ষড়রিপু,০২,০৩
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য
দ্বিতীয় পর্ব
রমণক্লান্ত পুরুষটি গতরাত্রের অলিখিত যুদ্ধশেষে ঘরে ফিরে আসতেই ঝট করে দাঁড়িয়ে পড়ে ,
সদর দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাদাচামড়ার মহিলাটি তার হৃদকম্পনের জন্য যথেষ্ট ,
” ফোন কোথায় ছিল তোমার !” দেওয়ালে লাগানো হ্যাঙ্গারে ওভারকোটটা ঝুলাতেই তীক্ষ্ণকণ্ঠীর চিৎকার রিক্তর কানের পর্দা দুটো ফালাফালা করে দিল , প্রত্যুত্তরে কিছু বলে ওঠার আগেই ফের চিৎকার ভেসে এলো
” তোমার যে সাড়ে ছটায় চলে আসার কথা ছিল !ঘড়িতে কটা বাজে সেদিকে খেয়াল আছে ?”
” আছে , সময়মতো বেরোতে পারিনি ,” ছোট্ট উত্তর দিয়ে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল রিক্ত , সুন্দর সকালটা কলহ-বিবাদে মোটেই নষ্ট করতে চাইলনা ও । কথায় বলে সকাল ভালো তো গোটা দিন ভালো , সেই মতো পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করতেই পৃথুলা মধ্যবয়স্কা মহিলাটি পথরোধ করে দাঁড়াল ওর , তারপর
রিক্তর চেষ্টাকে সযত্নে গুঁড়িয়ে দিয়ে ওপ্রান্ত বলে উঠলো , ” নিজেকে বেশি চালাক ভেবে ফেলেছ নাকি ! ভুলে যেও না একটু চেষ্টা করলেই তোমার গতিবিধি আমার হাতের মুঠোয় চলে আসবে ,”
” ওহ মারিয়া ,” অধৈর্য ভঙ্গিতে শব্দসমষ্টিটা বেরিয়ে আসার চেষ্টা করলেও নিজেকে সামলে নিল রিক্ত , এই মহিলাটাকে তার বিশেষ প্রয়োজন ,
“খামোকা বাড়া ভাতে ছাই ছিটিয়ে লাভ নেই”
আপনমনে চিন্তা করে নিজেকে সংযত করে নিল রিক্ত , তারপর মেকি হাসিতে মুখটা ভরিয়ে বলে উঠলো ,” কেন এত সন্দেহ করো মারিয়া ? তুমি কি বুঝতে পারোনা আমি তোমাকেই ভালোবাসি ,”
ওষুধে কাজ হল , বাধ্য শুকপাখিটির মত মধ্যবয়সি ভদ্রমহিলা নিজেকে সমর্পন করে দিল রিক্তর কাছে , চওড়া বুকের আশ্রয়ে নিজেকে সঁপে দিয়ে বলে উঠলো , ” উফফ , সন্দেহ নয় , আই ওয়াজ জাস্ট ওরিড , নাথিং এলস ,”
সোনালী ঘন রেশম সদৃশ চুলে নিজের আঙ্গুল বার কয়েক খেলাতে খেলাতে বলে উঠলো রিক্ত ,
” বাক্স কি রেডি ? হাতে কিন্তু সময় বেশী নেই ,”
” উফ এত তাড়া কিসের তোমার ! থাকো না আর কিছুক্ষণ ,” বলে বাহুপাশটায় আরেকটু শক্ত করে নিল মধ্যবয়স্ক ভদ্রমহিলাটি ,” টানা একদিন পর তোমাকে কাছে পেলাম , অত সহজে আজ ছাড়বোনা ,”
রাতভর ক্লান্তিতে শরীর যেন আর চলছেনা ,
তবুও নাছোড়বান্দা মহিলার কাছে নিজেকে সমর্পন রাখতে বাধ্য হল রিক্ত ,
উপায় নেই যে ,
মিনিটখানেক পর বন্ধন মুক্ত হতেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচল সে , এবার পেটটা ভরিয়ে সোজা ঘণ্টাখানেকের ঘুম …
সেইমতো ডাইনিং হলের দিকে পা বাড়ালে মারিয়াও চলে এলো তার পিছু পিছু ,
” উফফ , দুমূহর্ত তো শান্তিতে থাকতে দে , সারাদিন ছিনে জোকের মত চিপকে বসে আছে !”
