শ্রাবন আধারে তুমি,১২,১৩,১৪

0
630

শ্রাবন আধারে তুমি,১২,১৩,১৪
লেখিকা : আফরিন ইসলাম
পার্ট:১২

মাঝ রাত হয়ে গেছে ৷আবরার আর রাই কিছুক্ষন আগে বাসায় এসেছে ৷আবরার ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই রাই ওয়াসরুমে চলে গেল ৷

আবরার ত্রিশ মিনিট ধরে রুমে বসে আছে একা ৷রাই ফ্রেশ হয়ে বের হলেই দুজনে এক সাথে খাবে ৷একা একা খেতেও ভালো লাগে না ৷ আবরার ফোনে গেমস্ খেলছিল সময় কাটাতে ৷এর মধ্যে রাই বের হল ওয়াসরুম থেকে ৷রাই বের হয়েই বলল

আরে আপনি কি এখনো খান নি ৷না খেয়ে বসে আছেন এখনো ৷

তুমি তো দেরি করছিলে ৷তো আমি কি করবো ৷একা একা খেতে ভালো লাগে না ৷

ভালো না লাগলেও খেতে হবে ৷দুইদিন পর তো এমনিতেও এই বাড়ী ছেড়ে চলে যাব ৷তখন তো আর থাকবো না ৷তাই অভ্যাস করে নিন ৷

আবরার মনটা হঠাৎ খারাপ হয়ে গেল ৷মুখটা মলিন আকার ধারন করলো আবরার ৷সে মাথা নিচু করে নিল ৷রাই আবরার মলিন মুখ দেখে হাসলো ৷তারপর বলল

আবরার আমার শরীরটা না একদম ভালো লাগছে না ৷আপনি খেয়ে নিন ৷মাথাটা বড্ড ব্যাথা করছে ৷

আবরার ব্যস্ত কন্ঠে বলল মাথা কি বেশি ব্যাথা করছে তোমার ৷

নানা একটু একটু ব্যাথা করছে ৷ আপনি খেয়ে নিন ৷

ওকে খাবার গুলো তাহলে নিয়ে যেতে বলো ৷ আমিও খাব না ৷

আপনি কেন খাবেন না ৷আপনি এখনো অনেক অসুস্থ আবরার ৷

তুমি তাহলে কেন খাবে না ৷তুমি তো এটাই চাও যেন আমি না খাই ৷এর জন্যই তো খাবে না ৷

রাই আর কোনো কথা না বলে খাবার বাড়তে লাগলো ৷ রাইকে খাবার সাজাতে দেখে আবরার বেশ ভালোই লাগলো ৷দুইজন একসাথে খেতে বসে গেল ৷রাই নিজেও খাচ্ছে আর আবরারকে খাবার দিচ্ছে ৷আবরার খাচ্ছে আর রাইয়ের দিকে বারবার তাকাচ্ছে ৷

রাই খেতে খেতে হঠাৎ থেমে গেল ৷রাইয়ের মনে হচ্ছে খাবার গলায় আটকে যাচ্ছে ৷ মাথার মধ্যে ভনভন শব্দ হচ্ছে ৷নাক আর কানে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করলো রাই ৷চোখ দুটো খুব জ্বলছে ৷ রাই আবরার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে খাচ্ছে ৷

আমার এতো কষ্ট কেন হচ্ছে ৷এখানে আর এক মুহূর্ত থাকলে ধরা পড়ে যাব ৷ আবরারকে কিছু জানতে দেওয়া যাবে না ৷রাই মনে মনে কথা গুলো বলে উঠে দাড়ালো ৷আবরার রাইকে কিছু বলার আগেই রাই ওয়াসরুপে ঢুকে গেল ৷রাই বেসিনের কাছে যেতেই রক্ত বমি করে দিল ৷রাইয়ের মুখ থেকে গাঢ় লাল রক্ত বেড়িয়ে আসছে গলগল করে ৷সাথে সাথেই রাই নিজের নাক আর কানে তীব্র ব্যাথা অনুভব করলো ৷রাই সহ্য করতে না পেরে নিজের কান দুই হাতে চেঁপে ধরলো ৷কিছুক্ষনের মধ্যেই রাই নিজের হাতে ভেজা ভেজা অনুভব করল ৷রাই নিজের হাত সামনে নিয়ে আসতেই চমকে উঠলো ৷কারন রাইয়ের হাতে রক্ত ৷ রাই আঙ্গুল কানে দিতেই আবারো ভেজা রক্তের আভাস পেল ৷রাই দেখতে পেল ওর নাক থেকেও রক্ত আসতে শুরু করেছে ৷ রাইয়ের মুখ রক্ত বর্ন ধারন করেছে ৷হঠাৎ দরজায় আঘাতের আওয়াজ পেল রাই ৷রাইয়ের বুঝতে বাকি রইলো না যে আবরার ধাক্কা দিচ্ছে ৷ওপর পাশ থেকে আবরার বলতে লাগলো

