#সন্ধি_হৃদয়ে_হৃদয়ে,১৬,১৭
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব___১৬
অহমিকার প্রশস্ত অধরে ফিচেল হাসি। এগিয়ে এসে জড়তা বিহীন নিঃসংকোচে শ্রেয়ার ডান হাত টা আঁকড়ে ধরে। অকস্মাৎ স্পর্শে নড়েচড়ে উঠে শ্রেয়া। এটা যে তার আশার প্রতিফলন নয়। তবুও কঠোরতা বজায় রেখে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল। চেহারার ভঙ্গিমায় তেজের ছাপ। অহমিকা হাসি মুখেই বলে,
‘ বেশ তেজস্বী তো তুমি। ‘
শ্রেয়া গাঢ় দৃষ্টে পর্যবেক্ষণ করছে অহমিকাকে। মেয়েটা যথেষ্ট স্মার্ট। চালাকও বৈকি। নয়ত প্রাক্তনের বউয়ের সাথে এত নরম,ভদ্র ব্যবহার? তাছাড়া কিয়ৎক্ষণ পূর্বেই তো ডিভোর্স পেপারে স্বাক্ষর দেওয়ার কথা বলছিল। নিশ্চয়ই বিয়েতে মেয়েটার মত আছে। এত বড় একটা মেয়েকে ধরে বেঁধে একজন বিবাহিত ছেলের সাথে সারাজীবন বেঁধে দেওয়া অসম্ভব। এছাড়াও মেয়েটা পেশায় একজন ডাক্তার। জীবনের ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত থাকবে এমন ধাঁচের নয়। তাই হালকা ভাবে নিতে পারল না সে। হাত ছাড়াতে প্রয়াস চালালে অহমিকা আরও শক্ত করে চেপে ধরে। রাশভারি গলায় বললো,
‘ সাইন টা করে দাও। কি করবে এমন একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রেখে যা কখনও পূর্ণতা পাবে না?মুক্তি দাও তূর্যকে। তুমি ওকে এক পারসেন্টও চিনো না যতটা আমি জানি। আমার পাওয়া তথ্য মোতাবেক তুমি নাকি ও যেখানে লেকচারার হিসেবে নিয়োজিত সেখানকার ছাত্রী তাও ওর ডিপার্টমেন্টের?’
অহমিকা হাতটা ছেড়ে গলা ঝেড়ে নিল। পুনরায় বলতে শুরু করে,
‘ শুনো শ্রেয়া,তূর্যর অতীতে আমি। ওর জীবনেও এতকাল আমিই ওতোপ্রোতভাবে মিশে আছি। মানসিক ভারসাম্য হারানোর আগেও আমি ছিলাম, হারানোর পরেও ওর মস্তিষ্কের সমগ্রটা জুড়ে আমিই অবস্থান করেছিলাম। আবার সেই আমিই ওকে তিলে তিলে দিন-রাত এক করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনেছি। মাঝ থেকে তুমি উড়ে আসলে দাদির ভুল উদ্যোগে কিন্তু জুড়ে বসতে পারলে কই?স্বার্থপরতাই তো দেখালে যেটা দেখিয়েছিলাম আমি এক কালে। তবে পার্থক্য কি জানো?তূর্যকে যে ব্যাথা আমি দিয়েছি সেটার প্রশমনের মাধ্যমও আমি। কিন্তু তুমি কিছুই না। এমনকি তোমার হাসবেন্ড তোমাকে চিনে না অব্দি। তাহলে তুমি ওকে কি করে ডিজার্ভ করো?ভুল আমি করেছি,শুধরেও নিয়েছি,তূর্যও আমার। যদি নূন্যতম সেন্স থাকে কিংবা ভালো হয় তাহলে ভেবে দেখবে। রাত পর্যন্ত ভেবো,তারপর এসো আমার কাছে। তুমি আমার ছোট বোনের মতোন। তাই বলে ভালোবাসা ভাগাভাগি সম্ভবপর নয়। ‘
‘ আমার পক্ষেও স্বামী ভাগাভাগি অসম্ভব ব্যাপার। ‘–কথাটা বলে আলতো হাসে শ্রেয়া। গুণে গুণে কয়েক কদম সরে গিয়ে দাঁড়ায়। মেহরিমা ক্ষিপ্ত হয়ে আছেন। অহমিকা চেয়ে আছে কপাল কুঁচকে। চক্ষুদ্বয়ের আকৃতি ছোট ছোট। শ্রেয়া কন্ঠ ভার করে বলে উঠলো পুনর্বার,
‘ আপনার প্রাক্তন কিন্তু আমার স্বামী। পার্থক্য বুঝেন?আপনি ছিলেন হারামে লিপ্ত এবং আমারটা একদম পবিত্র। চাইলেই আপনাদের মতো মানুষ সেটা নিঃশেষ করার ক্ষমতা রাখে না। আমি স্যারের যোগ্য কিনা,তিনি আমাকে তার জীবনে রাখবেন কিনা সবটা ওনার থেকেই নাহয় শুনে নিব। সম্পর্ক যার সাথে গড়েছি তার মুখের একেকটা শব্দই আমার নিকট গ্রহণযোগ্য হবে। বিনা বাধায় মেনে নিব। ফারদার আমাকে জোর করার চেষ্টা করবেন না শাশুড়ী আম্মা। ‘
