#শ্রাবন_আধারে_তুমি_২,১১,১২
#লেখিকা_আফরিন_ইসলাম
#পার্ট_১১
দুপুরের কড়া রোদে রাই বেশ রাগ নিয়ে রাস্তা দিয়ে হাটছে ৷প্রচন্ড রাগে চোখ গুলো লাল হয়ে গেছে ৷ লোকটার কত বড় সাহস ৷ ম্যানেজারের করা কুপ্রস্তাবের কথা চিৎকার করে অফিসের সবাইকে বলেছে ৷অনেকে অবাক চোখে ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে ছিল ৷ ম্যানেজার লজ্জায় মাথা তুলে তাকায় নি ৷
রাই বিরবির করে কথা বলতে বলতে হাটছিল ৷ হঠাৎ কারো সাথে খুব জোড়ে ধাক্কা লাগে তার ৷ ভারসাম্য রাখতে না পেরে রাই ঠাস করে নিচে পরে যায় ৷ মা বলে চিৎকার করে ওঠে রাই ৷ ঠিক তখনই একজন পুরুষ কন্ঠে বলে ওঠে ,
“সরি আমি খেয়াল করি নি ৷ আসলে আমি একটু অন্যমনষ্ক ছিলাম ৷ তাই খেয়াল করি নি ৷ ”
রাই এবার বেশ বিরক্ত হলো লোকটার কথায় ৷ রাই আস্তে আস্তে উঠে বলল,
“চোখ কি হাটুতে থাকে ৷ রাস্তায় দেখে চলতে পারেন না ৷”
অচেনা ছেলেটা বলল,
“দেখুন আমি আপনাকে সরি বলেছি ৷ আমি ইচ্ছে করে ধাক্কা দেই নি ৷ তবুও আপনি রাগ করছেন আমার উপর ৷”
রাই ছেলেটার দিকে তাকালো ৷ এই ছেলেটা ঠিক তার মতোই মোটা ফ্রেমের চশমা পরে ৷ তার মতোই অনেকটা কালো ৷ কেন যেন স্বভাবের দিক থেকেও বেশ মিল ৷ রাই এবার শান্ত চোখে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল,
“ঠিক আছে সরি গ্রহন করলাম ৷ এরপরে দেখে হাটবেন ৷ ”
রাই ছেলেটার জবাবের জন্য অপেক্ষা করলো না ৷ আবার হাটতে শুরু করলো সে ৷ ছেলেটা রাইয়ের দিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে রইলো ৷ তারপর ছেলেটাও নিজ গন্তব্যে দিকে হাটা শুরু করলো ৷
রাই বাসায় যেয়ে সায়মাকে সব খুলে বলে ৷ উপর থেকে বোঝা না গেলেও ভেতর থেকে অনেকটা হতাশ রাই ৷ জীবনে এই প্রথম এমন খারাপ প্রস্তাব প্রত্যেকটা মেয়ের জন্য শুভ হয় না ৷ আজকের ঘটনা গুলো অনেকটা খারাপ স্বপ্নের মতো রাইয়ের কাছে ৷ অনেকক্ষন কপালে হাত দিয়ে বসে ছিল সে ৷ টাকার চিন্তায় কাল সারারাত ঘুমায় নি সে ৷ ভার্সিটির ফি কিভাবে দেবে ৷ সায়মা রাইয়ের ঘাড়ে হাত রেখে বলে ,
“চিন্তা করিস না ৷ সব ঠিক হয়ে যাবে ৷ এখন ফ্রেশ হয় খেয়ে নে ৷”
রাই ফ্রেশ হতে গেল ৷ প্রচন্ড খুদা লেগেছে তার ৷ সারাদিনের পরিশ্রমে অনেকটা ক্লান্ত রাই ৷ তাই আগে ফ্রেশ হতে চলে গেল ৷
রাই ফ্রেশ হতে যাওয়ার সাথে সাথে সায়মা কাউকে কল করে ৷ কল করার সাথে সাথেই রিসিভ হয় ৷ তারপর ওপাশ থেকে একজন পুরুষ বলে,
“কাজ কতটুকু হলো ?”
