সন্ধ্যামালতী,০৮,০৯

0
439

#সন্ধ্যামালতী,০৮,০৯
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
০৮

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে বাহিরে আসে সন্ধ্যা। মুক্ত বাতাসের টেনে নেয় গন্ধ। সকালটা অন্যরকম মনে হলো তার। অন্যরকমই তো! কোনো পশুর থেকে লুকিয়ে বাঁচার আর প্রয়োজন নেই। সাহেদা সকাল সকাল কাজে চলে গেছে। সন্ধ্যা নিজেই বাড়ির সবার জন্য রান্না বসায়। রান্না শেষ করে দাদাকে খাওয়ায়। তারপর সব ঠিকঠাক করে হাঁটা লাগায় বকুলদের বাড়ির দিকে। বকুল তখন উঠোনে বসে আচার চিবুচ্ছে। সন্ধ্যাকে দেখে আচারের বয়াম রেখে এগিয়ে আসে সন্ধ্যার কাছে। সন্ধ্যা মুচকি হেঁসে বলে,

‘সকাল সকাল আচার খাচ্ছিস! এসব রাখ। চল বাগানে যাবো।’

বকুল কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, ‘বাদল ভাই কিন্তু বাড়িতে।’

সন্ধ্যা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে, ‘তো আমি কি করবো! তোর ওই ভাইকে ভয় পায় নাকি? চল তো৷’

বকুলের হাত টেনে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকে। বকুল কথায় কথায় বলে, ‘আচ্ছা সন্ধ্যা তোরও বিয়ে হয়ে গেলে তো আমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে তাই না!’

সন্ধ্যা দুষ্টুমির হাসি হেঁসে বলে, ‘মনে হচ্ছে সইয়ের আমার খুব বিয়ে করার শখ হয়ছে। না সমস্যা নাই শখ হলে বল আমি কাকিকে বলে তোর বিয়ের ব্যবস্থা করতেছি।’

বকুল সন্ধ্যার মাথায় গাট্টা মেরে বলে, ‘যাহ! ভেবেছিলাম তোর আর বাদল ভাইয়ের বিয়ের পর দুজনে একসাথে অনেক মজা করবো। কিন্তু…

‘কিন্তু কি?’

‘কিছু না। শোন না সই! ভাই সেদিন শহরে গেছিলো না? ওইদিন তোর জন্য শাড়ি আর গহনা আনছে।’

সন্ধ্যার মুখটা মলিন হয়ে যায়। এই বিয়েটা করে আদৌও কি সে সুখী হবে? বাদল কত কি এখনি করে ফেলেছে কিন্তু তার তো বিয়ের প্রতি কোনো আগ্রহই নেই। তাহলে? সন্ধ্যাকে কিছু ভাবতে দেখে বকুল ধাক্কা দেয় সন্ধ্যাকে। সন্ধ্যা চমকে তাকায়। বকুল বলে,

‘কি ভাবছিস বল তো?’

‘কিছু না। শোন বাগান দিয়ে ঘুরে শহুরে ডাক্তারদের ওখানে যাবো।’

বকুল দাঁড়িয়ে পড়ে। ভ্রু কুঁচকে বলে, ‘কেন?’

‘কেন আবার? এমনিই।’

বকুল সন্ধ্যাকে সামনে দাঁড় করিয়ে বলে, ‘আচ্ছা একটা সত্যি কথা বল। তোর কিসের টান এতো শহুরের ডাক্তারের ওপর?’

সন্ধ্যা আনমনে আস্তে করে বলে, ‘জানি না।’

বকুল স্পষ্ট শুনতে পায় না। ফের জিজ্ঞেস করে, ‘বলছিস না কেন?’

সন্ধ্যা বকুলকে সরিয়ে বকুলের হাত ধরে সামনে হাঁটতে থাকে। তারপর জোড় করে হাসার চেষ্টা করে বলে, ‘আরে কিসের টান হবে? কোনো টান ফান নাই। তুই তো জানিস চেয়ারম্যানের ওই বাড়ির পুকুর ঘাট আমার কত প্রিয়! তাই যায় ওখানে। চেয়ারম্যান তো এখন আর কিছু বলে না আর আগে গেলেই সাপের মতো ফোঁসফোঁস করছে।’

বকুল শব্দ করে হেঁসে ওঠে। এর মধ্যেই পেছন থেকে আওয়াজ আসে এ্যাম্বুলেন্সের শব্দের। বকুল আর সন্ধ্যা দুজনেই পেছনে তাকায়। তাদের সামনে দিয়ে সাই করে চলে যায় এ্যাম্বুলেন্স। পেছন পেছন সন্ধ্যা আর বকুলও যায়। এ্যাম্বুলেন্স থামে চেয়ারম্যানের বাড়িতে। চেয়ারম্যানের বাড়িতে তখন কান্নার সুর। সন্ধ্যা আর বকুল এসে এক পাশে দাঁড়ায়। এ্যাম্বুলেন্স থেকে সাদাা কাপড়ে মুড়িয়ে লাশ নামানো হয়। সবাই লাশকে ধরে কান্না কাটি করতে থাকে। সন্ধ্যা তাচ্ছিল্যের সুরে হেঁসে আস্তে করে আওড়ায়,

