#ষড়রিপু,বিংশ পর্ব
#কঠোরভাবে_প্রাপ্তবয়স্কদের_জন্য
বিশাল বড় বেডরুমে একাকী বসে আছে রিক্ত। কিছুক্ষণ আগেই মারিয়া ফ্যামিলির ল ইয়ারের সাথে ছোটখাটো তর্কবিবাদ ঘটে গিয়েছে ওর।
স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বেচে দিয়ে ডরোথির স্বামী কেন চলে যেতে চাইছে, সেটা ওনার কাছে মোটেই স্পষ্ট নয়… তাছাড়া এমন ভাবে সম্পত্তি বিক্রি করে অন্যত্র চলে যাওয়া বড্ড দৃষ্টিকটু, উপরন্তু রানিং ইনভেস্টিগেশনের মুহূর্তে এই পদক্ষেপে রিক্ত ঝামেলার মধ্যে পড়তে পারে, বলাই বাহুল্য।
“ঝামেলার কি বাকি আছে কিছু!” একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলো রিক্ত। সম্পত্তি হস্তান্তর করার জন্যে বুদ্ধি খাটিয়ে স্ত্রীকে মেরে ফেললেও ঝামেলা যে পিছু ছাড়েনি ওর। ইনভেস্টিগেটরের হাতে মার্ডার ওয়েপন এসে যাওয়ার পাশাপাশি ডাক্তারের ক্রমাগত ব্ল্যাকমেইলিং ওর জীবনটা অতিষ্ঠ করে তুলেছে।
“কারবারে কারোর ওপর কখনো বিশ্বাস করতে নেই…” প্রয়াতা স্ত্রীয়ের কথাগুলো মনের মধ্যে একবার আউরে নিলো রিক্ত। তারপর চোখ রাখলো সামনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রপার্টির পেপারে। সর্বমোট সাড়ে ছয়শো কোটির অর্থ-সম্পদ রেখে গেছে ডরোথি ওর নামে। মেক্সিকান ব্যাংক, সুইস ব্যাংক মিলিয়ে মিশিয়ে টাকার পরিমাণটা নেহাত কম নয়।
ভারতীয় মূল্য হিসেবে দাঁড়াবে চব্বিশো কোটির কাছাকাছি, উপরন্তু রিয়েল এস্টেটটা বিক্রি করলে আরো হাজার কোটি।
“সাত রাজার ধন বোধ হয় এটাকেই বলে!” হিসেব কষতে কষতে আপন মনে বলে উঠল রিক্ত। তারপর চোখ রাখলো নিজের মেডিকেল রিপোর্ট এর দিকে। লাল বর্ণের গোটা গোটা হরফ লেখা
“পজিটিভ” শব্দটা জানান দিচ্ছে ওর শারীরিক অবস্থার অবনতি। সেদিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আপন মনে বলে উঠল রিক্ত,”তোর মত বেইমানকে পাঁচ পেসো দেওয়াও উচিত হয়নি। এবার বুঝতে পারবি চোরের উপর বাটপারির ফল কেমন হয়…তোর শেষদিন এসে গিয়েছে!”
সমস্ত সাক্ষী,প্রমাণ লোপাট করার পরে সম্পত্তি বিক্রি করে এদেশ ছেড়ে পালানোই যে রিক্তর মূল উদ্দেশ্য তা বলাই বাহুল্য।
“তাহলে গ্রীন কার্ডটা কোনো কাজেই এলোনা আমার।” টেবিলের উপর ছড়ানো-ছিটানো ফাইলগুলোর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো রিক্ত।
এমন সময় মুঠোফোনটা সশব্দে নিজের অস্তিত্ব জানান দিতেই বাস্তবের মাটিতে ফিরে এলো রিক্ত। ডিজিটাল অক্ষরে ফুটে ওঠা নামটা পড়া মাত্র ক্রোধরিপুতে শরীরটা যেন জ্বলে উঠলো ওর, কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনা করে নিজেকে শান্ত ভালোমানুষের মুখোশে ঢেকে নিলো রিক্ত। চোয়ালটা শক্ত করে হ্যান্ডসেটটা মুঠোবন্দী করে নিলো সে, তারপর কল রিসিভ করে বলে উঠল,”ডাক্তারবাবু আপনার চিন্তার কোন কারণ নেই। টাকা রেডি আছে…”
“রেডি না করে উপায় আছে রিক্তবাবু? প্রাণ যায় যাক, পঞ্চাশ পেসো আমার থাক!” অদ্ভুত সুর করে বলে উঠলেন তিনি রিক্তকে।”তাহলে বাড়িতেই ডিলটা হয়ে যাক! বেফালতু আউটসাইডে যাওয়া মানে রিস্কি হয়ে যায় ব্যাপারটা..”
