শ্রাবন_আধারে_তুমি_২,বোনাস_পার্ট,২৩

0
745

#শ্রাবন_আধারে_তুমি_২,বোনাস_পার্ট,২৩
#লেখিকা_আফরিন_ইসলাম
#বোনাস_পার্ট

বেলাশেষে সবাই চলে যায় ৷ কেউ দীর্ঘদিনের আগলে রাখা অতীত ভুলে যায় ৷ আবার কেউ অল্প কিছু দিনের অতীত বয়ে বেড়ায় সারা জীবন ৷তবুও জীবন চলতেই থাকে ৷ কেউ পাগলের মতো বেঁচে থাকে ৷ আবার কেউ মিথ্যে হাসির আড়ালে কান্না লুকিয়ে বেঁচে থাকে ৷ রাই সোহরাবের দিকে ফিরে তাকায় ৷ তারপর কঠিন গলায় বলে ,

“আপনার আমার প্রতি কোনো ভালোবাসা কিংবা ভালোলাগা তৈরি হয় নি ৷ আপনি দুনিয়াটা দেখেন নি ৷ কিন্তু আমি দেখেছি ৷ আমি আমার অতীত থেকে বেড়িয়ে গেছি কি না জানি না ৷ তবে আমি লাশ হয়ে গেছি ৷ আর লাশ কখনো কারো কাছে থাকে না ৷আসছি আমি ৷”

রাই সোহরাবকে ছেড়ে চলে যায় ৷ আর সোহরাব নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেই দিকে ৷

পরের দিন

খান বাড়ী সাজানো হচ্ছে ৷ বাড়ীর মেজো ছেলের বিয়ে বলে কথা ৷ বিয়েতে সবাই ব্যস্ত ৷যেহেতু বিয়েটা অনেক দ্রুত হচ্ছে ৷ তাই কাজ অনেক ৷ আবরার নিজের ঘরে বসে আছে ৷ হঠাৎ নিজের ঘাড়ে কারো স্পর্শ পেতেই আবরার নিজের চোখের পানি মুছে নেয় ৷ তারপর মাথা তুলে তাকায় ৷ নিজের ছোট ভাই ফারহানকে দেখে আবরার হেসে বলল ,

“কি রে তুই এই সময় ৷ ”

“ভাইয়া তুই সবার চোখ ফাঁকি দিতে পারলেও আমার চোখ ফাঁকি দিতে পারবি না ৷তুই বিয়েটা করিস না ভাইয়া ৷”

আবরার কোনো কথা বলে না ৷ফারহান নিজের ভাইকে আবার বলল ,

“ভাইয়া তুই কি সত্যি রাইকে ভালোবাসতি ? আজ সত্যি আমার সন্দেহ হয় ৷তোর যা ভালো লাগে কর ৷কিন্তু তুই একদিন এর থেকেও বেশি কষ্ট পাবি ৷”

অপর দিকে রাই নিজের জিনিস নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায় ৷ তারপর রিকশায় করে বাসস্টপের দিকে রওনা দেয় ৷ দুপুরের দিকে গাড়ী ছাড়বে ৷নিজের চিরচেনা শহরে চোখ বুলায় রাই ৷ এই শহরের রাস্তায় আর ফিরে আসা হবে না হয়তো ৷ তবুও প্রিয়জনে ভরা এই শহর ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে না রাইয়ের ৷ রাই নিজেকে শক্ত করে ৷ তারপর মনে মনে একটা কথাই বলল ,

“তোর এখানে কেউ নেই ৷তুই একা ৷ তোর না কেউ ছিল ৷ আর না কেউ আছে ৷ ”

ব্যস্ত শহরের রাস্তা দিয়ে রাই নিজের গন্তব্যে চলে যায় ৷ রিকশা থেকে নেমে বেশ সমস্যা হয় রাইয়ের ৷ কারন এত জিনিস নিয়ে গাড়ী খোঁজা সম্ভব না ৷ হঠাৎ একটা হাত রাইয়ের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে ৷ রাই লোকটার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায় ৷ আরে সোহরাব দাড়িয়ে আছে তার পাশে ৷ সোহরাব তার দিকে তাকিয়ে হাসে ৷ রাই অবাক হয় লোকটাকে দেখে ৷ সোহরাব রাইয়ের হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে নেয় ৷ তারপর কোমল গলায় বলল,

