শ্রাবন_আধারে_তুমি_২,১৭,১৮

0
629

#শ্রাবন_আধারে_তুমি_২,১৭,১৮
#লেখিকক_আফরিন_ইসলাম
#পার্ট_১৭

রাই আস্তে আস্তে হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে এলো ৷বুকের ভেতর ভারি হয়ে এসেছে ৷রোদের প্রখর আলো চোখে পড়তেই রাইয়ের মাথা ঘুড়ে গেল ৷দুর্বল শরীরে হেটে চলাই যেন ভিষন কষ্টকর ৷রাই হাসপাতালের পাশের একটা দোকান থেকে এক বোতল পানি কিনে নিল ৷ রাই রাস্তার এক পাশে দাড়িয়ে নিজের মাথায় পানি ঢালতে লাগলো ৷ তারপর রাস্তার পাশে বসে পড়লো ৷ শরীরটা কেমন যেন ঠান্ডা হয়ে এসেছে রাইয়ের ৷হঠাৎ করেই কেউ একজন রাইয়ের ঘাড়ে হাত রাখলো ৷ রাই আস্তে আস্তে পেছনে তাকালো ৷ সাদিকে দেখে রাই মুচকি হাসলো ৷ সাদি রাইয়ের পাশে বসে বলল ,

“কেমন আছো রাই ?কত দিন তোমার সাথে কথা হয় না ৷তোমার শরীরটা তো ভালো লাগছে না ৷”

রাই মাথা নিচু করে হাসে ৷রাই এক দীর্ঘ শ্বাস নেয় ৷ যেন ভিতরের গভীর ক্ষত গুলো বের করে দিয়েছে ৷সাদির দিকে তাকিয়ে রাই বলল ,

“আজকাল আমার সাথে কথা বলার কারো সময় আছে ৷ সবাই থাকে অট্টলিকায় ৷ আর আমার তো কুড়েঘরে থাকার সামর্থ নেই ৷ কোথায় তারা আর কোথায় আমি ৷ যাই হোক বাবাকে দেখে বেশ অসুস্থ মনে হলো সাদি ভাই ৷ আমার বাবা কি অসুস্থ ?”

রাইয়ের মুখে এমন কথা সাদি আশা করে নি ৷ বেশ অদ্ভুত আচরন করছে আজ রাই ৷সাদি রাইয়ের কথার জবাব দিয়ে বলল ,

“একটু আগেই তো বললে সে তোমার বাবা নয় ৷এখন আবার তার কথাই জিজ্ঞাসা করছো ৷ব্যাপারটা কিন্তু বেশ অদ্ভুত ৷”

সাদির দিকে তাকিয়ে রাই বলল,

“সম্পর্কের অবনতি হলে আমরা চাইলেই প্রিয়জনকে অপমান করতে পারি ৷ কিন্তু আমরা চাইলেই আমাদের প্রিয়জনদের অস্বীকার করতে পারি না ৷ আমরা চাইলেই তাদের প্রতি প্রচন্ড ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারি না ৷ হাজারটা কটু কথায় তাদের অপমান করতে পারি ৷কিন্তু অপর মানুষটার প্রতি তীব্র অনুভূতি অস্বীকার করতে পারি না ৷ আমার বাবা হয়তো আমাকে যা ইচ্ছে বলছে ৷ এখন হয়তো অনেক বেশি ঘৃনা করে ৷ কিন্তু এখনো কোথাও না কোথাও আমাকে সে আগের মতোই ভালোবাসে ৷আমি যখন বাবাকে বলেছি তার মেয়ে মরে গেছে ৷ তখন স্পষ্ট তার চোখে আমি পানি দেখেছি ৷ আমরা তাদের মৃত্যুতেই কাঁদি ৷ যাদের অনেক বেশি ভালোবাসি আমরা ৷ ”

রাই কিছুক্ষন চুপ থেকে আবার বলল ,

“আমার নিষ্ঠুর বাবা কি সত্যি ভালো আছে সাদি ভাই ৷”

সাদি হতাশ কন্ঠে জবাব দেয় ৷

“কাকুর শরীরটা ভালো নেই খুব একটা ৷ কিছুদিন আগে বুকের ব্যাথা বেড়ে গিয়ে ছিল ৷ এখন আগের মতো আর হাটাচলা করতে পারেন না ৷”

রাই আবারো হাসে ৷ সাদি রাইয়ের হাসার কারন খুজে পায় না ৷ রাই উঠে দারায় ৷ তারপর সাদির দিকে তাকিয়ে বলে ,

“আজ তাহলে আসি সাদি ভাই ৷ আমার সাথে আপনার থাকাটা ঠিক না ৷ ভালো থাকবেন ৷”

রাই কথাটা বলে হাটা শুরু করে ৷ঠিক তখনই সাদি বলল ,

“আবরার খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করছে রাই ৷ ওর জন্য মেয়ে দেখা হচ্ছে ৷”