সায়মা ফিসফিসিয়ে বলল,
“আমার সব কাজ শেষ ৷ এবার শুধু রাই খাবার খেলেই বাকি কাজ হয়ে যাবে ৷ আপনার পরিকল্পনা মতোই কাজ করেছি ৷ রাই খাবার খাওয়ার পর আপনারা আসবেন ৷ আমি আপনাদের কল করবো ৷”
রাই ফ্রেশ হয়ে আসলো ৷ সায়মা রাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে ৷ তা দেখে রাই বলল,
“সায়মা তোর দিতে হবে না ৷ আমি খেয়ে সব ধুয়ে ফেলবো ৷ তুই সারাদিন কত কাজ করিস ৷ এখন তুই একটু বিশ্রাম নে ৷ আমি এখন বাকি কাজ গুলো করে রাখবো ৷”
সায়মা হাসে রাইয়ের কথায় ৷ তারপর বলে,
“কি যে বলিস তুই ৷ আজ সব তোর পছন্দের রান্না করেছি ৷ এখন তাড়াতাড়ি খেয়ে নে ৷ তোকে কিছু করতে হবে না ৷ পেট ভরে খেয়ে একটা লম্বা ঘুম দিবি ৷ এখন খাওয়া শুরু কর ৷”
রাই খেতে শুরু করলো ৷ সব গুলো খাবার বেশ ভালো হয়েছে ৷ রাই বেশ মজা করেই খেতে লাগলো ৷ আর সায়মা রাইকে দেখছে ৷ এখন তার কাজ শেষ ৷ এবার রাই চাইলেও নিজের ভাগ্যকে আর বদলাতে পারবে না ৷ রাই তার সব গুলো প্রিয় মানুষকে এবার হারাবে ৷
রাই খাবার খেয়ে চেয়ারেই বসে আছে ৷ রাই সায়মার দিকে হালকা করে তাকিয়ে বলল,
“সায়মা আমার মাথাটা কেমন যেন ঘুড়ছে ৷ অনেক ঘুম আসছে আমার ৷ আমি চোখ খুলে রাখতে পারছি না ৷ আমি ঘুমাবো এখন ৷ ঘুম থেকে উঠে তোর সব কাজ আমি করে দেব ৷আমি ঘুমাতে গেলাম ওকে ৷”
সায়মা রাইয়ের কথার জবাব দিল না ৷ রাই চেয়ার থেকে উঠে দরজার কাছে গেল ৷ কিন্তু ঘরের ভেতর ঢুকতে পারলো না ৷ তার আগেই ঠাস করে ফ্লোরে পরে গেল ৷ সায়মা দৌড়ে রাইয়ের কাছে গেল ৷ তারপর রাইকে উঠানোর চেষ্টা করলো ৷ রাই আস্তে আস্তে চোখ খুলে বলল,
“আমার অনেক ঘুম পেয়েছে ৷ আমি ঘুমাবো সায়মা ৷বড্ড ঘুম পেয়েছে ৷”
সায়মা রাইকে বিছানায় শুইয়ে দিল ৷ তারপর আবারো কল করলো একটা নাম্বারে ৷ ওপাশ থেকে কল রিসিভ করেই বলল,
“কাজ শেষ হয়েছে ?”
“হুমমম….”
