#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়,পর্ব:১৪,১৫
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_চৌদ্দ
[#মায়া ]
–” কিরে পালাচ্ছিস কোথায়? এভাবে তো পালাতে দিব না! আমার পাওনা কোথায়?”
স্নিগ্ধার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়েগেছে পুরো! স্নিগ্ধার শ্বাস দ্রুত গতিতে উঠা নামা করছে। হায় কোন পাগলে পেয়েছে তাকে শ্রাবণের কাছে আসতে।
শ্রাবণ স্নিগ্ধার গাল ধরে মুখটা কাছে এনে ঠোটে চুমু বসিয়ে দিয়েছে। স্নিগ্ধা ঠাস করে খাট থেকে পরে গিয়েছে। সঙ্গে বিকট চিৎকার করে উঠল সে নিজেই।
স্নিগ্ধার চিৎকার শুনে পুষ্পিতা দৌড়ে এলেন। তার পিছু পিছু শ্রাবণ ও ছুটে এসেছে । শ্রাবণকে দেখে স্নিগ্ধা অনেকটা হা হয়ে চেয়ে রইল!”
শ্রাবণ তো একটু আগে তাকে পড়াচ্ছিল। পড়াতে গিয়েই তো শাস্তি স্বরুপ শ্রাবণ স্নিগ্ধার ঠোটে চুমু দিতে এসেছিল।
তাহলে এখন কিভাবে রুমের বাইরে আসলো?
স্নিগ্ধা নিজেকে ভালো করে দেখতে লাগল না সে তো বিছানায় এসে পড়তে বসেছিল। তার মানে সে পড়তে ঘুমিয়ে পরেছিল!
পুষ্পিতা স্নিগ্ধার মুখের দিকে চেয়ে আছে। তার কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না। আরেকটু এগিয়ে এসে বললেন –
–” কিরে চিৎকার করছিস কেন?”
–” আহ, মামি হঠাৎ কিভাবে যেন পরে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছি নিজেই বুঝতে পারছি না।”
–” উফফ তুই ও না, কিভাবে চলিস বলতো?
এখানে পরেযাস, ওখানে পরে যাস। ঠিক করে হাটতে ও শিখিসনি।
–” ও আর হাটা? হাহাহা, চাচিআম্মু ভুলেগেছো ও আমাদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে কাদা জলে গড়াগড়ি করে পরেযেত তখন। হা, হা,হা,
–” মামি কিছু বলবে তুমি?”
–” আচ্ছা, ঠিক আছে, এই শ্রাবণ কি শুরু করেছিস তুই? মেয়েটাকে একটু কম জ্বালা তো।”
আর স্নিগ্ধা তোর নাকি পড়তে অসুবিধা হচ্ছে, পড়া বুঝতে পারছিস না তাহলে ওর কাছ থেকে পড়া বুঝে নিচ্ছিস না কেন?”
স্নিগ্ধার কিছুক্ষণ আগের ঘটনাগুলো মনে পরেগেল শ্রাবণ যদি আবার ও একা পেয়ে এমন করে?
–” কিরে কিছু বলছিস না কেন?”
–” হুম, শ্রাবণ ভাই হয়েছে কি আমার না একটা চাপ্টার কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না, একটু বুঝিয়ে দিবে?”
শ্রাবণ কিছুটা চমকে গেলো । তারপর বলল-
–” হ্যা পড়াতে পারি, পড়া না পারলে শাস্তি পাবি!”
–” কি শাস্তি?”
–“বলা যাবেনা,”
–” তাহলে আমি পড়বো না,”
–” তাহলে আমি ও তোকে পড়াবো না! এবার বুঝ তুই কি করবি!”
–” আহ শ্রাবণ কি শাস্তি বলে দে না!”
–” শাস্তি টা হলো পড়া না পারলে ওর মোবাইল টা আমাকে দিতে হবে!”
