#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়,পর্ব:৪,৫
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_চার
–“এই হতচ্ছাড়া বুড়ো কাকে বলছিস?”
পিছনে ফিরে দাদুকে দেখে চমকে গিয়েছে রঙ্গন, দাদুতো এই সময় নিজের ঘর থেকে সহজে বের হয় না বলেই জানে। কিন্তু এত তারাতারি তো বের হওয়ার কথা নয়।
–” কিরে কথা বলছিস না কেন?”
–” দাদু আমি বলছি, আমি আর ও ছাদে যাবো”
–” আমি তোমাকে বলিনি,এই তুই বল বুড়ো কি করেছে? কোন বুড়োর কথা বলছিলি?”
–” আরে দাদু আমাদের বাড়ির পাশে রহমান দাদুর কথা বলছে!”
শ্রাবণ বলে উঠলো কথাটা। তার মাঝেই স্নিগ্ধা এসে ব্যাঘাত ঘটিয়ে দিয়েছে।
–” এত সেজে কি কেউ ছাদে যায়? তাও আবার বাড়ির ছাদে?”
–” যেতেই পারে!”
–” তুই কি নতুন বউ? কথাটা বলেই জ্বীভ দাত দিয়ে কেটে ফেলল স্নিগ্ধা, সামনে যে নানাভাই দাড়িয়ে আছে ভুলেই গেছে একেবারে।
তা দেখে বৃদ্ধ সেকান্দার বলে উঠলেন –
–” একটু আগে তুমি কি বললে ওকে?”
–” বলেছি ও কি নতুন বউ নাকি, যেখানেই যাবে সেখানেই সেজেগুজে যেতে হবে। ব্রেন্ডেড পারফিউম, শার্ট, লেদার সু কেউ ছাদে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করে?”
শ্রাবণ দাতে দাত চেপে চেয়ে আছে স্নিগ্ধার দিকে আর মনে মনে ভাবছে একবার কাছে পাই তোমাকে। মাথায় তুলে একটা আছাড় দিয়ে দিব তোমাকে।
–” কিরে শ্রাবণ বল?ও তো ঠিকই বলেছে! এত পরিপাটি হয়ে তোর কেন বের হতে হবে। ”
–” দাদু এটাতে তুমি নেগেটিভ ভাবছো কেন? আমি নতুন বর! কত লোক আমাকে দেখতে আসবে, স্নিগ্ধাকে দেখতে আসবে। বিয়ে হয়েছে দুজনের স্নিগ্ধা নতুন বউ বলে ও কে সুন্দর দেখাবে আর আমাকে খারাপ দেখাবে তা তো হবে না। তাই আমি নিজে ও পরিপাটি হয়ে সুদর্শন রুপে নিজেকে তৈরি করেছি।”
বৃদ্ধ সেকান্দার বুঝতে পারলেন নাতি- নাতনি তার খুব চালাক হয়েছে, দুজনের একজনের সাথেও কথায় পারা যায় না। দুজনের মধ্যেই একটা লড়াই লড়াই ভাব।
এই দুটোকে নিয়ে মহামুশকিল! তিনি দুজনের দিকে একবার চেয়ে বড় ছেলে শাহাজাহানের সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে গেলেন। দাদু বেরিয়ে যেতেই শ্রাবণ এগিয়ে এলো স্নিগ্ধার সামনে,
–” তুই আমার আর দাদুর মাঝখানে কথা বলতে এলি কেন রে?”
–” তুই দাদুকে মিথ্যা বললি কেন? দাদুকে মিথ্যে কথাটা বলতেই হবে তোর?”
–” আমার দাদু আমি যখন ইচ্ছা তখন তাকে সত্যি হলে সত্যি, মিথ্যে হলে মিথ্যে বলবো! তাতে তোর কি রে?”
–” আমার নানাভাই, আমি আমার নানাভাইকে কেউ মিথ্যে কথা বলে ভুলিয়ে রাখবে তা আমি হতে দিব না!”
–” তাই নাকি কি করবি তুই?”