‘জা’নো’য়া’রে’র জন্য চোখের পানি নষ্ট করার চেয়ে নিজেকে স্বার্থপর, খারাপ প্রমাণ করে হাসতে থাকা ভালো।’

কিছু কিছু লোক শুধু শান্ত্বনা দিতে হয় তাই দিচ্ছে। নয়তো সবার মনেই বিষ এই ক্ষত বিক্ষত লাশের জন্য। মুখের ওপর থেকে সাদা কাপড় সরাতেই লোকজন ভয়ে দুকদম পিছিয়ে যায়। সন্ধ্যা হাসে। ফরিদের পুরো মুখে, গলায়, শরীরে সেলাই করা। লাশের কয়েকটা টুকরো হয়েছিলো বলে সব একসাথে করে সেলাই করা হয়েছে। সাথে সাথে আবার ঢেকে দেওয়া হয় ফরিদের মুখ। বাড়ির বারান্দায় মুখ ভার করে বসে আছে ফিরোজ চেয়ারম্যান। তার আশে পাশে আরো মানুষ। সন্ধ্যা সবাইকে একবার দেখে নেয়। চোখ বন্ধ করে বড় শ্বাস নেয়। সমাজ থেকে আরো একটা কীট মুক্ত হলো। সেই প্রশান্তিতে আরো একজনের ঠোঁট প্রসারিত হয়। সেই প্রশান্তির হাসি সন্ধ্যার চোখ ফাঁকি দেয়নি। নিঃশব্দে হাসে সন্ধ্যাও।

সন্ধ্যা আর বকুল চলে যেতে নিলেই হাজির হয় আয়াশ, রানা, আকাশ, তমাল, সাফি, লিজা আর জেরিন। সবাই সন্ধ্যা আর বকুলকে দেখে এগিয়ে আসে তাদের দিকে। লিজা বলে,

‘তোমরা এখানে?’

সন্ধ্যা উত্তর দেয়, ‘তোমাদের ওখানেই যাচ্ছিলাম। আসার পথে এ্যাম্বুলেন্স দেখে পেছন পেছন এলাম। এক্ষুনি আমরাও বের হচ্ছিলাম। তোমরা এখানে কেন?’

রানা বলে, ‘আজকে তো কয়েকজন লোক শুধু আসছিলো আমাদের কাছে। তাদের মুখে শুনলাম সবাই চেয়ারম্যান বাড়ি। তাই আসলাম দেখতে।’

সন্ধ্যা হেঁসে বলে, ‘যান দেখে আসেন। ওই যে ফরিদ কাকার লা’শ আনছে। একবার সবাই দেখে ভয় পাইছে তার পর আর মুখ থেকে কাপড় তোলেনি। আপনারা তো ডাক্তার দেখলে দেখেন।’

সাফি তাড়াতাড়ি লিজার কাছে এসে বলে, ‘পাগল নাকি! ওই কয়েক টুকরো লা’শকে আমি দেখবো না৷ রাতে ভুত হয়ে আমার গলা টিপে দিতে পারে।’

লিজা সাফির চুল টেনে ধরে বলে, ‘ব’ল’দ। কবে মানুষ হবি তুই? এই জেনারেশনে এসেও তোর ভুতে ভয়!’

সাফি ভেংচি কাটে। রানা আয়াশকে মন দিয়ে কিছু দেখতে দেখে কনুই দিয়ে গুতো মারে৷ আয়াশের ততক্ষণে পুরো পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করা শেষ। রানা ফিসফিস করে বলে,

‘কি দেখছিস এভাবে?’

‘পরিবেশ।’

‘এ্যাহহহ?’

‘হ্যাঁ।’

বলেই এগিয়ে আসে লা’শের কাছে। রানা মাথা চুলকাতে চুলকাতে আকাশের দিকে তাকায়। আকাশ ভ্রু কুঁচকে বলে, ‘একটাও উল্টা পাল্টা কথা বললে তোর খবর আছে।’

রানাও ভেংচি কাটে। তারপর সবাই মিলে এগিয়ে যায় আয়াশের কাছে। আয়াশ পাশে বসে থাকা একজন লোককে বললো,

‘লা’শের মুখ দেখা যাবে?’

লোকটির থমথমে গলায় উত্তর, ‘মুখ দেইখা আবার ডরাইবা নে।’

‘হোয়াট ইজ ডর?’

লোকটি তাকিয়ে থাকে। পাশ থেকে সন্ধ্যা বলে, ‘ভয়।’

‘ওহ’ বলেই আয়াশ আবার লোকটির দিকে তাকায়। মাথা থেকে পা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে বলে, ‘ভয় পাবো না। আমাদের অভ্যাস আছে। দেখান!’