“আগেই জানতাম আপনার সমস্যা হবে ৷তাই আপনার আগেই আমি এসে বসে আছি ৷ এবার চলুন বাস খুজতে হবে ৷ ”

রাই সোহরাবের দিকে তাকিয়ে বলে ,

“আপনি কি দিয়ে তৈরি সোহরাব ?কাল যে আপনাকে আমি গ্রহন করি নি ৷ তার জন্য আপনার খারাপ লাগছে না ৷”

সোহরাব হেসে জবাব দেয় ,

“কালকের কথা কাল গেছে ৷ ঐ কথা ধরে রেখে বন্ধুত্ব খারাপ করতে রাজী না ৷এবার চলুন ৷”

সোহরাব রাইকে তার বাসে উঠিয়ে দেয় ৷ রাইকে তার সিটে বসিয়ে দিয়ে সোহরাব বলল ,

“রাস্তায় খাবেন কি আপনি ?”

“রাস্তায় কোথাও গাড়ী থামলে খেয়ে নেব ৷”

সোহরাব কোমরে হাত দিয়ে বলল ,

“অন্যকে জ্ঞান দিতে তো খুব পারেন ৷ কিন্তু নিজের বেলায় লাড্ডু ৷ কখন বাস থামাবে , সেই ভরসায় বসে থাকবেন ৷ দেখবেন শেষে পেটে ইদুর দৌড়াচ্ছে ৷ একটু অপেক্ষা করুন ৷ আমি আপনাদের জন্য খাবার নিয়ে আসছি ৷”

রাইকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সোহরাব চলে যায় ৷ কিন্তু কয়েক সেকেন্ড পরে আবার ফিরে আসে ৷ তারপর বলে ,

“আপনার কি গাড়ীতে বমি হয় ?”

“একটু হয় আর কি ৷”

সোহরাব চলে যায় ৷ আর রাই তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে ৷

অন্যদিকে রায়হান সায়মার কাছে যায় সাহায্যের জন্য ৷ কিন্তু সেখানে যেয়ে সে আরো হতাশ হয় ৷ কারন অনিক কিছুক্ষন আগেই মারা গেছে ৷ সায়মাকে কিছু বলার পরিস্থিতি নেই ৷ স্বামীর অকাল মৃত্যুতে সে ভেঙ্গে পড়েছে ৷ রায়হান সায়মাকে শান্তনা দিতে পারে না ৷ দূর থেকছ দাড়িয়ে সবটা দেখতে থাকে ৷ মানুষ যখন চোখ থাকতেও অন্ধ হয় , মুখ থাকতেও বোবা হয় ৷ তখন তার যেই অবস্থা হয় ৷ রায়হানের ঠিক তাই হয়েছে ৷

সোহরাব রাইয়ের জন্য খাবার কিনে নিয়ে আসে ৷ তারপর খাবার গুলো তার হাতে দিয়ে অভিমানী গলায় বলে ,

“সময় মতো খেয়ে নেবেন ৷ আমি কিন্তু অনিয়ম একদম সহ্য করবো না বলে দিলাম ৷”

সোহরাব রাইয়ের হাতে দুইটা টিস্যু পেপারের প্যাকেট , একপাতা ঔষুধ আর কয়েকটা পলিথিন দিয়ে বলল,

“রাস্তায় বমি আসলে ঔষুধ খাবেন ৷ যদি তবুও বমি আসে ৷ তাহলে পলিথিনে বমি করবেন ৷ জানালা দিয়ে বাইরে মাথা বের করবেন না ৷ এতে এক্সিডেন্টের সম্ভাবনা থাকে ৷ আর আপনাকে নিয়ে রিস্ক নিতে চাই না আমি ৷ আর হ্যা একদম চিন্তা করবেন না কিছু নিয়ে ৷ ওখানে যেয়ে আবার লেখাপড়া শুরু করবেন ৷ টাকা আমি দেব দরকার হলে ৷নিজের যত্ন নেবেন ৷ ”