স্নিগ্ধা শাস্তির কথা শুনে স্বস্তি পেলে ও। ওর মাঝে স্বস্তিটাই গায়েব হয়েগেল। শ্রাবণ সব সময় কিছু না কিছু গন্ডগোল করবেই। এত এত শাস্তি থাকতে তার কিনা এই শাস্তির কথাই মনে পরল?
কিছুক্ষণ ভেবে সে বলল-
–” আচ্ছা ঠিক আছে, আমি শাস্তির জন্য প্রস্তুত।”
পড়তে বসেছে স্নিগ্ধা সঙ্গে শ্রাবণ আরেক চেয়ারে বসে তাকে পড়াতে শুরু করেছে। স্নিগ্ধা খেয়াল করল স্বপ্নের শ্রাবণের থেকে বাস্তবের শ্রাবণ খুব ভদ্র এখন পর্যন্ত তাকে কোন প্রকার ডিস্টার্ব করেনি।
শ্রাবণ যেভাবে পড়িয়েছে স্নিগ্ধা ও ঠিক সেই ভাবে মনযোগ দিয়ে পড়েছে। দুজনের একজন ও পড়ার বাইরে কিছুই বলেনি। পড়ার পর শ্রাবণ স্নিগ্ধৃর রুম থেকে বেরিয়ে গেছে।
________________________________
দিনগুলো বেশ ব্যাস্ততায় কাটছে স্নিগ্ধার। এইতো কিছুদিন আগেও সে খুব একটা ব্যস্ত ছিল না, পড়তে ইচ্ছা হলে পড়তো না হলে ঘুরাঘুরি আর মোবাইলে গেমস খেলে সময় কাটিয়ে দিত। এখন তার সবকিছুতে দখল দারি আর শাসন চলে । আর সেই ব্যক্তিটি আর কেউ নয় শ্রাবণ। ছেলেটা আজকাল উঠতে বসতে সব সময় তাকে
চোখে চোখে রাখে।এই তো কয়েক মাস আগে শ্রাবণ স্নিগ্ধার কোচিং সেন্টারে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার ছলে দাড়ালেও এখন সরাসরি তার সঙ্গে এসে কোচিংয়ে পৌছে দেয়। আবার সময় মতো তাকে নিয়ে ও আসে, ভাবা যায়?স্নিগ্ধা আনমনে ভাবতে ভাবতেই কলেজ গেইট দিয়ে বের হচ্ছিল। এর মধ্যেই বৃষ্টি শুরু হয়েগেল।
হঠাৎ বৃষ্টি! ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টির ফোটাগুলো পরতে লাগল।
স্নিগ্ধা আজ ছাতা নিয়ে আসেনি। বড় বড় বৃষ্টির ফোটায় সাদা কলেজ ড্রেস একদম ভিজে গায়ে লেপ্টে গেছে।
স্নিগ্ধা দৌড়ে কলেজের পাশে যাত্রী ছাউনিতে দাড়িয়ে পরল। ইশশ ভিজে একাকার হয়েগেল তার শরীর।
পাশে দাড়ানো অনেক ছেলে তারা সবাই চোখগুলো দিয়ে যেন গিলে খাচ্ছে। স্নিগ্ধার পাশে দাড়ানো আরেকটি মেয়ে বলে উঠলো –
–” স্নিগ্ধা, তোর আশিক এসেছে!”
–” কই? কিরে মিতু কোথায় স্নিগ্ধার আশিক?
পাশ থেকে মিতু দেখিয়ে দিলে উর্মি বলল –
হ্যা রে স্নিগ্ধ এটাই তোর আশিক না মানি কাজিন?”
