শ্রাবন_আধারে_তুমি_২,০৪,০৫

0
791

#শ্রাবন_আধারে_তুমি_২,০৪,০৫
#লেখিকা_আফরিন_ইসলাম
#পার্ট_৪

অন্ধকার রাত ৷ চারিদিকে নিস্তব্ধ পরিবেশ ৷ আবরার বারান্দায় দাড়িয়ে আছে ৷ এক হাতে তার ফোন ৷ অন্য হাতে জলন্ত সিগারেট ৷

আবরার মনটা কেন যেন বড্ড অশান্ত লাগছে ৷ একটাবার রাইয়ের কন্ঠটা শুনতে বড্ড মন চাইছে ৷আবরার আবারো রাইয়ের নাম্বারে কল করে ৷ কিন্তু বরাবরের মতো হতাশ হলো ৷ আকাশের দিকে তাকিয়ে আবরার মনে করলো সেই প্রথম দর্শনের কথা ৷ যেই দিন সে প্রথম রাইকে দেখে ছিল বৃষ্টিস্নাত সময়ে ৷

পাচঁ বছর আগের কথা ৷ চারিদিকে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে ৷একটু পর পর মেঘের বিকট গর্জনে কেপেঁ উঠছে শহর ৷ রাস্তা প্রায় জনমানবহীন ৷ আবরার তখন ভার্সিটি শেষ করে বেড়িয়েছে ৷ বলতে গেলে তখন সে একেবারে বেকার ৷ সারাদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়াই যেন তার একমাত্র কাজ ৷ আজকেও বের হয়ে ছিল আড্ডা দিতে ৷ কিন্তু মাঝ পথেই বৃষ্টি ৷ তার মধ্যে গাড়ীর তেল যে প্রায় শেষের দিকে ৷সেই কথা তার মনেই ছিল না ৷ তাই অঘটন ঘটেই গেল মাঝ রাস্তায় ৷আবরার প্রায় একঘন্টা গাড়ীতে অপেক্ষা করলো বৃষ্টি থামার জন্য ৷ কিন্তু বৃষ্টি তো থামলো না ৷ উল্টো বৃষ্টির বেগ বেড়ে গেল ৷ তাই বিরক্ত হয়ে এক প্রকার গাড়ী থেকে বেড়িয়েই গেল ৷বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে পড়তেই আবরার শরীর শিরশির করে উঠলো ৷ একটু দূরেই একটা চায়ের দোকান দেখতে পেল আবরার ৷ তাই অপেক্ষা না করে দৌড়ে গেল দোকানের দিকে ৷ দোকানের ভেতর যেতেই আবরার দেখতে পেল একটা মেয়ে বসে আছে একটু দূরে ৷ গায়ের ওরনাটা দিয়ে শরীর ঢেকে বসে আছে সে ৷ আবরার স্পষ্ট খেয়াল করলো মেয়েটা তার আগমনে কিছুটা ভয় পেয়েছে ৷আবরার মেয়েটার দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল ৷ তবে মেয়েটার মুখ দেখতে পেল না ৷ কারন মেয়েটা একটু বেশিই মাথা নিচু করে বসে আছে ৷ মেয়েটা হয়তো স্কুল কলেজে পড়ে ৷ পোশাকে ঠিক তেমনই মনে হলো আবরার ৷ মেয়েটা কাধেঁর ব্যাগটা বুকের সাথে চেপে ধরে বসে আছে এক কোনায় ৷ আবরার সেই দিকে আর পাত্তা দিল না ৷ প্রায় দশ মিনিট দাড়িয়ে থাকার পরেও বৃষ্টি থামছে না ৷ আবরার কেন যেন আবার পেছনে ঘুড়ে মেয়েটাকে দেখলো ৷ আবরার দেখলো মেয়েটা একটা ডায়রিতে কিছু লিখছে ৷ আবরার নিজের দৃষ্টি আবার সরিয়ে নিল ৷ আর বৃষ্টিতে ভেজা শহর দেখতে লাগলো ৷

হঠাৎ করেই একটা মিষ্টি কন্ঠ আবরার কানে ভেসে এলো ৷কন্ঠের মালিক আবরারকে বলল ,

“ভাইয়া শুনছেন ?”

