ষড়রিপু,১০,১১

0
499

#ষড়রিপু,১০,১১
#কঠোরভাবে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য
দশম পর্ব

সুদৃঢ় ওয়ালনাটের দরজাটা খুলে গেল সশব্দে,এক লাফে দু’তিনটে সিঁড়ি পেরিয়ে পুরুষালী অবযবটা লাফ দিলো সামনের বিস্তৃর্ণ ঘেসোজমির দিকে,
পিছুপিছু ডরোথিও দৌড়াচ্ছে সমানতালে, স্বচ্ছ রাতপোশাক পরেই উদ্ভ্রান্তের মতো বেরিয়ে এসেছে সে, রিক্তর আচমকা ধাবমানের কারণ ঠাহর করতে পারছেনা কিছুতেই,

“কি হলো! কিছু তো বলো ,”পুরুষালী অবয়বটা মাঝপথে থেমে যেতেই উৎকণ্ঠা ভরে প্রশ্ন করে ওঠে ডরোথি, ” এইভাবে রাতবিরেতে এস্টেট থেকে বেরিয়ে যাওয়া কতটা বিপদ সংকুল বোঝো ?”

” বিপদ ! বিপদ এতক্ষণ বাইরে ওৎ পেতে দাঁড়িয়েছিল,” হাত থেকে তাজা শিকার ফসকে যাওয়ায় গর্জন করে উঠল ও, চোখ থেকে হতাশা রাগ ঠিকরে বেরোচ্ছে ততক্ষনে ,
মৃদু আলোতে সেই দৃষ্টির আভাস না পেলেও থতমত খেয়ে গেল ডরোথি, শান্তশিষ্ট নিরীহ লোকটার এক নতুন রূপ দর্শন করার পর যারপরনাই অবাক হলো সে, দিন কয়েক আগে মিস্টার হার্নান্দেজের কবল থেকে বাঁচানোর সময়ও রিক্তর রুদ্রমূর্তি দেখেছিল ,
প্রাবল্য এতটাও বেশি ছিলো না তখন,

পরিস্থিতির উত্তপ্ততা বিচার করে চুপ হয়ে গেল ডরোথি , কিন্তু জিজ্ঞাসু ভাব কমলোনা ওর,

উদভ্রান্তের মতো এদিক-ওদিক তাকানোর পর ডরোথির দিকে চোখ পড়ল রিক্তর,
জোৎস্নার আলোকে স্বচ্ছ বেশবাসের আবরণ পেরিয়ে ওর মোটাসোটা শরীরটা প্রস্ফুটিত হয়ে গিয়েছে বেশ খানিকটা,
নিম্নগামী দুই স্তনের দিকে চোখ চলে যেতেই পরনের গরমজামাটা খুলে ফেললো রিক্ত,
তারপরে ডরোথির চোখে চোখ রেখে বলে উঠলো, “তুমি ঘরে যাও, আমি কিছুক্ষণ পরে আসছি,”

“তুমি যাচ্ছ কোথায় ?” প্রশ্নটা জ্যা মুক্ত তীরের মত বেরিয়ে আসতে চাইলেও আত্ম সংবরণ করে নিল ও, তারপর বাধ্য মেয়ের মত দুদিকে মাথা হেলিয়ে
গরম জামাটা চাপিয়ে নিল নিজের গায়ে,

“ঘরে যাও ,” নির্দেশের ভঙ্গিতে রিক্ত ফের বলে উঠতেই যন্ত্রবৎ পুতুলের মত বাংলোতে ঢুকে গেল
ডরোথি,
ওর গমন পথের দিকে তাকিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল রিক্ত, মানুষের প্রকৃতি শিখেপড়ে নেওয়ার সহজাত ক্ষমতা আছে ওর,
ডরোথি আর পাঁচটা মেয়ের মত নরমসরম নয় সেটা এক দেখাতেই বুঝে গিয়েছিল,
অনুরোধ-উপরোধ মিউ মিউ করলে বাগে আনা যাবেনা ওকে, এর জন্য চাই প্রখর সূক্ষ্মবুদ্ধি সাথে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা,
জোরালো গলায় নির্দেশভঙ্গিতে আদেশ করে উঠলে প্রত্যুত্তরে কিছু জবাব দেয় না ডরোথি, সেটা লক্ষ্য করেছে রিক্ত,তাই সেই সুযোগটার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে ভুল করেনি,
কিছুক্ষণ আগে সেই ক্ষমতাকেই কাজে লাগিয়েছে রিক্ত,

