#শ্রাবন_আধারে_তুমি,০৬,০৭,০৮
লেখিকা:আফরিন ইসলাম
পার্ট:৬
সন্ধ্যা হয়ে গেছে আবরার ফোন ধরছে না ৷আফজাল খান গাড়ী নিয়ে বের হবেন এমন সময় তার মোবাইলে একটা কল আসলো ৷আফজাল খান ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো আবরার নাম্বার থেকে কল এসেছে ৷তিনি সাথে সাথে কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন বললেন
আমি পুলিশ অফিসার শওকত বলছি ৷
আফজাল বললেন এটা আমার ছেলের নাম্বার ৷আপনার কাছে আমার ছেলের ফোন কেন ৷
আসলে ওনার গাড়ী ব্রেক ফেইল করে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৷আপনার ছেলে এখন হাসপাতালে ভর্তি ৷আপনারা তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হাসপাতালের ঠিকানায় চলে আসুন ৷
আফজাল খান আর দেরি করলেন না ৷আবরার গাড়ী দুর্ঘটনার কথা আনিলা বেগম শুনতেই ডুকরে কেদেঁ উঠলেন ৷ আবরার দুর্ঘটনায় রাইয়ে পায়ের নিচের মাটি যেন সরে গেছে ৷রাই আফজাল খানের কাছে কাদঁতে কাদঁতে বলল
বাবা উনি ঠিক আছেন তো ৷বাবা ওনার কিছু হয় নি তো ৷
আমি জানি না মা ৷কিন্তু তাড়াতাড়ি এখন আমাদের হাসপাতালে যেতে হবে ৷
আফজাল খান যত দ্রুত সম্ভব সবাইকে নিয়ে হাসপাতালে গেল ৷রাই দৌড়ে গাড়ী থেকে বের হয়ে গেল ৷রাই রিসিপশন থেকে আবরার কেবিন নাম্বার জেনে নিল ৷রাই দৌড়ে কেবিনের কাছে গেল ৷রাইয়ের মনে হচ্ছে কেউ তার কলিজা টেনে বের করে নিয়েছে ৷চোখের পানি যেন থামতে চাইছে না ৷ রাই কাচেঁর জানালা দিয়ে ভেতরে তাকালো ৷রাইয়ের হৃদয়টা ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে ৷ কেবিনের ভেতর থেকে ডাক্তার বের হতেই রাই বলল আমার স্বামীর কি অবস্থা ডক্টর ৷
আপনার স্বামী ভালো আছেন৷মাথায় খুব একটা ব্যাথা না পেলেও হাতে আর পায়ে বেশ ক্ষত হয়েছে ৷ছয় মাসের আগে ঠিক মতো হাটতে পারবে বলে মনে হয় না ৷তবে সঠিক ভাবে সবা করলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে ৷ ওনাকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে ৷জ্ঞান আসতে রাত হবে ৷চিন্তা করবেন না ডাক্তার কথা গুলো বলে চলে গেল ৷
রাত দুইটা বাজে ৷চারিদিকে নিরবতা বিরাজমান ৷রাই আবরার পাশেই একটা চেয়ারে বসে বসে ঘুমাচ্ছে ৷কিছুক্ষন আগেই রাই ঘুমিয়ে গেছে ৷আবরার আস্তে আস্তে চোখ খুলতেই নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করল ৷আবরার পাশে তাকাতেই রাইকে দেখতে পেল ৷মেয়েটার মুখটা শুকিয়ে গেছে ৷আবরার ইচ্ছে হলো না রাইকে ডাকতে কিন্তু খুব পানির পিপাসায় তার গলা শুকিয়ে গেছে ৷আবরার রাইকে আস্তে করে ডাক দিয়ে বলল এই শুনছো রাই ৷