দাউদাউ করে জ্বলে উঠলেন মেহরিমা। শ্রেয়ার কাঁধ ঝাঁকালেন শক্ত হাতে। হুংকার ছেড়ে বললেন,
‘ স্বার্থপর মেয়ে। অস/ভ্য। এতো লাই কোথায় পেয়েছিস তুই?সব আম্মার দোষ। তুই আমার ছেলের সামনে দাঁড়ানোর যোগ্যতা রাখিস না। ভাগ্যক্রমে পারছিস। প্রিয়ুর মতোন এত বড় বাড়ির একটা মেয়ে তোকে কিভাবে বুকে জড়িয়ে নিয়েছে আমি ভেবে ভেবে দিশেহারা। যা-ই হোক আমার ছেলের উপর অধিকার খাটানোর চেষ্টা করবি না। তোকে না চাইতেও মেনে নিয়েছিলাম বিয়ের দিন। কিন্তু তোর কারণে অলিগলিতে রটে যায় চৌধুরী বাড়িতে চেপে থাকা সত্য। তূর্যকে পাগ’ল বলে আঙুল তুলত,হাসত,কৌতুক করত কেবল তোর জন্য। কই এর আগে কেউ জানত না। মা হয়ে এটা আমার পক্ষে কখনোই সহনশীল না। আমার বাড়ি,পরিবার, ছেলে আমার অহংকার। আর সেই অহংকারে কালি লেপে দেওয়া এতিম মেয়েটা তুই। এবার পিছু ছাড় আমাদের। দয়া করে,পিছু ছাড়। আমি বুঝি তূর্য নিজের মধ্যে কষ্ট চেপে রেখেছে। ও খুব চাপা স্বভাবের। ওকে সুন্দর, স্বাভাবিক,সুখী জীবনে দেখতে চাই। ‘
মেহরিমার চোখ থেকে দুই ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে যায়। শ্রেয়ার কাছে একদিক দিয়ে ওনার কথাগুলো সঠিক ও উচিত ঠেকল। তূর্যর পাগ’ল হওয়ার বিষয়টা সত্যিই কেউ এত একটা জানত না। খুব কম মানুষ জানত। সবাইকে এটাই বলা হয়েছিল তূর্য দেশে নেই। বিয়ের পরের প্রভাতে কিছু অতি নিকটস্থ আত্মীয়দের জানানো হয় তূর্য ফিরে এসেছে, ঘরোয়া ভাবে বিয়ে করেছে। সেই সুবাদে ছোটখাটো একটা আয়োজন। এগুলো না-কি প্রিয়ুকে আয়ুশী জানিয়েছে এবং ওর মাধ্যমে কর্ণধার হয় শ্রেয়ার। তবুও সূক্ষ্ম নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
‘ আমি সেদিন এসেছিলাম, আপনিই তো ফিরিয়ে দিলেন আমাকে। অর্ধ পথ অতিক্রম করে আমি বাস থামিয়ে আবারও এসে দাঁড়িয়েছিলাম আপনাদের দুয়ারে। দারোয়ান আমাকে ঢুকতে দিচ্ছিল না। খবর পাঠাতেই আপনি এলেন। কিন্তু দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলেন আমাকে,ঘরে তুললেন না আর। হয়ত আমি এতিম বলেই এটা করতে জয়ী হয়েছেন। মাথার উপর কারো হাত থাকলে কখনই পারতেন না। জীবনে আমরা যতই বলি একা চলতে পারব বাক্যটা নিতান্তই নিরর্থক। কারো না কারো পাশে থাকতে হয় মানসিক, মনের শক্তি জোগান দিতে। যা আমার ছিল না। ফলস্বরূপ আমি হেরে গেলাম। দুর্বল হয়ে চলে গেলাম এ শহর ছেড়ে,স্বামী ফেলে। ‘
শ্রেয়া তড়িৎ বেগে সুসজ্জিত কক্ষ ত্যাগ করে। করিডোরে এসে প্রাণ ভরে শ্বাস টেনে নেয় অন্তর্দেশে। এতক্ষণ ভেতরটা বড্ড ব্যাথা করছিল। চিনচিনে ব্যাথা। তূর্যর রুমে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা করে এলেও পরিস্থিতি অনুযায়ী কল্পনাগুলো সম্পূর্ণ উবে গেল। এখন রুমে গেলে প্রিয়ু হাজার খানেক প্রশ্নের, সন্দেহের ঝুলি খুলে বসবে। তাই নিচে নেমে আসে। উদ্দেশ্য প্রিয়ুর মা’য়ের কাছে যাওয়া। বিয়ে বাড়িতে কত-শত কাজ থাকে,টুকিটাকি করে দিলেও অনেকটা কমবে।
রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে দেখে প্রিয়ুর মামী,খালা,ফুপু, আরও অনেক মহিলা হাতে হাতে কাজ সারছেন। পিছন থেকে কাঁধে কারো ছোঁয়ায় নিস্তব্ধ হয়ে যায় শ্রেয়া। ফিরে দেখে ত্রিহা চৌধুরী মলিন মুখে ওর পানে চেয়ে। শ্রেয়া কি বলবে ভাবতে থাকে। এদের মুখোমুখি হলে নিজেকে অত্যধিক অপরাধী মনে হয়। দাড়িয়ে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়ে। নত মস্তকে বললো,
‘ কেমন আছেন?’