উত্তপ্ত লাভাস্রোতের মতো বিরক্তিটা ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইলেও ফের নিজেকে আত্মসংবরণ করল রিক্ত , কপটতার মেকি খোলসে নিজেকে মুড়িয়ে বসে পড়ল সুদৃশ্য ওয়ালনাট উড নির্মিত চেয়ারে ,
সামনের ইপোক্সি টেবিলে থরে থরে সাজানো খাবারের দিকে তাকিয়ে ক্ষুধাভাবটা বেড়ে গেল তীব্রভাবে ,
সুদৃশ্য পাত্রে পছন্দমত খাবার নিয়ে গোগ্রাসে খেতে শুরু করল রিক্ত , মাংসের টুকরোটা মুখে চালান করেই চোখ পড়ে গেল মারিয়ার দিকে ,
অদ্ভুত দৃষ্টিতে ওরই দিকে তাকিয়ে আছে মারিয়া ,
বুকটা চ্যা ভয়ে ছ্যাৎ করে উঠলো রিক্তর ,
মিয়ার আর ওর সম্পর্কের কথা মারিয়া জেনে গেল নাকি ! আশঙ্কায় ভরে উঠলো মনটার আনাচ-কানাচ ,
” খুব খিদে পেয়েছে তাইনা ?” রিক্তকে নিশ্চিন্ত করে বলে উঠলো মারিয়া ,” আমি আরও খাবার আনছি ,” বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে গেল কিচেনের দিকে ,
সেদিকে তাকিয়ে নিজের ভাবনায় ডুবে গেল রিক্ত ,
মিয়ার কার্নিভাল শো আজ সন্ধ্যে থেকে ,
সেইমতো রিয়েল এস্টেট থেকে দুপুরের মধ্যেই বেরিয়ে পড়তে হবে ,” না হলে শো একবার শুরু হয়ে গেলে অসুবিধের মধ্যে পড়ে যাব আপন মনে বলে উঠল রিক্ত ,
মাত্র মাসখানেকের সম্পর্ক হলেও সদ্যযুবতী মেয়েটার সাথে প্রগাঢ় বন্ধনে লিপ্ত হয়ে গিয়েছে রিক্ত ,
“কারণ হিসেবে মেক্সিকান সহজাত সৌন্দর্য নাকি শিল্পকলায় নৈপুণ্য ?” নিজেকে প্রশ্ন করেও উত্তর পায় না সে , ঘন সাগরের মত অতলস্পর্শী চোখ দুটোতে দেখলেই ডুব দিতে ইচ্ছা করে ওর ,
ক্যানভাসে বোলানো তুলির আঁচড়ে যেন ফিরে পায়
নিজের সত্তাকে , ড্রাইভিং ওর প্যাশন হলেও এক সময় রংতুলিকেও ভালবেসেছিল রিক্ত ,
সময়েরস্রোতে তা ক্ষয়প্রাপ্ত হলেও মিয়ার সংস্পর্শে
ফের নবজাগরিত হয়েছে ,
সূক্ষ্ম তুলির টানগুলো মিয়ার শরীরের মতই ঝকঝকে , নিখুঁত …
যেখানে প্রাবল্য এবং কমতির বোঝাপড়া বড্ড কম ..