রাই থমকে যায় ৷ পাথরের মতো দাড়িয়ে থাকে ৷ কিছুক্ষন পর পিছনে ফিরে রাই বলল ,

“আমি এত দিন জানতাম সময়ের সাথে নাকি মানুষ বদলায় ৷ তাই বলে ভালোবাসার মানুষকে বদলে ফেলতে হয় জানতাম না ৷ যে মাঝ পথে ছেড়ে চলে যায় ৷ সে ভালো থাকার জন্যই চলে যায় ৷ আর আমি আপনার বন্ধুকে অনেক ভালোবাসি ৷ তাই তাকে সুখে দেখতে চাই ৷ তার পরবর্তী জীবনের জন্য শুভেচ্ছা ৷তাকে বলে দিবেন তার প্রতি ভালোবাসা এই জীবনে কমবে না আমার হৃদয় থেকে ৷ শুধু তাকে নিয়ে হাজারটা বসন্ত পার করে দেওয়ার ইচ্ছেটা মরে যাবে ৷ কিন্তু তাকে নিয়ে অপূর্ন স্বপ্ন দেখা থামবে না এই ছোট জীবনে ৷ সে আমার না হোক ৷ কিন্তু অন্য কারো গল্পে ভালো থাকুক ৷ আমি না হয় দূর থেকেই ভালোবেসে গেলাম মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ৷”

রাই কথা গুলো বলে হাটা শুরু করে ৷ আর একবারের জন্য পিছনে ঘুড়ে তাকায় না ৷ সাদি অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে ৷ মেয়েটা আজকাল বড়দের মতো কথা বলে ৷ দুইদিন আগেও যেই মেয়েকে কিছু বলার আগেই কেঁদে দিতো ৷ যেই মেয়েটার চোখে আবরারকে পাওয়ার এক আকাশ স্বপ্ন ছিল ৷ সেই মেয়েটাই আজ আবরারকে অন্য কারো গল্পে সুখী দেখতে চায় ৷ সাদি কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে রাইয়ের চলে যাওয়ার দিকে ৷ তারপর ধীর পায়ে হাসপাতালের ভেতর চলে যায় ৷

আধা ঘন্টায় কফিশপে পৌছে যায় রাই ৷ তারপর দুর্বল শরীর নিয়েই কাজ করতে থাকে ৷বেঁচে থাকার জন্য এই কাজটা রাইকে এখন করতেই হবে ৷রাই চায় না মালিক তার উপর রাগ করুক ৷সারাদিন কাজ করার পর সন্ধ্যা ছয়টার দিকে রাইকে ছুটি দেওয়া হয় ৷রাই বাসায় যেতেই কুকুরটা তার কোলে ঝাপিয়ে পরে ৷ রাই ওকে কোলে তুলে নেয় ৷ কুকুরটা রাইয়ের ঘাড়ে মাথা রাখে ৷ রাই ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় ৷তারপর বলে ,

“আজ আমাকে এত ভালোবাসা কেন দেখানো হচ্ছে হুমম ৷কাজ থেকে মাত্র এসেছি ৷ বাসায় আসতেই এভাবে জরিয়ে ধরলে হবে ৷ এখন আমি ফ্রেশ হবো ৷ তাই সরে যাও এখন ৷রাই কুকুরটাকে সরিয়ে দেয় ৷ তারপর ফ্রেশ হতে চলে যায় ৷ফ্রেশ হয়ে ডাল আর চাল দিয়ে কোনো রকম খিচুড়ি রান্না করে ফেলে রাই ৷তারপর কুকুরটাকে একটা রুটি খেতে দেয় ৷ আর নিজে আধা প্লেট খিচুড়ি খেয়ে নেয় ৷ কারন যেই পরিমান খিচুড়ি রাই রান্না করেছে ৷ তাতে করে পেট ভরে খাওয়া যাবে না ৷ আর পেট ভরে খেতে গেলে কাল সকালে না খেয়ে থাকতে হবে ৷ তবুও রাই নিজের ভাগ্যকে মেনে নিল ৷রাইয়ের সাথে থাকা মেয়ে দুটো রাইকে তেমন পছন্দ করে না ৷ আর এর কারন যে কুকুরটা তা সে ভালো করেই জানে ৷তবুও রাই এই অবুঝ পশুটাকে ছাড়বে না ৷ কারন দিনশেষে মানুষকে বিশ্বাস করে শুধু ঠকেছে রাই ৷ কিন্তু এই অবলা প্রানীটাই তাকে একদিন বাচিঁয়ে ছিল দুইটা জানোয়ারের হাত থেকে ৷ যাদের কথা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না ৷

