#শ্রাবন_আধারে_তুমি_২,০৮,পার্ট_বোনাস
#লেখিকা_আফরিন_ইসলাম
#পার্ট_৮
সেই দিনের পর আবরার রাইয়ের সাথে তেমন কথা বলে নি ৷ কেমন যেন রাইকে এড়িয়ে চলেছে ৷ কিন্তু রাই আবরারকে ফলো করতো সব সময় ৷আগের মতো আর রাগ দেখায় না আবরার ৷ রাই ক্লাসে বসে একা একা বলল ,
“আগে আবরার স্যার আমাকে দেখলেই বকা দিত ৷ একটা না একটা ভুল ঠিক ধরতো ৷ কিন্তু ইদানিং কেমন অচেনা মানুষের মতো আচরন করে ৷ এটা আমার একদম ভালো লাগে না ৷তবে উনি পড়ানোর ফাঁকে আমার দিকে এক সুক্ষ্ম নজর নিক্ষেপ করেন ৷ যেটা আমি খেয়াল করেছি বহু বার ৷আজকাল তার শাসন গুলো বড্ড মিস করছি ৷ কেন যেন তার শাসন গুলো আবার পেতে ইচ্ছে করছে ৷ তার কথা মতো ভুল গুলো শুধরে নিতে মন চাইছে ৷ কেন যেন হাজার টা ভুল শুধরে তার পথে হাটতে চাইছে মন ৷”
ক্লাস শেষ হতেই আবরার পেছনে বেড়িয়ে পড়ে রাই ৷ আবরার ভার্সিটি থেকে বের হয়ে বাইকের কাছে চলে যায় ৷ ঠিক তখনই রাই পেছন থেকে বলে ,
“স্যার ডায়েরিতে আমার ছবিটা নেই কেন ?”
উনি পেছনে ফিরে তাকালেন ৷ কেমন যেন ভ্রু কুচঁকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে ৷ কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললেন ,
“তোমার ছবি কোথায় তা আমি কি করে জানবো ! আমি যেমন টা পেয়ে ছিলাম ৷ ঠিক সেই ভাবেই দিয়েছি ৷ আর ঐ দিন তুমি আমাকে মিথ্যে বলে যেই কষ্ট করিয়েছো ৷ তার জন্য এখনো অনেক শাস্তি তোমাকে পেতে হবে ৷ এখন বাড়ীতে যাও ৷ ”
রাই আবররা কথায় পাত্তা দিল না ৷ রাস্তার ফুটপাত ধরে হেটে যেতে লাগলো ৷ রাগ হচ্ছে তার আবরার উপর ৷ বদ লোকটা সব সময় এমন ত্যাড়া কথা বলে ৷কখনো একটু ভালো ব্যবহার করে না ৷রাই আকাশ পাতাল ভেবে যাচ্ছিলো ৷ কিন্তু হঠাৎ কেউ একজন রাইয়ের কনুই ধরে টান দিল ৷ রাই কিছু বলার আগেই আবরার বলল,
“এখন আবার ঢং করে চিৎকার করো না ৷ ছুটি হয়ে গেছে আর তুমি রাস্তায় দাড়িয়ে বকবক করছো ৷ আবার রাগ করছো ৷ তোমাকে এমনি এমনি আমি বোকা বলি না ৷ ”
আবরার রিকশা ডাকলো ৷ তারপর রাইকে রিকশায় তুলে দিয়ে নিজের পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করলো ৷আবরার মানিব্যাগটা খুলতেই রাইয়ের চোখ সেখানে পরে ৷ রাই যেন হঠাৎ চমকে ওঠে ৷ এটা কি দেখছে সে আবরার মানিব্যাগের ভেতর তার ছবিটা ৷ তাহলে লোকটা যে বললো , সে ছবি পায় নি ৷আবরার রিকশাওয়ালাকে টাকা দিয়ে চলে যাচ্ছিলো ৷ ঠিক তখনই রাই রিকশা থেকে নেমে আবরারকে বলল,
“আমার ছবিটা আপনার কাছে কি করছে বেয়াই সাহেব ?”
