সত্যি ভালোবাসো,part_09
writer Fatema Khan
প্রেয়সী তুমি কি জানো আমার অনেক স্বপ্ন ছিলো তোমায় নিয়ে সকালবেলা সূর্য উদয় দেখব। রক্তিম সূর্যটা যখন উঠবে তখন তুমি আর আমি পাশাপাশি থাকবো। আমি এক হাতে তোমায় জড়িয়ে ধরবো আর তুমি আমার বুকের মধ্যে থাকবে।আর সাক্ষী হয়ে থাকবে এই রক্তিম সূর্য।প্রেয়সী তুমি কি জানো আমার সেই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল সেটা আর কখনো বাস্তবে পরিণত হবে না। (কথাটি বলতেই তাহসিনের চোখ থেকে এক ফোটা জল গড়িয়ে পরলো)
তাহিয়াঃভাইয়া তুমি কি কাউকে ভালোবাসো?
(কারো এমন কথায় চমকে উঠল তাহসিন। পিছনে তাকাল দেখল তাহিয়া দাঁড়িয়ে আছে)
তাহসিনঃএকি তুই এত ভোরবেলা ছাদে।
তাহিয়াঃতুমি কিন্তু আমার কথার উত্তর দাও নি তুমি কি কাউকে ভালোবাসো?
তাহসিনঃকি যা তা বলছিস আমি আবার কাকে ভালবাসতে যাবো
তাহিয়াঃ আমি নিজ কানে শুনেছি একদম মিথ্যা বলবেনা আমাকে আর তুমি কান্না করছিলে
তাহসিনঃ ফালতু বকিস না ঘুমাতে যা।
তাহিয়াঃআগে তুমি আমার কথার উত্তর দাও তারপর আমি চলে যাব। আর প্রেয়সী কে?
তাহাসিনঃতাহিয়া তুই কিন্তু এবার একটু বাড়াবাড়ি করছিস বললাম না তুই নিচে যা।আর তুই আমার পিছনে কখন এসে দাঁড়িয়েছিস?
তাহিয়াঃযখন তুমি আকাশের দিকে তাকিয়ে তোমার প্রেয়সীর সাথে কথা বলছিলে।
তাহসিনঃতুই যখন যাবি না তাহলে আমিই চলে যাই।তুই থাক এখানে।
তাহিয়াঃএমন করো কেনো ভাইয়া আমার সাথে।এবার ফেরার পর থেকেই দেখছি আমার থেকে তুমি কেমন পালাই পালাই করো।(আমি তাহসিন ভাইয়ার হাত ধরে)
তাহসিনঃকিছু না।(বলেই নিচে চলে আসলো তাহসিন। সে ভাবলো একটু পর হয়তো আরিশ আসতে পারে তাই আগেই চলে আশা ভালো)
______________________________
আরিশঃতাহিয়া তো অনেকক্ষণ হলো ছাদে গেলো এখনো আসলো না কেনো।হাতের কাজটা শেষ করেই তাহিয়ার কাছে যাবো।
(সে সময় আরিশের মোবাইল বেজে উঠে)
আরিশঃএতো সকালে কে কল দিলো? রেজোয়ান আংকেল।রিসিভ করি তারপর দেখি কি বলে।হ্যালো জ্বি আংকেল বলুন।
রেজোয়ানঃআরিশ ৭০০ ব্যাগ ডেলিভারি হয়েছে তা খুবই ভালো।আমি চাই তুমি সেইম আরও প্রোডাক্ট তৈরি করো।যাতে এগুলো আমি অন্য দেশে পাঠাতে পারি।
আরিশঃ সত্যি অনেক ভালো হয়েছে প্রোডাক্টটি।আমি আমার নিজের বেস্টটা দিবো। বাকি প্রোডাক্ট তো আপনি দেশে আসলে দেন পাঠানো হবে।
রেজোয়ানঃ হুম।আচ্ছা ঠিক আছে রাখছি আমি।
আরিশঃআচ্ছা ঠিক আছে ভালো থাকবেন।
যাই দেখি গিয়ে তাহিয়া কি করছে?