–” তোর নাক ফাটিয়ে দিব!” শ্রাবণের মা রান্নাঘরে যাচ্ছিলেন চিৎকার চেচেমেচি শুনে সামনে এগিয়ে এসে দেখলেন সদ্য বিবাহিত নববধূ তার আচল কোমড়ে গুজে তারই বরের সঙ্গে ঝগড়া করছে। এমনিতেই বিয়েটা নিয়ে তার মন ভালো ছিল না। এখন যেন আগুনে ঘি ঢালার মত হয়ে উঠেছে অনেকটা। তিনি চিৎকার করে ছোট যা পুষ্পিতাকে ডেকে উঠলেন –
–” পুষ্প, এই পুষ্প! দেখ, দেখ এই মেয়েটা আমার ছেলেটাকে কি বলছে এসব! জায়ের গলা শুনে দৌড়ে চলে এলেন পুষ্প,
–” কি ভাবি?”
–” দেখ, দেখ, এই মেয়েটার অবস্থা, তুই বলেছিলি না এই মেয়ে আমার ছেলের জন্য যোগ্য, আমার ছেলেটাকে আগলে রাখবে। দেখ কেমন আগলে রাখবে, বিয়ের পর থেকেই ঝগড়া, বিয়ের কয়েক বছর বাদে তো আমার ছেলেটাকে একদম জ্বালিয়ে মারবে এই মেয়ে।
–” এই স্নিগ্ধা কি করছিস কি?” আয়, আমার কাছে আয়। বলেই টেনে নিয়ে গেলেন তার সঙ্গে কাছে বসিয়ে দিয়ে স্নিগ্ধার দিকে রাগী চোখে চেয়ে বললেন –
–” এই মেয়ে,এই তুই বড় হবি না? সবসময় তোর একই রকম থাকতে হবে? কেন বারাবার শ্রাবণের সঙ্গে লাগতে যাস তুই?”
–” মামি ও নানাভাইকে মিথ্যে কথা বলছিল,”
–” তো? মিথ্যে কথা বলছিল তুই বলে চলে আসবি।
তুই ওর সঙ্গে ঝগড়া করতে যাস কেন? হুম,
ও কি এখন ছোট? তোর সঙ্গে মারামারি করতে এলে তুই ওর আঙ্গুল কামড়ে দিবে। ঘাড়ে দুম করে দুটো কিল বসিয়ে দিবি। আর ও চেয়ে থাকবে?” ও কি এখন ছোট?
-“যেদিন তোর গায়ে ওর একটা গা পরবে না তখন বুঝবি!
বেশি না দুজনের ভাব জমে যখন খির হয়ে যাবে। তখন বুঝবি এই শ্রাবণের একটা কথা আর একটা হালকা করে টোকা ও তখন কেমন বিষাক্ত লাগবে!এখন কিছুই বুঝবি নারে মেয়ে, সবেতো মাত্র ষোড়শে পা দিয়েছিস, কুড়িতে পা দেয়, একটু বড় হও সম্পর্কের আসল মানিটা ও বুঝবি।”
বলেই দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন পুষ্পিতা। স্নিগ্ধা চেয়ে আছে মামির দিকে, মামি খুব কঠিন কঠিন কথা বলেন। হয়তো তার থেকে বড় বলেই এত কঠিন কথা বলতে পারেন।
__________________________________
সকাল বেলায় একটা হুলস্থুল অবস্থা যাচ্ছে খান বাড়ির উপর দিয়ে। বাড়ির ছোটছেলে ও তার বউ বাড়িতে তেমন একটা আসে না, বছরের কোন উৎসব মুখর দিনে তাদের দেখা পাওয়া যায়। শ্রাবণের ও একই দশা সে ও খুব একটা বাড়িতে আসে না। ছুটির দিন হলে বাড়িতে আসে। তাদের নিয়ে এতটা চিন্তা না করলেও এখন বাড়ির সবচেয়ে আদরের, ও চোখের মণি স্নিগ্ধাকে যেন কেউই ছাড়তে চাইছে না। বৃদ্ধ সেকান্দার সাহেব নাতনির সামনে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছেন ঠিকই কিন্তু ভিতর টা যেন তার জ্বলে যাচ্ছে। স্ত্রী রহিমাবানুর ও একই দশা তিনি ও নাতনিকে ধরে রেখে কেদেঁ যাচ্ছেন।রহিমা বানু স্নিগ্ধার হাত ধরে শ্রাবণের হাতের মুঠোয় দিয়ে বললেন –
–” দাদু আজ তোমাকে আমি কিছু কথা বলতে চাই,
আমার এই নাতনিটা মা মরা, বাবা নেই, তিনকূলে ওর কেউ নেই। যারা আছে সবার মুখে মিছরি বুকে বিষ! কেউ ওর আপন না, কেউ ওর ভালো চায় না। আমার এই নাতনিকে আমি সেই ছোটবেলা থেকে আমার কাছে রেখে মানুষ করেছি। অল্প বয়স মেয়েটার বুঝে কম।কথায় চঞ্চল হলেও তুমি তো জানো দাদু ভাই মেয়েটা মন থেকে অনেক সরল। ও যদি কোন ভুল করে আমাকে বলো। তারপর ও কিছু ওকে বলো না। তুমি যেমন আমার নাতি ও তো আমার নাতনি আমি কারোর জন্যই ভুল কিছু চাইবো না। তুমি শুধু মেয়েটার পাশে ছায়া হয়ে থেকো!