সবকিছু বড্ডো সুন্দর ভাবে সাজানো ,
এলোমেলো অগোছালোর চিহ্নমাত্র নেই ,
ঠিক রিক্তর জীবন একসময়ে যেমন ছিল ,
মসৃণ , কর্কশহীন ,
” কি এত ভাবছো ! “সুতীক্ষ্ণ নারী কণ্ঠস্বর কর্ণপটহে ধাক্কা মারতেই বাস্তবের মাটিতে ফিরে আসলো রিক্ত , নিজের অজান্তেই মুখাবয়বে ভরে ওঠা হাসিমুখটাকে লুকিয়ে স্বাভাবিক করে নিল সে ,
“সেরকম কিছু না , খাবারটা দারুন নিশ্চয়ই তুমি করেছ !” ভদ্রমহিলাকে অপছন্দের তালিকায় শীর্ষস্থানে রাখলেও খাবারটা সত্যিই বড় ভালো হয়েছে , মেকি স্তুতিবাক্য ছেড়ে প্রশংসা করে উঠলো রিক্ত ,
” তুমি তো জানো তোমার সব খাবার আমিই করি ”
বলে রিক্তর গালটা টিপে বলে উঠলো মারিয়া ,
” আর শোনো , আজ বিকেলে দুজন হাওয়া খেতে বেরোবো , অনেকদিন রিওর পাশে যাওয়া হয়না ,”
” কিন্তু আমাকে যে এক জায়গায় যেতে হবে মারিয়া ,” আমতা আমতা করে মুখ ভরা খাবার নিয়ে বলে উঠল রিক্ত ,” আমি যে কথা দিয়ে দিয়েছি ,”
“মানে !” ভ্রু কুঁচকে চোখটা সরু করে জানতে চাইলো মারিয়া ,” কাকে কথা দিয়েছো ?
তুমি ভুলে গিয়েছো আজ আমার বার্থডে !”
ভাঙ্গা গলায় ফের চিল্লিয়ে উঠলো মারিয়া , রাগে অভিমানে বাদামী রাঙা চোখদুটোয় জমা হয়েছে
মুক্তোর মতো অশ্রুদানা ,
” হাউ কুড ইউ !”
সুস্বাদু লেগপিসটা ততক্ষনে গড়াগড়ি খাচ্ছে প্লেটের একধারে , মুখভর্তি নরম মাংসের স্তরগুলো বিস্বাদ
লাগছে ওর , এই দিনটার জন্য কতশত পরিকল্পনা করেছিল মিয়া আর রিক্ত দুজনেই ,
শো শেষে লং ড্রাইভ আর রিওর পাড়ে জ্যোৎস্নায় গা ভিজিয়ে একান্ত অভিসার ,
” ধুর !” চোরা বিরক্তিটা আর আটকাতে পারলোনা রিক্ত ,” সব সময় এরকম জেদাজেদি ভালো লাগেনা মারিয়া , তুমি জানো এই শহরে আমি এখনো নতুন , সেটেলমেন্ট এর আশায় দিন গুনছি হন্যে হয়ে ,”
“তো !” ওর বক্তব্যকে বিন্দুমাত্র গুরুত্ব না দিয়ে বলে উঠলো মারিয়া ,
” একদিন না বেরোলে তোমার সেটলমেন্ট চৌপাট হয়ে যাবে তাইতো ?”
মনে মনে প্রমাদ গুনল রিক্ত , এই ভদ্রমহিলাকে চড়ালে কড়ায়-গণ্ডায় মাশুল গুনতে হবে ওর ,
শূন্য হাতে ফের এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতে হবে মেক্সিকো সিটির আনাচে কানাচে ,
” স্থায়ী বাসস্থানের সাথে সাথে বাঁধাধরা শরীরটাও হাতছাড়া হয়ে যাবে ,” আপন-মনে বলে সিদ্ধান্ত স্থির করে নিল রিক্ত ,
” আই এম সরি মারিয়া , আমি ভুলে গিয়েছিলাম ব্যাপারটা কালকেও মেটানো যাবে , প্লিজ রাগ করে থেকোনা , বলো কখন বেরোবো দুজনে ?”
