#সন্ধি_হৃদয়ে_হৃদয়ে,৪৪,৪৫
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব___৪৪
মেহরিমার কন্ঠ থরথর করে কেঁপে ওঠে। গলায় ভেজা ভেজা ভাব। চোখের চাউনিতে দ্বিধা,অসহায়ত্ব। তিনি কখনও এমন চান নি। এমনকি আজ অব্দি মনে মনেও একটা খারাপ ভাবনা আনেন নি তোহাশের জন্য। বরঞ্চ প্রাণ ভরে দু হাত তুলে শুধু তার মঙ্গল কল্যাণই চেয়ে গিয়েছে। এ বাড়িটা পুনরায় ভরে উঠুক তা চেয়েছে। নুরুল চৌধুরীর মুখের দিকে আঁড়চোখে তাকালেন। তাঁর মুখোভঙ্গিও স্বাভাবিক নয়। প্রবল উত্তেজনা, চিন্তা স্পষ্টত। মেহরিমা সাবলীল গলায় বললেন,
‘ তিতিসা তো আরিয়ানার-ই মেয়ে। ‘
‘ আরিয়ানার মেয়ে কিন্তু ওর গর্ভ থেকে জন্ম নেয় নি। তিতিসা সারোগেট বেবি। মিসক্যারেজের পর জটিলতা দেখা দেয় আরিয়ানার। ডাক্তার জানান আরিয়ানার গর্ভ বেবির জন্য উপযুক্ত নয়। এতে অত্যন্ত রিস্ক। তাই অন্য মাধ্যমে বেবি নিতে বাধ্য হই আমরা। সবাই বাবা-মা হতে চায়। আমরাও চাই। সেকারণে সারোগেসি পদ্ধতি ব্যবহার করি। তিতিসা আরিয়ানার মেয়ে কিন্তু অন্যের গর্ভে জন্ম নেওয়া। এটা পর হওয়ার মতো না?আমিও তো অন্য কারো গর্ভের। তবুও তুমি আমাকে আপন করেছো। তিতিসার বেলায়ও ঠিক তা। আরিয়ানা মানসিক দিক থেকে অসুস্থ সেটা আমি কানাডা যাওয়ার পর টের পাই। এখানে ওর দো’ষ নেই। সম্পূর্ণ অপ’রাধী আমি। একটা মেয়ে বললেই কেন আমি মায়ের স্নেহ ত্যাগ ভুলে তার মোহে ভেসে যাবো?তার মানে ঘাটতি আমার মাঝে রয়েছে। আমি এ বাড়ি ছেড়ে হারে হারে টের পেয়েছি আপনজনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে কতটা কষ্ট হয়। দয়া করে সম্পত্তি ভাগ করতে হবে না৷ আমাদের এই বাড়ির এক কোণায় রাখলেই হবে মা। তবুও আমার আর কিছুই চাই না। ‘
কথাগুলো বলে তোহাশ নুরুল চৌধুরীর দিক ছলছল দৃষ্টি মেলে ধরে পুনর্বার বলে, ‘ কিছু লাগবে না বাবা। শুধু শোধরানোর সুযোগ টুকু দিলেই চলবে। আমরা আমাদের শা’স্তি পেয়েছি। আরিয়ানার সুস্থ হতে সময় লাগবে। ওকে একটু সময় দিও। তোমরা ওর ব্যবহারে কষ্ট নিও না প্লিজ। ‘
তোহাশ নিজের কথা ব্যক্ত করে উপরে চলে এলো। দেখল আরিয়ানা চক্ষুকোটরে জল নিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে চেয়ে আছে। হাতের মুঠোয় পুরে রেখেছে ওড়নার কিছু অংশ। তোহাশের বুকটা ধ্বক করে উঠলো। সে নিরুপায় ছিল। ভীষণ অসহায়। একদিকে পরিবার অন্যদিকে স্ত্রী। আরিয়ানার কথা মোতাবেক তাকে সম্মান দিয়ে এ বাড়িতে এনেছে তবুও মেয়েটা থাকতে চাইছে না।
এখানে এসে বারংবার ভয়ে সেঁটে যাচ্ছে। হারিয়ে ফেলার ভয়। ওর হাত টা ধরে রুমে নিয়ে এলো। দরজা লাগিয়ে ওকে বিছানায় বসালো। নিজে বসে নিচে। বিছানায় তিতিসা নিশ্চিন্তে ঘুমে মগ্ন। যদি মেয়েটার ঘুম ভেঙে যায়?সে কারণবশত তোহাশ নিচু,মোলায়েম স্বরে বললো,
