#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়,পর্ব:১৮,১৯
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_আঠারো
[#গান]
–” নে, তুই তো আবার অসুস্থ হয়ে পরবি, এটা খা!”
স্বর্ণার কাছে শ্রাবণের স্নিগ্ধার প্রতি কেমন একটা কেয়ার কেয়ার ভাব লাগছে।স্নিগ্ধা খাবার খেয়ে মহিমার সঙ্গে একসাথে আলাদা রুমে চলেগেল, মৃত্তিকা আর স্বর্ণা আলাদা রুমে।
রুমে এসেই স্নিগ্ধা শাওয়ার নিয়ে নিল। চেয়েছিল শাওয়ার নিয়ে তারপর খাওয়া দাওয়া করবে কিন্তু শ্রাবণ আগেই খাওয়ার ব্যবস্থা করেনিল। তাই বাধ্য হয়ে খেয়ে নিতে হলো। পাচঁতারকা রিসোর্টটি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি তার পরিবেশ। স্নিগ্ধা খুব ভালোভাবে শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো। এসে দেখল মহিমা ফোনে কথা বলছে, স্নিগ্ধা সেখানে না দাড়িয়ে বেলকনিতে চলেগেল দাড়িয়ে অবাক হয়েগেল সে। নিচ থেকে দেখা যাচ্ছে শ্রাবণরা সবাই সুইমিং পুলে সবাই মিলে দুষ্টুমি করছে। তাদের দিকে তাকিয়ে সে এবার পরিবেশটা উপভোগ করতে লাগল। স্তরে স্তরে সাজানো চা বাগান!
পাহাড়ের খাজে খাজে যেন সাজিয়ে রেখেছে বাগান গুলো।
” প্রকৃতি এত সুন্দর কেন? হারিয়ে গেলোও যেন আফসোস হবে না, বিকেল গড়িয়ে আসছে প্রায়,
স্নিগ্ধা রুমে এসে আবার শুয়ে পরল বিছানায়। ঘুম আসছে তার আরেকটু ঘুমোতে হবে।
_____________________
জানো বাবা কখনোই আমাকে আসতে দিত না, একা একদমই ছাড়তে চাইতো না। আমি বলেছি বাবা শ্রাবণের সঙ্গে যাবো আরও অনেকে আছে। জানো বাবা শ্রাবণকে খুব পছন্দ করে, বাবার মনে হয় শ্রাবণ খুব ভালো ছেলে।
আর আমার বেস্ট ফ্রেন্ডদের তালিকায় শ্রাবণ ফার্স্টবয়!
তোমার কোন বেস্টফ্রেন্ড আছে?
–” না, আমার কোন বেস্ট ফ্রেন্ড নেই, মানি ছেলে বেস্টফ্রেন্ড নে! আর তাছাড়া এমনি কয়েকজন ছিল ক্লাসের ওদের সাথে পড়া নিয়ে আলোচনা হতো।
–” ও, তো বয়ফ্রেন্ড নিশ্চয়ই আছে?”
–” আমি আর বয়ফ্রেন্ড! ইম্পপসিবাল! আই হেইট রিলেশন শীপ!
” উমম নিজেই রিলশনে আছো,” বিড়বিড় করে মহিমা বলল।
–” রিলেশনের আগে প্রত্যেকটা মেয়ের জীবনে নিজের পথ তৈরি করা উচিৎ ! জীবনের মোড় সব সময় এক থাকে না, যেকোন সময় জীবনের মোড় ঘুরে যেতে পারে। আজ যে সময়টা আমি বয়ফ্রেন্ডের বা হাসবেন্ডের পিছনে ঘুরেঘুরে কাটিয়ে দিব। এমন এক সময় হবে সে আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে। অথবা দেখাগেল সম্পর্কে ফাটল ধরল তখন? তখন তুমি কার উপর নির্ভরশীল হবে? জীবন সঙ্গি সব সময় তোমার ছায়া বা কায়া হয়ে থাকবে এমন নয়! সবাই সব সময় পাশে থাকবে এমন নয়।”
–” হুম, তোমার খুব বুদ্ধি আছে বুঝা যায়। যে বয়সে মেয়েরা আবেগে ভেসে বেড়ায় সে বয়সে কলম হাতে নিচ্ছ!