রাত ঘড়িতে দশটা ৷কেন যেন ঘরের ভিতর রাইয়ের ভালো লাগছে না ৷ ভিতরে চেঁপে রাখা আগুন যেন দাউ দাউ করে বেড়ে চলেছে ৷ রাই নিজেকে শক্ত রাখতে চায় ৷ বুকের ভেতর দাফন করতে চায় কষ্ট গুলো ৷রাই নিজের চুল গুলো একটা রাবার দিয়ে আটকে নেয় ৷ তারপর নিজের মনকে শান্ত করা জন্য ঘর থেকে বেড়িয়ে যায় কুকুরটা সাথে নিয়ে ৷ ব্যস্ত শহরের রাস্তা ধরে রাই এগিয়ে চলে ৷ ব্যস্ত শহরে লক্ষ কোটি মানুষের বাস ৷ কিন্তু এত মানুষের মধ্যে তার আপন মানুষ গুলোকে নিজের বলে দাবি করতে পারে না রাই ৷রাইয়ের সাথে ধীর পায়ে এগিয়ে চলে কুকুরটা ৷ যেন রাইকে পাহারা দেওয়া তার কাজ ৷ রাই ব্যস্ত রাস্তা পার করে ৷ কুকুরটাকে সাথে নিয়ে হাইওয়ের উপরে হাটতে থাকে ৷ এখানে মানুষের যাতায়েত নেই ৷ একটু পর পর একটা করে গাড়ী যাচ্ছে ৷ বেশ নির্ঝন হাইওয়ে ৷ কিন্তু রাইয়ের ভয় করে না ৷ কারন জীবনে যা কিছু হারিয়ে ফেলার ভয় ছিল ৷ তার সব কিছু হারিয়ে গেছে ৷ এখন শুধু প্রানহীন শরীরটা বেচেঁ আছে ৷ রাই হাইওয়ের পাশে থাকা ছোট পথ ধরে হাটছিল ৷ কিন্তু হঠাৎ করেই রাই চমকে ওঠে ৷ চোখের সামনে কাউকে আত্মহত্যা করতে দেখে রাইয়ের ভেতরে কেঁপে ওঠে ৷ একটু দূরেই কেউ একজন হাইওয়ের পাশের থাকা রেলিংয়ের উপর দাড়িয়ে আছে ৷ উপর থেকে একবার পরে গেলে মৃত্যু নিশ্চিত ৷ রাই শরীরের সব শক্তি দিয়ে দৌড় দেয় ৷ লোকটাকে সে মরতে দেবে না ৷লোকটা রেলিংয়ের উপর থেকে লাফ দেবে ৷ ঠিক ঐ সময় রাই যেয়ে তার পা ধরে ফেলে ৷ তারপর চিৎকার করে বলে ,

“এই আপনি পাগল হয়ে গেছেন ৷ নামুন এখান থেকে ৷ আত্মহত্যা করতে এসেছেন কেন ?

লোকটা যেন বেশ বিরক্ত হলো রাইয়ের কথায় ৷লোকটা রাইকে কিছু বলা জন্য রাইয়ের দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেল ৷ রাই নিজেও যেন এই লোকটাকে আশা করে নি ৷ কারন এ আর কেউ নয় ৷ এটা তো সেই অচেনা লোকটা ৷ যে তাকে ধাক্কা দিয়েছিল ৷ আবার আজকে সকালে তাদের কফিশপে কফি খেয়েছে ৷রাই লোকটাকে দেখেই চিৎকার করে বলল ,

“আপনার কি ঝামেলা করতে বেশ ভালো লাগে ৷নামুন এখান থেকে ৷পাগল লোক কোথাকার ৷”

লোকটা বেশ বিরক্ত গলায় বলল,

“আপনি আমার পা ছাড়ুন ৷ নইলে কিন্তু খুব খারাপ হবে ৷”

“ছাড়বো না আমি ৷ আপনি নিচে নামুন ৷ছেড়ে দেওয়ার জন্য ধরি নি আমি ৷নামুন নিচে ৷”

রাই লোকটার পা ধরে নিচের দিকে টানতে থাকে ৷ একটা সময় লোকটা ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে না ৷ আর ঠাস করে নিচে পরে যায় ৷ নিচেই পরেই সে মা বলে চিৎকার করে ৷তারপর রাইয়ের দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলে ,

“আমাকে এখানে ফেলে দিলেন কেন ৷ আপনার জন্য কত ব্যাথা পেলাম আমি ৷”

রাই বেশ রাগী গলায় জবাব দিল ,

এতটুকু ব্যাথা সহ্য করতে পারেন না ৷ আবার সুইসাইড করতে এসেছেন ৷ হাইওয়ের উপর থেকে পড়লে এতক্ষনে সোজা উপরে থাকতেন ৷ হাত ,পা, মাথা একটা ঠিক থাকতো না এতক্ষন ৷এখন বাজে কথা বাদ দিয়ে উঠে পড়ুন ৷

রাই লোকটাকে উঠতে সাহায্য করে ৷তারপর লোকটার পাশে
পাশে বসে শান্ত গলায় বলল,

“অবুজের মতো এখানে উঠে ছিলেন কেন ?পরে গেলে কি হতো জানেন !”

লোকটা রাইয়ের কথার জবাব দেয় না ৷ নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে ৷

রাই লোকটার দিকে তাকিয়ে আবারো বলল,

আম কি আপনার ?

এবার লোকটা জবাব দিয়ে বলল,

” আমার নাম সোহরাব হাসান ৷”

“আপনার বাড়ীতে কে কে আছেন ?”

“মা,বাবা ,দাদু আর আমি ৷”

“এখানে আত্মহত্যার মতো এত বড় পাপ কেন করতে এসেছেন হ্যা ?”