“এবার আমি যা শিখিয়ে দেব ৷ ঠিক তাই বলবে রাইয়ের মা ,বাবা, ভাই,বোন আর আবরার সামনে ৷ ”
“ঠিক আছে ৷”
সায়মা আরো কিছু সময় কথা বলে ফোনটা রেখে দিল ৷ তারপর নিজের বাকি কাজটা করতে লাগলো ৷
রাত ঘড়িতে দশটা ৷ রাই ফ্লোরে পরে আছে ৷ তার অবস্থা খুব একটা ভালো না ৷ রাইয়ের পুরো শরীরে মদ আর সিগারেটের গন্ধ ৷ শরীরে থাকা জামাটা বেশ আপত্তিকর ৷রাই গালে হাত দিয়ে বসে আছে ৷ তার সামনে দাড়িয়ে আছে আবরার ৷ একটু আগে আবরার তাকে থাপ্পর মেরেছে ৷ আবরার রাইয়ের হাত ধরে উপরে তুলে বলল,
“এই তুই জানিস তোকে কত জায়গায় আমি খুজেছি ? তুই জানিস তোর জন্য আমার কেমন অবস্থা হয়েছে ?তুই জানবি কিভাবে ?তুই তো আমাকে কখনো ভালোবাসিস নি ৷ এই তোর যখন আমাকে এতই অপছন্দ তাহলে বললি না কেন ?আমার জীবন নিয়ে এত নাটক কেন করলি তুই ?আমার অপরাদ কি ছিল ?”
আবরার কথা গুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পরে ৷ঠিক তখনই রাইয়ের ভাবি বলল,
“এক সাথে দুইটা ছেলের মাথা খেয়েছে এই মেয়ে ৷ আমার ভাইকে নিয়ে বিয়ে ছাড়াই থাকতে লজ্জা করলো না তোর ৷”
রাই ওর ভাবির কাছে দৌড়ে এসে কাদঁতে কাদঁতে বলল ,
“বিশ্বাস করো ভাবি আমি কিছু জানি না ৷ কিভাবে কি হলো আমি জানি না ৷ দুপুর খাওয়ার পর ঘুমিয়ে ছিলাম ৷ তারপর কি হলো আমি জানি না ৷”
রাইয়ের মা মেয়ের গালে ঠাস করে এক চড় বসিয়ে বললেন,
“তোর মতো মেয়ে পেটে ধরাও পাপ ৷ আর আমি সেই পাপ করেছি ৷ রনিকে তোর এত পছন্দ আমাদের বললেই পারতি ৷ শুধু শুধু কেন অবৈধ ভাবে ছিঃ ছিঃ ৷ আজ থেকে তুই মরে গেছিস আমাদের কাছে ৷বড় বৌমা চলো এখান থেকে ৷ এর মুখ আমরা আর দেখবো না ৷”
রাই নিজের মায়ের হাত জড়িয়ে বলল,
“ও মা আমার কথা একটু বিশ্বাস করো ৷ আমি এমন খারাপ কাজ করি নি ৷ আমি এসব করি নি ৷ বড় ভাবি তুমি তো আমাকে অনেক আদর করো ৷ তুমি একটু মাকে বোঝাও না ৷”
রাই ওর ছোট ভাইয়ের কাছে দৌড়ে যায় ৷রাই তার ভাইকে ছোয়ার আগেই বলে,
“ঐ নোংরা হাতে আমায় ছুবি না তুই ৷ তুই অপবিত্র হয়ে গিয়েছিস ৷ আজ থেকে রাই নামের কেউ নেই আমাদের ৷”
রাই ওর ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে ৷ তার ভাই তাকে অপবিত্র বলছে ৷ এটাও কি সম্ভব ৷এমন সময় দেখতে পায় আবরার চলে যাচ্ছে ৷ রাই দৌড়ে আবরার কাছে যায় ৷ আবরারকে জড়িয়ে ধরে ৷তারপর কাদঁতে কাদঁতে বলল,
“আপনি আমায় ভুল বুঝবেন না আবরার ৷ আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না ৷ আমাদের সব বিপদে একসাথে থাকার কথা ছিল ৷ আমাদের একসাথে বাচাঁর কথা ছিল ৷ তবে আজ কেন আপনি আমায় ছেড়ে চলে যাচ্ছেন ৷ এই সায়মা তুই উনাকে একটু বুঝিয়ে বল না ৷ আবরার আপনি আমাকে ছেড়ে যাবেন না ৷”
আবরার রাইকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয় ৷ তারপর চোখের পানি মুছে বলে,
“যে নারীর শরীরে দ্বিতীয় পুরুষের গন্ধ থাকে ৷ তাকে আর যাই হোক ঘরে তোলা যায় না ৷”
রাই আবরার নাম ধরে চিৎকার করতে থাকে ৷ কিন্তু আবরার ফিরেও তাকায় না ৷ রাই নিজের হাত দিয়ে ফ্লোরে জোড়ে জোড়ে আঘাত করতে থাকে ৷ আর কাদঁতে থাকে ৷
চলবে…..
