#ষড়রিপু,০৬,০৭
# প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য
ষষ্ঠ পর্ব
তাড়াহুড়ো করে রিক্ত যখন
জোকালো স্কোয়্যারে এসে পৌঁছালো তখন বেশিরভাগ আর্টিস্টই এসে গিয়েছেন ,
সার বেঁধে দাঁড়ানো বিবস্ত্র মডেল আর আর্টিস্ট মিডিয়ার মেলবন্ধনে জায়গাটা ছোটখাটো মেলার রূপ নিয়েছে ,
অত ভিড়ভাট্টায় রীতিমতো দম বন্ধ লাগছিলো রিক্তর , কিন্তু না এসেও উপায় নেই…
মিয়ার আবদার রাখতেই হবে যে ।
সেইমতো সাততাড়াতাড়ি এসে চড়া রোদের মধ্যেই মিয়াকে খুঁজতে শুরু করে দিলো রিক্ত , কিন্তু জনসমুদ্রের মেলায় পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চির একটা মেয়েকে খুঁজে পাওয়া কি এতই সহজ !
যখন কিনা প্রত্যেকেই প্রায় এভারেজ হাইটের ,
মিনিট পাঁচেক ইতিউতি খোঁজার পর আর ধৈর্য না কুলোলে রিক্ত কল করে বসল মিয়াকে ,
ফেস্টিভ্যালের এই সময়টুকু মিয়া ফোনকল না করার অনুরোধ জানালেও উপায় নেই কোনো ,
কিন্তু বারকয়েক ফোন করার পরেও রিসিভ না হওয়ায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল রিক্তর ,
বেশি দেরি হয়ে গেলে ডরোথির কাছেও জবাবদিহি করতে হবে ,
দুই নৌকায় পা দিয়ে চলা যে কতটা বিপদসংকুল তা একমাত্র একজন ভুক্তভোগীই জানে , রীক্তও তার ব্যতিক্রম নয় মোটেই ,
খানিকক্ষণ পর বিরক্ত হয়ে কোণের একচিলতে কর্ণারে ধপ করে বসে পড়লো রিক্ত , তার পরে চোখ বোলালো রৌদ্রস্নাতা মডেলদের দিকে ,
সুবিশাল রংবেরঙের জনসমুদ্রে থিক থিক করছে বিবস্ত্র , অর্ধবিবস্ত্র মডেলরা ।
নারী পুরুষ , স্থূল কৃশ নির্বিশেষে সকল মডেল মেতে উঠেছে এই উৎসবে ,
নগ্নতার এমন বিপুল সমারোহ আগে কখনো দেখেনি রিক্ত ,
সব থেকে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো কুরুচিকর বিকৃত মনোভাবের চিহ্নমাত্র নেই ,
যেন খুব স্বাভাবিক ঘটনা ,
কেউ কারোর দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না ,
রংয়ের পরত চাপিয়ে সেই অবস্থাতেই আড্ডা খোশগল্পে মেতে উঠেছে সবাই ।
কোন প্রশ্ন নেই , অভিযোগ নেই ,
শ্লীলতাহানি নেই , কারোর চোখে কুদৃষ্টির বিন্দুমাত্র ছিটেফোঁটা নেই ,
টিপিকাল বাঙালি একজন ছেলের এই দৃশ্য দেখে খটকা লাগাই স্বাভাবিক , কিন্তু মুখে কিছু না বলে
চুপচাপ সেদিকে তাকিয়ে রইল রিক্ত ,
” হাই তোমাকে কতক্ষণ ধরে খুঁজছিলাম , ”
বলতে না বলতেই সকল অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মিয়া ধরা দিল রিক্তর সামনে ,
দুপুরের কড়া রোদ মিয়ার ফর্সা দেহগাত্র পিছলে বেরিয়ে যাচ্ছে , এক্কেবারে প্রসাধনহীন লাবণ্যমন্ডিত মুখটা রিক্তকে চুম্বকের মতো টানছে ,
খানিকটা আনমনে চেয়ে রইল পাতলা ভরাট দুই ঠোঁটে ,
ওর মনের ভাবটা বুঝতে পেরে কাছে এগিয়ে এলো মিয়া , তারপর পরম আশ্লেষে জনসমক্ষেই নিজের ঠোঁটটা ডুবিয়ে দিল রিক্তর পুরুষালী দুই ঠোঁটে ,
প্রশ্রয় পেয়ে ওকে বুকের মধ্যে মিশিয়ে নিল রিক্ত , সদ্যযুবতী নোনতা শরীরের কোমল স্পর্শই রিক্তর পৌরুষ জাগানোর জন্য যথেষ্ট ছিল ,
অন্তর্বাসের খাঁজে খাঁজে আদরবাসা ঢালতে ঢালতে মিয়ার কানে ফিসফিসিয়ে উঠলো রিক্ত ,
” আগে আজকের সিডিউলটা শেষ হোক তারপরে ,” নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে উঠল মিয়া , ” তারপর শক্ত পুরুষালী পাঞ্জাটা নিজের মুঠোবন্দী করে এগোতে থাকলো সুনির্দিষ্ট কর্ণারে ,
সারা গায়ে তখন প্রাইমারি রং লাগিয়ে রোদে শুকাতে ব্যস্ত হয়ে গিয়েছে মিয়ার মডেল ,