________________________________
হটাৎ এক চিৎকার শুনে পুরো বাড়ির সবাই ছাদে যায়।দেখে আরিশ তারাতাড়ি নিচে যাচ্ছে।সবাই জিজ্ঞেস করলে আরিশ বলে তাহিয়া ছাদ থেকে পরে গেছে।
তাহিয়া রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছে।আরিশ তাকে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয় হসপিটালের উদ্দেশ্যে।
বাকি সবাই অন্য গাড়ি দিয়ে হসপিটাল পৌছে।তারপর তাহিয়াকে এডমিট করা হয়।
(আফসানা রহমান ও তনিমা কান্না করে যাচ্ছে)
প্রায় ৩০ মিনিট পর ডাক্তার বেরিয়ে আসলে সবাই ডাক্তারের কাছে যায়।
আরিশঃআমার তাহিয়া কেমন আছে এখন ভালো আছে।ওর কিচ্ছু যেনো না ডাক্তার, না হলে আপনাকে আমি ছাড়বো না ডাক্তার।
(ততক্ষণে নীলিমা খান ও রায়হান খান হসপিটালে চলে আসেন)
ডাক্তারঃরিল্যাক্স মিঃ খান।আপনার ওয়াইফ ঠিক আছেন।মাথা ফেটে গেছে ওইটা আমরা ড্রেসিং করে দিয়েছি।আর তেমন একটা মারাত্মক কিছু হয়নি।
আরিশঃআমি আমার ওয়াইফের সাথে দেখা করতে পারি?
ডাক্তারঃঘুমের ঔষধ দিয়েছে উনি ঘুমাচ্ছেন।কিছুক্ষণ পর ঘুম থেকে উঠলে আপনারা দেখা করতে পারেন।
আরিশঃঅনেক ধন্যবাদ।
১ঘন্টা পর তাহিয়ার ঘুম ভাঙলে এক এক করে সবাই তার সাথে দেখা করতে যায়।ওর সাথে একটু আধটু সবাই কথা বলছে।তাহসিন তাকে বাইরে থেকে দেখে নিলো ভিতরে গেলো না।আর কিছু চোখের জল বিসর্জন দিলো।
_______________________________
বিকালে তাহিয়াকে বাসায় নিয়ে আসা হয়।আফসানা রহমানের কান্না দেখে সবাই তাহিয়াদের বাড়িতেই নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন।
তাহিয়াঃআরিশ হসপিটাল থেকে দেখছি আমার কাছে সবাই আসছে কিন্তু তাহসিন ভাইয়া তো একবারও আসে নি।
আরিশঃজানিনা ও তো ওর রুমে আছে।
তনিমাঃতুই বস আমি ওকে নিয়ে আসতেছি।
(তনিমা তাহসিনকে নিতে তাহসিনের রুমে যায়।)
তনিমাঃএকি তুই এখানে বসে কাদছিস কেনো?কি হয়েছে তোর?সব ঠিক আছে তাহিয়ার তেমন একটা লাগে নি।শুধু মাথায় ব্যাথা পেয়েছে।
তাহসিনঃআমি যদি তখন না আসতাম তাহলে এই ঘটনাটা ঘটতোই না।
তনিমাঃআচ্ছা চল।তাহিয়া তোকে ডাকছে।
তাহসিনঃঠিক আছে চল।
(তাহসিন ও তনিমা তাহিয়ার রুমে আসলে তাহসিন দূরে দাঁড়িয়ে থাকে)
তাহিয়াঃআরে তাহসিন ভাইয়া এদিকে এসো কি হয়েছে তোমার?
তাহসিনঃআমি তখন চলে না আসলে এতো কিছু হতো না।তোর এই অবস্থার জন্য আমি দায়ী।
তাহিয়াঃতোমার কোনো দোষ নেই।এতো চাপ নিও না তো।
তাহসিনঃআচ্ছা তাহিয়া একটা কথা বল তুই ছাদ থেকে পরলি কিভাবে?