লোকটি আর কথায় বাড়ায় না। মুখের কাপড় তুলে দেয়। লিজা আর জেরিন ভয় পায়। দুকদম পিছিয়ে দাঁড়ায়। সাফি তাকায়ই না লাশের দিকে। আয়াশ নিজের মতো দেখে বলে,

‘হুম ঠিক আছে।’

তারপর উঠে আসে। বাড়ি থেকে বের হয়। রানা,তমাল, আকাশ আর আয়াশ সামনে। লিজা, জেরিন, সন্ধ্যা, বকুল, সাফি এক সাথে। রানা একবার পেছনে তাকিয়ে বলে, ‘কি বুঝলি?’

আয়াশ গভীর কিছু ভেবে বলে, ‘কিছু বুঝতেছি না। আমরা যেই জিরো পয়েন্টে ছিলাম এখনো সেখানেই আছি।’

‘আচ্ছা তোর কি কালকের ঘটনার পরও মনে হয় সন্ধ্যা এসবের পেছনে আছে?’

আকাশের কথায় তার দিকে তাকায় আয়াশ। পাশ থেকে তমাল বলে, ‘আমার কিন্তু মনে হয় না সন্ধ্যা এসবের পেছনে আছে! আমার তো মনে হয় ‘ও’ নিজেই পরের টার্গেট।’

আয়াশ বলে, ‘কালকের ক্লুর পর আমি কনফিউজড সন্ধ্যা আসলে কি? টার্গেট নাকি মাস্টারমাইন্ড! ‘

রানা বলে, ‘দোস্ত ওদের ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে একমাত্র বেঁচে আছে সন্ধ্যা। বকুলের সাথে সন্ধ্যার ফ্রেন্ডের কোনো হাত নেই। মানে বকুল আলাদা ব্যাচ।’

‘দেখ রেপড হয়ছে নয়না আর সোনিয়া। ওরা নিজেরাই সুইসাইড করছে। মুন্নি কে কেন মা’রা হলো? কে মা’রলো? ‘ও’ কি কিছু জানতো!’

‘সম্ভাবনা আছে কিন্তু জানতে হবে। আর সন্ধ্যার থেকেই জানতে হবে।’

সবাই সায় দেয়। তারপর টপিক চেঞ্জ করে। সবাই একসাথে চলে আসে পুকুর ঘাটে। শান বাঁধানো পাথরে, সিড়িতে বসে সবাই। কথায় কথায় রানা সন্ধ্যাকে বলে,

‘তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি সন্ধ্যা!’

সন্ধ্যা মাথা নাড়ায়। রানা কিছুটা ইতস্তত করলেও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলে, ‘যাওয়ার সময় কিছু লোকের মুখে শুনেছিলাম এই গ্রামে নাকি আগেও এরকম মা’র্ডার হয়ছে। কথাটা কি সত্যি?’

লিজা আর জেরিন চমকায়। রানা এসব কি জিজ্ঞেস করছে! সন্ধ্যা উল্টো বুঝলেই তো তারা কেইস খাবে! সন্ধ্যা আর বকুলের মুখ মলিন হয়ে যায়। রানা হাসার চেষ্টা করে বলে,

‘ডোন্ট মাইন্ড প্লিজ আসলে যাওয়ার পথে শুনলাম তাই তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম। এমন হলে তো গ্রামে সমস্যা। লোকজন তো ভয়ে গুটিয়ে নিবে নিজেকে। মনের মধ্যে ভয় থাকবে এর পর না জানি কে মা’রা যায়! তোমাদের গ্রামের পুলিশরা কিছু করছে না?’

সন্ধ্যা চোখ মুখ শক্ত করে বলে, ‘যতগুলো লোক অস্বাভাবিক মাা’রা গেছে সবগুলো একেকটা জা’নো’য়া’র ছিলো। পশুর থেকেও ঘৃণ্য।’

সন্ধ্যার চোখে মুখে স্পষ্ট রাগ আর ঘৃণা ভেসে ওঠে। আয়াশ গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করে, ‘কি করেছিলো ওরা?’

সন্ধ্যা তাকায় আয়াশের দিকে। চোখ ছলছল করে ওঠে। কন্ঠ নরম হয়ে আসে। কথা গুলো আটকে আসে গলায়। কোনোরকম বলে, ‘আমার ভীষণ প্রিয় সই আর ভীষণ প্রিয় বোনকে কেড়ে নিছে ওরা।’

রানা কিছু বলতে গেলে আয়াশ ইশারায় থামিয়ে দেয়। লিজা আর জেরিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলে, ‘আরে কি মার্ডার টার্ডার লাগায় রাখছে সব! এসব বাদ এখন সন্ধ্যা বলো তুমি না বলছিলে তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। তা কার সাথে গো?’