ত্রিহা স্মিত হেসে বললো–‘ ভালো আছি মা। তোমার কি অবস্থা? সেদিন হঠাৎ চলে গেলে কেন?আমি প্রিয়ুকে তোমার কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম। আয়ুশও খুব অবাক হয়েছিল তোমার চলে যাওয়ায়। ‘
শ্রেয়া স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলে,
‘ কোচিং সেন্টারে টিচিং প্রফেশনে আছি চাচি। বন্ধ করলে বাচ্চাদের পড়াশুনায় ব্যাঘাত ঘটে যায়। যদিও এক বিষয়ের জন্য একাধিক শিক্ষক রয়েছে তবুও নিজের তরফ থেকে ঘাটতি রাখতে চাই না। ‘
‘ আচ্ছা আসো এখন একটু কাজে সাহায্য করবে। তোমার বান্ধবী, দেবরের বিয়ে বলে কথা। চৌধুরী বাড়ির বড় বৌ তুমি। দায়িত্ব অনেক তোমার। ‘
বড় বউ?কথাটা অত্যন্ত নিছক। শ্রেয়া একটুও নড়ল না৷ কাজে হাত দিবে সে তবে বড় বউ হিসেবে নয়,প্রিয়ুর বান্ধবী হয়ে। ত্রিহা যেন ওর মনের অব্যক্ত বাক্যগুলো আন্দাজ করে নিল। বললো,
‘ নিজের অধিকার ছেড়ে দিতে নেই মেয়ে। আমি শিওর তূর্য যেদিন জানবে তুমি ওর বউ, বুকে লুকিয়ে রাখবে তোমাকে। ও যেমন ঘাড়ত্যাড়া,রগচটা তেমন সুন্দর মনের মানুষ। মিলিয়ে নিও আমার কথাটা৷ আর বাকি রইল অহমিকার সঙ্গে বিয়ের ব্যাপার টা?তূর্যকে আমি সম্পূর্ণ বুঝে উঠতে পারি নি এত বছরে ওর চাচি হয়েও। কিন্তু যতটুকু জানি অহমিকার বিপদ খুব একটা দূরে নয়। আসো এখন। ‘
শ্রেয়া নত মাথায় সঙ্গে চলল। দুই কপোলে রক্তবর্ণ ছেয়ে গেছে নিমেষে। সত্যি কি ওকে তূর্য বুকে লুকিয়ে রাখবে?এত লাগবে না। ধারে কাছে একটুখানি জায়গা দিলেই ঢের।
বাহিরে বিরাট আয়োজন চলছে। তন্মধ্যে আয়ুশের সঙ্গে একবার দেখা হলো শ্রেয়ার। ঠান্ডা দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করে –‘কখন আসলে?’ শ্রেয়া ক্ষীণ স্বরে আসার সময়টা জানায়। তৎপরে আর কোনো কথা বলে নি আয়ুশ। দৃষ্টি ঝুঁকিয়ে কাজের বাহানায় প্রস্থান ঘটায়। কিন্তু তার আকার ভঙ্গিতে শ্রেয়ার চক্ষু ধরে ফেলে সংকোচ চাহনি। এত কিসের দ্বিধা আয়ুশের?এতকাল লুকিয়েছে বলে?অগোচরেই হোক ব্যাপকভাবে সহায়তা করেছে লোকটা। সে না থাকলে হয়ত নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে অক্ষম হতো শ্রেয়া। মনে মনে ভাবে সকল ব্যস্ততা কেটে গেলে আয়ুশের সাথে কথা বলবে। কোনো প্রকার অপরাধবোধ বইতে দিবে না তাকে। সাহায্যকারীকে অপরাধের অনুভূতিতে জর্জরিত করার মতো খারাপ কাজ করবে না ও। বাহির থেকে এসে রাহেলার আদেশে ট্রে নিয়ে ছুটল ছাঁদে। প্রিয়ুর কাজিন গ্রুপ,মেহমান অনেকেই ছাঁদে। তাদের জন্য নাস্তা পাঠালেন রাহেলা। সাথে এলো বাড়ির কাজের মেয়েটা। সিঁড়ি ভেঙে মেয়েটা আগে আগে চলে গেল। বেশ চটপটে সে। শ্রেয়া আবার এত তাড়াতাড়ি হাঁটতে অভ্যস্ত নয়। তাড়াতাড়ি হাঁটতে গেলে মনে হয় কখন পড়ে যায় মুখ থুবড়ে, ঘটে যায় দুর্ঘটনা। সময়ের চেয়ে জীবনের দাম খুব খুব বেশি,অত্যন্ত।
মন্থরগতিতে কয়েকটা সিঁড়ি উঠতেই সম্মুখে এসে দাঁড়ায় তাগড়া,সুঠাম দেহের অধিকারী এক ব্যক্তি। মুখটা এ কয়দিনে মানসপটে, মনের ক্যানভাসে আঁকা সমাপ্ত। গেঁথে থাকবে চিরতরে। মৃ-ত্যুর আগ পর্যন্ত ভুলবে না। সিঁড়ির অনেকখানি স্থান দখল করেই দাঁড়িয়ে আছে। চেয়ে আছে অনিমেষনেত্রে। নিমিষেই দৃষ্টি কড়া হয়ে উঠে। কপালে ভাঁজ ফেলে তূর্য বলে উঠলো,
‘ চলে এলে?’