চল্লিশোর্ধ মধ্যবয়স্ক লোকটা রিক্তকে দেখে অভিবাদন জানিয়ে উঠলো ,
প্রত্যুত্তরে নমস্কার জানিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে পড়লো রিক্ত , ততক্ষনে রঙের ডিবেতে তুলি ডুবিয়ে মিয়ার শিল্পসৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে ,
পরতের পর পরত রঙ চড়ানো আশ্চর্য দৃষ্টিতে প্রায় গিলে খাচ্ছে রিক্ত ।
যেমন নিখুঁত তার টান তেমনই ক্ষিপ্রগতি ,
” বাহ ” আপন মনেই বলে উঠল রিক্ত ,” এই মেয়েটা সত্যিই গুণবতী ,”
মিনিট এরপর মিনিট কেটে চললো একইভাবে ,
শিল্পসৃষ্টির কারুকার্য দেখতে দেখতে রিক্ত খানিক ক্লান্ত হয়ে গেলেও আর্টিস্ট তথা মডেল কারোর শরীরে ক্লান্তির ছিটেফোঁটাও নেই ।
” এক্সকিউজ মি ,” ভিড়টা থেকে দূরে সরে গিয়ে অপেক্ষাকৃত ফাঁকা জায়গায় বসে পড়লো রিক্ত ,
মধ্যগগনে সূর্য না থাকলেও রোদের তাপ আছে যথেষ্ট ,
গরমে ক্লান্তিতে মুখটা ঘেমে গেছে পুরোপুরি ,
হাতের চেটো দিয়ে ঘামটা মুছে ইতিউতি চাহিতেই বুকটা ধড়াস করে উঠল রিক্তর ,
গ্রে কালারের একটা হুডি
সংলগ্ন ঘেসো জমিতে ফেলে রাখা আছে ,
গতকাল রাত্রে দেখা রহস্যময়ী সেই মেয়েটি একই কালারের হুডি চাপিয়ে এসেছিল ,
জ্যোৎস্নায় মুখাবয়ব স্পষ্ট বোঝা না গেলেও পোশাকের রঙ চিনতে বিন্দুমাত্র ভুল করেনি রিক্ত ,
বুকের কাছে সুতোয় বোনা আন্তর্জাতিক কোম্পানির ট্যাগলাইনটাও হুবহু এক ,
সেম ডিজাইন সেম কালার সেম সাইজ !
এমনকি নিচের দিকটাও খানিকটা ছেঁড়া ,
প্রখর স্মৃতিশক্তির জোরে রিক্ত ততক্ষনে চিনে নিয়েছে পোশাকটা ,
গত রাত্রের মেয়েটির পোশাকেও নিচের অংশ খানিকটা ছেঁড়া ছিল ,
” নাহ্ , এটা কোনো কাকতালীয় ব্যাপার হতে পারেনা !”
মাটিতে বসা থেকে তড়াক করে দাঁড়িয়ে পরল রিক্ত ,
মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা আশঙ্কাটা স্বেদবিন্দু রূপে ঝরে পরলো কানের লতি বেয়ে ।
” কে আমাকে ফলো করতে পারে ,” শঙ্কার চোরাকাটাটা রিক্তকে বেঁধে ফেলেছে ভালোমতোই ,
প্রচন্ড অসহায় লাগছে নিজেকে এখন ,
এখনো সিটিজেনশিপ নেই ,
যথেষ্ট অর্থসম্পদ নেই ,
পায়ের তলায় শক্ত কোনো জমি নেই ,
এই সময় কারোর চক্রান্ত জালে জড়িয়ে যাওয়া মানে আত্মসমর্পণেরই নামান্তর ,
রহস্যময় মেয়েটার টার্গেটে যে সেই আছে তা একেবারে নিশ্চিত ,
” মিয়া আমি ফিরে যাব , পরে দেখা করে নেব আবার ,” ছটফট করে বলে উঠলো রিক্ত ,” একটা আরজেন্ট দরকার এসে গিয়েছে ,”
” কিন্তু কেন ! এখনো তো ফেস্টিভেল শেষ হয়নি …
এরপরে তোমাকে আমার ফ্যামিলি মেম্বারের সাথে দেখা করাবো ভেবেছিলাম ,” আশাহত ভঙ্গিতে বলে উঠলো মিয়া
” না প্লিজ , অন্য কোন একদিন …
আমাকে ফিরতেই হবে ,” বলে মিয়ার উত্তরের অপেক্ষা না করেই ভিড়ের মধ্যে মিশে গেল রিক্ত , ওর গমনপথের দিকে চেয়ে থাকা মেয়েটির চোখে ততক্ষনে জমা হয়েছে দুফোঁটা অশ্রু ,
———
লাঞ্চ সেরে ডাইনিং রুম ছেড়ে নিজের অফিসরুমে চলে আসে ডরোথি , অগুনতি ফাইলের মধ্যে তাকিয়ে থাকা একদম উপরের ফাইলটা সজোরে টেনে নিয়ে উল্টোতে থাকে দ্রুত হাতে ,
সুনির্দিষ্ট পাতাটা আসা মাত্র ফাইলের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে প্রায় ,
নাম রিক্ত বাসু , পেশায় অটো রেসার ,
বয়স তেতাল্লিশ ,
“ওহ , আমার থেকে আট বছরের ছোট ,” আপনমনে বিড়বিড় করে পাতার উপর পাতা উল্টাতে থাকে দ্রুত হাতে , রিক্তর অতিউৎসাহতা তার মধ্যে সন্দেহ বাড়াচ্ছে বৈকি , বড্ড বেশি তাড়াহুড়ো হয়ে যাচ্ছে যেন সবকিছু ।
