ আমার মেয়ে আকাশ থেকে টুপ করে পড়েনি, বানের জলে ভেসেও আসেনি। অতি শ্রীঘ্রই বিয়েটা ভাঙার ব্যবস্থা করছি আমি। আর আপনি বা আপনার ছেলে যদি এতে বাঁধা দেয় তাহলে ভালো হবেনা বলে দিচ্ছি।
-শাইনিকে একটা সুযোগ তো দিন৷ আশা করি ও এরকম করবেনা। আমি বুঝিয়ে বলবো।
নাইমুদ্দীন সাহেব রেগে বললেন, ‘যে ছেলে বিয়ের পরদিনই হোটেলে যায় মেয়ে নিয়ে তার কাছ থেকে আর কী আশা করব! এসব নাটকীয়তা বাদ দিন।’
নাজনীন বেগম বোঝানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু নাইমুদ্দীন সাহেব কিছুই শুনলেন না। এই ঘটনার পর দুই বাড়ির সব সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো। কিন্তু শাইনি বেলার সাথে সম্পর্ক নষ্ট করলোনা। নিয়মিত ফোন করে খোঁজখবর নিবে ওর। বেলা ওকে এড়িয়ে যেতে চায়৷ কিন্তু শাইনি থ্রেট দিয়েছে। যদি ওর সাথে কথা না বলে তাহলে বেলার ক্ষতি করে দেবে। কলেজে যাওয়ার পথে ওকে কিডন্যাপড করতে পারে!
সেজন্য বেলা ফোনের যোগাযোগটুকু রেখেছে। কারণ তাদের ডিভোর্স হয়ে যাবে, এ বিষয়ে কোনো চিন্তা নেই ওর! কিন্তু শাইনি তার পুরাতন চরিত্রই বহাল রেখেছে।

এইতো, ক’দিন হলো বেলার ফাইনাল এক্সাম শুরু হয়েছে। পড়াশোনাতে ব্যাঘাত ঘটতে পারে সেজন্য ও মোবাইল অফ করে দিয়েছিল। সেদিন রাতেই পাঁচিল টপকিয়ে ওর রুমে এসে হাজির শাইনি। বেলা তখন টেবিলে পড়াশোনায় মগ্ন। ইংরেজি এক্সাম। এই বিষয়ে খুব একটা পরিপক্ব নয় বেলা। ভেবেছিল মনোযোগ দিয়ে পড়ে বাকিসবটা শেষ করবে! কিন্তু শাইনি চোরের মতো এসেই ওকে ভয় দেখিয়ে দিলো। খালি ঘরে পেছন থেকে এগিয়ে ওর কানের কাছে গলার স্বর পালটে এমন ভয়ংকর একটা কথা বললো যে বেলা চিৎকার করে উঠেছিল ভূতের ভয়ে। সেই রাতে আরও বিভিন্নভাবে ওর পড়ায় ডিস্টার্ব করেছে শাইনি। বেলা রেগে অনেক কথা বললে শাইনি তাতে পাত্তা দেয়না, হেসে উড়িয়ে দেয়। বেলার অনেক অনুরোধ স্বত্তে ভোরবেলা সে চলে যেতে উদ্যত হয়। কিন্তু যাবার আগে সে স্ট্রিক্টলি বলে গেছে যা-ই হয়ে যাক না কেন ফোন যাতে বন্ধ না করে বেলা। তাহলে এভাবেই পাঁচিল টপকে ওর ঘরে আসবে। আর কাউকে বললে ওকে নাকি গলা টিপে মেরে ফেলবে এমন নানান হুমকি!

তারপর ফিজিক্স এক্সামের দিন কলেজের সামনে শাইনি দাঁড়িয়ে ছিল। বেলা এক্সাম শেষে বের হওয়ার সময় ওকে দেখে অবাক৷ এই একটা লোক, যাকে সে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে। যে লোকটা বিয়ের তিনটা সপ্তাহে নানাভাবে নিজের চরিত্রহীনতা গর্বের সাথে প্রকাশ করেছে। অথচ কেন সে এসব করছে তা বেলার অজানা। কারণে-অকারণে বেলাকে ফোন করে সে বিরক্ত করে। উদ্ভট উদ্ভট কথা বলে। যে কাজগুলো বেলার পছন্দ নয় সেগুলো করে।
দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ওর উদ্দেশ্যে হাত নাড়াচ্ছে। বেলা এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-আপনি এখানে?
