সত্যি ভালোবাসা,part_28
writer Fatema Khan
গাড়িতে হঠাৎ রেজোয়ান হোসেন তূর্য ভাইয়াকে বলে উঠলো-
রেজোয়ানঃআচ্ছা তূর্য এই ছেলেটা কে?একে তো আগে দেখি নি,নতুন ড্রাইভার রেখছো নাকি?
আমি তাকালাম না কিন্তু তূর্য ভাইয়া বিষম খেলো রেজোয়ানের কথা শুনে।তারপর বললো-
তূর্যঃ হুম নতুন রেখেছি।আগে যেটা ছিলো তাকে তো আরিশ চিনে তাই রিস্ক নেই নি।
রেজোয়ানঃএটা একটা ভালো কাজ করেছো।ওই আরিশের কোনো ভরসা নেই।আচ্ছা এই ড্রাইভার তুমি কি এয়ারপোর্টের রাস্তা চেনো না এইদিকে কেনো নিচ্ছো?
তূর্যঃআসলে আমিই বলেছি অন্য রাস্তা দিয়ে নিতে যাতে আরিশ টের না পায়।
রেজোয়ানঃঅহ আচ্ছা।তাহলে ঠিক আছে
তারপর আর কোনো কথা হলো না।আমি বাইরের দিকে তাকিয়ে কান্না করেই যাচ্ছি।প্রায় ৩০মিনিট পর গাড়ি ব্রেক করলো।আমার বুক কেপে উঠলো ভয়ে এই বুঝি সব শেষ হয়ে যাবে।একে একে সবাই বাইরে নেমে গেলো আমি ভয়ে নামছি না।আর কেউ নামাতেও আসছে না।বাইরে রেজোয়ান হোসেনের আওয়াজ আসছে কি যেনো বলছে।আমি সেসবে পাত্তা না দিয়ে বাইরের দিকে আবার তাকালাম,তাকিয়ে দেখি এটা তো এয়ারপোর্ট না।তাহলে কোথায় আমরা?তারাতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে গেলাম।
_________________________________
আফসানা রহমান সেন্সলেস হয়ে আছেন কাল রাত হতেই।মাঝে একবার সেন্স আসলেও আবার সেন্স হারান তিনি।নীলিমা খান আর তনিমা তার কাছেই বসে আছে।নিচে ড্রয়িং রুমে আরমান,রায়হান,আবির বসে আছে তাদের মুখে চিন্তার রেশ পরে আছে।কি থেকে কি হয়ে গেলো।
রায়হানঃআরমান তুমি চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।
আবিরঃ হুম কোনো চিন্তা করো না,ওরা তিনজন তো আছেই ওরা সামলে নিবে সবটা।
আরমানঃকি করে শান্ত হবো,আমার ছেলেটার মনটা ছোট থেকে বিষিয়ে রেখেছে ওই রেজোয়ান।তাকে নিজের সবচেয়ে ভালো বন্ধু মনে করতাম তাই ভালো পথে আনতে চেয়েছিলাম।কিন্তু সে কি করলো আমার স্ত্রীকে মেরে ফেললো আর আমরা সারাজীবন এই ভুল ধারণা নিয়ে আছি যে সে গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা গেছে।তূর্য তো সব মানিয়ে নিয়েছিলো আর ওই রেজোয়ান আমার ছেলেটার মাথায় প্রতিশোধের আগুন জ্বালিয়ে রেখেছিলো।
আবিরঃএখন সব ঠিক হয়ে যাবে।তুমি বরং আবার ডাক্তারকে একটা কল দাও ভাবির জ্ঞান ফিরানো দরকার।
রায়হানঃহ্যা সেটাই এখন যা হবার হয়ে গেছে,ভাবির চিন্তা করো তুমি।
_________________________________
বাইরে বের হয়ে দেখি আমরা একটা পুরোনো বিল্ডিং এর সামনে।আর তূর্য ভাইয়া ও রেজোয়ান হোসেন ভিতরে যাচ্ছে।ওরা কোথায় যাচ্ছে আর আমরা তো এয়ারপোর্টে যাবার কথা ছিলো তাহলে এখানে কেনো।আমার ভাবনার মাঝেই কেউ একজন আমার নাম ধরে ডাকলো-
তাহসিনঃকিরে বাইরে দাড়িয়ে থাকবি নাকি ভিতরেও যাবি।চল
তাহিয়াঃভাইয়া তুমি এখানে কেনো,তুমি তারাতাড়ি চলে যাও না হয় তোমাকে মেরে দিবে ওরা