হাসি হাসি মুখটা মারিয়ার সামনে মেলে দিয়ে বলে উঠলো রিক্ত ,
” বিকেল পাঁচটার মধ্যে ” শিশুর মতো খিলখিলিয়ে হেসে জবাব দিলো মারিয়া ,
ওর হাসিমুখের দিকে তাকিয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল রিক্ত । খানিকটা জেদি , অহংকারী হলেও রাগ , বিতৃষ্ণা মনের মধ্যে পুষে রাখেনা মেয়েটা ,
হাজার নেগেটিভিটির মাঝে এইটুকুই যা স্বস্তি রিক্তর কাছে ,
সম্মতি দেওয়ার পর টেবিলে পড়ে থাকা খাবারটুকু ঝটপট পেটে চালান করে দিল রিক্ত ,
এরপর একটু ঘুমোলেই শরীর টা ফ্রেশ হয়ে যাবে , ” কিন্তু মিয়াকে কি এক্সকিউজ দেবো” আপনমনে বলে উঠে মুঠোফোনটাকে হাতে নিয়ে নিল রিক্ত
দ্রুতহাতে শরীর খারাপের মিথ্যে বাহানায় ভরা মেসেজটা ওপ্রান্তে সেন্ড করে দিতেই চেনা স্বরটা বেজে উঠল ফের ,” কাকে মেসেজ পাঠাচ্ছো রিক্ত ?”
আপাত নিরীহ সেই কথাতেই চমকে উঠলো রিক্ত ,
এযে মারিয়ার গলা !
ক্রমশ
#ষড়রিপু (তৃতীয় পর্ব )
প্রাপ্তমনস্কদের জন্য
আলো-আঁধারি পরিবেশে তালতাল অতিফর্সা চর্বিদানার মধ্যে খেই হারিয়ে ফেলেছে রিক্ত ,
থলথলে সেই দেহগাছাকে প্রেয়সী কল্পনায় বেঁধে নিয়ে নিজের চাহিদাটুকু মিটিয়ে নিচ্ছে পূর্ণউদ্যমে ,
এমন সময় মিলন সুখে অধীর নারীদেহটি প্রশ্ন করে বসে ,” রিক্ত উইল ইউ ম্যারি মি ?”
” হোয়াট !” মাঝপথেই থেমে যায় রিক্ত , এসব তুমি কি বলছো মারিয়া ? আর ইউ সিরিয়াস ?”
” যা বলছি ভেবেই বলছি , তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে রিক্ত ?” প্রখরদৃষ্টিতে চোখে চোখ রেখে ফের প্রশ্ন করে উঠে মধ্যবয়স্ক মহিলাটি ,
প্রত্যুত্তরে কোন জবাব না দিয়ে নিজেকে সরিয়ে নেয় রিক্ত , সুবৃহৎ দুগ্ধফেননিভ শয্যার এককোণে এগিয়ে গিয়ে ফেলে রাখা জামাটা চাপিয়ে নেয় নিঃশব্দে ,
~” কি হলো !” প্রচন্ড অবাক হয়ে মারিয়া উঠে বসে পড়ে বিছানার ওপরে , “তুমি কি আমাকে ভালোবাসোনা ?”
রিক্তর মনে তখন হ্যাঁ এবং না এর সুতীব্র দোলাচল চলছে । একদিকে মিয়ার প্রতি জেগে থাকা কামনা
মিশ্রিত ভালোলাগা , অন্যদিকে রাতারাতি দুনিয়াটা হাতের মুঠোয় পুরে নেওয়া দুর্দমনীয় টান ,
” টাকা থাকলে বোধহয় সবই হয় ,” আপন মনেই বলে উঠে রিক্ত , তারপর মারিয়ার দিকে মুখ ফিরিয়ে বলে ওঠে ,” আমাকে ঘন্টাখানেক সময় দেবে ? নো ডাউট তোমাকে ভালোবাসি , কিন্তু আমি ইন্ডিয়ান … তোমাদের কালচার , সোসাইটির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সময় লাগবে বৈকি ,”
” ইটস ওকে , টেক ইওর টাইম ,” হালকা হেসে মারিয়া হাউসকোটটা জড়িয়ে নেয় নিজের গায়ে ,
