সত্যি ভালোবাসো,part 02
Writer Fatema Khan
নিজেকে আয়নায় দেখে কেউ চিৎকার দেয়।সবাই কি ভাববে আমি এই সকাল বেলাতেও তোমার সাথে রোমাঞ্চ করছি।আসলেই ইডিয়ট মেয়ে তুমি।আর এটা কি পরেছো?পুরো জিলেপির প্যাকেট হয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন?ওমম ওমম ওমম……
কি হলো কথা বলছো না কেন?
আরে বজ্জাত আগে আমার মুখ থেকে হাত সরা তারপর তো কিছু বলবো(তাহিয়া মনে মনে)
অহ আচ্ছা আমি তো তোমার মুখ ধরে রেখেছিলাম।আচ্ছা এবার বলো জিলেপির প্যাকেট হয়ে আছো কেন?(আরিশ)
আসলে আমি শাড়ি পরতে পারি না তাই ইউ টিউব দেখে দেখে পরছিলাম।আয়নার দিকে তাকাই নি তাই এমন হয়ে গেছে(তাহিয়া)
যেটা পারো না সেটা করতে যাও কেন,নাকি আমাকে ইম্প্রেস করার জন্য শাড়ি পরছো?দেখো এইসবে কোনো কাজ হবে না বুঝলা।এখন তারাতাড়ি শাড়ি পরে নাও(আরিশ)
আইছে অসভ্য লোক তারে নাকি আমি এই তাহিয়া রহমান ইম্প্রেস করার জন্য শাড়ি পরছে।আমার পিছে হাজার ছেলে ঘুরে।আর আমি নাকি এই অসভ্যকে ইম্প্রেস করতে যাবো।(আমি মনে মনে)
আমি তো পরতে পারছি না(তাহিয়া)
হে ওয়েট তুমি এটা ভাবছো নাতো যে আমি তোমাকে শাড়ি পরিয়ে দিবো।তাহলে তুমি পুরোপুরি ভুল।(আরিশ)
আমি কি বলছি আপনাকে পরিয়ে দিতে(তাহিয়া)
আচ্ছা তুমি ওয়েট করো আমি কাওকে পাঠিয়ে দিচ্ছি(আরিশ)
দশ মিনিট পর আমার শাশুড়ী আসলেন আমার রুমে।এসে আমাকে সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে দিলেন।তারপর আমাকে নিয়ে নিচে চলে গেলেন।
আমরা বের হতেই আরিশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আসে।
সবাই নাস্তা করার জন্য নিচে নেমে আসে।আরিশও নিচে এসে ডাইনিং টেবিলে বসে।
নীলিমা খান(আরিশের মা)ও তাহিয়া নাস্তা নিয়ে টেবিলে রাখে।আর আরিশের মা বলে আজ ম্যাংগো জুস টা কিন্তু আমাদের তাহিয়া বানিয়েছে।সবাই জুস খেয়ে খুব প্রশংসা করলো তাহিয়ার।আরিশ জুস মুখে দেয়ার সাথে তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়।সে কোনোমতে জুস শেষ করে উপরে চলে আসে।তারপর আরিশ চোখ মুখ শক্ত করে নিজেকে স্বাভাবিক করে অফিস যাবার জন্য নিচে নেমে আসে।
আরিশ তুই বিয়ের পরেরদিন কই যাচ্ছিস?(নীলিমা)
মা একটু অফিসে যাবো।(আরিশ)
আজ থেকে যা না বাবা কাল থেকে গেলে হয়না(নীলিমা)
আমি চলে আসবো একঘন্টা পরে বেশি দেরি করবো না(আরিশ)
আচ্ছা যা কিন্তু তারাতাড়ি চলে আসিস মেয়েটাকে একটু সময় দে।(নীলিমা)
যাবার আগে একবার তাহিয়ার দিকে তাকিয়ে একটা বাকা হাসি দিয়ে বের হয়ে যায় আরিশ।
বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছি আমি।কালকের কথা ভেবে কান্না পাচ্ছে।নিজের বিয়ে নিয়ে প্রতিটি মেয়ের মনেই অনেক স্বপ্ন থাকে।আমার স্বপ্নগুলো আমি নিজের হাতেই ভেংগে দিলাম।এমন একটা মানুষের সাথে আমার থাকতে হবে যাকে না আমি ভালোবাসি না সে আমাকে ভালোবাসে।চোখ দিয়ে বর্ষণ ঝড়ছে,এই বর্ষণ যেন আজকে আর থামবে না।
অনেক্ক্ষণ যাবত বেলকনিতে বসে কান্না করতে করতে মনে হলো কেউ আমার কাধে হাত রেখেছে।পিছনে তাকিয়ে দেখি আরিশের মা দাড়িয়ে আছে।আমি তাকে দেখে তারাতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলাম।
নীলিমাঃআমি জানি তুমি কেনো কাদছো।আমার ছেলেটা খুব ভালো বুঝলে মা।নিজের ছেলে বলে বলছি না।সত্যিই খুব ভালো মনের মানুষ।তোমাকে আগলে রাখবে,রক্ষা করবে সব বিপদ থেকে।তুমি একটু ভরসা করো আমার ছেলেটার উপরে।তোমাকে নিরাস করবে না।
আমিঃ…….
