শ্রাবন_আধারে_তুমি_২,০৯,১০

0
712

#শ্রাবন_আধারে_তুমি_২,০৯,১০
#লেখিকা_আফরিন_ইসলাম
#পার্ট_৯

রাইয়ের বাবাকে হাসপাতালে নেওয়া হয় ৷ রাইয়ের বাবা হার্ট অ্যাটাক করেছে ৷ কিন্তু তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে আসার কারনে বড় কিছু হয় নি ৷একমাস পার হয়ে গেছে ৷ রাইয়ের বাবা এখন সুস্থ ৷ রাইয়ের পরিবারে এখন আর তেমন সমস্যা নেই ৷অপর দিকে রাই যেন দিনকে দিন আবরার প্রতি মুগ্ধ হতেই লাগলো ৷ ভালোবাসি না বলেও এতো ভালোবাসা যায় তা আবরারকে দেখলে সে কখনো জানতো না ৷লোকটা তার সব সমস্যার কথা না বলতেই বুঝে যায় ৷ অথচ এমন একটা ভাব করে যেন তাকে চেনেই না ৷ মানুষের সামনে সামান্য পাত্তা দেয় না ৷ তবুও রাই ভালোবাসা খুজে নেয় মানুষটার মাঝে ৷ এভাবেই হাসিখুশিতে পেরিয়ে গেল দুইটা বছর ৷ আর আবরার সাথে রাইয়ের বিয়েটা এগিয়ে এলো ৷

রাইয়ের পরীক্ষা সামনে ৷ আবরার তাকে বড্ড বকা দেয়ে পড়াশুনার জন্য ৷ দিনকে দিন যেন অধিকার ফেলছে রাইয়ের উপর ৷ মাঝেমাঝে আবরারকে তার বড্ড বিরক্ত লাগে ৷ এমন কি ভার্সিটির অনেকেই এখন আবরার আর রাইয়ের বিয়ের ব্যাপারে জানে ৷ আবরারের বাড়ীতে রাইয়ের জন্য কেনাকাটা শুরু হয়ে গেছে ৷ রাইয়ের অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার পরে বিয়ে ৷রাইয়ের প্রস্তুতি বেশ ভালো ৷

হঠাৎ করেই একদিন রাতে রাইয়ের ফোন বন্ধ পেল আবরার ৷এদিকে তার ভাবি আবারো প্রেগনেন্ট ৷ আর বড় ভাই আরহাম দেশের বাহিরে ৷ আবরার সেই দিন রাতে বারবার কল করেও রাইকে পায় নি ৷ আর তার দুই দিন পরে জানতে পারে রাইয়ের অপরাধের কথা ৷

আবরা অতীত থেকে ফিরে আসে ৷ ফজরের আজান শুরু হয়েছে ৷ আবরার ওজু করে নামাজ পরে নেয় ৷ তারপর বাসা থেকে বেড়িয়ে যায় ৷উদ্দেশ্য রাইয়ের বাড়ীতে যাওয়ার ৷যেন সকালের জন্যই সে অপেক্ষা করে ছিল ৷ চারিদিকে কেউ নেই ৷ জনশূন্য রাস্তায় আবরার এগিয়ে চললো প্রিয়তমার খোঁজ জানতে ৷

আবরার বাইক এসে থামলো রাইয়ের বাড়ীর সামনে ৷ আবরার রাইয়ের বড় ভাইকে কল করলো আর দরজা খুলতে বললো ৷এত সকালে আবরার আগমনে রাইয়ের ভাই কিছুটা অবাক হলো ৷তবুও কিছু বললো না ৷

বর্তমানে আবরার বসে আছে রাইয়ের বাবার কাছে ৷ আবরার তার হাত ধরে বলল ,

“চাচ্চু আপনি দয়া করে বলুন রাই কোথায় আছে ৷আমি রাইয়ের সাথে একটু কথা বলতে চাই ৷ আমি ওর মুখ থেকে সবটা শুনতে চাই ৷ ”

রাইয়ের বাবা অসহায়ের মতো আবরার দিকে তাকালেন ৷ ছেলেটা তার মেয়ের এত বড় অপরাধের কথা জেনেও পাগলের মতো করছে ৷ রাইয়ের বাবা মাথা নত করে বললেন ,

“আমি জানি না বাবা রাই কোথায় আছে ৷ ওর সাথে এখন আর আমাদের যোগাযোগ নেই ৷”