স্নিগ্ধা রাগি চোখে তাকাতে সবগুলোর মুখ বন্ধ হয়েগেল। মুচকি মুচকি হাসতে লাগল সবাই। যেন স্নিগ্ধা কোন হাসির পাত্র।
শ্রাবণ গাড়ি থেকে নেমে ছাতা হাতে এলো। যাত্রী ছাউনির প্রায় সব ছাত্রীরা শ্রাবণের দিকে চেয়ে আছে।
খুব মিষ্টি চেহারা ছেলেটার। একদম ফর্সা ও না শ্যাম ও না উজ্জ্বল বর্ণের। স্নিগ্ধা শ্রাবণের দিকে চেয়ে আছে আজ শ্রাবণ স্নিগ্ধার পছন্দের রঙ্গ পরেছে। সাদা রঙ্গের টিশার্ট পরে এসেছে শ্রাবণ।
শ্রাবণ ছাতা নিয়ে সামনে এগিয়ে এসে বলল –
–” তাড়াতাড়ি আয়, আজ হঠাৎ খুব বৃষ্টি হচ্ছে। ”
পিছন থেকে শ্রাবণের কথা শুনে স্নিগ্ধার বান্ধবীরাও তাল মিলিয়ে বলে উঠলো – হ্যা স্নিগ্ধা তাড়াতাড়ি যা, খুব বৃষ্টি হচ্ছে! বাজ পরবে, আমাদের কথা চিন্তা করিস না!
স্নিগ্ধা তাদের সবার দিকে রাগী চোখে তাকালে সবাই চুপ হয়ে যায়।
স্নিগ্ধা শ্রাবণের সঙ্গে তার ছাতার নিচে এসে দাড়িয়ে পরল। দুজনে মিলে বৃষ্টিতে গাড়িতে উঠে পরল।
পিছন থেকে স্নিগ্ধার বান্ধবীরা যে যার মত আলোচনা করতে ব্যাস্ত।
–” কি করেছিস তুই? ভিজে একদম কি বিশ্রী দেখাচ্ছে!”
–” বিশ্রী দেখাচ্ছে মানি?”
–” কি বলছি বুঝতে পারছীস না? বৃষ্টিতে ভিজে পুরো শরীর দেখা যাচ্ছে। বৃষ্টি যখন শুরু হচ্ছিল তখন কলেজ থেকে বের হতে কে বলেছিল? ঠান্ডা লেগে গেলে এখন কি করবি?”
–” তা নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না!”
শ্রাবণ হঠাৎ করে গাড়ি চালানো বন্ধ করে দিল, স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে আরেকটু কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলল-.
—” আমি না করলে কে করবে চিন্তা?”
—” না, মানে আপনাকে চিন্তা করতে হবে আবার চিন্তা করতে হবে না। কারন আমি খুকি না, যে আমাকে ধরিয়ে দিতে হবে আমায় নিয়ে চিন্তা করতে হবে।”
–” কথাটা ঠিক, তুই খুকি না, কিন্তু তুই হলি পাখি! পাখি বুঝিস তো? অনেকটা এরকম যে একটু ছাড়া পেলেই ডানা দুটো মেলে উড়ে যাবি!”
স্নিগ্ধা শ্রাবণের দিকে চেয়ে আছে অবাক হয়ে, তারপর নিজেকে সামলে বলল –
–” পাখি?”
–” হুম, পাখি! অবুঝ পাখি, পাখির মালিক কত ভাবে পাখিটাকে আগলে রাখে, কত সেবা করে কিন্তু পাখিটা বুঝতে চায় না! পাখিটা সেই নীল আকাশেই উড়ে যেতে চায়! ”
–” ছেড়ে দিন পাখিটাকে, যদি পাখির মনে মায়া জন্মায় তাহলে পাখি উড়ে আসবে আপনার কাছে।
আর যদি পাখির মনে মায়া না জন্মায় সে অন্য কোথাও বাসা বাধবে!”
—” পাখির উপর ভরসা নাই আমার!”
–” ভরসা যদি না থাকে তাহলে, পাখি পুষে লাভ কি?
এইটুকু ভরসা তো রাখতে হবেই।”
–” তাই?”
–” হুম,”
–” আচ্ছা, এত কথা কিভাবে শিখলি তুই?”
–” সব কথা মুখে মুখে শিখলেই হয়? কিছু কথা মনের ভিতর রয়, তাই মাঝে মাঝে প্রকাশ করি!”