” আমি জানি ইন্ডিয়ানদের কাছে কালচারাল থট মোস্ট ভ্যালুয়েবল ,” মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে পা বাড়ায় স্নান ঘরের দিকে ,
মোটাসোটা থপথপে অবয়বটা দৃষ্টির বাইরে যেতেই গভীর ভাবনায় ডুবে যায় রিক্ত ,
এই বিদেশ-বিভুঁইয়ে যার পরিচয় একজন ফিল্ম প্রডিউসার নয় বরং ভাগ্যান্বেষী একজন ড্রাগ রেসার ,
গাড়ি চালানোটা ওর নেশা হলেও বর্তমানে এটাই
পেশা ,
ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল রিক্ত ,
বেঁচে থাকাই যার কাছে বিলাসিতা , সে আজও টাকার পিছনে পাগলের মত ছুটছে ।
” স্বভাব বোধহয় মরলেও যায়না ,” আপনমনেই বলে ওঠে রিক্ত , শরীরের কোণে কোণে মারণ রোগের জীবানু বয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো একজন
মানুষ ফের স্বপ্ন দেখছে পুনরুত্থানের ।
জীবনকালের মেয়াদ মাত্র কয়েকবছর হলেও
বিত্ত বৈভবের হাতছানি উপেক্ষা করতে পারছেনা কোনোমতেই …
সৎ , অসৎ যেকোনো পথেই ফিরে পেতে চাইছে
নিজের হৃত গৌরবকে ।
প্রোডাকশন হাউজ বেঁচে দিয়ে যা পয়সা এসেছিল , তাতে খুনের মামলাটা কিছুদিন আটকানো গেলেও পার্মানেন্ট সুরাহা হয়নি ।
চোখের সামনে আপাতচেনা মানুষগুলো ধীরে ধীরে অচেনা হয়ে যাওয়াতে মনটাও বিষিয়ে
গিয়েছিল ।
মা , মালবিকা , সর্বোপরি দিয়া তিনজনের মিলিত চক্রান্তে জীবনটা ছারখার হতে বসেছিল প্রায় ।
নামটা মনে পড়তেই আক্রোশে ছটফট করে ওঠে
রিক্ত ,
” উচিত শিক্ষা না দিয়েছি আমি ! তবে আমারও নাম রিক্ত বাসু নয় , ” হিসহিসিয়ে উঠলো ও …
কথায় বলে মেক্সিকো হলো জেল পালানো , অবৈধ কাজকর্মে লিপ্ত দুনিয়াব্যাপী মানুষদের কাছে স্বর্গরাজ্য ।
সেইমতো কাঁচা পয়সা উপার্জনের আশায় এখানে পালিয়ে আসে রিক্ত ,
ঘাড়টা ঘুরিয়ে সুদৃশ্য বেডরুমের আনাচে-কানাচে চোখ বোলালো ও । ইন্ডিয়াতে থাকা ওর প্রোডাকশন হাউজের থেকেও অভিজাত ও বিলাসবহুল এই রিয়েল এস্টেটটা ,
এর মালিক তথা মালকিন হল মারিয়া ডরোথি ,
মাস খানেক আগেই পথ দুর্ঘটনায় স্বামীকে হারিয়ে ফেলা মধ্যবয়স্কা একাকিত্বের জ্বালায় জ্বলতে পুড়তে থাকা এক রমণী ,
যার কাছে পয়সার মা বাপ নেই , কিন্তু মনের মত একজন সঙ্গীর বড্ড অভাব রয়েছে ,
সপ্তাহ খানেক আগেই এক এস্কর্ট এজেন্সির মাধ্যমে মারিয়ার সাথে পরিচয় হয় রিক্তর ,
সেই রাতে ‘ পেসো ‘ র বিনিময়ে শুধু তাগড়াই একটা শরীরই পায়নি ডরোথি ।
বরং একাকিত্বের যোগ্য সঙ্গী পেয়ে গিয়েছিল , জাতিতে ইন্ডিয়ান হওয়ায় অদম্য কৌতূহল তো ছিলই । উপরন্তু সুনিপুণ দেহসৌষ্ঠবের মালিক হওয়ায় রিক্তকে নিজের লিভিং পার্টনার রূপে গ্রহণ করেছিল তখনই …..