আবরার হতাশ হয়ে গেল ৷ চোখের কোনায় পানি টলমল করে উঠলো ৷ আবরার মাথা নত করে উঠে দাড়ালো ৷ তারপর আর কথা না বলে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেল ৷

সকার দশটা বাজে ৷ রাই নিজের জামা কাপড় গুছিয়ে রাখছে ৷ পাশেই সায়মা বসা ৷ সায়মা রাইকে বলল ,

“কি রে এখন কি করবি ? সামনে তো পরীক্ষা ৷পরীক্ষার ফি চলে এসেছে ৷ এখন যদি ঠিক মতো না পড়িস ৷ তাহলে পরীক্ষা খারাপ হবে ৷ তোর ভাইয়াকে আমি তোর ব্যাপারে বলেছি ৷ সে পরীক্ষার টাকা নিয়ে চিন্তা করতে না করেছে ৷ এখন জামা কাপড় গুছিয়ে নে ৷ তারপর নাস্তা করবো দুইজন ৷”

রাই কাপড় গুছিয়ে রাখতে ছিল ৷ হঠাৎ ওর চোখ পড়লো ব্যাগের ভেতর ৷ রাই হাত বাড়াতেই দেখলো তার শখের মোবাইল ফোনটা ৷ এটা তার বড় ভাই কিনে দিয়ে ছিল ৷ রাই মোবাইল টা দেখেই খুশি হয়ে গেল ৷ কত আনন্দের মুহূর্ত আছে এই ফোনে ৷ রাই মোবাইলটা খুললো ৷মোবাইল খোলার কিছুক্ষন পরেই কিছু মেসেজ এলো ফোনে ৷রাই মেসেজ গুলো ওপেন করতেই অবাক হয়ে গেল ৷খুবই পরিচিত দূইটা নাম্বার থেকে মেসেজ গুলো এসেছে ৷ একটা নাম্বার আবরার ৷ পাগলের মতো একের পর মেসেজ দিয়েছে ৷ রাই মেসেজ গুলো পড়ে খুশিতে কাদঁতে লাগলো ৷লোকটা আসলেই পাগল ৷ রাই অপর নাম্বার থেকে আসা মেসেজ গুলো পড়তে লাগলো ৷ এবার আর খুশির ঝলক তার চোখে ধরা পড়লো না ৷ রাই ধপ করে নিচে বসে পড়লো ৷রাই মেসেজ গুলো পড়ে কষ্টে কাপঁতে লাগলো ৷ মেসেজে স্পষ্ট লেখা আবরার বিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে ৷আজ সকালেই নাকি সব সম্পর্ক শেষ করেছে ৷ রাই নিজের মাথা ধরে ফ্লোরে বসে রইলো ৷সায়মা এসে রাইকে বলল ,

“রাই কি হয়েছে ?”

রাইয়ের চোখে পানি ৷ রাই সায়মার দিকে তাকিয়ে হাউমাউ করে কেদেঁ উঠলো ৷ তারপর বলল,

“আমার শেষ ভরসা টা এবার শেষ হয়ে গেছে সায়মা ৷ আবরার স্যার বিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে ৷আমি এখন কাকে বলবো আমার কথা গুলো ৷ আমি এখনই তার সাথে কথা বলবো ৷”

সায়মা রাইকে শান্তনা দিয়ে বলল,

“মাথা ঠান্ডা কর রাই ৷ দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে ৷ এখন ঠান্ডা মাথায় কাজ কর ৷”

রাই ফোনটা হাতে নিল ৷ তারপর যেই নাম্বার থেকে মেসেজ গুলো এসেছে ৷ সেই নাম্বারে কল দিল ৷ কল রিসিভ হলো না ৷ রাই ফ্লোরের উপর বসে রইলো ৷ প্রায় দশ মিনিট পর ঐ নাম্বার থেকে কল এলো ৷ রাই অপেক্ষা করলো না ফোনটা রিসিভ করলো সাথে সাথে ৷ তারপর আবার কাদঁতে কাদঁতে বলল ,

“আবরার কি সত্যি বিয়ে করবে না আমাকে ?সত্যি করে বলো না প্লিজ ৷ আমি আর সহ্য করতে পারছি না ৷”

রাই কথা গুলো বলে আবার কাদঁতে লাগলো ৷ঐ পাশের কথা সায়মা শুনতে পেল না ৷ তবে কিছু সময় পর রাই বলল,

“আমি সায়মার বাড়ীতে আছি ৷এখানেই কিছু দিন থাকবো ৷”

