শ্রাবন_আধারে_তুমি_২,০৬,০৭

0
780

#শ্রাবন_আধারে_তুমি_২,০৬,০৭
#লেখিকা_আফরিন_ইসলাম
#পার্ট_৬

আবরার সোফায় বসে আছে ৷ এক জায়গায় বসে থাকতে বেশ বিরক্ত লাগছে তার ৷ কিন্তু তবুও হাসি মুখে বসে আছে ৷ মেয়ে তাদের পছন্দ হয়েছে ৷তার মা মেয়েকে গলার চেইন পড়িয়ে দিয়েছে ৷ এখন সবাই গল্প করছে বসে ৷ হঠাৎ করেই চুড়ির রিনিঝিনি শব্দে আবরার ধ্যান ভঙ্গ হলো ৷ মেয়েদের চুড়ি আর নুপূরের শব্দ আবরার একদম পছন্দ করে না ৷ তাই একটু বিরক্ত হয়েই পাশে তাকালো ৷ কিন্তু এক মুহূর্তের জন্য আবরার থমকে গেল ৷ একটা বহু প্রতিক্ষার মানুষ যখন চোখের সামনে থাকে ৷ তখন প্রত্যেকটা মানুষই থমকে যাবে ৷ তার পাশেই দাড়িয়ে আছে সেই তামাটে বর্নে অকৃতজ্ঞ মেয়েটি ৷ যার জন্য রোদ , বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছুটে গিয়েছে ৷ যাকে এক বছর খুজে চলেছে অচেনা রাস্তার মোড়ে ৷ আবরার জানে না কেন সে খুজে ছিল এই অতি সাধারন মানুষটাকে ৷ আবরার জানে কেন হাজারো সুন্দরের মাঝে এই তাম্র কন্যাকে সে খুজেছে ৷ শুধু এতটুকুই সে জানতো মেয়েটাকে তার দরকার ৷ সেই অকৃতজ্ঞ মেয়েটাকে তার দরকার ৷ আর সেই মেয়েটা মিষ্টি হাতে দাড়িয়ে আছে তারই সামনে ৷ এ যেন অবিশ্বাস্য ঘটনা ৷আবরার মাথা ঘুড়িয়ে সাদির দিকে তাকালো ৷ সাদি আবরার দিকে তাকিয়ে হাসলো ৷আবরার এতক্ষনে যা বোঝার বুঝে গেছে ৷মেয়েটা আবরার সামনে মিষ্টির বাটি নিয়ে আসতেই আবরার আবার মাথা তুলে তাকালো ৷ আর মেয়েটা একটু ভ্রু কুঁচকে তাকালো আবরার দিকে ৷ তারপর এক এক করে সবাইকে মিষ্টি দিতে লাগলো ৷

রাত ঘড়িতে এগারোটা ৷ আবরার বারান্দায় দাড়িয়ে ধুমপান করছে ৷ তার মনটা আজ ভালো লাগছে ৷ অচেনা মেয়েটা আগের থেকে অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে ৷ তার চুল গুলো কয়েক ইঞ্চি লম্বা হয়েছে ৷ আগের থেকে যেন একটু বড় হয়েছে ৷ তবে চোখের মোটা ফ্রেমের চশমাটা তাকে যেন আরেকটু বড় বানিয়ে দিয়েছে ৷ আবরার মেয়েটার কথা ভেবে হাসলো ৷তারপর হাতের জলন্ত সিগারেট ফেলে দিল ৷ এবার মেয়েটাকে শিক্ষা দিতে পারবে সে ৷ ভাবতেই আবরার খুশি হয়ে গেল ৷ তারপর মুচঁকি হেসে ঘরে ঢুকে গেল ৷