আবরার যেন থমকে গেল ৷ রাই কখনো তাকে স্যার ছাড়া অন্য কিছু বলে নি ৷ তবে আজ কেন অন্য নাম ৷এতক্ষনে রাই আবরার কাছে চলে এসেছে ৷ রাই আবরার কাছে এসে বলল ,
“আজকাল অপছন্দের মানুষের ছবিও বুঝি যত্ন করে রাখা হয় ৷ তা কবে থেকে রাখা হচ্ছে আমার ছবিটা ৷”
আবরার জবাব দেয় না ৷ সে নিজের দৃষ্টি লুকাতে ব্যস্ত হয়ে পরে ৷ মানিব্যাগটা পকেটে রেখে আবরার বলে ,
“আমাকে যেতে হবে এখন ৷ পরে কথা হবে ৷”
আবরার বাইক চালিয়ে খুব দ্রুত স্থান ত্যাগ করে ৷ তবে বেশি দূরে যায় না ৷কিছুটা পথ যেয়ে থেমে যায় সে ৷ তারপর আড়াল থেকে রাইকে দেখে চুপিসারে ৷ সে চাইলেও এই মেয়েটার থেকে দূরে যেতে পারে না ৷ আবার মনের কথা বলতেও পারছে না ৷ তবে এই মেয়ের হাতে তার মরন আছে নিশ্চিত ৷অকৃতজ্ঞ মেয়েটা যেই দিন থেকে তার জীবনে এসেছে ৷ সেই দিন থেকে তার ঘুম নিয়ে পালিয়েছে ৷ এখন জীবনটা নিয়ে মনে হয় শান্ত হবে ৷
রাই মন খারাপ করে চলে যায় ৷ আবরার দূর থেকে রাইকে দেখে আর মুচকি হাসে ৷আজকাল মেয়েটা তার প্রতি অভিমান করে ৷ আবরার আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস নেয় ৷ হোক না কিছু ভালোবাসার শুরু অভিমান থেকে ক্ষতি কি তাতে ৷
সারাদিনের ক্লান্ত শরীরে রাই বাসায় প্রবেশ করে ৷ রাই বাসায় এসেই অবাক হয়ে গেল ৷ তাদের বাসায় আজ অনেক মেহমান এসেছে ৷ তার বড় ভাইয়ের শ্বশুড় বাড়ী থেকে লোকজন এসেছে ৷ রাইকে দেখেই তার বড় ভাইয়ের শ্বাশুড়ী হেসে বললেন ,
“বেয়াই সাহেব ঐ তো চলে এসেছে রাই ৷ এবার আমরা বাকী কাজটা শেষ করে ফেলি ৷ ”
রাই এই কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলো না ৷ তাই হাবলার মতো দাড়িয়ে রইলো ৷ রাইয়ের কাছে তার ভাবির মাকে একদম ভালো লাগে না ৷রাইয়ের দিকে কেমন কড়া নজরে তাকায় সব সময় ৷ তবে আজ এত হেসে কথা বলার কারন বুঝতে পারছে না ৷ তার পাশেই বসে আছে রনি ৷ রাইয়ের ভাবির ভাইয়ের নাম রনি ৷ ছেলেটা খুব একটা ভালো না ৷ তার চোখের নজর রাইয়ের কাছে সুবিধার মনে হয় না ৷ তাই অনেকটা দূরত্ব রেখে চলে সব সময় ৷
রাইয়ের চিন্তার মাঝেই ওর বাবা বললেন ,
“আমি আমার মেয়ের মত ছাড়া নতুন কোনো আত্মীয়তা করবো না ৷ আমার মেয়ে যদি হ্যা বলে তবেই আমি মত দেব ৷ তাই আমি আগে আমার মেয়ের সাথে কথা বলতে চাই ৷”
রাইয়ের বাবা মেয়েকে নিয়ে নিজের ঘরে গেলেন ৷ তারপর মেয়েকে বললেন ,
“তোমার বড় ভাবির বাড়ী থেকে লোকজন এসেছে ৷ তারা রনির সাথে তোমার বিয়ে দিতে চান ৷ যদিও আমার রনিকে তোমার জন্য পছন্দ না ৷ তোমার ভাইয়েরা কেউ রাজী নয় মা ৷এক কথায় আমরা কেউ রাজী নই ৷ আর এর আগেও নাকি রনি তোমার সাথে বাজে আচরন করেছে ৷ যা তোমার মা আমাকে সবই বলেছে ৷ তাই এমন একটা ছেলের হাতে বাবা হিসেবে তোমাকে আমি তুলে দিতে পারি না ৷ তবুও তোমার সিদ্ধান্তকে আমি গ্রহন করবো ৷ তুমি কি রনিকে পছন্দ করো মা ৷ ভয়ের কিছু নেই ৷ আমাকে বাবা হিসেবে নয় ,তোমার সত্যিকারের একজন বন্ধু হিসেবে বলতে পারো ৷”