তাহসিনঃযাওয়ার জন্য বুঝি গাড়ি চালিয়ে এতো দূর নিয়ে এলাম তোদের
তাহিয়াঃতাহলে তুমি গাড়ি চালাচ্ছিলে তাই তখন রেজোয়ান হোসেন বলছিলো তুমি নতুন ড্রাইভার কিনা।কিন্তু সে তোমাকে চিনলো না কেনো
তাহসিনঃকারণ সে এর আগে আমাকে দেখে নি বুঝলি বোকা মেয়ে চল এখন
তাহিয়াঃ ওকে চলো
(তারপর দুইজনে ভিতরে যাই।দোতলা একটা বিল্ডিং আমরা সিড়ি দিয়ে সোজা ছাদে চলে গেলাম।ওইখানে গিয়ে দেখি তূর্য ভাইয়া রেজোয়ান হোসেন আর আরিশ দাঁড়িয়ে আছে।আমি আরিশকে দেখে ছুটে আরিশের কাছে যাই,সে আমার দিকে একপলক তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলো।আমার চোখ দিয়ে আবার পানি গড়িয়ে পরলো।)
আরিশঃআপনি কি ভেবেছেন মিস্টার রেজোয়ান আমি সবকিছু জানা সত্ত্বেও আমার স্ত্রীকে নিয়ে যেতে দিবো।কখনোই না
রেজোয়ানঃকিভাবে করলে এসব।আমি সবসময় তোমার পিছনে লোক লাগিয়ে রেখেছি।তোমার প্রতিটি পদক্ষেপের খবর আমি পেতাম।
আরিশঃ হুম সেটা ঠিক আমি নিজে বের হয়ে কিছুই করতে পারি নি কিন্তু সবকিছু তাহসিন করেছে।বাকিটা আজ তূর্য ও তাহসিন করলো
রেজোয়ানঃতূর্য তূমি আমাকে ধোকা দিলে কেনো?
তাহসিনঃআমি বলি।যেদিন তূর্য ফিরে এলো ওর হাতে আঘাত ছিলো,কিন্তু তূর্য আর তাহিয়ার কথায় বুঝতে পারছিলাম ওরা মিথ্যা বলছে।সেখান থেকে আসার পথে আরিশ আমাকে কল দেয় আর দেখা করতে বলে।আমরা দেখা করলে আরিশ আমাকে সব খুলে বলে।তখন থেকেই আমি আড়ালে থেকে সব করি।আর আমাদের সবচেয়ে বড় কাজ ছিলো তূর্যের চোখ থেকে পর্দা সরিয়ে সত্যিটা ওর সামনে তুলে ধরা।সে সুযোগ টা কাল রাতে আমি পাই যখন তূর্য ভাইয়া তাহিয়াকে আপনার কাছে রেখে যাচ্ছিলো তখন তূর্য ভাইয়ার কথা শুনে বুঝছিলাম যে সে তাহিয়াকে খুব ভালোবাসে কিন্তু আপনার প্ররোচনায় এমনটা করছে।তাই যখন ভাইয়া চলে যাচ্ছিলো তখন ভাইয়ার সামনে আমি যাই আর ভাইয়াকে আটকে দিয়ে বলি আমার কিছু কথা আছে ভাইয়ার সাথে।তূর্য ভাইয়া আমাকে দেখে খুব চমকে যায় সেখানে আমাকে দেখবে আশা করে নি।তারপর ভাইয়াকে বুঝিয়ে আবার আপনি আর তাহিয়া যেই রুমে ছিলেন সেই রুমের কাছে গিয়ে আড়াল থেকে সব শুনি।আর সবকিছুই আমি রেকর্ড করে রাখি।
তূর্যঃআমার মাথায় তো আকাশ ভেঙে পড়লো কার কথায় নিজের আদরের বোনকে পাচার করে দিচ্ছিলাম আমি যে কিনা আমার মাকে খুন করেছে(কান্না করতে করতে,ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে আসলো)আমাকে ক্ষমা করে বোন ছোট থেকে এই লোকটার কথায় সবার থেকে দূরে দূরে থেকেছি কিন্তু কারো প্রতি ভালোবাসা কমে নি।তারপরও মায়ের মৃত্যু মানতে পারি নি তাই যারা আমাকে এতো ভালোবাসে তাদেরকে আজ সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়ে ফেললাম।
তাহিয়াঃভাইয়া আমি জানি তুমি আমাদের অনেক ভালোবাসো।আর আমি কিচ্ছু মনে করি নি।তুমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছো এটাই তো বড় কথা,এখন এই লোকটাকে শাস্তি দিতে পারলেই হবে।(বলেই ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরলাম)