অতঃপর ঐ পাশের কথা শুনে রাই বলল,

“কি বাবা অসুস্থ ! তোমরা বাবাকে ডাক্তার কাছে নিয়ে গেছো হ্যা ৷ বিশ্বাস করো আমি কখনো বাবার সামনে যাব না ৷ বাবা ভালো থাকুক ৷ আমি যাব না আর তার কাছে ৷ আমি কাউকে কিছু বলবো না ৷ তুমি শুধু বাবার একটু খেয়াল রাখবে ৷ আমি আর কিছু চাই না ৷”

চলবে

#শ্রাবন_আধারে_তুমি_২
#লেখিকা_আফরিন_ইসলাম
#পার্ট_১০

রাত ঘড়িতে দশটা ৷ আবাসিক এলাকা তাই মানুষের চিৎকার চেচাঁমেচির আওয়াজ নেই ৷ তবে কিছু সময় পর পর কুকুরের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে ৷ রাই স্বাভাবিক হতে পারছে না ৷ চোখের কোনে পানি শুকিয়ে গেছে ৷ রাইয়ের পাশে সায়মা আর তার স্বামী অনিক বসে আছে ৷ অনিক রাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল ,

“আবরার সাথে কি তোমার কথা হয়েছে রাই ?”

রাই আস্তে করে বলল,

“আমি তাকে অনেক বার কল করেছি ৷ কিন্তু তার ফোনটা বন্ধ ৷আমি তার সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না ৷”

অনিকের কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো ৷সে কিছুতেই হিসাব মিলাতে পারছে ৷ কোথাও যেন একটা গন্ডগোল আছে ৷অনিক বলল,

“আমি কি একবার কথা বলবো আবরার সাথে ?যদি তার মন একটু গলাতে পারি ৷”

রাই দুই হাতে মুখ লুকিয়ে কাদঁতে কাদঁতে বলল,

“যেই মানুষটা আমাকে চায় না ৷ তাকে আর বুঝিয়ে লাভ নেই ভাইয়া ৷ মানুষটা এখন আর আমার নেই ৷”

অনিকের বড্ড কষ্ট হতে লাগলো এই মেয়েটার জন্য ৷নিজের চোখের সামনে এই মেয়েটার এমন পরিনতি মানতে পারছে না সে ৷অনিক রাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

“রাই চিন্তা করো না ৷ সব ঠিক হয়ে যাবে ৷এখন আর কাউকে নিয়ে তোমায় ভাবলে চলবে না ৷ মন দিয়ে পরীক্ষা দিতে হবে ৷ আমি সব ব্যবস্থা করবো ৷”

রাই দুই হাতে চোখের পানি মুছে নিল ৷ রাই ভালো করেই জানে অনিক তাকে সহানুভূতি দেখাচ্ছে ৷ সত্যিটা হলো আর কখনো কিছু ঠিক হবে না ৷ সে চাইলেও আর ঠিক হবে না ৷রাই অসহায় চোখে অনিকের দিকে তাকিয়ে বলল,

“অন্যের বোঝা হয়ে তো কম থাকলাম না ৷ অন্যের টাকায় তো কম সুখ করলাম না ৷ এবার হয়তো আমার নিজের কিছু করা উচিত ৷ আমি আর কারো কাছে বোঝা হয়ে থাকতে চাই না ৷ আপনি বরং আমাকে একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিন ৷আমি কাজ করে নিজের সব চাহিদা মিটিয়ে নেব ৷ ”

রাইয়ের কাছ থেকে এমন কথা যেন অনিক আশা করে নি ৷ সে অনেকটা অবাক হয়ে গেল রাইকে দেখে ৷ অনিক রাইকে অবাক হয়ে বলল,

“তুমি কাজ করবে রাই ৷ এটাও কি সম্ভব ৷”

“কেন সম্ভব না ভাইয়া ৷ একটা সাত বছরের বাচ্চা যদি রাস্তায় ফুল বিক্রি করতে পারে ৷ একটা বাচ্চা যদি নিজের পেট চালাতে হোটেলে কাজ করতে পারে ৷ একটা বাচ্চা যদি রাস্তায় ঝালমুড়ি বিক্রি করে সংসার পারে ৷ একজন বৃদ্ধ বাবা যদি রিকশা চালিয়ে সন্তানের চাহিদা পূরন করতে পারে ৷ তাহলে আমি কেন পারবো না ভাইয়া ৷ আপনি দয়া করে আমাকে একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিন ৷”

