সন্ধি_হৃদয়ে_হৃদয়ে,২৬,২৭

0
1124

#সন্ধি_হৃদয়ে_হৃদয়ে,২৬,২৭
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব___২৬

‘ বাহির থেকে আসার সময় দেখলাম একটা ছেলে একটা মেয়েকে হয়ত ছেলেটার গার্লফ্রেন্ড হবে,মেয়েটাকে অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। জড়িয়ে ধরবার পর ছেলেটার মুখের ভঙ্গি দেখে মনে হলো বিষয়টা খুবই তৃপ্তিদায়ক। সেই মুহুর্তে মনে পড়ে,আমার তো একটা বউ আছে। বউয়ের উপর এক্সপেরিমেন্ট করে দেখতে হবে। তাই তোমাকে বুকে টেনে নিলাম। আর তুমি সুযোগ বুঝে আমার চুল ছিঁড়ে ফেলছো?বিন্দুমাত্র স্পর্শে এত উত্তেজিত হলে চলবে?দুপুরের গোসল টা দেওয়া কিন্তু এখনও বাকি। তবে কি শুরু করবো?’

গাঢ়,ফিচেল স্বরে উচ্চারিত অক্ষরগুলো অনায়সে শ্রেয়ার শ্রবণগ্রন্থি উত্তপ্ত করে তুলে। হৃদযন্ত্র থমকে যায় ক্ষণিকের নিমিত্তে। হাতের করপুট ঢিলে করে সরিয়ে আনে ঝটপট। মুক্ত করে দেয় তূর্যর চুলগুলো। কি ভেবেছিল,কি হলো!লজ্জায় আরক্তিম হয়ে উঠলো শুভ্র মুখ খানি। এক মুহুর্তের জন্য ভেবেছিল তূর্য ওকে আপন করে নিবে কিন্তু আশার প্রতিফলন হলো না। উল্টো একরাশ অস্বস্তি, লজ্জায় ডুবিয়ে দিল ওকে। অভ্যন্তর অস্থিরতায় ভরিয়ে দিল। দুই হাত ছড়িয়ে রাখল দু পাশে। তূর্য তখনও মুখ টা শ্রেয়ার কর্ণকুহরের অভিমুখে রেখে গরম নিঃশ্বাস বিমোচন করে চলছে। তার খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির ছোঁয়ায় কেঁপে কেঁপে উঠছে শ্রেয়ার কন্ঠনালি, অন্তঃস্থল। আবেশে বারংবার চক্ষু মুদে আসছে। একটা সময় আবিষ্কার করে তূর্য বাহুবন্ধনী হতে সরিয়ে দিয়েছে ওর দেহ টা। কিন্তু মন যেন লেপ্টে গিয়েছে মানুষ টার প্রশস্ত শক্তপোক্ত বুকে। এত শান্তি, সুখ শ্রেয়া কখনো পায় নি,কখনো না।

তূর্য ভ্রুঁ যুগল উঁচিয়ে চাইল চোখ বুঁজে থরথর করে কাঁপতে থাকা শ্রেয়ার পানে। বৃদ্ধাঙ্গুল কাছে নিয়ে তুড়ি মেরে ভেঙে দিল শ্রেয়ার ধ্যান, মগ্নতা, ভাবনার দেয়াল। চট করে নেত্রদ্বয় মেলে সামনে তাকায় ও। তূর্য দাঁড়িয়ে তুখোড় দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ওর দিকে। স্থির,নিষ্পলক চক্ষু দৃষ্টি। অস্বস্তিতে বিছানা ছাড়তে নিলে শোনা গেল অতীব পরিচিত, চিরাচরিত কন্ঠস্বর,
‘ আমি কিন্তু প্রেম মিশিয়ে বুকে টানি নি,জাস্ট এক্সপেরিমেন্ট ছিল।’
শ্রেয়া বিছানা ছেড়ে অন্যদিকে মুখ করে দাঁড়াল। বাক্যটা ধারালো ছুরির ন্যায় গিয়ে বিঁধল ওর কোমল হৃদয়ে। মলিন, নিষ্প্রভ স্বরে জড়তা ছাড়াই প্রতি উত্তর করে,
‘ জানি স্যার। ‘
তক্ষুনি তূর্যর পাল্টা প্রশ্ন,
‘ আর কি কি জানো তুমি?’
‘ আপনি যা যা বলেছেন এসবই জানি। ‘