‘ তোমাকে বুঝাতে বুঝাতে হাঁপিয়ে গেলাম তবুও আমি তোমাকেই চাই। শুধু তোমাকে না,আমার পরিবারকেও চাই। তুৃমি তো আমাকে খুব ভালোবাসো। বিশ্বাস করো আমাদের কেউ কেঁড়ে নিবে না,কেউ না। একবার তো তোমার জন্য সব ছেড়েছি। এবার নাহয় আমার জন্য এখানে থাকো। প্লিজ। ‘
আরিয়ানা নিরুত্তর। আঁখিপল্লব নড়ছে তিরতির করে। হয়ত রোদন আটকানোর প্রয়াস। তোহাশ নিজের সুপুষ্ট হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল আলতো, খুব আলতোভাবে ঘষে দিল কোমল ত্বকে,চোখের নিচের কালো অংশে। এই যে ওর সামনে মেয়েটা বসে আছে। একদিন হয়তো তারও আপনজনের সান্নিধ্যের আশা ছিল৷ কিন্তু কিছু মারাত্মক, নিকৃষ্ট ভীতি ওর মনের মায়া,ভালোবাসা অতল গভীরে ডুবিয়ে দিয়েছে। এখন সে শুধু বুঝে নিজ স্বার্থ। এতেও লুকায়িত আছে ভালোবাসা, মমতা কিন্তু মেয়েটা সেটা সম্পর্কে অবগত নয়।
মেঝে ছেড়ে আরিয়ানার পাশে বসলো তোহাশ। ওর মাথা টা বুকের বা পাশে ধরে বললো,’ একটু কষ্ট করো। তারপর দেখবে এত শান্তি পাচ্ছো যে নিজেই অবাক হয়ে যাবে। পুরোনো তুমিকে দোষারোপ করবে আগে কেন এমন ছিলে,কেন আপনজনের সাথে থাকা হয় নি তা ভেবে। ‘
পরিবারের সবার নিকটস্থ আরিয়ানার অসুস্থতার ব্যাপার টা খোলাখুলি করলো তূর্য। শুনেই কেঁদে দিলেন মেহরিমা। নুরুল চৌধুরী কেবল দীর্ঘ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন। উকিল সাহেবকে বিদায় দিয়ে সবাইকে আদেশ করে গুরুগম্ভীর ভাব আঁটলেন কন্ঠে। জানালেন সবাই যেন আরিয়ানার সাথে ভালো ব্যবহার করে। আগে বুঝলে হয়তো কিছুটা সুস্থ হতো এতদিনে সে। কিন্তু পরিস্থিতি কারোই অনুকূলে ছিল না। শ্রেয়া অত্যন্ত খুশি হলো শশুর মশাইয়ের আদেশ শুনে। সেও চায় একটা মানুষ যতই খারাপ হোক তাকে একটা ভালো হওয়ার সুযোগ দেবার। তাই বলে বার বার নয়,স্রেফ একবার।
ফাতেমা চৌধুরী দুর্বল গলায় বলে উঠলো,’ তোরার যা ভালা লাগে কর। তাও যদি ওই ডা’ই’নি শোধরায়। ‘
নুরুল চৌধুরী নম্র কন্ঠে হাঁক ছাড়লেন, ‘ আম্মা। ‘
‘ আম্মা কি?কথা কইবি না। তোরার মতোন আমার ভিতরে এত দরদ নাই। ‘
মেহরিমা ঠান্ডা গলায় বললো,’ তবুও আপনি কিছু বলবেন না আম্মা। মেয়েটার ভালো ব্যবহার প্রয়োজন। ‘
‘ বাহ!তুমি কইতাছো বউ। যাক তোমার মনটা নরম হইলো। আসলে কি জানো?তোমার ছোট পোলার বউটা আস্ত মাখন। তার ভালা ভালা আচরণে এ বাড়ির সবার, তোমারও মন গলে গেল। আজ আমার নিজের উপর গর্ব হইতাছে এই মাইয়ারে তূর্যর বউ কইরা আইন্না। তোমার পোলা বউ পাইয়া এত খুশি, এহনও আমারে একটা ধন্যবাদও দিল না। ‘
তূর্য ভুরু কুঁচকে তাকালো। অধর জুড়ে হাসি। ঠোঁট ক্ষীণ বাঁকিয়ে বললো,’ ধন্যবাদ ফাতু। আমার বউও বলতে হবে?’
নুরুল চৌধুরী ও আয়ুশের বাবা মুখ লুকিয়ে হেসে উঠে গেলেন। মেহরিমাও ত্রিহাকে নিয়ে রান্নাঘরে গেলেন। দুপুরে তোহাশ খায় নি। ফাতেমা ভেংচি কাটলো, ‘ না না। আপনার বউকে বলেন তার মিষ্টি হাতে আমারে একখানা পান বানাইয়া খাওয়াইতে। ‘
রহিমা পাশ থেকে বললো,’ আম্মা আমি বানাই দেই?’
রেগেমেগে উঠলো ফাতেমা,’ তোরে বলছি?’