রাইয়ের চোখে পানি চলে আসে ৷ রাই নিজের বাবার হাত জড়িয়ে ধরে ৷ তারপর কাদঁতে কাদঁতে বলে ,
“আমি রনি ভাইকে বিয়ে করবো না বাবা ৷ তাকে আমার একদম ভালো লাগে না ৷”
রাইয়ের বাবা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন ৷ তারপর ঘর থেকে বের হয় যান ৷ রাই দরজার কাছেই দাড়ানো থাকে ৷ রাই দরজার ওপাশে থাকা তার বাবার কন্ঠ শুনতে পায় ৷
“আমার মেয়ে এই বিয়েতে রাজী নয় বেয়াইন ৷ আর তাছাড়া রনির বয়সের সাথে রাইয়ের অনেক পার্থক্য ৷ রনি এখনো বেকার ৷তাই নিজের মেয়েকে এখানে বিয়ে দিতে আমি রাজী নই ৷”
রনির বাবা চিৎকার করে ওঠে ৷রাইয়ের বাবার দিকে তাকিয়ে বলে ,
“আপনার মেয়েকে দেখেছেন ?কে বিয়ে করবে ওমন কালো মেয়েকে ! ভাগ্য ভালো আমরা এসে ছিলাম ৷ দেখবো কোন রাজপুত্র আসে ৷”
রাইয়ের চোখে পানি জমা হয় ৷ এই গায়ের রংয়ের জন্য লোকের কম কথা তাকে শুনতে হয় নি ৷ সৃষ্টিকর্তাই যদি কালো রং দেন ,তাহলে বান্দার কি করার আছে ৷ অপর দিকে রাইয়ের ভাবি নিজের ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেন ৷ সেই দিন আর কেউ কারো সাথে কথা বলে নি ৷ রাই নিজেও মনমরা হয়ে গেছে ৷ তাই সে নিজেও ঘর থেকে বের হয় নি ৷ রাতেও কেউ তেমন খায় নি ৷ তবে রাতে বড় ভাইয়ের ঘরে কথা কাটাকাটি হয়েছে এটা সবাই লক্ষ্য করেছে ৷ এমনটা প্রায়ই হয় ৷ তবে কি নিয়ে কথা কাটাকাটি হয় তা কেউ জানে না ৷ রাইয়ের ভাই ,ভাবি কাউকে এই ব্যাপারে বলে না ৷
আজ রাইয়ের ভার্সিটি নেই ৷ সে নিজের ঘরে বসে পড়ছে ৷ তার মা ,ভাবি ঘরের কাজ করছে ৷ বাবা আর ভাইয়েরা টিভি দেখছে ৷ এমন সময় কলিংবেলের শব্দ হলো ৷ বাড়ীর কাজের লোক ফুলি দরজা খুলেই বলল ,
“খালু দেইখা যান জেরিন আফায় আইছে ৷”
রাইয়ের বাবা দরজার কাছে যেতেই দেখলো ৷ জেরিন তার শ্বশুড় বাড়ীর সবাইকে নিয়ে এসেছে ৷ রাইয়ের বাবা সবাইকে ভেতরে আসতে বললেন ৷ রাইয়ের মা সবার জন্য নাস্তা বানাতে শুরু করলেন ৷ কিন্তু হঠাৎ তাদের এভাবে আসার কারন রাইয়ের বাসার কেউ বুঝলো না ৷ রাই সবার সাথে হাসি মুখে কথা বললো ৷ কিন্তু আবরার রাইয়ের দিকে তাকালো না ৷ তবে তার মুখটা যথেষ্ট ফুলে গেছে ৷ চেহারায় একটা হতাশা ভাব চলে এসেছে ৷আবরার একবারের জন্য রাইয়ের দিকে ফিরেও তাকালো না ৷রাই আবরার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে নিজের ঘরে চলে গেল ৷
চলবে…..
