#ষড়রিপু,১৮,১৯
#কঠোরভাবে_প্রাপ্তবয়স্কদের_জন্য
অষ্টদশ পর্ব
ডরোথির প্রাণহীন দেহটা মেঝের এককোণে পড়ে রয়েছে। আধখোলা নিষ্প্রাণ চোখের চাউনি সিলিংয়ের দিকে নিবদ্ধ। খোলা মুখে কয়েকটা মাছি ভনভন করছে। গা গুলিয়ে ওঠা সেই দৃশ্য দেখলে সাধারণ কোনো মানুষ হড়হড় করে বমি করতে বাধ্য। কিন্তু মৃতদেহের ঠিক উল্টোদিকে চেয়ারে বসে থাকা শক্তপোক্ত পুরুষালী অবয়বটি স্যান্ডউইচ খেয়ে যাচ্ছে একমনে। অর্ধেক খুলে রাখা স্বচ্ছ জানলার আবরণ ছাপিয়ে সবুজ ঘাসে ভরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখছে নির্বিকার চিত্তে।
ঘেসো জমির শেষে দিঘির টলটলে দেখতে দেখতে আঙ্গুলে লেগে থাকা পিনাট বাটার চেটে নিল রিক্ত।
ডরোথির অ্যালার্জি থাকলেও স্বামীর প্রিয় খাবার হওয়ায় ডরোথিই আনিয়েছিল পাঁচ কেজির বিশাল বড় ডিব্বাটা।
অর্ধেক খালি হয়ে যাওয়া ডিব্বার দিকে তাকিয়ে নিজের অজান্তেই শিস দিয়ে উঠলো রিক্ত। সুন্দর রোদে ঝলমল পরিষ্কার দিন আগে পেলেও মনটা ততটাও খুশি হয়নি ওর। কিন্তু লক্ষ্যপূরণের এতটা কাছে এসে মনটা খুশিতে ভরে আছে রিক্তর।
ঘন নীল আকাশের প্রতিবিম্ব চুইয়ে পড়েছে দিঘির জলে। টলটলে জলের স্নিগ্ধতা মাখা বিশাল বড়ো দিঘিটা রিয়েল এস্টেটের সৌন্দর্য বিবর্ধক হলেও রিক্ত ভালো মতই জানে এই দীঘির সারমর্ম।
অগণিত মানুষের রক্তস্রোত গিলে রাখা নিষ্পাপ স্বাদুজলের ভান্ডার…যার উদ্দেশ্য এখন মধ্যবয়স্কা
দেহাংশের সূক্ষ্ম ভগ্নাংশ। গোটা মারিয়া পরিবারের সর্বনাশের নির্বাক সাক্ষী।
এই দিঘির সাথে নিজের এক অদ্ভুত একাত্মতা অনুভব করতে পারলো রিক্ত।
দুজনেই ভালোমানুষের মুখোশ এঁটে থাকা জ্যান্ত দানবের নিখুঁত প্রতিমূর্তি। পার্থক্য এটাই একজন সজীব এবং আরেকজন নির্জীব।
নিজের জড় প্রতিমূর্তির দিকে এখনও একমনে চেয়ে আছে রিক্ত। “ডরোথির দেহটাও টুকরো টুকরো করে ভাসিয়ে দেবো দিঘির জলে।” স্যান্ডউইচের শেষ টুকরোটা মুখে পুরে বলে উঠলো রিক্ত। তারপর ঘাড় ফিরিয়ে চোখ রাখলো স্ত্রীয়ের নিষ্প্রাণ শরীরের দিকে। আধখোলা মুখের উপরে গুটিকয়েক মাছি ভনভন করছে তখনও।
দৃশ্যটা দেখেই আচমকা হাসি পেয়ে গেল রিক্তর। লালশাড়ি পরা অতিফর্সা চেহারার দিকে তাকিয়ে মনের ভাব গোপন করতে পারলোনা ও,”বড্ড বেশি স্বামী সোহাগী হওয়ার শখ জেগেছে! ওয়েস্টার্ন ড্রেস ছেড়ে শাড়িতে অভ্যস্ত হওয়া, ভোরে ঘুম থেকে উঠে আমার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে আসা…
উফফ! ভাবতেই অবাক লাগে।” হাসতে হাসতে বলে উঠলো রিক্ত। “স্বামীকে ইম্প্রেস করার কাজে এতটা বুদ্ধি খরচ না করলেও পারতো মেয়েটা। তার থেকে আমার হিস্ট্রি জানলে কাজে আসতো, বুঝলে মামনি! তাছাড়া তোমার প্রতি কারোর সমবেদনাটুকুও জাগবেনা! বরং আপদ বিদায় হবে।” বেডরুমের মধ্যেখানে বসে আপনমনেই ড্রাগ মাফিয়া মৃতা স্ত্রীয়ের সাথে খোশগল্পে মত্ত আছে রিক্ত। কে বলবে এই লোকটা মাত্র মিনিট পনেরো আগে একটা জলজ্যান্ত মানুষকে মেরে ফেলেছে!