রাইয়ের কথার পরে অনিক আর সায়মা কোনো কথা খুজে পেল না ৷ অনিক কিছু একটা ভেবে বলল,

“দুইদিন আগে আমি একটা চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখে ছিলাম ৷ সেখানে খুব একটা যোগ্যতা লাগবে না ৷ কম্পিউটারে বেশ ভালো দক্ষতা থাকলেই হবে ৷ তুমি তো কম্পিউটারে বেশ ভালো ৷আর তুমি তো ইন্টার পাশ করেছো ৷ তুমি যদি বলো তাহলে পেপার চেক করি ৷”

রাই সহমত পোষন করে বলল,

“যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যোগাযোগ করুন ৷আমার এখন কাজ খুব দরকার ভাইয়া ৷ তাই আমাকে একটু সাহায্য করুন ৷ আমি ঘরে যাবো ৷ কিছু ভালো লাগছে না আমার ৷”

রাই নিজের ঘরে চলে গেল ৷ কেন যেন কারো সাথে কথা বলতে তার ইচ্ছে করছে না ৷বড্ড একা থাকতে ইচ্ছে করছে ৷

অন্যদিকে সারাদিন রাইকে খুজে আবরার ক্লান্ত ৷ সারাদিন কিছু খায় নি সে ৷ রাইয়ের প্রায় পরিচিত সকলের বাসায় সে গেছে ৷ কিন্তু কোথাও খুজে পায় নি ৷ আবরার ক্লান্ত শরীরে বাড়ীতে এসে ঢুকতেই আফজাল খানের সামনে পড়লো ৷ বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে আবরার অনেক কিছু বুঝে গেল ৷ আফজাল খান যে তার উপর রেগে আছে তা সে জানে ৷ আবরার একবার বাবার দিকে তাকিয়ে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো ৷ ঠিক তখনই আফজাল খান বলল,

“ঐ মেয়েটার জন্য আজ সারাদিন তুমি বাইরে ছিলে আবরার ৷ যেই মেয়েটা এত বড় অপরাধ করলো ৷ তুমি তার হয়ে এখানে সেখানে যাচ্ছো ৷ ব্যাপারটা কি হাস্যকর নয় ৷”

আবরার বাবার দিকে তাকিয়ে দমে গেল ৷ মাথা নিচু করে বলল,

“বাবা আমি একবার রাইয়ের মুখ থেকে সবটা শুনতে চাই ৷ ও যদি সত্যি এই কাজ করে থাকে ৷ তাহলে তোমাদের বলতে হবে না ৷ আমি নিজেই তার থেকে সরে আসবো ৷ তোমাদের রাইকে অপছন্দ ছিল ৷ আর এর কারন সে কালো ৷ তোমরা মুখে আমাকে না বললেও আমি বুঝি ৷ তবে এইবার যদি তার মনটা কালো বের হয় ৷ তাহলে আমি নিজেই সবটা শেষ করবো ৷”

আবরার নিজের ঘরে চলে গেল ৷ আফজাল খান সোফায় বসে পড়লেন ৷ বড় ছেলে আরহামকে জেরিন সব খুলে বলেছে ৷আরহাম দেশে এসেই নাকি রাইয়ের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করবে ৷ একদিকে বড় ছেলে অন্যদিকে মেজো ছেলে ৷ আফজাল খান মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলেন ৷কেননা তার হাতেও এখন আর কিছু নেই ৷ রাই যেই কাজটা করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য ৷

একটা নির্ঘুম রাত কেটে গেল রাইয়ের ৷ সারা রাত চোখের পাতা এক করতে পারে নি ৷ না চাইতেও চোখের কার্নিশ বেয়ে পানি পড়েছে বহুবার ৷হয়তো একের পর এক প্রিয়জন হারানো মানুষ গুলো এভাবেই তাদের রাত কাটিয়ে দেয় ৷ নিঃশব্দে নিরালায় নিজের কষ্ট গুলো ভাগ করে নিঝুম রাতের সাথে ৷

আবারো একটা নতুন সকালের সূচনা হলো ৷ রাই আয়নার সামনে দাড়িয়ে তৈরি হচ্ছে ৷ পেপারে দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী ইন্টারভিউ দিতে যাবে ৷ যেহেতু তার এখন একটা কাজ খুব দরকার ৷ তাই রাই আজকেই ইন্টারভিউ দিতে যাবে ৷ অনিকের কাছ থেকে একশ টাকা নিয়েছে গাড়ী ভাড়ার জন্য ৷নিজের সার্টিফিকেটের কাগজ গুলো একটা ফাইলে নিয়ে রাই বেড়িয়ে গেল ৷