–” বাহ! প্রেম করার দুরন্ত সময় পাড় করছিস!”
শ্রাবণ স্নিগ্ধার দিকে চেয়ে রইল। স্নিগ্ধার হঠাৎ বলা কথায় তার হুশ হলো। মাঝ রাস্তায় সে গাড়ি থামিয়ে রেখেছে। আবার গাড়ি চালাতে শুরু করল সে।
গাড়িতে একটি গান বাজিয়ে দিল সে। আর আড়চোখে ভিজে যাওয়া পাশে বসা সুন্দরী মেয়েটির দিকে তাকালো।
আমার সারাটি দিন
মেঘলা আকাশ
বৃষ্টি তোমাকে দিলাম
আমার সারাটি দিন
মেঘলা আকাশ
বৃষ্টি তোমাকে দিলাম
শুধু শ্রাবণ সন্ধ্যাটুকু
তোমার কাছে চেয়ে নিলাম
আমার সারাটি দিন
মেঘলা আকাশ
বৃষ্টি তোমাকে দিলাম
হৃদয়ের জানালায় চোখ মেলে রাখি
বাতাসের বাঁশীতে কান পেতে থাকি
হৃদয়ের জানালায় চোখ মেলে রাখি
বাতাসের বাঁশীতে কান পেতে থাকি
তাতেই কাছে ডেকে, মনের আঙিনা থেকে
বৃষ্টি তোমাকে তবু ফিরিয়ে দিলাম
আমার সারাটি দিন
মেঘলা আকাশ
বৃষ্টি তোমাকে দিলাম
তোমার হাতেই হোক রাত্রি রচনা
এ আমার স্বপ্ন-সুখের ভাবনা
তোমার হাতেই হোক রাত্রি রচনা
এ আমার স্বপ্ন-সুখের ভাবনা
চেয়েছি পেতে যাকে, চাইনা হারাতে তাকে
বৃষ্টি তোমাকে তাই ফিরে চাইলাম
প্রায় মিনিট বিশের পর এপার্টমেন্টের সামনে নেমে পরল তারা। স্নিগ্ধা গাড়ি থেকে নামার পর শ্রাবণ নেমে পরল।
স্নিগ্ধা আর শ্রাবণ এপার্টমেন্টের চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করল।
_____________________________
ইদানিং পড়ার টেবিলে ও মন বসে না শ্রাবণের মনে হয়
প্রেম প্রেম ভাব তার এখনও কাটেনি! খুব ইচ্ছে হয় মনের খাচায় বন্দি করে রাখতে। খুব ইচ্ছে হয় মেঘলা দিনে দুজনে মিলে কোন বকুল তলায় বকুল ফুল কুড়িয়ে নিতে। নিজেদের মধ্যে সুখ কুড়াতে।
আবার মনে হয় স্নিগ্ধার বলা কথা! পাখি ছেড়ে দিলে যদি ফিরে আসে তাহলে বুঝবে সে পাখির মনে মায়া জন্মেছে! আসলেই কি মায়া জন্মে? যদি তাকে ধোকা দিয়ে উড়ে যায়?
চলবে।
#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়!
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_পনেরো
[#পার্টনার]
ইদানিং পড়ার টেবিলে ও মন বসে না শ্রাবণের মনে হয়
প্রেম প্রেম ভাব তার এখনও কাটেনি! খুব ইচ্ছে হয় মনের খাচায় বন্দি করে রাখতে। খুব ইচ্ছে হয় মেঘলা দিনে দুজনে মিলে কোন বকুল তলায় বকুল ফুল কুড়িয়ে নিতে। নিজেদের মধ্যে সুখ কুড়াতে। আবার মনে হয় স্নিগ্ধার বলা কথা! পাখি ছেড়ে দিলে যদি ফিরে আসে তাহলে বুঝবে সে পাখির মনে মায়া জন্মেছে! “আসলেই কি মায়া জন্মে? যদি তাকে ধোকা দিয়ে উড়ে যায়?”