নীলিমাঃপ্রতিটি মেয়েরই নিজের বিয়ে স্বামী সংসার নিয়ে স্বপ্ন থাকে।হয়তো তোমার বিয়ে নিয়ে যত স্বপ্ন ছিলো তা পুরন হয়নি কিন্তু এইটুকু বলতে পারি স্বামী সংসার নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছো তা পুরন হবে।
আমি হাউমাউ করে কেদে উঠলাম।আর মাকে(নীলিমা খান) জড়িয়ে ধরে কান্না করলাম।
নীলিমাঃএই বোকা মেয়ে আর কান্না করে না।সব ঠিক হয়ে যাবে।একটু ধৈর্য ধরো।আরিশের উপর আস্থা রাখো ও সব আগের মত করে দিবে।
আমিঃ কিন্তু আরিশ ভাইয়া তো আমাকে পছন্দ করেন না তাহলে,আনমনেই কথাগুলো বললাম।তাহলে কিভাবে সব ঠিক হবে।
নীলিমা খান হালকা হাসলো।তারপর তাহিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো দুপুর পেরিয়ে গেছে অনেক আগেই খাবে কখন।
আমিঃআমার খিদে নেই মা।খিদে লাগলে খেয়ে নিব।
নীলিমাঃআরিশটা যে কই গেলো এখনো আসলো না।ছেলেটাও না খেয়ে আছে তুমিও কিছুই খাচ্ছো না এমন করলে কিভাবে হবে বলো।
বলতে বলতে বেরিয়ে গেলেন রুম থেকে।
আসলেই কোথায় গেলো,সেই সকালে বের হয়ে গেলো।বলে তো গেছে অফিস যাবে একঘন্টার জন্য কিন্তু এখনো এলো না।নিজে নিজে কথাগুলো বলছিলাম আমি।
আমাকে মিস করা হচ্ছে বুঝি।এতো মিস করবে জানলে আরো আগে আসতাম।(আরিশ)
গলার আওয়াজ অনুসরণ করে পিছনে তাকিয়ে দেখি আরিশ আমার দিকে এক রহস্যময় হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছেন।
আমি একটা শুকনো ঢোক দিলাম।সব শুনে ফেলেনি তো।(আমি মনে মনে)
আরিশঃকি ভাবছো আমি কিছু শুনেছি কিনা।বড় কথা এটা নয় আমি তোমার কথা শুনেছি কিনা।কথা হলো তুমি না খেয়ে আছো কেনো।
আমিঃঅবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম আপনি জানেন কিভাবে আমি খাইনি।আপনি তো বাসায় ছিলেন না অবশ্যই মা বলেছে হয়তো।
আরিশঃতোমার এই ছোট মাথায় এতো চাপ নিতে হবে না।উঠো খাবে চলো।আমারও খিদে পেয়েছে।
তারপর আরিশ ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দুইজনে খেয়ে নেয়।
রাতে আরিশ সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে আর দরজার দিকে বারবার দেখছে কখন আসবে তাহিয়া।
আর এইদিকে তাহিয়া আরিশের কাজিন মিলি শিলা আর নিরবের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।তারা আড্ডা দিচ্ছে সাথে পাকোড়া খাচ্ছে।”দেরি করে দুপুরের খাবার খাওয়ার ফলে রাতের খাবার খায় নি তাই এখন পাকোড়া আর কফি খাচ্ছে।”
হঠাৎ মিলি বিষম খায়,তাই তাহিয়া তারাতাড়ি পানি আনতে গেলো মিলির জন্য।আনার সময় কিছুটা পানি নিচে পরে যায় তাহিয়া সেদিকে খেয়াল না করে মিলির জন্য পানি নিয়ে আসে।মিলি পানি খাওয়ার পর ঠিক হলে তাহিয়া গ্লাস রাখতে গেলে ফ্লোরের পানিতে স্লিপ কেটে নিচে পরে যায়।
কারো চিৎকার শুনে আরিশ তারাতাড়ি নিচে আসে,সিড়ির সামনে এসে সে দেখে তাহিয়া সোফায় বসে আছে তার পাশে মিলি আর শিলা,আর তাহিয়ার সামনে হাটুতে ভর করে নিরব তাহিয়ার পায়ে কি যেনো করছে।তাহিয়ার চোখ দিয়ে পানি পরছে।
“নিরবের হাত তাহিয়ার পায়ে দেখে আরিশের চোখ রাগে লাল বর্ণ ধারণ করলো।”
আরিশঃকি হয়েছে এখানে?