রাই বাসা থেকে বের হয়েই সামনে হাটতে লাগলো ৷ পাচঁ মিনিট হাটলেই বাস পাবে সে ৷ এখন আর আগের মতো টাকা খরচ করলে চলবে না ৷বাসের গরম আর ভিড় সহ্য করেই তাকে যেতে হবে ৷এখন এক টাকা রাইয়ের কাছে হাজার টাকার সমান ৷রাই হেটে চললো হাজার কথা ভাবতে ভাবতে ৷

হঠাৎ একটা কুকুর রাইয়ের সামনে এসে ঘেউ ঘেউ করতে লাগলো ৷কুকুরটা যেন রাইকে কিছু বলতে চাইছে ৷রাই কুকুর খুব ভয় পায় ৷ কিন্তু এই কুকুরটা দেখে একটুও ভয় পেল না ৷ রাইয়ের মুখে একটু হাসি ফুটে উঠলো কুকুরটাকে দেখে ৷ রাই কুকুরটার দিকে তাকিয়ে বলল,

“কি রে কেমন আছিস তুই? তোকে না গরম পানি ছুড়ে মেরে ছিল কেউ ৷ এক মাস আগেই তো কত অসুস্থ ছিলি তুই ৷ সায়মার বাসায় আসার পথেই তো তোকে রাস্তায় দেখে ছিলাম ৷ ইস !কত অসুস্থ ছিলি তুই ৷ তিন দিন এসে ঔষুধ লাগিয়ে গিয়েছি তোকে ৷ প্রথম দিন ঔষুধ লাগাতেই তুই যেভাবে চিৎকার করলি ৷ আমি তো ভয়ে একদম শেষ ৷তারপর কিন্তু একদম ভালো হয়ে থাকতি ৷ আমি রোজ তোকে খাবার দিয়ে যেতাম ৷ চতুর্থ দিন এসে তোকে আর পাই নি ৷ এখন কেমন আছিস তুই ?”

কুকুরটা রাইয়ের দিকে তাকিয়ে ঘেউ ঘেউ করে উঠলো আবারো ৷

রাই কুকুরটাকে বলল,

“আমার কাছে আজ বেশি টাকা নেই রে ৷ তোকে আজ আর দামি রুটি কিনে দিতে পারবো না বেকারি থেকে ৷ আজকে বরং চায়ের দোকান থেকে একটা ছোট রুটি কিনে দেব তোকে ৷ চল আমার সাথে ৷”

কুকুরটা লেজ নাড়িয়ে রাইয়ের পেছনে হাটতে লাগলো ৷তারপর রাইয়ের কিনে দেওয়া দশ টাকা দামের রুটিটা খেতে লাগলো অতি আনন্দে ৷রাই মুচকি হাসি দিয়ে আবার হাটা শুরু করলো ৷

রাই বসে আছে একটা বড় কোম্পানির ভেতর ৷ ম্যানেজার ইন্টারভিউ নিচ্ছে সবার ৷ এক এক করে রাইয়ের সিরিয়াল চলে এলো ৷ রাই দোয়া দরূদ পড়তে পড়তে ভেতরে ঢুকলো ৷ ভেতরে ঢুকে রাই আগে সালাম দিল ৷ রাইকে ম্যানেজার চেয়ারে বসতে বললো ৷ রাই চেয়ারে বসে নিজের কাগজ গুলো এগিয়ে দিল ৷ কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার লোকটা ফাইল খুলেও দেখলো না ৷ ম্যানেজার বলল,

“তোমার নাম কি ?”

“আমার নাম রাইমা ইসলাম রাই ৷”

“খুব ভালো নাম ৷ তা এখানে পরিবার নিয়ে থাকো ৷ নাকি একা থাকো ৷”

“একা থাকি স্যার ৷”

“হুমম ৷তোমাকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছে ৷ তুমি সব দিক থেকেই ঠিক আছো ৷ আসলে আমরা পত্রিকায় কিছু কম্পিউটারে দক্ষ এমন মানুষের চাকরি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ছিলাম ৷ যেই চাকরিটা মেয়েরা করতে পারবে ৷ আসলে আমরা এমন কোনো কাজে মেয়েদের নেব না ৷আমরা আসলে অন্য কাজের জন্য মেয়েদের নেব ৷”

