#গল্পঃ সংসার
#পর্বঃ ৫ শেষ
#লেখাঃ কামরুল ইসলাম ইথান
রাতে শুভর কথা খুব মনে পড়ছিলো। দুইদিন পর শুভর মৃত্যুবার্ষিকী। গত দুইবছর ধরে আমি খিচুড়ি রান্না করে মাদ্রসায় দিতাম। তখন তো শুভর বিধবা স্ত্রী ছিলাম তাই দিতাম। কিন্তু এইবছর আমি ইথানের স্ত্রী কিভাবে দিবো? এইসব ভেবেই কান্না করছিলাম। কান্না করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি তা নিজেও জানি না।
হঠাৎ আলমারির শব্দে আমার ঘুম ভাঙলো। আমি চোখ মেলে দেখলাম ইথান কিছু একটা খুঁজছে। ইথান আমার দিকে তাকালো। আর আমি মাথা নিচু করে ফেললাম। কোন মুখে ওর দিকে তাকাতাম আমি। ইথান আবার লাইট অফ করে বাহিরে চলে গেলো। আমার একটু অবাক লাগছিলো কারন আজ ইথান আমাকে খাইয়ে দেয় নি। আর ইথানের মনটাও কেমন জানি খারাপ লাগছিলো। এইসব ভাবতে ভাবতে আমি আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। পরেরদিন সকালে ইথানকে বললাম,
– ইথান, তানহাকে আমাদের কাছে আনবে? আমাদের এখানে থেকেই লেখাপড়া করুক।
আমার কথা শুনে ইথান যেন খুশিতে পাগল হয়ে গেলো।
– হ্যাঁ নিশ্চয় আনবো। তুমি এই প্রথম আমার কাছে কিছু চেয়েছো। তুমি যেহেতু বলছো আমি এখনি গিয়ে নিয়ে আসবো।
এই বলে ইথান তানহাকে আনতে চলে গেলো। তখন আমার তানহার দেওয়া ডায়েরির কথা মনে পড়লো। ও এখন আসবে যদি জিজ্ঞেস করে কি বলবো? তাই ড্রয়ার থেকে ডায়েরীটা বের করলাম। ডায়েরী টা খুলতেই প্রথম পেজে একটা ডেইট লেখা ছিলো। ডেইট টা ইথান আর আমার বিয়ের। পরের পেজ উল্টালাম দেখি লেখা দুইটি লাইন,
“ও আমার প্রথম ভালোবাসা ছিলো। আজ ওর সাথেই আমার বিয়ে হলো কি ভাগ্য”
এটা পড়ে আমার মনটা মুচড় দিয়ে উঠল। ইথানের জন্য মায়া তৈরি হলো। আমি আবার পেজ উল্টালাম দেখি লেখা,
“ও আজ আমার সাথে কথা বলে নি। আমি ই কথা বলেছি”
আমি এইভাবে পেইজ উল্টাতে লাগলাম আর প্রতি পেইজে ভিন্ন কথা ছিলো। এই দেড় মাসে যে আমি কখন কথা বলেছি আর কখন কথা বলি নি। শুধু শেষের পেইজে লেখা ছিলো,
“আমি ওকে এখনো অসম্ভব ভালোবাসি”
আমার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো। এটা ভালো লাগার পানি। এদিকে ইথান তানহাকে নিয়ে আসলো। আমি ইথানের সাথে স্বাভাবিক হতে লাগলাম আসতে আসতে। কিন্তু আমি ওকে ভালোবাসি কি না তা জানি না। মাঝে মাঝে শুভর কথা মনে পড়তো কিন্তু এখন আর কান্না করি না। এইভাবেই ৮ মাস কেটে গেলো। একদিন রান্নাঘরে আমি কাজ করছি তখন তানহা এসে বললো,
– ভাবী, জলদি আসো। দেখো ভাইয়া কি এনেছে।
বলেই আমার হাত টেনে নিয়ে গেলো দেখি গাড়ি। আমি সাথে সাথেই ইথানকে চিৎকার দিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। আর এই প্রথমবার বললাম,
– প্লিজ ইথান। শুভ এই গাড়ির জন্য এক্সিডেন্ট হয়েছে আমি কিছুই করতে পারি নি। কিন্তু তোমাকে আমি হারাতে পারবো না। আমি তোমাকে ভালোবাসি।
সত্যি বলতে আমি নিজের অজান্তে ওকে ভালোবেসে ফেলেছি তা নিজেই ঐ দিন মুখ দিয়ে স্বীকার করেছি। আর ইথান ও যে আমাকে ভালোবাসে তা ওই দিন বলেছে।
আজ দেড়বছর পর আমরা আমাদের দাম্পত্য জীবন শুরু করি। ইথান আমাকে বলেছিলো,
– এখন মায়াবতী বলে ডাকি?
– না ইথান। আমি তায়্যিবা নাম দিয়ে আমার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করতে চাই।
আজ ৩ বছর পূর্ন হলো আমার নতুন জীবনে স্ত্রী রুপে। আমার একটা ছেলে সন্তান হয়েছে। ছেলের নাম ইথান রেখেছে শুভ। আমার কাছে ২য় বিয়ে মানে পুনরায় হাসির জন্য একটি কারণ।
#সমাপ্ত