শ্রেয়া চোখ বুঁজে সুর নরম রেখে প্রতুত্তর করে,
‘ জ্বি। আসতেই হয়,বেস্ট ফ্রেন্ডের বিয়ে বলে কথা। ‘
কন্ঠ কি কাঁপছে? শ্রেয়ার মনে হলো ওর কন্ঠানালিতে কম্পন। কাঁপছে তিরতির করে। তূর্যর ঠোঁটের কার্নিশে সুপ্ত হাসি ফুটে ওঠে। এক হাত দিয়ে চুলগুলো পিছনে ঠেলে দেয়। হাসি মিশ্রিত কন্ঠধ্বনি,
‘ আমারও কিন্তু বিয়ে। ‘
তৎক্ষনাৎ উত্তর শ্রেয়ার–‘ জানি। অভিনন্দন। ‘
বাহ্যিক আচরণে ত্রুটি রাখছে না শ্রেয়া। কিন্তু অভ্যন্তর ভেঙ্গে চুরে তচনচ। ক্ষতবিক্ষত একেকটা অঙ্গ-প্রতঙ্গ। তূর্য মাঝখানের খালি সিঁড়ি টায় নেমে এলো।
‘ আমার বউকে দেখলে?’
‘ হ্যাঁ। খুব সুন্দর। ‘
শ্রেয়া কথাটা বলতে বলতে কাজের মেয়েটা এসে হাজির হয়। সন্দেহাতীত দৃষ্টিতে তাকায় ওদের দিক। লজ্জায় চুপসে যায় সে। তূর্য বিরক্তি প্রকাশ করে হাত থেকে ট্রে টা নিয়ে মেয়েটার হাতে দিয়ে বললো,
‘ তাড়াতাড়ি আসবে না। এগুলো নিয়ে সবার খাওয়া শেষ হলে তারপর প্লেট গুলো নিয়ে নামবে। ওকে?’
মেয়েটা কি বুঝলো কে জানে!ঘাড় নাড়িয়ে ‘আইচ্ছা’ উচ্চারণ করে চলে গেল। শ্রেয়া নেমে যেতে নিলে ওড়নার কোণা টেনে আঙ্গুলে বেঁধে নিল তূর্য।
হতভম্ব, স্তম্ভিত শ্রেয়া। বিহ্বল কন্ঠে ভ্রুুঁ কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
‘ কি করছেন স্যার?’
তূর্য গম্ভীর কন্ঠে দাঁত কিড়মিড় করে বললো,
‘ আমি যেতে বলেছি তোমাকে?আস্ত বড় একটা বেয়া/দব। অনুমতি না নিয়ে উপেক্ষা করে চলে যায়। ‘
পরক্ষণেই শ্রেয়ার সন্নিকটে দাঁড়িয়ে বলে,
‘ আমার বৌ শুধু সুন্দর? ওর গাঢ় দৃষ্টি চোখে বিঁধেছে তোমার?মাথায় এক ঝুঁটি করলে ওকে বড্ড কিউট লাগে। মনে হয় মাথায় তালগাছ। মারাত্মক একটা মেয়ে। ক্ষণে ক্ষণে অস্থির করে তুলে আমাকে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা এখন খুবই দুর্বোধ্য হয়ে পড়ছে। মুখে লাগাম টানতে ভুলে যাই ওর সামনে। টানবো-ই বা কেন?বৌয়ের সঙ্গে সবই জায়েজ। সিদ্ধান্ত নিলাম মধুচন্দ্রিমা পর্যন্ত গিয়ে নিজের নিয়ন্ত্রণকে বাঁধন হারা করে দেওয়ার। বউটা ঠিকঠাক মানিয়ে নিতে পারলেই হলো। ‘
পেট মুচড়াচ্ছে শ্রেয়ার। বক্ষস্পন্দনের গতি নিয়ন্ত্রণ হারা। কি মাতাল করা কন্ঠস্বর!দেহে তরঙ্গ খেলে গেল। কম্পন সহ্য করতে না পেরে তূর্যর পড়নের গেঞ্জি টা মুঠোয় পুরে নিল তাৎক্ষণিক।
#চলবে,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)
#সন্ধি_হৃদয়ে_হৃদয়ে
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব___১৭
তূর্য ভ্রুঁ কুঁচকে পেটের দিকে তাকাল। কপালে ভাঁজ পড়ল তার। চাহনি চোখে পড়তেই শ্রেয়া নিজের দেহখানা সামলে চট করে সোজা হয়ে দাঁড়াল। হাতের মুঠোয় হতে মুক্ত করে দিল টি শার্টের কিছু অংশ। তড়তড় করে উত্তেজনা ভরপুর কন্ঠে বলে উঠল–‘ সরি স্যার। হঠাৎ মনে হলো পিছনের দিকে পড়ে যাচ্ছি, তাই কোনো দিকবিদিক না পেয়ে ভুলবশত আপনার গেঞ্জি আঁকড়ে ধরে ফেলেছি। সত্যিই আমি খুব খুব দুঃখিত। ‘