কি হয়েছে রাই ৷ওভাবে ওয়াসরুমে কেন গেলে ৷তোমার কি কিছু হয়েছে ৷

রাই নিজের কন্ঠ স্বাভাবিক করে বলল আমি ঠিক আছি ৷আপনি যান প্লিজ ৷

রাই নিজের মুখ মুছে নিল ৷কান আর নাকের রক্তও মুছে নিল ৷মাথাটা বড্ড ব্যাথা করছে ৷চোখ লাল হয়ে গেছে ৷জোড়ে জোড়ে সে শ্বাস নিতে লাগল ৷রাই চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিল ৷ আয়নায় নিজের চেহারা দেখে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিল ৷রাইয়ের মনে পড়ে গেল সাড়ে তিন মাস আগে ডাক্তারের কথা ৷

ডাক্তার বলে ছিল রাইয়ের ব্রেন টিউমার হয়েছে ৷রাইয়ের মাথায় এই টিউমার বিকট আকার ধারন করেছে ৷টিউমার ছড়িয়ে পড়েছে শিকড়ের ন্যায় ৷রাইয়ের জন্য আর কোনো চিকিৎসা নেই ৷ নাক ,চোখ ,গলা ,কানেও বিস্তার করেছে টিউমার ৷খুব তাড়াতাড়ি ভয়াবহ আকার ধারনের পথে ৷ নাক ,কান ,চোখে ছড়িয়ে পড়তেই রক্তপাত ঘটবে যে কোনো সময় ৷আস্তে আস্তে খুধা মন্দা দেখা দেবে ৷ চোখের নিচে কালো হয়ে যাবে ৷জ্বর হবে হঠাৎ হঠাৎ ৷চোখে ঘুম আসবে না ৷প্রচন্ড মাথা ব্যাথা অনুভব করবে ৷আর এই লক্ষন গুলোই আস্তে আস্তে প্রকট আকার ধারন করবে ৷তারপর যে কোনো একদিন জীবন আলো নিভে যাবে ৷ রাইয়ের চোখ থেকে দুফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ল ৷রাই নিজেকে স্বাভাবিক করলো ৷চোখের পানি মুছে নিল ৷মুখে একটা মিথ্যা হাসি ফুটিয়ে তুলল ৷জীবনের শেষ সময় গুলো সুন্দর ভাবে কাটাবে রাই ৷আবরারকে কিছু বুঝতে দেওয়া যাবে না ৷রাই সব কিছু পরিষ্কার করে বেড়িয়ে এলো ৷রাই বেড়িয়ে আসতে আবরার দৌড়ে রাইয়ের কাছে এসে বলল

কি হয়ে ছিল ৷ঐ ভাবে কেন দৌড়ে গেলে ৷আমার কত চিন্তা হচ্ছিল জানো ৷

রাইয়ের মানুষটাকে সব বলতে ইচ্ছে করছে ৷জরিয়ে ধরে বলতে ইচ্ছে করছে আবরার আমি ভালো নেই ৷আমি আপনার সাথে হাজার বছর বাচতেঁ চাই ৷আমি আপনাকে ছেড়ে কিভাবে থাকবো ৷রাই কিছুই বলতে পারলো না ৷রাই হেসে বলল

আমার আর কি হবে ৷এমন ভাব করছেন যেন দুই দিন পরেই আমি মরে যাব ৷আমার কি যেন হয়েছে ৷

আবরার চিৎকার করে বলল বাজে কথা একদম বলবে না৷ঐ ভাবে কেউ ওয়াসরুমে যায় ৷আমার মনে হয় ভয় করে না ৷আর এক দিন যদি উল্টা পাল্টা কিছু বলো তো ৷আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না ৷

রাই খাটের ওপর বসে আবরারকে বলল প্লিজ এগুলো একটু গুছাবেন ৷আমার না ভালো লাগছে না একদম ৷ আর কখনো কিছু করতে বলবো না ৷