মৃদু হেসে শ্রেয়া পানের ভাটা আনতে চলে গেল। তূর্যর রসকষহীন স্বর,’ সুযোগে আমার বউকে খাটানো। এই মহিলা পরিবর্তন হবে না। ‘
সকলে ড্রইং রুম ছাড়লেও ফাতেমা,রহিমা ও প্রিয়ু রইয়ে গেল। খানিক সময় বাদে শ্রেয়াও আসে পানের ভাটা নিয়ে। ওকে আসতে দেখে ফাতেমা দ্রুত বললো,’ তাড়াতাড়ি আয় মাইয়া। ওই প্রিয়ু তুইও আয়। দু’জন আমার দুই সাইডে বইয়া পড়। জরুরি কথা আছে তোরার লগে। ‘
হতবিহ্বল নেত্রে একে অপর পানে তাকায় প্রিয়ু ও শ্রেয়া। দু’জনেই ফাতেমার দু পাশে বসে পড়লো। মোক্ষম সময় লুফে নিজের কথা পাড়লো সে। ফিসফিস করে বললো,’ সামনের লাইগা দু’জন কি ভাবছিস?পোয়াতি হইতে মন চায় না?আগে আমাদের দাদি শাশুড়িরা কত বুঝাইত কেমনে জামাইরে আঁচলে বাঁধা যায়,কত কি। এহন তো আপডেট যুগ। ‘
বিষম খেলো উভয়ে। রহিমা কান পেতে শোনার চেষ্টায়। ফাতেমা চৌধুরী যখন মিনমিন করে তখন সাথে বসা মানুষ বাদে কেউই শুনতে পায় না। লজ্জার চিহ্নরূপে রক্তিম প্রলেপ পড়ে শ্রেয়ার সমস্ত মুখশ্রীতে। নাক টা টকটকে লাল হয়ে ওঠেছে। প্রিয়ু এখন হাসছে। মিটমিট হাসি। ফাতেমা ব্যঙ্গ করলো। বললো,
‘ শরম, হাসি বাদ দেন আপনেরা। যা কইছি মন দিয়ে শুনেন। এই শ্রেয়া এতদিনে এক বাচ্চার মা হইয়া যাইত। আমার সব নাতীদের বাচ্চা কাচ্চা দেইখা ম’রতে চায় আমি। পদ্ধতি বাদ। জামাই পটাইয়া মা হইয়া যা দুইজন। ‘
লজ্জা জলাঞ্জলি দিয়ে দিল প্রিয়ু তৎক্ষনাৎ। ফাতেমাকে দুই হাতের বাঁধনে জড়িয়ে নিয়ে নির্লজ্জ, আনন্দপূর্ণ গলায় ঈষৎ চেঁচিয়ে ওঠে, ‘ আহা!দাদি আপনি একদম আমার ধাঁচের। বাঁচতে লজ্জা রাখতে নেই। উপদেশ মেনে নিলাম। এখন হাবাগোবা চারচোখ লেকচারার কে পটিয়ে মা হয়ে যাবো। ‘
কপাল চাপড়াতে অভিলাষ জাগছে শ্রেয়ার। এত ঠোঁটকাটা মানুষের ভিড়ে ও যে কেমন করে এলো। ব্যাপার টা অতীব বিস্ময়ের। অতীব।
______________
‘ একটা টিনের চাল দিয়ে পৃথিবীতে ফিনিক ফোটা জোছনা নেমে আসবে। সৌন্দর্যে মোহিত করে, নিংড়ে তুলবে দু হৃদয়। একে অপরকে দেখবে উম্মাদ হয়ে দুই জোড়া চোখ। চুম্বকের ন্যায় আকর্ষণ বাড়তেই থাকবে। সেকেন্ড, মিনিট সময়ের পর সময় বৃদ্ধি পাবে ছটফটানি,অন্তরের উচাটন ক্রমশ পাগল করে তুলবে দুজনকে। বিষয়টা সুন্দর না প্রিয়ু?’
‘ একদম পাগ’লকরা। ‘
ছাঁদে দাঁড়িয়ে মধ্য রাত্রিতে চাঁদ দেখছে আয়ুশ-প্রিয়ু। প্রিয়ুর মাথা টা আয়ুশের চওড়া বক্ষে ঠেকানো। বদনে তৃপ্তির ছাপ,শান্তি,সুখ। প্রিয় মানুষ পাশে থাকলে সুখ সুখ অনুভব হয়। দূরে গেলেই যেন অশান্তির ঝড়, দাউদাউ করে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ জ্বলে অন্তঃপুরে। তাই তাকে মানসিক শান্তি বলে অভিহিত করা বেমানান কিংবা ভুল নয়। খুশিতে অক্ষি নিমীলিত করে রেখেছে প্রিয়ু৷ আয়ুশ ওর কর্ণ দুয়ারে মুখ ছুঁয়ে বলে,
‘ আপনার জোছনা বিলাসের সমাপ্তি কখন ঘটবে?’
‘ কেনো?তোমার ভালো লাগছে না?’