সন্ধ্যা নিজেকে সামলে আয়াশের দিকে তাকিয়েই উত্তর দেয়, ‘বাদল ভাই।’

‘সেইটা আবার কে?’

বকুল হেঁসে বলে, ‘আমার ভাই।’

জেরিন বলে, ‘আরেহ বাহ। দুই সই তাহলে ভাবি ননদিনী হয়ে যাচ্ছো।’

বকুল হাসে। সন্ধ্যা মলিন দৃষ্টিতে তাকায় আয়াশের দিকে। তার ভেতরের সত্তা কিছু তো চায় সে বোঝে কিন্তু কি চায়? এই মানুষটার প্রতি তার এতো কিসের টান? সাফি হাসতে হাসতে বলে, ‘আরেহ সামনে মান্থে তো আমাদের আয়াশেরও বিয়ে। বাহ সন্ধ্যারও বিয়ে আয়াশেরও বিয়ে।’

সন্ধ্যা চমকে তাকায় সাফির দিকে। শহুরে ডাক্তারের বিয়ে? হঠাৎ ঠিক হলো নাকি আগে থেকেই ঠিক? বুকের বাম পাশে যেনো চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হলো। আয়াশের দিকে তাকিয়ে দেখে আয়াশ স্বাভাবিক। মনের যেটুকু আশা ছিলো তাও ভেঙে গেলো। এবার সে কার জন্য নিজের বিয়ে আটকাবে? আদৌও কি প্রয়োজন আছে? সন্ধ্যাকে যেনো কেউ অলৌকিক ভাবেই উত্তর দিলো, ‘প্রয়োজন নেই। তুই কি আদৌও বুঝিস ভালোবাসা কি?’

সন্ধ্যা চোখ বন্ধ করে। আকাশে মেঘ ডাকে। সকাল থেকেই আবহাওয়ার অবস্থা তেমন ভালো না। বৃষ্টি আসবে আসবে ভাব। সবাই উঠে পড়ে সন্ধ্যা ছাড়া। বকুলও বাড়ির দিকে দৌড় দেয়। বৃষ্টিতে আটকে গেলে সমস্যা। সব ছেলেরা চলে গেলে লিজা আর জেরিন সন্ধ্যার কাছে আসে। দ্রুত কন্ঠে বলে,

‘সন্ধ্যা উঠো। বৃষ্টি আসতেছে।’

সন্ধ্যা আনমনে উত্তর দেয়, ‘ভিজবো আমি। তোমরা যাও।’

লিজা আর জেরিন কিছু বলতে যাবে তার আগেই বৃষ্টির ফোটারা পড়তে শুরু করে। দৌড় লাগায় লিজা আর জেরিন। সন্ধ্যা ওভাবেই বসে থাকে। বৃষ্টির কণা তাকে ভিজিয়ে দেয়। সন্ধ্যা বসা থেকে উঠে দুপা এগোয় পুকুরের দিকে। দু হাত মেলে বৃষ্টির ফোঁটাদের যেন আমন্ত্রণ জানায় সে। এ বৃষ্টিতে মুছে যাক সব বেদনা, সব পাপ, সব পাপী। এ বৃষ্টির পর নতুন এক সকাল হবে। নতুন করে কারো জীবন শুরু হবে। বৃষ্টির পানিতে ভিজতে ভিজতে চোখ বন্ধ করে নেয়। চোখ বন্ধ করে আস্তে করে আওড়ায়,

‘এ কিসের টান শহুরে ডাক্তার? এ কেমন মরণ ব্যাধি আমার? সন্ধ্যামালতীর যে দম আটকে আসে এ অনুভূতিতে। এ অনুভূতি যে শূণ্যের কোঠায় পৌছোবে আর ক’টা দিন পর। না আপনি জানবেন এ অনুভূতিকে আর না অন্য কেউ। এ অনুভূতি একান্ত সন্ধ্যামালতীর। এ অনুভূতি শুধু জানবে সন্ধ্যাবেলার সন্ধ্যামালতীরা আর এই ঝুম বৃষ্টির ফোঁটারা।’

কিছুক্ষন চুপ থাকে। সেসময় পেছন থেকে কেউ তাকে টেনে ধরে। সন্ধ্যা পেছনে তাকাতেই চোখাচোখি হয় আয়াশের সাথে। বৃষ্টির প্রকোপে সন্ধ্যা কোনোরকম তাকায় আয়াশের দিকে। ঠোঁটের কোণে ভেসে উঠে এক চিলতে হাসি। একদম আস্তে করে ঠোঁট নাড়িয়ে বলে, ‘শহুরে ডাক্তার!’

আয়াশ যেনো সন্ধ্যামালতীর আরো এক রুপ দেখলো। বৃষ্টিতে ভিজা সন্ধ্যামালতী যেমন স্নিগ্ধ, সুন্দর হয় এ সন্ধ্যামালতীও ঠিক তেমন। যেন সদ্য ফুটে উঠেছে। দুজনের কারোর খেয়াল নেই তারা এতোটাই কাছে যে বৃষ্টির ফোঁটা আয়াশের মুখ বেয়ে সন্ধ্যার মুখের ওপরেও পড়ছে…..