আবরার এই কন্ঠটা উপেক্ষা করতে পারলো না ৷তাই পেছনে ঘুড়ে দাড়ালো ৷ মেয়েটা এবার মাথা উচু করেই তার দিকে তাকিয়ে আছে ৷ আবরার এবার অচেনা মেয়েটার মুখ স্পষ্ট দেখতে পেল ৷ কেন যেন তার বুকের মাঝে হঠাৎ ধক করে একটা শব্দ হলো ৷ আবরার কাজল লেপ্টে যাওয়া দুটো চোখ দেখে অবাক হয়ে গেল ৷ সে তাকিয়ে রইলো সেই চোখের দিকে ৷ চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা ৷ বাম চোখের পাশে একটা ছোট কাটা দাগ ৷ গায়ের রং ফর্সা নয় কিছুটা তামাটে ৷ দুই কানের পাশে ছোট দুইটা বেনী ৷ একটু বেশী ছোট বেনী দুটো ৷গাল দুটো একটু ভারী যা তাকে একটু বেশি সুন্দর করে দিয়েছে ৷আবরার এলোমেলো চিন্তার মাঝেই মেয়েটা আবারো ডাক দিল ,

“ভাইয়া আমাকে একটু সাহায্য করবেন ?”

আবরার ধ্যান ভাঙ্গলো ৷তারপর নিজেকে সামলে বলল ,

“কি সাহায্য করবো তোমার ?”

মেয়েটা একটু ভিতু চোখে আবরার দিকে তাকিয়ে বলল ,

“ভাইয়া আমার পায়ে অনেক ব্যাথা ৷ আমি উঠতে পারছি না ৷ যদি একটু সাহায্য করতেন ৷ তাহলে অনেক ভালো হতো ৷ ”

আবরার এই ভাইয়া ডাক শুনে কেন যেন বিরক্ত হলো ৷ কিন্তু মুখে স্বাভাবিক ভঙ্গিমা বজায় রেখে বলল ,

“কি হয়েছে তোমার পায়ে ?”

মেয়েটা মাথা নিচু করে বলল ,

“পা পিছলে রাস্তায় পরে গিয়েছি ৷ আর পায়ে ব্যাথা পেয়েছি ৷একটু সাহায্য করবেন আমাকে ভাইয়া !”

আবরার একটু চুপ থাকলো ৷ তারপর মুচকি হেসে বলল ,

“তুমি এখানে পাচঁ মিনিট অপেক্ষা করো ৷ আমি এখনই আসছি ৷ সামনে যেয়ে দেখি একটা রিকশা পাই কি না ৷ যা বৃষ্টি পড়ছে তাতে এই পা নিয়ে বাড়ী যেতে সুবিধা হবে তোমার ৷”

আবরার মেয়েটার উত্তরের অপেক্ষা করলো না ৷ অচেনা মেয়েটার সাহায্যের জন্য বৃষ্টির মধ্যেই বেড়িয়ে গেল ৷ আর মেয়েটা অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো আবরার দিকে ৷

প্রায় দশ মিনিট পর আবরার একটা রিকশা নিয়ে ফিরে এলো ৷ এদিকে বৃষ্টিও থেমে গেছে ৷আবরার দোকানের ভেতর তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই ৷ বেশ হতাশ হয় সে ৷ মেয়েটা নিজেই সাহায্য চাইলো ৷ আবার কিছু না বলেই চলে গেল ৷ বেশ রাগ হলো আবরার ৷ তাই রাগ সামলাতে না পেরে বলেই ফেললো অকৃতজ্ঞ ৷

আবরার বেশ রাগ নিয়ে দোকান থেকে বেড়িয়ে যাবে ৷ হঠাৎ চোখ গেল কাঠের টুলের উপর ৷ সেখানে একটা ডায়েরি পরে আছে ৷ একটু ভালো করে তাকাতেই চিন্তে পারলো আবরার ৷ তারপর আনমনেই বলল

“এটা তাহলে অকৃতজ্ঞ মেয়েটাই ফেলে রেখে গেছে ৷ যেখানে নিজের খেয়াল রাখতে পারে না ৷সেখানে ডায়েরি তো কিছুই না ৷ ”

