ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়,পর্ব:৬,৭

0
854

#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়,পর্ব:৬,৭
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_ছয় [সারপ্রাইজ]

অন‍্যদিকে শ্রাবণ ভাবছে এই পাগল স্বভাবের চঞ্চল আর ঝগড়ুটে মেয়েটি কিভাবে তার স্ত্রী হয়েগেল। এর থেকে দূর কিভাবে হবে? একে নিয়ে সংসার করবে কিভাবে? নেহাৎ দাদুর কারনে সব মেনেনিয়ছে। দাদুর কথাতো বাদ এখন দাদি ও তার হাত ধরে নাতনির হাত তুলে দিল তার হাতে। কিভাবে এত বড় দায়িত্ব সে নিবে? দাদির বলা সব কথা তার মাথায় বারবার এসে বারি দিয়ে যাচ্ছে।
__________________________

সকাল সকাল শ্রাবণ ইউনিভার্সিটির জন‍্য তৈরী হয়েগেল। ছোট মামি ও অফিসে চলে যাবে, মামা কিছুক্ষণ আগেই চলেগেছেন।স্নিগ্ধাকে ছোটমামি বললেন, খালি বাসায় হয়তো তেমন ভালো না ও লাগতে পারে। খালি বাসায় একা না থেকে ছাদে চলেযেতে।
সবাই বেরিয়ে গেলে স্নিগ্ধা পুরোটা সময় বসেই ছিল বসে থেকে একপ্রকার বিরক্ত হয়েগেল।

না এবার আর ভালো লাগছে না, ছাদে চলেগেল সে। ছাদে উঠেই দেখল পাশেই দক্ষিণ দিকে রাতের বেলায় দেখা সেই লেক। আর তার উত্তরে একটা বিশাল বড় মাঠ, মামির কাছ থেকে শুনেছে ওটা ক‍্যান্টনমেন্ট এরিয়ার মাঠ।এইদুটো স্থান ছাড়া যতটুকু চোখ যায় শুধু উচু উচু দালান আর দালান। স্নিগ্ধার চোখ যায় তাদের পাশের ছাদেই একদল ছেলেমেয়ে দাড়িয়ে আছে হাসাহাসি করছে। স্নিগ্ধা সেখানে একবার চেয়ে বাইরে তাকাতে লাগল। মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখতে লাগল। না ভালো লাগছে না,
হঠাৎ ম‍্যাসেঞ্জারে টুং করে শব্দ করে উঠলে।
ম‍্যাসেঞ্জারে ডুকেই দেখল একটি ম‍্যাসেঞ্জ রিকুয়েস্ট –

” একা বসে তুমি দেখছো কি একই নীল আকাশ?”
স্নিগ্ধার মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি এলো, কিছুটা সময় কাটানোর জন‍্য সে ম‍্যাসেজ দিল–

— “কিন্তু এখানে তো তারার দেখা পাবো না!”

–” তুমি চাইলে বৃষ্টি, মেঘ ও ছিল রাজি! অপেক্ষা সুদূর বর্ষণের!”

— “আমার নীল আকাশের ও দরকার নেই, সুদূর বর্ষণের ও প্রয়োজন নেই!”

–” আমার সকল অভিযোগে তুমি, তোমার মিষ্টি হাসিটা কি আমি?”

–” জীবনে কোনদিন দেখিই নাই, আর হাসি তো দূরে থাক ” বিরক্ত হয়ে সেই ম‍্যাসেজ দাতা এবার প্রশ্ন করল –

–” কি করে তোমার মন পাবো ষোড়শী?”

–” আমার মন পাওয়ার বৃথাই চেষ্টা করছেন, কারন আমার সীট আগেই বুকিং হয়েগেছে! আমি এখন ডাবল সীট ছাড়া চলতে পারবো না!” ঐ আইডি থেকে কিছু সেড ইমোজির ম‍্যাসেজ আসার পর স্নিগ্ধা তাকে ম‍্যাসেজ করল” বাই”। আবার সেই আইডি থেকে ম‍্যাসেজ এলো —

—“অপেক্ষায় থাকবো ষোড়শী, কখন তুমি এই হাতটা ধরো” স্নিগ্ধা আইডিটাকে ব্লক করে,উঠে দাড়ালো না সে আর অপেক্ষা করবে না যত তারাতারি সম্ভব কলেজে ভর্তি হতে হবে তাকে।ছাদ থেকে নেমেই বাসায় ডুকে পরল। আসার কিছুক্ষণ পর শ্রাবণ এলো বাসায়। হাতে কিছু একটা নিয়ে এসেছে সে। স্নিগ্ধা উচু হয়ে দেখতে চাইল, কিন্তু শ্রাবণ সেটা লুকিয়ে ফেলল।