“বাড়িতে! কিন্তু…”
“কেন? অসুবিধে আছে কিছু?” গলাটা ততোধিক মিষ্টি করে জবাব দিলেন ডাক্তারবাবু।
“না,না। আপনি চলে আসুন।”
খানিকটা দোনামোনা ভাব থাকলেও রিক্ত বুঝতে পারল বাড়িতে ডাকলেই বেশি সুবিধা। আউটসাইডে এইসব হাইপ্রোফাইল ডিলিং হলে ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
“উপরন্তু লাশটা লুকিয়ে রাখাও চাপের হয়ে যাবে, তার থেকে বাড়িতে আসাই ঠিক হবে। কেটে ভাসিয়ে দেবো স্কাউন্ড্রেলটাকে দীঘির জলে।” বলে রিক্ত চোখ রাখলো নিজের জড় প্রতিমূর্তির দিকে। রক্তপিপাসার টানে দিঘীটা মুখিয়ে আছে যেন।
আরো একটি শিকারের আশায় বসে আছে দুজনেই।
বস্তুত ডাক্তারের সাইকোলজি রিক্ত বুঝে ফেলেছে ততক্ষনে। লোভী, নিরেট, মাথামোটা..যার কাছে শুধুমাত্র পুঁথিগত শিক্ষাই আছে। “চোখ কান খোলা রাখেনা, এটা আমার ভাগ্য! নইলে এখানে আসার রিস্ক নিতোনা লোকটা।” আপনমনেই বলে ওঠে রিক্ত।
জীবনে বহু মানুষের সাথে পরিচয় হয়ছে ওর। সাত ঘাটে জল খাওয়া ঘুঘু মাল বললেও কম বলা হবে। “কিন্তু মিয়ার মনের হদিশ জানতে পারলাম কই! মেয়েটা দিয়ার মতই রহস্যময়ী, উপরন্তু সহ্যক্ষমতা প্রচন্ড।”আপনমনেই বলে উঠল রিক্ত। নাহলে নিজের প্রেমিকের সাথে অন্য মেয়েকে এক বিছানায় দেখে সহ্য করতে পারতোনা বৈকি। উপরন্তু এবরশনের কারণটাও স্পষ্ট নয় রিক্তর কাছে।
“ওই পাপ রেখে লাভ নেই, রোগের জীবানু ওর শরীরেও বাসা বাঁধবে।” আপনমনেই বলে উঠলো রিক্ত। তারপর দীঘির টলটলে জল থেকে চোখ ফিরিয়ে টেবিলের ছড়ানো-ছিটানো কাগজগুলো গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো রিক্ত।
অনেক কাজ বাকি আছে এখনও। মার্ডার স্পট রেডি করা থেকে শুরু করে একটা বিগ সাইজ পলিব্যাগ জোগাড় করে রাখতে হবে। লাশটা ডোবানোর জন্য কিছু প্রমাণ সাইজের পাথর, চপার আরো অনেক কিছু রেডি করতে হবে দ্রুত হাতে…
“সময় আর বেশি নেই।” গোছাতে গোছাতে আপনমনেই বলে উঠলো রিক্ত।
এমন সময় সদর দরজার ঘন্টিটা বেজে উঠতেই প্রচন্ড অবাক হয়ে গেল রিক্ত।”পাঁচ মিনিটও হয়নি এরমধ্যেই ডাক্তারবাবু চলে আসলেন!”
