#গল্পঃ সংসার
#পর্বঃ ৩
#লেখাঃ কামরুল ইসলাম ইথান
আমার নিজের কষ্টের শেষ নেই আবার অন্যের কষ্ট কি ভাববো? তাই শুয়ে পড়তে যাব তখনি ইথান বলে উঠলো,
– তোমার শূন্যতা কি অন্যজনকে দিয়ে পূরণ হতো?
ইথানের কথাটা শুনা মাত্রই আমি উঠে বসলাম। নির্বাক দর্শকের মত দেখছি আর ভাবছি কি করবো আমি? ইথানকে বন্ধুর মত সান্তনা দিবো নাকি স্ত্রীর মত? একটা সময় ইথান লাইট ওফ করে দিয়ে বললো,
– তায়্যিবা ঘুমিয়ে পড়ো, আজ অনেক ধকল গেছে নিশ্চয়!
আমি কোনো কথা না বলে চুপচাপ শুয়ে রইলাম। শুভর কথা না ভেবে ইথানের কথা ভাবতে ভাবতে একটা সময় ঘুমিয়ে পরলাম। সকালে ইথান আমাকে ডাক দিলো। আমি ঘুমের ঘোরে স্পষ্ট শুনছি ইথান বলছে,
– তায়্যিবা… ঘুম থেকে উঠো প্লিজ।
আমি ইথানের কথামত ঘুম থেকে উঠলাম। তখন বলল,
– তায়্যিবা, নামায পড়বে না?
– না।
ইথান আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ চলে গেল। শুভ মারা যাওয়ার পর থেকে আমি এক ওয়াক্ত নামায ও পড়ি নি। কারন আল্লাহতালার উপর কেমন যেন একটা রাগ চলে এসেছিলো। শুধু মনে হত তিনি আমায় নিঃস্ব করেছেন।
ইথান মসজিদ থেকে ফিরে এসে দেখলো, আমি শুয়ে আছি। তাই রুমে ঢুকে কিছুক্ষণ পর আবার বের হয়ে গেলো। ঘড়িতে ৭টা বাজে দেখে, জলদি তৈরি হলাম। নতুন বাড়ির বউ তো। নাস্তা বানাতে রান্নাঘর এ যাবার সময় দেখি ডাইনিং টেবিলের উপর সব খাবার সাজানো।
আমি ভাবলাম হয়তো আমার ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়েছে তাই খাবার অর্ডার করা হয়েছে। কিন্তু পরে দেখলাম ইথান তরকারির বাটি হাতে করে নিয়ে আসছে।
আমার খুব জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করছিলো, এত কিছু কে রান্না করছে? কিন্তু কেন জানি ইথানের সাথে কথা বলতে সংকোচবোধ করছি। আমি ওইখান থেকে চলে আসার সময় ইথান আমায় পিছন দিয়ে ডাক দিলো,
– তায়্যিবা কোথায় যাচ্ছো? এখানে আসো ব্রেকফার্স্ট করবে। এত সব তোমার জন্যই বানিয়েছি।
আমি অবাক চোখে ঘুরে তাকালাম। তখন ইথান আবার বললো,
– অবাক হচ্ছো তাই না? সময় সব শিখিয়ে দিয়েছে। আচ্ছা তায়্যিবা এদিকে এসো তাড়াতাড়ি।
আমি ওর কথামতো চেয়ারে গিয়ে বসলাম। ইথান আগের রাতের মত নাস্তাও নিজ হাতে আমাকে খাইয়ে দিলো। আমি নাও করতে পারলাম না। ইথানের মা-বাবা নেই। শুধু ১টি বোন আছে তার নাম তানহা। তানহা খালার বাসায় থেকে পড়াশোনা করে। তাই বাসায় আমি আর ইথান একা।
ইথান আমাকে ভাত খাইয়ে দেয়ায় সময় আমার শুভর কথা মনে পড়ছিল। ইথানের খাওয়ানো শেষ হলে আমি থালাবাসন ধোয়ার জন্য নিলাম। রাত্রে ইথান আমার শরীর না খুঁজলেও দিনে হয়তো আমাকে কাজের মেয়ে হিসেবেই চায়। কিন্তু না, ইথান আমার ভাবনা মিথ্যা করে দিলো। ও আমার হাত থেকে সব নিয়ে গেলো আর বললো,
– তায়্যিবা তুমি রেষ্ট নাও।