যাক,শ্রাবণ তার কাজিনের জন্য প্রাউড ফিল করবে একদিন নিশ্চিত!”
–” দোয়া করো আমার জন্য!”
–” হুম, অবশ্যই!”
দরজায় নক হতেই মহিমা দরজা খুলে দিল। শ্রাবণরা সবাই বাইরে দাড়িয়ে আছে। শ্রাবণের কাধে গিটার ঝুলানো, চিরচেনা হাসিতে শ্রাবণ বলে উঠল –
–” তা দুজনে মিলে গল্প শেষ হলে এবার কি আমাদের সঙ্গে আসবেন?”
–” কোথায় যাবো?”
–” জ্বী আপনাদের দয়ায় আমি এবং আমরা নিচে বারবি কিউ পার্টির আয়োজন করেছি। যদি মহিমা বেগমের একটু দয়া হয় তাহলে আপনি আমাদের সঙ্গে আসতে পারেন।”
–” মহিমা প্লিজ টাইম ওয়েস্ট করো না, শ্রাবণ আমাদের জন্য এত বড় আয়োজন করেছে সত্যিই খুব ভালো লাগছে শ্রাবণ তোমার সঙ্গে এসে।” স্বর্ণা একদম গদগদ হয়ে শ্রাবণকে বলল।মহিমা একটা ভেংচি কেটে স্নিগ্ধার হাত ধরে চলল।
রিসোর্টের যে পাশে সুইমিংপুল সেইদিকেরই একটা কোণে শ্রাবণ ম্যানেজারকে বলে একটা বার-বি-কিউ পার্টির আয়োজন করেছে। সবাই মিলে ঘাসের উপর বসে পরল। শ্রাবণ গিটার নিয়ে বসেছে, স্বর্ণা সবাইকে পাশ কাটিয়ে শ্রাবণের সঙ্গে বসে পরল। তারপর শ্রাবণের হাত জড়িয়ে বসে পরল, শ্রাবণের দিকে চেয়ে বলল –
–” শ্রাবণ তোমার মনে আছে? ইউনিভার্সিটির ফাংশনের প্রায় কয়েকদিন আগে তুমি তোমার পছন্দের গানটা মাঠে বসে গেয়েছিলে। স্যারেরা তোমার কন্ঠে গানটা শুনে তোমাকে গাইতে কত করে বলেছিল তুমি ফাংশনে গাইতে চাইলে না, পরে মাহিন স্যার রেগে গিয়ে তোমাকে বলেছিল তুমি যদি গান না গাও তাহলে স্যার তোমার ম্যাথের খাতায় রসগোল্লা দিয়ে দিবে। তারপর তুমি গান গেয়েছিলে ফাংশনে। ”
–” মনে থাকবে না কেন? মনে থাকারই কথা! হঠাৎ এই কথার মানে?
–” তুমি আবার সেদিনের মত গানটা গাও না প্লিজ!”
শ্রাবণ স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বলল –
–” তুমি যখন বলবে আমি একটা না হাজারটা গান গাইবো!”
–” ওহ, সুইট! প্লিজ গাও!”
শ্রাবণ স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে তারপর সবার দিকে ফিরে বলল –
–” কি গাইবো?” বলতেই শ্রাবণের মোবাইলে রিং হলো, সে উঠে চলেগেল।
–” ডং! গিটার কাধে নিয়ে বসে আছে আবার প্রশ্ন করছে গাইবে কিনা!” মহিমা বলেই ভেংচি কাটলো।
তাশদীদ মহিমার দিকে চিপসের প্যাকেট ধরিয়ে দিল।
তারপর তার পাশে বসে পরল, স্নিগ্ধা তাশদীদের দিকে তাকাতেই তাশদীদ স্নিগ্ধার দিকে হেসে তার হাতে দুটো ডেইরী মিল্ক ধরিয়ে দিয়ে বলল এগুলো তোমার।
স্নিগ্ধা ডেইরী মিল্ক গুলো নিয়ে কৃতজ্ঞতার স্বরে হাসি দিল।
আয়মান স্নিগ্ধার পাশে বসে বলল-
–” তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে, চাদেঁর আলোয় চাদঁকুমারী মনে হয়!”