আবরার কিছু না ভেবে নিয়ে নিল ৷ তারপর রিকশায় চেঁপে বসে নিজ গন্তব্যে রওনা দিল ৷

সেই দিন আর আড্ডা দেওয়া হয় নি আবরার ৷ ম্যানেজারকে ফোন করে গাড়ী নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে ৷আর তারপর বাসায় চলে আসে ৷ বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে আসতেই মনে পরে ডায়েরিটার কথা ৷ টেবিলের পাশে রাখা ডায়েরিটা হাতে তুলে নেয় আবরার ৷ ডায়েরিটা খুলতেই চমকে ওঠে আবরার ৷ প্রথম পৃষ্ঠায় অকৃতজ্ঞ মেয়েটার একটা ছবি লাগানো ৷ আবরার বেশ রাগ হয় মেয়েটাকে দেখে ৷ কিন্তু তবুও সে তাকিয়ে রইলো এই শান্ত মেয়েটার দিকে ৷ দুনিয়ার সব পবিত্রতা যেন এই তামাটে রংয়ের চশমা ওয়ালীর মুখে রয়েছে ৷ আবরার আনমনেই হেসে ফেলে ৷তারপর ডায়েরিটা পড়তে শুরু করলো একটু একটু করে ৷ আর যতই সে পড়তে লাগলো ৷ তার থেকেও বেশি অবাক হতে লাগলো ৷ একটা মানুষ বোকা চেহারার আড়ালে যে কতটা পাজী ৷ তা সে জানতেই পারতো না ৷ যদি না সে অকৃতজ্ঞ মেয়েটার ডায়রি পড়তো ৷

চলবে…..

#শ্রাবন_আধারে,তুমি
#লেখিকা_আফরিন_ইসলাম
#পার্ট_৫

আবরার পুরো দুই দিনে ডায়েরিটা শেষ করলো ৷ তবে শেষে পৃষ্ঠার লেখা গুলো পড়ে আবরার বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে ৷ মেয়েটা যে পাজী তা সে ডায়েরি পড়েই বুঝে গেছে ৷ তাই বলে এতদূর ৷ তাকে বাদঁর বলেছে এই মেয়ে ৷ কখনো দেখা হোক ৷ তখন বুঝিয়ে দেব ৷

তারপর বেশ কিছু দিন কেটে গেছে ৷ কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে আবরার একটা বদ অভ্যাস হয়ে গেছে ৷ সে রোজ ডায়েরির প্রথম পৃষ্ঠায় আঠা দিয়ে লাগানো ছবিটা দেখে ৷ তামাটে বর্নের এই মেয়েটার মাঝে কি আছে সে জানে না ৷ শুধু জানে মেয়েটাকে দেখতে তার ভালো লাগে ৷

হঠাৎ একদিন আবরার অচেনা মেয়েটার ছবি দেখায় মগ্ন ছিল ৷ ঠিক তখনই আবরার ছোট ভাই সামির ঘরে আসে ৷মেজো ভাইকে এক মনে ডায়রির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে তার সন্দেহ হয় ৷ তাই কিছুটা পা টিপে ভাইয়ের পেছনে যেয়ে দাড়ায় ৷ ভাইয়ের ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা মুচকি হাসিটাও তার চোখ পরে ৷ বদ রাগী ভাইয়ের পেছনে গিয়ে দাড়াতেই সামির চমকে যায় ৷ একি দেখছে সে ! তার খিটখিটে মেজাজের ভাই একটা মেয়ের ছবি দেখে হাসঁছে ৷ শুধু তাই নয় আশেপাশে যে কেউ আছে ৷সেই দিকেও খেয়াল নেই তার ৷ সামিরের মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি এলো ৷ আবরার তাকে পড়ালেখার জন্য অনেক মেরেছে ৷ তাই আজ একটু শোধ নেবে সে ৷ সামির অপেক্ষা করলো না ৷ আবরার হাত থেকে হঠাৎ করেই ডায়েরিটা কেড়ে নিল ৷ আর আবরার হঠাৎ আক্রমনে চমকে উঠলো ৷ কিন্তু ততক্ষনে সামির পালিয়েছে ডায়েরি নিয়ে ৷ আবরার চেয়ার ছেড়ে দৌড় দিল সামিরের পিছনে ৷ আবরার রাগ ভরা কন্ঠে পেছন থেকে বলল ,

“সামির ডায়েরি দিয়ে দে ৷ নইলে কিন্তু অনেক খারাপ হবে ৷ ইচ্ছে করে মার খাস না বলে দিলাম ৷”

সামির তবুও থামলো না ৷ দৌড়ে চলে গেল রান্না ঘরে ৷ রান্না ঘরে যেয়ে মায়ের শাড়ীর আচঁলের নিচে ঢুকে পড়লো ৷ আনিলা বেগম ছেলের কান্ড দেখে বললেন ,

“এই তোর কি হয়েছে ?এভাবে রান্না ঘরে এসেছিস কেন ?বুড়ো বয়সে আমাকে না জ্বালালে কি তোদের ভালো লাগে না !”