এই মেয়েকে কিছু বলাই বেকার ৷ আবরার রাইকে আর কিছু না বলে সব গুছাতে লাগল ৷সব গুছিয়ে বিছানাও নিজেই করে নিল ৷রাই বালিশ নিয়ে সোফার দিকে আস্তে আস্তে যাবে এমন সময় আবরার বলল

আজকে থেকে আর তুমি সোফায় ঘুমাবে না ৷বিছানায় শুয়ে পড় ৷

আপনার পাশে আমি ঘুমাব ৷ আপনার অসুবিধা হবে না ৷

বেশি কথা না বলে শুয়ে পড় ৷আজ থেকে আমার পাশে ঘুমাবে ৷কোনো কথা শুনবো না আমি ৷আর যদি সোফায় শুতে যাও ৷তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না বলে দিলাম ৷

চলবে….

#শ্রাবন_আধারে_তুমি
লেখিকা :আফরিন ইসলাম
পার্ট:১৩

রাই আবরার পাশেই ঘুমিয়ে আছে ৷আবরার রাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ৷ রাইয়ের মাথা ব্যাথা তাই আবরার আজ রাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ৷সব সময় তো রাই আবরারকে ঘুম পাড়ায় ৷আজ না হয় আবরার কাজটা করলো ৷আবরার খেয়াল করলো রাই এখন আর আগের মতো নেই ৷ সাড়ে তিনমাস আগের রাই আর এখনের রাইয়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য ৷ রাইয়ের চোখের নিচে কালো হয়ে গেছে ৷আগের থেকে অনেকটা শুকিয়ে গেছে ৷মুখের লাবন্যতা হারিয়ে যাচ্ছে ৷হঠাৎ করেই আবরার রাইয়ের খুব কাছে চলে যায় ৷রাইকে এখন আর আগের মতো মনে হয় না আবরার ৷রাইয়ের হাসিটাও আজকাল প্রানহীন মনে হয় ৷মেয়েটা কি যেন লুকিয়ে যাচ্ছে তার থেকে ৷আবরার রাইয়ের কাছ থেকে চলে আসে ৷আজকাল রাইয়ের সাথে থাকতে বড্ড ইচ্ছে করে ৷কেন যেন মনে হয় রাই তাকে ছেড়ে চলে যাবে ৷আবরার নিজের বুকের বাম পাশটা চেঁপে ধরে ৷কিভাবে থাকবে সে রাইকে ছাড়া ৷ কাউকে মনের কষ্ট গুলো দেখাতে পারে না আবরার ৷রাইয়ের মনে যদি অন্য কারো বসবাস না থাকতো ৷তাহলে হয়তো আজ তাদের একটা ভালবাসার সংসার হতো ৷আবরার অন্যদিকে ফিরে শুয়ে পড়ে ৷ চোখের পানি মুছে নিল ৷

একের পর এক দরজার আঘাতে আবরার ঘুম হালকা হয়ে যায় ৷ পাশে তাকাতেই দেখে রাই ঘুমাচ্ছে ৷আবরার উঠে দরজা খুলে দেয় ৷দরজা খুলতেই দেখতে পায় মিশকা দাড়িয়ে আছে ৷আবরার মিশকাকে দেখে বলে

কিরে দরজা এভাবে ধাক্কা দিচ্ছিস কেন ৷এভাবে কেউ ধাক্কা দেয় নাকি ৷

মিশকা কয়েকটা শ্বাস নিয়ে বলে

ভাইয়া নিচে রাইয়ের বাবার বাড়ীর লোকেরা এসেছে ৷রাইয়ের মামা মামী আর মা বাবা এসেছে ৷ তারা রাইয়ের সাথে দেখা করতে চায় ৷তুমি ওকে নিয়ে এসো ৷আমি নিচে গেলাম ৷

মিশকা যেতেই আবরার দরজা আটকে দিল ৷তারপর ধীর পায়ে রাইয়ের কাছে বসল ৷রাইয়ের মাথায় আস্তে আস্তে হাত বুলাতে বুলাতে বলল

রাই শুনছো ৷সকাল হয়ে গেছে ৷উঠে পড়ো ৷রাই এই রাই উঠো ৷

রাইয়ের কানে আবরার আদুরে কথা গুলো যেতেই আস্তে করে চোখ মেলে তাকালো ৷রাই চোখ খুলে সব কিছু ঝাপসা দেখছে ৷রাই চোখ ঢলতে ঢলতে বলল