সোহরাব রাইয়ের হাতে একটা টাকার বান্ডিল দিয়ে বলল ,

“দয়া করে ফেরত দিবেন না ৷ এটা আপনার দরকার ৷ অচেনা জায়গায় লাগবে এটা ৷ আমি বন্ধু হিসেবে দিচ্ছি ৷ ভাববেন না একেবারে দিচ্ছি ৷ আপনার যেই দিন টাকা হবে ৷ ঐ দিন আমাকে দিয়ে দিবেন ৷

সোহরাবের কথার মাঝেই কন্ট্রাক্টর সবাইকে যার যার সিটে বসতে বলে ৷ সোহরাব রাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল ,

“আমি সব সময় আপনার সাথে আছি ৷ নিজেকে একা ভাববেন না ৷ ভালো থাকবেন ৷ ”

সোহরাব কুকুরটাকে আদর করে বলে ,

“দেখে রাখিস আমার প্রিয় মানুষকে ৷তার ক্ষতি হতে দিস না ৷ তোর কাছে আমানত রাখলাম ৷”

সোহরাব বাস থেকে নেমে যায় ৷ ড্রাইভার বাস ছেড়ে দেয় ৷ চলন্ত বাসের দিকে সোহরাব দৌড়ে আসে ৷ তারপর জানালার দিকে এসে রাইকে ডাক দেয় ৷ তারপর রাইকে হাসতে হাসতে বলে ,

“ওখানে যেয়ে কল করবেন ৷ কক্সবাজার পৌছাতে মাঝ রাত হয়ে যাবে ৷ নিজের ব্যাগ কারো কাছে দেবেন না ৷ ওখানে অনেক দালাল আছে ৷ আর শুনুন ওখানের পানি অনেক লবনাক্ত ৷ তাই নিজের খেয়াল রাখবেন ৷আর ওখানে আপনার পরিচিত কেউ নেই ৷ তাই অসময়ে বের হবেন না ৷ কোনো সমস্যা হলে আমায় জানাবেন ৷”

বাস এক সময় দ্রুত চলতে শুরু করে ৷ পেছন থেকে সোহরাব চিৎকার করে বলে ওঠে ,

“ওখানে যেয়ে ছেলেদের সাথে বন্ধুত্ব করবেন না ৷ সবাই কিন্তু বন্ধু হয়ে আপনার পাশে থাকবে না রাই ৷”

রাই হাসে সোহরাবের কথায় ৷লোকটা পাগল ৷ নিজের ডান হাত বের করে বিদায় জানায় রাই ৷ আর সোহরাব তাকিয়ে থাকে চলন্ত বাসের দিকে ৷ একটা সময় চোখের আড়ালে চলে যায় বাসটা ৷ সোহরাব আকাশে দিকে তাকিয়ে হাসে ৷ তারপর বলে ,

“ভালোবাসা বুঝেও বুঝলাম ৷”

সন্ধ্যা ছয়টা বাজে ৷ খান বাড়ী আলোয় ঝকমক করছে ৷ পুরো বাড়ী আত্মীয় স্বজনে ভরে গেছে ৷ রাইয়ের পুরো পরিবার এসেছে ৷একটু পরেই আবরার হলুদ ৷ সাদি রায়হানের দিকে তাকিয়ে বারবার হাসে ৷ তার হাসির কারন রায়হান বুঝতে পারে ৷ কিন্তু প্রমান ছাড়া শয়তানটাকে কেউ বিশ্বাস করবে না ৷ আবরারকে বসানো হয়েছে ৷হলুদ পাজ্ঞাবীতে তাকে রাজপুত্রের মতো লাগছে ৷ তারপর এক এক করে সবাই আবরারকে হলুদ লাগাতে শুরু করে ৷ ঠিক তখনই বাড়ীর বাইরে চিৎকারের আওয়াজ শোনা যায় ৷ আফজাল খানের কাছে একজন দারোয়ান দৌড়ে এসে বলল ,