#শ্রাবন_আধারে_তুমি_২
#লেখিকা_আফরিন_ইসলাম
#পার্ট_১২
সময়ের সাথে সাথে প্রিয় মানুষ গুলো বদলে যায় ৷ ভালোবাসার মানুষদের সাথে বিচ্ছেদ হয় ৷তবে কি সময়ের সাথে ভালোবাসা বদলে যায় ! নাকি মানুষ গুলো বদলে যায় ৷রাই দরজার সামনে বসে কাদঁছিল ৷ সায়মা এসে রাইয়ের কাধে হাত রাখলো ৷ তারপর কাদঁতে কাদঁতে বলল,
“রাই এভাবে কাদিঁস না ৷ তুই এভাবে কাদঁলে আমার অনেক কষ্ট হয় ৷”
রাই সায়মার দিকে একবার তাকালো ৷ রাইয়ের চোখ থেকে পানি পড়ছে না এখন ৷ তবে চেহারা ভয়ংকর রুপ ধারন করেছে ৷ রাই বসা থেকে উঠেই সায়মার গলা চেপে ধরলো ৷ তারপর বলল,
“বেইমান ,প্রতারক তোকে আমি নিজের বোনের মতো ভালোবাসতাম ৷ কিভাবে পারলি এমন করতে আমার সাথে ৷ তোর ক্যান্সারে আক্রান্ত মায়ের জন্য তিনমাস পর পর শরীরের রক্ত দিয়েছি ৷ আমার টিফিনের টাকা দিয়ে তোর কলেজের ফি দিয়েছি ৷আদনান ভাইয়ের যখন চাকরি ছিল না ৷ তখন নিজের জমানো টাকা দিয়েছি ৷ শুধু কলিজা কেটে দেই নি তোকে ৷ আর তুই আজ আমার সাথে প্রতারনা করলি হ্যা ৷ আমি খুন না করেও খুনি হয়েছি ৷ দোষ না করেও দুশ্চরিত্রা হয়েছি ৷ তাহলে তোকে বাচিঁয়ে রেখে কি করবো ৷”
সায়মার চোখে পানি ৷ রাই তার গলা শক্ত করে ধরে রাখায় প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে তার ৷ তবুও সে রাইকে বাধা দিল না ৷সায়মা অতি কষ্টে বলল,
“আমি এমনটা করতে চাই নি ৷ আমি এমনটা করতে বাধ্য ছিলাম ৷”
সায়মার চোখের পানি দেখে রাই তাকে ছেড়ে দিল ৷ কারন প্রিয় মানুষ গুলো যতই অন্যায় করুক ৷ আমরা তাদের চোখের পানি দেখতে পারি না ৷রাই সায়মার দিকে তাকিয়ে ভেতরে চলে গেল ৷ আর সায়মা গলা ধরে ঘনঘন শ্বাস নিতে লাগলো ৷
অন্যদিকে আবরার একটা ফাঁকা রাস্তায় দাড়িয়ে আছে ৷ হাত দিয়ে বারবার চোখের পানি মুছছে ৷ চোখের পানি গুলো আজ তার কথাই শুনছে না ৷ সবাই যে যার বাসায় চলে গেছে ৷ আবরার সাদিকে নিয়ে জনশূন্য রাস্তার পাশে দাড়িয়ে আছে ৷ সাদি আবরার কাধে হাত রেখে বলল,
“আমাকে শুরু থেকে বল কি হয়েছে আজ ৷ আমাকে না বললে আমি কি করে বুঝবো বলতো ৷”
আবরার মাথা নিচু করে বলল ,