‘ ভালো লাগার চেয়ে বেশি কিছু হচ্ছে। ‘
প্রিয়ুর কপালে চিন্তার রেখা পড়ে। উল্টো ঘুরে আয়ুশের চেহারা টা দেখতে চাইলে থামিয়ে দেয় সে। আরও অনেক বেশি শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
‘ এই অল্প আলোতে আমার ভিতরে কি চলছে বুঝবে তুমি?’
প্রিয়ুর চিন্তিত,ব্যগ্র স্বর- ‘ এভাবে নাহলে কিভাবে বুঝবো?’
‘ বুদ্ধি বাড়িয়ে। ‘— আয়ুশের সোজা উত্তর।
প্রিয়ু প্রতিবাদ করে বললো,’ আমি যথেষ্ট বুদ্ধিমতী। শুধু চশমা পড়লেই ব্রিলিয়ান্ট ভাব হয় এমন না। আমার বুদ্ধির সাথে টক্কর নিলে তুমি শূন্য। ‘
‘ তাহলে আমার ভিতর এখন কি চলছে বলো। ‘
আয়ুশের প্রশ্নে প্রিয়ু কয়েক পল ভাবলো। ঢের ভাবলো। পরক্ষণে লাজুক স্বরে বললো,’ জোছনার চাদরে মুড়িয়ে বউয়ের সঙ্গে গভীর রোমান্স করার ইচ্ছে। ‘
আয়ুশ ফিক করে হেসে দিল। ওর সম্পূর্ণ দেহ টা শূন্যে তুলে বললো,’ তুমি আসলেই খুব বুদ্ধিমতী ও কিউট বউ। ‘
_____________
এ বাড়িতে আসার তিনদিনের মাথায় নিজ থেকে আরিয়ানা শ্রেয়ার রুমের সামনে এসে দাঁড়াল। বিছানার উপর থাকা এলোমেলো কাপড়গুলো গুছিয়ে আলমিরাতে রাখছিল শ্রেয়া। অকস্মাৎ নজর দরজায় যেতেই বলে,
‘ আপনি বাহিরে দাঁড়িয়ে আছেন কেন আপু?ভিতরে আসুন। ‘
দোনোমোনো করে ভিতরে ঢুকে আরিয়ানা। কোলে তিতিসা ওর শাড়ি খামচে ধরে রেখেছে। শ্রেয়া হাত বাড়িয়ে অনুমতি চাইলো,
‘ ওকে নেই?’
আরিয়ানার সহজ সরল উত্তর,’ নাও। ‘
হতবাক,স্থবির শ্রেয়া। অবাক বেশ। তিতিসা এক প্রকার ঝাঁপ দিয়ে পড়লো ওর বুকে। কিন্তু শ্রেয়ার চমক অটল। ও পরিবর্তন দেখছে। কিঞ্চিৎ পূর্বের আচরণের অমিল খুঁজে পাচ্ছে আজ আরিয়ানার মাঝে। ওকে মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে আরিয়ানার স্বীকারোক্তি,
‘ চেষ্টা করছি তোহাশের জন্য সবার সাথে মেশার। ভালোবাসার মানুষের জন্য ত্যাগও ভালোবাসার মধ্যেই পড়ে তাই না?’
‘ হ্যাঁ। যেমনটা তোহাশ ভাইয়া করেছিল আপনার জন্য বাবা মার ভালোবাসার বিসর্জন দিয়ে। তবুও প্রত্যাশা দিনশেষে আপনার মনে তাদের জন্য সম্মান যেন জাগে। ‘
‘ তূর্য চলে গিয়েছে। তুমি যাও নি যে?ভার্সিটি অফ?’
আরিয়ানার প্রশ্নে তড়িৎ গতিতে একটা কথা মনে পড়ে যায় শ্রেয়ার। তাড়াতাড়ি করে বিছানার পাশের পড়ার টেবিলে হেলান দিয়ে রাখা মোবাইল টার দিকে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকালো। তূর্য তাকিয়ে আছে গভীর দৃষ্টে। তাজ্জব বনে গেল ও। ভার্সিটি খোলা থাকায় গত কালই চলে যেতে হয়েছে তূর্যর।
শ্রেয়ার খারাপ লাগলেও অনুরোধ করে কয়েকদিনের জন্য থেকে যাওয়ার। আসলে এ সময়টা পরিবারের পাশে থাকাই উচিত। ওর জন্য প্রিয়ুও রইয়ে গিয়েছে। ইশারায় কাছে ডাকলো তূর্য। টেবিলের কাছে যেতেই কলটা কেটে দেয়। বাকরুদ্ধ শ্রেয়া। এই বলে ভিডিও কলে থাকো,এই আবার কাছে ডেকে ফোন কেটে দেয়। নিমিষেই ফোন টা আবার ঝংকার শব্দ সৃষ্ট করে। এবার অডিও কল। আরিয়ানা নিশ্চুপে সবটা দেখছে। খারাপ লাগছে না ওর। ভালোবাসা দেখতে ভালোই লাগে।
শ্রেয়া কলটা রিসিভ করে কানে ধরতেই তূর্য অনতিবিলম্বে লহু স্বরে বলে উঠলো,’ আমার একটা দাঁতের স্পর্শে তুমি কুঁকড়ে যাও শরমে অথচ তিতিসা ঘাড়ে খামচি দিল টেরই পেলে না। ব্যাপার কি বলো তো?আমার বেলায় ইচ্ছে করে?বেশি বেশি আদর পাওয়ার জন্য?’