“স্যার বাইরে একটা মেয়ে ভেজাল করছে ৷ পাগলের মতো বকছে ৷ আবরার স্যারের বন্ধুর কথা বলছে বারবার ৷ আপনি একটু দেখে যান স্যার ৷”

দারোয়ানের কথা শেষ না হতেই বাড়ীর ভেতর পাগলের মতো সায়মা ঢুকলো ৷ পাগলের মতো এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো ৷ একটু দূরেই সাদিকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে গেল সায়মা ৷ সায়মা হামলে পড়লো সাদির ওপর ৷ তারপর বলল ,

“তোকে আজ আমি মেরেই ফেলবো ৷ তুই সবার জীবন শেষ করে দিয়েছিস ৷ রাইকে শেষ করেছিস ৷ আমার থেকে আমার স্বামীকে কেড়ে নিয়েছিস ৷ তোকেও আমি বাচঁতে দেব না ৷ মর তুই ৷”

সায়মা সাদির গলা চেপে ধরে ৷কিন্তু সাদির কিছু হওয়ার আগেই সবাই সায়মাকে টেনে সরিয়ে দেয় ৷সায়মা চিৎকার করতে থাকে ৷ সে যেন কাউকে চিনতেই পারছে না ৷সায়মাকে ধরে রাখাও যেন দায় ৷সায়মা চিৎকার করে বলে ,

“ও একটা খুনি ৷ ও নরখাদক ৷এই জানোয়ারটা সবাইকে শেষ করে দেবে ৷”

আফজাল খান সাদির কাছে যেয়ে বলল ,

“এইসব কি সাদি ৷আমি কিছুই বুঝতে পারছি না ৷”

“আমিও কিছু বুঝতে পারছি না কাকু ৷ হঠাৎ সায়মা পাগলের মতো কেন হামলা করলো আমাকে ? আমি সত্যি বুঝতে পারছি না ৷”

এতক্ষনে সবাই নানা কথা বলা শুরু করেছে ৷ ঠিক তখনই কেউ একজন সেখানে উপস্থিত হলো ৷ তাকে দেখে সাদির চোখ কপালে ওঠার উপক্রম হলো ৷ সাদমান দাড়িয়ে আছে রক্তাক্ত অবস্থায় ৷ তাকে দেখেই মনে হচ্ছে সে আহত ৷সাদি ভয়ে ঢোক গিলতে লাগলো ৷ সাদির জানা মতো সাদমানের এতক্ষনে মরে যাওয়ার কথা ৷ সাদমান সাদির দিকে তাকিয়ে বলল ,

“কি ভাবছো সাদি ?আমি বেঁচে গেছি কিভাবে ?আমি অন্য সবার মতো নই ৷ তোমার ঐ লোকেরা আমার কিছু করতে পারে নি ৷ আজ তোমার মুখোশ সবার সামনে টেনে খুলবো ৷”

চলবে

#শ্রাবন_আধারে_তুমি_২
#লেখিকা_আফরিন_ইসলাম
#পার্ট_২৩

সাদমান পুরো পুলিশ টিম নিয়ে এসেছে সাদিকে ধরতে ৷ সাদিকে ঘিড়ে পুলিশ দাড়িয়ে আছে ৷সাদমান একজন পুলিশকে ডেকে বলল ,

“গতকাল আপনাকে যেই ভিডিও গুলো পাঠিয়ে ছিলাম ৷ সেই গুলো সবাইকে দেখানোর ব্যবস্থা করুন ৷”

পুলিশ অফিসার একটা ল্যাপটপে ঔষুধের দোকানের ভিডিও ফুটেজ চালু করলেন ৷সেখানে স্পষষ্ট দেখা যাচ্ছে রাইয়ের ভাবি ঔষুধ কিনছে ৷ভিডিওটা শেষ হওয়ার পর সাদমান বলল ,