স্নিগ্ধা আর তাকে ঘাটাতে গেল না, শ্রাবণকে নিয়ে তার ভাবনা তেমন বেশি না। সে এখন পড়াশুনায় মনযোগ দিতে চায়।

সারাটাদিন পেরিয়ে গেল কেউ কারোর সঙ্গে কথা বলেনি। কিন্তু স্নিগ্ধা খেয়াল করল শ্রাবণ আসার পর থেকেই কিছু নিয়ে আপসেট। কোন একটা বিষয় নিয়ে সে অনেক বেশি চিন্তায়। স্নিগ্ধা সব দিধা ভুলে শ্রাবণের
রুমের কাছে যেতেই শুনলো শ্রাবণ কাউকে বলছে –

—” আরে কি বলছিস? ওর মাথা খারাপ বলে কি আমারো মাথা খারাপ? আমার দাদু স্নিগ্ধার সঙ্গে জোর করে বিয়ে দিয়েছে। ও কে আমি স্ত্রী মানিনা, তবে তারপর ও কাজিন হিসেবে আমার ওর জন‍্য কিছু দায়িত্ব আছে। কিন্তু এই মুহুর্তে ওকে এগুলো কি করে বুঝাই? আরে ও তো সামান‍্য আমাকে অন‍্য মেয়ের সঙ্গে কথা বলতেই দেয়না। এখন আবার স্নিগ্ধাকে বিয়ে করার পর সেই ঘটনা শুনতেও পারবে না। ওর কত বড় সাহস সে আমার জন‍্য সুইসাইড করতে গেছে ভাবতে পারছিস তুই?” অপরপাশ থেকে কে কি বলছে কিছুই বুঝা যাচ্ছে না।

–” আরে কি বলছিস তুই? আমি যদি ওকে এই ব‍্যাপারটা না জানাই ও পরে এর চেয়ে ও খারাপ কিছু করে বসবে। ” স্নিগ্ধা বুঝতে পারল শ্রাবণের হয়তো কারোর সঙ্গে রিলেশন আছে। হয়তো সেই প্রেমিকাই তার জন‍্য সুইসাইড করতে গিয়েছিল। স্নিগ্ধা আর দাড়ালো না, যে কাজের জ‍ন‍্য এসেছিল আর যা শুনার জন‍্য এসেছিল তা সে সবই শুনেছে। সে না দাড়িয়ে তার রুমে চলেগেল।

অপর পাশে শ্রাবণ বলতে লাগল –

–” মহিমা শুন, তুই হয়তো জানিস আমি এইসব প্রেম-ট্রেমে বিশ্বাস করিনা। আর তার চেয়ে বড় কথা আজ বা কাল স্নিগ্ধাকেই আমার স্ত্রীর মর্যাদা দিতে হবে।
আমি সেই স্থান বাদ দিতে পারবো না, হ‍্যা কাল পর্যন্ত আমার মনে হয়েছিল স্নিগ্ধা আমার জন‍্য পারফেক্ট কেউ নয়। তবে একটা জিনিস আমার মনে হল, জীবন সঙ্গী হতেগেলে কাউকে সবদিক দিয়ে পারফেক্ট হতে বলে মনে হয় না। স্নিগ্ধা নাহয় আমার জন‍্য এমনই থাকুক!”
অপরপাশ থেকে মহিমা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল-

–” দেখ, যা ভালো মনে করিস তাই কর। স্নিগ্ধাকে তাহলে দেখে রাখিস, ওর বয়সটাও অনেক কম কখন কার প্রেমে পরে যায় বলা যায় না।পরে ভাবীর হাত ধরে সংসার করার আগেই ভাবী হাত ছেড়ে চলে যাবে।
আচ্ছা শুন তুই এখন আর ওকে স্নিগ্ধা বা তোর বিয়ের কথা বলিস না। ইউনিভার্সিটি কেন তোর পরিচিত বন্ধু ছাড়া কাউকে বলিস না!”