সোহরাবের চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরে ৷সে চোখের পানি মুছে বলল,

আমি একজনকে খুব ভালোবাসি ৷দশ বছর আমাদের সম্পর্ক ৷ পড়ালেখা শেষ করেছি ৷ কিন্তু চাকরি পাচ্ছি না ৷ তাই কয়েক দিন আগে সে আমায় ছেড়ে চলে গেছে ৷ তাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছি ৷ কিন্তু সে থাকে নি ৷চলে গেছে আমাকে ছেড়ে ৷ আজ তার অনেক বড় লোকের ঘরে বিয়ে হয়েছে ৷কিন্তু আমি তাকে ছাড়া থাকতে পারবো না ৷ আজ কয়েক দিন ধরে তাকে অনেক বার বোঝাতে চেয়েছি ৷ কিন্তু সে শোনে নি আমার কথা ৷ আমার পরিস্থিতি না পারছি কাউকে বলতে আর না পারছি সহ্য করতে ৷তাই আজ সুইসাইড করতে এসেছি ৷

রাই সোহরাবের কথা শুনে আকাশের দিকে তাকায় ৷ চোখ দুটো পানিতে টলমল করছে ৷তবুও ঠোঁটের কোনে একটু হাসি রেখে রাই সোহরাবকে বলল ,

“আপনার গল্পটা একটা জ্বরের রোগীর মতো ৷ আর আমার গল্পটা একটা ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর মতো ৷ আপনি জ্বরের জন্য মৃত্যূকে বেছে নিলেন ৷ আর আমি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েও বেঁচে থাকার লড়াই করে যাচ্ছি ৷ আপনি জ্বরের কষ্ট গুলো আমায় শুনালেন ৷ আর আমি ক্যান্সারের কষ্ট গুলো চাঁপা রেখে দিলাম ৷ ব্যাপারটা কিন্তু বেশ হাস্যকর ৷”

সোহরাব বলল,” আপনার কথার মানে বুঝলাম না৷”

“সব কথার মানে জানতে নেই ৷ কিছু কথা ব্যাখ্যাহীন থাকাই ভালো ৷একটা কাজ করুন ৷আপনার বাসায় কল করুন ৷ তারপর বলুন আপনার এক্সিডেন্ট হয়েছে ৷”

সোহরাব রাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

“কি সব বলছেন ৷আমি আপনার কথায় মিথ্যা কেন বলবো ৷”

“যা বলছি তাই করুন ৷ প্রশ্ন করবেন না কোনো ৷”

সোহরাব রাইয়ের কথা মতো বাসায় কল করলো ৷ সোহরাবের মা ফোনটা ধরার পর সোহরাব বলল তার এক্সিডেন্ট হয়েছে ৷ এটা শুনেই সোহরাবের মা চিৎকার করে কাদঁতে লাগলেন ৷ সবাইকে ডাকতে লাগলেন চিৎকার করে ৷ সোহরাব নিজেও অবাক ৷ কারন তার মা বরাবরের মতো অনেক কঠোর ৷ তার মা এভাবে কাদঁছে এটা যেন কল্পনা ৷সোহরাব তার মাকে কিছু বলবে তার আগেই রাই ফোনটা নিয়ে গেল ৷ তারপর ফোনটা অফ করে দিল ৷

রাইয়ের এমন কাজে সোহরাব বেশ বিরক্ত হয়ে বলল,

“সেই কখন থেকে একটার পর একটা ঝামেলা করছেন ৷ ফোনটা দিন আমাকে ৷”

সোহরাবের কথার মাঝেই রাই বলল,

“আপনার মা এক্সিডেন্টের কথা শুনে কাদঁছে ৷ আর তাতেই আপনি সহ্য করতে পারছেন না ৷ তাহলে আপনি মরে গেলে যখন আপনাকে ভালোবাসা প্রত্যেকটা মানুষ কাদঁবে ৷ তখন কি করবেন আপনি ৷ আপনার মা এক্সিডেন্টের কথা শুনেই ভেঙ্গে পড়েছেন ৷ কিন্তু যখন তার কানে আপনার মৃত্যু সংবাদ যেত ৷ তখন তার কি হতো একবার ভেবে দেখুন ৷ যে চলে যেতে চায় ৷ তাকে যেতে দেওয়া উচিত ৷ ভালোবাসার মানুষটা থাকুক অন্যকারো সম্পূর্ন গল্প হয়ে ৷ আমার আর তার গল্পটা না হয় অসম্পূর্নই থাকুক ৷দোষ কি তাতে ৷ পৃথিবী শুরু থেকে এই পর্যন্ত সমস্যা আসে ৷ তাই বলে পৃথিবী ছেড়ে কেন যাবো ৷জীবনটা একটা ঘরের মতো ৷ যেখানে অন্ধকার আপনাকে গ্রাস করতে চাইবে ৷ আপনি অন্ধকারকে মুচকি হাসি দিয়ে গ্রহন করবেন ৷ তারপর ঘরের ছোট জানলাটা খুলে দেবেন ৷ দেখবেন চাঁদের রুপালী আলোয় পুরো ঘর ঝলমল করছে ৷ অন্ধকার নেই কোথাও ৷ পুরো ঘর ভালোবাসার চাদরে জড়িয়ে আছে ৷ ঠিক তেমনি জীবনে বিপদ আসবে ৷ জীবনে ভুল মানুষ আসবে ৷ তাই বলে সঠিক মানুষ গুলোকে ছাড়া যাবে না ৷অনেক রাত হয়েছে ৷ এখন বাড়ী চলে যান ৷ বাড়ীতে যেতেই দেখবেন আপনার মা আপনাকে ধরে হাউমাউ করে কাদঁছে ৷ আপনার পুরো গায়ে স্নেহের হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ৷আপনার গালে ,চোখে চুমু দিচ্ছে ৷আবার যখন জানবে আপনি মিথ্যে বলেছেন ৷ তখন আপনার বাবা রাগ দেখিয়ে একটা চড় মারবে ৷আপনার দাদু আস্তে করে বলবে এমন ভয় আর দেখিও না দাদু ভাই ৷ তারপর বলবে দিন দিন দুষ্টু হচ্ছো তুমি ৷তখন যদি আপনার মনে হয় আপনার মরে যাওয়া উচিত তাহলে সত্যি আপনা মরা উচিত ৷”