পনেরো দিন পার হয়ে গেছে ৷ আজ ধুমধাম করে আবরার বড় ভাই বিয়ে করেছে ৷নতুন বউয়ের সাথে তার ছোট বোন এসেছে ৷মেয়েটা সোফার এক পাশে চুপ করে বসে আছে ৷ তার বড় বোনকে লোক জন দেখতে আসছে ৷ তার সাথেও টুকটাক কথা বলছে ৷ আর সে জবাব দিয়ে চলেছে ৷মেয়েটা বোনের দিকে তাকিয়ে আছে ৷ হঠাৎ করেই মনে হলো পাশে কেউ বসেছে ৷ তাই সে পাশে তাকালো ৷ পাশে তাকাতেই বড় বোনের দেবরের সাথে চোখে চোখ পরে গেল মেয়েটার ৷ লোকটা কেমন করে যেন তার দিকে তাকায় ৷ লোকটাকে তার বড্ড চেনা লাগে ৷ তবুও মনে করতে পারে না কোথায় দেখেছে ৷

আবরার মেয়েটার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে ,

“এই মেয়ে আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন ?”

মেয়েটার একটু রাগ হয় ৷ এই লোকটাই তো তার দিকে তাকিয়ে থাকে ৷ আর এখন বলছে সে নাকি তাকিয়ে থাকে ৷ বড় বোনের দেবর বলে কথা ৷ তাই জবাব দেয় না মেয়েটা ৷ অন্য দিকে তাকায় মেয়েটা ৷তখনই আবরার তাকে বলে ,

“তোমার নাম কি ?”

মেয়েটা আবররা দিকে না তাকিয়ে জবাব দেয় ,

“আমার নাম রাইমা ইসলাম রাই ৷ আপনি রাই বলে ডাকতে পারেন ৷”

আবরার এবার একটু দুষ্টু কন্ঠে বলে ওঠে ,

“তা রাই আপনি কি শুধু বিয়ে বাড়ীতে মজাই করেন ৷ নাকি তার ফাঁকে সুন্দর ছেলেদের দিকেও নজর দেন ৷”

রাই চমকে ওঠে ৷ ঘাড় ঘুড়িয়ে পাশে তাকায় ৷ আবরার ঠোঁটের কোনে শয়তানি হাসি ৷

আবরার এবার আস্তে করে বলে,

“আমি কিন্তু মানুষের মন পড়তে পারি ৷ তাই আমার সামনে এত ভালো সাজার একদম দরকার নেই ৷ ”

রাই আবরার দিকে তাকিয়ে নিজের চশমা ঠিক করে ৷ তারপর রাই কিছু বলবে তার আগেই আবরার সেখান থেকে উঠে চলে যায় ৷কিন্তু যেতে যেতে বলে ,

“আপনার থেকে ঐ চশমাটা বড় ৷ ঐ চশমাটা সামলে রাখবেন চার চোখ ৷”

রাই কিছু বলতে পারে না ৷ শুধু তাকিয়ে থাকে আবরার দিকে ৷

রাই বোনের সাথে তার শ্বশুড় বাড়ীতে এসেছে আজ দুই দিন ৷ বউ ভাত গতকাল শেষ হয়েছে ৷ আজকে তারা নিজেদের বাসায় চলে যাবে ৷ রাই যেন এই বাড়ী থেকে গেলেই বাচেঁ ৷ আবরার কে এখন এক প্রকার ভয় পায় সে ৷ রাই যে মাঝে মাঝে মিষ্টি জাতীয় খাবার চুরি করে খায় ৷ এটা কেউ জানে না ৷ কিন্তু গতকাল আবরার মা যখন রাইয়ের কাছে এক বাটি পায়েশ নিয়ে আসে ৷ তখন রাই ভদ্রতা বজায় রাখতে খেতে চায় না ৷ কিন্তু হঠাৎ করেই আবরার সেখানে এসে বলে ওঠে ,

“লোকের সামনে খাই না ৷ কিন্তু সুযোগ পেলে ছাড় দেই না ৷”