সামির ঘনঘন শ্বাস নিয়ে বলল,

“মা আমাকে বাচাঁও ৷ নইলে তোমার মেজো ছেলে আমায় মেরে ফেলবে ৷”

আবরার এতক্ষনে চলে এসেছে ৷ আবরার সামিরের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল ,

“ডায়েরিটা তাড়াতাড়ি দে সামির ৷ ”

আনিলা বেগম ছোট ছেলেকে বলল,

“তুমি কেন আবরার ডায়েরি নিয়ে এসেছো সামির ৷ আবরারকে দিয়ে দাও ডায়েরি ৷”

“এটা যেই সেই ডায়েরি নয় মা ৷ তোমার মেজো ছেলে……

বেচারা সামির আর কিছু বলতে পারলো না ৷ তার আগেই আবরার এসে ওর মুখ চেঁপে ধরলো ৷ সামির হাজার চেষ্টা করেও আবরার সাথে পারলো না ৷ আর আনিলা বেগম ছেলেদের কান্ড দেখে হাসঁতে লাগলেন ৷

আবরার ছোট ভাইকে নিজের ঘরে নিয়ে আসলো ৷ তারপর ছোট করে একটা থ্রেট দিয়ে দিল ৷ যা শুনে সামির অবাকে চরম পর্যায়ে পৌছে গেছে ৷ কেননা সে নিজেও ভাবতে পারেনি আবরার তার ব্যাপারে এত কিছু জানে ৷তাই সামির চুপচাপ ভাইয়ের ঘর থেকে বের হয়ে যায় ৷ কারন সে চায় না রিনির ব্যাপারে তার বাবা জানুক ৷ কিন্তু আবরার রিনির ব্যাপারে কিভাবে জানে ! তাদের সম্পর্কের কথাও কি করে জানে ! সে আর আবরার পিছনে লাগবে না ৷ এক প্রকার পালিয়ে গেল সামির আবরার ঘর থেকে ৷ আর আবরার বাঁকা হাসে সেই দিকে তাকিয়ে ৷তারপর ফোন বের করে কল দেয় প্রান প্রিয় বন্ধু সাদিকে ৷ সাদির সাথে তার ছোট বেলা থেকে বন্ধুত্ব ৷ আবরার নিজের সকল কথা সাদির সাথে বলে ৷

রোদের প্রচন্ড তাপে চারিদিকে খাঁ খাঁ করছে ৷ আবরার আর তার প্রান প্রিয় বন্ধু বসে আছে একটা চায়ের দোকানে ৷ হ্যা এটাই সেই চায়ের দোকান ৷ যেখানে আবরার সেই অকৃতজ্ঞ মেয়েটাকে দেখে ছিল ৷ আবরার পাশেই বসে আছে সাদি ৷আবরার কেন এই রোদের মধ্যে এখানে বসে আছে ৷সেটাই সাদি বুঝতে পারছে না ৷ আবরার একের পর এক চা আর সিগারেট খেয়েই যাচ্ছে ৷ আর রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে ৷ এক পর্যায় বিরক্ত হয়ে সাদি বলল,

“আমাকে ডেকে এনে এখানে কেন বসিয়ে রেখেছিস ভাই ৷ আর কতক্ষন বসে থাকবো ৷ ”

আবরার পথের দিকে তাকিয়েই বলল ,

“যতক্ষন না সে আসছে ততক্ষন এখানেই থাকবি ৷”

“মানে কে আসবে ?”