“আজ রাত আট টায় আমার কাছে একটা কল আসে ৷ কলটা রনির ছিল ৷ আমি ওর নাম্বার চিনতাম না ৷ফোন রিসিভ করার পর জানতে পারি রনি কল করেছে ৷ রনি রাইয়ের নামে অনেক খারাপ কথা বলছিল আমাকে ৷ আমাদের মাঝে এক সময় খুব ঝগড়া লেগে যায় ৷ অতঃপর রনি আমাকে রাইয়ের বান্ধুবী সায়মার বাসায় যেতে বলে ৷ তার আর রাইয়ের মধ্যে থাকা অবৈধ কাজ নিজের চোখে দেখতে বলে ৷ রাই নাকি ওর সাথে থাকার জন্য পরিবারের থেকে আলাদা হয়েছে ৷ রনির সাথে কথা বলা শেষ করে আমি রাইয়ের বাসায় কল করি ৷ তারপর তাদের সব বলি ৷ সব শোনার পর তারাও আমার সাথে যেতে রাজী হয় ৷ আমি গাড়ী নিয়ে রাইয়ের বাসায় যাই ৷তারপর সবাইকে নিয়ে সায়মার বাসায় রওনা দেই ৷ সায়মার বাসায় যেয়ে আমরা নক করি ৷ একটু পরে সায়মা দরজা খুলে দেয় ৷ কিন্তু আমাদের দেখে চমকে যায় সে ৷ সায়মা আমাদের ঘরে ঢুকতে দিতে চাই ছিল না ৷ সায়মাকে সরিয়ে আমরা ভেতরে ঢুকি ৷ তারপর আমি সব ঘরে রাইকে খুজতে থাকি ৷ শুধু একটা ঘর ভেতর থেকে লাগানো ছিল ৷ আমি অনেক ধাক্কা দেই ঐ ঘরে ৷ ধাক্কা দেওয়ার একটু পর রনি দরজা খুলে বের হয় ৷ আমি ঘরের ভেতরে ঢুকে যাই ৷ঘরের ভেতর বিছানার উপরে রাই শুয়ে ছিল ৷ ওর জামা কাপড় একদম ঠিক ছিল না ৷আমি রেগে ওর হাত ধরে টেনে তুলি ৷ কিন্তু ও দাড়াতে পারছিল না ৷ একটা সময় আমাকে দেখে চোখ খুলে তাকায় ৷ তারপর সায়মা ভেতরে আসে ৷ সায়মার কথা অনুযায়ী রনি রাইয়ের সাথেই থাকে ৷ তারা বিয়ে ছাড়াই এক ঘরে থাকে ৷”
সাদি চুপচাপ বসে রইলো ৷ তারপর বলল,
“আমার মনে হচ্ছে কোথাও একটা সমস্যা আছে ৷ আবরার এত তাড়াতাড়ি কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না ৷সব সময় চোখে দেখা জিনিস সত্যি হয় না ৷ আমার মনে হয় আরেকটু ব্যাপারটা দেখা উচিত ৷”
আবরার হালকা হেসে বলে ,
“এখনো তুই রাইয়ের সাপোর্টে কথা বলবি সাদি ৷”
“হ্যা বলবো ৷ কারন রাই এই সব করতেই পারে না ৷ একটা মানুষ চোখের পলকে এভাবে বদলে যায় না আবরার ৷ আমাদের বুঝতে ভুল হচ্ছে ৷ নইলে আমাদের ভুল বোঝানো হচ্ছে ৷যাই হোক অনেক রাত হয়েছে ৷ এখন বাড়ী চল তুই ৷আমি দেখবো এই ব্যাপারটা ৷”
অন্যদিকে সায়মা রাইয়ের দরজা ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে ৷ কিন্তু রাই দরজা খুলছে না ৷ সায়মা রাইকে ডাকতে ডাকতে বলল,
রাই তুই কিন্তু উল্টা পাল্টা কিছু করবি না ৷ আমাকে যত ইচ্ছা বকা দে ৷ কিন্তু নিজের ক্ষতি করিস না তুই ৷ তোর দুইটা পায়ে ধরি আমি ৷ সায়মার কথার মাঝেই রাই দরজা খুলে বের হলো ৷ হাতে জামা কাপড়ের ব্যাগ ৷ সায়মা রাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এই রাই কোথায় যাচ্ছিস তুই এত রাতে ?তোর হাতে ব্যাগ কেন ?”