ধারালো কথাবার্তা সইতে না পেরে চট করে ফোন কেটে দিল শ্রেয়া। হৃদস্পন্দন ক্রমশ উতলা হয়ে ওঠছে। এই হেঁয়ালিপনা কবে ছাড়বে এই পুরুষ? বুড়ো বয়সে?
#চলবে,,!
#সন্ধি_হৃদয়ে_হৃদয়ে
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব___৪৫
আরিয়ানাকে সাথে নিয়ে কথা বলতে বলতে সিঁড়ি ভেঙে নিচে আসে শ্রেয়া। তিতিসা ওর চেহারার সর্বাঙ্গে ছোট ছোট হাতে আলতো করে ছুঁয়ে দিচ্ছে। সোফায় বসে এতিমখানার যাবতীয় খরচপত্রের হিসেব কষছেন মেহরিমা ও ত্রিহা। এতকাল যাবত এই দায়িত্ব ছিল মাদারের৷ তিনি একা হাতেই সবটা সামলাতেন। কিন্তু নতুন যেই মাদার এসেছেন তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। সবকিছুতে কেমন গরমিল লাগিয়ে ফেলছেন। তাই এই মাসের হিসেব টা নিজেরা করে পরের মাস থেকে একজন বিশ্বস্ত লোক রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন নুরুল চৌধুরী। তাছাড়া এখন তোহাশ আছে। তূর্য, তোহাশ, আয়ুশের উপর এতিমখানার দায়িত্ব টা চিরতরে তুলে দিতে চান তিনি। আরিয়ানাকে দেখে মেহরিমা মিহি হাসলেন। শ্রেয়া এবং ওকে হাঁক ছেড়ে বললেন,
‘ দু’জন দাঁড়িয়ে কেন?বসো। ‘
একটুখানি বিব্রত হলো আরিয়ানা। আসার পরমুহুর্ত হতে সে একটি বারের জন্যও মেহরিমার সঙ্গে কথা বলে নি। কেবলমাত্র খাবার টেবিলে নুরুল চৌধুরীর সাথে কয়েকটা শব্দ বিনিময় করে। ব্যাস এতটুকুই। মনের গহ্বরে হাজারো শঙ্কা জাগলেও সেগুলো এক প্রকার দমিয়ে আরিয়ানা হাসলো। হাসি টা কেমন চাপা চাপা। ধীরস্থির, মন্থরগতিতে মেহরিমার পাশে বসে পড়ে। সম্পূর্ণ বিষয়টাই বিঁধে শ্রেয়ার কাজল চক্ষে৷ অধর জোড়া ক্ষীণ ছড়ায় ও। পুরোপুরি না পারুক আরিয়ানা চেষ্টা তো করছে। চেষ্টা টা-ই বা ক’জন করতে জানে?প্রচেষ্টার অভ্যন্তরে যেতে যেতে কোনো এক সময় গাঢ়ভাবে জড়িয়ে যাবে আপনের মায়ায়। অতঃপর অত্যধিক অসম্ভব ব্যাপার হয়ে ওঠবে সেই ইন্দ্রজাল, মোহমায়া কাটিয়ে ওঠা৷ পারে না কেউ। পারে না এমন জাল হতে বেরিয়ে আসতে। সাময়িক কালের নিমিত্তে আসলেও অন্তর জ্বলে ওঠে হুটহাট করে, কোনোরকম আগমনী বার্তা না দিয়ে। যেমনটা তোহাশের দ্বারা হয় নি। সেও অনলে জ্বলেছে,আপনজনের টানে ছুটে এসেছে। শ্রেয়ার মানসলোকে কয়েকটা বাক্যের রচনা হয় তৎক্ষনাৎ,
‘ শহরতলী জুড়ে মিলন কাহিনির ছড়াছড়ি থাকুক। কানে কানে বিনিময় করুক প্রণয় মিশেল বাক্য। আকাশে কালো মেঘ নয়,শুভ্র রং থাকুক। হৃদয়ে হৃদয়ে বিচ্ছেদ নয়,সন্ধি হোক। ‘
মেহরিমা চৌধুরীর গলা শোনা যায় পুনর্বার। অত্যন্ত মমতা মাখানো সেই কন্ঠে। শ্রেয়াকেও বসার জন্য ডাকছেন তিনি। চিত্তপটে অনাবিল শান্তির সমীরণ বয়ে যায়। দিন, কাল,ক্ষণ সকল কিছু বদলে গেল। পরিবর্তন হয়ে গেল কর্কশ আচরণ কোমলতায়। মেহরিমার স্বরনালীতে মা মা আদুরে ভাব খুঁজে পায় আজকাল শ্রেয়া। দেরি না করে ঝটপট ওনার অন্য পাশে বসে পড়লো। ত্রিহার লক্ষ্যে বললো,
‘ আয়ুশী কবে আসবে চাচী?নানুর বাড়ির বেড়ানো শেষ হয় নি?’
