সংসার #পর্বঃ ২

0
1422

#গল্পঃ সংসার
#পর্বঃ ২
#লেখাঃ কামরুল ইসলাম ইথান

ক্লাস ফ্রেন্ডকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে খুশী হবো? না কি নতুন স্বামী হিসেবে ওকে সালাম করবো? আমার জীবন যেন এক মোড়ে এসে থেমে গেছে। আমি একদম স্তব্ধ হয়ে গেলাম। ইথান আমার স্তব্ধটা বুঝতে পেরে, ছুটল পানি আনতে আর ছুটতে গিয়ে পড়ে গেলো। তা দেখে আমি সাথে সাথেই হেসে উঠলাম। আজ অনেকদিন পর মুখে হাসি ফুটলো।

ইথান হঠাৎ পড়ে যাওয়ায় আমি হাসছিলাম। আর হাসতে হাসতে এক পর্যায়ে কান্না করে দিলাম। আমার কান্না দেখে ইথান উঠে আমার কাছে আসলো আর এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বলল,

– এই যে মায়াবতী, কান্না করছো কেনো?
– প্লিজ ইথান আমাকে মায়াবতী ডেকো না। আমার শুভর কথা মনে পড়ে যায়।
– আচ্ছা, ডাকবো না। প্লিজ এবার পানিটা নাও।

আমি ইথানের দিকে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে ছিলাম। ওর কথা শুভর কথার সাথে বেশ মিল আছে। আমি পানিটা নিয়ে পান করলাম। সত্যি বলতে অনেক পানির পিপাসা পেয়েছিলো। পানিটা খেয়ে নেওয়ার পর ইথান গ্লাস টা নিয়ে চলে গেল। ও যাবার পর মনটা কেমন জানি করছিলো।

আমার সাথেই নিয়তি এটা কেনো করলো? যাকে জীবন দিয়ে ভালোবেসেছি সে আমার দায়িত্ব নিয়েই অকালে চলে গেলো। ইথান বিদেশে চলে যাওয়ার পর আমি ওকে অনেক খুঁজেছিলাম। আজ তার দেখা মিলেছে ঠিকই তবে অবহেলিত ছেলেটি হিসাবে নয়, আমার স্বামী হিসাবে। এদিকে কিছুক্ষন পর দেখি ইথান একটা প্লেটে ভাত নিয়ে এসেছে। আমার কাছে এসেই বললো,

– এই নাও ভাত খাও।
– আমার ক্ষুধা নাই। তুমি খাও।
আমার কথা শুনেই ইথান ভাত মাখতে শুরু করলো। কি আর মনে হয় নিজেই খাবে। কিন্তু না, ইথান ভাত মাখিয়ে আমার মুখের সামনে নিয়ে এসে বললো,

– তায়্যিবা, হা করো প্লিজ।
– না আমি খাবো না। তুমি খাও।
– আচ্ছা তায়্যিবা, তোমার মনে আছে আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষক এর নাম কি?
– হুম মনে আছে। মজিবুর রহমান চুন্নু।

কথাটা বলার মাঝে কখন যে আমি হা করে ভাতটা খেয়েছি মনে নেই। ইথান ঠিক এভাবে আমাকে ওর কথার ছলে ভাত খাইয়ে দিলো। আর আমিও কখন যে ভাত খাওয়া শেষ টের ই পেলাম না।

– তায়্যিবা দেখেছো ভাত খাওয়া শেষ, এখন থেকে আমিই তোমাকে ভাত খাইয়ে দিবো। অনেক রোগা হয়ে গেছ। আগে কত সুন্দর গোলুমলু ছিলে আর এখন?

ইথানের এ রকম কথা শুনে আবার আমার চোখ ছলমল করে উঠলো। খুব ইচ্ছে করছিলো ওকে জড়িয়ে ধরে একটু কান্না করি। কিন্তু ভয় করছিলো যদি অনুভূতির কারনে অন্য কিছু হয়ে যায়। কারন ও এখন আমার দ্বিতীয় স্বামী। আমার এই দেহটার প্রতি ওর তো অধিকার আছে। ইথান আমার কান্নার চোখ দেখে বললো,

– প্লিজ তায়্যিবা কান্না করো না। তোমার চোখে পানি আমি সহ্য করতে পারিনা। যাও ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো।

আমিও ইথানের কথামত ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। তারপর সব গহনা খুললাম। কিন্তু শুভর কথা মনে করে আর কান্না থামাতে পারলাম না। বেসিনের কল ছেড়ে জোড়ে কান্না করছিলাম। হঠাৎ ইথান ওয়াসরুমের দরজা ধাক্কা দিলো আর বললো,

– তায়্যিবা… একটু বের হও প্লিজ।
ইথানের আওয়াজ শুনে আমি কান্না থামালাম। কারন মাকে কথা দিয়েছি মা বলেছিলো,
– মারে তোর বর্তমান স্বামীকে কখনো বুঝতে দিবি না যে তুই জামাইবাবাজীকে মিস করছিস।
তখন আমিও মাকে বলেছিলাম,
– শুভকে আমি কখনো ভুলতে পারবো না আর তুমি মিস করার কথা বলছো।

মা তখন আমার কথা শুনে কাঁদতো। যাই হোক আমি মায়ের কথা রাখতে পারলাম না। ইথানের সামনে আমি শুভর জন্য কেঁদেছি। তারপর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসলাম। দেখি ইথান বিছানা গুচাচ্ছে। এটা দেখে হঠাৎ আমার বুকে ব্যথা উঠলো। তাহলে এখন কি ইথান আমাকে তার স্ত্রী বলে ঝাপিয়ে পড়বে? ইথান আমাকে দেখে একটু মুচকি হাসি দিলো আর বললো,

– তায়্যিবা তুমি খাটে ঘুমাও আমি সোফায় ঘুমাবো।

কথাটা শুনার পর আমি ওর দিকে একদৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে ছিলাম, হয়তো ভালোবাসতো বলে আমাকে দেখে একটু মায়া করলো। আমি গিয়ে বিছানায় বসলাম আর ও সোফায় বসে ল্যাপটপ দিয়ে কাজ করছে। আমি ওর দিকে তাকিয়েছিলাম আর ভাবছিলাম বাবা তো বলেছিলো আমার স্বামী মানে ইথান বিয়ে করেনি! কিন্তু ইথান কেন বিয়ে করেনি? তখন মনে একটু সাহস করে ওকে জিজ্ঞেস করলাম,

– আচ্ছা ইথান, তুমি বিয়ে করলে না কেনো?
আমার প্রশ্ন শুনে ইথান কিছুক্ষণ চুপ ছিলো। প্রায় অনেক্ষন। মনে হয় আঘাত পেয়েছে আমার কথায়। তাই আমি আর কিছু বললাম না। আমার নিজের কষ্টের শেষ নেই আবার অন্যের কষ্ট কি ভাববো? তাই শুয়ে পড়তে যাব তখনি ইথান বলে উঠলো,

– তোমার শূন্যতা কি অন্যজনকে দিয়ে পূরণ হতো?

ইথানের কথাটা শুনা মাত্রই আমি উঠে বসলাম।
.
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here