“হয়তো এটাই ভাবছেন আমি কেন এই ভিডিও আপনাদের দেখালাম ?আসলে সাদির সাথে রায়হানের স্ত্রী জড়িত ৷জেরিনের বাচ্চাটা রাই নয় ৷ বরং আপনাদের বড় ছেলের বউ নষ্ট করেছে ৷এখন বলতে পারেন কেন নষ্ট করেছে ? রায়হানের সাথে গত দুই দিন আগে আমার কথা হয় ৷ তার স্ত্রী বিয়ের পর থেকেই আলাদা হতে চাইতেন ৷ এছাড়াও আজাদ মাহমুদ তার মেয়েকে খুব ভালোবাসতেন ৷ যেটা তার ছেলের বউ সহ্য করতে পারতেন না ৷ তাই স্বামীর কাছে রোজ নানা ধরনের কথা বলতেন ৷ আমার যদি ভুল না হয় ৷ তাহলে আজাদ মাহমুদ মেয়ের নামে একটা ফ্ল্যাট কিনতে চেয়ে ছিলেন ৷ যেখানে সবার মত ছিল ৷ কিন্তু রায়হানের স্ত্রী তা মানতে পারে নি ৷ যার জন্য স্বামীর সাথে তার আরো ঝামেলা হতো ৷ অতঃপর একদিন রায়হানের শ্বশুড় বাড়ীর লোকেরা তাদের বাড়ীতে আসেন ৷ এবং রাইকে তাদের বাড়ীর বউ করতে চান ৷ কিন্তু সেই বিয়েতে রাইয়ের মত ছিল না ৷ তাই বিয়ে ভেঙ্গে যায় ৷আর রাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে যায় আবরারের সাথে ৷ তারপর শুরু হয় গোপন ষড়যন্ত্র ৷কিন্তু রাইকে কোনো ভাবে ফাঁসানো যাচ্ছিলো না ৷ অতঃপর এই ষড়যন্ত্রে যোগ হয় সাদি ৷সে সবাইকে বুদ্ধি দিত ৷ তার পরিকল্পনা অনুযায়ী জেরিনের স্যুপে ঔষুধ মিশিয়ে দেয় ওর ভাবি ৷ ভালো করে চিন্তা করে দেখুন ৷ ঐ দিন বাসায় মেয়েরা ছাড়া আর কেউ ছিল না ৷ আর সেই সুযোগটা ওর ভাবি নেয় ৷ ফুলিকে পাঠিয়ে দেয় ঔষুধ কিনতে ৷ রাই জেরিনের জন্য স্যুপ বানায় ৷ তারপর জেরিনের আর কিছু লাগবে কি না তা জিজ্ঞাসা করতে তার রুমে যায় ৷ আর ঐ সুযোগে স্যুপে ঔষুধ মেশানো হয় ৷আর সব দোষ বেচারী রাইয়ের উপর যেয়ে পরে ৷ আপনাদের বিশ্বাস না হলে আমার কাছে ঔষুধের বিল পেমেন্টের কাগজ আছে ৷ যেটা রায়হান আমাকে দিয়েছে ৷রায়হান নিজের ঘরে কাগজটা কুড়িয়ে পেয়ে ছিল ৷অতঃপর আপনারা রাইকে বাসা থেকে বের করে দিলেন ৷ রাই যেয়ে ওর বান্ধুবীর বাসায় ওঠে ৷ সেখানে সে থাকতে শুরু করে ৷ সায়মা আর অনিক রাইয়ের জন্য ঢাল হয়ে দাড়ায় ৷আর এটাই সবার জন্য সমস্যার কারন হয়ে যায় ৷তারপর অনিককে সাদি কিডন্যাপ করে ৷ কিডন্যাপ করার পর সায়মাকে কল করে সে ৷ দুপুরে রাইয়ের খাবারে ঘুমের ঔষুধ মিশিয়ে দিতে বলে ৷ কিন্তু সায়মা রাজী হয় না ৷ তাই অনিককে মেরে ফেলার হুমকি দেয় ৷অতঃপর উপায় না পেয়ে সায়মা তাই করে ৷ রাইকে অজ্ঞান করার পর সায়মার বাসায় রনি যায় ৷সায়মা রাইয়ের জামা বদলে একটা নোংরা জামা পড়িয়ে দেয় আগে থেকেই ৷ তারপর প্লান অনুযায়ী রনি আবরারকে কল করে ৷ আর আপনারা সবাই সেখানে যান ৷ তারপর নিরপরাধ মেয়েটাকে আবারো ভুল বোঝেন ৷বিশ্বাস না হলে আমি অনিকের শেষ বক্তব্যের ভিডিও আপনাদের সামনে অন করছি ৷”