–” তাই নাকি? জানা ছিল না তো!”
–” নিজের সৌন্দর্য কি মানুষ নিজে ধরতে জানে? অন্যরাই তো জানে তার সৌন্দর্যের কথা! এই যেমন তুমি হয়তো নিজেকে তেমন সুন্দর ভাবো না, বা গুনি ও ভাবতে পারো না। কিন্তু অন্যরা ঠিকই তা দেখতে পারে। কি ভুল বললাম?”
–” না,”
–” তোমার ফেসবুক আইডি আছে?
–” না”
–” হোয়াটসআপ?”
–” নো, কিছুই নেই!”
–” হোয়াট! কিছুই নেই? মানি ফোন চালাও কি করে তুমি?”
–” আমি তো ফোনই চালাই না!”
–” তুমি ফোন চালাও না? মজা করছো রাইট?”.
–” সত্যিই শ্রাবণ ভাইয়ার কাছে মাঝেমাঝে ফোন পাই!”
–” তোমার নিজের সেলফোন কিনে নিতে পারো না?”
–” শ্রাবণ ভাই বলেছে আমার পরিক্ষা ভালো হলে নতুন মোবাইল কিনে দিবে।”
–” আমি যদি তোমায় মোবাইল কিনে দেই?”
–” আমি মোবাইল চাই না!”
–” বাট আমার মনে হয় তোমার মোবাইল ইউস করা উচিৎ! বিকজ আই লাই…
–” ঐ শালা এইদিকে আয়! ব্যাটা যেখানে যাস, সেখানে মাইয়া মানুষের সঙ্গে বইসা থাকোস! একটু জীবনডারে উপভোগ কর! বলেই দুটো কিল দিয়ে দিল উৎপল।
–” যা ভাগ! সব জায়গায় তুই আমার পিছনে পরে থাকিস!”
–” ভাইরে জায়গা বুঝে ফ্লার্ট করতে হয়!”
–” উৎপল, চুপ কর হারামি। উৎপলকে টেনে নিয়ে গেল আয়মান এই উৎপলটা সব সময় সব জায়গায় একটা গন্ডগোল পাকাবেই।”
শ্রাবণ গান গাইতে গিটার নিয়ে বসেগেল।
তুমি এলে জানি,
পাখিরা উড়বে।
ছুঁয়ে দিবে তাঁরা অনন্ত!
তুমি এলে জানি,
ফুটবে ফুলেরা,
সব দিন হবে বসন্ত!
তুমি এলে দেখো,
পুর্নিমা চাঁদ জোছনা,
বিলাবে সব রাতে!
তুমি আর আমি, আমরা দুজন,
এক হয়ে যাবো একই সাথে!
প্রানহীনতার শোরগোলে আমি
অর্থ খুঁজে পাচ্ছি না,
একলা থাকার যন্ত্রণাতে
কোথাও আমি থাকছি না!
প্রানহীনতার শোরগোলে আমি
অর্থ খুঁজে পাচ্ছি না।
একলা থাকার যন্ত্রণায়,
কোথাও আমি থাকছি না!
–” ইয়ে! সবাই হাত তালি দিচ্ছ না কেন? হাত তালি দেও!
শ্রাবণ ভিষণ ভালো হয়েছে !
–“এই তোমাদের মধ্যে একজন গান গাও তো! এই তোমার নাম কি? স্নিগ্ধা? তুমি একটা গান গাও তো দেখি!” মৃত্তিকা বলল।
–” আমি গান পারি না!”
–” তুমি গান পারবা ও না। ” স্বর্ণা নাক ছিটকিয়ে বলল।
মহিমা স্নিগ্নাকে ধাক্কা দিয়ে বলল –
–” ও কিন্তু মানুষ সুবিধার না, ও একবার কারো খূত ধরে মজা পেলে বারবার তার দূর্বল জায়গায় আঘাত করে। তুমি নিশ্চয় চাও না কেউ তোমাকে আঘাত করুক!”
স্নিগ্ধা মহিমার দিকে তাকালো তার কথা শুনে। সত্যিই তো সে তো দূর্বল নয়, স্নিগ্ধা শ্রাবণের সামনে দাড়ালো।
–” কি কোন সমস্যা?”