রাই আবরার কথায় আবারো চমকে ওঠে ৷ রাই তখন বিশ্বাস করেই নেয় ৷ যে আবরার সকালের মনের কথা বুঝতে পারে ৷ তাই কাল থেকেই আবরারকে সে এড়িয়ে চলে ৷অতঃপর রাই চলে যায় নিজের বাসায় ৷ তবে যাওয়ার আগে আশেপাশে আবরারকে খোঁজে ৷ কিন্তু কোথাও না দেখে নিশ্চিন্তে ফিরে যায় ৷কিন্তু আবরার যে নিজের ঘরের জানালা দিয়ে তার সব ভন্ডামী দেখেছে ৷ এটা রাই বুঝতেও পারে না ৷

এভাবেই দিন যাচ্ছে রাইয়ের ৷ পড়ালেখায় বরাবরের মতো লাড্ডু সে ৷ লেখাপড়া করতে তার ভালো লাগে না ৷ তবে গল্প পড়তে ভিশন ভালো লাগে তার ৷ তাই সময় পেলেই গল্পের বই নিয়ে বসে যায় ৷

দেখতে দেখতে এক বছর পেরিয়ে যায় ৷ কিছু দিন আগেই রাইয়ের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে ৷ পরীক্ষা ভালো হয় নি ৷ তবে পাশ করবে সে ৷ আর পাশ করাই তার মূল লক্ষ্য ৷ এত ভালো রেজাল্ট করে কিছু হবে না ৷ তাই সে রিলেক্সে থাকে সব সময় ৷বাবা আর বড় ভাবি যেখানে আছে ৷ সেখানে তার কোনো চিন্তা নেই ৷ ভাইয়েরা তার কিছুই করতে পারবে না ৷

অন্য দিকে রাইয়ের বড় বোন প্রেগনেন্ট ৷তার আটমাস চলছে ৷ ডাক্তার বলেছে ছেলে হবে ৷রাইয়ের বড় ভাইয়ের ঘরেও ছেলে হয়েছে কয়েক মাস আগেই ৷ আর এখন বড় বোনের বাবু হবে ৷ সবার আনন্দের যেন শেষ নেই ৷আজ তার বড় বোনের শ্বশুড় বাড়ীর লোকজন আসবে ৷রাইয়ের বড় দুলাভাই আরহাম খান বড্ড ভালো ৷ রাই তার মা আর ভাবির সাথে টুকটাক সাহায্য করে ৷ তারপর চলে যায় নিজের ঘরে ৷ গোসল করার পরেও যেন শরীর থেকে গরমের রেশ কাটে না তার ৷ তার মধ্যে এই ছোট চুল গুলো যেন আরেক ঝামেলা ৷ মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে টাক হয়ে যেতে ৷ তবে যদি একটু শান্তি পেত সে ৷ রাই ভেজা চুলে একটা ক্লিপ দিয়ে আটকে নেয় ৷ তারপর ড্রয়িং রুমে আসতেই বুঝে যায় মেহমান এসে গেছে ৷রাই সবাইকে সালাম দেয় ৷ হাসি মুখে কথাও বলে ৷ কিন্তু ভুলেও আবরার দিকে তাকায় না ৷ কিন্তু লোকটা যে তার দিকেই তাকিয়ে আছে এটা রাই বুঝতে পারছে ৷ রাইয়ের গলা শুকিয়ে আসে ৷ তাই কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে আস্তে করে উঠে টেবিলের কাছে আসে ৷ তারপর তাড়াতাড়ি করে এক গ্লাস পানি খেয়ে নেয় ৷ রাই পানি পান করে একটা স্বস্থির নিঃশ্বাস নেবে ৷ ঠিক তখনই আস্তে করে কেউ একজন বলে ওঠে ৷

“বাহ্ আজকাল আমার ভয়ে তাহলে গলাও শুকিয়ে যায় ৷ ভালো উন্নতি হচ্ছে দিনকে দিন ৷ ”

রাই অসহায়ের মতো পাশে তাকায় আবরার দিকে ৷ এই লোকটা তার সব কিছু কিভাবে বুঝে যায় ৷ রাইয়ের রাগ হয় প্রচুর ৷আবরার রাইয়ের দিকে তাকিয়ে হাসে ৷ তারপর বলে ,