শ্রেয়া ভয়ার্ত দৃষ্টি মেলে ধরল। মুখশ্রীতে অজস্র চিন্তার ছাপ। আঁখি পল্লব কাঁপছে। ক্ষীণ সময় পর পর ছুঁয়ে দিচ্ছে মসৃণ ত্বক। ভিতরে যেন আন্দোলন চলছে। অনুভূতিদের আন্দোলন। তোরজোর হরতাল চালাচ্ছে। এখন অপেক্ষা শুধু তূর্যর পরবর্তী কথা শোনার। শরীর এত কাঁপছিল যেকোনো মুহুর্তে সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে পড়ে রক্তাক্ত হয়ে যেত। সিঁড়ির মাঝে থাকায় আশেপাশের প্রাচীর ধরার কথাও মাথায় আসে নি। হাতের নাগালে নিজেকে রক্ষার জন্য যাকে পেল তাকে ধরেই বাঁচার তীব্র প্রচেষ্টা।
তূর্যর দৃষ্টি এখনও অবিচল, অনঢ়। একটুও নড়চড় হয় নি তার চাউনির। দেয়ালে এক হাত ঠেকিয়ে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল। তৎপরে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। ঠোঁটের কোণে হাসি বজায় রেখে ফিচেল স্বরে বললো,
‘ কখনও আমার বুকে তোমার তুলতুলে দেহ নিয়ে পড়ে থাকো,আবার কখনও পেটে নখের আঁচড় কেটে গেঞ্জি মুঠোয় পুরে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করো। আমি কি তোমার রক্ষক?মতলব কি বলো তো?এই যে এখন পেটে নখ বিঁধিয়ে দিলে আমার কি হবে?মধুচন্দ্রিমা টা ভেস্তে দিলে?এত হিংসা তোমার মধ্যে? আমি আমার বউকে আদরে ভাসিয়ে দিব, সেইজন্য নখের আঁচড় দিয়ে আমার বউয়ের মনে সন্দেহ বাঁধানোর ধান্দা। তুমি কি ভেবেছো আমি বুঝি না?এই মেয়ে এত ধান্দা খুঁজো কেন তুমি?হিংসে হয়?’
নিমিষেই শ্রেয়ার শ্রবণগ্রন্থি গরম হয়ে ওঠে। কেমন উত্তপ্ত অদৃশ্য ধোঁয়া বেরিয়ে প্রকৃতিতে মিশে যাচ্ছে যেন। আবার মধুচন্দ্রিমার রাত্রিতে অহমিকা তূর্যর বউ হয়ে অবস্থান করবে,আদর-সোহাগ গায়ে মাখিয়ে নিবে,এসব কথা ভেবে শ্রেয়ার বক্ষস্থলে থরথর করে কম্পন ছড়িয়ে পড়ে। সেকেন্ডের ব্যবধানে বিষাক্ত যন্ত্রণায় পরিণত হয় তা। রক্তের ন্যায় প্রবাহিত হয় শিরা উপশিরায়,সমগ্র কায়ায়। দীর্ঘ নিঃশ্বাস চেপে রেখে আনমনে বলে,
‘ স্যার আপনার পেট দেখান,ওষুধ লাগিয়ে দিব। ‘
‘ হোয়াট?’— তূর্যর কড়া, উচ্চস্বর।
এবার হুঁশে এলো শ্রেয়া। কি বলল এটা সে?উল্টো ঘুরে পালাতে যাবে এহেন মুহুর্তে তূর্য গলা ঝেড়ে ডাকল। কন্ঠটা কেমন রসাত্মক,ঠাট্টামিশ্রিত,
‘ এই মেয়ে,তুমি কি চাইছো আমার উদোম দেহ দেখতে?আবারও নায়ক ভাবছো আমাকে?আহারে! আমি আমার বউয়ের হাসবেন্ড। আর কারো হতে পারব না। বেয়াই হিসেবেই বললাম স্যরি বেয়াইন। আমার উন্মুক্ত দেহটা আমার মাথায় তালগাছওয়ালা বউয়ের প্রাপ্য। ‘
শ্রেয়া ভড়কালো। চোখ বড়সড় করে বলতে চাইল,’ আপনি একটা চরম লেভেলের চরিত্র-হীন পুরুষ। নাহলে বউয়ের সামনে অন্য নারীর সাথে মধুচন্দ্রিমার কল্পনা করতে লজ্জা লাগে না?’ মনের কথা মনে সঞ্চয় করে রেখে নরম,নম্র কন্ঠে বলে,
‘ আমি নিচে যাব। আসি। ‘
তাৎক্ষণিক তূর্য গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,
‘ তোমাকে ধরে রেখেছে কে?যাও। তবে আমার পেট থেকে ঝরানো এক ফোঁটা রক্তের অধিকার আমি ছাড়ছি না। যেভাবে পারো সময় বুঝে শোধ করে দিও। তুমি অবশ্য আগেই জ্ঞাত আছো হিসেবে এক চুলও ছাড় দেবার মানুষ আমি নই। সো তপ্ত দেহের অধিকারীণি শ্রেয়সী রক্ত কিন্তু চাই মানে চাই।’
শ্রেয়ার অবাক স্বর–‘ রক্ত ঝরেছে?কই?আপনি নিজেই তো দেখেন নি?’