–” ভাইয়া গিটার টা লাগবে!”
–” গিটার লাগবে?’
–” হুম,”
–” শ্রাবণ গিটার দিতেই স্নিগ্ধা গিটার টা হাতে নিয়ে গাইতে শুরু করল।
ও তোতা পাখিরে,
শিকল খুলে উড়িয়ে দেবো
মাকে যদি এনে দাও,
আমার মাকে যদি এনে দাও
ঘুমিয়ে ছিলাম মায়ের কোলে,
কখন যে মা গেলো চলে
সবাই বলে ঐ আকাশে,
লুকিয়ে আছে খুঁজে নাও
ও তোতা পাখি রে ..
কেউ বলে মা ভোরের বেলায়,
চাঁপার বনে ফুলের মেলায়
ফুল কুড়িয়ে কখন যেন,
ঠাকুর ঘরে আসে
ভোরের আলো ফোটার আগে,
জেগে কত খুঁজি মাকে
চাঁপা তলায় ঠাকুর ঘরে,
বাড়ির আশে পাশে
আমাকে মা ভুলেই গেছে,
পাই না তাকে আর কোথাও
ও তোতা পাখি রে..
স্নিগ্ধার গান শুনে সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনছিল। আবার মায়ের গান শুনে সবাই কেমন ইমোশনাল হয়েগেল।
স্বর্ণা সবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল –
–” ওহ, প্লিজ! তোমরা বেড়াতে এসেছো এখানে। এসেই পরিবেশটাকে একদম গুমোট করো নাতো। একজন ইমোশনাল গান গাইলো আর ওমনই সবাই মিলে কাদতে শুরু করে দিলে। ডিসগাস্টিং!”
শ্রাবণ স্নিগ্ধার দিকে চেয়ে আছে, এত সুন্দর করে মেয়েটা গান গাইতে পারে তার জানাই ছিল না। অথচ মেয়েটা গান করেই না। অবশ্য সে কখনো গান পারে বা স্নিগ্ধার ভিতরে থাকা হিডেন টেলেন্ট গুলো যাচাই করেনি। এখন পর্যন্ত স্নিগ্ধার পড়া আর স্নিগ্ধার চালচলনেই নজর দিয়েছে।
–” এই তাশদীদ!
–” কি?”
–” দুজনের জুটি টা খুব ভালো না রে?”
–” কোন দুজন?”
–” স্নিগ্ধা আর শ্রাবণের?”
–” হুম,”
–” দুজনই গানের মানুষ, দুজনই ঝগড়ুটে, একজন টক মিষ্টি! একজন ঝাল! স্নিগ্ধাটা একদম অবুঝ!”
–” স্নিগ্ধা তোর থেকে ভালোই আছে! তুই তো এত বড় মেয়ে হয়ে বুঝিসই না কে তোকে চায়!”
–” কে চায়?”
–” থাক আর জানতে হবে না!”
সারারাত সবাই মিলে হইহুল্লোড় করে ঘাসের উপর বসে গল্প করল। খেয়েদেয়ে যে যার রুমে চলেগেল।স্নিগ্ধা মামির সঙ্গে ফোনে কথা বলে বিছানায় শুয়ে পরল।
মহিমা ও বিছানায় বসতে চাইলো কিন্তু দরজায় নক হতেই তার শোয়া হলো না। দরজা খুলেই দেখল শ্রাবণ দাড়িয়ে আছে।
–” কি চাই?”
–” আমার বউ কই?”
–” হুহ! বরের একদম সইছে না। তোর বউ ঘুমায় রে পাগলা! কেন এসেছিস কিছু বলবি?”
শ্রাবণ মাথা চুলকে, লাজুক হেসে বলল-
–” কিছু না, এমনি। কোন সমস্যা হলে বলিস!”
চলবে।
#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়!
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_উনিশ
[#চা বাগান]
–” আমার বউ কই?”
–” হুহ! বরের একদম সইছে না। তোর বউ ঘুমায় রে পাগলা! কেন এসেছিস কিছু বলবি?”
শ্রাবণ মাথা চুলকে, লাজুক হেসে বলল-
–” কিছু না, এমনি। কোন সমস্যা হলে বলিস!”