বুক ভরে একটা শ্বাস নিয়ে রিক্ত ততক্ষনে পুরো জায়গাটা পায়চারি করতে শুরু করে দিয়েছে, এমন সময় চোখ গেল সামনের কাদামাটির দিকে,

জায়গাটা ওদের বেডরুমের জানলার ঠিক উল্টোদিকে ,
ঘেসো জমির মধ্যে এক টুকরো কাদা জমিতে
এক জোড়া পায়ের ছাপ স্পষ্ট দেখতে পেল রিক্ত,
আরো খুঁটিয়ে দেখতে পকেট থেকে ফ্লাশলাইটটা বার করলো সে,

“তাহলে ভুল দেখিনি আমি,’ কুটিল হাসি খেলে গেল ওর চোখেমুখে,
মনটা খানিকটা স্বস্তি পেলেও দুর্ভাবনায় ভরে উঠল, “কিন্তু কে আমার খোজে আসতে পারে,?
দিয়া?”
নামটা মনে পড়তেই চেনা ভয়টা ফিরে এলো রিক্তর , এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত!
“কিন্তু আমার খোঁজ পাবে কি করে,”

চিন্তাটা জোর করে সরিয়ে রেখে ফের চোখ রাখলো কাদামাটিতে বসে যাওয়া ছাপের দিকে,
এটা যে একটা মেয়েরই পা সেই ব্যাপারে নিশ্চিত,

জোড়া ভাবে ছাপটা লেপ্টে আছে ,অর্থাৎ দুই পা জোড়া করে কেউ দাঁড়িয়ে ছিল কিছুক্ষণ আগে ,
ঢেউ খেলানোর আঁকিবুকি রেখাগুলো নির্দেশ করছে জুতোটা বেশিদিনের নয়, নতুনই প্রায়,

কিছুক্ষণ আগেই এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গিয়েছে,
মানুষের পায়ের আকারের সেই গর্তে বৃষ্টির জল এসে জমাও হয়েছে,
“সবই তো বুঝলাম , কিন্তু শিকার যে হাত ফসকে বেরিয়ে গেল !” খেদোক্তি করে উঠলো রিক্ত,

কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় পায়ের ছাপ অনুসরণ করার কোন উপায় নেই,
ঘাসে ভরা জমিটার খুব কম জায়গায় কাদামাটি আছে ,সেইমতো ফলো করার চেষ্টা করে কোন লাভ হবে না ,

তাছাড়া রিয়েল এস্টেটের সাথে মূল ভূখণ্ডের সংযোগস্থল বাঁশের সাঁকোটা,
যে এসেছিল সে সাঁকোর উপর দিয়ে গেছে,
কাজেই বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে পায়ের ছাপ পাওয়াটা বেশ কঠিন, বালি হলে ধরে ফেলা যেত সহজেই,

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালো রিক্ত, তারপর কি মনে হতে এগিয়ে গেল বাংলোর পূর্ব প্রান্তের দিকে, সপ্তাহ খানেক আগেও এদিকের ঘরটাতে ওর বাসস্থান ছিল…
ডরথির সাথে লিভ ইন করার সময় থেকেই,

কি মনে হতে আগের ঘরের জানালার সামনে এগিয়ে গেল রিক্ত ,
দিন কয়েক আগে এই ঘরের সামনেই রহস্যময় সেই মেয়েটি ওর দিকে নজর রাখছিল,

প্রথম প্রথম ভেবেছিল ডরোথি হয়তো মেয়েটার টার্গেটে , কিন্তু ততক্ষণে ভুল ভেঙে গিয়েছে ওর,

কয়েক পা এগোতেই বন্ধ জানলার দিকে চোখ চলে গেল রিক্তর ,

ধুলো পরা নোংরা জানালাটায় কাদামাটি মাখা হাতের ছাপ স্পষ্ট, সেদিকে তাকিয়েই বুকটা ধক করে উঠলো ও,
চওড়া শেডের জন্য বৃষ্টির জল কাদামাটির ছাপটাকে ধুয়ে দিতে পারেনি,

“এখানেও এসেছে!” ফিসফিসিয়ে বলে উঠল ও,
এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে জায়গাটায় মোটেই নিরাপদ লাগছে না ওর,

বলা যায় না মেয়েটা সশস্ত্রও হতে পারে,
সেক্ষেত্রে অন্ধকার এই কোণে ওকে মেরে ফেলে দিলেও কেউ কিচ্ছুটি টের পাবে না !