তোমার দাদুর সঙ্গে যখন আমার বিয়ে হয় তখন আমার বয়স ছিল মাত্র তেরো বছর! খুব ছোট ছিলাম আমি, কিছুই বুঝতাম না। তখন অনেক সময় তোমার দাদুর সঙ্গে রাগারাগি করতাম, বুঝে না বুঝে মানুষটার গায়ে ও হাত তুলতাম। কিন্তু মানুষটা নিরবে সব সয়ে যেত। এই কঠিন হৃদয়ের মানুষটাই তখন আমার কাছে একজন নরম মানুষ ছিলেন। আমার পাগলামো গুলোকে তিনি পাগলামো হিসেবেই ধরতেন। কখনোই সেগুলোকে পাত্তা দিতেন না। কতগুলো বছর পার হয়েগেল সন্তানরা বড় হলো, নাতি-নাতনিরা সবাই বড় হলো। মানুষটা আগের মতই রয়েগেল। ঠিক সেই তেরো বছরের বালিকাকে তিনি যেভাবে আগলে রেখে হাতের মুঠোয় ধরে ছিলেন। এখনো ধরে রেখেছেন, এই সংসার টাকেও তিনি আগলে রেখেছেন। আমি জানি তোমরা দুজন ও ঠিক তেমনই,
একটু ধৈর্য্য ধরো, দেখবে তুমি ও ঐ রাগি বুড়োর মত কেশর বিহীন সিংহের মত গর্জন দিতে পারবে। আর এই যে তোমার সঙ্গে যে বাঘিনী আছে না সেও তোমার ভয়ে তোমার পিছনেই লুকাবে। বলেই হেসে উঠলেন –
রহিমাবানু, চোখের কোণা বেয়ের পরা জলটাকে সবার অগোচরে মুছে হেসে স্নিগ্ধার দিকে ফিরে তাকালেন আর কাছে এনে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন –
–” তুই শুনে রাখ, আমার নাতিটাকে কম জ্বালিয়ে একটু সংসারে মন দিস। পুরো জগৎ সংসার মাথায় তুলে নাচতে থাকিস সব সময়,এত নাচানাচি করবি না। বিয়ে হয়েছে, বয়স বাড়বে, একটু সংসারি হও বুঝলি!”
–“তুমি আমাকে সব সময় সময় এসব কথা বলো, আমি কি শুধু দুষ্টুমিই করি, ভালো কিছু করি না!”
-” না ভালো কিছু করিস না তাই এই কথাটা বললাম।
শুন দুজনে একসঙ্গে থাকবি, যত বিপদ আসুক হাত ছাড়বি না। ও তোর স্বামী ও ভুল করলে শুধরে দিবে!”
স্নিগ্ধা শ্রবণের দিকে একবার তাকালো শ্রাবণ মন দিয়েই সব শুনছিল হঠাৎ দুজনের চোখ পরতে স্নিগ্ধা শ্রাবণের দিকে ভ্রু নাচিয়ে উঠলো।
–” নানু আচ্ছা বর যদি ভুল শুধরাতে না চায় মানে। একই ভুল বারবার করে তাহলে বরকে পিটাতে পারবো না?”
