#সন্ধি_হৃদয়ে_হৃদয়ে,পর্ব_১
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
টুকটুকে লাল বেনারসিতে বধূ বেশী শ্রেয়ার গলা টিপে ধরলো ওর স্বামী। আচমকা এমন হবে অষ্টাদশী শ্রেয়া কস্মিনকালেও ভাবে নি। শ্বাস ফেলতে কষ্ট হচ্ছে ওর। বুক টা ব্যাথায় চিনচিন করে উঠছে। ক্রমাগত কন্ঠনালিতে বলিষ্ঠ হাতের চাপ বেড়েই চলেছে। গাঢ় হতে গাঢ় হচ্ছে তা। দুই নেত্র কার্নিশ বেয়ে অবাধে গড়িয়ে যাচ্ছে জল। ঠেলতে ঠেলতে লোকটা দেয়ালের সাথে সজোরে চেপে ধরল তার নরম দেহ খানি। তৎক্ষনাৎ শ্রেয়ার দুই চক্ষু মুদে এলো। অশ্রুসিক্ত পল্লব ছুঁয়ে দেয় বদন। মনে হলো এই বুঝি জীবনের সমাপ্তি। অন্ধকারাচ্ছন্ন এক অধ্যায় চিরতরে পুরে ছাই হয়ে যাবে আগুনের লেলিহান শিখায়। বধূবেশে সারাটি দিন যেই ব্যক্তিকে নিজ চক্ষে না দেখেও হাজারো স্বপ্ন, আশা বুনন করলো সেই কি-না এখন ওর প্রাণ নেওয়ার জন্য ব্যকুল হয়ে পড়ছে। কেন? কি কারণে?এখনো তো মানুষ টার চেহারা অব্দি দেখল না সে এক পলকের জন্যও। অথচ লোকটা ওকে মা’রা’র কতটা নির্মম প্রচেষ্টা-ই না চালাচ্ছে!
পুরো কক্ষ ফুলের সুভাসে মৌ মৌ করছে। এক ঘোর অমানিশা বন্দীত্ব মেনে নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে অবস্থান করছে কক্ষের চার দেয়ালের মধ্যিখানে। রুমের সবকটা খিড়কি,বারান্দার দরজা সব বন্ধ। আলো যেন প্রবেশে বাধাপ্রাপ্ত হয় তারই নিমিত্তে হয়ত সকল বন্দোবস্ত। বাহিরে ঝড় হচ্ছে। কিছু সময় পূর্বে মিটিমিটি মোমবাতি জ্বললেও এখন আর দীপ্ততা ছড়াচ্ছে না। সবগুলো নিভু নিভু।
চার ঘন্টা যাবত বাসরঘরে কাঙ্ক্ষিত মানুষ টার অপেক্ষায় বসে ছিল শ্রেয়া। তখনই এক ঝড়ের সৃষ্টি হলো। সেই মানুষ টা তো এলো কিন্তু তার প্রতীক্ষায় মোমেরা গলে নিজেদের শেষ অবস্থান জানান দিল। অন্ধকারে পরিণত হলো সারা রুম। দাদী শাশুড়ির শেখানো নিয়মে নত মস্তকেই স্বামীকে সালাম করতে উদ্যত হলো শ্রেয়া। সঙ্গে সঙ্গে ওর দু’ বাহু চেপে ধরে দু’টো পেশিবহুল হাত। অন্তঃস্থল নড়ে উঠে। আঠারোর কোটায় বিরাজমান এই মেয়েটার কায়ায় প্রথম,সর্বপ্রথম কোনো পুরুষের স্পর্শ লাগল। হৃদয়ে জাগালো শিহরণ। নিমিষেই লজ্জায় কপোল লালে রঞ্জিত হয়ে উঠে। কৃষ্ণের স্থায়িত্ব নাহলে স্বামী নামক মানুষ টা হয়ত ওর সেই লজ্জা মাখা চেহারা খানি দেখতে পেত অনায়সে। শ্রেয়া ভাবল,লোকটা ওকে বুকে নিয়ে বলবে তুমি সালাম করছো কেন,বুকে থাকবে সবসময়। একটা মুভিতে তো এমনই দেখেছিল। তাছাড়া এতিমখানার এক বড় আপা যে ছিলেন তিনিও তো নিজের বিবাহিত জীবনের অনেক কাহিনী ফুসুরফাসুর করে বলতেন। সুযোগ পেলেই আসতেন এতিমখানায় আর শুনিয়ে যেতেন নিজের সুখের গল্প। তখন থেকেই শ্রেয়ার মনে এক ভালো লাগার সৃষ্টি হয়। আবেগ, ভালো লাগা,নব্য নব্য অনুভূতি মিশিয়ে ভাবে–সবার মতোন বিয়ে হলে সেও একটা নতুন পরিবার, নতুন জীবন ও ভালোবাসার মানুষ পাবে। অথচ!ভাগ্য নি’ষ্ঠুর। মুহুর্তেই তার সকল কল্পনার জগৎ লন্ডভন্ড করে দিল। মৃ’ত্যুর দুয়ারে ঠেলে দিল তাকে।