কোনমতে টেবিলের কাগজপত্র লকারে ঢুকিয়ে হনহনিয়ে এগিয়ে গেল রিক্ত। কি মনে হতে আই হোলে চোখ রাখতে সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল ওর।
সুদৃশ্য কোট পরে মিয়ার দাদা ফের ইনভেস্টিগেশনে এসেছেন। অধৈর্যের মত এদিক সেদিক তাকাতে তাকাতে আরেকবার কলিং বেল চাপলেন তিনি। সুরেলা সেই মিষ্টি ধ্বনি রিক্তর বুকে কাঁপুনি ধরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। এমন বিনা নোটিশে আবির্ভাব একজন আসামির মনে ভয় ধরিয়ে দেওয়ার জন্য যে যথেষ্ট, তা বলাই বাহুল্য। “শালা, এখনই আসতে হলো!” মুখ চিরে একটা অশ্রাব্য গালিগালাজ বের হতে চাইলেও হাসিটা ফের ঠোঁটের কোণায় ঝুলিয়ে রাখল রিক্ত।তারপর দরজা খুলে মনের উত্তেজনা লুকিয়ে করমর্দনের ভঙ্গিতে হাতটা এগিয়ে দিল সে।
“ভিতরে আসতে পারি?” রিক্তর উষ্ণ অভিবাদন সম্পূর্ণরূপে অগ্রাহ্য করে বলে উঠলেন নিয়ার দাদা।
তারপর বাড়ির মালিকের জবাবের অপেক্ষা না করেই একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে ঘরে ঢুকে গেলেন তিনি।
ভদ্রলোকের এরকম আস্পর্ধা দেখে প্রচন্ড রেগে কিছু বলতে যাবে, এমন সময় প্রিন্টেড একটা কাগজ এগিয়ে দিলেন রিক্তর দিকে।
“আপনার স্ত্রীয়ের এইডস ছিল? উইথ রাইনাইটিস সিম্পটম?”
অফিসারের প্রশ্ন শুনে রিক্তর মাথাটা তালগোল পাকিয়ে গেল। বিবর্ণ হয়ে যাওয়া রিক্তর মুখের দিকে তাকিয়ে অফিসার বলে উঠলেন এবার,”লুকিয়ে কোন লাভ নেই রিক্ত বাবু!পোস্টমর্টেম রিপোর্ট তাই বলছে…”
“না মানে.. আমি সত্যিই জানি না”কপালের ঘামটা মুছতে মুছতে বলে উঠল রিক্ত। উত্তেজনায় ওর গলাটা শুকিয়ে আসছে.. হাতের চেটোয় জমেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম..
দৃষ্টিটা সেদিকে রেখে অফিসার বলে উঠলেন এবারে,”মিথ্যে কেন বলছ রিক্ত বসু? তুমিও যে এইচআইভি পজিটিভ, সেটা কি মনে করিয়ে দিতে হবে আমাকে?” বলে রিক্তর রিপোর্ট এর কপি এগিয়ে দিলেন তিনি। হালকা গলাখাঁকারি দিয়ে বলে উঠলেন ফের,”ডরোথির স্বামী? নাকি কুখ্যাত ড্রাগ মাফিয়া? কোন নামে ডাকবো আপনাকে?”
প্রবল উত্তেজনায় থরথর করে কেঁপে উঠলো রিক্ত। ওর বাকশক্তি ধুয়ে মুছে গেল অজানা কোন মন্ত্রবলে। সেদিক থেকে দৃষ্টি বিন্দুমাত্র না
সরিয়ে অফিসার ফের বলে উঠলেন,”অথবা আপনাকে ওমেন্স ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের রাইট-হ্যান্ড বলেও ডাকতে পারি! যেটা আপনি চাইবেন..” বলে মিটিমিটি হাসতে লাগলেন তিনি রিক্তর মুখের দিকে তাকিয়ে।”আমার মনে হয় নারী পাচার অপেক্ষা ড্রাগ ডিলিং বিজনেসে বেশি পয়সা কামানো যায় তাই না?”
“আপনি কি বলছেন, তার বিন্দুমাত্র বুঝতে পারছিনা আমি..” প্রাথমিক হতভম্বতা কাটিয়ে স্বমহিমায় ফিরে এসেছে রিক্ত। ওর সহজাত বুদ্ধি জানান দিচ্ছে ভদ্রলোক অনেক কিছুই জানে ওর ব্যাপারে। “কিন্তু প্রমাণ না পেলে কোনো ফন্দিই কাজে আসবে না!” নিজমনে বলে উঠল রিক্ত।
“মনে মনে নিশ্চই ভাবছেন প্রমাণ ছাড়া উল্টোপাল্টা কথা বলছে, তাই তো? রিক্তর দিকে তাকিয়ে ফের হাসিমুখে বলে উঠলেন তিনি,”এরপরেও প্রমান চান?” বলে জোর গলাতে ডেকে উঠলেন বাইরে অপেক্ষারত সহকর্মীকে উদ্দেশ্য করে,”মিস্টার রায়, এখন আপনার আগমনের সময় উপস্থিত হয়েছে যে!”