তাহিয়াঃআমি দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছিলাম হটাৎ কে যেন আমাকে ধাক্কা দিলো আর আমি পরে গেলাম।
তাহসিনঃকে ফেলেছে দেখতে পেয়েছিস
তাহিয়াঃ হুম দেখেছি ভাইয়া।ওইদিন তোমাকে বললাম না একটা মাস্ক পরা লোক আমাকে মারতে চেয়েছিলো সে ওইদিন পার্কেও ছিলো।আর আজ আমাকে সে ধাক্কা দিয়ে একপলক আমার দিকে তাকিয়ে সরে গেলো ওইখান থেকে।
তাহসিনঃআরিশ ভাইয়া আমাদের এই কথাগুলো নিজেদের মধ্যে রাখলে হবে না,পুলিশকে জানানো দরকার।
আরিশঃআমি আজই পুলিশকে জানাচ্ছি কথাগুলো।
_______________________________
২দিন পর,,,,
তাহিয়া এখন সুস্থ।তাই এই বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে।তাহিয়া খাটে বসে আছে। আর আরিশ কার সাথে যেনো কথা বলছে।
আরিশঃআমার পক্ষে এখন যাওয়া পসিবল না।(বলে কল কেটে দিলো)
তাহিয়াঃকোথায় যাবে না তুমি।আর কেনো যাবে না আমার জন্য।
আরিশঃআমাকে ৭দিনের জন্য কক্সবাজারে যেতে হবে তাও আজ রাতের ফ্লাইটে।
তাহিয়াঃতুমি যাবে বাস এটাই ফাইনাল।
কোথায় যাবে আজ(নীলিমা ও রায়হান রুমে ডুকতে ডুকতে)
তাহিয়াঃমা বাবা দেখো না আরিশ আমার জন্য নাকি যাবে না।ওর কক্সবাজারে কাজ আছে আজকেই যেতে হবে ৭দিনের জন্য।
রায়হানঃতুই যাবি না কেনো? তারাতাড়ি ব্যাগ প্যাক কর আমি টিকিট কাটার ব্যবস্থা করছি।আর হ্যা তাহিয়া মা তোমার ব্যাগটাও প্যাক করে নিও,তুমিও যাচ্ছ।
তাহিয়াঃআমি কিন্তু উনি তো কাজে যাচ্ছে।
নীলিমাঃকাজ সারাদিন থাকে না।কাজের টাইমে কাজ করে সারাদিন তোমাকে নিয়ে ঘুরা ফিরা করবে।আর বিয়ের পর তোমরা কোথাও যাওনি।ঘুরে আসো ভালো লাগবে।
________________________________
সকাল ৭টা,,,আমরা হোটেলে এসে পৌছালাম।আরিশ ফ্রেশ হতে গেছে আমি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছি।হটাৎ দুটি হাত আমার কোমর জড়িয়ে ধরলো প্রথমে চমকালেও পরে বুঝতে পারি এটি আরিশের হাত।
আরিশঃযাও ফ্রেশ হয়ে আসো।তারপর কিছু খেয়ে নাও।
তাহিয়াঃ ওকে।(আমি আমার একটা থ্রি পিস বের করে ওয়াশরুমে চলে যাই)
ফ্রেশ হয়ে দেখি আরিশ খাবার অর্ডার করে রাখছে সে খাবার টেবিলে গুছিয়ে রাখছে আরিশ।
আরিশঃআরে আসো তারাতাড়ি খেয়ে নাও।খাওয়া হলে তুমি রেস্ট নিও আমি বের হবো।বিকালের দিকে আমরা ঘুরতে বের হবো।
(তারপর আমরা খেয়ে নিলাম।আরিশ তৈরি হয়ে বেড়িয়ে গেল।আমিও বিছানায় শুয়ে পরলাম।কিছুক্ষণ পরেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিলাম।
চলবে,,,,,,,,