চলবে..

#সন্ধ্যামালতী (০৯)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
_________________

চারিদিকে স্নিগ্ধ, শীতল পরিবেশ। বৃষ্টির ঝুমঝুম শব্দে চারিদিকে মুখরিত হয়ে আছে। বৃষ্টির পানিতে এখনো ভিজে চলেছে দুটি মানব-মানবী। একজন তার ভালোবাসার মানুষে মগ্ন আরেকজন স্নিগ্ধ মুখ দেখতে ব্যস্ত। একে অপরের এতো কাছে হওয়া সত্বেও দুজনের মাঝে অনেক দূরত্ব। সন্ধ্যা অনেকটা সময় পর কাঁপা কাঁপা হাতে আয়াশের গালে হাত রাখে। কিছুটা চমকে ওঠে আয়াশ। আয়াশের থেকে সন্ধ্যা অনেকটা ছোট আর হাইটেও কম তাই পা উচু করে রেখেছে। আয়াশ নিজেকে সামলে বলে,

‘এই মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজতেছো কেন? ঠান্ডা লেগে গেলে কি করবে?’

সন্ধ্যার কি হলো কে জানে! আয়াশের গলা জড়িয়ে একদম কাছে দাঁড়ালো। আয়াশ ভড়কে গেলেও নিজেকে স্বাভাবিক রাখে। আয়াশ কিছু বলার আগেই সন্ধ্যা চোখ পিটপিট করে তাকায়। কয়েক বার চোখের পলক ফেলে ধীর কন্ঠে বলে,

‘শহুরে ডাক্তার! আ-আমি আপনাকে…

এটুকু বলে সন্ধ্যা লুটিয়ে পড়ে আয়াশের বুকে। আয়াশ শক্ত করে ধরে। বৃষ্টির শব্দে সন্ধ্যার কথা স্পষ্ট কানে যায়নি আয়াশের। সন্ধ্যা জ্ঞান হারিয়েছে বুঝতে পেরে কোলে তুলে নেয়। সন্ধ্যার মুখের দিকে এক পলক তাকিয়ে হাঁটতে শুরু করে। সন্ধ্যাকে আয়াশের কোলে দেখে বাকি সবাই ভয় পেয়ে যায়। সাহেদাও ভয় পায়। বাড়িতে ঢুকে কাউকে কিছু না বলেই আগে একটা রুমে নিয়ে যায় সন্ধ্যাকে। পেছন পেছন সবাই আসে। সাহেদা দ্রুত মেয়ের কাছে এগিয়ে এসে বলে,

‘হায় আল্লাহ গো। সন্ধ্যার কি অয়ছে? বাজান অয় জ্ঞান হারায়ছে ক্যা?’

আয়াশ শান্ত কন্ঠে বলে, ‘তেমন কিছু হয়নি আন্টি। অনেকক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজার ফলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে। ওর তো আবার স্বভাব এটা।’

শেষের টুকু আস্তে করে বলাায় সাহেদা শুনতে পায়নি। লিজা বলে, ‘তোরা এতক্ষণ কি করছিলি? সেই কখন পাঠিয়েছি তোকে! তোর আর সন্ধ্যার পাত্তাই নাই।’

আয়াশ জবাব দেয় না। রুম থেকে বের হতে হতে বলে, ‘ওর কাপড়টা চেঞ্জ করুন। এমনিনেই অনেকক্ষণ ভিজেছে আরো ভেজা কাপড়ে থাকলে জ্বর চলে আসবে।’

তারপর নিজের রুমে চলে যায়। রুম থেকে সব ছেলেরা বের হয়ে গেলে লিজা তার ব্যাগ থেকে একটা শাড়ি আর প্রয়োজনীয় জিনিস এগিয়ে দেয় সাহেদার কাছে। হেঁসে বলে,

‘ওকে শাড়িতেই বেশি সুন্দর লাগে আন্টি। আমার ব্যাগে ছিলো শাড়িটা। ওকে এটাই পড়িয়ে দিন।’

সাহেদা মাথা নাড়ায়। লিজা আর জেরিন মিলে সাহায্য করে সন্ধ্যার কাপড় পাল্টাতে। তারপর তাপমাত্রা চেইক করে নিজেরা রুম থেকে বের হয়। বাহিরে সবাই আছে। আয়াশও চেঞ্জ করে কফি হাতে বসেছে। বৃষ্টি কমার বদলে বেড়েই চলেছে। লিজা আর জেরিন এসে রানার পাশে বসে। রানাকে চিমটি কাটতেই রানা লাফ দিয়ে উঠে পড়ে। রানা হাত ডলতে ডলতে বলে,

‘তোরা এই ডা’ইনির মতো নখ গুলো কাটতে পারিস না? ইশশশ আমার হাতের চামড়া উঠে গেছে।’

লিজা ভেংচি কেটে বলে, ‘তোর গায়ের চামড়া এমন তেমন না। গ’ন্ডারের চামড়ার মতো শক্ত। আমাদের এই ছোট খাটো নখে তোর মতো গ’ন্ডারের চামড়া উঠবে তো দুর আমাদের নখই ভেঙে যাবে।’

রানা ভেংচি কাটে। পাশ থেকে আকাশ আয়াশকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘তোরা এতক্ষণ বৃষ্টিতে কি করছিলি দোস্ত? প্রেম?’