শ্রাবণ কিছুক্ষণ উশখুশ করে স্নিগ্ধার রুমের পাশে দাড়ালো। স্নিগ্ধা তখন সবেমাত্র গোসল করে ভিজে চুল গুলোকে তোয়ালে দিয়ে পেচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে ভেজা চুলগুলোকে শুকিয়ে নিচ্ছে আর লোশন হাতে পায়ে মেখে নিচ্ছে। কেউ একজন তাকে চোখে হারাচ্ছে সেদিকে তার কোন খেয়াল নেই নিজের মত গুনগন করতে ব্যস্ত।
শ্রাবণ স্নিগ্ধাকে দেখতে দেখতে আপন মনে বলে উঠলো
–“উড়ো চিঠি নও গো তুমি!
নও কোন ভুল!
তুমিই আমার প্রাণের প্রিয়া!
তুমিই আমার সুর!”
বেলকনির থাই গ্লাস খুলে দিতে গেলেই মনে হলো কোন প্রতিচ্ছবির হঠাৎ প্রস্থান হলো। স্নিগ্ধা পেছন ফিরতেই সেই ব্যাক্তি আর তার প্রতিচ্ছবি লুকিয়ে পরল। স্নিগ্ধা দরজার সামনে এসে দাড়িয়ে ঠাস করে দরজাটা বন্ধ করে দিল।
লুকিয়ে চুরিয়ে কষ্ট করে প্রিয়তমার মুখখানা দেখতে ও দিল না! ভিতর থেকে স্নিগ্ধা দরজা বন্ধ করে শয়তানি হেসে বলল –
–” খুব ইচ্ছা আমাকে দেখার, পড়ার সময় বেত্রাঘাত করার সময় মনে থাকে না মাষ্টার মশাই? ওরফে মিস্টার শ্রাবণ, কি ভেবেছো কিছুই বুঝি না আমি? সব বুঝি হুহ!”
শ্রাবণ বেচারা দুঃখি মনে নিজের রুমে প্রবেশ করল। রুমে ঢুকে বন্ধু তাশদীদকে ফোন লাগল। যে করেই হোক স্নিগ্ধাকে তার পটাতে হবেই, এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি উপকার করতে পারে উৎপল। উৎপলকে ফোন করল শ্রাবণ,
–” হ্যালো, শ্রাবণ বল কি বলবি!”
–” তোকে একটা বুদ্ধি দিতে হবে, দোস্ত!”
–” কি বুদ্ধি?”
–” এখানে নয়, আমি আসছি ফুডপ্যালেস ক্যাফেতে। তুই ও সময় মতো আসিস।
_____________________
পুষ্পিতা দুধ জাল দিয়ে স্নিগ্ধার রুমে আসলো।
স্নিগ্ধা পড়ার টেবিলে বসে পড়ছে। স্নিগ্ধার সামনে দুধের গ্লাসটা রেখে বলল –
–” স্নিগ্ধা দুধ টুকু খেয়ে নে মা! ”
স্নিগ্ধা পড়ছিল তখন মামির কথা তার শুনা হলো না।
পুষ্পিতার দুধের গন্ধে কেমন গা গুলিয়ে আসছে। অনেক কষ্টে তিনি নিজেকে চেপে রেখেছিলেন। হঠাৎ করে যেন সব একদম ভিতর থেকে উলটপালট হয়েগেছে তার, সহ্য করতে না পেরে স্নিগ্ধার রুমের ওয়াশরুমের বেসিনে গিয়ে হড়হড় করে বমি করে দিল।
স্নিগ্ধা ও তার পিছু পিছু চলে এলো। হঠাৎ করে মামির এমন অবস্থা তার ভালো লাগছে না। কি হলো মামির? শরীর খারাপ করলো কেন হঠাৎ? প্রশ্ন যেন তার কমছে না। পুষ্পিতাকে ফ্রেশ করিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিল সে।