তূর্য অগ্নিময় দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো সঙ্গে সঙ্গে। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
‘ আমি স্যার নাকি তুমি ম্যাডাম?’
নিমেষে প্রতি উত্তর শ্রেয়ার–‘ আপনি স্যার। ‘
তূর্য দুই অধর আলগা করে। পুনরায় প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল,
‘ দেহ টা তোমার নাকি আমার?’
‘ আপনার। ‘
‘ তাহলে আমি অনুভব করবো নাকি তুমি?অনুভবে বুঝেছি রক্ত ঝরেছে। দু ফোঁটা হয়ত। কিন্তু এক ফোঁটা নিব। আমি আবার নির্দয় না। আর স্যার যেহেতু আমি,বুঝিও তোমার চেয়ে অধিক। কোনো বাহানা চলবে না, দুইয়ের স্থানে এক কমিয়ে, এক ফোঁটায় এনেছি রক্তের পরিমাণ। তোমার দেহ থেকে আমার গায়ে এক ফোঁটা রক্ত প্রবেশ করলেই দায় মুক্ত করব তোমাকে।’
শ্রেয়া তাজ্জব হয়ে চেয়ে রইল নির্নিমেষ। অক্ষিপটে চমক,বিস্ময়। মস্তিষ্ক কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। এ কেমন লোকের পাল্লায় পড়েছে?মানুষ টা এখনও পাগল রয়ে গেল নাকি?নিস্তব্ধতা ভেঙে তূর্য আদেশের সুরে বললো,
‘ নিচে নেমে বড় জায়গা টায় দাঁড়াও তো। ‘
শ্রেয়া মিনমিনে কন্ঠে উল্টো জিজ্ঞেস করে,
‘ কেন?’
‘ চরিত্রহীন পুরুষ হওয়ার আশা আবার ভিতরে জেগেছে তাই। ‘
তূর্যর কাঠ কাঠ কন্ঠের নিরলস জবাবে শ্রেয়ার হৃদয়স্থল ধুকপুক করে উঠল। তড়িঘড়ি করে নিচে নেমে মিশিয়ে নিল দেহটা দেয়ালের সঙ্গে। তূর্য হাসল। দুর্বোধ্য হাসি। গুণে গুণে তিন পা ফেলল সমুখে। দূরত্ব থাকল। এক আঙুল, কিঞ্চিৎ পরিমাণের তফাত টুকু আজও ঘুচায় নি সে। গাঢ় স্বরে বললো,
‘ কানে কানে একটা কথা শুনো। ‘
শ্রেয়া দম আঁটকে স্থির হয়ে আছে। নড়ছে না বিন্দুমাত্র। তূর্যর ঘোর লাগা স্বর হৃদয় নিংড়ানোর ক্ষমতা রাখে। হ্যাঁ বা না কিছু বলতে পারল না। সুঠাম,তাগড়া দেহের যুবক খানিকটা ঝুঁকে এসে বলে,
‘ তোমার সন্নিকটে আজকাল আমার সহ্যের মাত্রা বেড়েই চলেছে। অস্থির হলাম তবুও সহ্যশক্তি কমল না। হেয়ালি না করে বলেই ফেলি যে কারণে তোমায় এতক্ষণ আঁটকে রাখলাম তা হলো– তোমার কাঁধের একপাশে কালো কালো কি যে উঁকি দিচ্ছে। ঠিক করে নিও। ‘
শেষের বাক্যটা প্রচন্ড মৃদু স্বরে উচ্চারণ করলো তূর্য। দ্রুত গতিতে প্রস্থান ঘটালো নিজের। শ্রেয়া থম মেরে আরো চিপকে গেল দেয়ালে। পেট মোচড় দিচ্ছে আবারও। এবার বোধহয় বাথরুমে যেতেই হবে। ওড়না পিঠে ছড়িয়ে কাঁধসহ ডেকে দৌড় মারল। আর দাড়ানো যাবে না। কোনোমতেই না। করিডোরে এসে মুখোমুখি হলো প্রিয়ুর মামী রাহেলার। তিনি চোখ ছোট ছোট করে জিজ্ঞেস করলেন,