মানুষ টা তাকে বুকে ঠাঁই তো দিল না বরঞ্চ চেপে ধরেছে গলা।
এতো সময় ধরে শ্রেয়া নিবিড় ভূমিকা পালন করলেও আর সহ্য করতে পারছে না। চক্ষুদ্বয় কোটর ছেড়ে আসবে আসবে ভাব। শ্বাস ফেলার জো নেই। নিজেকে বাচানোর তাগিদে মেয়েটা দুর্বল হাতে সামনের মানুষ টাকে সরানোর প্রয়াস চালাল। কিন্তু পারলো কই!প্রশস্ত বুকে হাত রেখে ঠেলতেই ও বুঝলো এই লোক কে সরানোর শক্তি ওর নেই। দেহে যেন অসুরে শক্তি। তার উপর ওর প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত। হাত পা অবশ হয়ে আসছে। হাল ছেড়ে দিচ্ছে ও। বাসর রাত মর’ণ কাল হবে কে জানত!চোখ বুঁজে পাশে হাতড়ে একটা ভারী জিনিস পেল শ্রেয়া। সেটা তুলতে নিলে ফ্লোরে আছড়ে পড়লো। সাথে সাথেই আক্রোশে ফেটে পড়ল মানুষ টা। গলার বাঁধন ঢিল করে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠল,
‘ খু’ন করে ফেলব তোকে। সাহস কি করে হলো এখানে আসার?ছোট লোক!আমার আশেপাশে কাউকে সহ্য হয় না। কাউকে না। কেন এলি আমার রুমে?’
শ্রবণ গ্রন্থিতে কথাগুলো ঢুকল শ্রেয়ার। তবে অস্পষ্ট। সেই সাথে কর্ণকুহর হলো দরজায় করাঘাতের শব্দ। আঁখিদ্বয় বুঁজে এলো। ঢলে পড়ল সে লোকটার বক্ষে।
দরজা ভেঙে হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকল সবাই। মেহরিমা চৌধুরীর হাতে লাইট। ছেলের দিকে আলো ধরলেন তিনি। তাতেই শ্রেয়াকে বুকে জড়িয়ে ধরে নিজেকে গুটিয়ে নিল লোক টা। মেহরিমা চৌধুরীর অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল শ্রেয়াকে অচেতন অবস্থায় দেখে। মেয়েটার বেনারসি টা এলোমেলো। ঠোঁটে সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা লাল লিপস্টিক লেপ্টে আছে। গলায় হাতের ছাপ বিশদ। যা ভাবলেন তা-ই হলো। মাথায় হাত দিয়ে কান্না নিবারণ করে শাশুড়ির দিকে তাকালেন তিনি। ফাতেমা চৌধুরীর কুঁচকানো চামড়া আরো কুঁচকে গেল মলিনতায়। মেহরিমা নিষ্প্রভ স্বরে বললেন,
‘ বলেছিলাম আম্মা পাঠাবেন না মেয়েটাকে এ ঘরে। শুনলেন না আমার কথা। ওকে সত্যটুকু বলার সময় টাও আমায় দিলেন না। তার আগেই!যে নিজেকে শেষ করতে পিছপা হয় না,সেই ছেলে ফুলশয্যা, বউ কেমন করে বুঝবে আম্মা? খু’নি বানিয়ে দিলেন আমার ছেলে টাকে?’