আশঙ্কাটা মনে চেপে বসতেই সম্বিৎ ফিরে পেল রিক্ত , তারপর চটপট পা বাড়ালো বাংলোর এন্ট্রান্স পয়েন্টের দিকে ,

” এবার বলা যাবে ? কি হয়েছে জানতে পারি ?” বেডরুমে ঢুকতেই ডরোথি প্রশ্ন ছুড়ে দিল ওকে,” বিছানায় সোজা হয়ে বসা থলথলে শরীরটা দেখে খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকাতে ফেলে দিলো ওকে ,
তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে সেকেন্ডের মধ্যেই স্মার্টলি জবাব দিল ,”আমার মনে হয় তোমার বাংলোর বাইরে সিকিউরিটি রাখা উচিত,”

” মানে ? কি বলতে চাইছো তুমি?” , ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো ডরোথি,” কারখানার দিকে একজন সিকিউরিটি রাখা আছে, এখন বাড়ির সামনে কি প্রয়োজন?”
দুমূহূর্ত থেমে ফের বলে উঠলো ,”বেশি সিকিউরিটি গার্ড বসালে পুলিশ সন্দেহ করবে, আমি তো কোনো সেলিব্রেটি নই !”

“অবশ্যই না, কিন্তু আমার কাছে তো অনেক কিছু তাই না ?” ঠোঁটের কোণে কুটিল হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলো রিক্ত,” তুমি নিশ্চয়ই জানো ডরোথি, তুমি আমার কাছে কি…”

চাতুর্যের সূক্ষ্ম চালটা ঠিক ধরতে পারল না ডরোথি, মিথ্যে প্রশংসা বাক্যে ততক্ষনে লালচে মুখটা উজ্জ্বল হয়ে গিয়েছে, কিছুক্ষণ আগের দুর্ভাবনাটা কেটে গিয়েছে তা বলাই বাহুল্য,

ওর মনের ভাবটা নিখুঁত ভাবে পড়ে নিয়ে রিক্ত বলে উঠলো,” দিন কয়েক আগেই এক বিশ্বস্ত কর্মচারী তোমাকে মেরে ফেলার প্ল্যান কষেছিল,
সেটা তো রিপিটও হতে পারে!”

“কি বলতে চাইছো ?” রিক্তর কথার আগাপাশতলা উদ্ধার করতে না পেরে প্রশ্ন করে উঠলো ডরোথী,
” আমাকে আবার টানছো কেন ?”

“তোমাকে টানছি না, জাস্ট সত্যিটা জানাতে চাইছি,” ডরোথির চোখে চোখ রেখে বলে উঠলো রিক্ত,” বাইরের কাদামাটিতে পাওয়া পায়ের ছাপটা তো সেটাই বলছে ,”

~” ছাপ ?কার পায়ের ছাপ ?”

~”যে তোমার মার্ডারের প্ল্যান করছে, তার পায়ের ছাপ, যেটা জানলার বাইরে দেখে আসলাম একটু আগে,” এক নিঃশ্বাসে বলে গেল রিক্ত,”এরপরেও কি কোন এক্সপ্লানেশন চাও ?”
আত্মবিশ্বাসের কন্ঠ বলে উঠল রিক্ত ,” তোমার উপর হামলা হয়েছে এক মাসও পেরোয়নি , তাহলে বেফালতু রিস্ক নেওয়াটা কি খুব প্রয়োজন ?
মনে রেখো তুমি কিন্তু আমার কাছে অনেকটা দামি,” হালকা চালে বলে উঠলো রিক্ত,

“তুমি কি করে বুঝলে টার্গেটে আমি আছি? তুমিও তো থাকতে পারো,” কথার পিঠে প্রশ্ন করে উঠলো
ডরোথি,