–” ওটাই করতে হবে।”

–” আচ্ছা রাখি,”
________________________________________

আজ প্রায় পাচঁদিন পর স্নিগ্ধা বেরিয়েছে শ্রাবণের সঙ্গে তাও তার নতুন কলেজের উদ্দেশ্যে। স্নিগ্ধা মামার সঙ্গে আসতে চাইলেও মামা শ্রাবণকে তার সঙ্গে পাঠিয়ে দিল।
তার নাক অনেক জরুরি কাজ আছে। স্নিগ্ধা জানে মামা তাকে ইচ্ছে কর শ্রাবণের সঙ্গে পাঠিয়েছে, যেন দুজনের মধ‍্যে একটা সম্পর্ক হোক। কিন্তু স্নিগ্ধার এইসব ভালো লাগে না তারা কেন বুঝতে চাইছে না এই সম্পর্ক জোড়া লাগার নয়। এই সম্পর্কটা নামেই বিয়ে! বিয়ের বা বৈবাহিক সম্পর্কের কোন ইচ্ছেই দুজনের নয়।
স্নিগ্ধা গাড়ি থেকে নেমে হাটতে লাগল। শ্রাবণ পিছন থেকে ডেকে উঠলো –

–” কিরে দাড়া, চিনতে পারবি না, আমি চিনিয়ে দিচ্ছি।”
স্নিগ্ধা শ্রাবণের কথায় হেসে উঠে বলল-

–” শ্রাবণ ভাই আমি পড়তে পারি, তুমি হয়তো ভুলেগেছ। প্রত‍্যেকটা ব্লকে এবং প্রত‍্যেকটা ক্লাসে সেকশন, ক্লাস, হাউজ নাম্বার লেখা থাকে। বুঝতে না পারলে কাউকে জিঙ্গেস করলেই বলে দেবে। শুধু কষ্ট করে তোমাকে আসতে হবে না। তুমি বরং ইউনিভার্সিটিতে যাও!”

–” হঠাৎ ভাই?”

–” কলেজে তো আর তোমাকে জামাই পরিচয় দিয়ে তোমার নামে কেস করানোর ধান্দা করতে পারিনা!”

–” ও, আচ্ছা! হা, হা, হা, সত‍্যি তুই পারিস ও বটে!
যা তবে কোন সমস‍্যা হলে আমাকে সময় মত জানিয়ে দিস! আর শোন আমি কলেজ ছুটির পর এসে অপেক্ষা করবো তুই একটু অপেক্ষা করিস।”

–” হুম,” বলেই স্নিগ্ধা চলেগেল কলেজের ভিতরে আর শ্রাবণ স্নিগ্ধার দিকে চেয়ে আছে। এই সব দুষ্টু বুদ্ধি স্নিগ্ধার মাথায় আসে সব সময়। সে তো ভুলেই গিয়েছিল এই কথাটা। শ্রাবণ গাড়িতে উঠে চলেগেল ভার্সিটিতে।

স্নিগ্ধা কলেজে এসে মোটামুটি সবার সঙ্গেই মিশেগেছে। মিশুক আর চঞ্চল বলেই হয়তো অনায়াসে সবার সঙ্গে মিশতে পারে। এর মধ‍্যে একজন ছিল যে কিনা স্নিগ্ধাদের এলাকায় থাকে। ছোটমামিদের বাসার থেকে কিছুটা সামনেই। স্নিগ্ধা সারাদিন কলেজে থাকার পর সেই বান্ধবীটির সঙ্গে একসঙ্গে বাসায় চলে এলো।
কিছুক্ষণ পর শ্রাবণ হুড়মুড় করে বাসায় আসলো।
স্নিগ্ধা রুমে ডুকতে নিলেই শ্রাবণ বিকট শব্দে চিৎকার করে বলল –

–” তোকে কি বলেছিলাম আমি?”

–” কি?”

–” তুই শুনিস নি?”

–” কি বলেছিলে?”

–” তোকে আমি বলিনি যে ছুটির সময় আমি গাড়ি নিয়ে ওখানে দাড়াবো?”

–” আমার মনে হয়েছে, শ্রাবণ ভাই ঐ সময় আপনার জন‍্য দাড়ালে আমার সময় নষ্ট হবে!”

–” তুই সময় নষ্ট হবে তা ভাবলি, এটা ভাবলি না এটা ঢাকা শহর, এখানে একটা ভুল মানুষের জীবন যেমন গড়ে তুলে। একটা ভুলে মানুষের জীবন ধংস করে তুলে।” কতটা রিস্ক জানিস তুই? নতুন এসেছিস। কটা দিন গেলে নাহয় তুই একাই আসা যাওয়া করতে পারতিস। কেন এই কাজটা তুই করতে গেলি?”