–” ওরে বুড়ি আমার, বর তো বরই হয়, তার গায়ে হাত দিতে হয়? সে নাহয় রাগের মাথায় তুই ভুলে একটা দিলি। সবসময় মারবি নাকি? স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে মান অভিমান হতেই পারে। তাই বলে একজন আরেক জনের গায়ে হাত তুলবে এটা ঠিক নয়!”
–” তুমি তো দাদুকে মারতে, সেটা একটু আগে বললে।”
–” তখন ছোট ছিলাম, বুঝতে পারিনি!”
–” তাহলে আমি ও মারবো! আমি কি বড়?’
–” এই মেয়েকে নিয়ে পারলাম না! তুই ছোট হলি কবেরে মেয়ে, তুই তো বুড়ি!”
চলবে।
#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়!
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_পাচঁ
–” এই মেয়েকে নিয়ে পারলাম না! তুই ছোট হলি কবেরে মেয়ে, তুই তো বুড়ি!”
–“আহ! গিন্নি এবার তো একটু ছাড়ো দুজনকে, এত বেশি কথা বলছো কেন! যেতে দাও বেলা বাড়ছে, কমতো বেলা হয়নি, এখন ছাড়ো এমন ভাবে ধরেছো যেন দুজন চিরদিনের জন্য চলে যাচ্ছে!”
–” আহ! অলক্ষুনে কথা বার্তা বলছেন কেন?”
স্নিগ্ধা আর শ্রাবণের দিকে ফিরে বলে উঠলো-
–” এবার তাহলে দুজন এক হলি, সাবধানে থাকিস তোরা! বলেই বৃদ্ধা চোখের পানি মুছে স্নিগ্ধাকে জড়িয়ে ধরলেন।
সবাইকে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে বসতে গেলেই স্নিগ্ধা তার ছোট মামাকে বলল–
–” মামা আমি কোথায় বসবো?”
–” কেন? শ্রাবণের সঙ্গে!”
–” শ্রাবণের সঙ্গে মানি আমি বসবোনা! আর ওর সঙ্গে তো কখনোই না!”
–” বসতেই হবে, যা বস গিয়ে, বললেন ছোটমামি।
সামনের দুসীটে মামা-মামী, পিছনে আর আছে মাত্র দুটো সীট অগত্যা বাধ্য হয়েই স্নিগ্ধাকে বসতে হলো শ্রাবণের সঙ্গে। স্নিগ্ধা শ্রাবণের দিকে তাকালো, শ্রাবণ ঘাড় ঘুরিয়ে বাইরে চেয়ে আছে। কিন্তু তার মনে হলো শ্রাবণ এতক্ষণ তারদিকে চেয়ে ছিল। শ্রাবণ তার কেপটা দিয়ে মুখ ঢেকে বলল-
–” কোন মানুষের মুখের দিকে কেউ চেয়ে থাকলে, সেই মানুষের যে অস্বস্তি লাগে তা আপনার জানা উচিৎ!”
–” ও, আপনি মানুষ? আমি তো বনমানুষ ভেবেছিলাম!”
–” কি? আমি বনমানুষ?”
–” বনমানুষের মত লম্বা,সারাদিন কালো পোশাক পরে শোক পালন করছেন, কত বছর ধরে কার জন্য এই শোক পালন করছেন তা জানিনা। তবে একটা কথা শিকার করতে হয় বনমানুষের মত হাতপায়ের লোম গুলো ও আছে আপনার!”
–” আমার বনমানুষের মত লোম আছে? আমি কালো পোশাক পরে শোক পালন করি? বনমানুষটাই কিন্তু তোর স্বামী! এখন ভাবতো বনমানুষের স্ত্রী হলে তাকে কি বলে?”
——————–
সামনে থেকে দুজনের কথা শুনছিল মামা আর মামি দুজনে এবার হেসে উঠলেন। তারা ও স্নিগ্ধাকে বলতে বললেন।
–” কি হলো বল!”