“তাহলে এখন মারিয়া ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক কে?” মেঝের উপরে পড়ে থাকা মৃতদেহকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো রিক্ত। তারপর পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল ওয়ারড্রবের দিকে। দামী ওয়ালনাট উড নির্মিত আসবাবের পাল্লাটা একঝটকায় খুলে ফেলল সে। তক্তার এককোনায় পেটমোটা ফাইলটা উঁকি মারছে। জয়েন্ট ইনসুরেন্সের নথি তথা সম্পত্তির সমস্ত কাগজপত্র যেখানে রক্ষিত আছে তা বলাই বাহুল্য।
হাতটা সেদিকে বাড়াতেই ঘরের বাইরে জুতোর খসখস আওয়াজ স্পষ্ট শুনতে পেলো রিক্ত। এক অজানা ভয়ে হৃদপিণ্ডটা লাফিয়ে উঠলো ওর। ডরোথির লাশটা তখনও মেঝের উপরে একইভাবে পড়ে আছে। ঘাড় ফিরিয়ে আধখোলা দরজার দিকে তাকাতেই শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে যাওয়া ঠান্ডা শীতল স্রোতটা স্পষ্ট বুঝতে পারলো রিক্ত।
আধভেজানো পাল্লার ফাঁকা দিয়ে লম্বা কালো ছায়াটা এগিয়ে আসছে এদিকেই। একটু ভালো করলে লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে ছায়াটা একটা মানুষের নয়, বরং দুজন মানুষের উপস্থিতি বহন করছে।
সেদিকে তাকিয়ে মাথাটা অদ্ভুত শান্ত হয়ে গেলো রিক্তর। চট করে পকেটে রাখা ইনহেলারটা শক্ত করে চেপে রইল সে। তারপর বাড়ীর বাইরে থাকা নিজের জড় প্রতিমূর্তির দিকে তাকিয়ে রইল মুহূর্তের জন্য।
সেদিকে তাকিয়ে নিজের মার্ডার ওয়েপনটা ছুঁড়ে মারলো বাইরের দিকে। নিপুণভাবে লক্ষ্য ভেদ করার মত সেই স্বল্প ফাঁক দিয়ে ইনহেলারটা বাতাস কেটে বেরিয়ে গেলো বাইরের জমিতে। ঘন পুরু ঘাসের আস্তরণ থাকায় শব্দও হলোনা কোনো।
আওয়াজ ততক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে দরজার প্রায় কাছেই।
ক্রমশ বড় হতে থাকা সেই ছায়াযুগলের দিকে তাকিয়ে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিল রিক্ত। তারপর ঝট বসে পড়লো মেঝেতে।
“ম্যাম!” একটা আর্তচিৎকার ভেসে এলো রিক্তর কানে। সঙ্গে থাকা আরেকজন কর্মচারী ততক্ষনে বসে পড়েছে মেঝেতে। মালকিনের নিষ্প্রাণ শরীরটা ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে জাগানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে অসহায়ের মতো।
উল্টোদিকে বসে থাকা মালকিনের স্বামীর দিকে তাদের চোখ গিয়েছে ততক্ষণে। দুই হাঁটুর মাঝে মুখ গুঁজে বসে থাকা রিক্তর অভিব্যক্তি বুঝিয়ে দিচ্ছে তার মানসিক পরিস্থিতির অবনতির পরিমাণ।
“স্যার, কি করে হলো এসব! ম্যাডাম মাত্র…”কথা শেষ করার আগেই তাদের দিকে মুখ তুলে চাইল রিক্ত। তারপর ভাঙা গলায় অস্ফুটে বলে উঠলো,”পুলিশ ডাকো!”
—–++++—–
ঘনকালো অফিশিয়ালি ড্রেসে মেক্সিকান পুলিশ ঘুরে বেড়াচ্ছে ইতিউতি। গোটা রিয়েল এস্টেটে শ্মশানপুরীর নিস্তব্ধতায় গ্রাস করেছে। ডরোথির ডেথ স্পটটা ততক্ষণে ঘিরে দিয়েছে স্পেশাল আর্মড ফোর্স। ফরেনসিক টিম অতিসতর্ক ভঙ্গিতে তাদের কাজে লিপ্ত।
নো এন্ট্রি প্রিন্টেড ফিতের বাইরে চৌহদ্দিতে বসে থাকা পুরুষালী অবয়বটা চেয়ে সেদিকে। রাগে মাথাটা জ্বলে উঠেছে ওর। নিজের নির্বুদ্ধিতায় নিজের উপরেই রেগে উঠেছে ভীষণ ভাবে।
“ডরোথির লাশটা চেপেচুপে আলমারিতে লুকিয়ে রাখলেই ল্যাঠা চুকে যেত! তারপর সন্ধ্যে নামার পর দীঘিতে ডুবিয়ে দিলে ব্যাস খেল খতম!” আপনমনেই বিড়বিড় করে উঠলো রিক্ত। “না থাকত না লাশ, না থাকতো ধরা পড়ার ভয়।”
গোটা বাংলোতে সিসিটিভিও নেই, তাই ধরা পড়ার ভয়ও নেই।
এর মধ্যেই একজন ফরেনসিক অফিসার এগিয়ে এসেছেন এদিকে। রোদে লালচে ছোপ পড়া ভদ্রলোকের পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে পূর্বের বিষাদ ভাব বজায় রাখলো রিক্ত।
