সত্যি ভালোবাসো,part_27 রহস্য উন্মোচন

0
3379

সত্যি ভালোবাসো,part_27 রহস্য উন্মোচন
writer Fatema Khan

সামনে থাকা মানুষটির কন্ঠ শুনে যেনো আমি পাথর হয়ে গেছি।আমি ঠিক শুনতে পেয়েছি নাকি কোনো ভুল হচ্ছে আমার।না না ভুল হবে কেনো সে তো সামনে দাড়িয়ে আছে শুধু মুখোশ খোলার অপেক্ষা।কিভাবে ভালোবাসায় মানুষগুলো মুখোশ পরে থাকে।যাদের আমরা এতো ভালোবাসি তারাই পিছন দিক থেকে ছুরি মারে।

“কি হলো এখনো চেনা যায়নি বুঝি আমাকে”

তাহিয়াঃতূর্য ভাইয়া তুমি

তূর্যঃফাইনালি চিনতে পারলি আমাকে।

তাহিয়াঃকেনো এমন করছো ভাইয়া

তূর্যঃতোরা আমার সবকিছু শেষ করে দিয়ে এখন বলছিস এমন করছি কেনো?

রেজোয়ানঃআহা এতো হাইপার হচ্ছো কেনো এই বেচারি তো কিছু জানেই না।আগে সবটা বলো তারপর তো বুঝবে

তাহিয়াঃকি সত্যি যা আমি জানি না।আমার মনে হয় ভাইয়া এই লোকটা তোমায় ভুল বুঝিয়েছে

তূর্যঃএই লোকটা আছে বলেই আজ আমি আমার প্রতিশোধ নিতে পারবো।

তাহিয়াঃকিসের প্রতিশোধ ভাইয়া

তূর্যঃতাহলে শোন তোর বাবা আর মা কি করেছে আমার মার সাথে

তাহিয়াঃমানে কি ভাইয়া আমরা এক মা বাবার সন্তান তাহলে কোন ধরনের কথা বলছো তুমি আমার মাথায় কিছুই আসছে না।

তূর্যঃআমার তখন সাত বছর তনিমার ছয় কি সাত মাস হবে তখন।আমরা একদিন ঘুরতে গেছিলাম তখন একটা গাড়ি এসে মাকে চাপা দিয়ে যায়।মার স্পট ডেড হয়।আমি তখন ভালো করে কিছুই বুঝি না।আস্তে আস্তে দিন যেতে থাকে আমাদের।বাবা একদিন ওই মহিলা মানে তোর মাকে বিয়ে করে আনে।আমাকে খুব আদর করতো আমিও তাকে মায়ের মতোই দেখতাম।তারপর একবছরের মধ্যে তুই আমাদের মাঝে আসলি।সব ভালোই যাচ্ছিলো।

তাহিয়াঃমানে তুমি আমার আপন ভাইয়া না।

তূর্যঃআপন না হলেও তনিমা থেকে তোকে বেশি আদর করতাম আমি।কিন্তু একদিন আমার সামনে সব সত্যি চলে আসে।

তাহিয়াঃকি সত্যি?

তূর্যঃআমি তখন অনেকটা বুঝি।সিক্স সেভেনে পড়ি হয়তো।একদিন স্কুল থেকে ফিরার পথে রেজোয়ান হোসেনের সাথে আমার দেখা হয়।তিনি আমাকে যা বললেন তা শোনার পর নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারি নি আমি।কিন্তু সব চিন্তা করে দেখলাম রেজোয়ান হোসেন সত্যি কথা বলছে।

তাহিয়াঃকি এমন কথা যে এই জঘন্য লোকটা বলেছে আর তুমি বিশ্বাস করে নিয়েছো

তূর্যঃআমার মাকে আরমান রহমান আর তার কলেজ লাইফের প্রেমিকা আফসানা রহমান প্ল্যান করে মেরে ফেলেছে।আর রেজোয়ান হোসেনের কথা সত্যি ছিলো কারণ এর আগেও মা বেঁচে থাকতে আমি শুনেছি তারা একসাথে পড়তো আর আমাদের বাসায়ও কয়েকবার এসেছে।আমার মাকে মেরে ফেলেছে তারা কি করে তাদের ছেড়ে দেই।তখন রেজোয়ান হোসেন আমাকে বুদ্ধি দেয় যে সবকিছু যেভাবে চলছে সেভাবেই যেনো চলে।আর তুই বড় হলে তোকে ওনার হাতে তুলে দিতে তাহলে ওনার প্রতিশোধও পূর্ণ হবে আর আমারও।কিন্তু আমি তোকে নারীপাচার চক্রের হাতে দিতে চাইনি খুব ভালোবাসি তোকে তাই মেরে ফেলার চেষ্টা করেছি কিন্তু প্রতিবার ব্যার্থ হই।আজ আমার কাজ শেষ কাল তুই চলে যাবি সবাই সারাজীবন কষ্ট পাবে তোর কথা ভেবে।(চোখের পানি মুছতে মুছতে)

তাহিয়াঃআর তুমি

তূর্যঃআমি,আমি তো খুব খুশি থাকবো

তাহিয়াঃবারবার গলা ধরে আসছে কেনো,কষ্ট হচ্ছে তাইনা।নিজের বোনকে এভাবে দেখে।শুধু জেদের বশে পরে এমন করছো তুমি।