আবরার ডাক দিতেই রাই তার বিদ্ধস্ত চোখে তাকালো ৷রাই ব্যস্ত কন্ঠে বলে উঠলো
আপনার কিছু লাগবে ৷আপনার কষ্ট হচ্ছে কোথাও ৷ডাক্তার ডাকবো আমি ৷
রাইকে থামিয়ে দিয়ে আবরার বলল আমি ঠিক আছি রাই ৷আমার খুব পানির পিপাসা পেয়েছে ৷একটু পানি দেবে আমাকে ৷
এই প্রথম আবরার রাইয়ের সাথে ভালো মতো কথা বলেছে ৷রাই খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছে ৷ ভালবাসার মানুষের একটু ভালো কথা অমৃতের থেকেও উত্তম প্রেমিকার কাছে ৷রাই অতি ব্যস্ত হয়ে আবরার কাছে পানি নিয়ে এলো ৷রাই আস্তে করে আবরার মাথার নিচে হাত দিল ৷আবরার মাথাটা একটু উচু করে পানি খাইয়ে দিল ৷
আবরার পানি খেয়ে শুয়ে রইল ৷তারপর বলল মা বাবা আসে নি ৷তুমি এখানে কেন ৷
রাইয়ের এখানে থাকাটা আবরার পছন্দ করছে না এটা রাই বুঝতে পারলো ৷রাই একটা শুকনো হাসি দিয়ে বলল ওনারা এসেছেন ৷বাবা আর মিশকা বাইরে আছেন ৷মা আপনার এই অবস্থা দেখে অসুস্থ হয়ে গেছেন ৷তাই বাবা মাকে বাড়ীতে পাঠিয়ে দিয়েছে ৷
আবরার আর কিছু বলল না ৷প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেছে আবরার আর ঘুম আসছে না ৷রাই আবরার পাশেই বসে আছে ৷আবরার ঘুমাচ্ছে না তাই রাই বলল
আপনি ঘুমাচ্ছেন না কেন ৷
আবরার আস্তে করে বলল আমার মাথা ব্যাথা করছে ৷তাই ঘুম আসছে না ৷
রাই কোনো কথা না বলে আবরার মাথায় হাত বুলাতে লাগলো ৷আবরার কঠিন চোখে রাইয়ের দিকে তাকালো ৷রাই কিছু না বলে মুচকি হাসি দিল ৷আবরার এবার বলল
তুমি কেন আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছো ৷হাত সরাও ৷
আরো চার মাস আমি আপনার স্ত্রী ৷আপনার মাথায় আমি ছাড়া আর কে হাত বুলিয়ে দেবে শুনি ৷চার মাস পর না হয় আরেকটা বিয়ে করে নেবেন ৷
আবরার মুখ ভার করে শুয়ে রইলো ৷সে অসুস্থ বলেই রাই তাকে এই কথা গুলো বলছে এটা আবরার বুঝলো ৷একবার সুস্থ হোক তারপর বুঝাবে ৷
রাইয়ের নরম হাতের পরশে আবরার ঘুমিয়ে গেল ৷কিন্তু রাই আর ঘুমালো না ৷সারা রাত আবরারকে দেখেই পার করে দিয়েছে ৷
বেলা এগারো টায় আবরার ঘুম ভেঙ্গে গেল ৷পাশে তাকিয়ে দেখলো রাই নেই ৷এর মধ্যে কেবিনের ভেতর নার্স প্রবেশ করলো ৷নার্স আবরার কে সজাক দেখে বলল গুড মর্নিং মিঃ খান ৷
আবরার নার্সকে একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে বলল গুড মর্নিং ৷
নার্স কাজ করতে করতে বলল আপনি কিন্তু খুব লাকি স্যার ৷আপনি লাখে একজন স্ত্রী পেয়েছেন ৷ কাল হাসপাতালে এসে তার কি কান্না আপনার জন্য ৷সারা রাত আপনার কাছে বসে ছিল ৷আমরা হাজার বলেও সরাতে পারি নি ৷উনি একটু আগে একঘন্টার জন্য একটু বাইরে গেছেন ৷আপনার খেয়াল আমাকে রাখতে বলে গেছেন ৷