দূর্বল হয়ে পরেছে মামি, বাসায় শ্রাবণ ও নেই একটু আগেই বেড়িয়েছে। মাথায় পানি দিয়ে মুছিয়ে বসিয়ে সে মামাকে ফোন করে জানিয়ে দিল পুষ্পিতার শরীরের অবস্থা।
কিছুক্ষণের মধ্যে সাজ্জাদ সাহেব চলে এসেছেন। পুষ্পিতার হঠাৎ হঠাৎ এমন অসুস্থতা তার বুকের ভেতরটা কেমন শিউরে উঠে।
____________________________
মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে সাজিয়ে রাখছে স্নিগ্ধা, আজ তার খুশির সিমা নেই! কালো – সাদা রঙ্গের মিষ্টির মাঝে কোনটা রেখে কোনটা খাবে তা নিয়ে মনের মধ্যে যুদ্ধ চলছে।
শ্রাবণ সবেমাত্র ঘরে ঢুকেছে, উৎপল বেটা আজ যে বুদ্ধি দিয়েছে এই বুদ্ধি যদি কাজে লাগে একদম কেল্লাহফতে।
আবার কাজ না হলে উৎপলের কপালে শনি গ্রহের
ঘুর্ণয়মান চরকা ও আছে।
স্বর্ণার সঙ্গে কথা বলতে তার মেজাজ গরম হয়ে যায়। মেয়েটার বড্ড গায়ে পরা স্বভাব, কিন্তু স্নিগ্ধা যদি এই কারনে তার কাছাকাছি আসে তাহলে ক্ষতি কি? আর স্বর্ণাকে সরাতে স্নিগ্ধাই যথেষ্ট, নাহলে শ্রাবণের পক্ষে সম্ভব নয় স্বর্ণাকে সরানো। মেয়েটা আজকাল খুব জ্বালাচ্ছে, স্নিগ্ধার সঙ্গে সম্পর্কটা ঠিকঠাক হলে স্বর্ণাকে জানিয়ে দিবে তাদের বিয়ের কথা। এসব ভাবতে ভাবতেই সে দেখতে পারল তার প্রিয়তমা মিষ্টির প্যাকেট থেকে কালোজাম একবার রাখছে তো আরেকবার সাদাটা দেখছে। শ্রাবণ স্নিগ্ধার সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বলল-
–” এত মিষ্টি কেন?”
স্নিগ্ধা কোন উত্তর করল না, সে নিজের মত খেয়ে যাচ্ছে।
শ্রাবণ আবারও প্রশ্ন করল -” এত মিষ্টি কেন? কেউ কি বলবে আজ কি উপলক্ষে মিষ্টি আনা হয়েছে?”
স্নিগ্ধা শ্রাবণের হাত ধরে টেনে নিয়ে একপাশে দাড় করিয়ে বলল –
–“আমার পার্টনার আসছে।”
–” তোর পার্টনার?”
–” হ্যা, আমার পার্টনার।”
–” তোর পার্টনার কে?’
–” আমার পার্টনার যখন আসবে তখন দেখবেন!”
শ্রাবণ স্নিগ্ধাকে কর্ণারে নিয়ে বলল ”
–” তোর পার্টনার তো আমি, আরেকজন কোথায়?”
–” আরেকজন, আরেকজন করছেন কেন? সে আপনার খুব আপনজন! আমার পার্টনার আমাকে কোলে বসাবে থুক্কু আমার কোলে বসবে।
আমি তাকে আদর করবো, তার গাল টেনে দিবো, তার সুন্দর সুন্দর হাত-পা গুলোকে মালিশ করে দিব। তাকে খাইয়ে দিবো। আপনি তো আমাকে বকা দেন সব সময়, আপনি কথায় কথায় পিটেন আমাকে। আমার পার্টনার আমাকে আদর করবে, ইশশ, কি যে ভালো লাগবে!
শ্রাবণ স্নিগ্ধার দিকে রাগী চোখে চেয়ে আছে। মনেহচ্ছে ভষ্ম করে দিবে।
–” কোন হারামজাদা তোর পার্টনার হবে?”