কি হয়েছে ডাকছেন কেন ৷

নিচে চলো কাজ আছে ৷আগে ফ্রেশ হয়ে নাও ৷

আবরার আর রাই ফ্রেশ হয়ে নিল ৷আবরার রাইকে নিয়ে নিচে গেল ৷নিচে যেতেই রাই সামনে থাকা মানুষ গুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো ৷এরা নাকি তার আপনজন ৷ এদের সাথেই এক মিনিট কথা বলার জন্য কোনো একদিন কত চেষ্টা করেছে ৷কিন্তু কেউ কথা বলে নি ৷কিন্তু যেই দিন থেকে জেনেছে সে আর বাচঁবে না ৷ঐ দিন থেকে যোগাযোগ করার সাহস করে নি ৷ রাইকে দেখে রাইয়ের মামা দৌড়ে ওর কাছে এসে জড়িয়ে ধরে ৷তারপর বলে

আমাকে ক্ষমা করে দে মা ৷আমি বুঝিনি ৷আমি মানুষের কথা বিশ্বাস করে তোকে কষ্ট দিয়েছি ৷ ৷আমাকে ক্ষমা করে দে ৷

তোমার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই মামা ৷তোমাকে আমার বাবার জায়গাটা আমি দিয়েছি ৷তাই নিজের মেয়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে আমাকে জাহান্নামী করো না ৷

রাইয়ের মামী এসে বলে আমাকেও ক্ষমা করে দে ৷তুই থাকতে আমি বুঝি নি মা ৷তুই চলে আসার পর আমি আমার ভুল বুঝেছি ৷আমাকে একবার ক্ষমা করে দে মা ৷গ্রামের সবাই এখন জানে তোর কোনো দোষ নেই ৷জয়নাল সব শিকার করেছে ৷

আমার ঘটনার সাথে জয়নালের কি সম্পর্ক মামী ৷

তুই তো জানিস জয়নাল তোকে বিয়ে করতে চেয়ে ছিল ৷কিন্তু তোর মামা রাজী ছিল না ৷তোকে বিয়ে করতে না পেরে জয়নাল রেগে যায় ৷ তুই যেই দিন ঐ কুড়ে ঘরে গিয়ে ছিলি ৷ঐ রাতে জয়নালও গিয়েছিল ৷তোর সাথে আবরারকে দেখে ও শয়তানি চাল চালে ৷সকাল হতেই ও লোক নিয়ে আসে ৷আর পুরো গ্রামে রটিয়ে দেয় তুই ব্যভিচার করেছিস ৷

তা জয়নাল কেন শিকার করলো যে আমি কিছু করি নি ৷

তিনদিন আগে ওর ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়েছে ৷ও মরার আগে সব শিকার করেছে ৷তোর কাছে ক্ষমা চেয়েছে ৷

রাই হাসলো ৷ চোখের পানি গুলো আজ আর ঝড়াতে চায় না ও ৷নিজের মনকে শক্ত করলো রাই ৷তারপর নিজের মা বাবার দিকে ইশারা করে বলল

ওনারা কেন এসেছেন এখানে ৷

রাইয়ের মামা বলল তোর বাবা তোকে নিতে এসেছে ৷

বাবার দিকে তাকিয়ে বলল তা এত বছর পর কেন নিতে এসেছে ৷আমি তো অলক্ষী ৷নাকি আমাকে আরো আঘাত করা বাকি আছে ৷লাঠি ,বেল্ট ,খুন্তি কোনো কিছুই তো বাদ দেন নি ৷নাকি আরো মারা বাকি আছে ৷রাইয়ের বাবা রাইয়ের কাছে এসে বললেন

আমাকে ক্ষমা করে দে মা ৷আমি বুঝিনি ৷আমি কোনো দিন সত্য মিথ্যা যাচাই করি নি ৷তোকে বিনা কারনে শাস্তি দিয়েছি ৷ আমি জেনে গেছি তুই কোনো দোষ করিস নি ৷

রাইয়ের সৎ মা এসে বলল আমাকে ক্ষমা করে দে রাই ৷আমি বুঝি নি ৷তুই ক্ষমা না করলে আমার কোথাও জায়গা হবে না রে মা ৷