রাই সায়মার দিকে তাকিয়ে উপহাস করে বলল ,
“বেইমানের সাথে এক ছাদের নিচে থাকতে চাই না আর ৷ সবাই আমাকে ছুড়ে ফেলেছে ৷ আজকে তুই ফেলে দিলি ৷ তোকে আর কষ্ট করতে হবে না আমার জন্য ৷ আর একটু আগে করা ব্যবহারের জন্য মাফ করিস আমাকে ৷ আসছি আমি ৷ভালো থাকিস সব সময় ৷আমার কাছে টাকা নেই ৷ নইলে এই কয়েক দিনের থাকা খাওয়ার টাকা দিয়ে যেতাম ৷ চিন্তা করিস না একদিন পরিশোধ করে দেব ৷ আর যদি না দিতে পারি ৷ তাহলে ভিখারি হিসেবে মাফ করিস আমাকে ৷”
সায়মা রাইয়ের হাত জরিয়ে ধরে ৷ তারপর কাদঁতে কাদঁতে বলে ,
“রাই এভাবে চলে যেতে হয় না ৷ আমার সাথে ঝগড়া কর তুই ৷ কিন্তু এত রাতে যাস না ৷বাইরে অনেক খারাপ লোক আছে ৷ এত রাতে তুই যাস না ৷”
“কি করবে তারা আমাকে হ্যা ৷ ধর্ষন করবে আর তারপর মেরে ফেলবে ৷ এর থেকে বেশি কিছু করতে পারবে না ৷কিন্তু আজ যেই অপবাদ আমাকে তুই দিলি তা আমার হৃদয়ে লেগেছে ৷ দোয়া করি সুখে থাক ৷ তবে তোর মুখ যেন আর দেখতে না হয় ৷”
রাই কথা গুলো বলে ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে যায় ৷ আর সায়মা বসে থাকে দরজার কাছে ৷ কেন যেন চাইলেও কাছের মানুষদের ধরে রাখা যায় না ৷চাইলেও তাদের রেখে দেওয়া যায় না ৷
রাই চলে যেতেই সায়মা নিজের ঘরে যায় ৷ পাগলের মতো নিজের ফোনটা খুজতে থাকে ৷নিজের ফোনটা খুজে পেতেই সায়মা একজনকে ফোন করে ৷ কয়েক বার ফোন করার পরেও রিসিভ হয় না ৷ প্রায় দশবার কল করার পর ওপাশ থেকে কল রিসিভ করে বলল,
“এই বারবার কল করিস কেন ?”
সায়মা আকুতি ভরা কন্ঠে বলল,
“আপনাদের কথা মতো আমি সব করেছি ৷ এবার দয়া করে আমার স্বামিকে ছেড়ে দিন আপনারা ৷ সে ছাড়া আমার আর কেউ নেই ৷ আমি কাউকে কিছু বলবো না ৷ আমার স্বামীকে ভিক্ষা দিন আমাকে ৷ তাকে দয়া করে মারবেন না ৷ ”
ওপাশের লোকটা বিরক্ত হয়ে ফোন কেটে দেয় ৷ আর সায়মা ফ্লোরে বসে পরে ৷আজ সে নিজের স্বামীকে বাচাঁতে রাইয়ের জীবনটা নষ্ট করে দিল ৷ দেয়ালে যখন পিঠ লেগে যায় ৷ তখন মানুষ চাইলেও আর কিছু করতে পারে না ৷ সায়মার সাথেও ঠিক তাই হয়েছে ৷ স্বামীকে বাচাঁতে বন্ধুত্বকে কবর দিয়েছে আজ সে ৷