শাইনি শার্টের হাতা ফোল্ড করতে কর‍তে উত্তর দিল,
-তোমাকে নিতে এসেছি।
-আমি একাই ফিরতে পারি। সঙ্গে ফ্রেন্ডরা আছে।
-হাজব্যান্ড থাকতে ফ্রেন্ডের সাথে কেন যাবে। যাইহোক, চলো।
-কোথায়?
-ঘুরতে যাব।
-আমার ঘুরতে যাওয়ার সময় নেই। কাল আমার হায়ার ম্যাথ এক্সাম। অনেক পড়া বাকি!
শাইনি নাছোড়বান্দা। সে রিকশাওয়ালা ডেকে নিয়ে এলো। বেলার হাজারো বারণ, অনুরোধ সে যেন শুনতেই পেলোনা। রিকশায় ওঠে রাগে বেলার হাত-পা কাঁপছিল। তা দেখে শাইনি হাসতে হাসতে বলল,
-তুমি কী মৃগী রোগী? কাঁপাকাপি করছ কেন?
-আপনার মাথা।
-তুমি নাকি আমার নামে বিচার দিয়েছো?
-হ্যাঁ দিয়েছি। আপনার করা সকল কুকর্ম আমি সবাইকে বলে দিয়েছি!
-ভালো করেছো।
বেলা অবাক হয়ে বলল, ‘আপনার ভয় লাগছেনা?’
-ভয়? নাহ। ওটা আমার নেই।
-কেন?
শাইনি গা ছাড়াভাবে বলল, ‘এমনি।’

তারপর দুজনের মধ্যে আর কথা হলোনা। দু’জনে একটা রেস্টুরেন্টে যায়। সেখানে দুপুরের খাবার খেয়ে নেয়। তারপর বেলাকে শাইনি নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। শেষ বিকেলের পড়ন্ত রোদে নদীর পানি ঝিলমিল করছিলো। ওপাড়ের কোনোকিছুই তখন চোখে পড়ছিলো না কারোর৷ ঝোপের পাশের বুনো ঘাসফুলে সূর্যের হলদে ছটা পড়ার মুহূর্তে যে সুন্দর অভাবনীয় দৃশ্য তৈরি হয়েছিল শাইনি সেটা স্মৃতি হিসেবে মুঠোফোনে ছবি তুলে রাখে। নৌকায় চড়ে তারা। নৌকার পাটাতনে শুয়ে আকাশের দিকে চোখ রেখে শাইনি বলে উঠে, ‘কেমন লাগছে সবকিছু?’
বেলা বিরক্ত হচ্ছিলো। চারপাশের হাজারো সৌন্দর্য ওকে মুগ্ধ কর‍তে পারছিলোনা ওই একটা মানুষের জন্যই। সে উত্তর দিল, ‘মোটামুটি।’
-আমার কিন্তু ভালোই লাগছে।
-সেতো লাগবেই।
-নিশা কোনোদিন আমার সাথে নৌকায় করে ঘুরেনি।
-কেন?
-সে এসব পছন্দ করেনা৷ আসলে বড়লোক ঘরের মেয়ে তো!
-আপনিও বড়লোক ঘরের ছেলে!
-তা তো বটেই।
শাইনি দুলে দুলে হেসে বলল, ‘তোমাকে একটা সত্য কথা বলি?’
বেলা মাথা নাড়িয়ে বলে, ‘হুঁ।’
-আসলে আমি ঠিক জানিনা ভালোবাসা কী। যখন যেটা মাথায় চাপে সেটা আমার লাগবেই।
-নিশা আপুটাকেও ভালোবাসেন না? না চাইতেও কথাটা বলে উঠলো বেলা।
-জানিনা।
-ওহ আচ্ছা।
বলে চুপ হয়ে যায় বেলা। নদীতে তেমন কোনো নৌকা নেই। খুব দূরে একটা পালতৌলা নৌকা দেখা যাচ্ছে। আকাশ যেন নদীর পানিতে মিশেছে। মেঘেরা যেন গা ডুবিয়ে গোসল করছে বিশাল নদীটাতে। বেলার মনে হলো নদীটা বিশাল এক আয়না। এই আয়নাতে তাকালে কেমন যেন বুক কেঁপে উঠে ওর। সে হাত বাড়িয়ে পানি ছুঁয়। শীতল শিহরণে হাত কেঁপে উঠে। নদীতে সে অনেক ঘুরে বেড়িয়েছে। কখনো এরকম অনুভূতি হয়নি। আসলে অনুভূতি নিয়ে গভীরভাবে ভাবার মতো সময় তখন ছিলোনা। পরিবারের সাথে হৈ-হল্লা করে আসতো, কথা বলতে বলতেই সময় কেটে যেতো। কিন্তু এবারের নৌকা চড়াটা আলাদা। ভীষণ আলাদা। যাকে ও পছন্দই করেনা তার সাথে এসেছে বলেই নিজেকে খুব একা মনে হচ্ছে ওর। সেজন্যই ভাবনার ঘরের দুয়ার খুলে গেছে! রোদেরা খেলা করছে সানগ্লাস পরিহিত শাইনির ওপর। বেলা তাকাতেই শাইনি ওঠে বসলো। গম্ভীর কন্ঠে বলল, ‘তোমাকে এখান থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিই? সাঁতার জানো?’