“গোটা বডিতে কোনো আঘাত, ইনজুরি নেই। ইনফ্যাক্ট আঁচড়ের দাগও নেই।” লম্বা লম্বা পা ফেলে লোকটা এগিয়ে এসেছে রিক্তর কাছে।
অফিসারের কথা শুনে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো রিক্ত। বিনা আঘাতে মানুষকে মেরে ফেলার এর থেকে ভালো প্ল্যান আর কীই বা হতে পারে…
শুধু হেলথ হিস্ট্রি জানলেই যথেষ্ট। আর অটুট বিশ্বাস অর্জন করার দক্ষতা।
” ব্রাভো রিক্ত, ব্রাভো!” আনন্দে খুশিতে নিজেকেই পিঠ চাপড়াতে ইচ্ছে করছিল রিক্তর। মনটা খুশিতে নাচতে চাইলেও অফিসারের সামনে আত্মসংবরণ করতে বাধ্য হলো সে।
“প্রাথমিকভাবে দেখে মনে হচ্ছে দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে ওনার। স্কিনে র্যাশও আছে গুটিকয়েক। আচ্ছা, আপনার স্ত্রীয়ের কি এলার্জিক রাইনাইটিস ছিল?”হাতের ল্যাটেক্স গ্লাভসটা ততক্ষণে খুলে ফেলেছেন তিনি।
“কই না তো!” একটা ঢোক গিলে বেমক্কা মিথ্যে বলে উঠলো রিক্ত।”আই মিন ডরোথি কখনো সেরকম কিছু জানায়নি আমাকে।”
“স্ট্রেঞ্জ!” অফিসারের চকচকে চওড়া কপালে ততক্ষণে চিন্তার গাঢ় রেখা গজিয়ে উঠেছে। খানিকক্ষণ চুপ থাকার পর ফের বলে উঠলেন তিনি,”প্রাইমারি ইনভেস্টিগেশনের পর মনে হচ্ছে ভিক্টিমের এলার্জিক রাইনাইটিস হয়েছিল। সেক্ষেত্রে অ্যালার্জি, আস্থমা হিস্ট্রি থাকলে পেশেন্টের ইনহেলার ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু সার্চ পার্টি কিছুই খুঁজে পেল না যে!”
শেষের কথাটা শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল রিক্ত। কি করে পাবে জিনিসটাকে! লম্বা, নলাকার বস্তুটা যে ততক্ষণে লুকিয়ে গিয়েছে ঘাসের পুরু চাদরে।
কিন্তু মার্ডার ওয়েপন পুলিশের হাতে পড়লো তদন্ত যে একধাক্কায় অনেকদূর এগিয়ে যাবে, সেটা ভালোমতোই জানে রিক্ত..ইনহেলারের মধ্যে থাকা ডাস্ট ওয়েপনটা সরানোর সুযোগই পায়নি সে।
টাকার লোভ দেখিয়ে ফ্যামিলি ফিজিশিয়ানের কাছ থেকে অবৈধ উপায়ে নিয়ে আসা পেনিসিলিন, পোলেন ডাস্ট মিশিয়ে অনেক যত্ন করে মিশ্রণটা বানিয়েছিল রিক্ত। ধৈর্য ধরার পাশাপাশি বুদ্ধিও খাটাতে হয়েছিলো ওকে।
পাশাপাশি কুখ্যাত ড্রাগ মাফিয়ার বিশ্বাস অর্জন করতে হয়েছিল চাতক পাখির মতো।
ক্রনিক রাইনাইটিসের পেশেন্ট ডরোথি মারিয়াকে চিরঘুমের দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য দশ গ্রামের মিশ্রণটি যথেষ্ট।
কোনো আঘাতের ট্রেস না রেখে জ্যান্ত মানুষকে মেরে ফেলার নিখুঁত সুন্দর উপায়। মূলধন হিসেবে যেখানে বুদ্ধি, বিশ্বাস আর হেলথ হিস্ট্রির ইনফরমেশন যথেষ্ট।
“এখন পুলিশ অফিসার চলে যাওয়ার ইনহেলারটা ফেলে দিতে হবে দীঘির জলে,” আপনমনেই বলে উঠলো রিক্ত। ধরা পড়লে ধনসম্পদের মায়া ত্যাগ করে এই দেশে ছেড়েও পালাতে হবে, তা বলাই বাহুল্য।
“নিজেকে জিপসি বলা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবেনা তখন।’ আপনমনে বলে উঠল রিক্ত।
কিছুক্ষন চুপ থাকার পর ফের চওড়া কপালটা চুলকে বলে উঠলেন অফিসার,”ডিপার্টমেন্টকে আপনার ফ্যামিলির পার্সোনাল ফিজিশিয়ান এর নাম্বারটা দেবেন। ভিকটিমের জেনারেল হেলথ হিস্ট্রি রিপোর্ট রেডি করতে হবে হবে। বডিটাকেও পোস্টমর্টেম পাঠাতে হবে।”
ইতিমধ্যে গোটা বাংলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সার্চ পার্টির বিশাল বড় দলটা এঘরে চলে এসেছে।
অসন্তুষ্টিতে ভরে ওঠা মুখের অভিব্যক্তিই জানান দিচ্ছে এভিডেন্স না পাওয়ার সুস্পষ্ট প্রমাণ।