–” তোকে বলতে হবে কেন? হোটেল সার্ভিসম্যানরা আছে না।”
–” বেশি কথা বলিস না, যা ঘুম দে। আর দরজা ভালো করে লক করে ঘুমিয়ে নিস।”
–” আচ্ছা,”
_____________________________
ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছে স্নিগ্ধার, পরপর দুবার মোবাইলে রিং হতেই মোবাইল তুলে নিয়ে দেখল শ্রাবণের ফোন তাও মহিমার ফোনে। মহিমাকে জাগিয়ে ফোন ধরিয়ে দিল সে।
ঘুম জড়ানো কন্ঠে মহিমা ফোন ধরতেই অপাশ থেকে শ্রাবণ বলল–
–” কিরে, এখন ও ঘুমিয়ে আছিস? আহ তোর মত বউ যার কপালে থাকবে তার কপাল খুব খারাপ। আনরোমান্টিক বউ হবি তুই, ও শালার কপাল পুড়ে কয়লা হয়ে যাবে।”
–” চুপ কর শ্রাবইন্যা! ঘুম ভাঙ্গিয়ে ডায়লোগ দিচ্ছিস।”
–” তাড়াতাড়ি নিচে আয় স্নিগ্ধাকে নিয়ে।”
–” কেন?”
–” এত প্রশ্ন করিস না। কিসের জন্য তোদের এনেছি ভুলে গিয়েছিস? তাড়াতাড়ি দুজনে মিলে নিচে আসবি। আমি তাশদীদ নিচে আছি।
মহিমা আর স্নিগ্ধা রেডি হয়ে নিচে নেমে গেল। শ্রাবণ আর তাশদীদ দুজন বাইরে দাড়িয়ে কথা বলছে।
শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বলল
–” তুই তোরটারে নিয়ে ঐদিকে দাড়াবি, আমি আমার টারে নিয়ে ঘুরে আসবো। কেউ যদি আসে তাহলে ফোন করে জানিয়ে দিবি।”
স্নিগ্ধা আর মহিমা সামনে আসতেই শ্রাবণ স্নিগ্ধার হাত ধরল। স্নিগ্ধা মহিমার দিকে তাকালো আড়চোখে একবার তাশদীদের দিকে তাকালো। স্নিগ্ধার কেমন লজ্জা করে উঠলো। স্নিগ্ধা শ্রাবণের হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলে শ্রাবণ বলল
–“কি সমস্যা?”
–” এমন করছেন কেন? দেখেছেন আপু আর ভাইয়া চেয়ে আছে। কি ভাববে দুজনে?”
–” ওদের ভাবা-ভাবি দিয়া আমি কি করমু? আমার বউয়ের হাত আমি ধরছি, তুই এত চিন্তা করিস না।হাট আমার সাথে।”
–” আরে ওনারা তো জানে আমরা কাজিন!”
–” কে বলেছে তোকে? ওদেরকে আমি জানিয়েছি আমরা বিবাহিত শুধু অন্যরা জানেনা। উৎপল, মহিমা, তাশদীদ ওরা সব জানে।”
–” ও, আপনারা সব জানেন আর আমাকে জানাননি।”
–” সব তোকে জানাতে হবে? চল বলেই স্নিগ্ধার হাত ধরে পাশের একটা চা বাগানে হাটতে লাগল তারা। শ্রাবণ স্নিগ্ধার হাত ধরে হাটতে হাটতে এসে পরল চা বাগানের ভিতর।
স্নিগ্ধা পাহাড়ের টিলায় চড়ে উঠছে শ্রাবণের হাত ধরে। নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে ঘেরা চায়ের বাগান।
স্নিগ্ধার হাত ধরে শ্রাবণ বলল-
” তুমি বাগানের ধোয়া উঠা
কচি পাতার চায়ের মত!
তোমার গন্ধে আমার রন্ধ্রে
আর শিরদাড়াঁয় শীতলতা বয়ে যায়!
তুমি শ্রাবণের স্নিগ্ধ সন্ধ্যার মত,
এক কাপ সুবাসিত চা!”