‘ দৌড়াচ্ছ কেন?কি হয়েছে? আমি তোমাদেরই ডাকতে যাচ্ছিলাম। সেই যে গেলে দু’জন আর এলে না। চলো চলো রাশেদা ডাকছে তোমাকে খাওয়ার জন্য। এত বেলা গড়ালো এখনও খেলে না। প্রিয়ুও অপেক্ষা করছে। ‘
শ্রেয়া পেটে এক হাত চেপে জানালো,
‘ আমি আসছি। পাঁচ মিনিট দেরি হবে। ‘
এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে দৌড়ে রুমে এলো। ঢকঢক করে পানি খেয়ে বিছানায় বসে বিড়বিড় করলো — ‘ এমন চরিত্রহীন পুরুষ, পাগল লেকচারার দু’টো দেখি নি। ‘
প্রিয়ুর টানাটানিতে বাথরুমে যাওয়া আর হলো না। অবশ্য প্রয়োজনও পড়ে নি। পানি খাওয়াতে কেমন শান্ত হয়ে গেল পেট টা। এই অঙ্গের শত্রু একজনই এবং মানুষটা হলো তূর্য চৌধুরী। ওনি কাছে এলে যত মোচড়ামুচড়ি। সরব করে নিচে আসে। একদল খেয়ে ওঠে গেছে। বিয়ে বাড়ি বলে কথা। যে পারছে চেয়ার দখল করছে, পেট ভরে খাচ্ছে, গিলছে আবার ওঠে যাচ্ছে। নতুন করে টেবিলে খাবার সাজাচ্ছেন কাজের লোকেরা। প্রিয়ু বসে পাশের চেয়ারে শ্রেয়াকে বসাল। বাম পাশের চেয়ার কাছাকাছি বসল আয়ুশ। এতে প্রিয়ু আলতো হাসে। লজ্জাতুর হাসি হলে আখ্যায়িত করা হয় এটাকে। শ্রেয়া দেখে চকিতে মাথা নত করে খাবার খাওয়ায় নিমজ্জিত হয়। কিন্তু ওর সেই খাওয়ায় বিঘ্ন ঘটিয়ে সামনের দিকে চেয়ারে টেনে বসে তূর্য। তাকে দেখেই শ্রেয়ার পুনর্বার পেটের পীড়ার সৃষ্ট হয়। গ্রোগাসে গিলে ওঠে যাওয়ার চেষ্টা করে। আঁড়চোখে তাকাতেই আঁখিদ্বয়ে বিঁধে ওর পানে তূর্যর তীক্ষ্ণ,তুখোড় চাহনি। এভাবে চাওয়ার মানে খুঁজে পেল না। নিজের দিকে চেয়ে দেখল ওড়না ঠিক আছে কিনা। কাঁধে কোনো কিছু নেই তো। তবুও টেনেটুনে ঠিক করলো। সাথে সাথেই তূর্যর ওষ্ঠে উপহাসের হাসির দেখা মিলে। শ্রেয়ার মন বলছে এই লোক ওর থেকে মজা লুফে লুফে নিচ্ছে।
চেয়ার ছেড়ে বেসিংয়ে এসে হাত ধুয়ে উপরে ওঠে আসল। রুমে যাওয়ার পথিমধ্যে একটা রুম থেকে ভেসে আসে চাপা স্বর,’ এই মাইয়া এখানে আয়। ‘
হতবাক শ্রেয়া। ফাতেমা চৌধুরী নিজের রুম থেকে নিচু গলায় হাঁক ছাড়ছে। গটগট পায়ে গিয়ে উপস্থিত হলো ও। ফাতেমা চৌধুরী রহিমার দিকে তাকিয়ে দরজা বন্ধ করতে ইশারা করলো। কথামতো রহিমা কাজটা বড় নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করে দাঁত কেলিয়ে বললো,’ করে দিছি আম্মা।’
তারপর শ্রেয়ার পানে দৃষ্টি মেলে বললো,’ নতুন বধূ বও খাটে। দাঁড়ায় আছো ক্যান?’
ইতস্তত ভঙ্গিতে প্রতুত্তর করে শ্রেয়া–‘ ঠিক আছি খালা। ‘
ফাতেমা গর্জে উঠলেন,’ রহিমা তুই তাইরে নতুন বধূ কইলি কিরে?নতুন বধূ হইব অহমিকা টহমিকা। এই মাইয়া স্বর্ণ চিনে নাকি?’