আবরার রাইয়ের প্রতি রাগ হলো ৷সে অসুস্থ এটা জেনেও মেয়েটা তাকে রেখে চলে গেছে ৷মেয়েটা ভালো নাটক করতে পারে ৷সবাইকে বেঝাচ্ছে সে আমাকে ভালবাসে ৷কিন্তু তাকে তো আমার থেকে ভালো কেউ চেনে না ৷
আবরার শুয়ে আছে ৷এর মধ্যে রাই ভেতরে প্রবেশ করলো ৷আবরার আড়চোখে রাইয়ের দিকে তাকালো ৷রাইয়ের মুখটা মলিন হয়ে আছে ৷মুখটা বড্ড বেশি শুকনা লাগছে ৷রাই অনেক কষ্টে একটু হাসলো তারপর বলল
কেমন আছেন ৷শরীরটা এখন ভালো লাগছে ৷আসতে একটু বেশি দেরি হয়ে গেছে তাই না ৷
আবরার শক্ত কন্ঠে বলল অভিনয়টা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না ৷সবার সাথে এমন একটা ভাব করছো যে আমাকে কত ভালবাসো ৷কিন্তু আমি মরে গেলেও তো তোমার কিছু যায় আসে না ৷
রাই টলমল চোখে আবরার দিকে তাকিয়ে বলল আপনি সত্যি বড্ড অবুঝ আবরার ৷আমার সব আয়ু আপনাকে দিতেও আমার আপত্তি নেই ৷ কিন্তু কি করবো বলুন ঐ টাও নেই আমার কাছে খুব বেশি ৷ আপনি আমাকে সত্যি বুঝলেন না ৷রাই একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো তারপর কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেল চোখের পানি মুছতে মুছতে ৷
এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে ৷আবরারকে বাড়ীতে নিয়ে আসা হয়েছে ৷আবরার ঘরে শুয়ে আছে ৷ রাই স্যুপ নিয়ে ঘরে আসলো ৷আবরার পাশে বসে রাই বলল এখন ঔষুধ খেতে হবে ৷আমি স্যুপ খাইয়ে দিচ্ছি ৷আপনার কোনো কথা শুনবো না আমি ৷তাড়াতাড়ি খেয়ে নিবেন ৷
আমার উপর হুকুম জারি করছো তুমি ৷তুমি কি ভেবেছো আমি অসুস্থ বলে কিছু করতে পারবো না ৷
রাই স্যুপে ফু দিতে দিতে বলল আপনার উপর আমি হুকুম জারি করতে চাই না ৷ তবুও যদি আপনার মনে হয় আমি আপনাকে হুকুম করছি ৷তাহলে হ্যা আমি হুকুম করছি ৷ যত দিন বেচেঁ আছি তত দিন না হয় হুকুম করে গেলাম ক্ষতি কি ৷মরে গেলে তো আর পারবো না ৷হঠাৎ হয়তো এক দিন দেখবেন আমি আর নেই ৷ঐ দিন হাজার চাইলেও আর হুকুম করতে পারবো না ৷তাই যত দিন বেচেঁ আছি তত দিন না হয় আমার মতো করেই থাকুন ৷ক্ষতি কি তাতে ৷ আর তো কয়েকটা দিন মাত্র ৷
আবরার এবার রাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল এই মেয়ে তোমার বয়স কতো হ্যা ৷এখনই মরার কথা বলো কিভাবে ৷তোমার থেকে বয়স্ক লোক পরে আছে এখনো ৷আর তুমি মরার কথা বলছো ৷
রাই হাসলো তারপর আস্তে করে বলল ওপারের যাওয়ার চিঠি যে কোনো সময় চলে আসে ৷আমার চিঠিও চলে এসেছে ৷যে কোনো সময় আমাকেও হয়তো চলে যেতে হবে ৷আমার যাওয়ার সময় যে ঘনিয়ে আসছে আবরার ৷আপনার অজানাতেই হয়তো একদিন হারিয়ে যাব কোনো এক কুয়াশা ঢাকা ভোরে ৷
চলবে…..