আয়াশ কপালে ভাজ ফেলে তাকায় আকাশের দিকে। রানা হেঁসে বলে, ‘প্রেম করছিলো নাকি সন্ধ্যার থেকে প্রুফ খুজতেছিলো আল্লাহ মালুম।’

সবাই হেঁসে দেয়। জেরিন বলে, ‘কথা তো একদম ঠিক। আমাদের হিটলার বাবুর তো ফিয়ন্সে আছে তার চোখে তো এতো ভালো মেয়ে পড়বে না।’

লিজা আর জেরিন হাইফাই করে। বাকি সবাই হাসতে থাকে। আয়াশ একটা ধমক দিয়ে বলে, ‘তোদের মজা শেষ? এবার যা।’

সাফি ভেংচি কেটে বলে, ‘কেন যাবো আমরা? আমরা এখানেই বসে থাকবো।’

তমাল হঠাৎ করে লাফ দিয়ে উঠে বলে, ‘সাফি ওই দেখ ভুত ভুত।’

সাফি ভুতের কথা শুনে ‘ভুত ভুত’ করে লাফিয়ে উঠে। এক লাফে আকাশের কোলে আর আকাশ টুল থেকে ধপ করে নিচে পড়ে। সবার হাসির দমক বেড়ে যায়। রানা তো রানাই হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি শুরু করছে। আকাশ কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে,

‘অলওয়েজ ভুতে ভয় পাবি তুই আর সাফার করবো আমি। আল্লাহ আমার কোমর বোধহয় শেষ।’

তমাল টেনে তুলে আকাশকে। সাফি কাচুমাচু করে বলে, ‘আমার কি দোষ? তমাল কেন বললো ভুত ভুত।’

লিজা হাসতে হাসতে বলে, ‘তুই কবে বড় হবি দোস্ত? ভুত বলতে কিছু হয় না৷ ওগুলো তো ছোট বেলার রুপকথার গল্পেই মানায়।’

জেরিন আফসোসের সুরে বলে, ‘ছোটবেলাটা অনেক মিস করি রে। সেই ঝাঁপাঝাপি, লাফালাফি, রাতে দাদীর কোলে বসে ভুতের গল্প তার ভয়ে আম্মুর আঁচল ধরে থাকা। কি মজা না?’

সবাই সায় দেয়। তারপর মেতে উঠে আড্ডায়। আয়াশ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বৃষ্টির দিকে। ভেসে উঠে সন্ধ্যার স্নিগ্ধ মুখ।

বৃষ্টি কমে এসেছে সাথে বেড়ে গেছে সন্ধ্যার গায়ের তাপমাত্রা। সাহেদা সন্ধ্যার কাছেই ছিলো হঠাৎ করে মেয়েকে গোঙরাতে দেখে ভয় পেয়ে যায়। তাড়াতাড়ি কপাল, গলা চেইক করে দেখে গা গরম। একটু না অনেক বেশি গরম। দ্রুত ডাক দেয় সবাইকে। লিজা আর জেরিন সন্ধ্যাকে এভাবে গোঙরাতে দেখে নিজেরাই ভয় পেয়ে যায়। দ্রুত তাপমাত্রা চেইক করে দেখে ১০৩° জ্বর। হঠাৎ করে জ্বর চলে এসেছে। আয়াশ দ্রুত নিজেদের মতো প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করে। সাহেদা মেয়ের হাত ডলতেছে লিজা আর জেরিন নিজেদের মতো চেষ্টা করছে। মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে। সবাই টেনশন করতেছে। সাহেদা একবার সবার দিকে নজর বুলায়। মনে মনে আওড়ায়, ‘পোলা মাইয়া গুলান এতো ভালা ক্যান?’ অপরিচিত একটা মেয়ের জন্য কত কি করছে! সবার চোখে মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। যেন অসুস্থ একটা ৩-৪ দিনের পরিচিত মেয়ে না তাদেরই কেউ। চোখ ভরে আসে সাহেদার। মনে মনে অনেক দোয়া দেয়। জেরিন জলপট্টি দিচ্ছিলো রানা ব্যস্ত কন্ঠে বলে,

‘কি রে জ্বর কমেছে!’

জেরিন দুদিকে মাথা নাড়ায়। আয়াশ বলে, ‘সবাই বাহিরে চল। জেরিন!’