“কিন্তু আপনি তো তখন বাড়িতেই ছিলেন!তাই না?” পুলিশের দলের তরফ থেকে প্রশ্নটা ছুটে আসতে চট করে উত্তরটা মনের মধ্যে গুছিয়ে নিল রিক্ত। তারপর মুখটা গম্ভীর করে বলে উঠলো,”হ্যাঁ, বাড়ি বলতে নিজের বেডরুমে ছিলাম। ডরোথি
কারখানায় বেরিয়ে যাওয়ার পর টুকটাক কাজ করছিলাম ঘরে বসে। মাঝখানে কিছুক্ষনের জন্য ওয়াশরুমে যাই। তারপর বাইরে বেরিয়ে দেখি সব শেষ!” ঈষৎ ফুঁপিয়ে বলে উঠলো রিক্ত।
“আর আপনারা দুজন?” ঘাড় ঘুরিয়ে অফিসার প্রশ্ন করে উঠলেন পূর্বোক্ত দুজন কর্মচারীকে।
“ম্যাডাম বলেছিলেন মিনিট দশেকের মধ্যেই কারখানায় ফিরে আসবেন। কিন্তু আধঘন্টা পেরিয়ে গেলেও তিনি ফিরে আসেননি, তাই আমরা দুজনে খুঁজতে খুঁজতে এখানে চলে আসি। বেডরুমে এসে দেখি এই অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছে উনি।”একজন কর্মচারী বলে উঠলো অফিসার কে উদ্দেশ্য করে।
“আর ইনি তখন কোথায় ছিলেন?” রিক্তকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন পুলিশ অফিসার।
“স্যার ম্যাডামের মৃতদেহের সামনে বসে কাঁদছিলেন।”
“মানে আপনি কি আধঘন্টা ধরে বাথরুমেই বসে ছিলেন রিক্তবাবু ?” প্রচন্ড অবাক হয়ে অফিসার ফিরে চাইল রিক্তর দিকে।” ভিকটিমকে আপনি মৃত অবস্থায় আবিষ্কার করেছিলেন, সেই হিসেব মতো ত্রিশ পঁচিশ মিনিট ওয়াশরুমে বসে থাকা কথা…হঠাৎ? কোন সিরিয়াস ইস্যু হয়েছে কী!”
“না না, অফিসার, সেরকম কিছু না… পেটটা কয়েকদিন ধরে ঠিক নেই। ক্যাজুয়াল ডিসেনট্রি।” আমতা আমতা করে বলে উঠলো রিক্ত। মনে মনে শঙ্কিত হয়ে উঠল প্রবলভাবে। সাথে ভদ্রলোকের বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা না করে পারলনা ও। “ইনভেস্টিগেশন হয়তো এটাকেই বলে।” আপন মনে বলে উঠলো রিক্ত।
“ফ্যামিলির একজন মেম্বারের এলার্জিক রাইনাইটিসে নরমাল ডেথ হয়ে গেলো। আর একজনের ডিসেন্ট্রি হয়ে গেল!” রিক্তর দিকে তাকিয়ে অবিশ্বাসের সুরে বলে উঠলেন অফিসার।”আচ্ছা, আপনাদের ফ্যামিলির ফিজিশিয়ান কন্টাক্ট নাম্বারটা দিন তো এক্ষুনি। মেডিক্যাল হিস্ট্রি জানতে হবে যে।”
“স্বাভাবিক মৃত্যু? নাকি স্রেফ খুন?” পিছন থেকে
গাঢ় পুরুষালী কণ্ঠস্বরটা ভেসে আসতেই চমকে উঠলো রিক্ত। তারপর ঘাড় ফিরিয়ে তাকানো মাত্র এক অজানা ভয়ে সর্বাঙ্গ কাঁপুনি দিয়ে উঠলো ওর। প্রায় ছয় ফুট লম্বা সেই ব্যক্তির হাতে ওর প্রাণভোমরা ধরা আছে। ঘাসমাটিতে ফেলার পরও খানিক কাদামাটি লেপ্টে আছে সেই ইনহেলারের মুখে।
নলাকার বস্তুটা রিক্তর দিকে এগিয়ে বলে উঠলেন তিনি,” এটা কি ভিক্টিমের? বাইরের জমিতে পড়ে ছিল।”
“না, মানে আমি জানিনা।” মনগড়া উত্তরটা বেরোতে চাইলেও আটকে গেলো মুখের মধ্যে।
পরিস্থিতির চাপে পড়ে জবাব দেওয়ার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে সে। জিভটা এঁটে বসেছে টাকরায়। মুখ শুকিয়ে গিয়েছে নাম না জানা খরার দাপটে।
ঘন ঘন শ্বাস ফেলছে নিজের অজান্তেই।
“কি হলো! উত্তর দিন! বাইরে কেন ফেলা ছিল ইনহেলারটা।” ফের ধমক দিয়ে উঠতেই রিক্ত চমকে উঠলো, তারপর চোখ পড়লো ছয়ফুট লম্বা লোকটার পরনের পোশাকের দিকে। এই পুলিশ অফিসার অন্য সকলের মত ফর্মাল ড্রেসে নেই।
পরনের গ্রে কালার্ড হুডিটার দিকে তাকিয়ে মাথাটা কেমন তালগোল পাকিয়ে গেলো ওর।
হুডির নিচটা খানিকটা ছেঁড়া, বুকের কাছে সুতোয় বোনা নামে নামী কোম্পানি ট্যাগলাইন। হুবহু এক।
“সেই পোশাক!” স্মৃতির অতল পেরিয়ে শীতপোশাকটা রিক্ত চিনে ফেলেছে ততক্ষনে।
“কিন্তু সেদিন একটা মেয়ে ছিলো, লম্বা খোলা চুলে থাকা একটা রোগাপাতলা মেয়ে। তবে ছেলে হয়ে গেল কি করে!” আপনমনেই বলে উঠলো রিক্ত।
“লম্বা চুল কেটে বয়েজকাট করে নিলেও শরীরটা এমন লম্বা হলো কীকরে!”