“আমিও কিন্তু পানি খেতে এসেছি ৷একটু পানি ঢেলে দেবেন ৷”

এই কথাটা আবরার স্বাভাবিক ভাবেই বলে ৷ যেন কেউ কিছু বুঝতে না পারে ৷রাই পানি ঢেলে দিতেই আবরার পানি খেতে শুরু করে ৷ রাই চলে যায় সেখান থেকে ৷ আবরার ঠোঁটের কোনের বাঁকা হাসিটা রাই দেখতে পায় না ৷দেখবে কি করে ৷ আবরার তো নিজেই তার কাছে অচেনা ৷

চলবে

#শ্রাবন_আধারে_তুমি_২
#লেখিকা_আফরিন_ইসলাম
#পার্ট_৭

রাইয়ের পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয়েছে ৷ খুব একটা খারাপ রেজাল্ট করেনি ৷ তার মা তনিমা বেগম মেয়েকে একটু বকা দিয়েছে ৷ কিন্তু তার বাবা এতেই খুশি ৷রাইকে প্রাইভেট ভার্সিটিতে তার বাবা ভর্তি করিয়েছে ৷ কারন পাবলিক ভার্সিটি রাইয়ের বাসা থেকে অনেক দূরে ৷ আর হোস্টেলে সিনিয়রদের দ্বারা অনেক সমস্যায় পড়তে হয় জুনিয়রদের ৷ যার কারনে রাইয়ের বাবা রাইকে প্রাইভেট ভার্সিটিতেই ভর্তি করিয়েছে ৷ আদরের মেয়েকে নিয়ে কোনো প্রকার ঝামেলা করতে চান না তিনি ৷তাই রাইকে ভর্তি পরীক্ষার মতো জীবন মরন লড়াই লড়তে হয় নি ৷

রাইয়ের বড় বোনের ছেলে হয়েছে একমাস আগেই ৷ রাইয়ের বড় দুলাভাই আরহাম খান সেইদিন বউ বাচ্চার জন্য যেভাবে অস্থির হয়ে ছিলেন ৷ তা দেখে অনেকেই অবাক হয়ে গিয়ে ছিল ৷ রাইয়ের বড় বোন এখন শ্বশুড় বাড়ীতেই আছে ৷ একজন বাবাই শুধু জানে , বাবা হওয়ার আগের মুহূর্তে তার কলিজা কেমন করে ৷ সৃষ্টিকর্তা সহায় হলে , সংসারে খুশির জোয়ার বয়ে যায় ৷ নইলে সব শেষ ৷

রাই নিজের ঘরে বসে আছে ৷ তার হাতে একটা রুপার নুপূর ৷ আরেকটা হারিয়ে গেছে প্রায় দুই বছর আগে ৷ রাই হাজার খুজেও সেটা পায় নি ৷ বাবা অনেক আদর করে জন্মদিনে উপহার দিয়ে ছিল ৷ আর সেটাও রাই হারিয়ে ফেলেছে ৷রাই ঐ একটা নুপূর পায়ে পরে নিল ৷ তারপর তৈরি হয়ে নিল ৷ কারন আজ রাইয়ের ভার্সিটির প্রথম দিন ৷ তারপর নাস্তা করে বেড়িয়ে গেল বাসা থেকে ৷ যাওয়ার আগে মা বাবাকে সালাম করে গেল ৷ রাইয়ের বাবা মেয়ের মাথায় চুমু দিয়ে দোয়া করলেন৷রাই রিকশা করে রওনা দিল ভার্সিটির দিকে ৷

অন্যদিকে আবরার আয়নার সামনে দাড়িয়ে শিষ বাজিয়ে যাচ্ছে ৷ অকৃতজ্ঞ মেয়েটাকে শায়েস্তা করতে পারবে এবার ৷ তার সাথে অভিনয় করার শাস্তি এবার দেবে সে ৷ সাদির কথা মতো ভার্সিটির চাকরিটা নিয়েছে ৷ এবার বুঝবে ঐ মেয়েটা আবরার কি ? আবরার শার্ট ঠিক করে নিল ৷ তারপর ঘড়ি পরে বেড়িয়ে গেল বাসা থেকে ৷