বেলা আঁতকে উঠে বলল, ‘না না। এমন কিছু করবেন না!’
-আমি চাইলেই অনেককিছু কর‍তে পারি। আবার অনেককিছুই পারিনা।
বেলা হঠাৎ বলে উঠলো, ‘একটা জিনিস চাইবো?’
-চাইতেই পারো।
-আপনি আমাকে ছেড়ে দিন। নিজের মতো বাঁচতে দিন।
শাইনি ম্লান হাসলো। বলল,’নিজের মতো সবসময়ই বাঁঁচবে, চিরকাল বাঁচবে। কেউ বাঁধা দেয়নি না দেবে।’
-আমি সবসময় চাইতাম আমার জীবনসঙ্গী যে হবে, তিনি হবেন একজন ভালো মানুষ। সে তার স্ত্রীকে প্রচুর ভালোবাসবে, খেয়াল রাখবে, যত্ন করবে। যার অন্য কোনো নারীর সাথে সম্পর্ক থাকবেনা আই মিন পরকীয়াকারীদের আমি ভীষণ ঘৃণা করি। ভালো মনের একজন প্রেমিক হবে, যার প্রেমে কোনো খুঁত থাকবেনা। যে বুঝদার হবে এবং সবাইকে সম্মান করবে। যে সবার সুবিধা-অসুবিধা বুঝবে! কিন্তু আপনার মাঝে সেসব কিছুই নেই! আমি কী বুঝাতে চাইছি আপনি বুঝতে পারছেন তো?
-হুঁ।
-আপনি আমার যোগ্য নন। আর নাতো আমি আপনার ক্লাসের বা সেই স্ট্যান্ডার্ডের মেয়ে!
-তো? কী বলতে চাও?
বেলা মুখ কালো করে বলল, ‘কিছুনা।’
-তুমি বাসার সবাইকে জানিয়ে কিন্তু ঠিক করোনি!
-কী?
-আমার ব্যাপারে সবাইকে সবটা বলে দিয়েছো কেন? আমি মানা করিনি?
-আপনার মানা শুনতে আমি বাধ্য নই!
-যাইহোক। একটা গল্প বলি?
বেলা বোকার মতো চেয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘কীসের গল্প?’
-শুনো তো আগে।
বেলা বিরক্ত হয়ে রাজি হলো। বলল, ‘আমার বাবার অনেক টাকা। অনেক।’
-তো? টাকার গরম দেখাচ্ছেন কেন আমায়?
শাইনি তাতে ভ্রুক্ষেপ করলোনা। সে বলতেই লাগলো,
‘আমার বাবার কাছে সবচেয়ে প্রিয় ছিলাম আমি। যা চাইতাম তা-ই পেতাম। কখনো এমন হয়নি যে, আমি চেয়েছি আর বাবা সেটা দেয়নি। সবাইকে টাকার গরম দেখাতাম, এজন্য অনেকেই আমাকে অপছন্দ করতো। আমি সেটা মানতে পারতাম না। যে আমার বিরুদ্ধে উল্টাপাল্টা বলতো তাকেই মারতাম। হাত-পা ভেঙে দিতাম। বাবা কোনো শাসন করতোনা৷ যার ফলে দিনদিন আমার এসব বেড়েই চলছিল।
-তারপর?