ল্যাপটপে অনিকের বক্তব্য চালু করা হয় ৷ সব কিছু শুনে সবাই অবাক হয়ে যায় ৷সাদমান তারপর বলল,

“রাই সেই রাতেই সায়মার বাসা থেকে বের হয়ে যায় ৷আর তারপরের ঘটনা আমি জানি না ৷ তবে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সে এখন একটা কফিশপে কাজ করে ৷ ”

আবররা দৌড়ে সাদির কাছে যায় ৷ ওর কলার ধরে চিৎকার করে বলে ,

“কেন করলি এমন আমার সাথে ?তোকে নিজের ভাই মনে করতাম আমি ৷ আর সেই তুই আমার পিঠে ছুড়ি মারলি ৷ আমার কাছে রাইয়ের নামে যা ইচ্ছে বলেছিস ৷ঐ ছেলেটাকে নিয়েও অনেক কথা বলেছিস ৷ তুই কেন এত কিছু করলি সাদি ?কি ক্ষতি করে ছিলাম আমি ?”

সাদি নিজেও আবরার কলার চেপে ধরে বলল ,

“কি করিস নি তুই আবরার ?ক্লাসে সব সময় তুই প্রথম স্থানে থাকতি ৷ তোর জন্য আমি সব সময় সেকেন্ড হতাম ৷ তোর থেকে আমি কম ছিলাম নাকি ৷ তবুও সবাই সারাদিন তোর গুনগান করতো ৷ আমি ক্লান্ত হয়ে গিয়ে ছিলাম ৷ইচ্ছে করতো তোকে মেরে দেই ৷ কিন্তু ধরা পরে যাওয়ার ভয়ে পারতাম না ৷ তাই তোর সাথে বন্ধুত্ব করি ৷কিন্তু তোকে শেষ করার কোনো উপায় খুজে পায় নি ৷ অতঃপর তোর ধ্বংস হয়ে রাই আসলো ৷ আর আমি ওকে ব্যবহার করে তোকে শেষ করতে চাইলাম ৷ কিন্তু একটা সময় আমি নিজেই রাইকে ভালোবেসে ফেলি ৷ আর তত দিনে তোদের বিয়ে অনেক কাছাকাছি চলে আসে ৷ আমি আর সহ্য করতে পারি নি ৷ আমি রাইয়ের ভাবির চোখে ওর জন্য ঘৃনা দেখেছি ৷ আর সেটাকেই কাজে লাগিয়েছি ৷ আর সব প্লান মতো করেছি ৷ রাইকে বাসা থেকে বের করে দেওয়ার আগে ওর ফোনে থাকা তোর নাম্বার ব্লক করে দিতে বলি ওর ভাবিকে ৷ আর আমি তোর ফোন থেকে ওর নাম্বার ব্লক করে দেই ৷ যাতে তোরা যোগাযোগ করতে না পারিস ৷ আর রাইকে ঐ দিন হাসপাতালের বাইরে যেয়ে তোর বিয়ের কথাও বলেছি ৷ যেন ও তোর কাছে না আসে ৷ আর আজ যে তোর গায়ে হলুদ ৷ সেটাও রাই জানে ৷ গতকাল ওকে সব বলেছি আমি ৷তোর প্রতি ওর ভালোবাসা শেষ করতে যা যা করা লাগে ৷ তার সব কিছু আমি করেছি ৷আমি চেয়ে ছিলাম তোর বিয়ে হলে আমি রাইকে বিয়ে করবো ৷তোকে প্রতিদিন মারতে চেয়েছি আমি ৷ ভালোবাসা হারিয়ে যখন তুই পাগলের মতো ছটফট করবি ৷ তখন আমি সফল হবো ৷ কিন্তু তার আগেই রায়হান ভাই সব জেনে যায় ৷ তাই বাধ্য হয়ে কাল রাতে তার বন্ধু সাদমানকে কিডন্যাপ করি ৷ তার মোবাইল ফোন থেকে সব ডিলিট করি ৷আর তাকে মেরে ফেলতে চাই ৷ কিন্তু সে আগে থেকেই সব প্রমান অন্য অফিসারদের দিয়ে দেয় ৷ আর আমার লোকদের শেষ করে এখানে চলে আসে ৷”