” কোথাও কিছু নেই যে !” ফাইল ঘাটা শেষ করে চেয়ারে বসে পড়ে ডরোথি ,
” ম্যাডাম আপনি কি আজ সিন্ডিকেটে যাবেন না !” একজন কর্মচারী অযাচিতভাবে প্রশ্ন করে ওঠে অফিস রুমে ঢুকে , ওর কণ্ঠস্বরে খানিকটা যেন চমকে ওঠে ডরোথি , তারপর স্বভাবজাত চিল চিৎকারে চৌহদ্দিটা ভরিয়ে দিতে গিয়েও চুপ করে যায় সে ,
নতুন একজনকে জীবনসঙ্গী হিসেবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্তের পাশাপাশি ‘ বেইমানির ‘ চিন্তাটাও মাথায় ঢুকে বসে আছে , তাই খামোখা নিজেকে উত্তেজিত না করে শান্ত থাকার চেষ্টা করল পুরোদমে ,
” রিক্তর ঘরের ডুপ্লিকেট চাবিটা টেবিলে দিয়ে যাও তো ! আর আমার অনুমতি না নিয়ে ফের অফিসে ঢোকার দুঃসাহস দেখাবে না !” নির্দেশ দিয়ে ফের ডুবে গেল ফাইলের মধ্যে ,
” অনাথ , বিপত্নীক ,”
মোটা মোটা অক্ষরে লেখা বায়োডাটাগুলো বার দুয়েক উচ্চারণ করে মনটা খুশিতে ভরে ওঠে ওর ,
সাদামাটা ইন্ডিয়ান , ধর্মভীরু আস্তিক , ঠিক যেমনটা পার্টনারশিপ হিসেবে ডরোথি চাইতো ,
পিছুটানহীন এবং স্বাধীন ,
যার কাছে নিজের অধিকারবোধ বজায় রাখার সাথে সাথে আনুগত্যও বজায় থাকবে ,
” ডরোথি চাবি ,” ঝনাৎ করে চাবির গোছাটা টেবিলের উপর আচম্বিতে ফেলতেই চমকে ওঠে মধ্যবয়স্ক মহিলাটি , সুদীর্ঘ দশ বছরের অনুগত কর্মচারীর এরূপ দুঃসাহসের কারণ খুঁজে পায় না কিছুতেই ,
বারবার অনুমতি না নিয়েই অফিস রুমে ঢুকে পড়ছে , সাথে ম্যাডাম সম্বোধনের বালাই টুকু নেই ,
রাগে একেবারে মাথার শিরাটা দপদপ করে উঠল ওর ,
চাবির গোছাটা মুঠোবন্দী করে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠলো ডরোথি ,” গেট আউট ”
মাথাটা যে তালগোল পেকে গিয়েছে ওর , তা বলাই বাহুল্য ।
দিন কয়েকের মধ্যেই দুটো পেটি চুরি , সাথে খুন এবং কর্মচারীর এরকম অসভ্যতা ওকে সন্দিগ্ধতার মধ্যে ফেলে দিয়েছে ,
সবথেকে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো রিক্ত এই বাড়িতে
আসার পরই সবকিছু হচ্ছে , সেইমতো সন্দেহের তালিকায় স্বল্পপরিচিত ইন্ডিয়ানকেই শীর্ষ স্থানে রেখেছে সে ,
চিন্তিত মুখে আজগুবি ভাবনা ভাবতে ভাবতে ডরোথি চলে এলো রিক্তর ঘরের দিকে ,
ফাইল ঘেটেও ঠিক নিশ্চিন্ত হচ্ছে না সন্দেহবাতিক মনটা ,
দিনকয়েক আগে রিক্তর রাত্রে না ফেরা ,হুটহাট রিয়েল এস্টেট থেকে বেরিয়ে যাওয়া ওর সন্দেহ বাড়াচ্ছে বৈকি ,
” হতে পারে একটা ভালো মানুষের মুখোশের আড়ালে ওই কাজগুলো করছে ,” আপন মনেই বলে উঠে অতিসন্তর্পণে দরজাটা খুলে পা রাখে ভিতরে , পরিপাটি করে রাখা ঘরে কোনরকম অসামঞ্জস্যতার চিহ্নমাত্র নেই ,
তবুও চারদিকে ঘুরে দেখতে শুরু করলো ডরোথি । ড্রেসিং টেবিলের নিচ , বেডের কোনা , ড্রয়ার ,
কাবার্ড বাদ দিল না , সব কিছুই খুলে খুঁজতে লাগল তন্ন তন্ন করে ,
” নাহ কোথাও সন্দেহজনক কিছু নেই ,” দুগ্ধফেননিভ শয্যাতে ধপ করে বসে পড়ে ডরোথি ,
দৃষ্টি কাচের জানলা ছাপিয়ে বাইরের বাঁশের সাঁকোটির দিকে স্থির ,
এমন সময় চোখ চলে গেল দেওয়ালের ঝুলিয়ে রাখা গাঢ় বাদামী রঙের ওভারকোটের দিকে ,
পায়ে পায়ে সেদিকে এগিয়ে গিয়ে পকেটে হাত পুরে দিলো , একটা সাদামাটা ভিজিটিং কার্ড ছাড়া কিছুই নেই সেখানে , কোনরকম ট্রেস না পেয়েও হাল ছাড়ল না ও ,
আংটা থেকে ওভারকোটটা নামিয়ে নাক ঠেকিয়ে মস্ত বড় শ্বাস নিলো ,
কিন্তু নাহ , একটা পুরুষালী ঝাঁঝালো গন্ধ ছাড়া তেমন কিছুই পেলনা …..