অন্যদিকে রাস্তায় প্রচন্ড ট্রাফিক জ্যামে রাই আটকে গেল ৷ এদিকে প্রথম দিনের ক্লাস প্রায় শুরুর দিকে ৷ প্রথম দিনেই যদি দেরি হয় ৷ তাহলে ব্যাপারটা ভালো দেখাবে না ৷ এটা ভেবেই রাইয়ের মন খারাপ হয়ে গেল ৷

ভার্সিটির গেট থেকে দৌড়ে ভেতরে ঢুকলো রাই ৷ তারপর দারোয়ানের সাহায্য নিয়ে নিজের ক্লাস রুম খুজতে লাগলো ৷ অবশেষে পেয়েও গেল ৷ কিন্তু সমস্যা ঘটে গেল এক জায়গায় ৷ ক্লাসে স্যার ঢুকে পড়েছে ৷ রাই মনে কিছুটা সাহস নিয়ে দরজার সামনে মাথা নিচু করে দাড়ালো ৷ তারপর আস্তে করে বলল ,

“স্যার ভেতরে আসবো ?”

রাইকে অবাক করে দিয়ে একটা পরিচিত কন্ঠ বলে উঠলো ,

“তুমি এখানে কি করছো ?”

রাই মাথা তুলে তাকাতেই চমকে গেল ৷ যেখানে বাঘের ভয় ,সেখানেই সন্ধ্যা হয় ৷যেই আবরারের জন্য সে তার বোনের বাড়ীতে সহজে যায় না ৷ সেই আবরার তার সামনে দাড়িয়ে আছে ৷ এটাও কি হতে পারে ৷রাই আবরার দিকে তাকিয়ে বলল ,

“আপনি এখানে কি করছেন ?”

“স্যার কে জিজ্ঞাসা করছো সে কি করছে ৷ বেশ ভালো উন্নতি হয়েছে তোমার ৷ তুমি কি এই ভার্সিটিতেই ভর্তি হয়েছো ?”

রাই মাথা নেড়ে হ্যা বোঝালো ৷ যার মানে সে এখানেই ভর্তি হয়েছে ৷

আবরার একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে রাইকে ভেতরে আসতে বললো ৷ সে এমন অভিনয় করতে লাগলো যেন সে কিছুই জানে না ৷

তারপর থেকে এভাবেই রোজ আবরার কাছে রাই বকা খেতে লাগলো ৷ যার মূল কারন ছিল ঠিক মতো পড়ালেখা না করা ৷ আর দেরি করে ক্লাসে যাওয়া ৷ সাথে আবরার দেখানো ভয় তো আছেই ৷ আর এভাবেই দিন পেরিয়ে যেতে লাগলো ৷

বর্ষাকাল চলছে ৷ আজকের আকাশ বেশ মেঘলা ৷ রাই নিজের সাথে ছাতা নিয়ে আসে নি ৷ আজকে একটু দেরি করে ছুটি হয়েছে ৷ রাই রাস্তার পাশে দাড়িয়ে আছে ৷ বাসায় যাওয়ার মতো কোনো কিছুই পাচ্ছে না ৷ তাই অসহায় মুখ করে দাড়িয়ে আছে ৷ তখনই আবরার তার সামনে বাইক নিয়ে আসে ৷ রাই এক পলক তাকিয়ে আবার অন্য দিকে তাকায় ৷ আবরার রাইকে উদ্দেশ্য করে বলে ,

“বৃষ্টি হবে মনে হয় ৷ চাইলে আমার সাথে যেতে পারো ৷আজ মনে হয় না কিছু পাবে যাওয়ার জন্য ৷”