আপনার কখনো কোনো দোষ আমি দেই নি ৷আসলে সব দোষ আমার কপালের ৷তা না হলে আমার মা কেন মরে যাবে ৷মা মরার পর বাবা কেন পাল্টে যাবে ৷আমি কেন দিনের পর দিন অনাহারে কাটাবো ৷আমি কেন দোষ না করেও শাস্তি পাবো ৷কেন দোষ না করেও চরিত্রহীনার অপবাদ পেয়েছি ৷দিনের পর দিন আশেপাশের মানুষের খারাপ কথা শুনেছি ৷নিজের স্বামী দুই বছর কথাই বলে নি ৷কিন্তু এত কিছুর মাঝে আমার দোষ কি ৷আপনার কোনো দোষ নেই ৷আপনি ভালো থাকুন এটাই আমি চাই ৷ আপনি আমার সৎ মা নন ৷আপনি আমার মা ৷মায়ের প্রতি সন্তানের কখনো অভিযোগ থাকতে পারে না ৷তাই আমারো নেই ৷

দুই দিন পার হয়ে গেছে ৷রাইয়ের মা বাবা আর মামা মামী গতকাল চলে গেছে ৷রাইকে নিয়ে যেতে চেয়ে ছিল ৷কিন্তু সে যায় নি ৷ আজ একবার ডাক্তারের কাছেও রাই গিয়ে ছিল লুকিয়ে ৷কিন্তু এখন আর একা একা যায় নি ৷সাথে করে নিজের এক বান্ধবীকেও নিয়ে গিয়ে ছিল ৷কারন এখন আর একা একা চলাফেরা করা তা পক্ষে সম্ভব না ৷

আকাশে রাতের ছায়া নেমেছে ৷রাইয়ের মনটা বড্ড ভালো ৷মরার আগে কাছের মানুষদের দেখে যেতে পেরেছে ৷ তারা ভালো থাকুক ৷তাদের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই তার ৷অতিত জীবন ফেলে এসেছে রাই ৷ এখন শুধুই একটু ভালো থাকার চেষ্টা ৷আবরারকে নিয়ে তার আরো কিছু সময় কাটানোর চেষ্টা ৷রাই আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিল ৷

আজ রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারের কাছে রাই এসেছে ৷ কলেজের নাম করে এসেছে ৷বন্ধুটাও সাথে আছে ৷ আজ বড্ড কষ্ট হয়েছে আসতে ৷কিছুক্ষন পর রাইয়ের ডাক আসে ৷রাই চেম্বারে যেয়ে রিপোর্ট গেলো দেখাতেই ডাক্তার বলল

সরি মিসেস খান ৷আপনার অবস্থা একে বারে শেষের দিকে ৷আপনার হাতে আর এক সপ্তাহ সময় আছে ৷আপনার যে কোনো সময় অঘটন ঘটে যেতে পারে ৷ টিউমার ছড়িয়ে গেছে ৷এই একসপ্তাহ আপনার সাথে ভয়াবহ ঘটনা ঘটবে ৷আপনি দয়া করে হাসপাতালে ভর্তি হন ৷

রাই ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বলল এখন আমি আর মৃত্যুকে ভয় পাই না ম্যাম ৷আমার জন্য দোয়া করবেন ৷যেন ঐ পাড়ে ভালো থাকি খুব ৷

চলবে…..

#শ্রাবন_আধারে_তুমি
লেখিকা:আফরিন ইসলাম
পার্ট:১৪

রাই ডাক্তারের সাথে কথা বলে উঠে দাড়ালো ৷হঠাৎ ডাক্তারের চেম্বারের মধ্যে একজন প্রবেশ করলো ৷রাই সে দিকে তাকাতেই চমকে গেল ৷ মানুষটাও রাইকে দেখে চমকে গেল ৷ রাই ভয় মাখা কন্ঠে বলে উঠলো

সাদি ভাই আপনি এখানে কেন ৷

সাদি অবাক দৃষ্টিতে রাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল তুমি এখানে কেন ৷আমি আমার বান্ধবির সাথে দেখা করতে এসেছি ৷কিন্তু তুমি এখানে কেন ৷তোমার তো এখন কলেজে থাকার কথা তাই না ৷

রাই এবার ভয়ে কাপঁছে ৷তার খুব ভয় করছে ৷সাদি যদি আবরারকে বলে দেয় ৷রাই এবার ভয়ে কেদেঁই দিল ৷ সাদি রাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল রাই কাদঁছো কেন বনু ৷কি হয়েছে ৷ এই প্রিয়ন্তী রাই কাদঁছে কেন ৷সাদি কথাটা ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বলল ৷ ডাক্তার সাদির দিকে তাকিয়ে বলল