” আরে ম্যাডাম , বিয়ের ডিসিশান নিতে নিতেই এত ভালোবাসা ! শেষমেষ গায়ের গন্ধ শুঁকে বেড়াচ্ছ ! ” প্রবলভাবে চমকে পিছন ফিরে তাকালো ডরোথি , মুখ ফিরিয়েই যাকে দেখল তার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলনা ও ,
সরু সরু দুই চোখের ধূর্ত চাহনি মেলে যে মানুষটি ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে , সেটা আর কেউ নয় ওর দশ বছরের অনুগত কর্মচারী তথা ভৃত্য মিস্টার হার্নান্দেজ , রেড ইন্ডিয়ান ওই লোকটাকে দেখে মাথাটা চট করে জ্বলে উঠলো ডরোথির ,
” তোর সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি ! অনুমতি না নিয়ে অফিস রুমে ঢুকছিস , ইনফ্যাক্ট বেডরুমেও ?”
” বেডরুমটা তো তোমার নয় , তুমি কেন ঢুকছো তবে ?” একপা দুপা করে এগোতে এগোতে প্রশ্ন ছুড়ে দিল লোকটা ,
মুখের উপর এরকম সপাট জবাব শুনতে একেবারেই অভ্যস্ত নয় ডরথি ,
উপরন্তু ওর চাহনিও বড্ড সন্দেহজনক… উদ্দেশ্য সুবিধার ঠেকছে না মোটেই ,
সাথে মালকিন সম্বোধনের পরিবর্তে একেবারে
‘ তুমিতে ‘ নেমে আসায় প্রচণ্ড রেগে গেল ও ,
” আজকাল বেশ বডিকন ড্রেস পরছো দেখছি , আবার নিজের হাতে খাইয়েও দেওয়া হচ্ছে ..”
কথাগুলো শুনে রাগের পারদটা ক্রমশ বাড়তে থাকলেও নিমেষেই রূপান্তরিত হয়ে গেল শঙ্কাস্রোতে ,
ততক্ষনে হার্নান্দেজের পিছনে একজন অচেনা মানুষ এসে দাঁড়িয়েছে ,
যে কিনা সম্পূর্ণভাবেই ডরোথির অপরিচিত ,
ওর কাছে সমস্ত ধাঁধাটা জলের মত পরিস্কার হয়ে গেল ,
দুই পেটি মাল হাপিস করা থেকে শুরু করে বিশ্বস্ত সাগরেদকে খুন করার পরিকল্পনার মূলে যে মিস্টার হার্নান্দেজই তা বুঝতে বিন্দুমাত্র ভুল করল না , সাথে ডরোথিই যে এখন ওদের নেক্সট টার্গেট সেটা বলাই বাহুল্য ,
কেমন একটা বিমর্ষভাব ছেয়ে গেল মনটার আনাচ-কানাচ ,
শারীরিক সামর্থ্য তলানিতে ঠেকেছে , এই চেহারাতে দুজন শক্ত সমর্থ পুরুষমানুষের সাথে যে এঁটে উঠতে পারবেনা , তা ভালো মতই জানে ও… বছরের পর বছর আপন মনে করে একসাথে পথচলা মূল্য এইভাবে দিতে হবে তা বোধহয় স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি !
চোখ দুটো জ্বালা জ্বালা করে উঠল ডরোথির ,
” এই সময় যদি রিক্ত থাকতো ,” বলতে না বলতেই চেনা-পরিচিত গলাটা এসে ধরা দিলো ওর কর্ণপটহে ,
মনের মধ্যে জেগে থাকাটা ক্ষীণ আশাটা জেগে উঠল এবার , সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দুজন পুরুষমানুষের মুখের অভিব্যক্তিও পরিবর্তিত হয়ে গেল নিমেষেই ,
কেউ চিনে ফেললে যে জেলে জেলের ঘানি টানতে হবে তা বলাই বাহুল্য ,
নিজেদের মধ্যে মুখ চাওয়াচাওয়ি করতেই রিক্ত ঢুকে পড়লো ঘরের ভিতরে ,
নিজের পার্সোনাল রুমে অযাচিতভাবে তিনজনের প্রবেশে প্রচন্ড অবাক হয়ে গেলো , কিন্তু সম্পূর্ণ ঘটনাটা বুঝে ওঠার আগেই একটা শক্ত পুরুষালী হাত জাপ্টে ধরলো ওকে ,
দৃশ্যটা দেখে হাউমাউ করে উঠলো ডরোথি , সুতীব্র মেয়েলি চিৎকারে এবার কেঁপে উঠলো রিয়েল এস্টেটটা ।
পূর্বনির্ধারিত প্ল্যান যে এইভাবে বিফল হয়ে যাবে , তা বোধহয় স্বপ্নেও ভাবতেও পারিনি মিস্টার হার্নান্দেজ ,
বেশি কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাংলোর অন্য প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গুটিকয়েক চাকর-বাকর ছুটে এসেছে রিক্তর ঘরে ,
ততক্ষনে হার্নান্দেজের হাতটা সজোরে মুচড়ে দিয়ে বড় বড় শ্বাস ফেলছে রিক্ত ,
ওর ঘেমে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকেই ধিক্কার দিয়ে উঠল ডরোথি ,
সুতীব্র অনুশোচনায় ততক্ষনে ছেয়ে গিয়েছে মনটা ,
এই মানুষটিকে কিনা সন্দেহের চোখে দেখেছিল ও ! যার জন্য আজ ও প্রাণে বেঁচে গেল ….