#শ্রাবন_আধারে_তুমি
লেখিকা : আফরিন ইসলাম
পার্ট :৭
রাই আবরারকে খাবার খাইয়ে দিল ৷তারপর ঔষুধ খাইয়ে দিয়ে ওরনা দিয়ে মুখ মুছে দিল ৷রাই ট্রে তে সব কিছু গুছিয়ে নিতে নিতে বলল
আমি দশ মিনিটের জন্য নিচে যাচ্ছি নাস্তা করতে ৷নাস্তা করা হয়ে গেলেই চলে আসবো ৷
রাই ট্রে নিয়ে চলে যাবে ৷ তখন আবরার বলল আমি অসুস্থ বলে দয়া করছো আমাকে ৷তুমি কি ভাবো তোমার অভিনয় আমি বুঝি না ৷একটা নার্সও রাখতে দিতেছো না ৷তোমার মতো মেয়েরা নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছুই করে না ৷সেবা করার বিনিময়ে কি চাও বলো ৷
রাই আবরার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ৷রাই কথা বলছে না ৷তাই আবরার বলল কি হলো কথা বলছো না কেন ৷কি চাই তোমার ৷
রাই এবার শান্ত গলায় বলল প্রথমত আপনাকে দয়া বা করুনা করার আগে যেন আল্লাহ আমার মৃত্যু দেয় ৷আর আমি বেচেঁ থাকতে আমার স্বামীকে অন্য মেয়ে সেবা করবে তা আমি হতে দেব না ৷আর হ্যা ঠিকই বলেছেন আমার মতো মেয়েরা স্বার্থ ছাড়া কিছু করে না ৷আপনি আগে সুস্থ হন ৷তারপর আমি চেয়ে নেব ৷
সবাইকে কেন বোঝাতে চাইছো তুমি আমায় ভালবাসো ৷এমন একটা ভাব করছো যেন আমরা একে অপরকে খুব ভালবাসি ৷কেন মিথ্যে নাটক করছো আবরার বলল ৷
মিথ্যে নাটক আমি করতে পারি না ৷আর হ্যা আপনাকে আমি ভালবাসি ৷আপনার ভালবাসার আমার দরকার নেই ৷আমি আপনাকে যতটুকু ভালবাসি তাই যথেষ্ট আমার জন্য ৷আর যদি মনে হয় আমি অভিনয় করছি ৷তাহলে হ্যা আমি অভিনয় করছি ৷কারন ভালবাসা আর যাই হোক আপনি বুঝবেন না ৷আমি মরার পর আরেকটা বিয়ে করে খুশি হবেন আশা করি ৷
রাই কথা গুলো বলে আর দাড়ালো না চলে গেল ৷আবরার রাইয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল ৷তারপর বলল তুমিও আমাকে বুঝবে না ৷কেন তুমি আমাকে ঠকিয়েছো ৷আমার কি দোষ ছিল ৷
অনেকক্ষন হয়ে গেছে রাই আসছে না ৷পনেরো মিনিট পার হয়ে গেছে ৷এদিকে আবরার একা একা কিছু ভালো লাগছে না ৷আবরার খুব রাগ হচ্ছে মেয়েটার ওপর ৷মেয়েটা ইচ্ছে করে দেরি করছে ৷আবরার ভাবনা ছেদ করে রাই রুমে আসলো ৷রাইকে দেখে আবরার চোখ সরিয়ে নিল ৷রাই আবরার দিকে তাকিয়ে বলল
রাগ করার কারন কি মশাই ৷মুখটা এমন বাংলা পাচেঁর মতো করে রেখেছেন কেন ৷
আমি কারো ওপর রাগ করি নি আবরার বলল ৷
তা তো মুখটা দেখেই বুঝতে পারছি ৷সাদি ভাই এসেছে ৷তার সাথে একটু কথা বলতে গিয়ে দেরি হয়েছে ৷রাই খেয়াল করলো আবরার মুখের রং পরিবর্তন হচ্ছে ৷আবরার শরীর কাপঁছে ৷রাগে আবরার শরীর কাপঁছে খুব করে ৷রাই আবরার দিকে তাকিয়ে বলল
কি হয়েছে আপনার ৷হঠাৎ রেগে যাচ্ছেন কেন ৷আমি কি কোনো ভুল করেছি ৷তাহলে ক্ষমা করে দিন ৷আবরার রাইয়ের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
এখানে কেন এসেছো ৷যাও না তোমার সাদির কাছে ৷ওর সাথেই তো তোমার …….