শ্রেয়া নিঃসংকোচ জবাব দিতেই তূর্যর ওষ্ঠ কার্ণিশে হাসির দেখা মিলে। শ্রেয়া তীররেখা নজরে দেখে তা। কেমন বাঁকা, রহস্যময় সেই হাসি। পরিস্থিতি পাল্টানোর জন্য জায়গা ত্যাগ করলে ভালো হবে ভেবে পা বাড়ায় ও বারান্দার দিকে। তবে বারান্দায় আর যাওয়া হয় না। ঝড়ের বেগে এসে তূর্য ওর হাত ধরে আঁটকে দিল। বাড়িয়ে দিল শ্বাস প্রশ্বাসের গতিবিধি। সোফায় বসিয়ে দিয়ে নিজে বসল খাটে বালিশে হেলান দিয়ে।

বিমূঢ়তায় বাক হারা শ্রেয়া। কি হলো অকস্মাৎ! ওকে বসালো সোফায়,নিজে বসল গিয়ে খাটে। কেন?হঠাৎ এটা করার কারণ কি?আবার চেয়ে আছে নির্নিমেষ চক্ষে। নিশ্চুপে,নিরবে থাকতে পারল না ও বেশিক্ষণ। মৃদু,রিনঝিনে কন্ঠে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল,

‘ আপনি কি কিছু বলবেন?’
তূর্যর দায়সারা জবাব,’ না। বলবে তো তুমি। ‘
‘ আমি?’— অবাক হলো শ্রেয়া। জিজ্ঞেস করলো বিস্মিত স্বরে।
বেজায় বিরক্ত তূর্য। চোয়াল শক্ত করে কয়েক পলক চেয়ে বলে ওঠে,’ তুমি সকালে বললে কিছু বলতে চাও। দুপুরে শুনবো বলেছিলাম। সো নাও স্টার্ট। সময় শুধু চার মিনিট। ‘

দোনোমোনো করছে শ্রেয়া। তূর্য কথাটা মনে করিয়ে দিতেই ওর বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেল। সকালে বর্ণগুলো সাজিয়ে সজ্জিত করে রেখেছিল তূর্য কে বলার জন্য। কিন্তু তার করা কিয়ৎক্ষণ পূর্বের কার্যকলাপ সেই শব্দাংশ, অক্ষর অবিন্যস্ত করে দেয়। অন্তঃকরণে সৃষ্ট করে তোলপাড়। কিন্তু কথাগুলো বলা যে অত্যধিক জরুরী। অপর মানুষ টা যা-ই ভাবুক,সাজায় না কেন নিজের দিক হতে একবার হলেও সাফাই গাওয়া উচিত। কারণ একপক্ষের চিন্তা ভাবনা মানুষের ধারণা আরো শক্তিশালী করে তুলে, কিন্তু দুই পক্ষের কথা,ভাবনা বিবেচনা করলে ধারণায় যত ভুল থাকে তা বিলীন হয়ে যায়। তাই অপর মানুষ টা ভুল বুঝুক কিংবা সঠিক তবুও নিজের তরফ হতে একটা বার মনের জমায়িত কথাগুলো ব্যক্ত করা প্রয়োজনীয়।

শ্রেয়া উসখুস করে নিজেকে সামলাতে নিমগ্ন হলো। তন্মধ্যে কাটিয়ে দিল দু,দু’টো মিনিট। দৃষ্টি মেঝেতে নিবদ্ধ রেখে কন্ঠে দৃঢ়তা টানলো,
‘ স্যার আপনি আমার ব্যাপারে সবটাই জানেন। অতীত,বর্তমান সব। তবুও আমি একবার আমার মুখে আমার অনুভূতি গুলো প্রকাশ করতে চাই। অতীত টা ভালো ছিল না। আমরা যেই ভাড়াটে বাসাটায় থাকতাম সেটা ছিল প্রায় বস্তির কাছাকাছি। আব্বুর অসুস্থতার পর পরই আর্থিক সমস্যাজনিত কারণে আম্মু এরকম একটা বাসায় উঠে। নানুর বাড়ি,খালার বাড়িতে সবার সাথে যোগাযোগ করে আম্মু কিন্তু কেউ আমাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে নি। কখনও কোনো আত্মীয়দের মুখ আমি দেখি নি। জন্মের পর যখন বুঝ হলো তখন থেকেই জানি আপন বলতে আম্মু আর আব্বু। কিন্তু আব্বু ছিল পাগল। বাহিরে খেলতে গেলে কেউ আমার সাথে খেলত না। বস্তির ছেলেমেয়ে পর্যন্ত আমাকে ব্যঙ্গ করে বলত আমি নাকি নোংরা কারণ আমার বাবা পাগল। ওদের মা-বাবারা আমার সামনে,আম্মুর সামনে বলত পাগলের মেয়ের সাথে মিশবি না। পরে কিছু হলে ওর পাগল বাপ এসে আমাদের মার*ব। একা একা সময় কাটাতাম। আম্মু কে দেখতাম লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদে। কখনও কখনও আম্মুর সেই কান্না চিৎকারে পরিণত হতো।