ফুপিয়ে উঠলেন মেহরিমা চৌধুরী। আয়ুশী কেঁদে দিল। অপলক চেয়ে রইল তার ভাইয়ের দিক। ভয়ে কেমন চুপচাপ হয়ে আছে। দৃষ্টি মেঝেতে নিবদ্ধ। ভাইয়ের বুকে পড়ে থাকা মেয়েটার জন্যও ভীষণ খারাপ লাগছে। ফাতেমা চৌধুরীর কন্ঠস্বর কাঁপছে। তবুও তেজ ঢেলে বললেন,
‘ এখন এসব বলার সময় বউ?ডাক্তার রে ডাকো। মর’ছে না মনে হয় মাইয়াডা। তাত্তাড়ি করো। ‘
শাশুড়ির কথায় জেদ লাগলেও মেহরিমা আয়ুশীর মা’য়ের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন ব্যগ্র কন্ঠে,
‘ তোর ছেলে কই ত্রিহা?ডাক না ওরে। মেয়েটার প্রাণ বাঁচাতে হবে। ওরে বল ডাক্তার ডাকতে। ‘
‘ ডাকতাছি আপা। ‘
ত্রিহা ছুটে এসে ছেলের রুমের সামনে দাঁড়াল। উচ্চস্বরে বললো,
‘ নতুন বউয়ের অবস্থা খারাপ। তাড়াতাড়ি চল। ‘
বিছানায় আধো হয়ে শুয়ে চোখের উপর হাত রেখে শুয়ে ছিল ছেলে টা। মায়ের কথা কর্ণপাত হতেই তড়াক করে উঠে বসল। শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেল শীতল স্রোত। মা’কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উদভ্রান্তের ন্যায় উম্মাদ হয়ে ছুটে গেল। সবাইকে পাশ কাটিয়ে শ্রেয়ার কাছে গেল। হাত বাড়িয়েও থেমে গেল সে। হুট করে অন্যের বউকে স্পর্শ যে সমীচীন নয়। চোখ দুটো জ্বলে উঠল। ধরা গলায় শ্রেয়াকে বুকে ধারণ করা সুঠাম দেহের মানুষ টার উদ্দেশ্যে রয়ে-সয়ে বললো,
‘ ভাই কি হয়েছে? মেয়েটা কষ্ট পাচ্ছে। এদিকে দে। তুই ওকে মে’রেছিস?’
শেষোক্ত প্রশ্ন টা যেন শিষা ঢেলে দিল অপর মানুষ টার কর্ণে। ঝাঁঝালো, রক্তিম দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। বুক থেকে ছিটকে ফেলে দিল শ্রেয়ার কোমল, শীর্ণ দেহ টা। রাগে গিজ গিজ করতে করতে পুরো রুমে ভাংচুর শুরু করলো। সব ফুল ছিড়তে লাগল অনবরত। এই সুযোগে শ্রেয়াকে নিয়ে বেরিয়ে গেল সকলে। বাহির থেকে দরজায় তালা লাগিয়ে দিলেন ফাতেমা। মেহরিমা বদ্ধ দরজার দিকে চেয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলেন,
‘ আমার ছেলে!আম্মা আমার ছেলেকে বাঁচান। সেই আগের সুস্থ, গম্ভীর,সুদর্শন ছেলেটা কোথায় গেল আম্মা? আমাকে মা ডাকে না কেন?’
_______________
প্রভাতের আলো ফুটতেই শ্রেয়ার জ্ঞান ফিরে আসে। চোখ মেলতে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে মেয়ে টার। ঝাপসা চোখে রুমের চারদিকে চাইল। গলার ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠল ও। চোখের সামনে ভেসে উঠল গত রাতের ভয়ং/কর সেই মুহুর্ত টা। বিছানার চাদর খামচে ধরে নিঃশব্দে অশ্রু বিসর্জন দিতে শুরু করে। তখনই কানে আসে কারো উৎকন্ঠা,
‘ নতুন বধূ তোমার হুঁশ আইছে?দাঁড়াও আমি লেকচার রে ডাইক্কা লইয়াই। ‘
শ্রেয়া কথা বলতে পারছে না। চেষ্টা করলেই ব্যাথায় বিষিয়ে উঠছে সমগ্র দেহ। তড়তড় করে গলার ব্যাথা বেড়ে যাচ্ছে। তবুও রহিমাকে ডাকলো। কন্ঠ খুবই ক্ষীণ। রহিমা হয়ত শুনলো না। তাই পুনর্বার বললো,
‘শুনুন। ‘
রহিমা দৌড়ে এসে বললো,
‘ কও নতন বধূ?’