শ্রেয়া স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলে, ‘ ঠকবাজ চিনি দাদি। ‘
‘ কি কইলি তুই?ঠকবাজ কারে কইলি?এহনই গাট্টি বস্তা বাইন্ধা তুই বিদায় হইবি। আমাগো খাইয়া,পইড়া একটা সাদা চামড়ার দেহ বড় করলি। দশবছর তোরে বিনা পয়সায় পালছি, আমার লগে টক্কর লস?’
‘ আল্লাহ আমার রিযিক দিয়েছেন। আপনারা মাত্র উছিলা ছিলেন। এত অহংকার?এতিমকে ঠকাতে গায়ে লাগে নি?এতিমদের পালেন ভালো কথা, এভাবে খোঁটা দেন কেন?আমি যাবো না। আমার বান্ধবীর বিয়েতে পাক্কা নিমন্ত্রণ পেয়ে এসেছি। আপনার কথায় আমার পাও নড়তে অনিচ্ছুক। ভালো থাকবেন। বুড়ো বয়সে তেজ কমান। ‘
কথাগুলো বলে শ্রেয়া দরজা মেলে চলে আসে। ফাতেমা চৌধুরী ওকে শুধু নিজেদের ব্যবহারে চৌধুরী বাড়ির পুত্রবধূর স্থান দিয়েছিল তা আরো একবার প্রমাণিত হলো। চক্ষু কোটর জলে টইটুম্বুর হয়ে উঠল এক লহমায়।
____________
ঘড়ির কাটা বরাবর নয়টার ঘরে। পিটপিট করে চোখ মেলে রুমে একদল রূপসীর মেলা দেখে শ্রেয়া ধড়ফড় করে উঠে বসল। সন্ধ্যার পর ক্লান্তিতে বিছানায় কোমল দেহ খানি এলিয়ে দিতেই চোখ বুঁজে আসে। তন্দ্রা ভর করে। নিয়ে যায় ঘুমের রাজ্যে। অস্পষ্ট চক্ষে দেখে সবাই সেজেগুজে ফিটফাট। হলুদ শুরু হবে বলে তাড়া দিচ্ছে অনেকে। শ্রেয়া নির্বাক হয়ে গেল স্বয়ং বউ হলুদের সাজে সজ্জিত হয়ে ওর দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। অপ্রতিভ হলো ও। রিনঝিনে স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
‘ কি হয়েছে প্রিয়ু?হলুদ শুরু হয়ে গেছে? তুই সাজুগুজু করে এখানে বসে আছিস কেন নিচে না গিয়ে?কত সময় চলে গেল। ‘
প্রিয়ু সূক্ষ্ম একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে টেবিলের উপর থেকে বড় ঢালা এনে বিছানায় রেখে বললো,
‘ফটাফট তৈরি হ বোন। আমি তোকে ছাড়া বাসর ঘরে যেতেও নারাজ আর এটা তো শুধু হলুদ। ‘
উপস্থিত সকলে বিস্ফোরিত নয়নে চাইল। প্রিয়ু হেসে বলে,
‘ বাসর ঘরের বাহিরে ওকে পাহারাদার হিসেবে রাখব। ঘরে ঢুকাবো নাকি?যা তো শ্রেয়া রেডি হয়ে আয়। ‘
প্রিয়ুকে যত দেখে সবাই তত চমকায়। কেউ এত ভালোবাসতে পারে বান্ধবীকে?অথচ মানুষ বলে স্বার্থ ফুরালে নাকি বছরের পর বছর ধরে অটুট থাকা বন্ধুত্বেও ফাটল ধরে। কিন্তু শ্রেয়া ও প্রিয়ু যেন এর উল্টো উদাহরণ। সবার বন্ধুত্বে প্রয়োজনীয়তা থাকে না, কারো কারো টা নিঃস্বার্থ হয়,ভালোবাসাময় হয়।
শ্রেয়া ঢালার উপরের কাপড় সরিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেল। একদম টুকটুকে লাল কাতান শাড়ি সাথে আর্টিফিশিয়াল লাল গোলাপের গহনা। এগুলো পড়লে তো ওকে প্রিয়ুর চেয়ে অনেকাংশে কম লাগবে না। এমনকি মানুষ ভাববে ওর হলুদ অনুষ্ঠান। ডেকে প্রিয়ুকে দেখালো।
‘ এগুলো মা দিয়েছে শ্রেয়া। মা বললো তোর জন্য ওনি নিজ হাতে শপিং করবেন তাই আমি আর যাই নি। মেয়ের জন্য মা শখ করতেই পারে তাই না?’
এতো ত্যাগ!নিজের মা’য়ের ভাগ পর্যন্ত দিয়ে দেয় এই মেয়ে। শ্রেয়া একটু ভেবে বললো,
‘ কিন্তু এগুলো মানে এরকম কেন দিবে?আমাকে বউ ভাববে না মানুষ? ‘
প্রিয়ু ফিক করে হাসল। কর্ণকুহরে ফিসফিস করে বললো,
‘ লাগলে যেই পাত্র তোকে চাইবে তার হাতেই তোকে তুলে দিব। তূর্য স্যার ডিলিট। ‘
#চলবে,,!