তূর্যঃআর ওইদিন আরিশের কোনো দোষ ছিলো না
তাহিয়াঃজানি আমি ভাইয়া(আরিশের দিকে তাকিয়ে দেখি সে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে মানে আমার উপর অভিমান করে আছে)
রেজোয়ানঃ তোমরা চিন্তা করো না আমার লোকেরা এখন এসে তোমাদের সবকটাকে মেরে দিবে।আর আমাকে নিয়ে যাবে
তাহসিনঃএকটু মিসটেক
রেজোয়ানঃমানে
আরিশঃমানে হলো যারা তোমাদের পিছনের গাড়িতে ছিলো তারা কেউ তোমার লোক না রেজোয়ান হোসেন ওরা সবাই পুলিশ।
রেজোয়ানঃতাহলে আমার লোক কোথায়
তাহসিনঃকোথায় আবার সবগুলোকে কাল রাতেই পুলিশ নিয়ে গেছে
রেজোয়ানঃএতো বড় বিশ্বাসঘাতকতা আমার সাথে তূর্য তুই কি করে করতে পারলি।আর আমিও কিভাবে তোকে বিশ্বাস করে নিলাম তুই তো সেই আরমানের ছেলে যে কিনা আমার সাথে এক সময় বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলো
তূর্যঃভুল বাবা শুধু আপনাকে ভালো পথে আনতে চেয়েছিলো কিন্তু আপনি তাকে শত্রু বানিয়ে নিয়েছেন।
আরিশঃতাহসিন পুলিশকে কল করো উপরে আসতে আর এই জঘন্য লোকটাকে নিয়ে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে।যাতে আর কোন মা বোনদের এই লোকটা পাচার করতে না পারে।
তাহসিন ভাইয়া পুলিশকে কল দিলো উপরে আসার জন্য।আমি এখনো তূর্য ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে আছি।ঠিক তখনই একটা বিকট শব্দে আমরা ঘুরে তাকাই।যা দেখি আমরা উপস্থিত সবাই থমকে যাই।আরিশ নিচে পরে আছেন।তার সাদা শার্ট ভিজে লাল হয়ে আছে।আমি এক চিৎকারে আরিশের কাছে গেলাম।
রেজোয়ানঃতুই কি ভেবেছিস আমার সব প্ল্যান ভেস্তে দিবি আর আমি যাবার আগে এমনি ছেড়ে দিবো তোকে।কখনো না।তোকে মারতে পেরেছি এটাই শান্তি আমার।
আমি আরিশের নিথর দেহের দিকে তাকিয়ে আছি।কোনো অনুভুতি কাজ করছে না আমার কি করবো।আমার একটু ভুলের জন্য এত বড় শাস্তি দিবে আমায়।তুমি বলেছিলে #সত্যি_ভালোবাসো আমাকে তাহলে কেনো আজ সব মিথ্যা করে দিচ্ছো।আরিশের উপর ঢলে পরলাম আর কিছু মনে নেই কি হলো তারপর।জ্ঞান ফিরার পর নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করি। মা(নীলিমা) আর আম্মু আমার পাশে বসে আছে।তনিমা আপু সামনে সোফায় বসে আছে।আমি মাকে জিজ্ঞেস করলাম-
তাহিয়াঃমা আরিশ কোথায়?
নীলিমাঃওর অবস্থা তেমন একটা ভালো না।অপারেশন চলছে ওর।
আমি মার কথা শুনে বেড থেকে উঠে চলে গেলাম বাইরে।কারো বাধা মানছি না আমি।গিয়ে দাড়ালাম অপারেশন থিয়েটারের সামনে।বাইরে বাবা,আব্বু,আবির আংকেল,তাহসিন,রাসেল ভাইয়া,জারা ও জারার মা-বাবা দাঁড়িয়ে আছে।একজন নার্স বাইরে এলে তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করি আরিশের কি অবস্থা।।
নার্সঃদেখুন পেশেন্ট এর অবস্থা খুব খারাপ আপনারা দোয়া করুন।মনে হয়না বাঁচবে
আমি নিচে বসে পড়লাম তার কথা শুনে।
চলবে,,,,