চলবে।

#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়!
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_সাত

–” তুই সময় নষ্ট হবে তা ভাবলি, এটা ভাবলি না এটা ঢাকা শহর, এখানে একটা ভুল, মানুষের জীবন যেমন গড়ে তুলে। একটা ভুলে মানুষের জীবন ধংস করে তুলে।” কতটা রিস্ক জানিস তুই? নতুন এসেছিস। কটা দিন গেলে নাহয় তুই একাই আসা যাওয়া করতে পারতিস। কেন এই কাজটা তুই করতে গেলি?”

–” আমার মনে হয়না এই বিষয় নিয়ে আর কোন কথা বলার প্রয়োজন আছে,শ্রাবণ ভাই! আমি তো ঠিক সময়, ঠিক জায়গায় এসে পৌছে গিয়েছি। চিনতে তো ভুল করিনি!”

—” চিনতে ভুল করিসনি ঠিক আছে, কিন্তু আমার কথা হচ্ছে আমি তোকে বলেছিলাম আমার জন‍্য অপেক্ষা করতে তুই কেন অপেক্ষা করলি না?”

–” এই কথাটা কত বার বলবো আপনাকে? কতবার রিপিট করলে এই কথাটা আপনার মাথায় ডুকবে?”

—” ও, বাহ! খুব বড় হয়ে গিয়েছিস। এক কথায় সবাইকে বুঝাতে পারিস, বুঝে ও যাস খুব সহজে। আর আমি কোন কিছুই বুঝি না। আজ করেছিস, করেছিস!
এরপর এমন কিছু করলে আমার থেকে কেউ খারাপ হবে না!”

স্নিগ্ধা আর এক মুহূর্ত দাড়ালো না। সে চলেগেল তার রুমে, অনেক হয়েছে এই সব ঝামেলা এখন সে নিজের মত বাচতে চায়। শ্রাবণ কখন কি করল এইসব ভেবে তার সময় নষ্ট করবে না , সে তার প্রেমিকাকে নিয়েই থাকুক! কি দরকার তার পিছনে সময় নষ্ট করার?নানাভাইয়ের কথা আর বাবার কথা রাখতে গিয়ে দুজনের মধ‍্যাকার সম্পর্ক বেশি এগুবে বলে মনে হয় না।
শুধু শুধু বিয়ে নামের একটা সামাজিক ট‍্যাবু তাদের মধ‍্যে ঝুলিয়ে দিয়েছে। যেখানে নেই কোন সম্পর্ক আছে ভাঙ্গন! হয়তো শ্রাবণ নিজের অবস্থানকে শক্ত করার ফলে তাকে ছুড়ে ফেলতে দুবার ভাববে না। মধ‍্যে থেকে স্নিগ্ধার জীবনটা ধংশ হয়ে যাবে। পুরোটা দিন তার কল্পনায় গেথে গিয়েছে তার বাবা মারা যাওয়ার পরবর্তী সময়গুলো। নানাভাইরা যখন তাকে তার বাড়িতে রেখে এসেছিল তখন তার চাচারা তাকে আগলে রাখলেও এর কিছুদিন পর চাচি বলতে লাগল –

–” বাবা মা মরে গেলে তার সম্পত্তি নাকি চাচাতো ভাইরা পায়। আর এটা নাকি সম্পূর্ণ মেয়েদের জন‍্য।
তাই অর্ধেক সম্পত্তির মধ‍্যে সবচেয়ে বেশির ভাগ সম্পত্তি স্নিগ্ধাদের। তার বাবা অনেক জায়গা কিনেছে, স্নিগ্ধার ঐটুকু বয়সে এইসব সম্পত্তি ভাগ ভাটোয়ারা বুঝার সাধ‍্য না থাকলেও কথা বুঝার এবং কাউকে বলার সামর্থ্য ছিল। সে তার নানাভাইকে সব বলে দিয়েছিল। তিনি ও বুঝলেন মেয়েটাকে ওখানে রাখলে কেউ দেখে রাখবে না। উল্টো সবাই মেয়েটার সব তার থেকে কেড়ে নিবে।
তাই তিনি ছোট্ট স্নিগ্ধাকে সেদিন নিয়ে এসেছিলেন। মেয়ের শেষ স্মৃতিকে বুকে আগলে রেখে ছিলেন।
ছেলেদের বারবার মনে করিয়ে দিয়ে ছিলেন এতিম বলে কখনো যেন স্নিগ্ধাকে কেউ খোটা না দেয়। তাকে বাড়ির বাইরের স্থান না দিয়ে বাড়ির সদস‍্য বানিয়ে তুলেছিলেন।
কিন্তু কোথাও না কোথাও স্নিগ্ধার নিজেকে খুব ছোট মনে হতো। স্নিগ্ধা সারাদিন কিছু না খেয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে বসে রইল।
শ্রাবণ ও কিছু খায়নি, রাগে তার সমস্ত শরীর জ্বলে যাচ্ছে। মেয়েটার সাহস দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।