রাই সোহরাবকে তার ফোনটা দিয়ে দেয় ৷তারপর তার পাশ থেকে উঠে হাটতে শুরু করে ৷ কিছুটা পথ যেয়ে রাই পেছনে ঘুড়ে তাকায় ৷ তারপর আবারো বলে ,

“জীবন একটা নাট্যমঞ্চ ৷আমরা সবাই এখানে অভিনেতা এবং অভিনেত্রী ৷গল্পের মাঝ পথে ছন্দের পতন হবে ৷ তাই বলে আপনি যদি মঞ্চ থেকে নেমে যান ৷ তাহলে আপনার সাথে জড়িয়ে থাকা সব অভিনেতাদের অভিনয় শেষ হবে ৷গল্প যেমনই হোক ৷ গল্পের শেষটা যেমনই হোক ৷ গল্প আনন্দের হোক বা দুঃখের হোক ৷মঞ্চ থেকে নামা যাবে না ৷গল্পের শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে হবে ৷তবেই আপনার অস্তিত্ব থাকবে ৷”

চলবে

#শ্রাবন_আধারে_তুমি_২
#লেখিকা_আফরিন_ইসলাম
#পার্ট_১৮

সকাল ঘড়িতে দশটা ৷ রাফীর জ্ঞান ফিরেছে একটু আগে ৷জ্ঞান ফেরার পর সবাই রাফীকে দেখতে গেছে ৷ কিন্তু রাইয়ের ভাবি নিজের ছেলেকে দেখতে যায় নি ৷ কাল থেকেই সে কারো সাথে কথা বলছে না ৷ কাল রাত থেকে কিছু খায় নি ৷ রায়হান অনেক বার রাফীকে দেখতে যেতে বলছে ৷ কিন্তু সে যায় নি ৷কাল থেকেই রাইয়ের ভাবি অন্যমনষ্ক হয়ে আছে ৷নিজের স্ত্রীকে মনমরা দেখে রায়হান তার পাশে যেয়ে বসলো ৷ স্ত্রীর কাঁধে হাত রাখতেই সে কেঁপে উঠলো ৷পাশে তাকিয়ে রায়হানকে দেখেই রাইয়ের ভাবি মুচকি হাসলো ৷ তারপর বলল,

“রায়হান তুমি এখানে কি করছো ? নাস্তা করেছো তুমি ?”

“নাস্তা তো অনেক আগে করেছি আমি ৷ কিন্তু কাল রাত থেকে তুমি তো কিছু খাও নি ৷ শরীর কি খারাপ লাগছে তোমার ৷”

“আমি ঠিক আছি ৷ আমার আবার কি হবে ৷ আচ্ছা রায়হান আমাদের ছেলেটা কেমন আছে ?”

“এখন একদম ঠিক আছে ৷ আমরা সবাই তো রাফীকে দেখে আসলাম ৷ কিন্তু তোমাকে কত করে ডাকলাম ৷ তবুও গেলে না কেন ? কি হয়েছে তোমার ?”