‘ লেকচারার কে খালা?’
‘ আরে ও তো এই বাড়ির পোলা। কাইলকা তো মনে হয় তোমার লগে পরিচয় হয় নাই। তোমার জামাই তোমারে মা/রল না?তারপর সারা রাইত এনে আছিল। ডাক্তার আনছে। তোমার খেয়াল রাখছে আমার লগে থাইকা। একটু আগে গেল। কইয়া গেল তোমার হুঁশ আইলে যেন ডাকি। বাকি সবাইও আছিল। তোমার শাশুড়ি একটু আগেও আইসা গেছে। এহন কেমন লাগতাছে তোমার?’
‘ তোমার জামাই মার*ছিল না?’ আহা! স্ত্রীর হৃদয় খন্ড দ্বিখণ্ডিত হওয়ার জন্য এই বাক্য টা যেন একদম যথেষ্ট। শ্রেয়ার কলিজা টা ছিঁড়ে যাচ্ছে। মলিন স্বরে আওড়ালো,
‘ ভালো। ‘
রহিমা দীর্ঘ পনেরো বছর ধরে এ বাড়িতে কাজ করছে। তারও একটা মেয়ে আছে। বিয়ে দিয়েছে। স্বামীর সংসারে বেশ সুখেই আছে মেয়েটা। কিন্তু এই মেয়েটা?বিছানায় সোজা হয়ে নিরবে কেঁদে যাওয়া শ্রেয়ার দিকে চেয়ে অতীব মায়া হচ্ছে তার। সে জানে কোনোদিনও সুখী হবে না এই মেয়ে। চৌধুরীর বাড়ির মানুষগুলো এতো ভালো হয়েও কেমন করে পারল এমন অবিচার করতে এতিম একটা মেয়ের সাথে?কি সুন্দর মেয়েটা! রূপ যেন ঠিকরে পড়ছে। বুক চিরে দীর্ঘ শ্বাস বিমোচন করলেন তিনি। শ্রেয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে যা সত্য তা বলে দিলেন,
‘ নতুন বধূ তোমারে ঠকা-ইছে সকলে। তুমি সুখী হইবা না। ‘
শ্রেয়া ভ্রুঁ কুচকে তাকালো। দৃষ্টি প্রশ্নবিদ্ধ ওর। রহিমা এগিয়ে এসে চাপা স্বরে বললেন,
‘ তোমার স্বামী পাগল। গত এক বছর ধইরা পাগল। পাগলের বউ তুমি নতুন বধূ। পাগলের বউ। ‘
শ্রেয়ার পুরো দুনিয়া কেঁপে উঠল নিমেষে। বজ্রপাতের ন্যায় শোনালো সবটা। কানে বাজলো ছোট্ট বেলার সেই তিরস্কার–‘ তোর আব্বা পাগল শ্রেয়সী। তোর আব্বা পাগল। ‘
শ্বাস রোধ করে ফেলল যেন কেউ। ঠোঁট দুটো চেপে ধরে ঘাড় ফিরিয়ে নিল। এত বড় ধোঁ/কা! কেন নিয়তি মায়ের জীবনটার মতো ওর জীবন টাও নিঃশেষ করে দিল। ঠিক এমন ভাবেই তো মরে/ছিল ওর মা। স্কুল থেকে ফিরে এসে মা’য়ের রক্তাক্ত দেহ টা পেয়েছিল মেঝেতে। বাবা বিদ/ঘুটে হেসে ছুরি দেখিয়ে বলছিল দেখ তোর মা/রে খু*ন করছি। কি মজা লাগতাছে। আয়,আয় তোর দেহ থাইক্কাও রক্ত বের করমু। শ্রেয়ার অভ্যন্তরে কম্পন ছড়িয়ে পড়ে মা’য়ের পরিণতি মনে করে। না না এখানে থাকবে না সে। থাকলে মা’য়ের মতো মর/তে হবে। মাথায় আসল যেই করে হোক বাঁচাতে হবে নিজেকে।
রহিমা বেরিয়ে যেতেই দুর্বল শরীরটা নিয়ে কোনোমতে বিছানা ছাড়ল। পড়ে যেতে নিলে পাশের টেবিলে হাত রেখে ধাতস্থ করে নিল নিজেকে। এখান থেকে এখন না পালালে পুরো টা জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। কেন এমন করলো মাদার?কি করে পারলো ওকে এই নর/কে ঠেলে দিতে?