বাসা টা ভালো না হলেও ভাড়া ছিল অনেক। আম্মু মানুষের বাসায় কাজ করে সেই ভাড়া মিটাত। আব্বুকে একটা ভালো ডাক্তার দেখাতে পারত না টাকার অভাবে। জীবনের জটিল পরিস্থিতি আমাকে সাত বছর বয়সে কেমন বড় করে দিল। ওই বয়সেই আমি কত সুন্দর ও নিখুঁতভাবে অনুভব করতে পারতাম আম্মুর কষ্ট, আব্বুর বেদনা। মাথায় হাত চেপে কত চিৎকার চেঁচামেচি করত আব্বু। বন্ধ রুম থেকে বাহিরে আসার জন্য ছটফট করত। এমনও দিন গিয়েছে আম্মু খাবার দিতে গেলে তার গলা চেপে ধরে মে*রে ফেলার চেষ্টা করে আব্বু। অথচ আম্মু আমাকে রূপকথার গল্পের মতোন তাদের প্রেমকাহিনী শুনাতো। বলত,জানিস শ্রেয়সী তোর আব্বুর মতো পুরুষ আমি দু’টো দেখি নি। এত ভালোবেসেছে লোকটা,সেই ভালোবাসার টানে না এসে পারলাম না। আমি তখন মন খারাপ করে বলতাম আম্মু আব্বু তো ভালো না,তোমাকে মা’রতে চায়। আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে পাগল তো তাই সঠিক, ভালো মন্দ বুঝে না মা। চিকিৎসার জন্য অনেকের কাছেই সাহায্য চায় আম্মু। কেউ করে নি। কারণ সবাই জানে বড় ধরনের টাকার পরিমাণ শোধ করা আম্মুর পক্ষে সম্ভব না। ‘

শ্রেয়ার কন্ঠনালি ভিজে গেছে। অশ্রুসিক্ত আখিঁদ্বয়। থেমে না থেকে কান্নায় দলা পাকানো কন্ঠে বলতে থাকলো,

‘ যেদিন আব্বু আম্মুকে খু*ন করে তার নিথর,রক্তাক্ত দেহটা ফেলে রাখে সেটা শুধু আমি দেখি। চোখ গুলো মেলে স্পষ্ট তাকিয়ে ছিল আম্মু কিন্তু দেহে প্রাণ ছিল না। আর আব্বু আম্মুর লা*শের সামনে বসে ভয়ংকরভাবে হাসছিল। খু*ন করে যেন খুব খুশি হয়েছিলেন তিনি। ভয়ে দম বন্ধ হয়ে আসছিল আমার। আব্বু কে যেই রুমে বন্দী করে রাখা হতো সেই রুমের দরজা খোলা দেখতে পাই। আমাকে দেখে হাতের বটি টা নিয়ে ওঠে আসে আব্বু। এগিয়ে আসতে আসতে প্রলাপ করে,” আয় আয় তোকেও খু*ন করি। ” বিশ্বাস করেন স্যার ওই মুহুর্তে আমি ভয়ে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। বাড়ি ছেড়ে শুধু দৌড়ে যেখানে দু চোখ যায় ছুটে চলেছি। মাথায় শুধু ঘুরছিল হাতের নাগালে পেলে আব্বু আমাকে ওই বটি দিয়ে কে*টে ফেলবে। সেই যে বেরিয়ে আসি তারপর ঠাঁই হয় আপনাদের এতিম খানায়। সেখান থেকেই মাদারের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আব্বু আত্ম*হত্যা করেছেন।