~”আমি ?” অট্টহাস্যে ঘরটা ভরিয়ে দিয়ে বলে উঠলো রিক্ত,” আমার কোনো পরিচয় আছে যে শত্রু থাকবে আমার ? কে আমি !
তোমার স্বামী ?
না আছে কোন অপরাধের ব্যাকগ্রাউন্ড, না আছে কোন অবৈধ কার্যকলাপের অভিজ্ঞতা ,”
এক নিঃশ্বাসে বলে উঠলো রিক্ত ,
“তোমার পরিচয় আছে ডরোথি,
মেক্সিকো এর টপ ড্রাগ মাফিয়া তুমি ,এই ইন্ডাস্ট্রির অধিকারিণী,
সুতরাং তোমার উপরে হামলা হওয়া স্বাভাবিক বুঝলে ম্যাডাম ,”বলে কাছে এগিয়ে গিয়ে চুমুর আলতো পরশ বুলিয়ে দিলো গালে,

“হ্যাঁ ঠিকই তো, রিক্তর আবার কোন শত্রু হতে যাবে!” চিন্তিত মুখে মনে আপন মনেই বলে উঠলো ডরোথি , ~” হুমম, ইউ আর রাইট,
“ঠিক আছে , আমি এখনই কিছু ব্যবস্থা করছি,” চিন্তিত মুখে বলে উঠলো ,

~” অত ভেবোনা , আমি আছি তো !” হালকা হেসে বলে উঠলো রিক্ত ,

” সত্যি.. তুমি আমার জন্য কতটা ভাবো,” মাথাভর্তি ঠাসা চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠলো ডরোথি, তারপর পা বাড়ালো নিজের অফিস রুমের দিকে ,

মোটাসোটা অবয়বটা চোখের আড়ালে যেতেই নিজের মুঠোফোনের উপর ঝাপিয়ে পড়লো রিক্ত,
অভ্যস্ত হাতে কীপ্যাডে চাপ দিতে দিতে চলে গেল নিজের কেস হিস্ট্রিতে।

পুলিশের তদন্ত কতখানি এগিয়েছে তার ভিত্তিতেই নির্ভর করবে এদেশে হানা দেওয়া,
সেটা দিয়া হোক,
বা অন্য কোন লেডি অফিসার ,

ক্রমশ

#ষড়রিপু(একাদশ পর্ব)
#প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য
সোনাঝরা রোদে সাপের মত আঁকাবাঁকা রাস্তায় ব্ল্যাক মার্সিডিজটা এগিয়ে চলেছে তীব্রবেগে,
মেক্সিকো সিটিতে এমন রৌদ্রোজ্জ্বল শুকনো দিন পাওয়া রীতিমত ভাগ্যের ব্যাপার,
ঠান্ডা, স্যাঁতসেঁতে ভাব এই শহরের নিত্যসঙ্গী,
কিন্তু এত সুন্দর একটা দিন পেয়েও রিক্তর মনটা ঘেঁটে আছে,
একে তো গতরাত্রের সেই বিভীষিকা, উপরন্তু
সিবিআইয়ের অগ্রগতি ওর নির্ঘুম রাত্রি জাগরণ এর জন্য যথেষ্ট ছিল ,

ছবির মত দৃশ্যপটগুলো পিছলে বেরিয়ে গেলেও
বাইরের চঞ্চল শহরে দৃষ্টিসুধা পান করার মুডে নেই রিক্ত,
পুরুষালী ঘন জোড়া ভ্রু এর কুঁচকে যাওয়া অভিব্যক্তি জানান দিচ্ছে রিক্তর মনের দুশ্চিন্তা,

“মিস্টার অজয় বাজাজকে গ্রেফতার করা হয়েছে,” গুটিকয়েক শব্দসমষ্টিই ওর রাত্রের ঘুম উড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল,

গদি আঁটা নরম বিছানায় শরীরটাকে রাতভর মেলে রাখলেও এপাশ ওপাশ করেই নির্ঘুম রাত্রি জাগরনে কেটেছে,
মেক্সিকোতে আসার পর নিজের দেশের খবর ঠিক মতো রাখতে পারেনি রিক্ত। কর্মব্যস্ততার জালেই হোক বা নিজের উদাসীনতা, নিজের কেসের আপডেট রাখতে পারেনি নিয়মিত,
মুহূর্ত খানেকের সেই ভুলেই গুরুত্বপূর্ণ খবরটা অনেক দেরিতে পৌঁছেছে ওর কাছে,