জেরিন ইশারায় বুঝায় ‘ঠিক আছে’। সবাই বাহিরে চলে আসে। জেরিন আর সাহেদা মিলে সন্ধ্যার গা মুছিয়ে দেয়। আয়াশের চোখ মুখ লাল দেখে রানা এগিয়ে আসে। বলে, ‘তোর কি শরীর খারাপ লাগছে?’

আয়াশ মাথা নাড়িয়ে বলে, ‘তেমন না। বৃষ্টিতে ভেজার ফলে চোখ মুখ লাল দেখাচ্ছে। ঠান্ডা লাগার পূর্বাভাস।’

‘রেস্ট নে গিয়ে। আমরা দেখতেছি সন্ধ্যাকে।’

আয়াশ অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায় রানার দিকে। বলে, ‘ঠিক আছি আমি।’

রানা বোঝে আয়াশ রেস্ট নিবে না। নিঃশব্দে ঠোঁট কামড়ে হাসে রানা। লিজা ইশারায় জিজ্ঞেস করে, ‘কি?’ রানা দুদিকে মাথা নাড়ায়। একটু পরই জেরিন ডাকে। সবাই আবার রুমে ঢোকে। আয়াশ সাহেদাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘আন্টি অনেকটাা সময় পাড় হয়ে গেছে বৃষ্টি হচ্ছে। এই অবস্থায় সন্ধ্যাকে নিয়ে যাওয়ার দরকার নাই। আপনারা বরং আজ থেকে যান।’

সাহেদা বলে, ‘সন্ধ্যার দাদাই যে বাড়িতে বাজান। তোমরা এট্টু আমার মাইয়াডারে রাখবা? হের এই অবস্থায় নিমু কেমনে কও?’

আকাশ বলে, ‘আন্টি সন্ধ্যা থাকুক সমস্যা নাই।’

তমাল পাশ থেকে বলে, ‘আন্টি ওর হঠাৎ এতো জ্বর হইলো কেমনে? বৃষ্টির জন্য?’

সাহেদাা মাথা নাড়িয়ে বলে, ‘হ বাজান৷ ছুডুবেলা থেইকায় অয় বৃষ্টিতো ভিজতো পারে না। জ্বর আইসা যায়।’

আয়াশ সন্ধ্যার মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বকা দেয়। জ্বর আসলে বৃষ্টিতে কেন ভিজতে হবে?

বৃষ্টি থেমে গেলে সাহেদা নিজের বাড়ির দিকে যায়। বৃদ্ধ শ্বশুর বাড়িতে একা উপায় নেই যেতে হবে। আয়াশ আর লিজা থেকে গেছে বাকি সবাই খাচ্ছে। লিজা আয়াশের পাশে বসে। বলে,

‘তুইও খেয়ে আয়। আমি সন্ধ্যার কাছে আছি।’

আয়াশ গম্ভীর গলায় বলে, ‘তোর ক্ষুধা লাগলে তুই যা। আমি আছি এখানে।’

লিজা হাসে৷ বলে, ‘তুই যে এই পিচ্চি মেয়ের ওপর দুর্বল এটা বুঝিস?’

আয়াশ কপালে ভাজ ফেলে তাকায় লিজার দিকে। শান্ত কন্ঠে বলে, ‘তুই ভুল। আয়াশ ইরফান এতো সহজে কারো ওপর দুর্বল হয় না। তাছাড়া আমি কমিটেড।”

লিজা আর কিছু না বলে উঠে দাঁড়ায়। দরজার দিকে যেতে যেতে দাত কিড়মিড় করে বলে, ‘তোর ওই ন্যাকা ফিয়ন্সের কথা শুনলে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। আমি খেতে যাচ্ছি তুই বসে থাক।’

বলেই চলে যায়। আয়াশ নিঃশব্দে হাসে। এরা একদম সহ্য করতে পারে না আয়াশের ফিয়ন্সেকে। তারপর গভীর দৃষ্টিতে তাকায় সন্ধ্যার দিকে। সন্ধ্যা তখনো জ্বরের ঘোরে বিড়বিড় করতেছে, গোঙরাচ্ছে। কষ্ট হচ্ছে তা বুঝতে পারে আয়াশ। মুখটা এগিয়ে নিয়ে যায় সন্ধ্যার দিকে। মুখে ফু দেয়। কেঁপে উঠে সন্ধ্যা। আয়াশ ফের ঠোঁট কামড়ে হাসে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সন্ধ্যার মুখের দিকে। সে সময় ছুটে আসে বাদল আর বকুল। আয়াশ নিজেকে সামলে ঠিক করে বসে৷ বাদল সন্ধ্যার কপালে হাত দিয়ে জ্বরের পরিমাণ দেখে ঘাবড়ে যায়। আয়াশকে বসে থাাকতে দেখে বলে,

‘ওর জ্বর একটুও কমেনি?’