অফিস করে এসেছেন মামি। সারাদিন ধরে খাটাখাটনির
পর বাসায় ফিরে একটু আরাম করে রান্নাঘরে এলেন।
ওমা! সব তো আগের মতই আছে। ওরা দুজন কি কিছুই খায়নি? মামি খাবার গুলোকে দেখে অবাক হয়েগেলেন।
সেই সকাল কি না খেয়েগেছে দুজন, এখনো কিছু খায়নি দুজন।

তিনি স্নিগ্ধার রুমের দরজা নক করতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পর স্নিগ্ধা দরজা খুললেই ডুকে পরলেন তিনি।

–” স্নিগ্ধা তুই কিছু খাসনি আজ?”

–” খিদে লাগেনি আমার! ভালো লাগছে না,”

–” ওমা দেখি, দেখি তোর শরীর খারাপ করল না তো?”

–” না, আমি ঠিক আছি,”

–” হ‍্যা, তাইতো দেখছি, কেন খাসনি তুই? চল কিছু খেয়েনিবি। স্নিগ্ধা আসতে না চাইলেও জোর করে নিয়ে এলেন তিনি খাবার টেবিলে।

–” তুই খেয়ে নে, আমি ঐ বাদরটাকে ডেকে আনি ওটা ও কিছু খায়নি। কি করিস তোরা কে জানে।”
শ্রাবণকে জোর করে এনে বসিয়ে দিলেন ডায়নিং টেবিলে। শ্রাবণ কয়েকবার স্নিগ্ধার দিকে তাকালেও স্নিগ্ধা ফিরেও তাকালো না, খেয়েদেয়ে সে উঠেগেল।
শ্রাবণ ভাবতে লাগল ভুল করল সে নিজে আর রাগ দেখাচ্ছে তার উপর। যেখানে রাগ দেখানোর কথা তার নিজের।

স্নিগ্ধা রুমে আসার পর বসে পরল পড়ার টেবিলে। পড়াটাকে ও আয়ত্তে আনতে হবে তাকে,

“মানুষের অবস্থান যখন নড়বড়ে হয় তখন, কাছের দেখা পরিচিত মানুষ গুলোও দিনশেষে অপরিচিত হয়ে যায়!
যতদিন নিজের খুটি মজবুত থাকবে ততদিন মানুষ তার মূল‍্যায়ন পাবে। খুটি দূর্বল হলে কেউ সেই খুটিতে লাথি দিতেও পিছপা হবে না।”
স্নিগ্ধা ভেবে নিয়েছে এই জীবনে আর যাই হোক কারোর কাছে নতজানু হয়ে পরে থাকবে না। পরাশ্রিত জিনিসটা বেশ লোভনীয়, তবে তার ক্ষতিটাও কম নয়। এসব ভাবতে ভাবতে কখন সময় পেরিয়ে গেল আর পড়াটা তার হলো না। তবে ভাবনাগুলো বেশ ভালোই ছিল তার।
_________________________________

পরেরদিন সকালবেলা যথাসময় আবারও শ্রাবণের গাড়িতে করে যেতে হলো স্নিগ্ধাকে। ছুটির সময় শ্রাবণের সঙ্গে তাকে আবারও আসতে হলো। এ নিয়ে শ্রাবণ তাকে দ্বিতীয়বার কিছু না বললেও স্নিগ্ধা ঠিক সময় কলেছ গেইটে এসে দাড়িয়েছিল।

শ্রাবণের সঙ্গে এ নিয়ে ঝামেলা জড়ানো মানে দুজনের মধ‍্যে কথায় কথা বাড়বে। দরকার কি চুপ থাকাই ভালো।
শ্রাবণের সঙ্গে যত কম কথা বলা যায় ততই ভালো।
শ্রাবণ অবশ‍্য কয়েকবার স্নিগ্ধার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল। স্নিগ্ধাই তার সঙ্গে ইচ্ছে করে কথা বলেনি।