আবরার সাদিকে মারতে থাকে ৷ কিন্তু পুলিশ এসে সাদিকে বাচিঁয়ে নেয় ৷আর তাকে এরেস্ট করে ৷ পুলিশ সাদিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ৷ ঠিক তখনই রায়হান বলল ,

“শুধু এক জনকে কেন নিয়ে যাচ্ছেন ? সাথে করে আমার বউ আর শালাকেও নিয়ে যান ৷”

রায়হানের স্ত্রী স্বামীর পা জড়িয়ে ধরে ৷ কিন্তু তাতে লাভ হয় না ৷ রায়হানের চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরে ৷ কিন্তু নিজের স্ত্রী আর শালাকে বাচাঁতে এতটুকু চেষ্টা সে করে না ৷অতঃপর পুলিশ রনি আর তার বোনকেও ধরে নিয়ে যায় ৷

আবরার নিচে বসে পরে ৷ দুই হাতে মুখ ঢেকে কাদঁতে কাদঁতে বলল ,

“আমি কিভাবে ওর সামনে যাবো ?আমি ওকে বিশ্বাস করতে পারি নি ৷ আমি সাদিকে বিশ্বাস করে ঠকেছি ৷”

রাইয়ের বাবা বুকে হাত দিয়ে চেয়ারে বসে পরে ৷ বড় ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে ,

“মেয়েটাকে আমরা শেষ করে দিয়েছি বাপ ৷ ওর কথা বিশ্বাস করি নি ৷ আমার অবুঝ মেয়েটাকে তিলে তিলে মেরে ফেলেছি ৷ রায়হান একবার তোর বোনকে কল করবি ৷আমি বাবা হয়ে একবার ওর কাছে ক্ষমা চাইবো ৷”

রায়হান বাবার কথা মতো কল দেয় বোনের নাম্বারে ৷ কিন্তু নাম্বারটা বন্ধ বলছে ৷ রায়হান হতাশ কন্ঠে বলল ,

“নাম্বারটা বন্ধ বাবা ৷”

অপরদিকে চট্টগ্রাম মহাসড়কে শত শত লোকের ভিড় ৷ মুখোমুখি দুইটা বাসের সংঘর্ষ হয়েছে একটু আগে ৷ বাসের ভেতর থেকে মানুষ আত্ম চিৎকার ভেসে আসছে ৷ বাচ্চাদের কান্নার শব্দে মানুষের শরীরের লোম দাড়িয়ে গেছে ৷বেপরোয়া গাড়ী চালানোর ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে ৷ তবে এখনো এম্বুলেন্স আসে নি ৷ তাই কাউকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া যাচ্ছে না ৷ অনেক মানুষকে বের করা হয়েছে ৷ অনেকের হাত ,পা কাটা গেছে ৷ অনেকের দেহ থেতলে গেছে ৷ অনেকের চেহারা চেনা যাচ্ছে না ৷উল্টে যাওয়া গাড়ীর ভেতরে সব বিধ্বস্ত ৷বেশির ভাগ মানুষ বেঁচে নেই ৷একটা দেহ দুইটা সিটের নিচে পরে আছে ৷ যারা বাসের মধ্যে থাকা লোকদের উদ্ধার করছে ৷ তাদের দিকে একটা রক্তলাল হাত সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দেয় সিটের নিচ থেকে ৷ কিন্তু সে ডাক দিতে পারে না ৷ আস্তে আস্তে রক্তমাখা হাতটা ঢলে পরে ৷

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here