জন্মের পর থেকে নিজের বাপ কে পা’গল,আর্থিক জটিলতা,বা’বার হাতে মা’য়ের মৃ*ত্যু,একা একটা জীবন সব মিলিয়ে নিজেকে নিজের কাছে ত্যক্ত লাগছিল। মন চাইত,এই পৃথিবীর মোহ মায়া ছেড়ে আমিও চলে যাই। সুখ,শান্তি, ভালোবাসার,আমার নিঃস্ব জীবনে সঙ্গী সবগুলো খুবই প্রয়োজন ছিল। আপনার দাদি বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর পর আমার মাথায় এসেছিল বিয়ের পর তো আমি এগুলো পাবো। আর কোনো ভয় আমার পিছু নিতে পারবে না। আমাকে আগলে রাখার জন্য কেউ একজন থাকবে। কিন্তু এ বাড়িতে পা রাখার পর যখন ফুলশয্যার মুহুর্তটা এলো,তখুনি আমার সকল চাওয়া নিঃশেষ হয়ে গেল। জীবনে আবারও হেরে গেলাম আমি। পরের সকাল টা আরো তিক্ত হয়। আমার অতীত এসে আমার গলা চেপে ধরে। আব্বু যেন কানের কাছে এসে বার বার বলছিল সেই বাক্যটা, আম্মুকে খু*ন করার পর বটি দেখিয়ে যেটা বলেছিল। আমার মনে হয়েছে আমি ম*রে যাবো,এবার আর বাঁচব না৷ এখান থেকেও পালাতে হবে আমার,যেভাবেই হোক। নয়ত আপনিও আমাকে মে’রে ফেলবেন। সত্যি বলছি স্যার,আমি অর্থের লোভে এ বাড়ির বউ হয়ে আসি নি। শুধু একটা লোভেই এসেছিলাম, ভালোবাসার লোভে। এটা কি খারাপ স্যার?এটা চাওয়া ভুল?মানুষ কেবল নিজেরা কঠিন পরিস্থিতিতে পড়লে অন্যের কষ্ট বুঝতে পারে। এছাড়া সহমর্মিতা দেখায়,স্বান্তনার হাত বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু আমি তো এগুলোও পাই নি। হয়ত এতিম বলে,পাগলের মেয়ে বলে!আমিই খারাপ। ভয়ের তাড়নায় আপনার হাত ছেড়ে দিলাম। আমার উচিত ছিল স্ত্রী হয়ে আপনার পাশে থাকা। অতীতের ভয় আমার মধ্যে এমনভাবে বাসা বেঁধেছিল তা সব শেষ করে দিয়েছে, যার ফল এখনও পাচ্ছি। এ কারণেই আজ আপনি আমাকে দূরে ঠেলে রেখেছেন। আমি কি করবো স্যার?আমার কষ্ট কেন কমে না?আমার নিঃশ্বাস কেন বন্ধ হয় না? হলে তো সবকিছুর সমাপ্তি ঘটে যেত। বুঝ মনে কখনও কোনো পা’প করি নি,কেবল আপনাকে ছেড়ে যাওয়া ছাড়া। আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে আমার,আপনি ক্ষমা করে দিলে মুক্তি পাবো। দয়া করে,,

কাজলমাখা আঁখিদ্বয় ভেদ করে টপাটপ অশ্রু শাড়ির কোল ভিজিয়ে দিচ্ছে। থেমে থেমে যাচ্ছে ক্রন্দনরত কন্ঠস্বর। বিবর্ণ আঁধারে ছেয়ে গেছে শ্রেয়ার মুখশ্রী। সেকি বিধস্ত ভাব চেহারায়! কন্ঠনালি গলিয়ে বারংবার কান্নার আওয়াজ প্রবেশ করছে তূর্যর শ্রবণ নালিতে। তবুও গম্ভীর কন্ঠের প্রশ্ন,

‘ পালালে কেমন করে?’

#চলবে,,,!

#সন্ধি_হৃদয়ে_হৃদয়ে
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব___২৭

চক্ষু গহ্বর থেকে জল গড়িয়ে যাচ্ছে অবলীলায়। অকস্মাৎ প্রশ্নে শ্রেয়ার কন্ঠনালিতে রোদনের শব্দ আটকে গেলেও ,সে বিস্মিত। তূর্য এমন প্রশ্ন করবে ভাবে নি ও। বিধস্ত,রক্তিম মুখ তুলে টলমলে,লালচে নয়ন যুগল নিক্ষেপ করলো বিছানায় বসা ভাবলেশহীন তূর্যর দিক। কপালে কতশত ভাঁজ ফেলে চেয়ে আছে ওর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টে। গলা ভেজা ভেজা শ্রেয়ার,কম্পন বিশদ,