তূর্যঃকোন কষ্ট হচ্ছে না আজ আমার আনন্দের দিন

তাহিয়াঃতাহলে আনন্দ কই?এই লোকটা তোমাকে ভুল বুঝিয়েছে আমাদের উপর এর রাগের কারণে তোমাকে হাতিয়ার বানিয়েছে।

রেজোয়ানঃতূর্য তুমি যাও।কাল আমাকে যেতে হবে।তাই এখন তুমি বাসায় ফিরে যাও কাল সকালে আসতে হবে।

তূর্যঃঠিক আছে।ওকে কিছু খাবিয়ে দিবেন সকাল থেকে কিছুই খায়নি।(যাবার আগে একবার তাহিয়ার দিকে তাকিয়ে চলে গেলো)

_________________________________

রেজোয়ানঃএই নাও খেয়ে নাও।(হাতের বাধন খুলতে খুলতে)

তাহিয়াঃভালোই প্ল্যান করেছেন এক ঢিলেই সব পাখি একসাথে তাইনা

রেজোয়ানঃতোমাকে আমি বোকা ভাবতাম,কিন্তু তুমি তূর্য থেকে অনেক বুদ্ধিমতি।কি করে ধরে ফেললে সব আমার প্ল্যান।একটা কথা জানো

তাহিয়াঃকিহ

রেজোয়ানঃআরমানের প্রথম স্ত্রী মানে তূর্যের মাকে আমিই মেরেছি।আস্তে আস্তে সবাই কে মারার প্ল্যান তৈরি করলাম।কিন্তু না পরে ভাবলাম মেরে ফেললে আর প্রতিশোধ পূর্ণ হবে কমনে।তাই ভাবলাম বাচিয়ে রেখে প্রতিদিন মারবো।তূর্য তো বোনের শোকেই মরে যাবে,মেয়ের পরিনতি আর ছেলের জীবনের কথা ভেবে আরমানও শেষ হয়ে যাবে।(বলেই উচ্চস্বরে ঘর কাপিয়ে হেসে উঠলো)

(পালাতে হবে না হলে সবার ভুল বুঝাবুঝি র‍য়ে যাবে)

রেজোয়ানঃখেয়ে নাও তারাতাড়ি।আর একটা কথা জানো ওই আরিশ বড্ড চালাক।ঠিক সবকিছু ধরে ফেলেছে।তূর্যকেও আটকে রেখেছিলো দুইদিন।তূর্য পালানোর চেষ্টা করলে ওদের মাঝে মারামারি হয় একপর্যায়ে ভুলে গুলি গিয়ে পরে তূর্যের উপর।আর আমার কাজ আরও সহজ করে দাও তুমি ওইখানে গিয়ে।আরিশকে ভুল বুঝে তূর্যের সাথে চলে এসে।এখন তূর্যকে ফাসিয়ে আমি চলে যাবো দুবাই।তোমার মা বাবা তো এমনিতেই শেষ হয়ে যাবে।মেয়ে পাচার হয়ে যাবে,একমাত্র ছেলে জেলে থাকবে।আমার প্রতিশোধ পূর্ণ হবে।মাঝখানে তূর্য জানতেই পারবে না আসলে সবকিছুর পিছনে আমিই ছিলাম।

তাহিয়াঃছিঃআপনি এতো নিকৃষ্ট একজন মানুষ।

রেজোয়ানঃএতো হাইপার হয়ে যেও না।খেয়ে ঘুমিয়ে পরো সকালে তূর্য আসলেই বের হতে হবে।

(আমার খাওয়া শেষ হলে আমার হাত আবার বেধে রেজোয়ান রুম থেকে চলে যায়)

_________________________________

সকালে রুমের দরজা খোলার খটখট শব্দে ঘুম থেকে উঠে পরি।সামনে ভাইয়াকে দেখি।বুঝতে পারি যাবার সময় হয়ে গেছে।ভাইয়া কি একটুও বুঝতে পারবে না যে সে ভুল করছে।ভাইয়া আমার হাত পায়ের বাধন খুলছে আর আমার দাগ পরে যাওয়া স্থানে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

তাহিয়াঃভাইয়া খুব কষ্ট হচ্ছে তাইনা।তবু্ও কেনো বুঝতে পারিস না যেটা করছো তুমি সেটা ভুল।

(ভাইয়া কোনো কথ বললো না।তাই আমিও চুপ হয়ে গেলাম।)

রেজোয়ানঃহয়েছে তূর্য,হলে তারাতাড়ি চলো

তূর্যঃ হুম হয়ে গেছে চলুন।

আমরা তিনজন একটা গাড়ির সামনে দাড়াই।আরও একটি গাড়ি আছে।সাথে তিন চারজন ভাড়াটে গুন্ডা হয়তো।আমাকে একটা গাড়িতে উঠানো হলো।সামনে তূর্য ভাইয়া আর ড্রাইভার,পিছনে আমি আর রেজোয়ান হোসেন।গাড়ি যাচ্ছে এয়ারপোর্টের দিকে।আমার চোখের পানি যেনো আজ সব বাধ ভেঙে পরছে।অঝোর ধারায় বইছে।তখনই রেজোয়ান হোসেন বলে উঠলো—

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here