মিস্টার রায়! নামটা শুনেই দাঁতকপাটি লাগার মতো অবস্থা হয়ে গেল রিক্তর। “উনি ওখানে কিভাবে!” অস্ফুটে বলে উঠতেই বাংলোতে ঢুকে পড়লেন মিস্টার রায়। ছোটখাটো মানুষটি দিকের তাকিয়ে রিক্ত এবার চোখে সর্ষেফুল দেখতে শুরু করলো।
থতমত খেয়ে যাওয়া আসামির মুখের দিকে তাকিয়ে ফের বলে উঠলেন মিয়ার দাদা,”ইন্ডিয়াতে থাকাকালীন আপনার কেসটা মিস্টার রায় হ্যান্ডেল করেছিলেন সেটা ভুলে যাননি হয়তো।”
উত্তেজনায় রিক্তর সম্পূর্ণ শরীর ততক্ষনে ঘেমে উঠেছে, “মিয়ার দাদার পরিচয় কি মেক্সিকান পুলিশ অফিসার? কিন্তু উনি তো ইউনিফর্ম পড়ে নেই..”ঘেঁটে যাওয়া মাথাটা স্বাভাবিক করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে রিক্ত, কিছুতেই ধৈর্য হারালে চলবেনা। এমন সময় মাথাটা ঝটকা দিয়ে উঠলো ওর,”সিভিল ড্রেসে থাকা এই অফিসার কী ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর সাথে যুক্ত!”
রিক্তর মনের ভাবনা এক লহমায় পড়ে নিয়ে বলে উঠলেন মিয়ার দাদা,”আমি ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টমেন্টের অফিসার। ফার্স্ট কেস হিসেবে আপনার কীর্তিই হ্যান্ডেল করতে হচ্ছে আমাকে। আপনি তো দারুন মানুষ মশাই! আপনার কীর্তি এখন আন্তর্জাতিক দরবারে পৌঁছে গিয়েছে,” তারপর নিজের কাছে রাখা আরেকটি কাগজ এগিয়ে দিলেন রিক্তর দিকে।
সাম্প্রতিক ব্যাংক লেনদেন এর যাবতীয় তথ্য সেখানে ফুটে উঠেছে স্পষ্ট ভাবে। ভয়ে সাদা হয়ে যাওয়া মুখটা একঝলক দেখে বলে উঠলেন মিয়ার দাদা,” দিনকয়েক আগেই ব্যাংক থেকে পঞ্চাশ লাখ পেসো উইথড্র করার কারনটা জানতে আশা করি অসুবিধে হবেনা আপনার…”
“সব কারণ আপনাকে জানতে হবে নাকি?”গলার স্বরে শ্লেষ মিশিয়ে বলে উঠলো রিক্ত। ”
“ইন্টারন্যাশনাল ডিপার্টমেন্টের হাতে আমার কেসটা গেলেও গ্রীনকার্ড আমার সাথে আছে! তাই চাইলেই আমাকে গ্রেফতার করার অতটা সহজ নয়..” আপনমনে বলে উঠল রিক্ত।
“নিজের প্রয়োজনে টাকা তোলাটা খুবই সাধারণ, কিন্তু একেবারে অত টাকা তুললে খটকা জাগে বৈকি। উপরন্তু অপরাধের জন্য যদি টাকার লেনদেন হয়, তবে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন আছে, তাই না মিস্টার রিক্ত বাসু?” বলে পকেট থেকে ছোট্ট একটা টেপ রেকর্ডার বার করলেন অফিসার।
রিক্তর দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে নির্দিষ্ট বাটনে প্রেস করলেন তিনি।”ইমারজেন্সি কন্ডিশনে পেশেন্টকে মেডিসিন দেওয়া কোনও ক্রাইম নয়, কিন্তু ষড়রিপুর ফাঁদে পড়ে সেই মেডিসিনকে খুন করার কাজে ব্যবহার করা ক্রাইম।”
“স্টপ প্লিজ স্টপ!” এত সুনিপুণ ইনভেস্টিগেশনের পদ্ধতি! কথোপকথন রেকর্ড করে নিয়েছে!