আবরার আর কিছু বলল না ৷হঠাৎ থেমে গেল ৷রাই অস্থির কন্ঠে বলর আপনি কি সব বলছেন ৷আপনার কথা আমি বুঝতে পারছি না ৷আর এভাবে রেগে গেলেন কেন সাদি ভাইয়ের নাম শুনে ৷কি হয়েছে আমাকে বলুন না ৷
আবরার নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে খুব ৷আবরার নিজের চোখ বন্ধ করে নিল ৷তারপর কয়েকটা শ্বাস নিল ৷রাই আবারো বলল কি হয়েছে বলুন না ৷
আবরার রাইকে বলল আমাকে এখন একা থাকতে দাও ৷যাও সাদির সাথে কথা বলে এসো ৷
সাদি ভাইয়ের সাথে আমি কি বলবো ৷আপনি বরং একটু উঠে বসুন ৷রাই কথাটা বলে কাবার্ডের কাছে গেল ৷তারপর একটা সাদা কাপড় বের করলো ৷রাই কাপড়টা নিয়ে আবরার কাছে গিয়ে বলল এবার আমার কাছে আসুন ৷
কেন কি করবে এটা দিয়ে আগে বলো ৷
এটা আপনার গলায় বেধে দেব ৷
কেন বাধবে এটা ৷
বাধার পরেই দেখতে পারবেন ৷এবার কাছে আসুন ৷ কাপড়টা দিয়ে রাই আবরার শরীর ঢেকে দিল ৷ তারপর বলল এবার একটু বসুন আমি আসছি ৷
রাই একটু পরে নাইফ,রেজার ,সেইভিং ক্রিম সহ আরো কিছু জিনিস নিয়ে ঘরে এলো ৷আবরার রাইয়ের হাতে ঐ গুলো দেখে বলল
এগুলো কেন এনেছো তুমি ৷
আপনার গোফ আর চুল কত বড় হয়েছে দেখেছেন ৷আপনাকে এখন চিড়িয়াখানার হনুমানের মতো লাগছে ৷রাই কথাটা বলে মুচকি মুচকি হাসছে ৷অপর দিকে আবরার ছোট ছোট চোখ করে রাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল
কি বললে আমাকে হনুমানের মতো দেখতে ৷
রাই শান্ত স্বরে বলল ভুল কি বললাম আমি ৷ বিশ্বাস না হলে একবার আয়নায় নিজের চেহারাটা দেখে নিন ৷রাই কথাটা বলেই একটা ছোট আয়না আবরার সামনে ধরলো ৷আবরার আয়নার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে ৷সত্যি তার চুল আর গোফঁ বেশ বড় হয়ে গেছে ৷কিন্তু তাই বলে এই পুচকি মেয়েটা তাকে হনুমান বলল ৷
আবরার রাগী গলায় বলল আমার চুল দাড়ি তোমার কাটঁতে হবে না ৷আমাকে তো হনুমানের মতো দেখতে ৷আমার লাগবে না গোফঁ চুল কাটা ৷
আমি আমার স্বামীর চুল গোফঁ কেটে দেব তাতে আপনার কি হ্যা ৷আর আমার স্বামীকে আমি হনুমান বলবো ৷আমার যা ইচ্ছা তাই বলবো ৷আপনি এর মাঝে কথা বলার কে হ্যা ৷আমার স্বামীর সেবার কোনো ত্রুটি আমি হতে দেব না ৷এবার লক্ষী ছেলের মতো বসে থাকুন ৷
রাই আবরার চুল আর গোফঁ কেটেঁ ছোট করে দিয়েছে ৷আবরার সারাটা সময় রাইয়ের মুখের দিকেই তাকিয়ে ছিল ৷একটা কথাও আবরার বলে নি ৷চুল ,গোফ কাটার পর রাই ভেজা কাপড় দিয়ে আবরার শরীর সুন্দর করে মুছে দিল ৷আর আবরার শুধু রাইকেই দেখছে ৷রাই ড্রয়ার থেকে একটা মলম এনে আবরার ছোট ছোট কাটা জায়গায় লাগিয়ে দিল ৷