“আমার ভালো লাগছে না ৷ আচ্ছা রায়হান আমি যে তোমাকে সব সময় তোমার মা, বাবার থেকে আলাদা হতে বলি ৷ আমি যে তোমাকে রাইয়ের নামে বিচার দিতাম এর জন্য তোমার রাগ হতো না ৷ প্রতি মাসে তোমার থেকে বিনা হিসেবে টাকা নেই ৷ তোমার কি সন্দেহ হয় না রায়হান ৷”

স্ত্রীর কথায় মুচকি হাসে রায়হান ৷ স্ত্রীর মাথা নিজের কাঁধের উপর রেখে রায়হান বলে ,

“প্রত্যেকটা মেয়ে চায় তাদের একটা নিজের সংসার হোক ৷সবাই চায় স্বামী সন্তান নিয়ে একটু আলাদা থাকতে ৷ তাই তোমার ইচ্ছে গুলো অস্বাভাবিক না ৷ আর রাইয়ের নামে তুমি বিচার দিয়েছো এটা ঠিক ৷ তবে নিজের বোন হিসেবে তুমি বলতেই পারো ৷ তাতে কোনো ভুল নেই ৷ আর হ্যা টাকা রোজগার করি তোমাদের ভালো রাখতে ৷ নিজের মা ,বাবা ,ভাই ,বোন ,স্ত্রী ,সন্তানকে ভালো রাখতে ছেলেরা রোজগার করে ৷আমার রোজগার করা টাকা যদি তোমরা খরচ না করো তাহলে কে করবে ৷ আমার তো আপন বলতে তোমরাই আছো ৷ আর বলছো সন্দেহের কথা ৷ আমার টাকা আর তোমার টাকার মধ্যে পার্থক্য কি বলতে পারো ৷ হয়তো তুমি তোমার পরিবারেই মাস শেষে কিছু টাকা খরচ করবে ৷ সেখানে সন্দেহের কি আছে ৷ তোমার মা , বাবাকে আমার মা , বাবার থেকে আলাদা করে কখনো দেখি না ৷ তাই সন্দেহের প্রশ্ন আসতেই পারে না ৷”

রাইয়ের ভাবি স্বামীর দিকে অশ্রুভরা নয়নে তাকিয়ে থাকে ৷তারপর একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে বলে ,

“রাইকে কি ফিরিয়ে আনতে পারবে রায়হান ? বাবার সাথে একবার কথা বলে দেখ না ৷”

রায়হানের মুখের মুচকি হাসিটা গায়েব হয়ে যায় ৷ বিষন্ন কন্ঠে রায়হান জবাব দেয় ,

“জানি না বাবা কি করবে ৷ তবে আমার কিছু ভালো লাগছে না ৷ ব্যাপারটা নিয়ে আরো খোঁজ নেওয়া দরকার ছিল ৷ এখন দেখি কি করা যায় ৷ চলো তুমি এখন খেয়ে নেবে ৷”

অন্যদিকে আবরার তার বাবা মায়ের সামনে বসে আছে ৷ আবরার মা ,বাবা যে ছেলের প্রতি বিরক্ত তা বোঝাই যাচ্ছে ৷ আবরার মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আসে ৷ ছেলের এমন নিশ্চুপ থাকা আফজাল খানের সহ্য হলো না ৷ আফজাল খান বেশ রাগী গলায় আবরারকে বলল ,

“তোমার কথা আমি বুঝতে পারছি না আবরার ৷ তুমি ঐ দিন বলেছো আমরা যা করবো তুমি তাতেই খুশি ৷ আর আজ বলছো বিয়ে করবে না ৷ ঐ মেয়েটা তোমার মাথা নষ্ট করে ফেলেছে ৷ প্রথম থেকেই ঐ মেয়েকে আমাদের পছন্দ ছিল না ৷ কিন্তু তোমার জন্য তাকে মেনে নিয়ে ছিলাম আমরা ৷ তোমার ফুপু মেয়ে দেখেছে ৷ আমরা ঐ মেয়ের সাথেই তোমার বিয়ে দিতে চাই ৷ মেয়েটা রাইয়ের থেকে অনেক ভালো দেখতে ৷ দয়া করে আর ঝামেলা করো না তুমি ৷”

আবরার উঠে দাড়ালো ৷ তারপর মাথা নিচু করেই বাবাকে জবাব দিল ৷

“প্লিজ বাবা আমি এই ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাই না ৷ আমি বিয়ে করছি না ৷ আর তোমরা আমার বিয়ে নিয়ে চিন্তা করো না ৷আমি এভাবেই ভালো আছি ৷ আমার জন্য তোমাদের আর মেয়ে দেখতে হবে না ৷আমার কাজ আছে ৷ আমাকে এখন যেতে হবে ৷

আবরার তার বাবা,মায়ের কথা শোনার অপেক্ষা করলো না ৷ দ্রুত পায়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেল ৷ছেলের এমন কান্ডে আফজাল খান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন শুধু ৷

সময় ঘড়িতে সন্ধ্যা ছয়টা ৷ কফিশপে রাইয়ের কাজ শেষ ৷ রাই নিজের কাপড় পাল্টে শপ থেকে বেড়িয়ে গেল ৷ শপ থেকে পনেরো মিনিটের রাস্তা হেটে রাইকে যেতে হয় ৷ রাই রাস্তা পার হয়ে দ্রুত হাটতে লাগলো ৷কিন্তু হঠাৎ কেউ একজন চিৎকার করে বলল ,

“এই যে শুনছেন ৷ এই লাল জামা একটু দাড়ান ৷”

রাইয়ের গায়ে একটা লাল রংয়ের জামা ৷ রাই আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই ৷ তাই সে পেছনে ঘুড়ে তাকালো মানুষটাকে দেখার জন্য ৷ আর তাকাতেই অবাক হয়ে যায় ৷ একটু দূরেই সোহরাব ৷ সে রাইয়ের দিকে দৌড়ে আসে ৷ তারপর বলে ,

“আপনি জানেন একঘন্টা ধরে আমি এখানে দাড়িয়ে আছি আপনার জন্য ৷”

রাইয়ের মুখে বিরক্তির ছাপ ৷ রাই কপাল কুচঁকে বলল ,

“এভাবে রাস্তার মধ্যে ডাকার মানে কি ? আর আমি কি আপনাকে দাড়িয়ে থাকতে বলেছি ?”