উনি আমার পেশেন্ট ৷গত সাড়ে তিনমাস ধরে আমি ওনার চিকিৎসা করছি ৷তুই ওনাকে কিভাবে চিনিস ৷

আমার বন্ধুর বউও ৷কি এমন হয়েছে যে সাড়ে তিনমাস ধরে ওর চিকিৎসা চলছে ৷ বল আমাকে সব ৷

রাই এবার হু হু করে কেদেঁ দিল ৷তারপর বলল প্লিজ ভাইয়া তুমি চলে যাও ৷ তোমার কিছু জানতে হবে না ৷প্লিজ ভাইয়া ৷

রাই আমি প্রিয়ন্তীর সাথে কথা বলছি ৷তুমি কোনো কথা বলবে না ৷ প্রিয়ন্তী বল আমাকে কি হয়েছে ৷

আসলে ওনার ব্রেন টিউমার হয়েছে ৷আর এটা অনেক পুরনো ৷টিউমার গুলো অনেক আগেই ছড়িয়ে পড়েছে ৷উনি এখন শেষ স্টেইজে আছেন ৷ওনার হাতে আর বেশি সময় নেই সাদি ৷ অলরেডি ওনার নাক,কান, মুখ থেকে রক্ত আসা শুরু হয়ে গেছে ৷আর বেশি দিন বাচঁবে না উনি ৷আর এক সপ্তাহ সময় আছে ৷

সাদির চোখ বেয়ে পানি পড়ছে ৷ সাদি রাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে ৷মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছে না ৷ বুক ফেটে কান্না আসছে ৷নিজের বোনের মতো করে দেখা মেয়েটা নাকি আর বাচঁবে না ৷সাদি খুব কষ্টে রাইকে বলল

প্রিয়ন্তী যা বলছে তা কি সত্যি রাই ৷ মজা করছে তাই না আমার সাথে ৷

রাই কোনো কথা বলছে না শুধু কাদঁছে ৷

কি হলো আমি কিছু বলছি ৷প্রিয়ন্তী যা বলছে তা কি সত্যি ৷রাই কান্নারত অবস্থায় মাথা নাড়ালো ৷যার অর্থ সত্যি ৷

কেউ এই ব্যাপারে কিছু জানে ৷

রাই কান্না করতে করতে বলল না কেউ জানে না ৷

এত বড় একটা রোগ এর কথা কাউকে জানালে না কেন রাই ৷অন্তত্য আমাকে তো জানাতে পারতে ৷আবরার জানে এই ব্যাপারে ৷

না উনি কিছু জানে না ৷

ওকে কেন বলো নি তুমি ৷

ওনাকে বলে আর কি বা করতাম ৷বিয়ের দুইটা বছর তো আমাকে রেখে দূরেই থাকলেন ৷এতদিন পর উনি ঠিকই এলেন ৷সব কিছু হয়তো এত দিনে ঠিকও হয়ে যেত ৷কিন্তু এই রোগটা সব শেষ করে দিল ভাইয়া ৷বিশ্বাস করো যদি একটা রাস্তা খোলা থাকতো ৷তাহলে আমি বেচেঁ থাকার জন্য সব করতাম ৷আমি একে বারে শেষ প্রান্তে এসে পৌছে গেছি ৷আমি শুধু তার সাথে একটু ভালো থাকতে চেয়েছি কয়েকটা দিন ৷এটাই আমার কাছে অনেক ৷আমি আর কিছু চাই না ভাইয়া ৷আর আমি মরে গেলেই বা কার কি ৷কারো কিছু যায় আসবে না ভাইয়া ৷আর কার জন্য বেচেঁ থাকবো বলতো ৷

সাদি চোখের পানি মুছে নিল ৷তারপর রাইয়ের হাত ধরে বল

বাড়ী চল ৷আমি নিয়ে যাচ্ছি ৷আর প্রিয়ন্তী আমি অন্য একদিন আসবো ৷

সাদি গাড়ী চালাচ্ছে নিজের মতো ৷আর একটু পর পর চোখ মুছছে ৷আজ বড্ড কান্না পাচ্ছে সাদির ৷আচ্ছা মায়া কি এমনই হয় ৷ মেয়েটার ওপর বড্ড মায়া জমে গেছে এত গুলো দিনে ৷মায়া বললে ভুল হবে ৷নিজের ছোট বোনের মতো ভালোবাসে সাদি ৷রাই বাইরে তাকিয়ে আছে ৷জীবনটা বড্ড হাহাকারে ভরা তার ৷ প্রকৃতির এই স্নিগ্ধ বাতাস আজ বিষাদের গান গাইছে ৷কোথাও বসন্ত নেই ৷গাড়ী চলতে চলতে থেমে গেল ৷রাই সামনে তাকাতেই দেখলো বাড়ী চলে এসেছে ৷রাই সাদির দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বলল