-[তামান্না]
স্নিগ্ধা শ্রাবণের দিকে অবাক হয়ে চেয়ে আছে, স্নিগ্ধার দিকে চেয়ে আছে শ্রাবণ মুচকি মুচকি হাসি তার মুখে।
স্নিগ্ধার মুখ পুরো হা হয়ে গেছে। শ্রাবণ স্নিগ্ধার সামনে তুড়ি মেরে বলল –
–” তা মিসেস স্নিগ্ধা কোথায় হারিয়ে গেলেন আপনি?”
–” আমি ভাবছি এই কবিতাটা কার?”
–” যার কবিতাই হোক, এমন মুহূর্তে এমন একটা কবিতায় তুই আমি দুজনই আছি সেই কবিতাই তো স্মরণ করবো বল!”
–” উমম, এত এত রোমান্টিক যে আজ। “স্নিগ্ধা অন্যদিকে ফিরে কথাটা বলল।
–” রোমান্টিকতা কে দেখিস না, উপভোগ কর এই মুহূর্তটাকে। চল আয় আমার সাথে, দুজনে হাটতে হাটতে বাগানে মধ্যে এসে দাড়ালো শ্রাবণের হাতে রাখা স্নিগ্ধার হাতটাকে আরও জোড়ে আকড় ধরে বলল –
–” ভালোবাসার মানুষটাকে সবচেয়ে অনুভব করা যায় কখন জানিস?
নিরব নির্জন জায়গায় যখন তুই কোন গভীর জঙ্গলে হারিয়ে গেলি তখন বারবির সেই স্মৃতিগুলো মনে পরবে।
স্নিগ্ধার চোখে হাত দিয়ে বলল –
–” এখন চোখটাকে চুপচাপ বন্ধ কর, অনুভব কর আমি তোর সামনে বা এই চোখ দুটোও ধরিনি একদম একা তুই এই টিলায়!
ভাবতে থাক এতটা বছরের কোন মুহুর্তটা তোর জীবনের শ্রেষ্ট?কোন মানুষটার মুখ বারবার তোর সামনে আসে?
স্নিগ্ধা কিছুটা চোখ বন্ধ করলে ও পরবর্তী সময় পারলো না। তার কিছুই মনে পরছে না তেমন বিশেষ মুহূর্ত!
শ্রাবণের সঙ্গে কাটানো কিছু মুহূর্ত, মামির সঙ্গে বা তার নানা- নানীর সঙ্গে কাটানো মুহূর্ত। শ্রাবণের সঙ্গে কাটানো মুহূর্ত গুলো খুব দুষ্টু মিষ্টি ছিল হেসেদিল স্নিগ্ধা।
শ্রাবণ হাসি দেখে চোখ থেকে হাত সরাতেই স্নিগ্ধা শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল
–” আপনি ও না, কোথায় তেমন কিছুই তো দেখলাম না!”
–” সত্যিই কি দেখিসনি?”
স্নিগ্ধা পাশে থাকা একটা জঙ্গলি ফুল শ্রাবণের কানে গুজে দিয়ে। ফুল নিয়ে শ্রাবণের সামনে নেড়েচেড়ে বলল
–” না দেখিনি তো, এমন কোন সুন্দর মুহূর্ত তো পাইনি।”
–” পাসনি?”
–” না,”
–” তুই এখন আমার সামনে থেকে যা!”
শ্রাবণের মাথা খারাপ হয়েগেছে, কি সুন্দর একটা পরিবেশ এই সময়টা সে খুব আশা করেছিল স্নিগ্ধার মনে যদি তার জন্য কোন অনুভূতি থাকে তা হয়তো সে বের করতে পারবে কিন্তু স্নিগ্ধার মনের জায়গাই তো সে পায়নি।
স্নিগ্ধা শ্রাবণের গাল দুটো টেনে বলল
–” এখন আপনাকে কেমন লাগছে জানেন?
জঙ্গলি ফুলবানু! থুক্কু জঙ্গলি ফুলবাবু!”
পাহাড়ের ছোট ছোট টিলার ভাজে
চা বাগানের মধ্যে গহীন অরণ্য
হতে একটা জঙ্গলি ভুলক্রমে পথ হারিয়ে লোকালয় এসে পরেছে। কানে তার জঙ্গলি ফুল!”