‘ রহিমা খালার কাছ থেকে জানতে পারি আপনি এক বছর ধরে পাগ’ল। এটা শোনার পর বার বার বাবা মায়ের পরিণতির কথা মনে পড়ছিল। আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়। তখন রুমে কেউ ছিল না। আমার জ্ঞান ফেরার পর আয়ুশ ভাইয়া ও বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের ডাকতে বেরিয়ে যান তিনি। এ সুযোগে আমি দুর্বল দেহে সিঁড়িঘর পর্যন্ত আসি। উদ্দেশ্য যে করে হোক এ বাড়ির চৌকাঠ পেরিয়ে এতিমখানায় যেতে হবে। মাদারকে জিজ্ঞেস করতে হবে কেন জেনে শুনে আমাকে আবার আমার অতীত ফিরিয়ে দিল?কেন আমার জীবনের সবথেকে বড় ভীতির দিকেই আমাকে ঠেলে দিল?সিঁড়ির কাছ পর্যন্ত যেতেই দেখি নিচে তেমন কেউ নেই। আমি বিয়ের রাতেই দেখেছিলাম কোনো মেহমান নেই কারণ আমাদের বিয়েটা সম্পূর্ণ ঘরোয়া ভাবে হয়েছিল। একজন সার্ভেন্ট ছিল তিনি চলে যেতেই সাথে সাথেই বেরিয়ে যায় আমি। গেইটে গিয়ে দেখি দারোয়ান উপস্থিত। আমাকেই দেখেই ভ্রুঁ কুঁচকে নানান প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে শুরু করলেন। কোথায় যাবো,এই বেশে যাচ্ছি কেন,অসুস্থ দেখাচ্ছে হেনতেন। আমি ওনার কথা পরোয়া না করেই সেই এলোমেলো অবস্থায় বেরিয়ে পড়ি। তখন হয়ত ওনি ভিতরে গিয়ে সবাইকে সবটা জানায়। একটা অটো ধরে কোনোমতে আসি এতিমখানায়। আমার কাছে ভাড়া অব্দি ছিল না,এতিমখানার দারোয়ান কাকা এসে মিটালেন। আমাকে এমতাবস্থায় দেখে চমকে গেলেন তিনিও। শরীর টা আর চলছিল না একদম, সেই অবস্থায় গেইটের পাশে মাটিতে বসে পড়ি। উনি মাদারকে ডেকে এনে আরো কয়েকজন মিলে আমাকে ভিতরে নিয়ে যান। আমাকে দেখে সবচেয়ে বেশি অবাক হয় মাদার। একটা কালো আঁধার নেমে এসেছিল ওনার মুখে। কাঁপা কন্ঠে বললেন,” বিয়ের পরের সকালে এভাবে চলে এলাম কেন?কি হয়েছে?”

ফুপিয়ে উঠলাম মাদারের প্রশ্নগুলোতে। দুর্বল কন্ঠে চিল্লিয়ে বললাম,” কি করে আমাকে নর’কে ঠেলে দিলেন মাদার?আমার অতীত জেনেও পাগলের সঙ্গে বিয়ে দিলেন আমাকে। এতিম বলে অবিচার করলেন। ” এসব শুনে ঠিক কতক্ষণ তব্দা খেয়েছিলেন মাদার তার হিসেব নেই। তবে ধপ করে দেহের ভার ছেড়ে দিয়েছিলেন এতিমখানার ছোট্ট বিছানায়। শক্ত,কঠোর মানুষ টার চোখ দিয়ে কি সুন্দর দু’ফোটা জল গড়িয়ে গিয়েছিল,যা আমরা কখনও দেখি নি। হাত বাড়িয়ে আমাকে বুকে জড়িয়ে বলেছিলেন,আমি এসব জানতাম না রে মা। আমাকে ক্ষমা করে দে। তাদের এতিমখানা, সবসময় থেকে উদার মানবিকতার মানুষ হিসেবে চিনি তাদের। কখনও খারাপ কিছু দেখি নি। আর ছেলেটাও সুস্থ ছিল,তার মধ্যে অসুস্থ হয়ে গেছে এসব কিছুই কেউ শুনে নি।
আমি মাদারকে বলি কি করবো এখন?মাদার আমাকে বললেন,যদি ভয় মোকাবেলা করার সাহস থাকে তাহলে ফিরে যেতে। আর যদি না থাকে,নিজের জীবন টা অন্য ভাবে গুছাতে চাই তবে এ শহর ছেড়ে অন্য শহরে পাড়ি জমাতে। কারণ বয়স অনুযায়ী এতিমখানায় থাকার অধিকারও আমার নেই। মাদার চাইলেও নিয়ম নীতির বাহিরে গিয়ে রাখতে পারত না। সিদ্ধান্ত টা আমার উপর ছেড়ে দেন উনি। তখন আমার মধ্যে শুধু ভয় কাজ করছিল তাই কোনোকিছু না ভেবে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ি। মাদার তার পরিচিত একজনের মাধ্যমে সেখানকার এক কোচিং সেন্টারে চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু থাকার জায়গার, পড়াশোনার এসব পারে না। মানুষ টার সামর্থ্যই বা কতটুকু ছিল। সারাজীবন কাটিয়েছে এতিমখানায় বাচ্চাদের রক্ষণাবেক্ষণে। আমার জন্য নিজের চাকরির কথা চিন্তা না করে এতটুকু করেছিলেন তাতেই মনে হচ্ছিল আমার না পাওয়ার ভিড়ে কিছু মুহুর্তের জন্য হলেও একজন মা পেয়েছি যে প্রকৃত অর্থেই আমার ভালো চেয়েছে। ‘