#শ্রাবন_আধারে_তুমি_২
#লেখিকা_আফরিন_ইসলাম
#পার্ট_বোনাস
রাই খাটে বসে আছে ৷ তার পাশেই বসে আছে আবরার ৷ দুজনেই নিশ্চুপ হয়ে আছে ৷ আবরার তার পরিবারের সবাইকে নিয়ে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে ৷ এক প্রকার সবাই আবরার অবস্থা দেখেই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে ৷ কাল জেরিনের কাছ থেকে আবরার জানতে পারে রাইয়ের বিয়ের কথা ৷ আর এটা জানার পরেই সে অঘটন ঘটিয়ে ফেলে ৷ নিজের আত্মসম্মান ভুলে বাবার কাছে দৌড়ে যায় ৷ নিজের মনের কথা বাবার কাছে সব খুলে বলে ৷ শুধু তাই নয় ৷ বাবাকে জরিয়ে ধরে নিঃশব্দে কেঁদে ওঠে ৷ আফজাল খান ছেলের মনের অবস্থা বুঝতে পারে ৷ আবরার রাইকে পছন্দ করার ব্যাপারটা পরিবারের সবাইকে জানায় ৷ সাদিকে ফোন করে বাসায় নিয়ে আসে ৷ এমনকি এক বছর আবরার কিভাবে রাইকে খুজেছে সেটাও সাবাইকে বলে ৷ সবাই সবটা শুনে হঠাৎ করেই হেসে ওঠে ৷ কেননা আবরার কখনো কোনো মেয়ের জন্য এমনটা করতে পারে সেটা কেউ ভাবতেও পারে নি ৷ সত্যি বলতে প্রেম করা থেকেও প্রেমে পরার মুহূর্ত অনেক বেশি সুন্দর ৷ সবটা শোনার পর আবরার পরিবারের সবাই সকাল হতেই রওনা দেয় রাইয়ের বাসায় ৷ রাই যখন জানতে পারলো আবরার তার পরিবার নিয়ে এসেছে বিয়ের কথা বলতে ৷ তখন রাই স্তব্ধ হয়ে গিয়ে ছিল ৷ এখন আবরার আর রাইকে আলাদা করে কথা বলতে একটা রুমে বসানো হয়েছে ৷ রাই কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না ৷ আবরার মাথা তুলে একবার রাইয়ের দিকে তাকালো ৷ তারপর বলল ,
“জানো রাই তোমাকে প্রথম যেই দিন দেখে ছিলাম ৷ ঐ দিন আমার মনের মধ্যে এক সুক্ষ্ম টান অনুভব করে ছিলাম ৷ যখন তুমি বলে ছিলে তোমার পায়ে ব্যাথা ৷ ঐ সময় কেন জানি না আমি তোমার জন্য ছুটে গিয়ে ছিলাম ৷ ফিরে যখন দেখলাম তুমি নেই ৷ তখন আমি আমার হৃদয়ে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করেছি ৷ কিন্তু ভাগ্য মনে হয় আমার সাথেই ছিল ৷ তাই যাওয়ার আগে তোমার ডায়েরিটা ফেলে রেখে গেলে ৷ তোমার ছবিটা দেখে আমার রোজ সকাল শুরু হতো ৷ তুমি জানো তোমার জন্য আমি কতবার ঐ চায়ের দোকানে গিয়েছি ৷ একটা সময় সাদির জন্য পেয়েও গেলাম তোমাকে ৷ কিন্তু তখন আমি জানতাম না এই সুক্ষ্ম অনুভূতির নাম কি ৷ আমি শুধু জানতাম তোমাকে আমার দরকার ৷ দিনশেষে সেই অকৃতজ্ঞ মানুষটা আমার দরকার ৷ দিনশেষে সেই তামাটে বর্না কন্যাকে আমার দরকার ৷ ”
আবরার রাইয়ের সামনে বসে ৷ অনুমতি না নিয়ে রাইয়ের হাত দুটো ধরে বলে ,
“আমি জানি না আমাদের সূচনা কেমন ছিল ৷
কিন্তু আমাদের উপসংহার যেন সুখের হয় ৷
আমি জানি না তোমার সাথে আর কোনো বৃষ্টিস্নাত দিন কাটাতে পারবো কি না ৷
শুধু চাই প্রথম শ্রাবনের দিনটা যেন রয়ে যায় হৃদয় মাঝে ৷
আমি জানি না আমাদের কখনো বিচ্ছেদ হবে কি না ৷
শুধু জানি কখনো বেইমানি করবো না ৷