আয়াশ দুদিকে মাথা নাড়ায়। বাদল ব্যস্ত কন্ঠে বলে, ‘কমছে না কেন? ঠিক হয়ে যাবে তো?’

আয়াশ গম্ভীর কন্ঠে বলে, ‘ঠিক হবে। কিন্তু আপনি কে?’

বকুল পাশ থেকে বলে, ‘আমার ভাই।’

আয়াশ নড়েচড়ে বসে। বলে,’ সন্ধ্যার যার সাথে বিয়ে!’

বকুল মাথা নাড়ায়। আয়াশ আর কিছু জিজ্ঞেস করে না। শুধু স্বাভাবিক ভাবে বলে, ‘চিন্তার কারণ নেই। ওষুধ দেওয়া হয়ছে বার বার জলপট্টি দিলেই ঠিক হয়ে যাবে।’

তারপর নিজে বের হয়ে যায়। বাদল দ্রুত পাশে থাকা জলপট্টি দিতে থাকে সন্ধ্যাকে। বকুলও পাশে বসে। পেছনে তাকিয়ে আরো একবার আয়াশের যাওয়ার দিকে তাকায়। লোকটা একা এখানে কি করছিলো?

বিকালের দিকে জ্বর কমে আসে সন্ধ্যার। এতক্ষণ পাশে সবাই বসে ছিলো৷ বাদল আর বকুলও যায়নি। সন্ধ্যা চোখ পিটপিট করে তাকাতেই চোখের সামনে আয়াশের মুখ ভেসে ওঠে। আয়াশ সামনে ছিলো বলে প্রথমে তার মুখই দেখে। অস্পষ্ট স্বরে কিছু বলে ঠোঁট এলিয়ে দেয়। বাদল দ্রুত কন্ঠে ডাকে সন্ধ্যাকে৷ সন্ধ্যা পাশে তাকাতেই খানিকটা চমকায়। অনেক কষ্টে বলে,

‘ব-বাদল ভাই! আপনি!’

‘ঠিক আছিস এখন? সেই সকাল থেকে তোর ধুম জ্বর। সবাই তো ভয়ই পেয়ে গেছি৷ জানিস বৃষ্টিতে ভিজলে তোর জ্বর হয় তাহলে ভিজলি কেন?’

সন্ধ্যা উত্তর না দিয়ে একবার আয়াশের দিকে আরেকবার বাদলের দিকে তাকায়। বাদলের উৎকন্ঠা দেখে সে আয়াশের দিকে তাকায়। একজনের প্রতি তার নাম না জানা অনুভূতি আর আরেকজন তার হবু স্বামী। যার সাথে আর কয়েকটা দিন পরই পবিত্র বন্ধন গড়ে উঠবে। সন্ধ্যা মাথা নিচু করে নেয়। মাথায় চাপ দিতে তার ইচ্ছে করলো না। আয়াশের প্রতি তার অনুভূতি তো কেউ জানে না! আর জানবেও না। সে বাদল ভাইয়ের সাথে সুখী হবে। লিজা পাশ থেকে বলে,

‘তুমি তো আমাদের জানই কেড়ে নিচ্ছিলে!’

সন্ধ্যা হাসে৷ বাদল কৃতজ্ঞতার কন্ঠে বলে, ‘আপনাদেরকে অনেক ধন্যবাদ। আপনারা সন্ধ্যার জন্য অনেক কিছু করছেন। অপরিচিত মানুষের জন্য কেউ এতোটা করে না।’

রানাা হেঁসে বলে, ‘ইটস ওকে ভাই। প্রথমত আমরা ডক্টর আর তাছাড়াও আমরা মানুষ। এতোটুকু করতেই পারি। ধন্যবাদের প্রয়োজন নেই।’

বাদল হাসে। আর কিছুক্ষণ বসে বাদল সন্ধ্যাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘একা হাঁটতে পারবি?’

সন্ধ্যা মাথা নাড়ায়। পাশ থেকে আয়াশ বলে, ‘ওর এই শরীর নিয়ে হাঁটা কষ্টের হবে আপনি ওকে কোলে নিন নয়তো কোনো গাড়ি ডাকুন।’

বাদল বলে, ‘সন্ধ্যা যা চিকন তাতে ওকে কোলে করেই নিতে পারবো৷ নো প্রবলেম।’

আয়াশ কিছু না বলেই রুম থেকে বের হয়ে যায়। সন্ধ্যা সেদিকে তাকায়। এখন কি সে বাদল ভাইয়ের কোলে উঠবে নাকি? আজব! এই গোমড়া শহুরে ডাক্তারের কি কাজ নেই নাকি যে সে বাদল ভাইকে এসব বলে গেলো! বাকি সবাইও হতাশ হয়। আয়াশ জেলাস ফিল না করে বাদলকে উপদেশ দিয়ে গেলো যেনো সে সন্ধ্যাকে কোলে করে নিয়ে যায়…..

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here