আবরার রাইকে বলল এতটা কেন করছো ৷এই করুনা গুলো না করলে হয় না ৷ সাদি অপেক্ষা করছে তোমার জন্য ৷আমাকে নিয়ে কেন এত অভিনয় করছো ৷আমার এই সব একদম ভালো লাগছে না ৷সত্যি বলছি আমার সাথে অভিনয় করো না ৷
চলবে
#শ্রাবন_আধারে_তুমি
লেখিকা:আফরিন ইসলাম
পার্ট: ৮
আবরার কথা শেষ হতেই রাই বলল আপনার সাদি ভাইকে নিয়ে এত কেন মাথা ব্যাথা বলুন তো ৷আর সাদি ভাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে না ৷সে খুব ভালো করেই জানে আমি আপনার কাছে আছি ৷ এখন আপনাকে গেঞ্জি পড়তে হবে ৷আপনি আমার কাছে আসুন ৷আমি পড়িয়ে দিতেছি ৷
আবরারকে সুন্দর মতো কাপড় পড়িয়ে দিল রাই ৷আবরার আর কোনো কথা বলল না ৷ তারপর বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বলল এখন চুপচাপ শুয়ে থাকুন আমি আসছি ৷
আবরার বলল কোথায় যাচ্ছো তুমি ৷তুমি এখন কোথাও যাবে না ৷এখানেই থাকো ৷
রাই হাসলো আবরার কথায় ৷রাই মুচকি হেসে বলল আমি শাওয়ার নিতে যাবো ৷আমি বাইরে কোথাও যাচ্ছি না ৷কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে আসবো ৷
আবরার এখন নিজের কথায় নিজেরই গালে চড় মারতে ইচ্ছা করছে ৷ রাই নিজের ব্যাগ থেকে কাপড় বের করতে ছিল ৷হঠাৎ রাইয়ের মাথায় প্রচন্ড রকমের ব্যাথা শুরু হয় ৷ রাইয়ের চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে আস্তে আস্তে ৷রাই দৌড়ে ওয়াসরুমে চলে গেল ৷ওয়াসরুমে যেয়ে রাই নিজের মাথায় চোখে মুখে পানি দিচ্ছে ৷অপর দিকে রাই কেন দৌড়ে ওয়াসরুমে গেছে এটা আবরার বুঝতে পারলো না ৷আবরার রাইয়ের নাম ধরে ডেকেই চলেছে ৷রাই নিজের মাথা দুই হাতে চেপেঁ ধরে আছে ৷নাক থেকে আবারো রক্ত আসতে আরম্ভ করেছে ৷রাই বেসিন থেকে পানি নিয়ে নিজের নাক পরিষ্কার করে নিল ৷ওপাশ থেকে আবরার রাইকে ডেকেই চলেছে ৷রাইয়ের চোখে পানি টলমল করছে ৷রাই চোখের পানি মুছে নিল ৷ তারপর ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে এলো ৷
রাইকে দেখে আবরার বলল ওভাবে কেন ওয়াসরুমে গেলে ৷আর আমি তোমাকে কতক্ষন ধরে ডাকছি ৷তুমি কেন সারা দাও নি ৷কি হয়েছে ৷ তোমার চোখে মুখে হঠাৎ কেন পানির ঝাপটা দিয়েছ ৷
রাই নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল মাথাটা একটু ব্যাথা করছিল ৷ তাই পানির ঝাপটা দিয়েছি ৷
বেশি খারাপ লাগছে তোমার ৷ডাক্তার ডাকতে বলবো আমি ৷
না না ডাক্তার লাগবে না ৷আমি ঠিক আছি ৷আপনি শুয়ে থাকুন ৷রাই নিজের ব্যাগের কাছে গেল ৷তারপর কিছু ঔষুধের পাতা বের করলো ৷ রাই ঔষুধ গুলো থেকে কয়েকটা ঔষুধ খেয়ে নিল ৷
আবরার আস্তে করে বলল এটা কিসের ঔষুধ তুমি খেয়েছো ৷ আমাকে দেখাও তো ৷