অবাক হয়ে সেই নতুন অফিসারের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলো রিক্ত। নিখুঁত কামানো মুখটা বড্ড চেনা মনে হচ্ছিল ওর। যেন কিছুদিন আগেই এমন মুখ দেখেছে সে।
“আপনি!” অস্ফুটে বলে উঠলো রিক্ত। “স্মৃতির অতল পেরিয়ে ভদ্রলোককে চিনে ফেলেছে রিক্ত ততক্ষনে….
ক্রমশ
#ষড়রিপু(ঊনবিংশ পর্ব)
#কঠোরভাবে_প্রাপ্তবয়স্কদের_জন্য
“এই জামাটা কি আপনার স্যার? নাকি আপনার ফ্যামিলি মেম্বারের?” মাথার আনাচে-কানাচে পাক খেতে থাকা প্রশ্নটা ছিটকে বেরিয়ে আসতে চাইলেও চুপ করে গেলো রিক্ত। কারণ মুঠোফোনটা ততক্ষণে সশব্দে বেজে উঠেছে।
পকেট থেকে হ্যান্ডসেটটা বার করে রিসিভ করার আগেই অফিসারের ফোনের ডিজিটাল স্ক্রিনে রিক্তর চোখটা আটকে গিয়েছে।
ইংরেজি হরফে লেখা তিন অক্ষরের নামটা পড়ার সাথে সাথে অতিচেনা মুখটা নিজের চর্মচক্ষুতে দেখার পর সন্দেহের আর অবকাশ রইল না…
“মিয়া! তুমি! কিন্তু কেন?”প্রচন্ড বিস্ময়ে রিক্ত ভুলে গিয়েছে ও কোন পরিস্থিতিতে কার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আচমকা শরীরটা খারাপ লাগতে শুরু করলো ওর। মাথাটাও কেমন জানি ঘুরছে। গোটা শরীরটা পাক খেয়ে উঠছে।
“আপনি কি শরীর খারাপ লাগছে?” কলটা ডিসকানেক্ট করে ততক্ষনে অফিসার এগিয়ে এসেছেন রিক্তর দিকে। টলে পড়ে যাওয়ার পূর্বমুহূর্তে অসীম শক্তিবলে অফিসার ধরে নিলেন রিক্তকে। হুডিতে লেগে থাকা পারফিউমের গন্ধ শুঁকে ততোক্ষণে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে।
“মিয়া! এই পোশাক মিয়ার, এই সুগন্ধি মিয়াই ব্যবহার করত..”
—–++++—-
“অ্যানাফাইল্যাক্সিস লাইফ থ্রেটনিং কন্ডিশন।নামটা খুব খটোমটো তাই না রিক্তবাবু?”
মেক্সিকান পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ছোট্ট এক কেবিনে চুপচাপ বসে আছে রিক্ত। মনমধ্যে হাজারো শংকার বজ্রনিনাদ বেজে উঠলেও বাইরে থেকে বোঝার সাধ্য নেই একেবারেই। ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ছোট্ট কেবিনটা মনের পর্যবেক্ষণ চালাচ্ছিল রিক্ত, এমন সময় উল্টোদিক থেকে ভেসে আসা ভরাট কণ্ঠস্বরের দাপটে মনঃসংযোগ বিচ্যুতি ঘটলো ওর।
“মানে!” বলিষ্ঠ চেহারার সেই পুলিশ অফিসারের কথার বিন্দুবিসর্গ ধরতে না পেরে বলে উঠলো রিক্ত। নিখুঁত ভাবে দাড়ি-গোঁফ কামানো মুখের আড়ালে যে বুদ্ধিদীপ্ত এক অবয়ব উঁকি মারছে সেটা বুঝতে পেরেই বোকাসোকা ভালোমানুষির মুখোশ এঁটে বসে আছে ও…
“মানে অ্যালার্জেন দ্বারা ঘটিত হাইপার সেনসিটিভিটি রিঅ্যাকশন। আরো পরিষ্কার করে বলতে গেলে, শরীরের অনাক্রম্যতা ক্ষমতা দ্বারা শরীরেরই মৃত্যু।” নিজস্ব রিভলভিং চেয়ারে ধপ করে বসে পড়লেন সেই ভদ্রলোক,”ফলাফল রেড র্যাশ, শ্বাসনালী ফুলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, অবশেষে মৃত্যু!”