———–
–” আমি বলছি শ্রাবণ, বনমানুষ যেহেতু পুরুষ লিঙ্গের তার বউ স্ত্রী লিঙ্গের, তাহলে বউ হলো -বনমানুষ থুক্কু বনমানুষী! কথাটা বলেই হাসতে লাগল ছোটমামা।
স্নিগ্ধা সবার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে, গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে লাগল। চট্টগ্রাম থেকে কখনো তার বাইরে যাওয়া হয়নি। আজই প্রথম তাকে তার জন্মস্থান ছেড়ে বাইরে যেতে হবে। এই তো কয়েক কিলোমিটার পেরোলে ফেনী পেরোতে হবে। স্নিগ্ধা জানালা খুলে বাইরে চেয়ে আছে, খুব ভালো লাগছে তার। সাইসাই করে বাতাস বইছে, খোলা চুল গুলোকে উড়িয়ে নিচ্ছে বাতাস।
কয়েক ঘন্টা পর প্রায় দুটোর দিকে প্রাইভেট কার টিকে কুমিল্লার একটি রেস্তোরাঁয় নিয়ে দাড় করিয়েছে মামা।
সবাই মিলে রেস্তোরাঁয় ঢুকেই খাওয়া দাওয়ার পর্ব শুরু করেছে। কিন্তু স্নিগ্ধা ইচ্ছে করেই খেলো না, মামি জোর করে কত বললেন খেতে খাবার মুখে দিয়ে দিতে চাইলে সে খেলো না। পরে ওর জন্য আলাদা করে খাবার পার্সেল করে নিয়ে নিলেন তিনি।
শ্রাবণ গাড়িতে উঠার আগে অনেকগুলো আইসক্রিম নিয়ে নিল। গাড়িতে বসেই সে একটা আইসক্রিম খেয়ে ফেললো। তারপরে আরও দুটো ইচ্ছে করে স্নিগ্ধাকে দেখিয়ে খেয়ে ফেললো। তারপর বলল –
–” চাচ্চু কুমিল্লার নূরজাহান রেস্টুরেন্টের খাবার গুলো অনেক জোস ছিল। রসমালাই টা না খুব জোস ছিল!”
বলেই ইচ্ছে করে খাচ্ছে, আর পাশে স্নিগ্ধা বসে আছে সে বাইরে চেয়ে আছে।”
শ্রাবণের সব খাওয়ার পর স্নিগ্ধা আইসক্রিম বক্স থেকে আইসক্রিম নিল একটা আইসক্রিম নেওয়ার পর। একটা
রসমালাইয়ের একটা বক্স খুলে টপ করে এক পিস মুখে পুড়ে দিল। শ্রাবণ ভেবেছিল কিছুক্ষণ স্নিগ্ধাকে সে জ্বালাবে তারপর তাকে ও আইসক্রিম দিবে। কিন্তু তার আগেই স্নিগ্ধাই সব পন্ড করে দিল।
স্নিগ্ধা শ্রাবণ যখন ওয়াশরুমে ছিল তখন এগুলো কিনে গাড়িতে রেখেছিল। আইসক্রিম গুলোকে আইসবক্সে রেখেছিল।
সারাটাদিন দুজনের মধ্যে স্নাইযুদ্ধের শেষে শ্রাবণ একটা কাজ করে বসল। গভীর ঘুমে মগ্ন শ্রাবণ স্নিগ্ধার কাধে
মাথা এলিয়ে দিল। জেগে থাকলে সে এমন করতো কিনা কে জানে। ঘুমন্ত বলেই হয়তো সে ও এমন কাজ করেছে। স্নিগ্ধা সামনে তাকিয়ে দেখল মামি ও ঘুমোচ্ছে, মামা গাড়ি চালাচ্ছে আর একটু পর পর মামির মাথাটা সোজা করে দিচ্ছে। শ্রাবণের তপ্ত নিশ্বাস তার ঘাড়ে পরছে। আশেপাশে চেয়ে দেখছে সূর্যের আলো ক্ষীণ থেকে ক্ষীণ হয়েগেছে। সন্ধ্যে বেলা বলে স্নিগ্ধার লজ্জাটা খানিক কমলো। শ্রাবণের মাথাটা সরিয়ে দিতে গিয়ে ও কেন যেন সরালো না। না থাক ঘুমাক, ঘুমন্ত বলেই তার মাফ হয়েগেল। জেগে থাকলে রক্ষা হতো না।