ত্রিহা উত্তরে জানালেন, ‘ চলে আসবে আজকেই। ফোনেই তোহাশের আসার কথা শুনে পাগল হয়ে যাচ্ছিল। মা অসুস্থ তাই ওনাকে নিয়ে আসতে বলি নি। আজকে আমি ড্রাইভারকে পাঠিয়ে দিব ওকে নিয়ে আসার জন্য। ‘
তিতিসা ঘাড় কাত করে ক্ষুদ্র আঁখিদ্বয়ে নির্নিমেষ চাহনি নিবদ্ধ করে রেখেছে মেহরিমার মুখের দিকে। শ্রেয়ার চোখে পড়তেই চুপিসারে তিতিসার হাতের মুষ্টিমেয় পুরে দিল মেহরিমার শাড়ির একটুখানি অংশ। নিমিষেই আঁচলে টান অনুভব করতেই নিজের পাশে তাকায় মেহরিমা। ওনার মুগ্ধতা ভরপুর দু চোখ দেখে লাল লাল ওষ্ঠযুগল ছড়িয়ে খিলখিল করে হাসে তিতিসা। কি সুন্দর, প্রাণখোলা হাসি!সবার দৃষ্টি আপাতত ওর দিকেই।
আঁচল টেনে বারংবার দাদির কোলে যেতে ইচ্ছে প্রকাশে মগ্ন তিতিসা। কিন্তু মেহরিমা নেওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। ভীতি জাগে,ভয়ংকর মারাত্মক ভীতি। যদি আরিয়ানা ক্ষেপে যায়?ওর যেই মানসিক অবস্থা অকস্মাৎ রেগেমেগে যাওয়া স্বাভাবিক। তাই এখনও তিতিসাকে স্পর্শ করার দুঃসাহস করেন নি তিনি। কিন্তু আজ ভাবনার বাহিরে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যাবে কস্মিনকালেও ভাবেন নি তিনি। না এনেছিলেন এমন প্রত্যাশা কল্পনায় কিংবা স্বপনে। দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ স্থির হয়ে পড়েছে কারো ছোঁয়ায়। চমকপ্রদ সকলে। আরিয়ানার হাত ওনার হাতের উপর। নিচু কন্ঠে সে বললো,
‘ তিতিসা আপনার কোলে আসতে চাইছে। নিচ্ছেন না কেন আম্মা?’
নয়নাভিরাম চাউনি শ্রেয়ার। মেহরিমার চোখে অশ্রু টলমল করছে। ‘ আম্মা!’ বিয়ের পর একটা বারও এই সম্বোধন করে নি আরিয়ানা। এত বছর পেরিয়ে এসে আজ করলো। ডাক টা কত মধুর!শ্রেয়ার কোল থেকে চট করে তিতিসাকে নিয়ে বুকে জড়িয়ে ফেললেন তিনি। ক্রন্দনরত গলায় বার কতক বললেন,
‘ আমার নাতনী। আমার তোহাশের মেয়ে। আমি দাদি হয়ে গেলাম।’
খুশি,উৎফুল্লতা যেন ওনার সমগ্র সত্তা জুড়ে। আরিয়ানা নিজেকে তটস্থ করে নেয়। এ ক’দিনে অনেক কথা গুছিয়েছে। এক এক করে আওড়াতে থাকে।
‘ আমাকে ক্ষমা করে দিবেন আম্মা। আমি এখনও ঠিক পারছি না। মন বার বার আপনাদের কাছ থেকে সরে যেতে চায়। হয়তো এটা আমার অসুস্থতার কারণে। আমি চেষ্টা করবো। অনেক চেষ্টা করবো আমার কারণে আর যেন কোনো সম্পর্ক না ভাঙে। আপনাকে মিসক্যারেজের অপবাদ দিয়েছিলাম এটার শা’স্তি আমি পেয়েছি। সেদিন মিসক্যারেজ আপনার জন্য নয় বরং আমার উলটো পাল্টা ওষুধ খাওয়ার জন্য হয়েছে। নিজেও বুঝতে পারি নি ছোট থেকে মানসিক রোগী আমি। তোহাশ ট্রিটমেন্ট না করাতে নিলে,সাইকিয়াট্রিস্ট নিজ মুখে না বললে কখনোই বিশ্বাস করতাম না। আমার মনে হতো আমি যা করছি সব সঠিক, অন্যরা শুধু কেঁড়ে নিতে চায়। আপনাকে দেখলে জেদ কাজ করতো,আমার