লোকটা হালকা হাসে ৷ নিজের চুলে হাত বুলিয়ে সোহরাব জবাব বলল ,

“হুমম তা হয়তো বলেন নি ৷ কিন্তু আমাকে আপনার কাছে আসতে কিন্তু বাধ্য করেছেন ৷ আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলুন আপনি এত অদ্ভুত কেন ? আপনি বেশ অদ্ভুত রকম কথা বলেন ৷”

রাই সহজ ভাবেই বলল ,

“মানুষের জীবনটা যখন অদ্ভুত খেলায় মত্ত থাকে ৷ তখন তার ভেতর থেকেই অদ্ভুত রকম কথার উৎপত্তি হয় ৷যাই হোক আমাকে যেতে হবে ৷”

রাই আবারো হাটতে শুরু করে ৷ সোহরাব রাইয়ের পেছনে হাটতে আরম্ভ করে ৷ তারপর বলে ,

“আপনি কাল আমাকে বেচেঁ থাকার এক বিস্তর বর্ননা দিয়েছেন ৷ জীবনের গল্পে পাওয়া না পাওয়ার পরেও টিকে থাকতে বলেছেন ৷ আজ কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই আপনাকে ৷ আপনি কি উত্তর দেবেন ?উত্তর না পেলে আমি শান্তি পাবো না ৷”

রাই পেছনে ঘুড়ে তাকায় ৷কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে রাই বলল ,

“উত্তর জানা থাকলে নিশ্চয়ই বলবো ৷ একবার বলেই দেখুন ৷”

সোহরাবের চেহারায় হতাশা বিরাজ করছে ৷ সে আক্ষেপ ভরা কন্ঠে রাইকে বলল ,

“আচ্ছা আমার ভালোবাসার মানুষটা আমার কেন হলো না ৷ তাকে তো নিজের থেকে কম ভালোবাসি নি ৷ তবুও সে কেন আমায় বোঝে নি ৷ তাকে তো নিজের থেকে কখনো আলাদা করি নি ৷ তার জন্য নিজেকে যোগ্য করার সব চেষ্টা করেছি ৷ যখন যা বলেছে তাই করেছি আমি ৷ তাকে কখনো আমার শূন্যতা অনুভব করতে দেই নি ৷ তবুও কেন ছেড়ে গেছে আমাকে বলতে পারেন ৷”

রাই মুচকি হাসে সোহরাবের কথায় ৷ তারপর আস্তে আস্তে হাটতে থাকে ৷খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে রাই বলল,

“আপনাকে যে ভালোবাসবে তার সামনে কখনো আলাদা ভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে হবে না সোহরাব সাহেব ৷ তার সামনে কখনো নিজের ভালোবাসার অনুভূতি প্রকাশ করতে হবে না ৷ মানুষটা আপনার চোখে এমনিতেই তার প্রতি এক আকাশ ভালোবাসা দেখতে পাবে ৷ আর যে আপনাকে ভালোবাসবে না ৷ তার সামনে নিজেকে যতই প্রকাশ করুন না কেন ৷ মানুষটা দিনশেষে আপনাকে বুঝবে না ৷ আপনার ভালোবাসা তার কাছে ঢং মনে হবে ৷আর একটা সময় পর সে আপনার হবে ৷ জানেন তো সোহরাব সৃষ্টিকর্তার কাছে যখন মোনাজাত তুলবেন ৷ তখন অপর মানুষটা যদি আপনার মোনাজাতে থাকে ৷ তাহলে আপনি তাকে পাবেন না ৷ কারন তার মোনাজাতেও আপনাকে থাকতে হবে ৷ নয়তো সৃষ্টিকর্তা আপনাদের এক করবে না ৷ দুইজন যখন স্রষ্টার কাছে একে ওপরকে চাইবেন ৷ ঠিক তখনই আপনাদের ভালোবাসার মিলন ঘটবে ৷ সব সময় ভালোবেসে ওপর মানুষটাকে আটকে রাখা যায় না ৷ মাঝে মাঝে তাকে দূরে সরিয়ে দিতে হয় ৷ যেন অপর মানুষটা আপনার শূন্যতা অনুভব করতে পারে ৷ সে যেন আপনি নামক নেশার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারে ৷ ভালোবাসার মানুষটাকে আটকে রাখা যায় না ৷ তাকে মুক্ত করে দিতে হয় ৷ যদি সে আপনার সাথে থেকে যায় ৷ তবেই সে আপনার নিজের মানুষ ৷নয়তো সে আপনার নয় ৷ দিনশেষে সেই আমাদের নিজের মানুষ হতে পারে ৷ যে হাজার স্বাধীনতার মাঝে আপনি নামক শিকলে নিজেকে আটকে রাখতে চায় ৷ আপনি হয়তো আপনার শূন্যতা অপর মানুষটাকে বুঝতে দেন নি ৷ তাই দিনশেষে তার মোনাজাতে আপনি জায়গা করতে পারেন নি ৷আর এর জন্যই মানুষটা আপনার হয় নি ৷”