-মেয়েদের নিয়ে ঘুরতাম। সময় কাটাতাম। পড়াশোনাটাও শেষ করিনি ভালো করে। বাবার টাকাই খাই, ঘুরি। এর মধ্যে নিশার সাথে পরিচয় হয়। বড়লোক বাপের মেয়ে। আমার সাথে ওর সবকিছু মিলতো। বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে একদিন আমি প্রপোজ করি, ও রাজি হয়ে যায়। তারপর থেকেই আমাদের সম্পর্ক। কে কার থেকে বেশি টাকা ওড়াতে পারে সেই প্রতিযোগিতা হতো আমাদের মধ্যে! ইভেন এখনো। ভালোবাসা জিনিসটা কী আমি বুঝিনা। কিন্তু তোমাকে দেখার পর হঠাৎই ভালো লাগে তোমাকে। বিয়ে কর‍তে চাই৷ নিশাকেও জানাই। ও তাতে আপত্তি করেনি। কেন করেনি জানিনা। আসলে বিয়ে কী, সম্পর্ক কী এসব আমরা দুজনেই বুঝিনা।
বেলা বলল, ‘এসব আমাকে বলার কারণ কী? এসব তো আপনার সমস্যা। এটা মোটেও ভাববেন না যে এসব শুনে, আপনার প্রতি আমার মন নরম হয়েছে। বরংচ মেলোড্রামাই মনে হচ্ছে।’
-তবে একটা জিনিসে আমি অবাক হই, আমার মা কেন আমাকে পছন্দ করেনা। তিনি কেন এমন?
বেলা অবাক হয়ে বলল, ‘মানে? তিনি কী আপন মা নন? ওনার সাথে ফোনে কথা বললাম। আপনাকে নাকি অনেক ভালোবাসে!’
-হ্যাঁ আমার নিজের মা, তবে মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে। আমাকে ভালোবাসে এমন নমুনা আমি কোনোদিন দেখিনি।
-বুঝলাম না।
-মা আমাকে ভালোবাসলে আমি হয়তো এমন হয়তো না।
-তো ভালো হয়ে যান।
-চাইলেও না। সময় খুব কম!
বেলা বলল, ‘আমি বাড়ি ফিরতে চাই৷ অনেকক্ষণ হয়ে গিয়েছে!’
-ওহ হ্যাঁ৷ কাল তো তোমার এক্সাম। শুনো, পড়াশোনাটা ভালো করে করবে। জীবনে অনেক বড় হও।
-আপনি বলছেন একথা?
-খারাপ হতে পারি। উইশ করতে দোষ কোথায়? শত হলেও তোমাকে আমি নিজ পছন্দে বিয়ে করেছি।
বেলা আলগা হাসলো৷ মাগরিবের আযান পড়ছে চারদিকে। তাড়া দিলো বেলা। শাইনি বলল, ‘আবার কোনোদিন দেখা হবে কিনা, জানিনা। ভালো থেকো তুমি!’
-হুঁ।
-অনেক বড় হও আমার প্রিয় বউ!
-আপনি এভাবে বলছেন কেন?
-ভালোকিছু চাইতে দোষ কী? ইভেন আমিও ভালো হয়ে যেতে পারি!
-মজা পেলাম।
-বাই দ্যা ওয়ে, পরশু দেশের বাইরে যাচ্ছি। ফিরব কিনা জানিনা।
বেলা আড়ালে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। মনে মনে খুব খুশিও হলো। নৌকা পাড়ে ভিড়ার পর অতি খুশিতে সে বলেই ফেলল,
-আপনি যদি আমার মনের মতো হতেন, তাহলে আমাদের খুব সুন্দর একটা সংসার হতে পারতো।
শাইনি উদাস হয়ে বলল, ‘তবুও হতোনা। সবকিছুতে জীবনের অনেক বাঁধা।’
বাড়ি ফিরলো বেলা রিকশা করে। শাইনিকে বিদায় দেওয়ার সময় ও তার ডিম্পলওয়ালা সুদৃশ্য হাসিটা দিয়ে বলেছিল, ‘আমাদের কিছুদিনের বিয়ে।’
-সেটা ভেঙে যাবে অতিশ্রীঘ্রই।
শাইনি কাঠ কাঠ গলায় বলল, ‘কখনোই ভাঙবেনা। এ জীবনে না তোমাকে আমি ছাড়ছি আর না তুমি।’
-ভুলে যেওনা চরিত্রহীন লোকটাকে।
-এ জীবনে না।

চলবে…ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here