তূর্য বিছানা ছেড়ে মোবাইল হাতে নিয়ে পড়ার টেবিলের সামনে থেকে চেয়ার টা টেনে শ্রেয়ার মুখোমুখি রাখল। বসল তাতে। মাঝে দূরত্ব হিসেবে রইল ছোট্ট টি টেবিল খানা। শ্রেয়া কথা থামিয়ে দিতেই শীতল কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
‘ ব্যাস এতটুকুই?’
এক মুঠো চমকে ভরে উঠল শ্রেয়ার মন। এত শীতল কন্ঠ!মুহুর্তেই বক্ষস্থলে সমুদ্রের উতালপাতাল ঢেউ গর্জে উঠলো যেন। মাথা নাড়ায় ও। ধরা কন্ঠে প্রতুত্তর করে,
‘ না। আরো কথা বাকি আছে। ‘
তূর্য দেয়ালে টানানো ঘড়িটার দিকে চেয়ে বলে,
‘ চার মিনিটের স্থলে চৌদ্দ মিনিট নষ্ট করলে। আর কতক্ষণ? কেঁদেই পাঁচ মিনিট পার করলে। এত লড়াই করে কি লাভ হলো?সেই দুর্বল শ্রেয়সীই রয়ে গেলে। অতীতের কথা মনে করে না কেঁদে সেগুলোকে নিজের শক্তি বানালেই পারতে। নারী মানেই কি দুর্বল? না। আমি কখনও সেটা ভাবি না। তাহলে তুমি কেন ভাবো?চোখের জল মুছে জলদি বলবে নাকি উঠে যাবো?ভাবলাম এক রাতে কিছুটা হলেও শক্ত হওয়ার শিক্ষা দিতে পারলাম, তাই তো গড়গড় করে সব বলছো। কিন্তু এখন দেখা গেল কাঁদতে কাঁদতে বেহুঁশ হয়ে যাবে। বেঁহুশ হলে আমি কোলে নিব না। এখানেই ফেলে রাখবো। ‘

শ্রেয়া কিভাবে বাকি কথাগুলো বলবে বুঝতে পারছে না। হয়ত এগুলো শোনার পর তূর্যর মনে ওর জন্য ঘৃ*ণা বেড়ে যাবে। ছিটকে দূরে সরিয়ে দিবে ওকে। তবুও লুকিয়ে রাখা সমীচীন হবে না।
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো,
‘ সেদিন পালিয়ে যাবার পর আপনার মা গিয়েছিলেন এতিমখানায় আমাকে ফিরিয়ে আনতে কিন্তু তাদের দেখে আমি পিছনের গেট দিয়ে পালিয়ে যায়। মনে এটাই কাজ করছিল,তারা আমাকে ধরে বেঁধে নিয়ে যাবে। আপনি আমাকে মে’রে ফেলবেন। যে করেই হোক বাঁচতে হবে আমার। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পর কি হয়েছিল আমি আর জানি না। ‘

মাথা নত করে অপরা*ধীর ন্যায় বসে আছে শ্রেয়া। কথাটা বলতে গিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস আটকে যাওয়ার উপক্রম। এখনও নিঃশ্বাস ফেলতে কষ্ট হচ্ছে। তূর্যর দিকে মুখ তুলে তাকাতে পারছে না। অপর পাশ থেকেও কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া আসছে না দেখে অভ্যন্তরে ভয়ানক অনুভূতিরা খেলা করছে। তূর্য কি ওকে জীবন থেকে সরিয়ে দিবে?শুনেছিল অহমিকার স্বার্থপরতার জন্য তাকে ঘৃ*ণা করে। কিন্তু একটা সময় সেই মেয়েটাকে বিয়ে করার জন্য পরিবারকে রাজি করিয়েছে,ভার্সিটি লাইফ থেকেই শুরু হয়েছিল দু’জনার প্রেমকথন। তাকে যদি মনেপ্রাণে শুধু একটা কারণবশত ঘৃ*ণা করতে পারে তাহলে ওকে জীবন থেকে ছিটকে ফেলে দেওয়ার তো কতগুলো কারণ রয়েছে।