চক্রান্তকারী লোক দুটোকে ততক্ষনে সার্ভেন্টদের হেফাজতে রেখে রিক্ত এগিয়ে এসেছে ডরোথির দিকে , ফর্সা মোটাসোটা দুই হাত শক্ত করে চেপে ধরে ঝাকুনি দিয়ে উঠলো এবার ,
এই দৃষ্টি ডরোথি চেনেনা ,
ভীরু , নম্র , গোবেচারা রিক্তর চিহ্নমাত্র নেই তাতে ,
” তুমি কে ডরোথি ! কী তোমার পরিচয় ?” ওকে ঝাকাতে ঝাকাতে রিক্ত বলে চলেছে ততক্ষণে ,
আলগাভাবে নিজেকে প্রথমে রিক্তর বন্ধন থেকে ছাড়িয়ে নিল ডরোথি , তারপর শক্ত পাঞ্জাটা নিজের কোমল পেলব মুঠোয় পুরে পা বাড়ালো সামনের দিকে ,
#ষড়রিপু (সপ্তম পর্ব )
#প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য
পূর্ণিমার থৈ থৈ জ্যোৎস্নাকে সাক্ষী রেখে বাঁশের সাঁকোর উপরে দাঁড়িয়ে আছে রিক্ত , প্রবল হাওয়ায় চুলটা ঘেঁটে যাওয়ার সাথে সাথে সেতুটাও অল্প অল্প দুলছে ,
কিছুক্ষণ আগেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টিপাত হয়ে গিয়েছে , সাথে প্রবল বেগে হাওয়ার ঝাপটা ছুটে আসায় ঠান্ডা লাগছে বেশ ,
পরনের ওভারকোটটা ভালোমতো গায়ের সাথে সাপটে নিল রিক্ত , সময়টা এখন অক্টোবরের মাঝামাঝি । দেশে থাকলে দুর্গাপুজোর আমেজ বয়ে যেত ,
ছোট্ট করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিক্ত , শিকড়ের টান কাটানো হয়তো বড্ড কঠিন ।
তারপর চোখ রাখে আঁধারে কালো হয়ে যাওয়া দিঘির চকচকে জলের দিকে ,
কথায় বলে মেক্সিকো সিটি অপরাধের তথা অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য । দেশান্তরী আসামি ,চোরাচালানকারী , মাফিয়া সকলের নিরাপদ আশ্রয় এই মেক্সিকো ,
রাজনৈতিক স্তরে কড়াকড়ি থাকলেও তার ফাঁকফোকর যথেষ্ট ,
সেইমতো আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিভিন্ন অবৈধ কার্যকলাপ তরতরিয়ে এগিয়ে চলে ,
গ্লোবাল হেরোইন মার্কেটের প্রধান যোগানদার এই মেক্সিকো , অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে
আফিম উৎপাদন বেশ সহজসাধ্য ,
নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া ,পরিমিত বৃষ্টিপাত
পপি গাছ বেড়ে ওঠার জন্য আদর্শ ,
স্থানীয় রেড ইন্ডিয়ানরা কমবেশি এই ব্যবসার সাথে যুক্ত ,
ডরোথিও তার ব্যতিক্রম নয় , কিন্তু ওর কার্যকলাপ চাষবাসের সাথে যুক্ত নয় ,
গ্লোবাল মার্কেটে একজন স্বনামধন্য ড্রাগ সাপ্লায়ার মিসেস ডরোথি মারিয়া ,
যার প্রধান মার্কেট ইউরোপ তথা এশিয়ান কান্ট্রিগুলো ,
” ঢেঁকি স্বর্গে গিয়েও ধান ভাঙ্গে ,” আপন মনেই ফিসফিস করে উঠল রিক্ত , ও নিজেও যে একসময় নারীপাচার অপরাধের সাথে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিল । জীবনের সেই কলুষিত অধ্যায় সাঁতরিয়ে শেষ জীবনটুকু ভালো থাকার আশায় ফের ডুব দিয়েছিল নতুন অধ্যায়ে ,
কিন্তু ঘুরে ফিরে নিয়তি ফের তাকে টেনে আনলো সমাজের অন্ধকার দিকে ,
ডরোথির ভ্যাদভেদে শরীরের দিকে বিন্দুমাত্র আকর্ষণ না থাকলেও কাঁচা পয়সার দিকে আছে বৈকি ,
সহজাত বুদ্ধি তাকে অন্ধকার জগতে প্রবেশে বাধা দিলেও অপার ধন-সম্পদের মায়া যে ত্যাগ করা যাচ্ছে না কিছুতেই !