“মানে স্যার ৷ আমি ঠিক বুঝলাম না ৷”রাই বলল ৷

“আসলে আমাদের কোম্পানির সাথে বিদেশি কোম্পানির অনেক চুক্তি হয় ৷অনেক সময় চুক্তি গুলো অন্য কোম্পানি পেয়ে যায় ৷ কিন্তু আমরা চাইছি যেন চুক্তি গুলো আমরা পাই ৷ আর বিদেশি লোকেরা বাঙ্গালী মেয়েদের বেশ পছন্দ করে ৷তাই আমরা কিছু মেয়ে নিয়োগ দেব ৷ মেয়েরা তাদের সময় দেবে একটু ৷ এতে করে তারাও খুশি হবে ৷ আর ডিল আমরা পাবো ৷ আর মাঝে মধ্যে তোমার বস হিসেবে আমাদেরও সময় দেবে ৷ মাঝে মাঝে ডাক দিলেই চলে আসবে ৷ এছাড়া আর কোনো কাজ নেই ৷”

রাই নিচের দিকে তাকিয়ে বলল,

“আমি কেমন টাকা পাবো স্যার ?”

লোকটা হেসে বলল,

“টাকা নিয়ে চিন্তা করো না ৷ একদম রানীর মতো থাকবে তুমি ৷ যখন যা চাইবে তাই পাবে ৷ আর মালিক একবার খুশি হলে তো কথাই নেই ৷ তুমি লালে লাল ৷ তোমার শারীরিক চাহিদাও মিটবে আর টাকাও পাবে ৷ ”

রাই ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে বলল,

“স্যার সামনে তো আপনাদের সাথেই কাজ করতে হবে ৷ তার আগে আপনার ব্যাপারে একটু জানতে ইচ্ছে করছে স্যার ৷ পরিবারে কে কে আছে আপনার ?”

ম্যানেজার রাইয়ের দিকে নিজের নোংরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,

“এক ছেলে আর এক মেয়ে আছে ৷ আর আমার স্ত্রী আছে ৷মেয়েটা তোমার বয়সী ৷ আর ছেলেটা কলেজে পড়ে ৷ আর বাকি পরিচয় পরে জেনে নিও ৷”

রাই অবাক হওয়ার ভান করে বলল,

“ওয়াও স্যার ৷ আপনার পুরো সুখী পরিবার ৷ তা স্যার আপনার তো মেয়ে আছে ৷ তাকে এই ভালো চাকরি টা না দিয়ে আপনি অন্য মেয়েদের অফার করছেন ৷ আজব মানুষ আপনি ৷ এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না স্যার ৷”

“এই মেয়ে তুমি কি সব বলছো ৷ আমার মেয়ে কেন এগুলো করবে ৷”

রাই হাসতে হাসতে বলল,

“আরে স্যার রেগে যাচ্ছেন কেন আপনি ! একবার ভাবুন তো ৷ আপনার মেয়ে যদি এই চাকরিটা করে তাহলে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা পাবে ৷ আপনার বস যদি একবার খুশি হয় ৷তাহলে তো লালে লাল ৷ আপনার বেতন এক দিনে লাখ ছাড়িয়ে যাবে ৷তার সাথে আপনার চাহিদাও মিটবে আর বিদেশী ক্লাইটদেরও মন ভরে যাবে ৷ কষ্ট করে আর বাইরে মেয়ে খুজতে হবে না ৷ কারন আপনার ঘরেই তো সোনার ডিম দেওয়া হাঁস আছে ৷”

ম্যানেজার প্রচন্ড রেগে উঠে দাড়ালো ৷এক প্রকার দৌড়ে রাইয়ের কাছে আসলো ম্যানেজার ৷ তারপর রাইয়ের গালে থাপ্পর মারার জন্য হাত উঠানোর আগেই রাই সেই হাত ধরে ফেললো ৷ তারপর বলল,

“নিজের মেয়েকে বললে খুব লাগে না ৷ আর অন্যের মেয়েকে বেশ্যা বানাতে মজা লাগে কুকুর একটা ৷ তোকে ইচ্ছা করছে শেষ করে দেই ৷ এরপর অন্যের মেয়েকে খারাপ কিছু বলার আগে নিজের মেয়ের কথা ভেবে নিবি ৷ নইলে তোর অজান্তে তোর মেয়ে কখন বেশ্যা হয়ে যাবে টের পাবি না ৷”

চলবে.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here