রাই আকাশের দিকে তাকালো আবার ৷ পুরো আকাশ কালো হয়ে গেছে ৷রাই আবরার পেছনে বসে পড়লো ৷ আবরার মুচকি হাসঁলো ৷ রাই আবরারকে ধরলো না ৷ কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখলো ৷ কিছু দূর যেতেই ঝুম বৃষ্টি নেমে গেল ৷ বিন্দু বিন্দু বৃষ্টির ফোঁটায় পুরো শহর ভিজে গেল ৷ রাইয়ের কেন যেন একটু বেশি ভয় লাগছিল বসতে ৷ তাই উপায় না পেয়ে আবরার ঘাড়ে হাত রাখলো ৷ আবরার আবার মুচকি হাসলো ৷ রাই স্পষ্ট সেই হাসি দেখলো আয়নার মধ্যে ৷ আর আবরার দেখলো তার অকৃতজ্ঞ মেয়েটার চোখ ৷ কেন যেন চাইলেও এই চোখের অধিকারীকে কিছু বলতে পারে না সে ৷ এক তীব্র মায়া কাজ করে ৷ আবরার নিজের বাইক থামালো ৷তবে সেটা রাইয়ের বাড়ীর সামনে নয় ৷ বাইকটা থেমে গেল সেই চায়ের দোকানের পাশে ৷ যেখানে প্রথম সে দেখে ছিল রাই নামের এই মেয়েটাকে ৷ আবরার রাইকে নামতে বললো ৷ রাই নেমে দাড়ালো ৷ বৃষ্টিতে ভিজে দুজনার নাজেহাল অবস্থা ৷আবরার রাইয়ের দিকে তাকালো না ৷সে চলে গেল দোকানের ভেতর ৷ আজকে দোকান খোলা ৷ তবে দোকানের ভেতর কেউ নেই ৷ আবরার একটা সিগারেট আর এক কাপ চা দিতে বললো ৷ দোকানদার একটা সিগারেট আর এক কাপ চা আবরারকে দিল ৷ আবরার রাইয়ের দিকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিল ৷

আবরার সিগারেট শেষ করলো ৷ আর রাই এখনো চায়ের কাপে একটু সময় পর পর মুখ দিচ্ছে ৷হয়তো প্রচন্ড শীতে তার ভালোই লাগছে এই চায়ের স্বাধ ৷ আবরার নিজের সাথে করে নিয়ে আসা ব্যাগের চেইন খুললো ৷ তারপর সেটার ভেতর থেকে একটা পলিথিন পেঁচানো বইয়ের মতো কিছু একটা বের করলো ৷অতঃপর সেটা এগিয়ে দিল রাইয়ের দিকে ৷ রাই সেটা ধরতেই আবরার বলল ,

“বাড়ীতে যেয়ে খুলবে এটা ৷ এখন ব্যাগে রেখে দাও ৷”

রাই আবরার দিকে তাকিয়ে বলল,

“কি আছে এটার ভেতর ?”

“কেউ একজন এমনই এক বৃষ্টি মূখর দিনে , ফেলে রেখে চলে গিয়ে ছিল এটা ৷ আজ তার জিনিস তাকেই ফেরত দিলাম ৷”

আবরার কথাটা বলেই বাইকের কাছে চলে গেল ৷ রাই ব্যাগের ভেতর পলিথিন মোড়ানো জিনিস টা রেখে আবরার পেছনে যেয়ে বসলো ৷ তারপর দুজনে এগিয়ে গেল বৃষ্টি সিক্ত রাস্তা দিয়ে ৷

রাই বাসায় এসে আগে
ফ্রেশ হয়ে নিল ৷ আবরার যে তাকে পৌছে দিয়ে গেছে ৷ এটা কাউকে বলে নি সে ৷ রাই ফ্রেশ হয়েই আবরার দেওয়া জিনিসটা বের করলো ৷ তারপর পলিথিনের ভেতর থেকে সেটা বের করতেই রাই খুশি হয়ে গেল ৷ আরে এটা তো তার ডায়েরি ৷ এখনো কত সুন্দর আছে ৷ রাই ডায়েরির ভেতরে যেয়ে নিজের ছবিটা খুজতে লাগলো ৷ কিন্তু ছবিটা নেই ৷ এছাড়া সব ঠিক আছে ৷

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here