রাত প্রায় নয়টায় ঢাকায় এসে পৌছে গিয়েছে তারা।
স্নিগ্ধা শ্রাবণকে নিজের কাধ থেকে সরিয়ে পাশের সীটে ঠেলে বসিয়ে দিয়েই গাড়ি থেকে নেমে বলে উঠলো –
–” মামা,আমি মামির সঙ্গে উপরে যাচ্ছি! তুমি তোমার ভাতিজাকে নিয়ে আসো।” বলেই সে মামির সঙ্গে উপরে চলেগেল।
স্নিগ্ধা তার মামিকে বলে একটা আলাদা রুমের ব্যবস্থা করলো। তিনি ও কিছু বলেননি, দুজনই ছোট এত অপরিনত বয়সে বিয়ে হয়েছে, সামাজিক কাজ হয়েছে এটাই যথেষ্ট দুজন কিছুটা বড় হোক। নিজেদেরকে বুঝতে শিখুক তারপর নাহয় অন্যকিছু।
রুমের ভিতর ডুকেই স্নিগ্ধার মন ভরেগেল। বেডের পাশে
বেলকনি, বেলকনির বাইরের জগৎটা আরও সুন্দর, বেলকনির একপাশে লিলি ফুল,গোলাপি লিলি! মিষ্টি ঘ্রাণ তার নাকে বারি খাচ্ছে। এলাকাটা খুব কড়া নিরাপত্তায় ঘেরা। কোন শব্দ নেই নেই গাড়ির অজাচিত হর্ণ! ঢাকার এই ডি,ও,এইচ,এস এলাকার পরিবেশ আর চট্টগ্রামের কাতালগঞ্জের অনেক তফাৎ দুটোই আবাসিক এলাকা হলেও। স্নিগ্ধার মনে হলো এই এলাকা সুন্দর হলেও এই এলাকার লোকগুলোর মধ্যে প্রাণ নেই! হয়তো পরিবেশের ক্ষেত্রে এবং নিরাপত্তার জন্য এই এলাকাটা বেশ ভালো।
স্নিগ্ধা বেলকনির বাইরের জগৎ দেখতে দেখতে হঠাৎ চমকে উঠলো। কফির কাপ হাতে শ্রাবণ রুমে ডুকে বলল –
–” কিরে বাইরের হাওয়াই খেয়ে যাবি? সেই যে রুমে ডুকলি আর বের হলি না! নে ধর এককাপ সুভাষিত চা!”
স্নিগ্ধা কিছুক্ষন শ্রাবণের দিকে চেয়ে আছে। এত দরদ মাখা লোক তো শ্রাবণ নয়!
–” কিরে চেয়ে আছিস কেন? নে ধর! শুন আমি মানুষ হিসেবে অতটাও খারাপ না বুঝলি!”
শ্রাবণের হাত থেকে কাপটা নিয়ে নিল তারপর চুমক দিয়ে বলল-
–” কে বানিয়েছে?”
–” কেন আমি!”
–” ওয়াক থু, জঘন্য! ভাই তুই দয়া করে চা আর বানাবি না!” শ্রাবণ চা টা মুখে দিয়ে দেখল না খারাপ তো সে বানায়নি। ভালোই তো হয়েছে চা টা! বুঝতে পারল স্নিগ্ধা ইচ্ছে করে কথাটা বলেছে, যেন সে রেগে যায়।
শ্রাবণ কিছু বলল না, সে স্নিগ্ধার রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে চলেগেল।
স্নিগ্ধা শ্রাবণের দিকে চেয়ে হাতের চা টা খেতে লাগল। ভেবেছিল শ্রাবণ রেগে যাবে কিন্তু শ্রাবণ রাগ না দেখিয়ে চলেখেল। মাথা থেকে সব ঝেড়ে সে উঠে চলেগেল রুমে।
__________________________________
অন্যদিকে শ্রাবণ ভাবছে এই পাগল স্বভাবের চঞ্চল আর ঝগড়ুটে মেয়েটি কিভাবে তার স্ত্রী হয়েগেল। এর থেকে দূর কিভাবে হবে? একে নিয়ে সংসার করবে কিভাবে?
নেহাৎ দাদুর কারনে সব মেনেনিয়ছে। দাদুর কথাতো বাদ এখন দাদি ও তার হাত ধরে নাতনির হাত তুলে দিল তার হাতে। কিভাবে এত বড় দায়িত্ব সে নিবে?
দাদির বলা সব কথা তার মাথায় বারবার এসে বারি দিয়ে যাচ্ছে।
চলবে।