আবরার সাদির দিকে তাকালো ৷তারপর কিছু একটা ভেবে বলল ,

চল আজ তোকে সব বলবো ৷ আবরার হাতে থাকা সিগারেট ফেলে দিল ৷ সাদি কিছুই বুঝলো না ৷ আবরার সাদিকে নিয়ে চলে গেল সেখান থেকে ৷গাড়ীতে ড্রাইভ করতে করতে আবরার সাদিকে সব খুলে বললো ৷ সব শুনে সাদি বলল ,

“এভাবে মেয়েটাকে খুজে পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম দোস্ত ৷ একটা কাজ করতে পারিস ৷ মেয়েটার ছবি পত্রিকায় ছাপিয়ে দে ৷ আর উপরে লিখে দিতে বলবি সন্ধান চাই ৷”

আবরার বিরক্ত হয়ে বলল,
“জীবনে তো একটা ভালো বুদ্ধি তোর মাথা বের হয় নি ৷ আর হবে বলে মনে হয় না ৷মাথা মনে হয় গেছে তোর ৷ এই কাজ করলে মেয়ের পরিবারের লোকজন কি ভাববে আমাকে ৷ তবে তাকে খুজে বের করতেই হবে এটাই শুধু জানি ৷”

সেই দিনের পর এক বছর পার হয়ে গেছে ৷ কিন্তু আবরার সেই তামাটে বর্নের অকৃতজ্ঞ চশমা ওয়ালীকে খুজে পায় নি ৷ সময় পেলেই ছুটে গেছে ঐ চায়ের দোকানে ৷ বৃষ্টির দিনে গাড়ী নিয়ে ছুটে গেছে ৷ যদি একবার তার দেখা পাওয়া যায় ৷ কিন্তু প্রতিবার সে হতাশ হয়েছে ৷

আবরার গাড়ী নিয়ে বাইরে দাড়িয়ে আছে ৷ আজকে তার বড় ভাইয়ের জন্য নবম বারের মতো মেয়ে দেখতে যাওয়া হবে ৷এত এত মেয়ে দেখেও তার ভাইয়ের বিয়েতে মত হয় নি ৷তাই তারা আজকেও পাত্রী দেখতে যাচ্ছে ৷ আর এই বিয়ের ঘটক সাদি ৷ সাদি আবরার বড় ভাইয়ের জন্য মেয়ে পছন্দ করেছে ৷ তারপর নিজের মাকে দিয়ে আবরার মায়ের কাছে খবর পাঠিয়েছে ৷ তারপর মেয়ের বাড়ীতে খবর পাঠানো হয়েছে ৷ মেয়ে নাকি সাদির এক বন্ধুর বোন ৷ আর আজ তাকে সবাই মিলে দেখতে যাবে ৷এক এক করে সবাই চলে এলো ৷ মেয়ের বাড়ীতে আবরার পরিবারের লোকজন আর সাদি যাবে ৷ আবরার ড্রাইভ করছে ৷ সবাই হাসাহাসি করছে ৷ কিন্তু আবরার মুখে হাসি নেই ৷ আগের থেকে একটু বেশি নিশ্চুপ হয়ে গেছে সে ৷ আবরারকে নিশ্চুপ দেখে সাদি আস্তে করে বলল ,

“ঐ ব্যাটা এমন মুখ করে আছিস কেন ? বড় ভাইয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ৷ এরপর কিন্তু তোর সানাই বাজবে ৷ তাই চিল কর মামা ৷ আর ঐ বৃষ্টিস্নাত কন্যাকে ভুলে যা ৷ সে তোর কপালে নেই মামু ৷”

আবরার সাদির দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল ,

“তুই তোর বকবক করা মুখটা বন্ধ কর ৷ আর শোন ঐ মেয়েকে আবরার খান জয় চায় না বুঝেছিস ৷ কিন্তু সে যেই কাজটা করেছে ৷এর জন্য তাকে শাস্তি দেব আমি৷ শুধু একবার সামনে পাই তাকে ৷”

আবরার কথা শুনে সাদি হাসে ৷ তারপর আবরার কাঁধে হাত রেখে বলে,

“সময় সব কিছু বলে দেবে বন্ধু ৷চিন্তা করিস না ৷ আচ্ছা ধর আজকে তুই ঐ মেয়েকে পেয়ে গেলি ৷ তাহলে কি করবি ?”

“যেটা পাবো না ৷ সেটা নিয়ে কথা না বলাই ভালো ৷ তাই বাদ দে ৷ এক বছর খুঁজেও তাকে পাই নি ৷ আর আজ তাকে পাওয়ার আশা রাখি না ৷”

সাদি ছোট একটা শ্বাস নেয় ৷ তারপর চুপ করে বসে থাকে আবরার পাশে ৷

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here