আর ভাবতে পারলনা রিক্ত। দুই হাতে দিয়ে মাথার রগদুটো সজোরে চেপে ধরে বসে পড়ল মেঝেতেই।
“এরপরেও বলতে চান নিজের প্রয়োজনে আপনি টাকাটা ব্যবহার করেছিলেন?” চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠলেন মিয়ার দাদা…”আপনাদের কথোপকথনের সমস্তটুকুই যে রেকর্ড করে রাখা আছে রিক্তবাবু। ভুলে যাবেন না এটা মেক্সিকো। এখানে অপরাধ করার আগে দুবার ভাবতে হয়।”
“তবে আপনার বুদ্ধিমত্তায় প্রশংসা না করে পারছি না, কোনরকম ধারালো অস্ত্র ব্যবহার না করে একটা মানুষকে কিভাবে মেরে ফেলতে হয়…সেটা বোধহয় পড়ালেখা না জানলে করতে পারতেন না, কিন্তু বুদ্ধিটা আপনি কোনো ভাল কাজে ব্যবহার করতে পারতেন! নিজের মা,পরিবারের থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরেও আপনার সুবুদ্ধি হলনা। ভেরি স্যাড।” মুখ থেকে চুক চুক শব্দ করে উঠলেন অফিসার,”তাহলে এবার আমরা গোটা বাড়িটা সার্চ করতেই পারি! কি বলো মিস্টার রায়?” বলে নিজের সহকারী অফিসারের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন তিনি।
“এক সেকেন্ড! বাড়ি সার্চ করবেন মানে!” ফুঁসে উঠে বলল রিক্ত,”সার্চ ওয়ারেন্ট আছে আপনাদের কাছে? ভুলে যাবেন না আমি একজন গ্রীন কার্ড হোল্ডার!”
রিক্তর কথা শুনে থতমত হয়ে গেলেন অফিসার। সত্যিই তো! সার্চ ওয়ারেন্ট না এনে কি করে বাড়ি খুঁজবেন তিনি! তাছাড়া অ্যারেস্ট ওয়ারান্টও লাগবে…
“এবার যান, জোগাড় করতে পারলে তারপর দেখা হবে আপনাদের সাথে।” মুখের চওড়া হাসিটা আবার ফিরে এসেছে রিক্তর। সরু-সরু দুই চোখে ফুটে উঠেছে ধূর্ত চাহনি।
“নিশ্চয়ই! কালকে দেখা হচ্ছে তাহলে। গ্রেপ্তার না করে আমি জলস্পর্শ করবনা, কথা দিলাম” চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠলেন অফিসার.. তারপর এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে বেরিয়ে গেলেন দ্রুতগতিতে। শক্ত কাঠের পাল্লার ধড়াম করে বন্ধ হওয়া মাত্র স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল রিক্ত।
“মিয়া! মিয়াকে আমার এই মুহূর্তে বড্ড প্রয়োজন। একমাত্র ওই পারবে নিজের দাদাকে নিরস্ত করতে!” অপ্রকৃতিস্থ মত বলে উঠলো রিক্ত। গোটা ঘটনায় উত্তেজনা গা ঘেমে গিয়েছে ওর। ঘন ঘন শ্বাস পড়ছে। ফর্সা মুখটা লাল হয়ে গিয়েছে…
কোনক্রমে টলতে টলতে নিজের বেডরুমে প্রবেশ করলো রিক্ত। তারপর কাঁপা হাতে তুলে নিল নিজের হ্যান্ডসেটটা। আনসেভড ব্লকড নাম্বারটায় কানেক্ট করতে যেতেই আচমকা একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসলো রিক্তর মুঠোফোনে।
প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে ডিসকানেক্ট করে দিল রিক্ত, কিন্তু নাছোড়বান্দার মতো হ্যান্ডসেটটা বেজে উঠলো আবারো।
~”হ্যালো, কে!” কণ্ঠস্বরে বিরক্তিভাব উগরে উঠেছে এবারে..
~”মিয়া..” দুই অক্ষরের শব্দটাই রিক্তকে ফ্রিজড করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। এ যে মেঘ না চাইতে জল!
” মিয়া, তুমি ফোন করেছ আমাকে! আমি তোমার খোঁজে এপার্টমেন্টেও গিয়েছিলাম। কতবার ফোন করেছিলাম… তুমি এভাবে আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারো না মিয়া! ফিরে এসো আমার কাছে।” কণ্ঠস্বরে যতটা সম্ভব আর্তি ফুটিয়ে বলে উঠলো রিক্ত। ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর রোষানল থেকে বাঁচতে শেষ ভরষা যে এই মেক্সিকান মেয়েটাই, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
“আমি তোমার বাংলোর সামনে, দরজা খোলো…” খানিকক্ষণ চুপ থাকার পর বলে উঠলো মিয়া,”আমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছি।”
মিয়ার এরূপ অযাচিত আগমনের কারণ অজানাই রয়ে গেলো রিক্তর কাছে।
ক্রমশ