রাত ঘড়িতে বারোটার কাছাকাছি ৷ রাই নিঝুম রাস্তায় একা একা হাটছে ৷ চারপাশে কেউ নেই ৷ রাস্তায় থাকা কুকুর গুলো আজ নেই ৷ রাই প্রচন্ড ভয়ে ,ক্ষুদা আর পিপাসায় হাটতেই পারছে না ৷রাইয়ের কেন যেন মনে হলো কেউ তার পেছনে আছে ৷ কিন্তু যখন পিছনে তাকালো তখন আর কাউকে দেখতে পায় নি ৷এই মাঝ রাতে রাই কোথায় যাবে বুঝতে পারছে না ৷রাই দেখতে পেল সামনের রাস্তা দিয়ে একটা ভ্যান আসছে ৷ভ্যানে দুইজন বসে আছে ৷ রাইয়ের পাশ থেকে ভ্যান চলে গেল ৷ রাই ল্যাম্পপোস্টের নিচে একা দাড়িয়ে রইলো ৷হঠাৎ করেই অন্ধকার রাস্তায় রাইয়ের ভয় হতে লাগলো ৷
কিছুক্ষন পরে রাই দেখলো ঐ ভ্যান গাড়ীটা অপর রাস্তা থেকে এদিকেই আবার আসছে ৷ রাই খুব একটা পাত্তা দিল না ৷ একটু পর রাই দেখলো ভ্যানে থাকা লোক দুটো তার দিকেই এগিয়ে আসছে ৷ রাই নিজের ব্যাগ নিয়ে সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য হাটতে লাগলো ৷ কিন্তু লোক দুটো অতি দ্রুত রাইয়ে সামনে এসে দাড়ালো ৷ রাই অনেকটা চমকে গেল এমনটা হওয়ায় ৷ ভ্যানে থাকা লোক দুটো তার পাশে দাড়ানো ৷ তাদের মুখে ভয়ংকর হাসি ৷ কেন যেন তাদের সুবিধা লাগলো না রাইয়ের কাছে ৷জনশূন্য রাস্তায় এভাবে দুইজন পুরুষের সামনে থাকা যেকোনো মেয়ের জন্য ভয়ের ৷ তাদের চোখের নজর অনেকটা আন্দাজ করে ফেলেছে রাই ৷ নিজের ব্যাগ বুকের সাথে শক্ত করে ধরে দৌড় লাগালো রাই ৷ লোক দুটোর মধ্যে একজন বলল,
“পাখি তো চইলা যাইতাছে ৷ ধর ওরে ৷ ”
রাই দৌড়ে বেশি দূর যেতে পারলো না ৷ ইটের সাথে আঘাত লেগে পরে গেল রাস্তায় ৷ দুর্বল শরীরে উঠে দাড়ানো এখন যেন যুদ্ধ জয় করা ৷ রাই সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে লাগলো ৷সে বুঝে গেছে আজ তার রক্ষা নেই পিশাচদের হাত থেকে ৷ কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না ৷ রাইকে লোক দুইটা ধরেই ফেললো ৷ আবছা অন্ধকারে রাই তাদের পৈশাচিক হাসি দেখছে ৷ নিজের ইজ্জত বাচাঁতে রাই হাত জোর করে বলল,
“দয়া করে আমাকে ছেড়ে দিন ৷ আমার ক্ষতি করবেন না ৷ আমি তো আপনাদের বোনের মতো ৷”
লোক দুটো রাইয়ের কথায় পাত্তা দিল না ৷ একজন বলল,
“ভাই তাড়াতাড়ি একে নিয়ে পাশের কাশবনে চল ৷ কেউ দেখে ফেললে বিপদ ৷ সুযোগ বারবার আসে না ৷”
অপরজন রাইয়ের কাছে আসতেই রাই চিৎকার করে মানুষ ডাকতে লাগলো ৷কিন্তু রাইয়ের ডাক কারো কানে গেল না ৷ পিশাচ দুটো রাইয়ের মুখ চেপে ধরলো ৷ রাইয়ের ওরনা ছিড়ে হাত বাধলো ৷ বাকি অংশ দিয়ে রাইয়ের মুখ বাধলো ৷ রাই নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেও বারবার ব্যর্থ হয়ে গেল ৷
চলবে