–” চুপ, মুখ সামলে কথা বলবেন! আমার পার্টনার আপনার মত অভদ্র হবে না, অসভ্য ইতর, আমার পার্টনার মিষ্টি হবে, দেখতে নাদুস-নুদুস হবে।”
–” তোর পার্টনারের হাত- পা ভেঙ্গে দিব, সঙ্গে তোর হাত ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিব। আর এগুলো যদি না করি আমার নাম
শ্রাবণ নেওয়াজ খান নয়! ”
–” ইশশ, আপনি আমার পার্টনারের সামনে দাড়াতেও পারবেন না! আমার পার্টনার আপনার থেকেও বড় খান! ”
–” বড় খান মানি? কোন খান সে? ”
–” এত ডিটেলস এ বলতে পারবো না, মিষ্টি আছে খাইলে খান না খাইলে জান! থুক্কু যান! শ্রাবণ নাওয়াজ খান!”
শ্রাবণ রাগী চোখে চেয়ে আছে স্নিগ্ধার দিকে। রেগেমেগে সে রুমের ভিতর ঢুকে পরল। স্নিগ্ধা শ্রাবণের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে ফেটে পরছে। পুষ্পিতার রুমে ঢুকে দেখল পুষ্পিতা বিছানায় বসে ফোনে হেসে কথা বলছে। হয়তো মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করার আনন্দ সবার কাছে প্রকাশ করছে। ফোন রেখে স্নিগ্ধার পাশে ফিরে বললেন –
–” কিরে হাসছিস কেন এত?”
–” তোমার ভাতিজাকে রাগিয়ে এসেছি,”
–” কি বলেছিস আবার?ভ্রু কুচকে,
স্নিগ্ধা হাসতে হাসতে বলতে লাগল সব কথা, তা শুনেই পুষ্পিতা বলে উঠলেন –
–” দুষ্টু মেয়ে কোথাকার, আমার বাবুটা না আসতেই তার শত্রু বানিয়ে দিলি!”
–” আমি কি করবো, আমার ভালোই লাগছিল, রেগে জানো মামি উনার চোখগুলো লাল হয়ে গিয়েছিল।”
বলেই হাসতে লাগল স্নিগ্ধা।”
রাতের খাবার খাওয়ার জন্য শ্রাবণকে ডেকে আনা হলো।
সে আড়চোখে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে আছে, সত্যিই স্নিগ্ধার মুখে আজ হাসির সিমা নেই সে আরও অবাক হলো সাজ্জাদ সাহেব আর পুষ্পিতার মুখ দেখে তাদের মুখ ও আজ খুব উজ্জল। খাবার খেয়ে উঠবে এমন সময় সাজ্জাদ সাহেব বলে উঠলেন –
–” শ্রাবণ মিষ্টি খেয়েছিস? আমাদের নতুন অতিথি আসছে।”
শ্রাবণ জিম খিচিয়ে, নিজেকে ঠান্ডা করে বলল –
–” কে আসছে?”
–” তোর চাচি কন্সিভ করেছে। আমাদের পরিবারে আরও একজন সদস্য আসতে চলেছে রে শ্রাবণ ।”
শ্রাবণ অবাক হয়ে সাজ্জাদ সাহেবের দিকে তাকালো আরেকবার স্নিগ্ধার দিকে, স্নিগ্ধা তার সঙ্গে এই অতিথির কথা বলেছে? তার সঙ্গে ফাজলামি করেছে।
স্নিগ্ধার দিকে ফিরে তাকিয়ে দেখল, স্নিগ্ধা ততক্ষণে তার রুমে দৌড়ে চলেগেছে। মনেমনে শ্রাবণ বলছে –
আমাকে বোকা বানিয়ে খুব মজা পাস না! সব বুঝেও বুঝিস না। সামনে থেকে তোকে ও আমি নাচাবো!
চলবে।