মুখটা কুঁচকিয়ে একটা স্থির সিদ্ধান্ত গ্রহণের চেষ্টা চালাচ্ছে রিক্ত ,
একাকিনী মধ্যবয়স্কা এই মহিলার স্বামী হতে পারলে রিয়েল এস্টেটের অধিকার তার উপরেও বর্তাবে , অপার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে সাথে
একটা স্ট্যাটাসও পাবে ,
” কিন্তু মিয়ার কি হবে তাহলে !” ভ্রু দুটো কুঁচকে নিজমনেই বলে ওঠে রিক্ত ,
আজ সকালে বড় বাঁচা বেঁচে গিয়েছে রিক্ত ডরোথির হাত থেকে , সেভ না করা নম্বরে পাঠানো বার্তাটা আর একটু হলেই ধরা পড়ে যাচ্ছিল
ডরোথির কাছে , শেষমুহূর্তে ডিলিট করে দেওয়াতে ঝামেলা পোহাতে হয়নি অবশ্য ,
“কিন্তু এইভাবে আর কয়দিন,”
” হাই !” স্নান সেরে ততক্ষনে বাইরে বেরিয়ে এসেছে ডরোথি ,” কি এত ভাবছো ,”
চোখটা তুলে মধ্যবয়স্কা সেই ভদ্রমহিলার দিকে চাইল রিক্ত , সদ্য স্নান সেরে আসা অতি ফর্সা ধবধবে সেই শরীরে মুক্তোর মতো লেগে গেছে জলের দানা ,
দৃশ্যটা দেখে ভালোলাগার পরিবর্তে কেমন বমি পেয়ে গেল রিক্তর ,
ভ্যাদভেদে এই শরীরটা নিয়েই বাকি জীবনটুকু কাটবে নাকি !
” আর কত সময় দেবো তোমায় ?” হালকা হেসে কৌতুক ভঙ্গিতে বলে উঠলো ডরোথি ,” রীতিমতো আধঘন্টা সময় দিয়েছি আর একমিনিটও দেবো না ,”
অন্য সময় হলে এই মহিলার ঔদ্ধত্যে রিক্তর রেগে যাওয়ার কথা ,
কিন্তু স্বার্থপর মানুষের মতো মনের ভাব মনেই চেপে রেখে হাসিমুখটা বজায় রাখলো রিক্ত ।
পায়ে পায়ে এগিয়ে গিয়ে ডরথির ভেজা শরীরটা সাপটে ধরলো রিক্ত , তারপর ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো ,” আমি রাজি ,”
রিক্তর পরিচয় –
একজন প্রাক্তন ফিল্ম প্রডিউসার , যার প্রডিউসিং
কার্যকলাপের অর্থনৈতিক নির্ভরতা ছিল নারীপাচার করে পাওয়া কমিশনে ,
এই চক্রে রিক্ত , অরিন্দম , দূর্জয় , মিস্টার আগরওয়াল এই চারজন ছিলেন ।
পয়সার লোভে রিক্ত নিজের দেশের বাড়ির
ভৃত্যের মেয়েকে বেচে দিয়েছিল , এবং
তার সাথে দেশের বাড়ির ভৃত্যকেও ফাঁসিয়ে দিয়েছিল টাকাপয়সার লোভে ,
পুলিশের নজর থেকে বেঁচে গেলেও রিক্তর মা
‘ বেচে ‘ দেওয়া মেয়েটির সাহায্যে রিক্তকে যোগ্য জবাব দেয় , এই কাজে রিক্তর প্রাক্তন প্রেমিকাও
সাহায্য করেছিল , তিনজনের মিলিত প্রয়াসে
নিষ্ঠুর উপায়ে দুর্জয় , মিস্টার আগরওয়াল এবং অরিন্দমকে মেরে ফেলা হয় ও রিক্তকেই সেই হত্যাকাণ্ডে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয় ।
সেইমত দাগী আসামি রিক্ত বাসু শেষমেশ ঠাই নেয় মেক্সিকো দেশের মেক্সিকো শহরে ।।
(এই ভাগে রিক্তর পুনরুত্থানের সাথে সাথে প্রতিশোধ তুলে ধরবো ,
আশা করি সবাইকে পাশে পাবো)