আমি আসি ভাইয়া ৷আর দেখা হবে কি না জানি না ৷তবে আমার জানাযায় তোমার দাওয়াত রইল ৷আর খাটিয়ার একটা পায়া তুমি কাধেঁ তুলে নিও ৷সাদি এবার কেদেঁ দিল ৷ রাইয়ের হাত জরিয়ে ধরে বলল

এই সব কথা আমি শুনতে পারছি না ৷একটা ভাইয়ের কাছে যে এই কথা গুলো কতটা যন্ত্রনাদায়ক তা বুঝলে এভাবে বলতে না ৷ আমাকে এই ব্যাপারে কি আগে বলা যেত না ৷আমি দরকার পড়লে বিদেশ নিয়ে যেতাম ৷কাজটা ঠিক করলি না একদম রাই ৷ রাইয়ের ও বড্ড কান্না পাচ্ছে ৷তাকেও এই ভাবে একজন বোনের চোখে দেখে এটা তার জানাই ছিল না ৷রাই চোখের পানি মুছে বলল আমি বাড়ীর ভেতরে যাই ভাইয়া ৷তুমিও চলে যাও ৷আর প্লিজ কাউকে কিছু বলো না ৷আমার শরীরটা অনেক খারাপ লাগছে ৷আমি কোনো প্রেশার নিতে চাই না আর ৷

সাদি চোখের পানি মুছে নিল ৷তারপর বলল আমি রাতে এসে দেখে যাব কেমন ৷এবার যাও ৷

সাদি রাইকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল ৷আর রাই বাড়ীর ভেতরে ঢুকলো ৷ রাই বাড়ীর ভেতরে যেয়ে দেখল সবাই ড্রইং রুমেই বসে আছে ৷ আনিলা বেগম ধীর পায়ে রাইয়ের দিকে এগিয়ে এলেন ৷ রাই আনিলা বেগমকে দেখে মুচকি হাসল ৷কিন্তু আজ আর তিনি প্রতিদিনের মতো রাইকে দুই হাতে আগলে নিলেন না ৷হঠাৎ করে রাইয়ের ডান গালে সজোরে একটা থাপ্পর দিলেন আনিলা বেগম ৷ দুর্বল শরীরে রাই এই চড়টা নিতে পারলো না ৷ছিটকে পড়ল ফ্লোরে ৷আনিলা বেগম চিৎকার করে বলল

কিভাবে পারলি আমাদের ঠকাতে ৷ আমরা সবাই কি তোকে কম ভালোবাসতাম হ্যা ৷আমরা কি চাই নি আবরার সাথে তুই ভালো থাক ৷আমার আজ কি মনে হচ্ছে জানিস হ্যা ৷আমার ছেলে এত দিন যা করেছে একদম ঠিক করেছে ৷ আবরার ফুপু ঠিকই বলে তুই একটা অলক্ষী মেয়ে ৷যেই দিন থেকে আমার ছেলের জীবনে এসেছিস ৷ঠিক ঐ দিন থেকে ওর জীবনটা শেষ হয়ে গেছে ৷

রাইয়ের গাল বেয়ে পানি পড়ছে ৷রাই কাপাঁ কন্ঠে বলল আমি কি করেছি মা একবার তো বলো ৷

একে তো পাপ করেছিস আবার কথাও বলছিস ৷কেন রে সাদিকে যখন এতই ভালো লাগে ৷তখন আমাদের বললেই তো হতো ৷লুকিয়ে লুকিয়ে পরকিয়া কেন করছিস ৷

মা এসব কি বলছো তুমি ৷রাই আবরার কাছে দৌড়ে গেল ৷তারপর বলল

আবরার দেখুন না মা কি বলছে ৷আপনি তো কিছু বলুন ৷

আজকে কলেজে কেন যাও নি ৷আমি অসুস্থ হওয়ার পরেও অনেক দিন কলেজের নাম করে তুমি বাসা থেকে বের হয়েছো ৷ কিন্তু কলেজে যাও নি ৷কোথায় গিয়ে ছিলে এত দিন ৷