তূর্য টি টেবিলে মোবাইলটা রেখে গম্ভীর কন্ঠে বললো,
‘ কথা এখনও অসমাপ্ত রয়ে গেল শ্রেয়সী। তোমার ফিরে আসার গল্পটা বলবে না?আমি এত দরদী মানুষ দেখতে পারি না। এতই যখন পরিবারের মর্ম বুঝো, স্বামীর গুরুত্ব বুঝো না?স্বামীর কাছ থেকে কিছু লুকাতে নেই সেটা জানো না?যার সাথে প্রতি পদে পা রাখতে হবে তোমার,মৃ*ত্যু অবধি একসঙ্গে নিঃশ্বাস ফেলতে হবে তার কাছে নিজেকে খোলামেলা করে, নিজের মনটাকে উন্মুক্ত করে মেলে ধরা উচিত না?’

শ্রেয়া স্তব্ধ, কিংকর্তব্য বিমূঢ়! দৃষ্টি অবিচল। তূর্য কেমন করে জানলো?ওর মনের প্রশ্ন টার উত্তর সরাসরিই দিয়ে দিল তূর্য। কন্ঠে কঠোরতা এঁটে বললো,

‘ আমি সুস্থ হবার পর অহমিকা কে নিজের কাছে পাই। কিন্তু তখন সে আমার ঘৃ*ণার তালিকায়। কিন্তু মা উঠে পড়ে লেগেছে ওকে বাড়ির বউ বানানোর জন্য। চট্টগ্রাম যাবার আগের দিন রহিমা খালা এসে আমাকে বিয়ের সত্য জানায়। ওনার কাছে মনে হতো ওনার জন্যই তুমি চলে গিয়েছো। ভীষণ অনুশোচনায় ভোগেন। আমি প্রথমে অবাক হই বিবাহিত জেনে। আসলে আমার পরিবার আমার মানসিক অবস্থার সুযোগে একটা অচেনা,অজানা মেয়ের সাথে বেঁধে দিল এটা ঠিক মানতে পারছিলাম না। সেই সাথে তীব্র রাগ হচ্ছিল কি করে নিজের স্বামীকে কেউ ছেড়ে যেতে পারে!পাগল হলেই ছেড়ে চলে যাবে!মানুষ ঠকা*লেও কেউ স্বামীর ভাগ ছেড়ে চলে যেতে পারে!তোমাকে ঠিক অহমিকার মতো মনে হচ্ছিল সেই মুহুর্তে। অজান্তেই অনেক বেশি ঘৃ*ণা জন্ম হয় তোমার জন্য। পরে যখন জানতে পারি তুমিই আমার বউ তখুনি তোমার বর্তমান আচরণে মনে হলো মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ থাকে। একটাবার ভালো করে খোঁজ নিয়ে দেখি। তোমার অতীত,বর্তমান সম্পর্কে সবটা জানলাম। আর প্রিয়ু আয়ুশের বিয়ের আগের দিন জানলাম তোমার ফিরে আসার গল্পটা। দারোয়ান কাকা বলতে চায় নি,তবে আমার কাছে লুকিয়ে চুরিয়ে পারবেন না তিনি সেটা খুব ভালো জানতেন। ফিরে এলে ঠিকি কিন্তু লড়াই করে টিকতে পারলে না। আমি আগেও বলেছি তুমি আমার ঘৃ*ণার তালিকায় যোগ হতে পারো নি। আমার অর্ধাঙ্গিনী হতে পেরেছো। চোখ বুজার,শেষ নিঃশ্বাস ফেলার আগ পর্যন্ত তোমাকে ছাড়ছি না আমি। ভেবো না আবার ভালোবাসি। তুমি যেদিন গাধী থেকে ব্রিলিয়ান্ট হবে সেদিন তোমার কিছুই ভাবতে হবে না,দেখবে সবটুকু পানির মতোন পরিষ্কার। ‘