চোখ বন্ধ করে একবুক শ্বাস নিয়ে তালগোল পাকিয়ে যাওয়া মাথাটা শান্ত করার চেষ্টা চালালো রিক্ত, রিক্ত গতরাত্রে সেই রহস্যময়ী মেয়ের পায়ের ছাপ এখন আবার মিস্টার বাজাজের গ্রেফতারের খবর শুনে মাথাটা দপদপ করছে ওর,

“তাহলে হাওয়া উল্টোদিকে বইতে শুরু করে দিলো,” আপন মনে বলে উঠল রিক্ত,
কলকাতায় রুলিং পাওয়ার বিরোধী দলের হাতে চলে গিয়েছে, অরিন্দমের মৃত্যুর পর ওর ওমেন্স ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন আড়ালে নারীপাচার চক্র জনসমক্ষে উন্মোচিত হয়ে গেছে!

বিরোধী দলের কাছে তলে তলে খবর থাকলেও
এতদিন চুপ করে বসে ছিল সুযোগের অপেক্ষায়,
” কোণঠাসা হওয়ার সুযোগ হয়তো সবাই নিতে চায়,” নিজমনেই বলে উঠলো রিক্ত,
অপজিশন পার্টিও তার ব্যতিক্রম হলোনা …

একের পর এক মার্ডারের পর সবটুকু খবর প্রুভ সমেত জানিয়ে দিয়েছিল মিডিয়াকে, এখন জনতার চাপে পড়ে সিবিআই কেসটা হ্যান্ডেলিং করছে,

“সময় বোধহয় সবকিছুই ফিরিয়ে দেয় ,”বিড়বিড় করে উঠলো রিক্ত, এই অপজিশন পার্টিই একসময় ওদেরকে তেলিয়ে চলত, দেখা হলে একগাল হেসে কথা বলার সাথে সাথে বুকে জড়িয়ে ধরতো,

আজকাল সবাই বোধহয় মুখোশের অন্তরালে.. মুখ , মুখোশের অসম খেলাতে মুখোশই যেন জিতে যায় বারে বারে,

সুযোগ বুঝে ওরাও এখন বিষাক্ত ছোবল মারছে সাথে জনতার সহানুভূতি জিতে রুলিং পার্টিও হয়ে গিয়েছে,
মিস্টার বাজাজ যে অপজিশন পার্টির চক্রান্তে গ্রেপ্তার হয়েছে তা ভালোমতোই বুঝতে পারল রিক্ত,
এই মানুষটাই রিক্তর জন্য ভিসা, জালি পাসপোর্ট জোগাড় করা থেকে শুরু করে নিজের চাটার্ড ফ্লাইটে মেক্সিকোতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিল,
মা ,প্রেমিকা সমেত গোটা দুনিয়া ওর বিপক্ষে চলে গেলেও বিপদের দিনে একমাত্র এই মানুষটাই সাহায্য করেছিল ওকে,
“মিস্টার বাজাজ না থাকলে হয়তো আজ আমাকে জেলে পচে মরতে হতো!” চিন্তিত মুখে বলে ওঠে রিক্ত,”কিন্তু ওনাকে জেরা করে যদি আমার কাছেও চলে আসে !” কঠোর বাস্তবটা মানসপটে ভেসে আসতেই শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে যাওয়া ঠান্ডা স্রোতটা টের পেল রিক্ত,

“স্যার এসে গিয়েছি আমরা, নামুন…” ড্রাইভারের কণ্ঠস্বরে বাস্তবের মাটিতে ফিরে আসলো রিক্ত,
নাকটা একটু টেনে দরজাটা খুলে বাইরের মাটিতে পা রাখল সে,
প্রায় বছরখানেক বাদে মার্সিডিজের চড়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করল রিক্ত, একসময় নিজের গ্যারাজে সেম মডেল থাকলেও এখন সেটা ছোয়ার উপায় তথা অধিকার নেই ওর,
দীর্ঘশ্বাসটা আটকে পা বাড়ালো সামনের করিডোরের দিকে,
সুবিশাল বহুতল বিল্ডিং এর থার্ড ফ্লোরে ওর অ্যাপয়মেন্টমেন্ট ঠিক করেছে ডরোথি,

এবং সেই উদ্দেশ্যেই সাত সকালে বেরিয়ে পড়তে হয়েছে রিক্তকে এবং অবশ্যই মালকিনের পার্সোনাল ড্রাইভারকে সাথে নিয়ে,