সোহরাব রাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল ,

“সে বলেছিল আমাকে ছাড়া সে বাচঁবে না ৷ তাহলে আজ কেন আমি মৃত্যু যন্ত্রনা ভোগ করবো ৷ তাকে ছাড়া আমি কেন অন্ধকার রাতে কাদঁবো বলতে পারেন ৷সে তো একদম ভালো আছে আমাকে ছাড়া ৷ এমনটা হওয়ার তো কথা ছিল না ৷”

“দুনিয়াতে কেউ কারো জন্য মরে না সোহরাব ৷ মানুষ শুধু অপর মানুষটার শূন্যতাকে মেনে নিতে পারে না ৷ ধরুন আপনার হাত কেঁটে গেছে ৷ আপনি ঐ সময় প্রচুর কষ্ট পাবেন ৷ হাতের ব্যাথায় কিছু করতে পারবেন না ৷ কিন্তু কয়েক দিন পর হাতটা ঠিক হয়ে যাবে ৷ ঠিক এভাবেই আমরা অনেক প্রিয়জনদের শূন্যতা ভুলে যাই ৷কিন্তু তার জন্য সময় দরকার ৷ হাতের কাঁটা স্থান যেমন অন্য কোষ ঠিক করে দেয় ৷ ঠিক তেমনি নতুন মানুষের আগমন পুরনো মানুষটাকে ভুলিয়ে দেয় ৷ ছোট জীবনের এই আসা যাওয়ার পাথে অনেকের সাথে আমাদের দেখা হয় ৷ কারো সাথে সারা জীবন থাকার প্রতিশ্রুতি দেই আমরা ৷ কাউকে নিয়ে সারা জীবন বাচঁতে চাই ৷ কিন্তু সময়ের সাথে তাকেই আমরা ভুলে যাই ৷ তাকেই আমরা ছুড়ে ফেলি ডাস্টবিনে ৷আমরা মানুষ থেকে যাই ৷ আমাদের ছোট মনে ভালোবাসা থেকে যায় ৷ কিন্তু ভালোবাসার নামক ছোট রাস্তার পরিবর্তন হয় সময়ের সাথে ৷ আর এই পরিবর্তন বিচ্ছেদের রূপ নেয় ৷”

সোহরাব নিজের চোখের পানি মুছে আবারো বলল,

“তাহলে ভালোবাসা কি বলতে পারেন ?”

রাই রাস্তার পাশে দাড়িয়ে চলন্ত গাড়ী দেখতে থাকে ৷তারপর উত্তরে বলল ,

“আমরা অনুভূতির দাস সোহরাব সাহেব ৷ আমাদের যার প্রতি যত বেশি অনুভূতি কাজ করে ৷ আমরা ঠিক ততটাই অপর মানুষকে ভালোবাসি ৷জানেন সোহরাব ভালোবাসা এক গভীর অনুভূতির নাম ৷ আমরা কাউকে কখনো ভালোবাসি না ৷ আমরা কখনো নিজেকে ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসি না ৷ আর আমরা যেটাকে ভালোবাসা বলি ৷ সেটাও আসলে ভালোবাসা না ৷ যদি একটা মানুষ আপনার কাছে থাকে ৷ আপনার খুব ভালো লাগে ৷ ঐ মানুষটার সব কিছুই আপনার ভালো লাগে ৷ আবার ঐ মানুষটা যখন দূরে থাকে ৷ তখন বুকের ভেতর এক তীব্র ব্যাথা অনুভব হয় ৷ ঐ মানুষটা হাসলে আপনার মুখে হাসি ফোঁটে ৷ ঐ মানুষটা কোনো সমস্যায় থাকলে আপনার মাথা ঠিক থাকে না ৷ আর এটাকে আমরা ভালোবাসা বলি ৷ কিন্তু একটা জিনিস খেয়াল করে দেখেছেন ৷ ঐ মানুষটার সাথে আপনার ভালো থাকা জড়িয়ে আছে ৷ তাই আপনি ঐ মানুষটাকে বেছে নিয়েছেন ৷ এখানে কিন্তু পুরোটাই আপনার স্বার্থ ৷

রাই আবার হাটতে শুরু করে ৷ পেছন থেকে সোহরাব চিৎকার করে বলল,

“তবে কি ভালোবাসা বলে কিছু নেই ৷”

রাই পেছনে ঘুড়ে মুচকি হাসে ৷ তারপর বলল,

“সেটা বোঝার জন্যই তো আমরা ভালোবেসে যাই ৷”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here