মাথা ব্যাথার ঔষুধ ৷আপনি হঠাৎ আমাকে নিয়ে এত আগ্রহ কেন প্রকাশ করছেন ৷আমাকে নিয়ে বেশি আগ্রহ দেখাবেন না ৷তাহলে কিন্তু কাদঁতে হবে ৷শুয়ে থাকুন ৷ রাই কথা গুলো বলে ওয়াসরুমে চলে গেল ৷
রাই শাওয়ার নিয়ে সোফায় শুয়ে আছে ৷রাই আবরার সাথে কথা বলছে না ৷শরীরটা দিনকে দিন শুধু খারাপই হচ্ছে ৷মাথা ব্যাথায় ঘাড় ছিড়ে যাচ্ছে রাইয়ের ৷
আমার যে খুধা লেগেছে সেই খবর কি কেউ রাখে নাকি ৷দুপুর যে হয়ে যাচ্ছছ সেই খবর তো কেউ রাখে না ৷আমাকে নিয়ে ভাবার কারো সময় আছে নাকি এই বাড়ীতে ৷বিদেশেই ভালো ছিলাম এত দিন ৷
প্রচন্ড মাথা ব্যাথার মাঝেও রাইয়ের খুব হাসি পেয়েছে ৷আবরার রাইকে খোঁচা মেরে কথা গুলো বলছে ৷ লোকটা কথা না বলে যে থাকতে পারছে না তা শিকার করবে না ৷ উল্টো দোষ রাইকেই দিয়ে চলেছে ৷রাই আস্তে করে উঠে বসলো ৷তারপর আবরার কাছে গিয়ে বসলো ৷
রাই মুচকি হেসে বলল আপনার খুব ক্ষুধা লেগেছে তাই না ৷
হুমম
আমি খাবার নিয়ে আসছি ৷আপনি একটু অপেক্ষা করুন রাই বলল ৷
এখন আর কষ্ট করে খাবার নিয়ে আসতে হবে না ৷ আমি পরে খাব ৷আমার মাথাটা ব্যাথা করছে ৷তুমি বরং একটু চুল গুলো টেনে দাও ৷
আবরারকে বড্ড অচেনা লাগে রাইয়ের কাছে ৷মানুষটা আসলে কি চায় রাই বোঝে না ৷লোকটা এই ভালো তো এই খারাপ ৷রাইয়ের ভাবনার মাঝেই আবরার বলল কি হলো দেবে না ৷
রাই আবরার মাথার কাছে বসলো ৷তারপর আবরার চুলের ভেতর নিজের নরম হাত গুলোর স্পর্শ দিল ৷রাই আবরার অনেক কাছে বসে আছে ৷আবরার চোখ রাইয়ের মাঝে স্থির ৷ঐ চোখের দিকে আবরার তাকাতে চায় না ৷ঐ চোখে আবরার মরন হবে যে কোনো সময় ৷না আবরার কোনো বেইমানের চোখে তাকাবে না ৷নিজের বেহায়া চোখকে ফিরিয়ে নিতে চেয়েও আবরার ব্যর্থ প্রতি মূহূর্তে ৷ রাইয়ের গলার ডান দিকে লালচে তিলটা আবরার চোখে নেশা সৃষ্টি করছে ৷রাইকে আবরার খুটিয়ে দেখতে চায় না ৷কিন্তু এই মেয়ে বড্ড ভয়ংকর ৷
দুপুর দুইটা বাজে ৷আবরার গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে ৷রাই নিচে যেয়ে খাবার ঘরে নিয়ে আসে ৷আবরার সব কিছু গুছিয়ে নিল রাই ৷ আবরার পাশে বসে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে রাই বলল
আপনি কেন ফিরে এলেন বলুন তো ৷বিশ্বাস করুন কিছু দিন আগেও আমি আপনাকে খুব করে চাইতাম ৷আমি রোজ নামাজে আল্লাহর কাছে আপনাকে চাইতাম ৷কিন্তু এখন আর চাই না ৷আমি চলে যাওয়ার পর আপনি আবার বিয়ে করবেন ৷এই কথাটা ভাবলে বড্ড কষ্ট হয় ৷আপনাকে ছেড়ে কিভাবে যাব বলুন তো ৷আমি তো আরো মায়ায় জরিয়ে যাচ্ছি ৷এই ভালোবাসা ছেড়ে আমি কিভাবে যাব ৷আপনি এসে আমার কাজটা যে বড্ড কঠিন করে দিলেন ৷আপনার নামের শিকলে আমি আটকে যাচ্ছি আবরার ৷
চলবে ৷