“তো আমি কি করবো?”বিরক্তিভাবটা উগরে বেরোতে চাইলেও চুপ করে গেল রিক্ত। ভিকটিমের স্বামী হিসেবে ডিপার্টমেন্টে প্রায় জোর করে আনা হয়েছে ওকে। প্রায় আধঘন্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদের পর্ব চলছে। মার্ডার ওয়েপনটা এখনো অফিসারের হাতে বন্দি। দিকে তাকাতে গিয়ে রিক্তর চোখ ফের জামার ছেড়া অংশে পড়ে গেল।
অন্য সময় হলে ভদ্রলোকের এরকম খামখেয়ালীপনা দেখে রিক্ত মনে মনে হাসিঠাট্টাতে মেতে উঠতো। হয়তো বা স্বভাবদোষে অফিসারকে মুখ ফুটে সেকথা বলেও ফেলতো…
আজ এই বিষম পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সকালের সুখসময়টুকু উবে এগিয়েছে মাথা থেকে। বাইরে সোনাঝরা রোদের সৌন্দর্য হাতছানি দিয়ে ডাকলেও সেদিকে তাকানোর বিন্দুমাত্র ইচ্ছে জাগছেনা ওর।
হুডিটা চিনে নেওয়ার পাশাপাশি রিক্ত ততক্ষণে চিনে ফেলেছে পুলিশ অফিসারকে। ছয় ফুট লম্বা গাট্টাগোট্টা চেহারার যে লোকটি ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করে চলেছে, তিনিই মিয়ার দাদা।
দিনকয়েক আগে মিয়ার ফ্ল্যাটে গিয়ে এই লোকটাকেই রিক্ত দেখেছিল। ঘন গোঁফ দাড়িতে মুখটা ঠাসা থাকায় তখন এতটা যুবক মনে হয়নি।
“ওর দাদা পুলিশে চাকরি পেয়েছে! কই কখনো তো সেরকম কিছু জানায়নি আমাকে।” আপনমনেই মনে বলে উঠল রিক্ত।
সাথে ভগবানকে ধন্যবাদ জানাতে ভুললোনা।
এ্যাপার্টমেন্ট ঢোকার সময় মিয়ার দাদা সেদিন তাকে দেখেনি তা বলাই বাহুল্য, “হয়তো আমাদের ব্যাপারে মিয়া দাদাকে কিছুই বলেনি..”আপনমনে বলে উঠল রিক্ত,”বললে আজ ডিপার্টমেন্টে আমার স্ত্রীর মৃত্যুর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নয়, বরং নিজের বোনকে প্রতারণার অভিযোগে লোকটা টরচার করতে থাকতো! হয়তো বা জেলেই ঢুকিয়ে দিতো বিনাপ্রমানে।
“আমি কি এবার বাড়ি যেতে পারি?” প্রশ্নটা করে অফিসারের উত্তরের অপেক্ষা না করেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো রিক্ত।
ওর আস্পর্ধায় খানিক অবাক হয়ে গেলেও অফিসার মাথা নেমে সম্মতি জানালেন…
সেই সম্মতি পেয়ে রিক্ত যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।
মনের মধ্যে ঘুরতে থাকা বহু প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছে ততক্ষনে।
“রিয়েল এস্টেটে মেয়েটাকে পরপর দুদিন দেখেছিলাম আমি, উপরন্তু মিয়ার বডি আর্ট ফেস্টিভেলের দিনও হুডিটা চোখে পড়েছিল আমার, তখনই বোঝা উচিত ছিলো ড্রেসটা মিয়ার!” গজগজ করতে করতে বলে উঠলো রিক্ত। নিজের উপরেই রাগ হচ্ছে এখন… দুয়ে দুয়ে চার মেলাতে পারলেও মনটা যে এখনও বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে, তা বলাই বাহুল্য।
“এখনও অনেক প্রশ্নের উত্তর জানা বাকি।” গাড়ির সিটবেল্ট বাঁধতে বাঁধতে বলে ওঠে রিক্ত।
তারপর পা রাখে এক্সিলেটরে।
তাড়াহুড়োতে লক্ষ্য করলনা একজোড়া চোখ ওকে নজর রেখে চলেছে সর্বক্ষণ।
—-++++—-