বিলাশবহুল চৌধূরী বাড়ির প্রত্যেক টা দেয়ালে দেয়ালে,আনাচে কানাচে ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে পড়ল একটা বাক্য। বাক্যটা সবার কর্ণে কর্ণে প্রতিধ্বনিত হতে আরম্ভ করলো –‘ স্বামী পাগল বলে বউ পালিয়েছে। ‘
বাড়ি ভর্তি বয়ে আসা মেহমানরা গলা উঁচিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে বিদ্রুপের কন্ঠে বললো–‘ পাগল হলে তো পালাবে-ই। পাগলের সাথে আবার সংসার! ‘
.
.
দুপুরের রৌদ্র যেন মানুষের দেহের চামড়া জ্বলসে দিচ্ছে। শ্রেয়া বাসে বসে শহরের যানযট অবলোকন করে চলেছে অসহায় দৃষ্টিতে। জীবন কাকে কোথায় নিয়ে যায় কেউ জানে না। সময়ের ব্যবধানে আপন মানুষ গুলো পর হয়ে যায়। বাসের মানুষগুলোর চমকপ্রদ দৃষ্টি ওর চক্ষু এড়াচ্ছে না। বিয়ের সাজে এলোমেলো হয়ে থাকা,বিধস্ত চেহারা নিশ্চয়ই আশ্চর্যান্বিত! শ্রেয়া বিড়বিড় করলো,
‘ হৃদয় টানছে অচেনা সেই মানুষ টার জন্য। কিন্তু মহান হতে পারবো না আমি। মুক্তি চাই। মুক্তি। সুন্দর জীবন চাই। ‘
_____________
‘ জানিস শ্রেয়া পাশের ফ্ল্যাটে নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে। ব্যাচেলর। শুনলাম সেই হ্যান্ডসাম। পেশায় ইউনিভার্সিটির লেকচারার। আজ মর্নিং ওয়াকে গিয়েছিলাম না?মেয়েগুলো ফিসফিস করে বলাবলি করছিল। ‘
তিনটে বছর ধরে প্রিয়ুর এরকম কথাবার্তা শ্রেয়ার মুখস্থ, তটস্থ। অন্যের প্রশংসা করতে করতে এই মেয়ে মুখে ফেনা তুলে ফেলে। শ্রেয়া আলতো হেসে হাতের বালতিটা নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি ঘরের কাছে এলো। উদ্দেশ্য কাপড়গুলো ছাঁদে মেলে দেওয়া। তারপর নাস্তা বানাবে। অতঃপর প্রিয়ুর সাথে ভার্সিটির জন্য বেরিয়ে পড়বে। ছাদে এসে কোনোদিকে না চেয়ে তাড়াহুড়ো করে একটা মোচড়ানো কাপড় হাতে তুলে নেয়। কাপড়ে এখনও বেশ পানি রয়ে গেছে। দু’হাতে চিপে কুঁচকানো কাপড় টা মেলে প্রচন্ড জোরে ঝাড়া মারতেই সমুখ হতে ভেসে এলো রোষপূর্ণ, গম্ভীর, ধারালো কন্ঠস্বর,
‘ ষ্টুপিড। ‘
মুহুর্তেই ভয়ে সেঁটে গেল শ্রেয়া। বিব্রত হলোও বটে। কাপড় টা মুখের সামনে থেকে সরিয়ে পিটপিট করে কপাল কুঁচকে চাইতেই চক্ষে বিঁধে এক সুদর্শন পুরুষ। ছেলে টা রক্তিম মুখ নিয়ে তুখোড়, তীক্ষ্ন চাউনি নিক্ষেপ করে রেখেছে ওর দিক। দৃষ্টি নির্নিমেষ।
#চলবে,,!