গলা ধরে আসে আরিয়ানার। পরবর্তী কথাটা খুবই কঠিন। টেনে টেনে বললো,’ আমার সৎ মা’য়ের অত্যা’চারের কথা মনে পড়ে যেত। তাই কোনোভাবেই মেনে নিতে পারতাম না। দেখলেই মাথা টা ব্যথা করতো,সবকিছু এলোমেলো লাগত। ডাক্তারের প্রেসক্রাইভ করা ওষুধের সাথে অন্য ওষুধও ছিল যা প্রেগন্যান্সিতে খেলে ঝুঁকি আমি রাগের চো’টে খেয়ে ফেলি। তখনও আমার মনে ভাবনা জাগে আপনার জন্যই এমনটা হয়েছে। আপনাকে দেখে আমার কষ্ট না লাগলে এমন কিছু হতো না। সবকিছুর জন্য আমি দায়ী আম্মা। আপনাদের কষ্ট দিয়েছি আমি৷ বছরের পর বছর তোহাশকে আপনাদের কাছ থেকে দূরে রেখেছি। আপনাকে দেখলে এখন আমার সৎ মা’য়ের প্রতি ধারণা পাল্টে যায়। আফসোস হয় আগে কেন আমার চোখে ছাউনি পড়েছিল। আপনাদের অনেক অনেক খুশি আমি নিজ হাতে ধ্বংস করে দিয়েছি। একটাই অনুরোধ থাকবে আম্মা,আমাকে একটু ভালো হতে দিন। আপনাদের দয়ার হাত টা আমার মাথায় রাখুন। সত্যিই নিরুপায় ছিলাম আমি। হিংসা,অসুস্থতা আমাকে কাবু করে নিয়েছিল। তোহাশ এখনও ভালো করে হাসে নি। ও শান্তির হাসি হাসতে পারে না আমার জন্য। ও বোধ-হয় ভাবে আমি এখানে ভালো নেই। কাউকে ভালো রাখতে পারছে না সে। আমাকে ওর মুখে হাসি ফুটাতে সাহায্য করুন আম্মা। আমিও স্বচ্ছ নির্মল একটা জীবন চাই আপনাদের সাথে। ‘
আকুতি মিনতির স্বর আরিয়ানার। অবাধে অক্ষি কার্নিশ হতে জল গড়াচ্ছে। আজ কোনো ছলনা নেই। আছে নিঃসংশয় আবেদন,আপনজনকে খুশি রাখার প্রয়াস। ত্রিহারও চোখ ভরে আসে জলে। মেহরিমা যথেষ্ট শক্তপোক্ত ধাঁচের মানুষ। নুরুল চৌধুরীর চেয়ে এ ঘরের প্রত্যেকটা মানুষকে ভালোবেসেছেন ওনি। ভালোবাসার দাবি নিয়ে হাজির হয় নি স্বামীর সান্নিধ্যে। মাথায় একটাই কথা আটকা পড়ে যায় কোনো এক সময় তাঁর স্বামীর রাজ্য জুড়ে অন্য এক রাণীর বসবাস ছিল। চাইলেই হুট করে সেখানে উড়ে এসে জুড়ে বসা সম্ভব নয়। মানুষের মন নামক গৃহে প্রবেশ করতে হয় আস্তে ধীরে। ওনিও এমনটাই করেন। তবে তার পশ্চাতে অনেক ধৈর্য্য, ত্যাগ,বিসর্জন রয়েছে। তিলে তিলে ধাতস্থ হয়েছেন,নিজেকে সামলেছেন,পরিস্থিতি অনুযায়ী শিখেছেন কঠোরতা। এ মুহুর্তেই সূক্ষ্ম নিঃশ্বাস বিমোচন করে বললেন,
‘ আর কাঁদবে না আরিয়ানা। অতীতে পড়ে থাকলে শান্তি স্বস্তি কোনোটাই আসবে না মনে। বর্তমান সুন্দর করে তুলি আমরা। আমি সব ভুলে গিয়েছি। তুমিও যাও। মনে রাখবে তুমি ও শ্রেয়া আমার কলিজার কলিজা। তোহাশ, তূর্য যেমন আমার কলিজার অংশ তেমন তোমরাও ওদের কলিজার অংশ। এমনটা আমি এমনি এমনি বলছি না। আমার ছেলেদের ভালোবাসা দেখেই বলছি। আমি তোমাদের প্রাণ ভরে আদর দিব তাতেই আমার ছেলেরা সুখী, সেটা আমি জানি। আমি শ্রেয়ার সাথেও অন্যায় করেছি। দু’জনে নাহয় এখন আমাকে একজন ভালো শাশুড়ি বানিয়ে দিও মিলেঝুলে। ‘
শেষের কথায় হাসির ঝিলিক। শ্রেয়া ও আরিয়ানার চোখাচোখি হতেই উভয়ে একই সঙ্গে সমস্বরে চিৎকার করে ওঠে। বলে,
‘ আম্মা আপনি বেস্ট। ‘