“স্যার এদিকে আসুন,” ড্রাইভার এর নির্দেশ পাওয়ার পর যন্ত্রচালিত পুতুলের মত অনুসরণ করল রিক্ত,
“একজন প্রাক্তন ফিল্ম প্রডিউসার এখন ছাপোষা ড্রাইভার এর নির্দেশ মত এগোতে বাধ্য হচ্ছে, হায়রে অদৃষ্ট !” আপন মনে বলে উঠল রিক্ত,
ওর খাওয়া-দাওয়ার রেসিপির মত কোথায় যাবে , কিভাবে যাবে সেটুকুও ডরথি ঠিক করে দিচ্ছে,

“শেষমেষ আমাকে একটা মেয়ের অঙ্গুলি-হেলনে চলতে হচ্ছে!”

“আপনারা কিছুক্ষন ওয়েট করুন ,ডক্টর একজনের সাথে কনসালটেশনে অলরেডি বিজি রয়েছেন ,” রিসেপশনের মহিলাটা ওদের দুজনকে মিষ্টি স্বরে বলে উঠতেই কোনের সোফাটায় ধপ করে বসে পরলো রিক্ত,
সময়টা হয়তো আরো খারাপ যাচ্ছে ওর, ভাগ্যের খোঁজে এক দেশ থেকে পালিয়ে অন্য দেশে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে চলে এলেও পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি কিছুই, আজও উন্নতি অধরাই আছে,
আগে অন্য কারোর অধীনে থাকার দুর্ভাগ্য অর্জন না করলেও সময় দোষে এখন পরের গোলামী করতে হচ্ছে,
‘ স্বামী ‘ নামক সম্পর্কশৃঙ্খলা বিধিতে বেঁধে ডরোথি ওকে কেনা আসবাবের মতো ব্যবহার করে যাচ্ছে, প্রতিদানে ভরপেট খাবার এবং নিরাপদ আশ্রয় মিললেও আত্মসম্মান তথা নিজের ইচ্ছে গুলো কবরে চাপা পড়ছে ইচ্ছামত,

“স্যার আপনি কি বরাবরই এরকম গম্ভীর,” সুবেশ ড্রাইভারটা আলাপ জমানোর চেষ্টা করে উঠলো হাসিমুখে,” না মানে, আসলে আমার সময় কাটতে চাইছে না”

“একদম ঠিক ধরেছেন আপনি, আমি এরকমই গম্ভীর,” সপাটে জবাবটা দিয়ে সামনের ব্যালকনির দিকে এগিয়ে গেল রিক্ত, এই টালমাটাল সময়ে এইসব খেজুরে আলাপ মোটেই পোষাচ্ছে না ওর ,
হাতে এখনো গ্রীন কার্ডটা এসে পৌঁছায়নি, উপরন্তু বাজাজ সাহেব গ্রেপ্তার হয়েছে..
“ওর পেটে জোরালো চাপ দিলেই সুড়সুড় করে কথা বের হয়ে আসবে, তখন এদেশে সিবিআই ডিপার্টমেন্টের হানা দেওয়া মুহূর্তের অপেক্ষা মাত্র ,”

“স্যার এবার আপনারা এগিয়ে যান,” রিসেপশনিস্ট মহিলাটি হাসিমুখে বলে উঠতেই করিডোরের দিকে হনহন করে হাঁটা লাগাল রিক্ত, পিছু পিছু ড্রাইভারটা অনুসরণ করল ওকে,
ঘাড় ফিরিয়ে ওকে দেখে প্রচন্ড বিরক্ত হলো রিক্ত,
এযে ডরোথির মতো পিছু ছাড়েনা !

“শোনো , তুমি কিন্তু বাইরেই দাঁড়াবে, ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করবেনা একদম, কিছু পার্সোনাল কথা বলার আছে ডাক্তারকে,” রূঢ় স্বরে একদমে বলে উঠলো রিক্ত,” তাই তুমি এখন সোফাতে গিয়ে বসতে পারো!”