নিরবঃআসলে ভাই তাহিয়া পরে গেছিলো তাই পায়ে ব্যাথা পাইছে।
আরিশঃঅহ,আর নিরব ও তোর ভাবি হয় তাই নেক্সট টাইম তাহিয়া না ভাবি ডাকবি।ঠিক আছে।
নিরবঃআচ্ছা ভাই।
এর আবার কি হলো আমাকে কে কি নামে ডাকুক ওনার কি(আমি মনে মনে)
আমার ভাবনার মাঝেই আমি হাওয়ায় ভাসতে লাগলাম।তাকিয়ে দেখি সে আমাকে কোলে তুলে উপরে নিয়ে যাচ্ছেন।
আমিঃএই কি করছেন নামান আপনি আমাকে,আমি একাই যেতে পারি।
আরিশ সাথে সাথে তার হাত হালকা করলো আমি ভয়ে তার গলা জড়িয়ে ধরলাম।
আরিশঃকি হলো যাও।এখন আমাকে এভাবে ধরেছো কেনো?
আমিঃ……
“রুমে নিয়ে সে আমাকে খাটে বসিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।” ফ্রেশ হয়ে আমাকে বললো—
“ছেলেরা তোমায় ছুয়ে দিলে তোমার খুব ভালো লাগে তাই না।”
আমি অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছি।কি বলে মিস্টার অসভ্য মাথা ঠিক আছে তো।
আরিশঃ”আমার মাথা ঠিক আছে তোমারটা আজ ঠিক করবো।”
আমি আবারও অবাক,মনের কথা কি মিস্টার অসভ্য শুনতে পায়।
“তা আমার জুসে সকালে কি মিশিয়েছো?”
আমার দিকে না তাকিয়ে কথাগুলো বললো।
এখন তো তুই শেষ তাহিয়া।পায়ের জন্য পালাতেও পারবি না।–আমার ভাবনার মাঝেই সে আমার পাশে এসে বসলো।আমি তার দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো ডোক দিলাম আর বললাম,
কখন?কি মিশাবো সবাই তো ভালো বললো।
সে আমার আরেকটু কাছে এসে বললো কি মিশিয়েছো?
আমিঃলবন(চোখ বন্ধ করে)
আরিশঃ হুম।তা কেনো করেছো?
আমিঃআমি রাতে ফ্লোরে ঘুমাইছি এটা তার শাস্তি স্বরূপ।
আরিশঃতাহলে ম্যাডামের কি আমার সাথে ঘুমানোর ইচ্ছে ছিলো।বাসর করার ইচ্ছে ছিলো বললেই হতো।
আমিঃএই না না কি বলছেন এসব,আমি বাসর করবো তাও আপনার মত একটা অসভ্য লোকের সাথে।
আরিশঃআচ্ছা সে কথা বাদ দাও।যানো তো আমার মুখে এখনো লবনের স্বাদ লেগে আছে।তাই এখন মুখটাকে মিষ্টি করতে হবে।
এই বলে সে আমার দিকে এগিয়ে এলো……
চলবে…..