সাথে নিজেকে করা প্রতিজ্ঞাটাও রাখতে হবে যে ,
সসম্মানে দেশে ফিরে কড়ায়-গণ্ডায় পাওনা আদায় করে নিতে হবে নিজেরটুকু !
মারণরোগের হাত থেকে মুক্তি না পেলেও খোয়া যাওয়া সন্মানটা তো ফিরে পাবে ,
কতশত অপরাধী একের পর এক অনৈতিক কাজ কর্ম করে কেবলমাত্র টাকার জোরে পার পেয়ে গিয়েছে ,
” আমিও পারবো ,
এমন সময় আচমকা হ্যান্ডসেটটা কর্কশ রিংটনে নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়ে বসলে বাস্তবের মাটিতে ফিরে এলো রিক্ত ,
দশ ডিজিটের মোবাইল নাম্বারের অধিকারিণীকে ভালোমতোই চেনে রিক্ত ,
ডিজিটাল অক্ষরে সময় দেখাচ্ছে রাত্রি আটটা বেজে চল্লিশ মিনিট ,
“থাক বাজুক !” আপন মনে বলে উঠল রিক্ত ,
ফুরফুরে হাওয়া , জলের মিষ্টি কলতান , সাথে মাথায় চেপে বসা দুর্ভাবনার পাহাড়টা সরিয়ে মিয়ার ফোনকলটা রিসিভ করতে ইচ্ছে করছিলনা ওর ,
এই সময় কিছুক্ষণ একলা থাকা বড্ড প্রয়োজন , তাছাড়া রাত্রি এগারোটাও বাজেনি , সেইমতো ফোনকলটা রিসিভ না করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো ও ,
ক্রিং ক্রিং ,
আবার বাজছে , এবার খানিকটা অধৈর্য হয়ে উঠলো রিক্ত ,
” হ্যাঁ বলো ! এই অসময়ে !
তোমাকে তো আমি এইসময়ে ফোন করতে বারণ করেছিলাম !” খানিকটা ঝাঁজিয়ে উঠে ওপ্রান্তকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো রিক্ত ,” মানুষের সুবিধা অসুবিধা বুঝে চলবে তো !”
” আর্জেন্ট না হলে ফোন করতাম আমি ?
ওপ্রান্ত বলে উঠলো এবার , ” ফেস্টিভ্যালের সময় তোমাকে বারণ করা সত্ত্বেও তোমার দরকারে তুমি ফোন করেছিলে , তখন কি আমি এভাবে রাফটাফ বিহেভিয়ার ফিডব্যাকে দিয়েছিলাম ?”
“বলো কি দরকার ,” শীতল কেজোস্বরে বলে উঠলো রিক্ত , এই টালমাটাল মুহূর্তে এইসব ভ্যাজভাজানি মোটেই পোষাচ্ছেনা ওর ,
বড্ড বিরক্তিকর লাগছে মিয়ার বলে ওঠা প্রতিটা শব্দবর্ণ ,
” তুমি আজ ওইভাবে চলে এলে … কারনটা কি জানতে পারি ?” কেটে কেটে বলে উঠলো মিয়া ,
“ফেস্টিভ্যাল শেষে তোমাকে আমার ফ্যামিলির সাথে মিট আপ করাবো ভেবেছিলাম …”
~ পারপাস ?” রিক্ত ততক্ষনে বেশ অবাক হয়ে গিয়েছে । আজ সকালেই ফ্যামিলি মেম্বারের সাথে দেখা করার কথা , মিয়া বললেও ততটা গুরুত্ব সহকারে শোনার প্রয়োজন বোধ করেনি ও ,
কিন্তু এই মুহূর্তে প্রসঙ্গটা ফের মাথাচাড়া দিলে
রিক্ত বুঝতে পারল , মিয়া অত সহজে ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নয় ,
ফ্যামিলি মেম্বারের সাথে দেখা করার মাধ্যমে মিয়া যে ‘ পাকাকথা ‘ সেরে ফেলতে চাইছে , সেটা সহজেই অনুমেয় ,
সবটুকু বুঝেও শেষবারের মতো যাচাই করে নেওয়ার জন্য মিয়াকে ফের প্রশ্ন করে উঠলো রিক্ত ,” হঠাৎ এরকম ইচ্ছে ওঠার কারণ জানতে পারি ? তোমার আর আমার সম্পর্কের মেয়াদ
তো বেশিদিনের নয় মিয়া ,”
ওর বক্তব্য শুনে ততক্ষণে ওপ্রান্ত চুপ হয়ে গিয়েছে , বোধহয় কথাগুলো সাজিয়ে নিচ্ছে নিজের মধ্যে ,
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলো মিয়া ,” তুমি আমাদের ফিউচার প্ল্যানিং এর ব্যাপারে ভাবতে চাওনা তাই না ?”