” একচুয়ালি স্যার, ম্যাডাম আমাকে আপনার সাথে সবসময় থাকতে বলেছিলেন,” আমতা আমতা করে জবাব দিয়ে উঠলো সেই লোকটা,

“ডরোথি আমার স্ত্রী, কাজেই ওর কাছ থেকে কোনোকিছু লুকোবো, এটা আশা করে বসো না !”
চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠলো রিক্ত,” আর আমি কোনো বাচ্চা নই,
তাছাড়া ডাক্তার তোমাদের পরিচিত , সেরকম অসুবিধা হলে পরে এইব্যাপারে এনকোয়ারি চালাতে পারো !”কেটে কেটে বলে উঠলো রিক্ত,” নইলে আমি অ্যাপয়মেন্ট ক্যানসেল করতে বাধ্য হব,”

“নানা স্যার, প্লিজ আপনি রাগ করবেননা ,” কাচুমাচু ভঙ্গিতে জবাব দিলো সেই লোকটা, ” আমি সোফাতে গিয়ে বসছি,”

“গুড , নাউ গো,” কাঠিন্য ভাব বিন্দুমাত্র না কমিয়ে রিক্ত ফের এগোতে লাগলো সামনে থেকে, এমন সময় চেনা পরিচিত অবয়বটা ওর চোখের সামনে ধরা দিতেই বুকটা কেঁপে উঠল ধড়াস করে,

একি মিয়া ! মিয়া এখানে কি করছে !

লম্বা সরু করিডোরে আত্মগোপনের কোন আড়াল খুঁজে পেল না রিক্ত, আশঙ্কায় ছট্ফট করে উঠলো ও, খানিক অন্যমনস্ক ভাবে ধীর পায়ে মিয়া মুখটা নিচু করে এদিকেই এগিয়ে আসছে…

এক বুক শ্বাস নিয়ে আগত ঝঞ্ঝার প্রহর গুনতে লাগল রিক্ত, তারপর ওয়েডিং রিংটা পকেটে চালান করে দিল তড়িৎ গতিতে,

“হাই ! কেমন আছো?” ঘাবড়ে যাওয়া মনটাকে আড়াল করতে স্মার্টলি বলে উঠলো রিক্ত, এইসব পরিস্থিতি হ্যান্ডেল করার উপায় ভালোমতোই জানা আছে ওর,” তুমি এইখানে ?শরীর ঠিক আছে তো ?”

মীয়ার দুধ সাদা গোলাপী মুখে পূর্বের সেই উদ্ভাসিত আভা হারিয়ে গিয়েছে, যেন বড্ড নিষ্প্রাণ লাগছে তেইশ বছরের ভরাট চেহারার সেই তরুণীকে,
“ভালো আছি, তুমি?” ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলো মিয়া,

“ভালো নেই আমি,” ভুরু দুটো কুচকিয়ে বলে উঠল রিক্ত,” তোমার সাথে আমার কথা আছে,”

তারপর ড্রাইভার এর দৃষ্টি এড়াতে একটু সামনের দিকে এগিয়ে বলে উঠলো,” আই অ্যাম সরি”

“হোয়াট ! বিস্ময় বিরক্তির রেশ ছড়িয়ে পড়ছে মিয়ার মুখ থেকে,”কিন্তু কেন!”

প্রত্যুত্তরে কিছু না বলে মেঝের দিকে তাকিয়ে থাকলো রিক্ত, তারপরে মুখটা তুলে মিয়ার চোখে চোখ রেখে বলে উঠলো,” খুব শিগগিরই আমি তোমার অ্যাপার্টমেন্ট এ যাবো, আর মাঝের দিনগুলোর কথা ভুলে যেও প্লিজ,”

“স্যার আপনি এখনো ভিতরে যাননি ?” ড্রাইভার এর কথাগুলো কানে ভেসে আসলেই একটা ঝটকা খেলো রিক্ত, এই আশঙ্কাটাই করছিল এতক্ষণে ,

অপরিচিত একটা মেয়ের সাথে রিক্ত হেসে হেসে কথা বলছে, এটা ড্রাইভার এর মাধ্যমে ডরোথির কাছে চলে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয় ,

সন্দেহবাতিক মহিলাটা তারপরে কি করতে পারে তা বলাই বাহুল্য,

“বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে গেল , আর কিছুই না ,
হাসিমুখে কোনমতে বলে উঠল রিক্ত,
“আচ্ছা তুমি আসো মিয়া, আমি তোমার সাথে পরে কথা বলে নেব,” বলে ড্রাইভারের হাতটা টানতে টানতে ডক্টরের কেবিনে ঢুকে গেল রিক্ত…

ডরথির এমন অদ্ভুত সন্দেহবাতিক আচরণের কারণ কাল উন্মোচিত হবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here