শ্রাবণের ফোনে কল আসতেই শ্রাবণ ফোন ধরল।
শ্রাবণ ফোন তুলে দেখলো আজমাইনের ফোন।
তুলেই বলল-

–” আচ্ছা তোরা অপেক্ষা কর আমি আসছি।আমার কাজিনকে রেখে আসছি বাসায়। হ‍্যা, এইতো কিছুক্ষণ আগেই কলেজ ছুটি হয়েছে।”

স্নিগ্ধা গাড়ি থামার পরপরই নেমে গিয়েছে। আজ তার কোচিং সেন্টারে যেতে হবে। বাসায় গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হয়ে নিল তারপর কিছু খেয়ে আবার ব‍্যাগ নিয়ে বিল্ডিং থেকে নামতেই। চোখ পরল পূরবীর উপর মেয়েটা আসছে পিছনে কাকে যেন দেখা যাচ্ছে।

পূরবী দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরল –

–” বাহ! স্নিগ্ধা তুই তো খুব ফাস্ট! আমার আগেই রেডি হয়েগেলি আর খাওয়া দাওয়া করেছিস?”

—” হুম, উনি কে?”

–” ও, আরে আমার ভাইয়া।”

—” আম্মু বলেছে ভাইয়াকে নিয়ে যেতে, সন্ধ‍্যে হয়েগেছে তাই। চল হাটতে হাটতে পরিচয় করিয়ে দেই।
আমার ভাইয়ার নাম আরমান, ভাইয়া এবার ইলিক্ট্রিকাল ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ছে, ঢাকা ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজি থেকে!

–” ও, আসসালামু ভাইয়া!”

–” অলাইকুম আসসালাম!”

–” ভাইয়া ওর নাম স্নিগ্ধা!”

–” ও, আচ্ছা কাল ওর কথা বলছিলি?”

—” জ্বী, ওর কথা বলছিলাম,”

–” ওকে আবার ভুলিস না, তুই নাকি নতুন কাউকে পেলে পুরোনো বান্ধবীদের ভুলে যাস!”

–” ভাইয়া, তুমি এখনো আমাকে এই খোটা দিয়ে যাবে?”

–” ঠিকই তো বললাম,” স্নিগ্ধা তাদের ঝগড়া দেখে হাসতে লাগল। ইশশ তার যদি একটা ছোট্ট ভাই, বোন থাকতো সে ও তো কত দুষ্টুমি করতে পারতো!
মলিন হওয়া মুখটাকে আবার হাসি এনে বলল –

–” কিরে ভাইয়া কি সত‍্যি বলছে? তুই তাহলে নতুন কাউকে পেলে আমাকে ও ভুলে যাবি?”

–” না, না, কখনোই না, তুই আমার ভাইয়ার কথা শুনিস না!”

–” ও শুধু মিথ‍্যে কথা বলে,” পূরবী আরমানের গায়ে ঠাস ঠাস করে দুটো কিল দিয়ে দিল।তিনজন গল্প করতে করতে কখন চলে এলো ভুলেই গিয়েছে তারা। কোচিং থেকে ঠিক সাড়ে সাতটায় ফিরল। বাসার নিচে স্নিগ্ধাকে পৌছে দিয়ে দুভাই-বোন চলে গিয়েছে। কিছুক্ষণ পর পাশে থাকা মোবাইলে আননোন নাম্বার থেকে কল আসলো স্নিগ্ধার কোচিং থেকে এসে পড়ার টেবিলে বসতেই ফোন এলো। ফোন ধরে হ‍্যালো বলতেই অপর পাশ থেকে কিছু শুনতে পেলো না।

পরপর দুবার বলল -” হ‍্যালো, “হ‍্যালো!
বিরক্ত হয়ে বলল -” কথা বলছেন না কেন? নারী কন্ঠ শুনলে ভালোই লাগে না? বিরক্ত করার একটা লিমিটেশন আছে! ফোন ধরে রেখে কোন কথা বলছেন না কেন?” আপনার কোন কাজ না থাকলে ও আমার কাজ থাকতে পারে!”অপর পাশ থেকে কিছুই শুনা গেল না। শুধু শুনতে পাওয়া গেল নিশ্বাস আর কিছু নেড়েচেড়ে উঠার শব্দ।

চলবে।
“এ আবার কে?”?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here