সরু এঁদো গলি পেরিয়ে রিক্ত যখন সুনির্দিষ্ট এপার্টমেন্টের সামনে গিয়ে পৌঁছালো, তখন সূর্য প্রায় ডুবতে বসেছে। যদিও ভাঙাচোরা, শ্যাওলাধ্বরা বাড়িটাকে ‘অ্যাপার্টমেন্ট’ বললে শহরতলীতে থাকা বহু বিল্ডিং লজ্জা পাবে, কিন্তু রংচটা নেমপ্লেটে এপার্টমেন্ট শব্দটি টিকে আছে বহুকষ্টে।
সেদিক থেকে চোখটা ফিরিয়ে সরু সিঁড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করল রিক্ত।”এখানে যারা থাকে, তারাও এই এপার্টমেন্টের মতো জীবনযুদ্ধে টিকে আছে কোনমতে।” আপনমনে বলে উঠল রিক্ত।
কথাটার তির যে মিয়ার দিকে ঘোরানো তা বলাই বাহুল্য। আজকাল মিয়ার বাসস্থান তথা গোটা মেয়েটা ওর মন খসে চলে গিয়েছে। ডরোথির সম্পত্তি আত্মসাতের পর এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক…
কোনমতে শেওলাধরা দেওয়ালের ছোঁয়া বাঁচাতে বাঁচাতে থার্ড ফ্লোরে উঠে এলো রিক্ত। মনের মধ্যে সাজিয়ে রাখা প্রশ্নগুলো আউরে পা ফেললো মিয়ার ফ্ল্যাটের দিকে।
“আজ তোকে ছাড়ছিনা!” বড় বড় পা ফেলে সেদিকে এগুতেই এক ঝটকা খেলো রিক্ত।
ভাঙাচোরা দরজার আঙটায় মস্ত বড় তালা ঝোলানো। সেদিকে কয়েক মুহূর্ত বোকার মত তাকিয়ে রইল রিক্ত।
ঘটনার আকস্মিকতায় চোখের পলক ফেলতে ভুলে গিয়েছে সে।
“কোথায় গেলো মেয়েটা!” তালাটাকে কয়েকবার অধৈর্যের মত ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলে উঠলো রিক্ত।
ভারী সেই তালার আঘাতে কাঠের পুরনো পাল্লাটা কাঁপতে লাগলো অসহায়ের মতো।
ওর কাণ্ডে পাশের ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়ারা বার হয়ে এসেছে। রিক্তকে দেখে কিছু বলে উঠলেও
রেড ইন্ডিয়ান মহিলাটি স্থানীয় ভাষায় কী যে বলল, তা মোটেই বোধগম্য হল না ওর।
গোলমাল দেখে লোক জড়ো হয়ে গেছে ততক্ষনে।
ভাগ্যক্রমে একটা বাচ্চা ছেলে ইংরেজি ভাষা জানতো। আধা ইংলিশ আধা মেক্সিকান ভাষায় তার জবাব শুনে মাথায় যেন রক্ত চড়ে গেল রিক্তর।
আজ সকালেই মিয়া এই ফ্ল্যাট ছেড়ে দিয়েছে, বাড়িওয়ালাকে দুমাসের ভাড়া এডভান্স দিয়ে রাখলেও হঠাৎ এই ভাবে কেন বাড়ি ছেড়ে দিল, সেটা কারো কাছেই পরিষ্কার নয়।
“এত সস্তায় বাড়ি পাওয়া যায় নাকি! কেন যে ছেড়ে চলে গেলো!” রেড ইন্ডিয়ান ছেলেটার গলায় স্পষ্ট বিষাদের সুর।
“পালাবেনা! এখন পালাবেনা তো কখন পালাবে!”অস্ফুটে বিড়বিড় করে উঠলো উঠলো রিক্ত। হিংস্র অভুক্ত পশুর মুখের সামনে লোভনীয় খাদ্যবস্তু রেখে সরিয়ে নিলে যেমন অবস্থা হয়, রিক্তর অবস্থাও ঠিক সেরকমই হল।
সকাল থেকে একের পর এক… উপরন্তু শহরের অন্যপ্রান্তে গাড়ি চালিয়ে আসা কী কম ঝক্কির।
“আপনি বসুন, আমরা কিছু খাবার নিয়ে আসছি।” রেড ইন্ডিয়ান বাচ্চাটার আপ্যায়নের ভঙ্গিতে চেয়ার এগিয়ে দিলেও মুখের উপর না বলে দিলো রিক্ত। সমানে নিজের ভালো মানুষের মুখোশটা এঁটে থাকতে-থাকতে ধৈর্যচ্যুতি ঘটে গিয়েছে ওর।
“কাজ মিটে গেছে, এখন এখানে বসে বসে লালমুখো লোকগুলোকে দেখতে থাকবো নাকি!”