‘ আপনি আম্মাকে কিছু বলবেন না তো?’— প্রশ্ন টা করে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালো শ্রেয়া। তূর্য নিরুত্তর থেকে ওকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। মেসেজের টুংটাং শব্দে টি টেবিলের উপর অবহেলিত হয়ে পড়ে থাকা মোবাইল টার দিকে দৃষ্টি তাক করলো শ্রেয়া। নিমেষে দেহে,রন্ধ্রে রন্ধ্রে তরঙ্গ খেলে গেল। ওর প্রথম বার, তিন বছর পূর্বের বধূ বেশে রূপের একটা ছবি জ্বলজ্বল করছে তূর্যর লক স্ক্রিনে। দোপাট্টা টা লম্বা করে টানা। কয়েক গাছি চুল বেরিয়ে কপোল ছুঁয়ে আছে। ঠোঁট রাঙানো লাল বর্ণে। চেহারা জুড়ে লাজুকলতার আবরণ। কি মোহনীয় ছিল সেই সময়টা! মন জুড়ে ছিল জীবনসঙ্গী কে দেখার ভাবনা, হাজারো জন্ম নেওয়া অনুভূতি। কিন্তু এ ছবিটা পেল কোথায় মানুষ টা?ওর যতটুকু মনে পড়ে এই বাড়িতে আসার পর পর ছবিটা আয়ুশী তুলেছে। তাহলে কি আয়ুশীই দিয়েছে? হতে পারে,মেয়েটা একটু চঞ্চল ধরনের। তবে ছবিটা তূর্যর লক স্ক্রিনেই কেন?এখন প্রশ্ন করলে এক কথা থেকে আরেক কথা টানবে, তাই চুপ থাকাই শ্রেয় ঠেকল ওর নিকট। তূর্যকে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে ঝটপট দৃষ্টি সরিয়ে অন্যত্র নিবদ্ধ করলো। তবে আঁড়চোখে বিঁধে তার হাতে একটা মগ,তাতে বোধহয় পানি ও অন্য হাতে একটা নরম তোয়ালে।

তূর্য মগ ও তোয়ালে নিয়ে ওর সামনে বসে আদেশের সুরে বলে,
‘ মোবাইলটা সোফায় রাখো। ‘
কথামতোন রাখল শ্রেয়া। ঠোঁট দুটো একটুখানি প্রসারিত করে প্রশ্ন করলো,
‘ পানি কেন স্যার?’
সঙ্গে সঙ্গেই জবাব এলো,’ তোমার চেহারা দেখে ভয় পাচ্ছি আমি। কাজল মেখে শাঁকচুন্নি লাগছে পুরো। হার্ট অ্যাটাক হবার আগেই নিজেকে বাঁচাতে পানি নিয়ে আসলাম মুছে দিতে৷’

শ্রেয়া দুই অধর আলগা হয়ে এলো। উঠে যেতে নিলে হাতে টান অনুভব করে। চেয়ে দেখে তূর্য চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে। ভয়ে ভয়ে বসে পড়লো পুনরায়। সে তো আয়না দেখবার জন্য উঠতে চাইছিল। তূর্য তোয়ালে ভিজিয়ে মুছে দিল ওর সারা মুখশ্রী অতি যত্নে। শুধু স্বামীর হক পালন করে বলেই এত যত্ন,আর যদি ভালোবাসত?শ্রেয়া এ মুহুর্তে একটা ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নিল। যে করেই তূর্যর মনে নিজের জন্য ভালোবাসা জাগাবে,ভীতু হয়ে দূরে দূরে সরে থাকবে না। পাথরেও তো ফুল ফোটে,তূর্য তো মানুষ। ভালোবাসা হাসিল করেই দম নেবে ও। কিন্তু একটা কথা মনে পড়তেই বলে,
‘ বললেন না তো,আম্মাকে কিছু বলবেন না স্যার প্লিজ। ওনি কষ্ট পাবেন। ‘
‘ মহান উদারতার নানী আমি বলেছি বলব?বেশি কথা বলো তুমি। চুপ থাকো। ‘– ধমকে উঠলো তূর্য।

মুখ মুছে দিয়ে ফের বললো,’ বাহিরে যাও। ‘
শ্রেয়া তড়িঘড়ি করে বলে উঠলো, ‘ কেন স্যার?’
‘ নতুন বউ রুমে বেশিক্ষণ বসে থাকলে মানুষ কি ভাবে জানো না?এই তুমি অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ো?মাথার ঘিলু এত কম। ‘
তূর্য একটু ঝুঁকে এসে গাঢ় কন্ঠে আওড়ালো,’ মানুষ বলবে আমি তোমাকে বেশি বেশি আদর করছি। এতই আদর করছি যে রুম থেকে বের হতে পারছো না। সত্যিই কি তাই?’

শ্রেয়া চট করে সোফা ছেড়ে দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়াল। মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে সাহস জুগিয়ে মিনমিন করে বলেই ফেলল,’ সত্যি হলেও পারত স্যার। ‘

তূর্য ভ্রুঁ কুঁচকে বললো,’ কি বললে?’

‘ কিছু না। ‘
উত্তর দেওয়া মাত্র শ্রেয়ার কর্ণে এলো,
‘ দুর্বল চিত্তের মেয়েদের আদর নেওয়ার শক্তি থাকে?আগে হরলিক্স,কমপ্লেন খেয়ে শক্তি জোগাও। ‘

#চলবে,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here