–” তবে রে!” বলেই শ্রাবণ স্নিগ্ধার পিছনে ছুট লাগালো।
স্নিগ্ধা দৌড়ে দৌড়ে একদম নিচে নেমে যাচ্ছে।
শ্রাবণ দৌড়ের গতি কিছুটা কমিয়েছে। কারন স্নিগ্ধা তার সাথে পারবে না। ছুট লাগাতে গিয়ে আঘাত পেয়ে শেষে আরেক বিপদে পরতে হবে।
কিছুটা দৌড়ে শ্রাবণ স্নিগ্ধার হাত ধরে বলল –
–” আর দৌড়াতে হবে না,” দুজনে কিছুটা পথ হেটে সামনে এগুতেই দেখল একটা ছোট্ট চায়ের দোকান।
এমন চায়ের বাগানে ঘেরা পথে ছোট্ট টঙ্গের দোকানটা দেখে শ্রাবণের খুব হলো সকালে ধোয়া উঠা চা টা সে এখানেই পান করবে।
দু কাপ চা অর্ডার করে এক চা স্নিগ্ধাকে দিয়ে আরেক কাপ চা সে নিয়েনিল। স্নিগ্ধা একটু চা টাকে খুব মজা করেই খেলো। না আজ আর তার খুব একটা খারাপ লাগল না অথচ অন্যসময় সে বাইরের দুধ চা টা তেমন খেতে পারতো না। একদম লালরঙ্গা লেবু চা তার পছন্দের তালিকায় চা হিসেবে। সকালটা দুজনে মিলে রওনা দিল রিসোর্টে। রিসোর্টের কাছাকাছি এসে দেখল তাশদীদ আর মহিমা দুজনই দুই প্রান্তে দাড়িয়ে আছে।
স্নিগ্ধা আর শ্রাবণ সামনে যেতেই দুজন দুদিক থেকে কাছাকাছি এসে দাড়ালো। স্নিগ্ধা বা শ্রাবণ কারোরই বোধগম্য নয় দুজনের মধ্যে কি হয়েছে। খুব তো দুজন কথা বলছিল নিজেদের মধ্যে।
রিসোর্টের ভিতর যাওয়ার পরই দেখল স্বর্ণা রিসেপশন থেকে দৌড়ে আসছে।
শ্রাবণের সামনে এসে দাড়িয়ে বলল –
—” শ্রাবণ কোথায় গিয়েছিলে তুমি?আমি তোমাকে কোথায় না খুজেছি!”
–” এমনি বাইরে গিয়েছিলাম।”
–” বাইরে গিয়েছিলে আমায় নিলে না কেন?”
–” স্বর্ণা তোমাকে কি করে নিয়ে যাই বলো তো? স্নিগ্ধার মন খারাপ ছিল, কাজিন হিসেবে আমার দায়িত্ব ওর মন ভালো করা।”
–” সঙ্গে ওরা ও গিয়েছে?”
–” হ্যা,”
–” ওরা ও গিয়েছে সঙ্গে তুমি, তোমরা সবাই মিলে বাইরে গেলে আমাকে নিলে না সঙ্গে! কি সমস্যা হতো শ্রাবণ আমাকে নিলে? সব সময় তুমি আমাকে অবহেলা করো। ”
শ্রাবণ মনেমনে বলছে প্রথম থেকেই তুমি আমার জীবনে এমনি প্রবেশ করেছো। অবহেলা করার মত বা তোমাকে প্রায়োরিটি দেওয়ার কোন ইচ্ছাই ছিল না আমার।
তুমিই শরীরে আঘাত করে অসুস্থ হয়ে আমার কাছে ভালোবাসার দাবি নিয়ে এসেছিলে। এসব ভাবতে ভাবতে শ্রাবণ জবাব দিল –
–” এরপর ঘুরতে গেলে নিয়ে যাবো তোমাকে।”
–“প্রমিস?”.
–” প্রমিস!”
আয়মান স্নিগ্ধার সামনে দাড়িয়ে বলল –
–” হাই কিউটি!”
–” হাই!
–” সকাল সকাল মানুষ হেসে দিন শুরু করে আর তুমি কিনা সকালটা মন খারাপ দিয়ে শুরু করলে।”
–” মন যা ভালোছিল তা আপনাকে দেখে খারাপ হয়েগেছে।
চলবে।