মেহরিমা চৌধুরী ভাব নিলেন। বললেন,’ আই নো পুত্র বধূরা। ‘
প্রিয়ু সিঁড়িতে থাকা অবস্থায়ই চিল্লিয়ে বললো,’ আমার আম্মুও বেস্ট। আর আমিও ওনার একমাত্র ছেলের একমাত্র সুযোগ্য বউ। ‘
ঠোঁট দুটো নড়ে উঠলো ত্রিহার, ‘ একদম। ‘
ঢেউ ভাঙা হাসির শব্দে শব্দে মুখরিত চৌধুরীর বাড়ির চার কোণ।
সাঁঝবেলা নেমেছিল সবে। তন্মধ্যে এসে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলেছে আয়ুশী। মেয়েটা নরম স্বভাবের হলেও বেশ পটু। বিশেষ করে অন্যদের সাথে মিশে যেতে। এসেই আরিয়ানার সাথে ভাব জমিয়ে ফেলেছে। দাবি করেছে ভাইদের সঙ্গে বসে মাংসের ঝোল দিয়ে মুড়ি মাখা খাবে। তূর্যকেও ফোন দিয়ে বলেছে এক্ষুণি আসতে। কিন্তু ওকে নিরাশ করে দিয়ে সে জানিয়ে দেয় আসতে পারবে না৷ মনোক্ষুণ্ণ, মন খারাপেরা শুধু আয়ুশীর জন্য নয় আরও একজনের অন্তর্দেশেও এসেছে এবং সেই জন হলো শ্রেয়া। আজ কতদিন সরাসরি দেখে না তূর্যকে। খুব করে বলতে চায় চলে আসুন না। কিন্তু পারে না লজ্জায়। যখনি এটা বলবে তূর্য এমন কথা শুনাবে যেটা হজম করাই হবে কষ্টকর। তার চেয়ে মৌনতা-ই শ্রেয়।
বড় এক বোল মুড়ি মাখা নিয়ে ছাঁদে এলো শ্রেয়া। পাটি বিছিয়ে গোল হয়ে আরিয়ানা, তোহাশ,আয়ুশ,প্রিয়ু বসে আছে। আয়ুশী বসেছে দু ভাইয়ের মধ্যবর্তী স্থানে। ঘোর রজনীর প্রহর চলছে। মধ্যরাত্রীতে মুড়ি মাখা খাওয়ার বিষয়টা তাও তন্দ্রা একপাশে ফেলে খুবই আশ্চর্যজনক। তবে বেশ মজারও। বোল টা সবার মাঝে রেখে ও বসতে নিল প্রিয়ুর পাশে৷ কিন্তু পারলো না। তোহাশ বাঁধা দিয়ে বললো,
‘ ছাঁদের অপর পাশে ছিলাম এতক্ষণ। মোবাইলটা ভুলে ওইদিকেই রেলিং এর উপর রেখে এসেছি। এনে দিবে?এখন মনে হলো। ‘
‘ জি ভাইয়া। এখুনি নিয়ে আসছি। ‘
শ্রেয়া যেতে নিয়েও তীররেখা নজর ফেলে দেখলো সকলে কেমন মিটমিট হাসছে। হাসিগুলো নিঃশব্দ। কিছুই ঠাওর করতে সক্ষম না ও। গোলমেলে লাগছে সবটা। তোয়াক্কা না করে গটগট পায়ে অপর প্রান্তের দিকে হাঁটতে লাগলো। এসেই চক্ষু ছানাবড়া। কাঁপুনি দিয়ে ওঠে সমস্ত তনু। ওষ্ঠদ্বয় ফাঁক হয়ে অস্ফুট বেরিয়ে আসে প্রশ্ন,
‘ আপনি?’
সমুখে নির্বিকার ভঙ্গিতে রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো মানুষ টা। শ্রেয়ার কম্পনমিশ্রিত প্রশ্নটা যেন তার শ্রবণেন্দ্রিয়-ই হয় নি। বরঞ্চ ছাঁই কালার শার্টের উপরের বোতাম টা খুলে বললো,
‘ ওইখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?জলদি আসো। বউকে সারপ্রাইজ দিতে কত কি করতে হলো। নিজের বাড়িতেই লুকিয়ে ছাঁদে আসলাম। লং জার্নি৷ সব মিলিয়ে ক্লান্ত। তাড়াতাড়ি কাছে আসো। বুকে মাথা রেখে একটু ভিতরটা শান্তি করে দিয়ে যাও তো। নয়ত এই ক্লান্তি আমাকে ছাড়বে না মিসেস শুভ্রপরী। আর ক্লান্তি আমাকে না ছাড়লে আমি তোমাকে ছাড়ছি না। ‘
#চলবে,,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)