রাই চুপ করে আছে আর কাদঁছে ৷

রাইকে চুপ করে থাকতে দেখে আবরার চিৎকার করে উঠলো ৷তারপর বলল কি হলো কথা বলছিস না কেন ৷আর কত বেইমানি করবি আমার সাথে ৷আজ সাদির সাথে কোথায় গিয়েছিলি তুই বল আমাকে ৷আজ যদি তোর কলেজে না যেতাম তাহলে তো জানতেই পারতাম না ৷কোন হোটেলে গিয়েছিলি ওর সাথে বল আমাকে ৷

রাই চিৎকার করে কাদঁতে কাদঁতে বলল না ৷আমি আর শুনতে চাই না ৷প্লিজ আপনি আর একটা কথাও বলবেন না আমাকে ৷আমাকে মেরে ফেলুন কিন্তু এগুলো বলবেন না ৷ আমি কিছু করি নি ৷

তাহলে বলো সাদির সাথে কোথায় গিয়েছিলে আবরার বলল ৷

আমি বলতে পারবো না কিছু আপনাকে রাই বলল ৷

বেড়িয়ে যাও আমার বাড়ী থেকে ৷

কি সব বলছেন আপনি ৷আমি কোথাও যাব না আপনাকে ছেড়ে ৷রাই কথাটা বলেই আবরারকে ধরতে গেলেই সে সরে গেল ৷

ঐ পাপী হাত দিয়ে আমায় একদম ছোয়ার চেষ্টা করবি না তুই ৷বেড়িয়ে যা ৷

আমি যাব না ৷

আবরার এবার রাইয়ের হাত খুব শক্ত করে চেপেঁ ধরলো ৷তারপর টানতে টানতে নিয়ে গেল বাড়ির বাইরে ৷আর রাই চিৎকার করে কাদঁতে লাগলো ৷রাইকে বাড়ীর বাইরে ছুড়ে ফেলল আবরার ৷ তারপর বলল

এই বাড়ীতে কোনো পতিতার জায়গা হবে না

(আপনাদের সবাইকে আমি বলছি যে আমি অনেক ব্যস্ত ৷গল্ প লেখার মতো খুব একটা টাইম পাই না ৷আর আমি পুরনো গল্প আগে শেষ করতে চেয়ে ছিলাম ৷তোমার নিষ্ঠুর হৃদয়ে গল্পটা শেষ হওয়ার পর সবাই ইনবক্সে পাগল বানিয়ে ফেলে ছিলেন আমাকে ৷আবরার আর রাইকে নিয়ে সবার গল্প লাগবে ৷আমি তখন বারবার করে না করে ছিলাম ৷কিন্তু আপনারা শুনেন নাই ৷সকালে ভার্সিটির জন্য বাসা থেকে 7 টায় যাই ৷আর আসি 3 টায় ৷আর জ্যাম থাকলে তো কথাই নাই ৷কালকে দুপুরে ভাতটাও বাসায় এসে খাওয়ার সময় পাই নাই ৷সকাল 7 টায় বাসা থেকে বের হয়েছি আর রাত 8 টায় আসছি ৷তারপর ফ্রেশ হয়ে খাবার খাইছি ৷সারাদিন এত কষ্ট করার পর কার ভালো লাগে গল্প লিখতে ৷আপনারা যেইটা পাচঁ মিনিকে পড়েন ৷আমি ঐ লেখাটা দেড় ঘন্টা বসে লিখি ৷তার মধ্যে আপনাদের মধ্যে অনেকেই খোচাঁ মেরে কথা বলেন ৷স্কুল কলেজ শেষ করে ভার্সিটি গেলেই বুঝবেন কতটা কষ্ট ৷ যাই হোক আমি আপনাদের সবার মন জয় করে চলতে পারবো না ৷আর আমাকে কেউ অকারনে কল দিবেন না ৷তবে দরকার হলে ইনবক্স করবেন ৷আমি সাহায্য করবো ৷আর আপনাদের দোয়ায় বড় আপু অনেকটাই সুস্থ ৷খারাপ একটা সময় পার করতেছি ৷তবে খারাপ সময় খুব একটা দীর্ঘ হবে না আর আল্লাহর রহমতে ৷লাভ ইউ অল ৷)

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here