পাল্টা প্রশ্ন করায় খানিকটা থতমত খেয়ে গেল রিক্ত , এইভাবে সরাসরি প্রশ্ন উঠে আসবে তা বোধহয় ভাবতে পারেনি , মিয়াকে ভালোলাগলেও
কখনো সেভাবে গভীর সম্পর্কে যেতে চায়নি ,
বিয়ে তো নৈব নৈব চ ,
যার নিজেরই কোনো ভবিষ্যত নেই , জীবনকালের মেয়াদ জানা নেই তার পক্ষে বিয়ে নামক বন্ধনে জড়িয়ে পড়া কি অতই সহজ !
উপরন্তু মিয়ার কাছে ডরোথির মত অর্থ সম্পদের প্রাচুর্যও নেই ,” তাহলে ওকে বিয়ে করতেই বা যাবো কেন !” আপনমনেই বলে ওঠে রিক্ত ,
শারীরিক উদ্দামতার সাথে মানসিক বন্ধনের সুক্ষ্ম জালবিন্যাস গড়ে উঠলেও ব্যাপারটাকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করতে মোটেই আগ্রহী নয় সে ,
দু-একদিনের শারীরিক মিলন অবধি ঠিক আছে ,
তার বেশি কোন কিছুই নয় ।
এখন এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে নিজের উপর নিজেরই রাগ হচ্ছে রিক্তর , একদিকে ডরোথির বিপুল অর্থ-সম্পদের হাতছানি অন্যদিকে মিয়ার
প্রতি জেগে থাকা সূক্ষ্ম টান ,
দুই নৌকার সওয়ারি মিস্টার রিক্ত বাসু ততক্ষনে বেশ ফ্যাসাদে পড়ে গেছে ,
মিয়ার স্বভাবে নাছোড়বান্দা ভাব লক্ষ্য করলেও যে এতটা দূর অব্ধি যেতে পারে , তা ভাবনার বাইরেই ছিলো ,
“ফোকাস রিক্ত ফোকাস ,” আপন মনেই নিজেকে বোঝানোর ভঙ্গিতে বলে উঠলো ও , ” ভুলে যেওনা মিয়া , ডরোথি এরা তোমার ফোকাসে নয় ,
কেউ না এরা , সুতরাং এসব ইমোশনাল প্যানপ্যানানিতে মজে যেওনা ,”
” রিক্ত আই অ্যাম প্রেগনেন্ট , খানিকটা ম্রিয়মাণ গলায় বলে উঠল মিয়া ,” আর আমি এই বাচ্চাটাকে রাখতে চাই !”
” হোয়াট ,” আপাতনিরীহ শব্দগুলো কর্ণপটহ ভেদ করা মাত্র উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে প্রায় চিল্লিয়ে উঠলো রিক্ত ,” তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে , আর ইউ ক্রেজি ?”
” অ্যাবসোলিউটলি নট ,” রিক্তকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠল মিয়া ,
কণ্ঠস্বরের ম্রিয়মাণ ভাব কেটে গিয়েছে মুহূর্তের মধ্যেই ,”ইন্টিমেট করলে বাচ্চা আসা স্বাভাবিক ,”
” কিন্তু কিভাবে !” রিক্তর মাথাটা তালগোল পেকে গিয়েছে ততক্ষনে ,” আমরা যে প্রটেকশন নিয়েছিলাম ,”
শেষ কথাটুকু বলতে গিয়েও থেমে গেল রিক্ত ,
উত্তেজনার আগুনে পুড়তে গিয়ে প্রটেকশন না নিয়েই মিলন করে বসেছে ও ,
” শোনো আমি ভেবে নিয়েছি বাচ্চাটা আমি রাখবো ,”
” তুমি কি পাগল হলে মিয়া !”
” না , স্বাভাবিক আছি , আমি যা ডিসিশন নিয়েছি ভেবেচিন্তে নিয়েছি , আর শোনো … ধীরে ধীরে বলে উঠলো মিয়া ,
” হোয়াট রাবিশ ! উচ্চস্বরে চিল্লিয়ে বলে উঠলো রিক্ত ,
” তুমি ডিসিশন নিয়েছো মানে , আমার এখনো কোনো ফিউচার নেই প্ল্যানিং নেই , আর …”
” আর , আর কি রিক্ত !” ততোধিক উচ্চঃস্বরে বলে উঠলো মিয়া ,” দায়িত্ববোধ এড়াতে চাইছো তাইতো ?”
” একদমই নয়” , ওপ্রান্তকেও উত্তেজিত হতে দেখে খানিকটা নরম হয়ে এলো রিক্তর কণ্ঠস্বর ,
তারপর মিয়াকে বোঝানোর ভঙ্গিতে বলে উঠলো ” ” আমি তোমাকে ভালোবাসি মিয়া , কিন্তু এখন
এই সিচুয়েশানে আমার পক্ষে সম্ভব নয় ,
আমার মনে হয় ওটাকে ….”
” অ্যাবর্ট করবে বলতে চাইছো তাই তো ?”