আমি কোন কথাই বললাম না। যদি শুভ থাকতো তাহলে হয়তো ঝগড়া টগড়া করতাম। আমি চুপচাপ রুমে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলাম। শুভর কথা মনে হলে চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না।
শুভর শুধু মা আর বোন ছিলো রুবাইয়া। শুভ মারা যাবার পর ভেবেছিলাম সারাটি জীবন তাদের নিয়ে থাকবো কিন্তু তা আর হলো না। শুভর মা আমাকে শুধু খোটা দিতো আমি নাকি অপয়া আমি নাকি শুভকে খেয়েছি। কিন্তু অদ্ভুত ব্যপার তিনিও বিধবা। তাও মুখ বুজে সব শুনতাম। কারন ওই বাড়ীতে শুভর একটা গন্ধ ছিলো।
শুভর বোন রুবাইয়া ছিল ডিভোর্সি ওর একটা ছেলে আছে নিশাত। ও আমাকে খুব ভালোবাসে সারাদিন মামি মামি করতো। রুবাইয়া আমার কাছে নিশাতকে দিয়ে সব কাজ করতো। শুভ মারা যাবার পর নিশাতকে আমার কাছে আসতে দিতো না। বলতো, আমি নাকি শুভর মত নিশাতকেও খাবো। তাও মুখ বুজে থাকতাম।
হঠাৎ একদিন বাবাকে ডেকে আমাকে দিয়েই দিলো। শুভর মায়ের পা ধরেছিলাম যে কাজের মেয়ের মত থাকবো তাও থাকতে দিন। কিন্তু কিছুই শুনলো না আমাকে চলে যেতে বললো। এইসব কথা ভেবে চোখ আর ধরে রাখতে পারি না। কান্না করতে লাগলাম। তখন ইথার এসে দরজা ধাক্কা দিলো। আমি জলদি চোখ মুছে দরজা খুললাম। ইথান আমাকে দেখে বললো,
– তায়্যিবা তুমি কান্না করলে তোমাকে টমেটোর মত লাগে। আর টমেটো আমার পছন্দ না। চলো কোথাও ঘুরে আসি?
– না!
– আচ্ছা তাহলে বাদ। আমি বাসায় আছি। তুমি রেস্ট নাও।
আমি বুঝতে পারছি ইথান আমাকে ডিপ্রেশন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে। অবশ্য সবসময় চেষ্টা করতো। আমার সাথে কথা বলতো। কিন্তু আমি বলতাম না। আমি আমার মতই থাকতাম। এইভাবেই ১সপ্তাহ কেটে গেলো। ইথান বাসায় থেকেই কি জানি কাজ করে জানিনা, আমি কখনো জিজ্ঞেস করি নি।
ইথান আমাকে সময় কাটানোর জন্য বই কিনে দিয়েছে। আমি তাই পড়তাম। পড়তে পড়তে হাসির গল্প হলেও কেঁদে দিতাম। ইথান টস্যু নিয়ে এসে আমার চোখ মুছে দিতো। এই কয়েকদিনে এমন কোন দিন ছিলো না ইথান আমাকে খাইয়ে দেয় নি।
ইথান রাত্রে বসে বসে ডায়রি লিখতো, স্ত্রীর অধিকার আজো চাই নি সে। কে জানে কবে চেয়ে বসে। তো একদিন ইথান ওর ফোন রেখে বাথরুমে গেলো। তখন হঠাৎ করে ফোন বাজছিল তাই কাছে এগিয়ে গেলাম। লাইন কেটে গেল তাকিয়ে দেখলাম অপরিচিত একটা নাম্বার সাথে পরিচিত একটা মুখ।
হ্যা এটা আমারই ছবি, স্কুল জীবনে বিদায় অনুষ্ঠানে তুলা। আমি একটু অবাক হয়েছিলাম ও কোথায় এ ছবি পেলো? তারপর ইথান এসে ফোন ধরলো। আমি আর জিজ্ঞেস করি নি আমার ছবি কে দিয়েছে? ইথান নিজেই বললো,
– নিজেকে আয়নার আড়াল করেছি তবে তোমাকে না।
এটা বলেই ও চলে গেলো। ওর কথা শুনার পর কেন জানি মনটা মোচড় দিয়ে উঠলো। নতুন অনুভতি জাগ্রত হলো মনে। এটা কি বন্ধুত্বের প্রতি টান নাকি ভালোবাসা?
#চলবে