আমাকে বিয়ে করবে রাই ৷ কথা দিচ্ছি কখনো ছেড়ে যাব না ৷ সবার মতো ভালোবাসি বলবো না ৷ সবার মতো আগলে রাখতেও চাইবো না ৷ শুধু বলবো তোমার ছায়াসঙ্গী হতে চাই ৷তোমার হারিয়ে যাওয়া খুশি গুলো উপহার দিতে চাই ৷ তোমার মেঘলা আকাশের চাঁদ হতে চাই ৷ তোমার গানের সুর হতে চাই ৷ সব শেষে আমি তোমার হতে চাই ৷”
রাই আবরার দিকে তাকিয়ে আছে ৷ মানুষটার মনের মধ্যে এত অনুভূতি জমে আছে তার জন্য ৷ দূর থেকেও কি এত ভালোবাসা যায় ৷ ভালোবাসি না বলেও কি তবে ভালোবাসা যায় ৷ রাই ভাষা খুজে পায় না ৷ আবরার নিজের পকেটে হাত দেয় ৷ তারপর কিছু একটা বের করে বলে ,
“সবার মতো দামি রিং দিয়ে বিয়ের জন্য প্রপোজ করবো না ৷ তোমার হারিয়ে ফেলা ছোট একটা খুশি ফেরত দিয়েই না হয় তোমার কাছে তোমাকে চাইবো ৷ যদি আমাকে গ্রহন করো ৷ তাহলে এটা তোমার ৷ আর যদি আমাকে নিরাশ করো ৷ তাহলে তোমার এই ছোট জিনিসটা নিয়ে আমি চলে যাব ৷এবার বলো আমাকে বিয়ে করবে ৷”
রাইয়ের কি হলো সে নিজেও জানে না ৷ আবরার চোখের দিকে তাকিয়ে হ্যা বলে দিল ৷আবরার এক মুহূর্ত অপেক্ষা করলো না ৷ নিজের হাতের মুঠ খুলে দিল ৷ হাতের মুঠ খুলতেই রাই চমকে গেল ৷ তার হারিয়ে যাওয়া সেই নুপুর টা ৷আবরার নুপুরটা রাইয়ের পায়ে পড়িয়ে দিল ৷তারপর রাই কিছু বলার আগেই আবরার রাইয়ের মাথা এক গভীর চুম্বন দিল ৷তারপর ঘর থেকে বেড়িয়ে যায় ৷
এত তাড়াতাড়ি আবরারকে বের হতে দেখে সাদি বলে ,
“আবররা রাই কি বললো তোকে ৷”
আবরার মুচকি হাসলো ৷ তারপর সবার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আলহামদুলিল্লাহ ৷”
সবাই যা বোঝার বুঝে গেছে ৷ অবশেষে আবরার সাথে রাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়েই যায় ৷ আর আবরারকেও রাইয়ের পরিবারের সবার বেশ পছন্দ ছিল ৷ শুধু রাইয়ের রাজি হওয়ার অপেক্ষাতে তারাও ছিল ৷
এভাবেই দিন যেতে লাগলো ৷আর দিনকে দিন আবরার শাসন যেন বেড়েই গেল ৷ রাইয়ের কাছে আবরার এই শাসন ভালোই লাগে ৷ মুখে বলবে না ভালোবাসি ৷ কিন্তু তবুও ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখবে লোকটা তাকে ৷
রাইয়ের পরীক্ষা শেষ হয়েছে কিছু দিন আগে ৷তাই সে এখন ফ্রী আছে ৷ বেশ ভালোই যাচ্ছে তার দিন কাল ৷রাত ঘড়িতে এগারোটা বাজে ৷ হঠাৎ করেই রাইয়ের মা ঘর থেকে বের হয়ে চিৎকার করে ছেলে মেয়েদের ডাকতে থাকেন ৷মায়ের চিৎকার শুনে ছেলে মেয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসে ৷ রাইয়ের মা বড় ছেলের কাছে যেয়ে কাদঁতে কাদঁতে বললেন ,
“তোর বাবার কি যেন হয়েছে ! বুকে নাকি ব্যাথা করছে ৷ এখন শ্বাস নিতে পারছে না ৷ একটু দেখ না বাবা কি হয়েছে ৷ ”
রাইয়ের বড় ভাই দৌড়ে বাবার কাছে যায় ৷ গিয়ে দেখে তার বাবার শরীর ভালো না ৷ আস্তে আস্তে শ্বাস নিচ্ছে ৷
রাইয়ের বড় ভাই বাবাকে আগলে ধরলো ৷ তারপর মেজো ভাইকে বলল,
“মেজো তাড়াতাড়ি এ্যাম্বুলেন্স কল কর ৷ বাবার অবস্থা ভালো না ৷”
চলবে….