রিক্তর মনের কথাটা কোন অজানা মন্ত্রবলে পড়ে নিয়ে বলে উঠল মিয়া ,” সেক্ষেত্রে তোমাকে স্পষ্ট ভাবে বলে দিই আমি এই বাচ্চাটাকে অ্যাবর্ট
করবনা , আমি জানি এখন আমরা কেউই ফ্যামিলি প্লানিং এর জন্য প্রস্তুতি নই ,
কিন্তু এই নিষ্পাপ শিশুটাকে আমি কিছুতেই ছেঁচে ফেলতে পারবনা , ”
” কিন্তু ” কথাবলার মাঝপথে রিক্ত বলে উঠতে চাইলেও মিয়া বলে চলেছে অনর্গল ,
” তোমার বাচনভঙ্গি বলে দিচ্ছে বিয়ে করার জন্য একেবারেই ইন্টারেস্টেড নও ,তাই ফ্যামিলি মেম্বারের সাথে দেখা করানোর কথাটা এড়িয়ে গিয়েছিলে ইচ্ছাকৃতভাবে ,”
খানিকক্ষণ থেমে আবার যোগ করলো মিয়া ,
“আমি বুঝতে পারছি তোমার পক্ষে এখন বিয়ে করা টা বড্ড কঠিন , প্রথমত তুমি ইমিগ্র্যান্ট
দ্বিতীয়ত কেরিয়ার প্লানিং পোক্ত নয় , সো …”
শেষের কথাটুকু যেন বেজে উঠলো রিক্তর কানে ,
আজ মিয়ার মত ছাপোষা চিত্রশিল্পীও অকপটে বলে ফেলল কথাগুলো ,
‘ হাতি কাদায় পড়লে ব্যাঙও লাথি মারে ,” প্রবাদ বাক্যটি যেন অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেল রিক্তর জীবনগাঁথার সঙ্গে ,
অপমানে রাগে ততক্ষনে দপদপ করে উঠেছে মাথার রগ দুটো , প্রত্যুত্তরে কিছু বলার উপক্রম করতেই থেমে গেল রিক্ত
তখনো অনর্গল ভঙ্গিতে বলে চলেছে মিয়া ,
” আমি যা পয়সা উপার্জন করছি তাতে দুজনের খরচ দিব্যি উঠে যাবে , ফ্যামিলিকে পাশে পাব কিনা জানিনা , কিন্তু পিছু হটছিনা ,”
কথাটুকু শেষ করে জবাবে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কলটা ডিসকানেক্ট করে দিল মিয়া ,
নিষ্প্রাণ যন্ত্রটার দিকে হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল রিক্ত , এতটা দৃঢ়চেতা মেয়ে ওর জীবনে আগে আসেনি ,
রিজেক্টেড হওয়ার পরেও কোনো রকম ন্যাগিং নেই কান্নাকাটি নেই , উল্টে রিক্তর অক্ষমতার কথা বলে দিলো কৌশলে ,
ডিসকানেক্ট করার পরেও গরম সিসের মত গেঁথে বসেছে বাক্যবাণগুলো ।
” এদেশের মেয়েরা বোধহয় এরকমই হয় , ” বিড়বিড়িয়ে উঠল রিক্ত , স্বাবলম্বী , স্বাধীন , দৃঢ়চেতা
সাধারণ বাঙালি মেয়ে হলে যে এতক্ষণে কত বড় অঘটন ঘটে যেত , তা বলাই বাহুল্য ।
কিন্তু জাতিগত দিক থেকে পার্থক্য থাকলেও স্বভাবে এক অদ্ভুত মিল খুঁজে পেল রিক্ত ,
মাতৃত্বের অহংকার….
বর্ণ জাতি দেশ ভেদাভেদ থাকলেও জীবনের এই সারমর্মটি যেন সব ক্ষেত্রেই অকৃত্রিম ,
অহনাও ঠিক এমনটাই করতো , বিয়ের পরপর কনসিভ হওয়ার পর আনন্দে আটখানা হয়ে গিয়েছিল ,
সন্তান সন্ততিতে বিশেষ কিছু আকর্ষণ বোধ না থাকায় রীক্তর কাছে এতদিন এগুলো নেহাতই গাইয়া , মিডল ক্লাস মেন্টালিটি ছিলো ,
কিন্তু অর্ধ গোলার্ধ পেরিয়েও অহনার মতো সেম টু সেম স্যাম্পেল পেয়ে রীক্তর ধারণা ভেঙে গেলো ….
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আনসেভড নাম্বারটা ডিলিট করে দিল সে ,
” হাই ” মুহূর্ত পেরোতে না পেরোতেই ডরোথির গলাটা ঝাপটা মারলো ওর কানে , ” একলা একলা বসে কি করছো , সবকিছু ঠিকঠাক ?”
” একদম , তোমাকে দারুন লাগছে ডরোথি ,”
পরম আশ্লেষে ব্ল্যাক বডিকোন ড্রেস পরা থপথপে মধ্যবয়স্ক মহিলাকে জাপ্টে ধরল রিক্ত ,
তারপর ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো ,” কালই আমরা রেজিস্টার অফিসে যাব , আমার আর ধৈর্য থাকছে না ,”
সন্দেহের বিষবাষ্প উড়ে যাওয়ায় রিক্ত প্রস্তাবে সহজেই রাজি হয়ে গেল ডরোথি , সম্মতি জানিয়ে কপালে একটা স্নেহের চুম্বন এঁকে বলে উঠল ,
” তবে তাই হোক ”
অপার ধনসম্পত্তি তথা লুপ্ত সন্মানের পুনরুদ্ধারে সুখস্বপ্নে বুঁদ হয়ে যাওয়া রিক্ত বসু ততক্ষনে ডুব দিয়েছে ডরোথির বাহুবন্ধনে ,
আশা করি ভালো লাগছে সবার, সঙ্গে থাকবেন সবাই