বলতে বলতে সবাইকে অবাক করে রিক্ত এগিয়ে গেল সিঁড়ির দিকে।
দ্রুতপায়ে নামতে গিয়ে বহুমূল্য কোটের গায়ে শ্যাওলার দাগ লেগে যাচ্ছে…কিন্তু সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই রিক্তর। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতেই পকেট থেকে মুঠোফোনটা বার করলো রিক্ত।
আনসেভড ব্লাকলিস্টেড নাম্বারটা কানেক্ট করলো তড়িঘড়ি।
THE NUMBER YOU ARE CALLING IS CORRENTLY SWITCHED OFF…
যান্ত্রিক নারীকন্ঠে শব্দসমষ্টিগুলো কর্ণপটহে আঘাত করা মাত্র মাতৃভাষায় অশ্রাব্য গালিগালাজ দিয়ে উঠলো মিয়াকে,”শালা খা**, কি ভেবেছিস তুই! বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আমার থেকে বাঁচতে পারবি! যেখানে গিয়ে ঘাঁটি গেড়েছিস, সেখানে পুঁতে দিয়ে আসবো তোকে!” বলে চ্যাটবক্স ওপেন করলো রিক্ত। স্ল্যাং এ ঠাসা মেসেজটা দিতে গিয়েও থমকে গেলো কিছুক্ষনের জন্য।
নাহ্, এইভাবে হবেনা, ওর দাদা ডরোথির কেসটা হ্যান্ডেল করছে। এই সময় মিয়ার সাথে দুর্ব্যবহার করা নেহাতই বোকামি, তা সহজেই অনুমেয়।
এমন সময় ডিজিটাল স্ক্রিনে অননোন নাম্বারটা ভেসে উঠতেই ঘন রোমশ ভ্রূজোড়া কুঁচকে গেল ওর।
“মিয়া নয়তো!” বলে রিসিভ করলো রিক্ত।
“হ্যালো কে?”
~”অত তাড়াতাড়ি ভুললে চলবে রিক্তবাবু?” ওপ্রান্ত হাসতে হাসতে বলে উঠেছে এবার।”যার কাছ থেকে মার্ডার ওয়েপন নিলেন, তার মোবাইল নম্বরই সেভ করতে ভুলে গেলেন!”
~”বলুন, কি দরকার?” গলাটা যতটা সম্ভব স্বাভাবিক করে উত্তর দিলো রিক্ত। মনটা কেমন কুডাক গাইছে ওর।
“মাত্র পঞ্চাশ লাখ পেসো দিয়ে শেষ? বাকি মাল কোথায়?” হাসতে হাসতে ওপ্রান্ত বলে উঠেছে আবার।
“মানে?” কথোপকথনের বিন্দু বিসর্গ বুঝতে না পেরে বলে উঠলো রিক্ত।” আপনার সাথে তো পঞ্চাশ লাখের ডিলই হয়েছিল!”
“প্রমাণ কোথায় রিক্তবাবু?কাগজে কলমে লিখিয়ে নিয়েছিলেন তো? আজকাল কিন্তু বেইমানির যুগ রিক্তবাবু! খুব সাবধান!”
“বেইমানি? নাকি চোরের উপর বাটপারি? ব্লাডি স্কাউন্ড্রেল!” নিজেকে আর সামলাতে না পেরে চিল্লিয়ে উঠেছে রিক্ত,”আমাকে ব্লাকমেইল করছিস তুই!”
“আহা, আপনি রাগছেন কেনো বলুন তো?” ওপ্রান্ত গলাটা ততোধিক মিষ্টি স্বরে জবাব দিলো,”পুলিশ ইনভেস্টিগেট করতে আসছে, এক্সট্রা তো কিছু লাগবেই।”
“কত?” চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠলো রিক্ত।
“এই ধরুন পঞ্চাশ! লাখ ভাববেন না যেন, কোটি ছাড়া কথা নেই বস।”হাসতে হাসতে ফের বলে উঠলো মারিয়া ফ্যামিলির ফিজিশিয়ান।”ইমারজেন্সি কন্ডিশনে
পেশেন্টের হাতে মেডিসিন তুলে দেওয়া কোনো ক্রাইম নয় কিন্তু, ষড়রিপুর ফাঁদে পড়ে
সেই মেডিসিন খুন করার কাজে ব্যবহার করা ক্রাইম। ভয় নেই, পেশেন্ট হিস্ট্রি এখনও বলিনি, কিন্তু আমার চাহিদা পূরণ না হলে বলতে একমিনিটও সময় নেবনা!”
“আমাকে ফাঁসালে আপনিও ফাঁসবেন যে!” গলায় শ্লেষ মিশিয়ে বলে উঠলো রিক্ত,”ডরোথির অ্যালার্জিক রাইনাইটিস থাকা সত্বেও কেন মেডিসিন দিলেন, এই কথার কি জবাব দেবেন তখন?”
“রিক্তবাবু নিজের দরকারে মেডিসিন নিয়েছিলেন, পুলিশকে এই কথাটাই জানাবো আমি।” হালকা গলাখাঁকারি দিয়ে বলে উঠলেন তিনি,”প্রমাণ কোথায় ডরোথিকে মারার জন্য মেডিসিন দিয়েছি আমি? পুলিশ তো জানবে আমি আপনার প্রয়োজনে মেডিসিন দিয়েছি, তারপর আপনি অন্য কাজে সেটার অপব্যবহার করেছেন!”
“স্টপ জাস্ট স্টপ!” আর থাকতে না পেরে চিল্লিয়ে উঠলো রিক্ত।
“একমাত্র টাকা পেলেই মুখ বন্ধ হবে আমার।”ওপ্রান্ত বলে উঠলো এবার।
“কোথায় দেখা করতে হবে?” গলাটা অসম্ভব শান্ত করে বলে উঠলো রিক্ত। ওর মাথায় অন্য প্ল্যান ঘুরছে ততক্ষনে।
ক্রমশ